alt

উপ-সম্পাদকীয়

পাবনা প্রেসক্লাবের ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

রণেশ মৈত্র

: সোমবার, ০৩ মে ২০২১

১৯৬১ সালের ১ মে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাবনা প্রেসক্লাব। সাংবাদিক পাবনাতে তখন আমরা মাত্র তিনজন। প্রয়াত একেএম আজিজুল হক, প্রয়াত আনোয়ারুল হক এবং আমি। সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক একেএম আজিজুল হককে-আর সম্পাদকের দায়িত্ব আমাকে।

একেএম আজিজুল হকের তৎকালীন দ্বিতল বাসভবনের নিচ তলায় ছিল তার বৈঠকখানা। ওই বৈঠকখানাটির দরজার সামনেই “পাবনা প্রেসক্লাব” মর্মে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে ফিতা কেটে এই দিনে আমাদের প্রেসক্লাবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন পাবনার তদানীন্তন সাংবাদিক-ঘনিষ্ঠ জেলা প্রশাসক।

ক্লাবটির নানা পদে ডা. অব মেজর মোফাজ্জল হোসেন শহীদ মওলানা কছিম উদ্দিন, হিমাংসু কুমার বিশ্বাস, আরিফসহ আরও অনেকে ছিলেন। দুঃজনক যে স্মৃতি বিভ্রমের কারণে আজ আর তাদের নাম স্মরণে আনতে এবং এই নিন্ধে উল্লেখ করতে পারলাম না। তবে পূর্ব বর্ণিত হিনজন বাদে সবাই ছিলেন অসাংবাদিক।

পাবনাতে সাংবাদিকের সংখ্যা তখন এত কম ছিল কেন-এ প্রশ্নটি উঠতেই পারে কারণ পাবনা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মোট ১৭টি জেলার মধ্যে একটি প্রাচীন জেলা। সিরাজগঞ্জ তখন ছিল পাবনা জেলার অন্যতম মহকুমা। তবুও তিনজন মাত্র সাংবাদিক ছিলেন তখন। এ কারণে যে পাকিস্তান সৃষ্টির পর সংবাদপত্র প্রকাশনার প্রধান শহর হয়ে দাঁড়ায় ঢাকা। শুরুতে সেখান থেকে দৈনিক আজাদ, মর্নিং নিউজ, পরে সংবাদ, ইত্তেফাক ও পাকিস্তান অবজার্ভার নামে কয়েকটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। “সংবাদ” এর পাবনা প্রতিনিধি ছিলাম আমি। বাদ-বাকি সব পত্রিকার সংবাদ দাতা ছিলেন একেএম আজিজুল হক। এই দুই সাংবাদিক মিলেই আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল পাবনাতে “পূর্ব পাকিস্তান মফঃস্বল সাংবাদিক সম্মেলন” অনুষ্ঠানের। আজিজুল হক তখন এডরুক লেবরেটরির অফিসে কাজ করতেন। সকাল-সন্ধ্যা সেখানেই থাকতে হতো তাকে। আর আমি তো বেকার তাই সম্মেলনের একমাত্র সার্বক্ষণিক কর্মী। হক সাহেবের বৈঠক খানায় এসে রোজ সকাল ৯-১০টায় বসতাম-বিকেল ৩টার দিকে খেতে যেতাম বাসায় পাটায় আবার এসে ওই বৈঠকখানায় বসতাম-থাকতাম রাত ৯টা পর্যন্ত। সারাদিন পেতাম না হক সাহেবকে-তাই একাই কাজ করতে হতো।

এই একাকীত্ব দূর করার জন্য প্রয়োজন হয় সাংবাদিকের সংখ্যা বাড়ানোর। কিন্তু সব পত্রিকা তো হক সাহেবের দখলে। এমতাবস্থায় স্থির করলাম বাল্যবন্ধু আনোয়ারুল হককে কোন পত্রিকায় নিয়োগপত্র আনিয়ে সাংবাদিকতায় নামানো যায় কি না। ইত্তেফাকের তৎকালীন বার্তা সম্পাদক শহীদ সিরাজউদ্দিন হোসেন আমার সুপরিচিত। ল্যান্ডফোনে আমি তাকে একদিন অনুরোধ জানালাম ইত্তেফাকের পাবনাস্থ সাংবাদ দাতা আনোয়ারুল হককে দিতে। তিনি বললেন, দুটি সমস্যা। একটি হলো আনোয়ারুল চিনি না। দ্বিতীয়ত: আজিজুল হক সাহেব ইত্তেফাক ছাড়াতে সম্মত হবেন কি না।

উত্তরে বললাম, সিরাজভাই, আনোয়ারুল হক আমার বাল্যবন্ধু-ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী। আপনি চাইলে আমিটেলিফোনে তার সঙ্গে আপনার কথা বলিয়ে দেব। আর আজিজুল হক সাহেব? আমি তার বিরুদ্ধে নই। তবে তিনি একাই সংবাদ ছাড়া সব পত্রিকার পাবনাস্থ সংবাদদাতা কাজে ভারাক্রান্ত। বললে তিনি রাজি হবেন আশা করি। এ ব্যাপারে আপনার সহযোগিতা চাই। সিরাজ ভাই বললেন, ঠিক আছে আনোয়ার সাহেবকে বলবেন আমার সঙ্গে কথা বলতে। সিরাজ ভাই এর সাড়া ইতিবাচক হওয়াতে বিকেলে আনোয়ারকে সাংবাদিকতায় আসতে রাজী করিয়ে সন্ধ্যার পর হক সাহেবকে অনুরোধ করলাম ইত্তেফাক আনোয়ারকে দিতে। তিনি বললেন ইত্তেফাক অফিস রাজি হবে কি? আমি বললাম, প্রাদেশিক সাংবাদিক সম্মেলন মাত্র দুজন সাংবাদিককে দিয়ে করা কত কঠিন তা তো বুঝছেন। সাংবাদিকের সংখ্যা তাই বাড়ানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদককে ওই সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে-তাই তাকে বললে তিনি রাজি হবেন। কাকে ইত্তেফাকে নিতে চান? প্রশ্ন করলেন হক সাহেব। বললাম আমার বন্ধু আনোয়ারুল হক। সম্মতি সরাসরি না দিয়ে হক সাহেব বললেন, দেখি সিরাজ সাহেব কি বলেন।

পরদিন সকালে হেড পোস্ট অফিসে গিয়ে টেলিফোনে সিরাজউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে হক সাহেবকে কথা বলালে বিষয়টা চূড়ান্ত হলো। কিছু দিনের মধ্যেই আনোয়ারের নিয়োগপত্র এসে যার ইত্তেফাক থেকে।

পরবর্তীতে আমার লম্বা জেল জীবন। এক পর্যায়ে আনোয়ারসহ অন্যরা তৎকালীন এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে ধরে বর্তমান প্রেসক্লাব (অর্পিত সম্মতি) সরকারের কাছ থেকে নিজ গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে নানা ধনাঢ্য ব্যক্তির আর্থিক সহযোগিতায় ক্লাবের যথেষ্ট উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

তিনজন সাংবাদিক দিয়ে যে প্রেসক্লাবের ১৯৬১ সালে যাত্রা শুরু সেই প্রেসক্লাবে ধীরে ধীরে কমরেড প্রসাদ রায়, শফি আহমেদ মীর্জা শামসুল ইসলাম, হাসনাতুজ্জামান হীরা, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু ও সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, (উভয়কে জীবন সদস্য পদ দেয়া হয়), এবিএম ফজলুর রহমান (সভাপতি) সৈকত আফরোজ আসাদ (সম্পাদক), মীর্জা আজাদ, শহীদুর রহমান শহীদ, তপু আহমেদ, সুশীল তরফদার, ইয়াদ আলী মৃধা পাভেল, কলিট তালুকদার, সরোয়ার মোর্শেদ উল্লাস, মোখলেছুর রহমান খান বিপ্লব, রবিউল ইসলাম রবি, ইয়াছিন আলী মৃধা রতন, আ ক ম মোস্তাফিজুর রহমান চন্দন, কৃষ্ণ ভৌমিক, জহুরুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, মোসতাফা সতেজ, শিবজিত নাগ, আঁখিনূর ইসলাম রেমন, আব্দুল মতীন খান, আব্দুল কুদ্দুস চাঁদু, এ্যাড. মুহম্মদ মহিউদ্দিন, এ্যাড. মুরশাদ সুবহানী, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, আখতারুজ্জামান আখতার, আবুবকর সিদ্দিক, আব্দুল জব্বার, কামাল আহমেদ সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান স্বপন, এবাদত আলী, নরেশ মধু, উৎপল মির্জা, আবু হাসনা মুহম্মদ আইয়ুব, আবুল এহসান এলিচ, রুমী খোন্দকার, কানু সান্যাল, এমজি বিপ্লব চৌধুরী, এসএম আলম, আহমেদ উল হক রানা, মোফাজ্জল হোসেন, কাজী মাহবুব মোর্শেদ বাবলা, শফি ইসলাম, ফারুক হোসেন চৌধুরী, মাহফুজ আলম, জি কে সাদী, আব্দুল হামিদ খান, ছিফাত রহমান সনম, রাজিউর রহমান রুমী, এসএম আলাউদ্দিন, সৈয়দ আকতারুজ্জামান রুমী (পাপুল), আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, সুশান্ত কুমার সরকার, আবুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম সুইট, শাহীন রহমান সদস্য প্রমুখ।

তালিকা আরও দীর্ঘ। অনেককে আমরা ইতোমধ্যে হারিয়েছি আবার অনেকের নাম তাৎক্ষণিকভাবে স্মরণে না আসার অনুল্লেখিত রইলো। তবে সবার সম্মিলিত অবদানে ক্লাবটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক, পাবনা প্রেসক্লাব]

raneshhmaitra@gmail.com

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

প্রসঙ্গ : নিত্যপণ্যের দাম

ছবি

টঙ্ক আন্দোলনের কুমুদিনী হাজং

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে চাই বিকেন্দ্রীকরণ

দূষণমুক্ত পানির বিকল্প নাই

রম্যগদ্য : ‘দুনিয়ার বাঙালি এক হও”

tab

উপ-সম্পাদকীয়

পাবনা প্রেসক্লাবের ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

রণেশ মৈত্র

সোমবার, ০৩ মে ২০২১

১৯৬১ সালের ১ মে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাবনা প্রেসক্লাব। সাংবাদিক পাবনাতে তখন আমরা মাত্র তিনজন। প্রয়াত একেএম আজিজুল হক, প্রয়াত আনোয়ারুল হক এবং আমি। সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক একেএম আজিজুল হককে-আর সম্পাদকের দায়িত্ব আমাকে।

একেএম আজিজুল হকের তৎকালীন দ্বিতল বাসভবনের নিচ তলায় ছিল তার বৈঠকখানা। ওই বৈঠকখানাটির দরজার সামনেই “পাবনা প্রেসক্লাব” মর্মে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে ফিতা কেটে এই দিনে আমাদের প্রেসক্লাবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন পাবনার তদানীন্তন সাংবাদিক-ঘনিষ্ঠ জেলা প্রশাসক।

ক্লাবটির নানা পদে ডা. অব মেজর মোফাজ্জল হোসেন শহীদ মওলানা কছিম উদ্দিন, হিমাংসু কুমার বিশ্বাস, আরিফসহ আরও অনেকে ছিলেন। দুঃজনক যে স্মৃতি বিভ্রমের কারণে আজ আর তাদের নাম স্মরণে আনতে এবং এই নিন্ধে উল্লেখ করতে পারলাম না। তবে পূর্ব বর্ণিত হিনজন বাদে সবাই ছিলেন অসাংবাদিক।

পাবনাতে সাংবাদিকের সংখ্যা তখন এত কম ছিল কেন-এ প্রশ্নটি উঠতেই পারে কারণ পাবনা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মোট ১৭টি জেলার মধ্যে একটি প্রাচীন জেলা। সিরাজগঞ্জ তখন ছিল পাবনা জেলার অন্যতম মহকুমা। তবুও তিনজন মাত্র সাংবাদিক ছিলেন তখন। এ কারণে যে পাকিস্তান সৃষ্টির পর সংবাদপত্র প্রকাশনার প্রধান শহর হয়ে দাঁড়ায় ঢাকা। শুরুতে সেখান থেকে দৈনিক আজাদ, মর্নিং নিউজ, পরে সংবাদ, ইত্তেফাক ও পাকিস্তান অবজার্ভার নামে কয়েকটি দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। “সংবাদ” এর পাবনা প্রতিনিধি ছিলাম আমি। বাদ-বাকি সব পত্রিকার সংবাদ দাতা ছিলেন একেএম আজিজুল হক। এই দুই সাংবাদিক মিলেই আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল পাবনাতে “পূর্ব পাকিস্তান মফঃস্বল সাংবাদিক সম্মেলন” অনুষ্ঠানের। আজিজুল হক তখন এডরুক লেবরেটরির অফিসে কাজ করতেন। সকাল-সন্ধ্যা সেখানেই থাকতে হতো তাকে। আর আমি তো বেকার তাই সম্মেলনের একমাত্র সার্বক্ষণিক কর্মী। হক সাহেবের বৈঠক খানায় এসে রোজ সকাল ৯-১০টায় বসতাম-বিকেল ৩টার দিকে খেতে যেতাম বাসায় পাটায় আবার এসে ওই বৈঠকখানায় বসতাম-থাকতাম রাত ৯টা পর্যন্ত। সারাদিন পেতাম না হক সাহেবকে-তাই একাই কাজ করতে হতো।

এই একাকীত্ব দূর করার জন্য প্রয়োজন হয় সাংবাদিকের সংখ্যা বাড়ানোর। কিন্তু সব পত্রিকা তো হক সাহেবের দখলে। এমতাবস্থায় স্থির করলাম বাল্যবন্ধু আনোয়ারুল হককে কোন পত্রিকায় নিয়োগপত্র আনিয়ে সাংবাদিকতায় নামানো যায় কি না। ইত্তেফাকের তৎকালীন বার্তা সম্পাদক শহীদ সিরাজউদ্দিন হোসেন আমার সুপরিচিত। ল্যান্ডফোনে আমি তাকে একদিন অনুরোধ জানালাম ইত্তেফাকের পাবনাস্থ সাংবাদ দাতা আনোয়ারুল হককে দিতে। তিনি বললেন, দুটি সমস্যা। একটি হলো আনোয়ারুল চিনি না। দ্বিতীয়ত: আজিজুল হক সাহেব ইত্তেফাক ছাড়াতে সম্মত হবেন কি না।

উত্তরে বললাম, সিরাজভাই, আনোয়ারুল হক আমার বাল্যবন্ধু-ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী। আপনি চাইলে আমিটেলিফোনে তার সঙ্গে আপনার কথা বলিয়ে দেব। আর আজিজুল হক সাহেব? আমি তার বিরুদ্ধে নই। তবে তিনি একাই সংবাদ ছাড়া সব পত্রিকার পাবনাস্থ সংবাদদাতা কাজে ভারাক্রান্ত। বললে তিনি রাজি হবেন আশা করি। এ ব্যাপারে আপনার সহযোগিতা চাই। সিরাজ ভাই বললেন, ঠিক আছে আনোয়ার সাহেবকে বলবেন আমার সঙ্গে কথা বলতে। সিরাজ ভাই এর সাড়া ইতিবাচক হওয়াতে বিকেলে আনোয়ারকে সাংবাদিকতায় আসতে রাজী করিয়ে সন্ধ্যার পর হক সাহেবকে অনুরোধ করলাম ইত্তেফাক আনোয়ারকে দিতে। তিনি বললেন ইত্তেফাক অফিস রাজি হবে কি? আমি বললাম, প্রাদেশিক সাংবাদিক সম্মেলন মাত্র দুজন সাংবাদিককে দিয়ে করা কত কঠিন তা তো বুঝছেন। সাংবাদিকের সংখ্যা তাই বাড়ানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদককে ওই সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে-তাই তাকে বললে তিনি রাজি হবেন। কাকে ইত্তেফাকে নিতে চান? প্রশ্ন করলেন হক সাহেব। বললাম আমার বন্ধু আনোয়ারুল হক। সম্মতি সরাসরি না দিয়ে হক সাহেব বললেন, দেখি সিরাজ সাহেব কি বলেন।

পরদিন সকালে হেড পোস্ট অফিসে গিয়ে টেলিফোনে সিরাজউদ্দিন সাহেবের সঙ্গে হক সাহেবকে কথা বলালে বিষয়টা চূড়ান্ত হলো। কিছু দিনের মধ্যেই আনোয়ারের নিয়োগপত্র এসে যার ইত্তেফাক থেকে।

পরবর্তীতে আমার লম্বা জেল জীবন। এক পর্যায়ে আনোয়ারসহ অন্যরা তৎকালীন এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে ধরে বর্তমান প্রেসক্লাব (অর্পিত সম্মতি) সরকারের কাছ থেকে নিজ গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে নানা ধনাঢ্য ব্যক্তির আর্থিক সহযোগিতায় ক্লাবের যথেষ্ট উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

তিনজন সাংবাদিক দিয়ে যে প্রেসক্লাবের ১৯৬১ সালে যাত্রা শুরু সেই প্রেসক্লাবে ধীরে ধীরে কমরেড প্রসাদ রায়, শফি আহমেদ মীর্জা শামসুল ইসলাম, হাসনাতুজ্জামান হীরা, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু ও সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, (উভয়কে জীবন সদস্য পদ দেয়া হয়), এবিএম ফজলুর রহমান (সভাপতি) সৈকত আফরোজ আসাদ (সম্পাদক), মীর্জা আজাদ, শহীদুর রহমান শহীদ, তপু আহমেদ, সুশীল তরফদার, ইয়াদ আলী মৃধা পাভেল, কলিট তালুকদার, সরোয়ার মোর্শেদ উল্লাস, মোখলেছুর রহমান খান বিপ্লব, রবিউল ইসলাম রবি, ইয়াছিন আলী মৃধা রতন, আ ক ম মোস্তাফিজুর রহমান চন্দন, কৃষ্ণ ভৌমিক, জহুরুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, মোসতাফা সতেজ, শিবজিত নাগ, আঁখিনূর ইসলাম রেমন, আব্দুল মতীন খান, আব্দুল কুদ্দুস চাঁদু, এ্যাড. মুহম্মদ মহিউদ্দিন, এ্যাড. মুরশাদ সুবহানী, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, আখতারুজ্জামান আখতার, আবুবকর সিদ্দিক, আব্দুল জব্বার, কামাল আহমেদ সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান স্বপন, এবাদত আলী, নরেশ মধু, উৎপল মির্জা, আবু হাসনা মুহম্মদ আইয়ুব, আবুল এহসান এলিচ, রুমী খোন্দকার, কানু সান্যাল, এমজি বিপ্লব চৌধুরী, এসএম আলম, আহমেদ উল হক রানা, মোফাজ্জল হোসেন, কাজী মাহবুব মোর্শেদ বাবলা, শফি ইসলাম, ফারুক হোসেন চৌধুরী, মাহফুজ আলম, জি কে সাদী, আব্দুল হামিদ খান, ছিফাত রহমান সনম, রাজিউর রহমান রুমী, এসএম আলাউদ্দিন, সৈয়দ আকতারুজ্জামান রুমী (পাপুল), আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, সুশান্ত কুমার সরকার, আবুল কালাম আজাদ, রফিকুল ইসলাম সুইট, শাহীন রহমান সদস্য প্রমুখ।

তালিকা আরও দীর্ঘ। অনেককে আমরা ইতোমধ্যে হারিয়েছি আবার অনেকের নাম তাৎক্ষণিকভাবে স্মরণে না আসার অনুল্লেখিত রইলো। তবে সবার সম্মিলিত অবদানে ক্লাবটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক, পাবনা প্রেসক্লাব]

raneshhmaitra@gmail.com

back to top