শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ
‘রচনা’ লিখন ধারণাটির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সবাই পরিচিত। সাধারণ অর্থে ‘রচনা’ বলতে সৃষ্টি করা বা নির্মাণ করাকে বোঝায়। যেমন-গল্প রচনা, উপন্যাস রচনা, নাট্য রচনা, কাব্য রচনা ইত্যাদি। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘রচনা’ শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহƒত হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘প্রবন্ধ’ লিখনকেই ‘রচনা’ লিখন হিসেবে বোঝানো হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের নিজস¦ দৃষ্টিকোণ থেকে কোন বিষয় সম্পর্কে ভাষাগত বিন্যাসকরণই প্রবন্ধ বা রচনা। অনেক শিক্ষার্থী প্রবন্ধ লিখনকে খুব সাধারণ মনে করলেও এর রয়েছে নানা কৌশল। এছাড়া শিক্ষার্থীরা প্রবন্ধ লিখনকে কেবল পাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও জীবনের সর্বস্তরেই প্রবন্ধ লিখন জানা অত্যন্ত জরুরি।
প্রবন্ধকে প্রাথমিকভাবে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়-১. বিষয়নিষ্ঠ প্রবন্ধ ২. আত্মনিষ্ঠ প্রবন্ধ। বিষয়নিষ্ঠ প্রবন্ধকে আবার বিবৃতিমূলক, ব্যাখ্যামূলক, বর্ণনামূলক, তত্ত্বমূলক, ভাবমূলক, তথ্যমূলক ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রবন্ধের সাধারণত তিনটি অংশ থাকে। এগুলো হচ্ছে ভূমিকা, মূল বক্তব্যের অংশ ও উপসংহার। ‘প্রবন্ধ’ লিখন দক্ষতা মূলত চর্চার ওপর নির্ভর করে।
শিরোনাম নির্দিষ্ট : যে বিষয়ে প্রবন্ধটি লিখবে তা একেবারে নতুন বিষয় কি না বা কেউ তথ্য বিন্যাস দেখিয়ে দিয়েছে কি না- বা কী পদ্ধীততে, কী বিষয়, কীভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে? কবে শুরু হয়, কয় বছর ধরে মেলা হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে, মেলায় অংশগ্রহণকারী কারা, সাধারণত দর্শক কারা, মেলার সময় কখন, মেলার পরিবেশ কেমন থাকে, উদ্দেশ্যের সঙ্গে কি মেলার পরিবেশ , উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটেছে কি? ক্রমান্নয়ে তথ্য বিন্যস্ত করতে হবে।
পরীক্ষার জন্য যদি হয় তবে তথ্য সংগ্রহের সময় বা সুযোগ পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে তোমার সম্ভাব্য বিষয়গুলো সম্পর্কে তথ্য জানা থাকতে হবে। সে জন্য পরীক্ষা-পূর্ব প্রবন্ধ লেখার অনুশীলন করতে হবে। যত বেশি অনুশীলন করবে তত সহজ হয়ে উঠবে প্রবন্ধ লেখা।
আউটলাইন তৈরি : এবার করণীয় হচ্ছে প্রাপ্ত তথ্য ও তোমার ধারণাকে সুসংগঠিত বা সুবিন্যস্ত করা। কোন তথ্যের পরে কোন তথ্য রাখলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হবে তার ওপর ভিত্তি করে আউটলাইন তৈরি করতে হবে।
প্রবন্ধের শিরোনাম ‘একুশের বইমেলার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ হলে লেখায় এ কথা বলতে হবে যে বইমেলার বরাদ্দ করা অনেক প্রতিষ্ঠানই নিজস¦ প্রকাশনা ছাড়াও অন্যজনের প্রকাশনা রাখেন, এটির ক্রমগতি থাকলে ভবিষ্যতে বাঙালি জাতির অগ্রগতি হবে না, যদি বইমেলার প্রতিবছরের নতুন প্রকাশিত বইয়ের সম্ভার থাকে তবে লেখক ও প্রকাশকের জন্য প্রণোদনা সৃষ্টি হবে, নিত্যনতুন ভাবনা-ধারণায় বাঙালি জাতি ভবিষ্যতে সমৃদ্ধ হবে। এবার সংগৃহীত তথ্যগুলো দিয়ে একটি আউটলাইন তৈরি করবে। যেমন-একুশের বইমেলার পটভূমি, একুশে বইমেলার ইতিহাস, বিভিন্ন বছরে একুশে বইমেলা, বিভিন্ন বছরে একুশে বইমেলায় প্রকাশনা, একুশে বইমেলায় লেখক-প্রকাশক-পাঠক সম্পর্ক, এ বছরের একুশে বইমেলা, এ বছরের বইমেলার প্রকাশনা ও পরিবেশ, প্রকাশিত বই নতুন নাকি পুরোনো ইত্যাদি। এবার নিজেকে প্রশ্ন কর, তুমি যে পয়েন্টগুলো নির্দিষ্ট করেছ তা তোমার বক্তব্যকে কি সাপোর্ট বা সাহায্য করে? যদি না করে তবে আবার নতুন করে পয়েন্ট নির্দিষ্ট কর।
যে পৃষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মাবলী লেখা থাকে তার বিপরীত সাদা পৃষ্ঠায় রাফ লিখে পরে ক্রশ টেনে কেটে দিতে হবে। প্রথমে আউটলাইন করে নিয়ে পরে পয়েন্টগুলোর ওপর ভিত্তি করে প্রবন্ধ লিখবে।
ভূমিকা ও উপসংহার : ভূমিকা ও উপসংহার নির্দিষ্ট করবে। একটি প্রবন্ধের মূল বিষয় যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে ভূমিকা ও উপসংহার কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ভূমিকায় প্রবন্ধের মূল বিষয়টি উল্লেখ করবে। বিষয়টিকে এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যেন পরীক্ষক পরবর্তী অংশগুলো পড়তে আকৃষ্ট হয়। গবেষণা প্রবন্ধের ক্ষেত্রে গবেষক ভূমিকায় মূল সমস্যাটি তুলে ধরেন, ফলে একজন পরীক্ষক প্রবন্ধটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে বাধ্য হন। যে সমস্যাটি চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সমাধান উপসংহারে নিশ্চিত করতে হবে।
খসড়া লিখন : এবার লেখা শুরু কর। প্রথমে ভূমিকা অংশ লিখে তারপর বিষয়বস্তুকে বিভিন্ন পয়েন্ট ধরে ধরে লিখতে হবে। শেষে উপসংহার। বানান, বিরাম চিহ্ন বা ব্যাকরণের কারণে কল্পনা ও আবেগ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না।
পুনর্লিখন : সৃজনশীল লিখনপ্রক্রিয়ায় পুনর্লিখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর মধ্যে অন্যতম। খসড়াটি এবার সমালোচনার দৃষ্টিতে চোখ বুলিয়ে যাও এবং নিচের প্রশ্নগুলো নিজেকে কর। ভূমিকা কি আকর্ষণীয় হয়েছে? প্রতিটি পয়েন্টে কি যথেষ্ট তথ্য ও বর্ণনা দেয়া হয়েছে? খসড়াটিতে যে অংশ ঠিকমতো হয়নি সেটা আবার নতুন করে তৈরি কর। এ ক্ষেত্রে যে পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ নয় সেটি বাদ দেয়া যায়। প্রয়োজনে নতুন পয়েন্ট সৃষ্টি করতে হবে, এমনকি নতুন তথ্যও সংগ্রহ করা যেতে পারে। এভাবে প্রবন্ধটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নতুন করে তৈরি বা সংশোধন কর।
চূড়ান্ত খসড়া : লেখার বানানগুলো দেখে নাও। ভুল বানান তোমার লেখার মান কমিয়ে দেবে। ব্যাকরণগত শুদ্ধতার দিকেও মনোযোগ দাও। প্রবন্ধটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আবার পড়।
শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ
সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০
‘রচনা’ লিখন ধারণাটির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সবাই পরিচিত। সাধারণ অর্থে ‘রচনা’ বলতে সৃষ্টি করা বা নির্মাণ করাকে বোঝায়। যেমন-গল্প রচনা, উপন্যাস রচনা, নাট্য রচনা, কাব্য রচনা ইত্যাদি। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘রচনা’ শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহƒত হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘প্রবন্ধ’ লিখনকেই ‘রচনা’ লিখন হিসেবে বোঝানো হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের নিজস¦ দৃষ্টিকোণ থেকে কোন বিষয় সম্পর্কে ভাষাগত বিন্যাসকরণই প্রবন্ধ বা রচনা। অনেক শিক্ষার্থী প্রবন্ধ লিখনকে খুব সাধারণ মনে করলেও এর রয়েছে নানা কৌশল। এছাড়া শিক্ষার্থীরা প্রবন্ধ লিখনকে কেবল পাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও জীবনের সর্বস্তরেই প্রবন্ধ লিখন জানা অত্যন্ত জরুরি।
প্রবন্ধকে প্রাথমিকভাবে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়-১. বিষয়নিষ্ঠ প্রবন্ধ ২. আত্মনিষ্ঠ প্রবন্ধ। বিষয়নিষ্ঠ প্রবন্ধকে আবার বিবৃতিমূলক, ব্যাখ্যামূলক, বর্ণনামূলক, তত্ত্বমূলক, ভাবমূলক, তথ্যমূলক ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রবন্ধের সাধারণত তিনটি অংশ থাকে। এগুলো হচ্ছে ভূমিকা, মূল বক্তব্যের অংশ ও উপসংহার। ‘প্রবন্ধ’ লিখন দক্ষতা মূলত চর্চার ওপর নির্ভর করে।
শিরোনাম নির্দিষ্ট : যে বিষয়ে প্রবন্ধটি লিখবে তা একেবারে নতুন বিষয় কি না বা কেউ তথ্য বিন্যাস দেখিয়ে দিয়েছে কি না- বা কী পদ্ধীততে, কী বিষয়, কীভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে? কবে শুরু হয়, কয় বছর ধরে মেলা হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে, মেলায় অংশগ্রহণকারী কারা, সাধারণত দর্শক কারা, মেলার সময় কখন, মেলার পরিবেশ কেমন থাকে, উদ্দেশ্যের সঙ্গে কি মেলার পরিবেশ , উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটেছে কি? ক্রমান্নয়ে তথ্য বিন্যস্ত করতে হবে।
পরীক্ষার জন্য যদি হয় তবে তথ্য সংগ্রহের সময় বা সুযোগ পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে তোমার সম্ভাব্য বিষয়গুলো সম্পর্কে তথ্য জানা থাকতে হবে। সে জন্য পরীক্ষা-পূর্ব প্রবন্ধ লেখার অনুশীলন করতে হবে। যত বেশি অনুশীলন করবে তত সহজ হয়ে উঠবে প্রবন্ধ লেখা।
আউটলাইন তৈরি : এবার করণীয় হচ্ছে প্রাপ্ত তথ্য ও তোমার ধারণাকে সুসংগঠিত বা সুবিন্যস্ত করা। কোন তথ্যের পরে কোন তথ্য রাখলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হবে তার ওপর ভিত্তি করে আউটলাইন তৈরি করতে হবে।
প্রবন্ধের শিরোনাম ‘একুশের বইমেলার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ হলে লেখায় এ কথা বলতে হবে যে বইমেলার বরাদ্দ করা অনেক প্রতিষ্ঠানই নিজস¦ প্রকাশনা ছাড়াও অন্যজনের প্রকাশনা রাখেন, এটির ক্রমগতি থাকলে ভবিষ্যতে বাঙালি জাতির অগ্রগতি হবে না, যদি বইমেলার প্রতিবছরের নতুন প্রকাশিত বইয়ের সম্ভার থাকে তবে লেখক ও প্রকাশকের জন্য প্রণোদনা সৃষ্টি হবে, নিত্যনতুন ভাবনা-ধারণায় বাঙালি জাতি ভবিষ্যতে সমৃদ্ধ হবে। এবার সংগৃহীত তথ্যগুলো দিয়ে একটি আউটলাইন তৈরি করবে। যেমন-একুশের বইমেলার পটভূমি, একুশে বইমেলার ইতিহাস, বিভিন্ন বছরে একুশে বইমেলা, বিভিন্ন বছরে একুশে বইমেলায় প্রকাশনা, একুশে বইমেলায় লেখক-প্রকাশক-পাঠক সম্পর্ক, এ বছরের একুশে বইমেলা, এ বছরের বইমেলার প্রকাশনা ও পরিবেশ, প্রকাশিত বই নতুন নাকি পুরোনো ইত্যাদি। এবার নিজেকে প্রশ্ন কর, তুমি যে পয়েন্টগুলো নির্দিষ্ট করেছ তা তোমার বক্তব্যকে কি সাপোর্ট বা সাহায্য করে? যদি না করে তবে আবার নতুন করে পয়েন্ট নির্দিষ্ট কর।
যে পৃষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মাবলী লেখা থাকে তার বিপরীত সাদা পৃষ্ঠায় রাফ লিখে পরে ক্রশ টেনে কেটে দিতে হবে। প্রথমে আউটলাইন করে নিয়ে পরে পয়েন্টগুলোর ওপর ভিত্তি করে প্রবন্ধ লিখবে।
ভূমিকা ও উপসংহার : ভূমিকা ও উপসংহার নির্দিষ্ট করবে। একটি প্রবন্ধের মূল বিষয় যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে ভূমিকা ও উপসংহার কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ভূমিকায় প্রবন্ধের মূল বিষয়টি উল্লেখ করবে। বিষয়টিকে এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যেন পরীক্ষক পরবর্তী অংশগুলো পড়তে আকৃষ্ট হয়। গবেষণা প্রবন্ধের ক্ষেত্রে গবেষক ভূমিকায় মূল সমস্যাটি তুলে ধরেন, ফলে একজন পরীক্ষক প্রবন্ধটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে বাধ্য হন। যে সমস্যাটি চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সমাধান উপসংহারে নিশ্চিত করতে হবে।
খসড়া লিখন : এবার লেখা শুরু কর। প্রথমে ভূমিকা অংশ লিখে তারপর বিষয়বস্তুকে বিভিন্ন পয়েন্ট ধরে ধরে লিখতে হবে। শেষে উপসংহার। বানান, বিরাম চিহ্ন বা ব্যাকরণের কারণে কল্পনা ও আবেগ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না।
পুনর্লিখন : সৃজনশীল লিখনপ্রক্রিয়ায় পুনর্লিখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর মধ্যে অন্যতম। খসড়াটি এবার সমালোচনার দৃষ্টিতে চোখ বুলিয়ে যাও এবং নিচের প্রশ্নগুলো নিজেকে কর। ভূমিকা কি আকর্ষণীয় হয়েছে? প্রতিটি পয়েন্টে কি যথেষ্ট তথ্য ও বর্ণনা দেয়া হয়েছে? খসড়াটিতে যে অংশ ঠিকমতো হয়নি সেটা আবার নতুন করে তৈরি কর। এ ক্ষেত্রে যে পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ নয় সেটি বাদ দেয়া যায়। প্রয়োজনে নতুন পয়েন্ট সৃষ্টি করতে হবে, এমনকি নতুন তথ্যও সংগ্রহ করা যেতে পারে। এভাবে প্রবন্ধটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নতুন করে তৈরি বা সংশোধন কর।
চূড়ান্ত খসড়া : লেখার বানানগুলো দেখে নাও। ভুল বানান তোমার লেখার মান কমিয়ে দেবে। ব্যাকরণগত শুদ্ধতার দিকেও মনোযোগ দাও। প্রবন্ধটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আবার পড়।