alt

সাময়িকী

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

মুহাম্মদ সামাদ

: বুধবার, ২৩ আগস্ট ২০২৩

মুহাম্মদ সামাদ

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের পর থেকে বাঙালি জাতি দীর্ঘকালীন সামরিক স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে। সেই আতঙ্ক ও সংকট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলেই ধীরে ধীরে দেশে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। কালের পরিক্রমায় সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকে। কিন্তু জেল-জুলুম-নীপিড়ন-নির্যাতনে পিষ্ট হয়ে এক পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। দেশ ও জাতির সেই ঘোরতর অন্ধকারকালে, ১৯৮৭ সালে দেশের তরুণ-প্রবীণ কবিরা ‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্যে কবিতা’- এই শ্লোগান কণ্ঠে তুলে নিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় টিএসসির সড়কদ্বীপে জাতীয় কবিতা উৎসব আয়োজন করে স্তিমিতপ্রায় আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করেন। সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে কবিতা উৎসব প্রাঙ্গণ দেশের সকল প্রগতিশীল কবি-লেখক-সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ছাত্র-জনতার অনুপ্রেরণার উৎসস্থলে পরিণত হয়। তাই বাঙালির জীবনে জাতীয় কবিতা উৎসব এক অবিস্মরণীয় ঘটনা!

এভাবে কবিতা উৎসব কেবলমাত্র বাংলাদেশের নয়- দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এক অনন্য উৎসবের রূপ লাভ করেছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশে^র নানান দেশ ও ভাষার কবিরা উৎসবে অংশগ্রহণ করে চলেছেন। ১৯৮৭ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রতিবছর পয়লা ও দোসরা ফেব্রুয়ারি জাতীয় কবিতা পরিষদ পঁত্রিশটি উৎসব আয়োজন করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষায় জাতীয় কবিতা পরিষদ উৎসবের কণ্ঠে তুলে দিয়েছে নতুন নতুন শ্লোগান বা মর্মবাণী। কবিতা উৎসবের উৎসব সংগীত, ঘোষণাপত্র, ভাষণ-বক্তব্য, নতুন কবিতা ও সেমিনার-আলোচনা নব-নব মর্মবাণীকে ঘিরে আবর্তিত হয়ে চলেছে।

প্রথম কবিতা উৎসবের আহ্বায়ক ছিলেন বাংলা ভাষা-সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমান; উৎসব উদ্বোধন করেন কবি সুফিয়া কামাল এবং সভাপতিত্ব করেন কবি আবুল হোসেন। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, শুরুতে ‘প্রাক প্রস্তুতি কমিটি’র সদস্য হিসেবে ইউসুফ হাসান, মোজাম্মেল বাবু, তারিক সুজাত, শ্যামল জাকারিয়াসহ কয়েকজন তরুণ কবিতাকর্মী মিলে আমাদের প্রগতিমনা অগ্রজ কবিদের সঙ্গে যোগাযোগের কাজে উদ্যোগী হন। এদের মধ্যে শিল্পী ইউসুফ হাসান কবিতা পরিষদের লগো তৈরি করে দেন। প্রথম উৎসব আয়োজনের লক্ষ্যে কবি সুফিয়া কামাল, আবুল হোসেন, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, রফিক আজাদ, মোহাম্মদ রফিক, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, সাযযাদ কাদির, হুমায়ুন আজাদ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, মোহন রায়হান, জাফর ওয়াজেদ প্রমুখকে নিয়ে একটি আহ্বায়ক পরিষদ গঠন করা হয়েছিলো। ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলা একাডেমি বইমেলা প্রাঙ্গণে এক সন্ধ্যায় শামসুর রাহমান ও মোহাম্মদ রফিককে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এখানে বলা আবশ্যক যে, শুরুতে নামকরণ করা হয়েছিলো ‘জাতীয় কবিতা উৎসব পরিষদ’ এবং অচিরেই ‘উৎসব’ শব্দটি উঠিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ’। উল্লেখ্য, জাতীয় কবিতা পরিষদ-এর প্রথম কমিটির নির্বাহী সদস্য থেকে শুরু করে নানা দায়িত্বপালনের পরম্পরায় আমি সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত হই।

[১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩৫তম জাতীয় কবিতা উৎসব। কবি মুহাম্মদ সামাদ এই সংগঠনটির প্রথম নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান কমিটিতে তিনি সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তাঁরই অভিজ্ঞতাজাত ‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’ নামে একটি বই প্রকাশিত হচ্ছে এবারের বইমেলায়। গ্রন্থে মুহাম্মদ সামাদ বর্ণনা করেছেন জাতীয় কবিতা পরিষদের ঘটনাবহুল নানান স্মৃতিকথা ও ঘটনা পরম্পরা।]

দীর্ঘ সময় দায়িত্বপালনের সূত্রে, সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ধারণ করে সৃষ্ট জাতীয় কবিতা উৎসবের শ্লোগান বা মর্মবাণীর আলোকেলিখিত আমার ভাষণএই গ্রন্থের প্রথম পর্বে; আর নানা সময়ে দেয়া আমার দশটি সাক্ষাৎকার দ্বিতীয় পর্বে গ্রথিত হলো। বলা বাহুল্য, কিছু পুনরাবৃত্তি হলেও সাক্ষাৎকারগুলো হুবহু রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

গ্রন্থের পরিশিষ্টে আমার রচিত চারটি ঘোষণাপত্র,ছয়টি উৎসব সংগীত; এবং ১৯৮৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩৫টি কবিতা উৎসবের শ্লোগান বা মর্মবাণী যুক্ত করা হলো। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সাল থেকে একাধারে ১২টি উৎসব উদ্বোধন করেছেন জাতির সকল সংকটকালের জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামাল। ১৯৯৭ সালে উৎসবে উপস্থিত হতে না-পেরে তিনি একটি আশীর্বাণী দিয়েছিলেন- যা ছিলো জাতীয় কবিতা উৎসবে তাঁর একমাত্র লিখিত বক্তব্য। অন্যদিকে, আমাদের দ্বিতীয় উৎসবে, জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি শামসুর রাহমান প্রথম লিখিত ভাষণ প্রদান করেন। বাংলাদেশের প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক ইতিহাসের তাৎপর্য বিবেচনায় কবি সুফিয়া কামালের অমূল্য আশীর্বাণী ও শামসুর রাহমানের মূল্যবান বক্তব্যও গ্রন্থের পরিশিষ্টে সন্নিবেশিত হলো।

আমার কবিবন্ধু ও জাতীয় কবিতা উৎসবের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সৃষ্ট শ্লোগান অবলম্বনে গ্রন্থের নামকরণের জন্যে তাঁকে ভালোবাসায় স্মরণ করি। স্থপতি মুস্তাফা খালীদ অঙ্কিত প্রথম কবিতা উৎসবের পোস্টার অবলম্বনে গ্রন্থের প্রচ্ছদ করেছেন তরুণ গ্রাফিক ডিজাইনার সিজন নাহিয়ান। তাঁদের জন্যে আমার শুভকামনা রইলো।

এই গ্রন্থ প্রকাশে আমাকে উৎসাহিত করেছেন আমার স্ত্রী রীমা, ড. আমিনুর রহমান সুলতান, ড. শেখ মেহেদী হাসান, কবি পিয়াস মজিদ ও চিত্রশিল্পী ফারজানা আহমেদ। তাঁদের সবাইকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। আমার অনুজতুল্য জনাব একেএম আফতাবুজ্জামান গ্রন্থের পা-ুলিপি ও নির্ঘণ্ট তৈরি করে দিয়েছেন। গ্রন্থের প্রথম অংশের লেখাগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে কম্পোজ করেছেন জার্নিম্যান-এর জনাব মোঃ আকতার হোসেন। তাঁদের কাছে আমার ঋণ অপরিশোধ্য।

গ্রন্থটি সযত্নে প্রকাশের জন্যে নবান্ন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিজ সাহেলী তাসিমা ফিরদৌসকে আন্তরিক ধন্যবাদজানাই।

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

tab

সাময়িকী

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

মুহাম্মদ সামাদ

মুহাম্মদ সামাদ

বুধবার, ২৩ আগস্ট ২০২৩

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-ের পর থেকে বাঙালি জাতি দীর্ঘকালীন সামরিক স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে। সেই আতঙ্ক ও সংকট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলেই ধীরে ধীরে দেশে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে। কালের পরিক্রমায় সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকে। কিন্তু জেল-জুলুম-নীপিড়ন-নির্যাতনে পিষ্ট হয়ে এক পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। দেশ ও জাতির সেই ঘোরতর অন্ধকারকালে, ১৯৮৭ সালে দেশের তরুণ-প্রবীণ কবিরা ‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্যে কবিতা’- এই শ্লোগান কণ্ঠে তুলে নিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় টিএসসির সড়কদ্বীপে জাতীয় কবিতা উৎসব আয়োজন করে স্তিমিতপ্রায় আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করেন। সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে কবিতা উৎসব প্রাঙ্গণ দেশের সকল প্রগতিশীল কবি-লেখক-সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ছাত্র-জনতার অনুপ্রেরণার উৎসস্থলে পরিণত হয়। তাই বাঙালির জীবনে জাতীয় কবিতা উৎসব এক অবিস্মরণীয় ঘটনা!

এভাবে কবিতা উৎসব কেবলমাত্র বাংলাদেশের নয়- দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এক অনন্য উৎসবের রূপ লাভ করেছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশে^র নানান দেশ ও ভাষার কবিরা উৎসবে অংশগ্রহণ করে চলেছেন। ১৯৮৭ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রতিবছর পয়লা ও দোসরা ফেব্রুয়ারি জাতীয় কবিতা পরিষদ পঁত্রিশটি উৎসব আয়োজন করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষায় জাতীয় কবিতা পরিষদ উৎসবের কণ্ঠে তুলে দিয়েছে নতুন নতুন শ্লোগান বা মর্মবাণী। কবিতা উৎসবের উৎসব সংগীত, ঘোষণাপত্র, ভাষণ-বক্তব্য, নতুন কবিতা ও সেমিনার-আলোচনা নব-নব মর্মবাণীকে ঘিরে আবর্তিত হয়ে চলেছে।

প্রথম কবিতা উৎসবের আহ্বায়ক ছিলেন বাংলা ভাষা-সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমান; উৎসব উদ্বোধন করেন কবি সুফিয়া কামাল এবং সভাপতিত্ব করেন কবি আবুল হোসেন। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, শুরুতে ‘প্রাক প্রস্তুতি কমিটি’র সদস্য হিসেবে ইউসুফ হাসান, মোজাম্মেল বাবু, তারিক সুজাত, শ্যামল জাকারিয়াসহ কয়েকজন তরুণ কবিতাকর্মী মিলে আমাদের প্রগতিমনা অগ্রজ কবিদের সঙ্গে যোগাযোগের কাজে উদ্যোগী হন। এদের মধ্যে শিল্পী ইউসুফ হাসান কবিতা পরিষদের লগো তৈরি করে দেন। প্রথম উৎসব আয়োজনের লক্ষ্যে কবি সুফিয়া কামাল, আবুল হোসেন, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, রফিক আজাদ, মোহাম্মদ রফিক, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, সাযযাদ কাদির, হুমায়ুন আজাদ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, মোহন রায়হান, জাফর ওয়াজেদ প্রমুখকে নিয়ে একটি আহ্বায়ক পরিষদ গঠন করা হয়েছিলো। ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলা একাডেমি বইমেলা প্রাঙ্গণে এক সন্ধ্যায় শামসুর রাহমান ও মোহাম্মদ রফিককে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এখানে বলা আবশ্যক যে, শুরুতে নামকরণ করা হয়েছিলো ‘জাতীয় কবিতা উৎসব পরিষদ’ এবং অচিরেই ‘উৎসব’ শব্দটি উঠিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ’। উল্লেখ্য, জাতীয় কবিতা পরিষদ-এর প্রথম কমিটির নির্বাহী সদস্য থেকে শুরু করে নানা দায়িত্বপালনের পরম্পরায় আমি সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত হই।

[১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩৫তম জাতীয় কবিতা উৎসব। কবি মুহাম্মদ সামাদ এই সংগঠনটির প্রথম নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান কমিটিতে তিনি সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তাঁরই অভিজ্ঞতাজাত ‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’ নামে একটি বই প্রকাশিত হচ্ছে এবারের বইমেলায়। গ্রন্থে মুহাম্মদ সামাদ বর্ণনা করেছেন জাতীয় কবিতা পরিষদের ঘটনাবহুল নানান স্মৃতিকথা ও ঘটনা পরম্পরা।]

দীর্ঘ সময় দায়িত্বপালনের সূত্রে, সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ধারণ করে সৃষ্ট জাতীয় কবিতা উৎসবের শ্লোগান বা মর্মবাণীর আলোকেলিখিত আমার ভাষণএই গ্রন্থের প্রথম পর্বে; আর নানা সময়ে দেয়া আমার দশটি সাক্ষাৎকার দ্বিতীয় পর্বে গ্রথিত হলো। বলা বাহুল্য, কিছু পুনরাবৃত্তি হলেও সাক্ষাৎকারগুলো হুবহু রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

গ্রন্থের পরিশিষ্টে আমার রচিত চারটি ঘোষণাপত্র,ছয়টি উৎসব সংগীত; এবং ১৯৮৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩৫টি কবিতা উৎসবের শ্লোগান বা মর্মবাণী যুক্ত করা হলো। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সাল থেকে একাধারে ১২টি উৎসব উদ্বোধন করেছেন জাতির সকল সংকটকালের জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামাল। ১৯৯৭ সালে উৎসবে উপস্থিত হতে না-পেরে তিনি একটি আশীর্বাণী দিয়েছিলেন- যা ছিলো জাতীয় কবিতা উৎসবে তাঁর একমাত্র লিখিত বক্তব্য। অন্যদিকে, আমাদের দ্বিতীয় উৎসবে, জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি শামসুর রাহমান প্রথম লিখিত ভাষণ প্রদান করেন। বাংলাদেশের প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক ইতিহাসের তাৎপর্য বিবেচনায় কবি সুফিয়া কামালের অমূল্য আশীর্বাণী ও শামসুর রাহমানের মূল্যবান বক্তব্যও গ্রন্থের পরিশিষ্টে সন্নিবেশিত হলো।

আমার কবিবন্ধু ও জাতীয় কবিতা উৎসবের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সৃষ্ট শ্লোগান অবলম্বনে গ্রন্থের নামকরণের জন্যে তাঁকে ভালোবাসায় স্মরণ করি। স্থপতি মুস্তাফা খালীদ অঙ্কিত প্রথম কবিতা উৎসবের পোস্টার অবলম্বনে গ্রন্থের প্রচ্ছদ করেছেন তরুণ গ্রাফিক ডিজাইনার সিজন নাহিয়ান। তাঁদের জন্যে আমার শুভকামনা রইলো।

এই গ্রন্থ প্রকাশে আমাকে উৎসাহিত করেছেন আমার স্ত্রী রীমা, ড. আমিনুর রহমান সুলতান, ড. শেখ মেহেদী হাসান, কবি পিয়াস মজিদ ও চিত্রশিল্পী ফারজানা আহমেদ। তাঁদের সবাইকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। আমার অনুজতুল্য জনাব একেএম আফতাবুজ্জামান গ্রন্থের পা-ুলিপি ও নির্ঘণ্ট তৈরি করে দিয়েছেন। গ্রন্থের প্রথম অংশের লেখাগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে কম্পোজ করেছেন জার্নিম্যান-এর জনাব মোঃ আকতার হোসেন। তাঁদের কাছে আমার ঋণ অপরিশোধ্য।

গ্রন্থটি সযত্নে প্রকাশের জন্যে নবান্ন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিজ সাহেলী তাসিমা ফিরদৌসকে আন্তরিক ধন্যবাদজানাই।

back to top