alt

উপ-সম্পাদকীয়

টিকা বিভ্রান্তি ও রাজনীতি

ইকবাল কবীর জাহিদ

: রোববার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১
image

গণটিকা কার্যক্রমের কারণে এক দিনে ২৭ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন

এই প্রথম পাঠকদের অনুরোধে কিছু লিখছি। অনেকেই টিকা নেয়ার আগ্রহ আছে এবং কোনটি নেবে সেটা নিয়ে চিন্তিত বেশি। নিজেই আবাক হয়ে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের মানুষ মাস্ক পরার জন্য সচেতন না হলেও অনেক উন্নত দেশের তুলনায় টিকা নিতে অনেক আগ্রহী। শিরোনামে রাজনীতি শব্দটি লেখার কারণ হলো পাঠক যাতে পড়ার আগ্রহ পায়।

টিকা পাওয়া ও না-পাওয়ার রাজনীতি

আমরা ভাবতেও পারি না টিকা রাজনীতি কতটা প্রখর। সামান্য গণমাধ্যমে কিছু সংবাদ দেখে এটুকু ধারণা হয়েছে মানুষের যে চাইলেও টিকা সব সময় পাওয়া যায় না বা সব ধরনের টিকা সব দেশে অনুমোদন নেই। সব দেশে একইভাবে টিকা দেয়াও যাচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে যখন অনেক দেশ টিকা পাচ্ছে না তখন আমরা টিকার জোয়ারে ভাসছি। উন্নত দেশগুলো ৬০-৭০ ভাগ টিকা দিতে পারলেও নিম্ন আয়ের দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ ভাগ টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গড়ে সারাবিশ্বে প্রায় দেখায় ২৬ ভাগ, এটি আমার কথা নয় একটি বিশেষ ওয়েবসাইট যার নাম হলো “কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্র্যাকার”। ফলে বুঝতেই পারছি এই টিকা নিয়ে বিশ্বে কি অবস্থা। সেখানে আবশ্যই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ পাবেন এজন্য যে গণটিকা কার্যক্রমের কারণে এক দিনে ২৭ লাখ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। গত ২৬ জুলাই “আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা” তথ্যমতে, দুই ডোজ টিকা নিয়েছিল মাত্র ২.৬ শতাংশ মানুষ কিন্তু এক ডোজ টিকা নিয়েছিল ৩.৬ শতাংশ, যা বেড়ে দাঁড়াল ৬.২। তবে আরও ভালো হতো যদি এই দেশে আমরা উৎপাদন করতে পারতাম। আমাদের সামনে সেদিকেই ভাবতে হবে। কারণ এমন হতে পারে সামনে প্রতি বছর কিছু মানুষকে টিকা দেয়া লাগতে পারে।

করোনার কত ধরনের টিকা আছে?

পাঠকরা অবাক হবেন কত ধরনের এবং কত সংখ্যক করোনার টিকা আছে এটি জানলে। “কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্রাকার” তথ্যমতে, ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৪০৪টি টিকার ট্রায়াল চলছে। আমার মনে হয় না আর কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার জন্য এত ভ্যাকসিন ট্রায়াল হয়েছে। কিছুটা বলি, ট্রায়াল কি? সাধারণত তিনটা বা কখনও চারটি ধাপ পার হতে হয়। প্রথম ধাপে মাত্র একশত মানুষ বা তার কম নিয়ে করা যায় যেখানে সবাই সুস্থ। সেখানে দেখা হয় কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় কি না। সময় নেয়া হয় অল্প কিছু মাস। পরের ধাপে একশ’ থেকে কয়েকশ’ মানুষকে সেখানে আবার টিকা না দেয়া মানুষ থাকে। এখানেও ১ বছর থেকে ৪ বছর সময় দিতে হয়। পরের ধাপে কয়েক হাজার মানুষকে নেয়া হয়। এখানেও সময় দিতে হয় বেশি। শুধু মহামারীর কারণে সময় কম দেয়া হয়েছে করোনার টিকার ক্ষেত্রে। এতগুলো টিকার মধ্যে মাত্র ৩৬টি প্রথম ধাপ, ৫৬টি দ্বিতীয় ধাপ এবং ৪১টি তৃতীয় ধাপ পার হয়েছে। মাত্র ২১ তা অনুমোদন পেয়েছে।

টিকার অনুমোদন রাজনীতি

টিকার অনুমোদন যে কোন দেশের সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও টিকার অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই কাজটি করে থাকে। বাংলাদেশে করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি অনুমোদিত টিকা হলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা পৃথিবীর ১১৯টি দেশে অনুমোদন পেয়েছে। ফাইজারের টিকার অনুমোদন পেয়েছে ৯৬টি দেশে সেখানে মডার্নার টিকা মাত্র ৬৩ দেশে। রাশিয়ার স্পুতনিক-৫ এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৭০টি দেশে। তাহলে চিন্তা করা উচিত কীভাবে অনুমোদন রাজনীতি বিদ্যমান। চীনার টিকা সিনোভ্যাকের অনুমোদন মাত্র ৩৯ দেশে। বাংলাদেশে অনুমোদিত ৭টি টিকা হলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, ফাইজার-বায়োএনটেক, জনসন, স্পুতনিক ৫, সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক। যুক্তরাষ্ট্রে শুধু ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, ও জনসন ছাড়া কাউকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। আবার তাহলে কি বেশি অনুমোদিত টিকা বেশি ভালো? নাকি পুরাটাই একটি রাজনীতি? এ ভাবনা পাঠকের।

টিকা সরবরাহ রাজনীতি

বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের দেশে টিকার চরম সংকট আছে। সাম্প্রতিককালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ধনি দেশগুলোকে গরিব দেশে টিকা প্রদানের আহ্বান জানান হলেও সম্প্রতি ফ্রান্স ও জার্মানি বুস্টার ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে মাত্র ৪ কোটি টিকা সরবরাহ করতে পেরেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বছর সারাবিশ্বে সমানভাবে যাতে সবাই টিকা পায় এজন্যে কোভ্যাক্স গঠন করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালের মধ্যে ২০০ কোটি টিকা দেয়ার কথা থাকলেও সেটি এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না।

টিকা কার্যকারিতা বিভ্রান্তি ও রাজনীতি

টিকার কার্যকারিতা নিয়ে নিজেই বিভ্রান্তিতে আছি। যদি বিজ্ঞান বিশ্বাস করি তাহলে বিভিন্ন চিকিৎসা বিজ্ঞান সাময়িকী অনুসারে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা বেশি কার্যকরী যেহেতু বলেছে প্রায় ৯৪ ভাগ কার্যকরী। তারপরে আসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কথা। কিন্তু যদি ২০ বছরের অণুজীববিজ্ঞানের জ্ঞানের কথা বলি তাহলে আসে চায়না যেগুলো পুরো ভাইরাস ব্যবহার করে বানানো হয়েছে। কারণ এই ক্ষেত্রে পুরো ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি হওয়ার কথা। অন্যদের সেখানে শুধু স্পাইকের বিরুদ্ধে হবে। এছাড়া সাধারণ মানুষের একটি কথাও ভালো লেগেছে। ভাইরাস যার বানানো, টিকাও তার ভালো হওয়া উচিত। এছাড়াও আমরা যদি দেখি টিকা নেয়ার পর সংক্রমণ হার তাহলেও দেখা যাবে চায়নাতে কিন্তু সবচেয়ে কম। এছাড়াও সাম্প্রতিককালে চীনারা দাবি করছেন, সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক ডেল্টা ধরনে কার্যকরী। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন যেহেতু আমরা সব ধরনের টিকাই কিছু না কিছু নিচ্ছি। তাই যারা ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না নিয়ে অহঙ্কার করছেন তারা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করেন দেখি কে ভালো?

কেন সবাইকে সমানহারে টিকা দিতে হবে?

বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযাযী, করোনার টিকার শতকরা ৮৫ ভাগ রয়েছে উন্নত দেশগুলোর কাছে। তাই “আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা” তথ্যমতে, ৫০ ভাগের বেশি টিকা গ্রহণকারী দেশ হলো কানাডা, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ইটালি, ফ্রান্স, জার্মান, ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু শুধু উন্নত দেশগুলো টিকা গ্রহণ করে ভালো থাকবে এটা আশা করা ঠিক না কারণ হলো চূড়ান্তভাবে করোনা দূর করতে হলে কোন দেশের ৬০-৭০ ভাগ মানুষ ইমিউনিটি থাকতে হবে। যদি শুধু উন্নত দেশগুলো এটি অর্জন করে তবে কম টিকা গ্রহণকারী দেশ নতুন নতুন ধরন তৈরি করে সমস্যা বজায় রাখবে। সাম্প্রতিক আমরা যশোরের ওপর গবেষণায় দেখেছি ৩৫ ভাগ মানুষ প্রাকৃতিকভাবে জেনে বা না জেনে ইমিউনিটি তৈরি করে ফেলেছে। তবে এই ইমিউনিটি কতদিন থাকবে সেটিও প্রশ্ন। তাই এদেশের মানুষকে ৬০-৭০ ভাগ টিকা গ্রহণ করে মহামারী থেকে বাঁচতে হবে।

[লেখক : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ; সহযোগী পরিচালক, জিনোম সেন্টার, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

টিকা বিভ্রান্তি ও রাজনীতি

ইকবাল কবীর জাহিদ

image

গণটিকা কার্যক্রমের কারণে এক দিনে ২৭ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন

রোববার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

এই প্রথম পাঠকদের অনুরোধে কিছু লিখছি। অনেকেই টিকা নেয়ার আগ্রহ আছে এবং কোনটি নেবে সেটা নিয়ে চিন্তিত বেশি। নিজেই আবাক হয়ে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের মানুষ মাস্ক পরার জন্য সচেতন না হলেও অনেক উন্নত দেশের তুলনায় টিকা নিতে অনেক আগ্রহী। শিরোনামে রাজনীতি শব্দটি লেখার কারণ হলো পাঠক যাতে পড়ার আগ্রহ পায়।

টিকা পাওয়া ও না-পাওয়ার রাজনীতি

আমরা ভাবতেও পারি না টিকা রাজনীতি কতটা প্রখর। সামান্য গণমাধ্যমে কিছু সংবাদ দেখে এটুকু ধারণা হয়েছে মানুষের যে চাইলেও টিকা সব সময় পাওয়া যায় না বা সব ধরনের টিকা সব দেশে অনুমোদন নেই। সব দেশে একইভাবে টিকা দেয়াও যাচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে যখন অনেক দেশ টিকা পাচ্ছে না তখন আমরা টিকার জোয়ারে ভাসছি। উন্নত দেশগুলো ৬০-৭০ ভাগ টিকা দিতে পারলেও নিম্ন আয়ের দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ ভাগ টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গড়ে সারাবিশ্বে প্রায় দেখায় ২৬ ভাগ, এটি আমার কথা নয় একটি বিশেষ ওয়েবসাইট যার নাম হলো “কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্র্যাকার”। ফলে বুঝতেই পারছি এই টিকা নিয়ে বিশ্বে কি অবস্থা। সেখানে আবশ্যই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ পাবেন এজন্য যে গণটিকা কার্যক্রমের কারণে এক দিনে ২৭ লাখ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। গত ২৬ জুলাই “আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা” তথ্যমতে, দুই ডোজ টিকা নিয়েছিল মাত্র ২.৬ শতাংশ মানুষ কিন্তু এক ডোজ টিকা নিয়েছিল ৩.৬ শতাংশ, যা বেড়ে দাঁড়াল ৬.২। তবে আরও ভালো হতো যদি এই দেশে আমরা উৎপাদন করতে পারতাম। আমাদের সামনে সেদিকেই ভাবতে হবে। কারণ এমন হতে পারে সামনে প্রতি বছর কিছু মানুষকে টিকা দেয়া লাগতে পারে।

করোনার কত ধরনের টিকা আছে?

পাঠকরা অবাক হবেন কত ধরনের এবং কত সংখ্যক করোনার টিকা আছে এটি জানলে। “কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্রাকার” তথ্যমতে, ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৪০৪টি টিকার ট্রায়াল চলছে। আমার মনে হয় না আর কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার জন্য এত ভ্যাকসিন ট্রায়াল হয়েছে। কিছুটা বলি, ট্রায়াল কি? সাধারণত তিনটা বা কখনও চারটি ধাপ পার হতে হয়। প্রথম ধাপে মাত্র একশত মানুষ বা তার কম নিয়ে করা যায় যেখানে সবাই সুস্থ। সেখানে দেখা হয় কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় কি না। সময় নেয়া হয় অল্প কিছু মাস। পরের ধাপে একশ’ থেকে কয়েকশ’ মানুষকে সেখানে আবার টিকা না দেয়া মানুষ থাকে। এখানেও ১ বছর থেকে ৪ বছর সময় দিতে হয়। পরের ধাপে কয়েক হাজার মানুষকে নেয়া হয়। এখানেও সময় দিতে হয় বেশি। শুধু মহামারীর কারণে সময় কম দেয়া হয়েছে করোনার টিকার ক্ষেত্রে। এতগুলো টিকার মধ্যে মাত্র ৩৬টি প্রথম ধাপ, ৫৬টি দ্বিতীয় ধাপ এবং ৪১টি তৃতীয় ধাপ পার হয়েছে। মাত্র ২১ তা অনুমোদন পেয়েছে।

টিকার অনুমোদন রাজনীতি

টিকার অনুমোদন যে কোন দেশের সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও টিকার অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই কাজটি করে থাকে। বাংলাদেশে করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি অনুমোদিত টিকা হলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা পৃথিবীর ১১৯টি দেশে অনুমোদন পেয়েছে। ফাইজারের টিকার অনুমোদন পেয়েছে ৯৬টি দেশে সেখানে মডার্নার টিকা মাত্র ৬৩ দেশে। রাশিয়ার স্পুতনিক-৫ এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৭০টি দেশে। তাহলে চিন্তা করা উচিত কীভাবে অনুমোদন রাজনীতি বিদ্যমান। চীনার টিকা সিনোভ্যাকের অনুমোদন মাত্র ৩৯ দেশে। বাংলাদেশে অনুমোদিত ৭টি টিকা হলো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, ফাইজার-বায়োএনটেক, জনসন, স্পুতনিক ৫, সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক। যুক্তরাষ্ট্রে শুধু ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, ও জনসন ছাড়া কাউকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। আবার তাহলে কি বেশি অনুমোদিত টিকা বেশি ভালো? নাকি পুরাটাই একটি রাজনীতি? এ ভাবনা পাঠকের।

টিকা সরবরাহ রাজনীতি

বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের দেশে টিকার চরম সংকট আছে। সাম্প্রতিককালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ধনি দেশগুলোকে গরিব দেশে টিকা প্রদানের আহ্বান জানান হলেও সম্প্রতি ফ্রান্স ও জার্মানি বুস্টার ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে মাত্র ৪ কোটি টিকা সরবরাহ করতে পেরেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বছর সারাবিশ্বে সমানভাবে যাতে সবাই টিকা পায় এজন্যে কোভ্যাক্স গঠন করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালের মধ্যে ২০০ কোটি টিকা দেয়ার কথা থাকলেও সেটি এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না।

টিকা কার্যকারিতা বিভ্রান্তি ও রাজনীতি

টিকার কার্যকারিতা নিয়ে নিজেই বিভ্রান্তিতে আছি। যদি বিজ্ঞান বিশ্বাস করি তাহলে বিভিন্ন চিকিৎসা বিজ্ঞান সাময়িকী অনুসারে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা বেশি কার্যকরী যেহেতু বলেছে প্রায় ৯৪ ভাগ কার্যকরী। তারপরে আসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কথা। কিন্তু যদি ২০ বছরের অণুজীববিজ্ঞানের জ্ঞানের কথা বলি তাহলে আসে চায়না যেগুলো পুরো ভাইরাস ব্যবহার করে বানানো হয়েছে। কারণ এই ক্ষেত্রে পুরো ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি হওয়ার কথা। অন্যদের সেখানে শুধু স্পাইকের বিরুদ্ধে হবে। এছাড়া সাধারণ মানুষের একটি কথাও ভালো লেগেছে। ভাইরাস যার বানানো, টিকাও তার ভালো হওয়া উচিত। এছাড়াও আমরা যদি দেখি টিকা নেয়ার পর সংক্রমণ হার তাহলেও দেখা যাবে চায়নাতে কিন্তু সবচেয়ে কম। এছাড়াও সাম্প্রতিককালে চীনারা দাবি করছেন, সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক ডেল্টা ধরনে কার্যকরী। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন যেহেতু আমরা সব ধরনের টিকাই কিছু না কিছু নিচ্ছি। তাই যারা ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না নিয়ে অহঙ্কার করছেন তারা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করেন দেখি কে ভালো?

কেন সবাইকে সমানহারে টিকা দিতে হবে?

বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযাযী, করোনার টিকার শতকরা ৮৫ ভাগ রয়েছে উন্নত দেশগুলোর কাছে। তাই “আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা” তথ্যমতে, ৫০ ভাগের বেশি টিকা গ্রহণকারী দেশ হলো কানাডা, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ইটালি, ফ্রান্স, জার্মান, ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু শুধু উন্নত দেশগুলো টিকা গ্রহণ করে ভালো থাকবে এটা আশা করা ঠিক না কারণ হলো চূড়ান্তভাবে করোনা দূর করতে হলে কোন দেশের ৬০-৭০ ভাগ মানুষ ইমিউনিটি থাকতে হবে। যদি শুধু উন্নত দেশগুলো এটি অর্জন করে তবে কম টিকা গ্রহণকারী দেশ নতুন নতুন ধরন তৈরি করে সমস্যা বজায় রাখবে। সাম্প্রতিক আমরা যশোরের ওপর গবেষণায় দেখেছি ৩৫ ভাগ মানুষ প্রাকৃতিকভাবে জেনে বা না জেনে ইমিউনিটি তৈরি করে ফেলেছে। তবে এই ইমিউনিটি কতদিন থাকবে সেটিও প্রশ্ন। তাই এদেশের মানুষকে ৬০-৭০ ভাগ টিকা গ্রহণ করে মহামারী থেকে বাঁচতে হবে।

[লেখক : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ; সহযোগী পরিচালক, জিনোম সেন্টার, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top