alt

সাময়িকী

রহিমা আখতার কল্পনার কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩

সত্য খুঁজি
তুমি ভালোবাসো নাই তাই
আমার শরীর ভরা অজস্র সহস্র মাছিচোখ
নিজের ত্রুটির খোঁজে ক্রমাগত ক্রিয়াশীল।

কী ভুলে কখন সরিয়াছে প্রিয় ছায়াগাছটির মায়া
কতোটা অসম্পূর্ণতা ধরিয়া রাখিতে পারিল না
মেঘজল-ভরা মায়াবী গভীর দীঘি
যেইখানে আমি ডুবিয়াছি, মরিয়াছি সাঁতার-গভীর জলে
তৃষ্ণা তবু মিটে নাই, তৃষ্ণা তবু মিটিলো না কোনোকালে।

শীতপাতা উড়িয়া উড়িয়া জলে পড়ে, ভাসে ডোবে
আমি ডুবিয়াছি, আমি ভাসিয়াছি আরবার
বৃন্তুচ্যুত একাকী একটি শীতপাতা
বহুবার ডুবজলে খুঁজিয়াছি প্রিয় ঠাই, অথৈ গভীর অন্তর।

তুমি ভালোবাসিয়াছো, টানিয়াছো নাছোড় গ্রন্থির টানে
তুমি ভালোবাসো নাই, ডাকো তবু মন্থর বিচ্ছেদী গানে
কাছে আসিয়াছো তুমি গ্রহণে ও সীমাহীন গ্রাসে
দূরে সরিয়াছো তুমি গ্রহণে ও মায়াশূন্য গ্রাসে।
কাহারে মানিব সত্য, কাহারে জানিব অবগত চেনারূপে!
দুই সত্যে দীপ্যমান সত্যরে খুঁজিয়া মরিয়া মরিয়া বাঁচিতেছি।

এখন কি আর
এখন কি আর ফুটছে না ফুল, দেখছো কেবল ভুল
একলা আমার ডিঙ্গি যখন বেভুল হারায় কূল!
একলা যখন রাত-বিরাতের উথালপাতাল চাঁদ
শিরীষ-চূড়ায় আকাশ ঘুমায়, মন খুলে দেয় বাঁধ-
তোমার তখন রাত নিশুতির খুব অবিরাম ঘুম
জানলে না কার শিরায় শিরায় ডাকছিলো সাইমুম।

ভোরবেলাকার অমল বাতাস বুকের ভেতর পেতে
ছুটছে না মন, পা দু’খানাও চাইছে না দূর যেতে,
এখন তোমার সকালগুলোর মন ভারি হয় খুব
খোয়াব দেখার গহন হৃদয় নীলজলে দেয় ডুব।
বিকেলগুলোর জানলা কপাট নিজেই যখন আঁটো
আকাশ ধরার সাধ মরে যায়, হাত হয়ে যায় খাটো।

এখন তোমার সজাগ দিনের সবটা জুড়েই ফাঁকা
নিজেই যখন রোদের উঠান রাখছো কালোয় ঢাকা-
তখন কি আর পায়ের তলায় কোমল রঙের ফুল
করবে আবার লুটিয়ে পড়ার সেই পুরাতন ভুল!
মন-পোড়াবার এই পোড়া সাধ কোন দহনের দায়ে
কিসের দেনায় দেউলিয়া মন পরবে শেকল পায়ে!

নির্জনতা
নির্জনতা শিখবার পাঠশালা হয় তার বাড়ি
জনশূন্য একাকী দুপুর হয় অধ্যয়নকাল
তৃষ্ণার্ত দু’জন স্বপ্নলগ্ন মানুষের পরস্পর পাঠ-বিনিময়।

এই পাঠচক্রে দ্যাখো ঘুরিতেছে বিমুগ্ধ জগত
কে কারে ফেরায় বলো, কে কারে কেমন স্বরে ডাকে-
কার পুণ্যে, কার পাপে কার কি বা আসে যায়, বলো!

বেগানা মানুষ
[কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কবিতা]

মন গেছে মথুরায়, স্বামী গেছে বেকালের হাডো
বেগানা তোমার লাগি কান্দে চোখ, নিরালা গোপাডো
খাড়া থাহি চুপেচাপে, খায়া মাথা লাজ শরমের-
বুক জ্বলে, ফারাক বুঝি না গায়ে শীত-গরমের।
ঘরবাড়ি পুড়া পুড়া, ভাঙ্গাচুরা চালো নাই ছন

বাউরা বাতাসে ঘুরে ঘরছাড়া উড়াধুরা মন
শাওনে গড়ান চলে গাঙভাসা, চইতে খরান
বে-যতনে চিডা হৈয়া বিনালেই যায় সব ধান।

আবোলা বে-বুঝ মন পৈখ হৈয়া আনেবানে উড়ে
তুমারে স্মরণে লৈয়া ছৈট করি- খালি পেট পুড়ে,
হাত কান্দে পাও কান্দে, সোনামুহী অঙ্গ ভরা জ্বালা
সংসার ধুলাবালু, ছেঁউরিয়্যা দীল ফালা ফালা।

তুমি তো নদীর ঢেউ, পড়া ক্ষেতো ঢালো পানি, মায়া
জুড়ায় মনের তাপ ভিনজনে- তুমি ধন পা’য়া,
তুমি তো সুরুজ হৈয়া প’র দ্যাও গাছ-পাতা-ডালে
আমার কপাল পুড়ে খরখরা রৈদের তাফালে।

লিরিক
পাই না খুঁজে পাড়-ভাসানো আমার আপন নদী
আলোর দিশা দাও হে আমায় ও পরম দরদী।
কোন নদীটা নিজের একা

কোন নদীতে মুখটা দেখা
কোন জলেতে কাগুজে নাও ভাসাই হে দরদী,
কোথায় ভিজি, খানিকটা মাঠ নিজের না রয় যদি।

আজ নিরুপায় পালতোলা নাও খাতায় আঁকাআঁকি
নিজের দীঘি, মাঠভরা জল স্মৃতির পটেই রাখি।

বৈশাখে দিন রৌদ্র-পোড়া
বর্ষা-শরত স্বপ্নে মোড়া
হেমন্ত আর শীতের বিকেল টানছে নিরবধি
কিশোরবেলার উধাও দিনের টলমলে জলধি।
বলি ও দরদী
কোথায় ভিজি, খানিকটা মাঠ নিজের না রয় যদি।

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

শালুক-এর ‘ঐতিহ্যের উৎসমুখে অধুনাবাদী যাত্রা ২০২২’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বিদ্রোহী : বিশ্বতোরণে বৈজয়ন্তি মানববিজয়কেতন

ছবি

রাজনীতির জাগরী নয়, আন্তঃসম্পর্কের আত্মকথন

ছবি

নিঃসঙ্গতার একশো বছর নিজস্ব অনুষঙ্গের মুখোমুখি

ছবি

স্বনির্মিত ও প্রান্তজনের কথাশিল্পী

ছবি

সারারাত ভেজা একটা খরা জালের গল্প

ছবি

প্রিয় লোরকার উদ্দেশে

tab

সাময়িকী

রহিমা আখতার কল্পনার কবিতা

বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩

সত্য খুঁজি
তুমি ভালোবাসো নাই তাই
আমার শরীর ভরা অজস্র সহস্র মাছিচোখ
নিজের ত্রুটির খোঁজে ক্রমাগত ক্রিয়াশীল।

কী ভুলে কখন সরিয়াছে প্রিয় ছায়াগাছটির মায়া
কতোটা অসম্পূর্ণতা ধরিয়া রাখিতে পারিল না
মেঘজল-ভরা মায়াবী গভীর দীঘি
যেইখানে আমি ডুবিয়াছি, মরিয়াছি সাঁতার-গভীর জলে
তৃষ্ণা তবু মিটে নাই, তৃষ্ণা তবু মিটিলো না কোনোকালে।

শীতপাতা উড়িয়া উড়িয়া জলে পড়ে, ভাসে ডোবে
আমি ডুবিয়াছি, আমি ভাসিয়াছি আরবার
বৃন্তুচ্যুত একাকী একটি শীতপাতা
বহুবার ডুবজলে খুঁজিয়াছি প্রিয় ঠাই, অথৈ গভীর অন্তর।

তুমি ভালোবাসিয়াছো, টানিয়াছো নাছোড় গ্রন্থির টানে
তুমি ভালোবাসো নাই, ডাকো তবু মন্থর বিচ্ছেদী গানে
কাছে আসিয়াছো তুমি গ্রহণে ও সীমাহীন গ্রাসে
দূরে সরিয়াছো তুমি গ্রহণে ও মায়াশূন্য গ্রাসে।
কাহারে মানিব সত্য, কাহারে জানিব অবগত চেনারূপে!
দুই সত্যে দীপ্যমান সত্যরে খুঁজিয়া মরিয়া মরিয়া বাঁচিতেছি।

এখন কি আর
এখন কি আর ফুটছে না ফুল, দেখছো কেবল ভুল
একলা আমার ডিঙ্গি যখন বেভুল হারায় কূল!
একলা যখন রাত-বিরাতের উথালপাতাল চাঁদ
শিরীষ-চূড়ায় আকাশ ঘুমায়, মন খুলে দেয় বাঁধ-
তোমার তখন রাত নিশুতির খুব অবিরাম ঘুম
জানলে না কার শিরায় শিরায় ডাকছিলো সাইমুম।

ভোরবেলাকার অমল বাতাস বুকের ভেতর পেতে
ছুটছে না মন, পা দু’খানাও চাইছে না দূর যেতে,
এখন তোমার সকালগুলোর মন ভারি হয় খুব
খোয়াব দেখার গহন হৃদয় নীলজলে দেয় ডুব।
বিকেলগুলোর জানলা কপাট নিজেই যখন আঁটো
আকাশ ধরার সাধ মরে যায়, হাত হয়ে যায় খাটো।

এখন তোমার সজাগ দিনের সবটা জুড়েই ফাঁকা
নিজেই যখন রোদের উঠান রাখছো কালোয় ঢাকা-
তখন কি আর পায়ের তলায় কোমল রঙের ফুল
করবে আবার লুটিয়ে পড়ার সেই পুরাতন ভুল!
মন-পোড়াবার এই পোড়া সাধ কোন দহনের দায়ে
কিসের দেনায় দেউলিয়া মন পরবে শেকল পায়ে!

নির্জনতা
নির্জনতা শিখবার পাঠশালা হয় তার বাড়ি
জনশূন্য একাকী দুপুর হয় অধ্যয়নকাল
তৃষ্ণার্ত দু’জন স্বপ্নলগ্ন মানুষের পরস্পর পাঠ-বিনিময়।

এই পাঠচক্রে দ্যাখো ঘুরিতেছে বিমুগ্ধ জগত
কে কারে ফেরায় বলো, কে কারে কেমন স্বরে ডাকে-
কার পুণ্যে, কার পাপে কার কি বা আসে যায়, বলো!

বেগানা মানুষ
[কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার কবিতা]

মন গেছে মথুরায়, স্বামী গেছে বেকালের হাডো
বেগানা তোমার লাগি কান্দে চোখ, নিরালা গোপাডো
খাড়া থাহি চুপেচাপে, খায়া মাথা লাজ শরমের-
বুক জ্বলে, ফারাক বুঝি না গায়ে শীত-গরমের।
ঘরবাড়ি পুড়া পুড়া, ভাঙ্গাচুরা চালো নাই ছন

বাউরা বাতাসে ঘুরে ঘরছাড়া উড়াধুরা মন
শাওনে গড়ান চলে গাঙভাসা, চইতে খরান
বে-যতনে চিডা হৈয়া বিনালেই যায় সব ধান।

আবোলা বে-বুঝ মন পৈখ হৈয়া আনেবানে উড়ে
তুমারে স্মরণে লৈয়া ছৈট করি- খালি পেট পুড়ে,
হাত কান্দে পাও কান্দে, সোনামুহী অঙ্গ ভরা জ্বালা
সংসার ধুলাবালু, ছেঁউরিয়্যা দীল ফালা ফালা।

তুমি তো নদীর ঢেউ, পড়া ক্ষেতো ঢালো পানি, মায়া
জুড়ায় মনের তাপ ভিনজনে- তুমি ধন পা’য়া,
তুমি তো সুরুজ হৈয়া প’র দ্যাও গাছ-পাতা-ডালে
আমার কপাল পুড়ে খরখরা রৈদের তাফালে।

লিরিক
পাই না খুঁজে পাড়-ভাসানো আমার আপন নদী
আলোর দিশা দাও হে আমায় ও পরম দরদী।
কোন নদীটা নিজের একা

কোন নদীতে মুখটা দেখা
কোন জলেতে কাগুজে নাও ভাসাই হে দরদী,
কোথায় ভিজি, খানিকটা মাঠ নিজের না রয় যদি।

আজ নিরুপায় পালতোলা নাও খাতায় আঁকাআঁকি
নিজের দীঘি, মাঠভরা জল স্মৃতির পটেই রাখি।

বৈশাখে দিন রৌদ্র-পোড়া
বর্ষা-শরত স্বপ্নে মোড়া
হেমন্ত আর শীতের বিকেল টানছে নিরবধি
কিশোরবেলার উধাও দিনের টলমলে জলধি।
বলি ও দরদী
কোথায় ভিজি, খানিকটা মাঠ নিজের না রয় যদি।

back to top