তুমি
মহাদেব সাহা
আমার মাথায় জলভরা একটি আকাশ
তার নাম তুমি,
খর গ্রীষ্মে আমার উঠোনে অঝোর বর্ষণ
তুমি তার নাম;
ভীষণ তৃষ্ণার্ত এই পথিকের ক্লান্ত চোখে সুশীতল মেঘ
একমাত্র তুমি-
দুপুরের খরতাপ শেষে আমার জীবনে এই শান্ত সন্ধ্যা
তুমি, তুমি, তুমি;
মরুময় এই ভূপ্রকৃতি জুড়ে ঘন প্রেইরীর সবুজ উদ্যান
তুমি তার নাম,
আমার ধূসর দুই চোখে চিরসবুজের গাঢ় হাতছানি
তার নাম তুমি;
আমার স্মৃতির অববাহিকায় একটি স্বপ্নের প্রিয় নদী
তুমি নিরবধি।
পাতা পড়ে জল নড়ে
হাসান কল্লোল
যেভাবে পাতা পড়ে চৈতন্যের দুপুরে
আর পড়া পাতার শব্দে নেচে ওঠে জল!
যেভাবে আমি হয়ে উঠেছিলাম কিশোর
এবং তোমায় ছুঁয়ে দিতেই সব হলো উজ্জ্বল ॥
যেভাবে জলের কম্পনে ফড়িঙেরা ঘোরে
নারীর শরীর ভিজে গিয়ে যেভাবে হয় হিম
সবুজ ঘাসের পিঠে জলজ পাখিরা ঘুমায়
গাঢ় কুয়াশায় সুন্দরবনে বেদনা ফোটায় ডিম!
গোপন ঈর্ষাগুলো ভালোবাসা নামে ওড়ে
পাতা পড়ে, বিষময় সব ঘৃণাভরা পাতা পড়ে
আর নিষ্পাপ জলগুলো নড়েচড়ে ফেরে ঘরে!
পাতা পড়ে শুধু পাতা পড়ে
জল নড়ে তাতে জল নড়ে ॥
আর কোনো মুজিব নেই
এজাজ ইউসুফী
(বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মুখপত্র ‘মাতৃভূমি’-তে
১৫ আগস্ট ১৯৮৫ সালে মুদ্রিত)
যে কোন মানুষের স্বপ্নে
এক একজন মুজিব ফুটে থাকে
বিংশ শতকে ঊর্ধ্বে দু’হাত তুলে বেশ
এ বলতে পারি,
আর কোনো মুজিব নেই!
কারণ, দুয়ারে অর্গল
বেহুলার মুখ নেই তো,
বাইরে আইন ঘরে কারফিউ
বেরুতে চায় না কেউই,
কুমারী শরীর শক্ত ব্যারিকেডে
পরিত্রাণ খোঁজে
এ’ভাবে আনত মুখে লেগে থাকে প্রচণ্ড খরা।
অই বন্ধ দরজায় চুম্বন এঁকে শুধু
প্রিয় বিপ্লব ভুলে থাকি।
আর কোনো মুজিব নেই!...
সব নারী ফুল তোলে সব নারী পোয়াতী হয়
কখনো আকাশের দিকে ঠোঁটের
বাগান সাজিয়ে রাখে,
বুকে উম দেয় প্রিয়তম বালিয়াড়ি সে-
সে তো ধূসর কূলপ্লবী ছায়া,
কুমারী মৃত্যুর চতুর মিছিলে
বিশুদ্ধ চুম্বনের বাতাস বেরুলে
বেহুলার মুখে অসুখের ছায়া লাগে।
আর কোনো মুজিব নেই!...
ওড়নার ফাঁকে যুবতীর বুক
সমুদ্রের এক বুক নীরবতা,
শেষ দেখা হলে ভোরের আকাশ ছলছল করে
দিগন্তজোড়া চশমার ফাঁকে তাঁর মুখ মনে পড়ে।
আর কোনো মুজিব নেই!...
কবিতা
ইকবাল হোসেন বুলবুল
মনে পড়ে, ফাইনালে আর মাত্র পনেরো মিনিট। মধ্যমাঠে শূন্যে বল;
বুকে ধরে নামালাম, তোমার মামা তো ভাই প্রতিপক্ষ, পিছে ফেলে এগোতেই
সহপাঠির চ্যালেঞ্জ সামলে নিলাম।
সম্মুখে যে চারজন; দুজনকে বিয়োগ করার মন্ত্র ছিলো জানা, পরের দু’জন
আমার শিক্ষক, কৌশলের পায়ে ধরে বেয়াদবীহীনভাবে অগ্রসর হয়ে গেলে
বল-সহ ডি-বক্সের ছোঁয়া।
যে জন দাঁড়ানো ছিলো গোলপোস্টের ভিতর- সে তোমার ছোট ভাই, তাকে ছিলো খুবই মুখস্থ।
গোলটি নিশ্চিত হলে চোখে পড়ে উল্লসিত দর্শকের সারি। শুধু তুমি নেই।
বাড়িতে ফেরার পথে- কে যেনো উচ্চারণ করে নিলো, ততোক্ষণ অপেক্ষা করোনি
মন জ্বেলে
সৌম্য সালেক
এখন ভাঙার কিছু নেই
যা ছিল গুঁড়িয়েছে
অনাহত শীতের শাসনে
এখন গড়ার কিছু নেই
যা ছিল ধসে গেছে
সীমাহীন পীড়নে পেষণে
অব্যাকুল অধিরাত
মাঘের মহিমা শুধু জেগে
হাড় নেই, খড় নেই
মন জ্বেলে মাংস পোড়াও!
সাধনা
শারমিন সুলতানা রীনা
বিক্ষিপ্ত কোরোনা আর অশান্ত হৃদয়
বাঁচার নেশায় আছি তোমার শহরে
পাখির কণ্ঠের গান ফুরাবে তখন
বর্ণিল বাগান যদি ভেঙে যায় ঝরে
বুকের বন্দরে জ্বলে দিপ্তিময় শিখা
নেভাতে চাই না তাকে ক্রোধের অশ্রুতে
প্রবল আস্থায় আছি দাঁড়িয়ে দুয়ারে
কেন যে জিইয়ে রাখো অন্তরে আক্রোশ
নিজেকে করেছো নিজে হাঁটুর সমান
মায়ার সাধনা করে হও হিমালয়
রোববার, ২০ আগস্ট ২০২৩
তুমি
মহাদেব সাহা
আমার মাথায় জলভরা একটি আকাশ
তার নাম তুমি,
খর গ্রীষ্মে আমার উঠোনে অঝোর বর্ষণ
তুমি তার নাম;
ভীষণ তৃষ্ণার্ত এই পথিকের ক্লান্ত চোখে সুশীতল মেঘ
একমাত্র তুমি-
দুপুরের খরতাপ শেষে আমার জীবনে এই শান্ত সন্ধ্যা
তুমি, তুমি, তুমি;
মরুময় এই ভূপ্রকৃতি জুড়ে ঘন প্রেইরীর সবুজ উদ্যান
তুমি তার নাম,
আমার ধূসর দুই চোখে চিরসবুজের গাঢ় হাতছানি
তার নাম তুমি;
আমার স্মৃতির অববাহিকায় একটি স্বপ্নের প্রিয় নদী
তুমি নিরবধি।
পাতা পড়ে জল নড়ে
হাসান কল্লোল
যেভাবে পাতা পড়ে চৈতন্যের দুপুরে
আর পড়া পাতার শব্দে নেচে ওঠে জল!
যেভাবে আমি হয়ে উঠেছিলাম কিশোর
এবং তোমায় ছুঁয়ে দিতেই সব হলো উজ্জ্বল ॥
যেভাবে জলের কম্পনে ফড়িঙেরা ঘোরে
নারীর শরীর ভিজে গিয়ে যেভাবে হয় হিম
সবুজ ঘাসের পিঠে জলজ পাখিরা ঘুমায়
গাঢ় কুয়াশায় সুন্দরবনে বেদনা ফোটায় ডিম!
গোপন ঈর্ষাগুলো ভালোবাসা নামে ওড়ে
পাতা পড়ে, বিষময় সব ঘৃণাভরা পাতা পড়ে
আর নিষ্পাপ জলগুলো নড়েচড়ে ফেরে ঘরে!
পাতা পড়ে শুধু পাতা পড়ে
জল নড়ে তাতে জল নড়ে ॥
আর কোনো মুজিব নেই
এজাজ ইউসুফী
(বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মুখপত্র ‘মাতৃভূমি’-তে
১৫ আগস্ট ১৯৮৫ সালে মুদ্রিত)
যে কোন মানুষের স্বপ্নে
এক একজন মুজিব ফুটে থাকে
বিংশ শতকে ঊর্ধ্বে দু’হাত তুলে বেশ
এ বলতে পারি,
আর কোনো মুজিব নেই!
কারণ, দুয়ারে অর্গল
বেহুলার মুখ নেই তো,
বাইরে আইন ঘরে কারফিউ
বেরুতে চায় না কেউই,
কুমারী শরীর শক্ত ব্যারিকেডে
পরিত্রাণ খোঁজে
এ’ভাবে আনত মুখে লেগে থাকে প্রচণ্ড খরা।
অই বন্ধ দরজায় চুম্বন এঁকে শুধু
প্রিয় বিপ্লব ভুলে থাকি।
আর কোনো মুজিব নেই!...
সব নারী ফুল তোলে সব নারী পোয়াতী হয়
কখনো আকাশের দিকে ঠোঁটের
বাগান সাজিয়ে রাখে,
বুকে উম দেয় প্রিয়তম বালিয়াড়ি সে-
সে তো ধূসর কূলপ্লবী ছায়া,
কুমারী মৃত্যুর চতুর মিছিলে
বিশুদ্ধ চুম্বনের বাতাস বেরুলে
বেহুলার মুখে অসুখের ছায়া লাগে।
আর কোনো মুজিব নেই!...
ওড়নার ফাঁকে যুবতীর বুক
সমুদ্রের এক বুক নীরবতা,
শেষ দেখা হলে ভোরের আকাশ ছলছল করে
দিগন্তজোড়া চশমার ফাঁকে তাঁর মুখ মনে পড়ে।
আর কোনো মুজিব নেই!...
কবিতা
ইকবাল হোসেন বুলবুল
মনে পড়ে, ফাইনালে আর মাত্র পনেরো মিনিট। মধ্যমাঠে শূন্যে বল;
বুকে ধরে নামালাম, তোমার মামা তো ভাই প্রতিপক্ষ, পিছে ফেলে এগোতেই
সহপাঠির চ্যালেঞ্জ সামলে নিলাম।
সম্মুখে যে চারজন; দুজনকে বিয়োগ করার মন্ত্র ছিলো জানা, পরের দু’জন
আমার শিক্ষক, কৌশলের পায়ে ধরে বেয়াদবীহীনভাবে অগ্রসর হয়ে গেলে
বল-সহ ডি-বক্সের ছোঁয়া।
যে জন দাঁড়ানো ছিলো গোলপোস্টের ভিতর- সে তোমার ছোট ভাই, তাকে ছিলো খুবই মুখস্থ।
গোলটি নিশ্চিত হলে চোখে পড়ে উল্লসিত দর্শকের সারি। শুধু তুমি নেই।
বাড়িতে ফেরার পথে- কে যেনো উচ্চারণ করে নিলো, ততোক্ষণ অপেক্ষা করোনি
মন জ্বেলে
সৌম্য সালেক
এখন ভাঙার কিছু নেই
যা ছিল গুঁড়িয়েছে
অনাহত শীতের শাসনে
এখন গড়ার কিছু নেই
যা ছিল ধসে গেছে
সীমাহীন পীড়নে পেষণে
অব্যাকুল অধিরাত
মাঘের মহিমা শুধু জেগে
হাড় নেই, খড় নেই
মন জ্বেলে মাংস পোড়াও!
সাধনা
শারমিন সুলতানা রীনা
বিক্ষিপ্ত কোরোনা আর অশান্ত হৃদয়
বাঁচার নেশায় আছি তোমার শহরে
পাখির কণ্ঠের গান ফুরাবে তখন
বর্ণিল বাগান যদি ভেঙে যায় ঝরে
বুকের বন্দরে জ্বলে দিপ্তিময় শিখা
নেভাতে চাই না তাকে ক্রোধের অশ্রুতে
প্রবল আস্থায় আছি দাঁড়িয়ে দুয়ারে
কেন যে জিইয়ে রাখো অন্তরে আক্রোশ
নিজেকে করেছো নিজে হাঁটুর সমান
মায়ার সাধনা করে হও হিমালয়