alt

উপ-সম্পাদকীয়

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ : সম্ভাবনা ও শঙ্কা

মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম

: বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১

ভারতের শেয়ারবাজারের সূচক বেড়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে (এনএসই) ব্লুচিপ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সূচক নিফটি ৫০, ১৫ জুন মঙ্গলবার ১৫ হাজার ৯০১ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। এছাড়া বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) এসঅ্যান্ডপি সেনসেক্স সূচক বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ হাজার ৮৬৯ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। দুটো সূচকই এযাবৎকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। অথচ দেশটি বিশ্বে করোনায় আক্রান্তে শীর্ষ দ্বিতীয় অবস্থানে। শুধু এই করোনাকালীনই নয়, ১৯৯১-এরপর আর্থিক প্রবৃদ্ধির গতি গত কয়েক বছর ধরেই সবচেয়ে ধীর বা তলানিতে। গত পাঁচ দশকের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি-ফলে বেড়েছে দারিদ্র্যতা। এক কথায় অর্থনীতি বিপর্যস্ত। কিন্তু এর মধ্যেও শেয়ারবাজারের গতি ঊর্ধ্বমুখী, যা এই করোনাকালীন ভঙ্গুর অর্থনীতিতে জনসাধারণের প্রত্যাশার বাইরে। তবে কেন ভারতের শেয়ারবাজারের এই উল্লম্ফন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী এখন ধনসম্পদের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা চলছে। ভারতও ওই ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে। তারল্য তথা নগদ অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকা- আবার শুরু হবে এমন আশাবাদ দেখা দেয়াতেই মূলত এমনটা ঘটছে।

বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার নিরিখে আমরা ভারতের চেয়ে এগিয়ে। বিশেষ করে জাতীয় মাথাপিছু আয়, যা এখন বাংলাদেশের দুই হাজার ২২৭ ডলার, রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পেছনেই রয়েছে বাংলাদেশ। আর বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে পণ্য রপ্তানি আয়ও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরে তিন হাজার ৮৭৬ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। করোনার আগে গত এক দশক ধরে ব্যাপক দারিদ্র্যহ্রাস, সর্বোপরি বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের পথে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথা সরকারি তথ্য নিঃসন্দেহে আগের মতো এখন আর জনমনে গ্রহণযোগ্য নয়। দেখা যাক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কি বলছে, বিদায়ী ও চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে তিন দশমিক ৬ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। আর চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। গত ৬ এপ্রিল আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, চলতি ২০২১ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন ৫ শতাংশ ও ২০২২ সালে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে।

অন্যদিকে জাতিসংঘের এসকাপ তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। এভাবে যেখানে বড় বড় দাতা সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে চলছে। সেখানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার হতাশায় খাবি খাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কোথায়? ভয়াবহ বিপর্যস্ত অর্থনীতির মধ্যেও ভারতীয়রা শেয়ারবাজারে তাদের বিনিয়োগকৃত কোম্পানির ওপর ভরসা করতে পারছে। তাদের প্রত্যাশা তারা যে কোম্পানির অংশীদারিত্ব কিনেছেন তা নিশ্চয়ই দীর্ঘ মেয়াদে ভালো করবে। অধিক মুনাফা দিবে। এভাবে সবার প্রত্যাশার প্রতিফলনই শেয়ারবাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করেছে।

নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পরই শেয়ারবাজার কিছুটা গতি ফিরে পেয়েছে। দেশীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, লন্ডনভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ডন গ্লোবালের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মরিটস পট বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য রয়েছে। লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এশিয়ার তুলনীয় দেশগুলোর মধ্যে গত বছর বাংলাদেশের শেয়ারবাজার থেকে রিটার্ন এসেছে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন এসেছে ২১ দশমিক তিন শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ বাজারের জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। ফলে বাজারের গভীরতা বাড়বে ও লেনদেনে থাকবে চাঙাভাব।

আশার পাশাপাশি ভয়ও আছে। কারণ, গত জুন মাসে দেশের শেয়ারবাজারে রেকর্ড লেনদেন হয়েছে যা ৪৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে। জুন মাসে লেনদেন হওয়া ২২ দিনের মধ্যে ১২ দিনই দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। আর প্রতি কার্য দিবসে গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০১০ সালের জুন মাসে লেনদেন হয় ৩৮ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম তো বারবার বলেই আসছেন। আমাদের শেয়ারবাজারে কিছু দিনের মধ্যে লেনদেন ছাড়াবে ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

এশিয়ার তুলনীয় দেশগুলোর মধ্যে গত বছর বাংলাদেশের শেয়ারবাজার থেকে রিটার্ন এসেছে সবচেয়ে বেশি

লেনদেন যদি একটি বাজারের মুখ্য বিষয় হয়। তাহলে ভেবে দেখার বিষয় হলো-কোথায় কোন খাতে লেনদেন হচ্ছে। নির্দিষ্ট কিছু দুর্বল, রুগ্ণ মৌলভিত্তি সম্পন্ন খাত-বিমা, বস্ত্র অথবা কোন গ্রুপের নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ার এমনকি সদ্য ওটিসি মার্কেট থেকে ফেরা বন্ধ, দুর্বল কোম্পানির শেয়ার বছরব্যাপী লেনদেনের ও দর বাড়ার শীর্ষে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কোনভাবেই কারসাজির অংশ ছাড়া কিছু নয়। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ভালো মৌলভিত্তি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে ওই সমস্ত ছোট মূলধনি কোম্পানির জাঙ্ক শেয়ারে, যা সবসময়ই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর কাছে আকর্ষণীয় কিন্তু বিশেষজ্ঞ বা প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ। কমিশনের এ বিষয়ে আরও তৎপর হতে হবে। খতিয়ে দেখতে হবে-কোথায় কারসাজি হচ্ছে। লেনদেন বা বিনিয়োগ হচ্ছে ঠিকই-তবে তা গুণগত মানের হচ্ছে কি? ভালো মানের শেয়ারে লেনদেন না হলে এই লেনদেন বা সূচকের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

[লেখক : শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী]

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

ছবি

বিকাশের পথকে পরিত্যাগ করা যাবে না

বর্ষা ও বৃক্ষরোপণ : সবুজ বিপ্লবের আহ্বান

প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে শিক্ষকের করণীয়

পারমাণবিক ন্যায়বিচার ও বৈশ্বিক ভণ্ডামির প্রতিচ্ছবি

পরিবেশের নীরব রক্ষক : শকুন সংরক্ষণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

ভুল স্বীকারে গ্লানি নেই

ভাঙনের বুকে টিকে থাকা স্বপ্ন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ : সম্ভাবনা ও শঙ্কা

মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১

ভারতের শেয়ারবাজারের সূচক বেড়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে (এনএসই) ব্লুচিপ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সূচক নিফটি ৫০, ১৫ জুন মঙ্গলবার ১৫ হাজার ৯০১ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। এছাড়া বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) এসঅ্যান্ডপি সেনসেক্স সূচক বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ হাজার ৮৬৯ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। দুটো সূচকই এযাবৎকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। অথচ দেশটি বিশ্বে করোনায় আক্রান্তে শীর্ষ দ্বিতীয় অবস্থানে। শুধু এই করোনাকালীনই নয়, ১৯৯১-এরপর আর্থিক প্রবৃদ্ধির গতি গত কয়েক বছর ধরেই সবচেয়ে ধীর বা তলানিতে। গত পাঁচ দশকের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি-ফলে বেড়েছে দারিদ্র্যতা। এক কথায় অর্থনীতি বিপর্যস্ত। কিন্তু এর মধ্যেও শেয়ারবাজারের গতি ঊর্ধ্বমুখী, যা এই করোনাকালীন ভঙ্গুর অর্থনীতিতে জনসাধারণের প্রত্যাশার বাইরে। তবে কেন ভারতের শেয়ারবাজারের এই উল্লম্ফন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী এখন ধনসম্পদের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা চলছে। ভারতও ওই ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে। তারল্য তথা নগদ অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকা- আবার শুরু হবে এমন আশাবাদ দেখা দেয়াতেই মূলত এমনটা ঘটছে।

বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার নিরিখে আমরা ভারতের চেয়ে এগিয়ে। বিশেষ করে জাতীয় মাথাপিছু আয়, যা এখন বাংলাদেশের দুই হাজার ২২৭ ডলার, রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পেছনেই রয়েছে বাংলাদেশ। আর বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে পণ্য রপ্তানি আয়ও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরে তিন হাজার ৮৭৬ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। করোনার আগে গত এক দশক ধরে ব্যাপক দারিদ্র্যহ্রাস, সর্বোপরি বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের পথে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথা সরকারি তথ্য নিঃসন্দেহে আগের মতো এখন আর জনমনে গ্রহণযোগ্য নয়। দেখা যাক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কি বলছে, বিদায়ী ও চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে তিন দশমিক ৬ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। আর চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। গত ৬ এপ্রিল আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, চলতি ২০২১ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন ৫ শতাংশ ও ২০২২ সালে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে।

অন্যদিকে জাতিসংঘের এসকাপ তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। এভাবে যেখানে বড় বড় দাতা সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে চলছে। সেখানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার হতাশায় খাবি খাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কোথায়? ভয়াবহ বিপর্যস্ত অর্থনীতির মধ্যেও ভারতীয়রা শেয়ারবাজারে তাদের বিনিয়োগকৃত কোম্পানির ওপর ভরসা করতে পারছে। তাদের প্রত্যাশা তারা যে কোম্পানির অংশীদারিত্ব কিনেছেন তা নিশ্চয়ই দীর্ঘ মেয়াদে ভালো করবে। অধিক মুনাফা দিবে। এভাবে সবার প্রত্যাশার প্রতিফলনই শেয়ারবাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করেছে।

নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পরই শেয়ারবাজার কিছুটা গতি ফিরে পেয়েছে। দেশীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, লন্ডনভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ডন গ্লোবালের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মরিটস পট বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য রয়েছে। লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এশিয়ার তুলনীয় দেশগুলোর মধ্যে গত বছর বাংলাদেশের শেয়ারবাজার থেকে রিটার্ন এসেছে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন এসেছে ২১ দশমিক তিন শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ বাজারের জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। ফলে বাজারের গভীরতা বাড়বে ও লেনদেনে থাকবে চাঙাভাব।

আশার পাশাপাশি ভয়ও আছে। কারণ, গত জুন মাসে দেশের শেয়ারবাজারে রেকর্ড লেনদেন হয়েছে যা ৪৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে। জুন মাসে লেনদেন হওয়া ২২ দিনের মধ্যে ১২ দিনই দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। আর প্রতি কার্য দিবসে গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০১০ সালের জুন মাসে লেনদেন হয় ৩৮ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম তো বারবার বলেই আসছেন। আমাদের শেয়ারবাজারে কিছু দিনের মধ্যে লেনদেন ছাড়াবে ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

এশিয়ার তুলনীয় দেশগুলোর মধ্যে গত বছর বাংলাদেশের শেয়ারবাজার থেকে রিটার্ন এসেছে সবচেয়ে বেশি

লেনদেন যদি একটি বাজারের মুখ্য বিষয় হয়। তাহলে ভেবে দেখার বিষয় হলো-কোথায় কোন খাতে লেনদেন হচ্ছে। নির্দিষ্ট কিছু দুর্বল, রুগ্ণ মৌলভিত্তি সম্পন্ন খাত-বিমা, বস্ত্র অথবা কোন গ্রুপের নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ার এমনকি সদ্য ওটিসি মার্কেট থেকে ফেরা বন্ধ, দুর্বল কোম্পানির শেয়ার বছরব্যাপী লেনদেনের ও দর বাড়ার শীর্ষে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কোনভাবেই কারসাজির অংশ ছাড়া কিছু নয়। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ভালো মৌলভিত্তি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে ওই সমস্ত ছোট মূলধনি কোম্পানির জাঙ্ক শেয়ারে, যা সবসময়ই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর কাছে আকর্ষণীয় কিন্তু বিশেষজ্ঞ বা প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ। কমিশনের এ বিষয়ে আরও তৎপর হতে হবে। খতিয়ে দেখতে হবে-কোথায় কারসাজি হচ্ছে। লেনদেন বা বিনিয়োগ হচ্ছে ঠিকই-তবে তা গুণগত মানের হচ্ছে কি? ভালো মানের শেয়ারে লেনদেন না হলে এই লেনদেন বা সূচকের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

[লেখক : শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী]

back to top