সুমী সিকানদার
আবাল্য কাব্যবান্ধব কবি কাজী রোজী বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য উচ্চারিত নাম। সামগ্রিক সত্যে তিনি জীবন অন্বেষণ করে গেছেন জীবনভর। কবিতাই তাঁর ঘর। তাঁর লেখালেখির পেছনে ছিলেন তার বাবা সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম। তাঁর মুখের কথাতেও কবিতারা আশ্রয় পেতো। বহুমাত্রিক বিষয় এবং ভাবনাকে নিয়ে তিনি পথ চলেছেন বহুদিন। লিখেছেন বহুদিন ধরে।
ঠিক একবছর সময় ধরে তিনি বাহ্যিক দেহ ছেড়ে চলে গেছেন। কোথাও তার শারীরিক উপস্থিতি নেই। কবিতায় , অনুষ্ঠানে, মঞ্চে, নাটকে, রাজনৈতিক অঙ্গনে, প্রতিষ্ঠানে, আড্ডায় এই নামটির অভাব বোধ করেছি। কবিতা উৎসবে পায়রা ওড়ানো মানুষটি নিজেই সাদা পায়রা দলের সাথে উড়ে গেছেন।
গত ২০ ফ্রেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী চলে গেছে একেবারে নীরবে নিভৃতে। চেনাজানা সদা সাথের সাথিদের কাউকে এই দিনটি নিয়ে দু’কলম লিখতে বা বলতে শোনা যায়নি। সারাজীবন শিল্প সাহিত্যের টানে নিরলস ছুটে চলা এই মানুষটিকে নিয়ে অবাক করা নিস্তব্ধতা গেলো সারা বছর ধরে।
আজ বইমেলার ডামাডোলে বিস্মৃত কবি কাজী রোজীকে নিয়ে লিখছি। তার অতীত সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ, বিভিন্ন শাখায় তার অবদান এবং সর্বোপরি তাঁর লেখালেখির বলয় নিয়ে বলছি। কাজী রোজীর কবিতা কেবল বাংলা ভাষাতে নয়, অনূদিত হয়েছে ইংরেজিতেও এবং গ্রন্থ আকারে আমাদের হাতে এসেছে তার জীবদ্দশাতেই।
তাঁর বইগুলোতে তাঁর লেখার স্বভাব অনায়াসে পাওয়া যায়। তার প্রেম, বিরহ, ক্ষোভ, বিদ্রোহ, দেশ মাতৃকা, প্রকৃতি কিংবা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চোখ এড়িয়ে যায় না। তিনি ছিলেন সচেতন মানবিক মানুষ। সমাজের অসংগতি তাকে ব্যথিত করতো।
তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। নাম “পথ ঘাট মানুষের নাম।’’ এই বইয়ের ‘জয়গুনের মা’ কবিতাটি একটি মাইলফলক ছন্দ কবিতা।
‘পথ চিনিনে ঘাট চিনিনে
জয়গুনের মা নাম জানিনে
পথ ছাড়িয়ে ঘাস মাড়িয়ে
কোন সুদূরে কোথায় যাব
ভরদুপুরে বিলাপ করা
জয়গুনের মা দেখতে পাবো।’
‘মাতামহী বললেন’ কবিতাটাও মনের গহীনে ধার কাটে।
‘নানিগো রাইখ্যা গেলাম’, এই সংলাপের আর্তি উপেক্ষা করা কঠিন। প্রথমে নিজের কন্যার প্রয়াণ এবং পরবর্তীতে পরের প্রজন্ম অর্থাৎ নাতনিও তার কাছে সন্তানেরর ভার দিয়ে দেহ ত্যাগ করে।
জীবনের কত দিক তিনি দু’চোখে দেখেছেন তার কতটুকুই বা ধরে রাখতে পেরেছেন। তবে যতটুকু লিখিত রেখেছেন তা কোনওভাবেই কম নয় বরং যথেষ্ট। এ প্রসঙ্গে কবি কাজী রোজীর কবিতার মূল্যায়ন করেছিলেন বিশিষ্ট কবি সৈয়দ শামসুল হক। অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কাজী রোজী দীর্ঘদিন ধরে কবিতা লিখছেন। কখনও গদ্যে কখনো ছন্দে কখনও সংলাপ নিয়ে কথা বলেছেন, এবং সংলাপনির্ভর কবিতা এবং প্রতিসংলাপ নয়ে কাজী রোজী যতখানি লিখেছেন আমার মনে হয় না যে আমাদের সময়ে আর কেউ এরকম লিখেছেন বা তার ব্যবহার করেছেন।’’
‘এরই নাম স্বাধীনতা’ নামের বইটা নিয়ে কবি কাজী রোজীর উচ্ছ্বাস ছিলো আলাদা মাত্রার, কারণ বইটির অলংকরণ করেছিলেন বরেণ্য শিল্পি কাইয়ুম চৌধুরী। বইটিকে লালসবুজ পতাকার বীর শহীদদের পুণ্য স্মৃতিতে উৎসর্গ করেন তিনি।
এই বই থেকে যে কবিতার কথা না বললেই নয় সেটা ‘দহন ১’
‘ভাত দিবার পারোস না ভাতার হবার চাস,
কেমন মরদ তুই হারামজাদা
নিত্যি রাইতে কেন গতরে গতর চাস
পরাণ দিয়েই যদি পরাণ বাঁধা’
কবিতার এই চরণগুলির জন্য তিনি ১৯৮২ সালে লা ফরটিনা ক্রেস্ট পেয়েছিলেন যা অত্যন্ত সম্মানজনক।
আরও একটা অনুচ্ছেদ বার বার ভাবায়, আবেগতাড়িত করে।
‘ছাওয়াল কানলি পরে এ পোড়া গতরটারে
মাঝির বৈঠা ভেবে দাঁড়ে দেই টান
হায়রে সোয়ামি তোরে ছুঁইয়া কইতে পারি
ক্ষরায় জমিন পোড়ে, পোড়ে না পরাণ।’’
দেশাত্মবোধ থেকে বিচ্ছুরণের মতো ফুটে উঠেছে তার ধারালো শব্দ। প্রচুর কবিতা এবং গানে আসন গেড়ে আছে তাঁর দেশ মা। গ্রামের চিরন্তন সৌন্দর্যে মুগ্ধ এবং আচ্ছন্ন ছিলেন তিনি। রাজধানীর বাইরে আনাচে কানাচে যখন যেখানে গেছেন স্মৃতি কুড়িয়ে এনেছেন- যা তার লেখায় এসেছে বার বার।
‘জারুল পাতায় চিকন রোদের হাসি
ন্যাংটা ছেলের পথ ফুরানো বাঁশী
ঢিল ছোঁড়া ঐ পুকুরজলে কাঁপায় কলমিলতা
আমার চোখে এরই নাম স্বাধীনতা।’’
‘এক কলাম তিন ইঞ্চি সংবাদ’ কবিতাটি ভিন্ন মাত্রার। সমাজের রাখঢাক করে রাখা যৌনকর্মীদের নিয়ে এই কবিতার তাঁর হাহাকার পাই।
‘কান্দুপট্টিতে লেগেছে আগুন
ফায়ার ব্রিগেড এসে ফিরে গেছে
পুলিশ বাহিনী এসে ফিরে গেছে
বেদম প্রহার করে
ফিরিয়ে দিয়েছে বেশ্যা সকল।’
যারা পেটের তাগিদে দেহকে বাজি রেখে কোনও মতে টিকে আছে, তাদের জীবনকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেয় সভ্য সমাজ। পুড়িয়ে দেয় গুঁড়িয়ে দেয় তাবৎ আবর্জনা। তারাও মানুষ। সমাজের প্রয়োজনীয় সময়ের নির্ধারিত মানুষ।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য রয়েছে কবি কাজী রোজীর মায়া মাখানো হাত। এই শিশুদের স্বার্থ রক্ষায় নানা সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত থেকে ফুল শিশুদের কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। লিখেছেন ‘লড়াই’ নামের বইটি। সংলাপধর্মী এই বইটি সাধারণ পাঠক ছাড়াও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়ার জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছে BVIPS নামক একটি সংগঠন। ফলে সকলেই এই বইটি পাঠের আনন্দ উপভোগ করতে পেরেছেন।
কবি কাজী রোজী তার প্রতিটি লেখায় তারিখ দিতেন। ফলে তিনি মুহূর্তেই দশ বছর পেছনের স্মৃতি সামনে নিয়ে আসতে পারতেন। তারিখ দেয়ার এই অভ্যাস সবার মধ্যে নেই। যখন খুশি নিজের পার হয়ে যাওয়া সময়কে সামনে নিয়ে আসতেন।
‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’ কবিতায় মিশে আছে টুঙ্গীপাড়ার মাটি, মধুমতি নদী, ডুবসাঁতার , ছেলেবেলা , জাতির পিতা।
‘কোটি কোটি মানুষের নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে
সেই নাম বাংলার ভূগোল সীমানায়
বঙ্গবন্ধু তিনি... তিনি বিশ্বময়।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মবার্ষিকীতে তার অনবদ্য উচ্চারণ
‘বার বার মৃত্যু ত্রিশূল তাকে বিদ্ধ করতে চেয়েছে
পারেনি... তবু সে তো আছে,
তার এই থাকাটাই... এই রয়ে যাওয়াটাই
আকাশ সমুদ্দুরে আনবে সকাল
শোনাবে দিনরাত্রির স্বপ্ন কোকিলের গান।’’
নিজ সন্তানকে নিয়ে লিখেছেন ‘আত্মজার কাছে’
‘শিশুকাল থেকে ষে আমার গলার তাবিজ
কত ধ্যান আরাধনা শেষে ষোড়শীর মতো প্রায় আজ
আমার অতীত নিয়ে হাতে
অদ্ভুত শাসনের সাথে
বন্ধুর মতো কাছে এসে চোখের উপরে রাখে চোখ’।
ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা হবার কারণে মাঠে ময়দানে নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কিছুটা নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর অনেক পরে তিনি নিজের অবস্থান প্রকাশ করেন ১৯৭১ সালের এক কালো অধ্যায়ের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে।
১৯৭১ সালে পাক সেনাদের হাতে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা ছিলেন তাঁর বন্ধু, প্রতিবেশী, সহযোদ্ধা। কবি মেহেরুন্নেসা চাকরির পাশাপাশি বাংলা একাডেমিতে অনুলেখনের কাজ করতেন। মিরপুরের অবাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকায় তাদের বাসস্থান এই দুই কবির এক মেরুর তথা এক মানসিকতার মানুষকে কাছে নিয়ে আসে।
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর ২৩ শে মার্চ কবি মেহেরুন্নেসা তার বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং এই পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে অবাঙ্গালিদের সাথে প্রত্যক্ষ হাতাহাতি হয়। কবি মেহেরুন্নেসা অবাঙ্গালিদের টার্গেটে পরিণত হন। সেই সময় দলে দলে লোক মিরপুর ছেড়ে সরে যাচ্ছিলেন। কবি কাজী রোজী তাকে পরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেছিলেন। পরে তিনি নিরাপদ আশ্রয় বা সুবিধা পাননি। তার ভাইয়েরাও ছিল অনেক ছোট। সুযোগ মতো অবাঙ্গালি হানাদারেরা পরিবারটিকে একে একে জবাই করে শেষ করে। এই ঘটনা কবি কাজী রোজীকে কঠিন আঘাত করে।
পরবর্তীতে তিনি ঘাতক কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন কোর্টে উপস্থিত হয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকিকে অগ্রাহ্য করে। আজও বন্ধুর জন্য বন্ধুর এই ত্যাগ স্বীকার তুলনার যোগ্য নয়।
কবি মেহেরুন্নেসাকে নিয়ে লেখা কবি কাজী রোজীর এই বইটির নাম ‘শহিদ কবি মেহেরুন্নেসা’। বইটা প্রকাশ করেছিল বাংলা একাডেমি।
কাজী রোজীর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। অজস্র গান তিনি লিখে রেখেগেছেন, যা বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে এক সময় প্রচুর প্রচার হয়েছে। তার গানের একমাত্র বই ‘সূর্যের সিড়ি বেয়ে’। এই বইয়ের বাইরেও তার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গান শ্রোতা সমাদৃত হয়েছিলো। আমার দোষে কারো নাকি কপাল ভেঙ্গেছে, ওগো নদী কেন বও নিরবধি, ঐ পতাকা আমার মায়ের মুখের মতো কারুকার্যময়, আকাশ আঁধার হোক, এমনি করে সবাই যাবে যেতেই হবে, এরকম বহু জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি।
১৯৯৩ সালে তার শরীরে বাসা বাঁধে ক্যান্সারের জীবানু- যা ছড়িয়ে পড়ার আগেই তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং ফের নিজের চাকরি এবং লেখালেখির জগত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি তথ্য অধিদপ্তরের অধীনে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ দশম জাতীয় সংসদের মাননীয় সাংসদ নির্বাচিত হন।
মঞ্চের জন্য নাটক লেখা তাঁর জন্য চ্যলেঞ্জ ছিলো। তিনি লিখেছেন ‘কুসুম বেত্তান্ত’ যা ভারতের উড়িষ্যায় সাত্ত্বিক নাট্যসম্প্রদায় মঞ্চস্থ করেছে। এছাড়া ‘কুসুম উপাখ্যান’ নিয়মিত সে সময় শিল্পকলা একাডেমি এবং মহিলা সমিতি মঞ্চে প্রদর্শিত হয়েছে। বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলেও তার কিছু নাটক প্রচারিত হয়েছিল।
বাংলাদেশে বেতারের বহু অনুষ্ঠান গ্রন্থনা এবং উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন কবি কাজী রোজী নিয়মিত। কবিতা আবৃত্তিতে তিনি ছিলেন চেনা মুখ।
জাতির জনককে নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘শেখ মুজিব বাঙ্গালির বাতিঘর’। এই বইয়ের উল্লেখযোগ্য কবিতা যুদ্ধচিত্র।
খালটুকু শুকিয়ে গেছে
লাশগুলো হয়েছে কংকাল
দালানবাড়ির নিয়ন বাতি অপেক্ষাতেই আছে
তবু মোছাতে পারিনি মায়ের চোখের পানি
ফোটাতে পারিনি মায়ের মুখের ভাষা।
ডিসেম্বর কবিতার লাইন অনন্যমাত্রা দেয়
‘ছেলেদের তাক করে গুলি ছুঁড়তে হয়
মেয়েদের চোখে চোখ রেখে তাকাতে হয়।’
জাতির পিতার প্রতি তাঁর সম্মানের পরিধি নির্ণয়ের অতীত। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তিনি লিখলেন।
‘কাঁদলেন একজন নিপাট মানুষ
হয়তো মায়ের উঠোন খানি মলিন ধুলোয় পূর্ণ ছিল
হয়তো গাঁয়ের বৃদ্ধ, যুবা মত্ত ছিলো ট্রেনিং নিয়ে
হয়তো বোনের নকশি আঁচল সুবিন্যস্ত ছিলো মেঘনার জলে
ভয়াবহ স্মৃতির ফ্রেম খসে গেল অকস্মাৎ
তিনি কাঁদলেন
কাঁদলেন একজন সহজ মানুষ।’’
কবি কাজী রোজীর কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন সিদ্দিক মাহমুদুর রহমান। নিজের মা-বাবাকে উৎসর্গ করা এই বইটি নিয়ে তার অনেক আনন্দ ছিলো। বইটির নাম Selected Poems of Quazi Rosy, which was published in February 2015, was translated by Siddique Mahmudur Rahman.,
এছাড়া বাংলাদেশের ৫০ জন কবির কবিতা নিয়ে একটি বই সংকলিত হয়েছিলো যা তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। তিনি এই বইটিতে সবার মাঝে রয়ে গেলেন। বইটির নাম Arise out of the Lock, which was published in 2022, was curated by Alam Khorshed and translated by Nabina Das.
তাঁর লেখা একটি কবিত্যার অনুবাদের কিছু অংশ পাঠকের জন্য দিলাম।
“Ornament”.
ÒNow woman means
The male sun of an unadorned sky,
Man means the womanÕs tidy courtyard;
After all ornaments of wars are shed,
Now a manÕs ornament is the sun
A woman’s ornament is the creative woman herself..”
কবি কাজী রোজী জীবদ্দশায় পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, ২০০৮ সালে কোলকাতা থেকে মহাদিগন্ত পুরস্কার, ২০০৮ সালে নির্ণয় পদক, ২০১৩ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৩ সালে সা’দত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৬ সালে শুভজন সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৮ সালে কবিতায় অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০২১ সালে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পদকসহ আরও উল্লেখযোগ্য পদক, পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন।
কবি কাজী রোজী তার প্রতিটি বইতে তার ঠিকানায় লিখতেন তিনি তাঁর একমাত্র মেয়ে সুমী সিকানদারের সাথে বসবাস করেন। দৈহিক ভাবে না হলেও তিনি আজও তার সন্তানের সাথেই বসবাস করেন, করবেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হিসেবে তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে এই স্বল্প পরিসরের লেখায় তাঁকে প্রণতি জানাই।
সুমী সিকানদার
বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩
আবাল্য কাব্যবান্ধব কবি কাজী রোজী বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য উচ্চারিত নাম। সামগ্রিক সত্যে তিনি জীবন অন্বেষণ করে গেছেন জীবনভর। কবিতাই তাঁর ঘর। তাঁর লেখালেখির পেছনে ছিলেন তার বাবা সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম। তাঁর মুখের কথাতেও কবিতারা আশ্রয় পেতো। বহুমাত্রিক বিষয় এবং ভাবনাকে নিয়ে তিনি পথ চলেছেন বহুদিন। লিখেছেন বহুদিন ধরে।
ঠিক একবছর সময় ধরে তিনি বাহ্যিক দেহ ছেড়ে চলে গেছেন। কোথাও তার শারীরিক উপস্থিতি নেই। কবিতায় , অনুষ্ঠানে, মঞ্চে, নাটকে, রাজনৈতিক অঙ্গনে, প্রতিষ্ঠানে, আড্ডায় এই নামটির অভাব বোধ করেছি। কবিতা উৎসবে পায়রা ওড়ানো মানুষটি নিজেই সাদা পায়রা দলের সাথে উড়ে গেছেন।
গত ২০ ফ্রেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী চলে গেছে একেবারে নীরবে নিভৃতে। চেনাজানা সদা সাথের সাথিদের কাউকে এই দিনটি নিয়ে দু’কলম লিখতে বা বলতে শোনা যায়নি। সারাজীবন শিল্প সাহিত্যের টানে নিরলস ছুটে চলা এই মানুষটিকে নিয়ে অবাক করা নিস্তব্ধতা গেলো সারা বছর ধরে।
আজ বইমেলার ডামাডোলে বিস্মৃত কবি কাজী রোজীকে নিয়ে লিখছি। তার অতীত সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ, বিভিন্ন শাখায় তার অবদান এবং সর্বোপরি তাঁর লেখালেখির বলয় নিয়ে বলছি। কাজী রোজীর কবিতা কেবল বাংলা ভাষাতে নয়, অনূদিত হয়েছে ইংরেজিতেও এবং গ্রন্থ আকারে আমাদের হাতে এসেছে তার জীবদ্দশাতেই।
তাঁর বইগুলোতে তাঁর লেখার স্বভাব অনায়াসে পাওয়া যায়। তার প্রেম, বিরহ, ক্ষোভ, বিদ্রোহ, দেশ মাতৃকা, প্রকৃতি কিংবা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চোখ এড়িয়ে যায় না। তিনি ছিলেন সচেতন মানবিক মানুষ। সমাজের অসংগতি তাকে ব্যথিত করতো।
তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। নাম “পথ ঘাট মানুষের নাম।’’ এই বইয়ের ‘জয়গুনের মা’ কবিতাটি একটি মাইলফলক ছন্দ কবিতা।
‘পথ চিনিনে ঘাট চিনিনে
জয়গুনের মা নাম জানিনে
পথ ছাড়িয়ে ঘাস মাড়িয়ে
কোন সুদূরে কোথায় যাব
ভরদুপুরে বিলাপ করা
জয়গুনের মা দেখতে পাবো।’
‘মাতামহী বললেন’ কবিতাটাও মনের গহীনে ধার কাটে।
‘নানিগো রাইখ্যা গেলাম’, এই সংলাপের আর্তি উপেক্ষা করা কঠিন। প্রথমে নিজের কন্যার প্রয়াণ এবং পরবর্তীতে পরের প্রজন্ম অর্থাৎ নাতনিও তার কাছে সন্তানেরর ভার দিয়ে দেহ ত্যাগ করে।
জীবনের কত দিক তিনি দু’চোখে দেখেছেন তার কতটুকুই বা ধরে রাখতে পেরেছেন। তবে যতটুকু লিখিত রেখেছেন তা কোনওভাবেই কম নয় বরং যথেষ্ট। এ প্রসঙ্গে কবি কাজী রোজীর কবিতার মূল্যায়ন করেছিলেন বিশিষ্ট কবি সৈয়দ শামসুল হক। অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কাজী রোজী দীর্ঘদিন ধরে কবিতা লিখছেন। কখনও গদ্যে কখনো ছন্দে কখনও সংলাপ নিয়ে কথা বলেছেন, এবং সংলাপনির্ভর কবিতা এবং প্রতিসংলাপ নয়ে কাজী রোজী যতখানি লিখেছেন আমার মনে হয় না যে আমাদের সময়ে আর কেউ এরকম লিখেছেন বা তার ব্যবহার করেছেন।’’
‘এরই নাম স্বাধীনতা’ নামের বইটা নিয়ে কবি কাজী রোজীর উচ্ছ্বাস ছিলো আলাদা মাত্রার, কারণ বইটির অলংকরণ করেছিলেন বরেণ্য শিল্পি কাইয়ুম চৌধুরী। বইটিকে লালসবুজ পতাকার বীর শহীদদের পুণ্য স্মৃতিতে উৎসর্গ করেন তিনি।
এই বই থেকে যে কবিতার কথা না বললেই নয় সেটা ‘দহন ১’
‘ভাত দিবার পারোস না ভাতার হবার চাস,
কেমন মরদ তুই হারামজাদা
নিত্যি রাইতে কেন গতরে গতর চাস
পরাণ দিয়েই যদি পরাণ বাঁধা’
কবিতার এই চরণগুলির জন্য তিনি ১৯৮২ সালে লা ফরটিনা ক্রেস্ট পেয়েছিলেন যা অত্যন্ত সম্মানজনক।
আরও একটা অনুচ্ছেদ বার বার ভাবায়, আবেগতাড়িত করে।
‘ছাওয়াল কানলি পরে এ পোড়া গতরটারে
মাঝির বৈঠা ভেবে দাঁড়ে দেই টান
হায়রে সোয়ামি তোরে ছুঁইয়া কইতে পারি
ক্ষরায় জমিন পোড়ে, পোড়ে না পরাণ।’’
দেশাত্মবোধ থেকে বিচ্ছুরণের মতো ফুটে উঠেছে তার ধারালো শব্দ। প্রচুর কবিতা এবং গানে আসন গেড়ে আছে তাঁর দেশ মা। গ্রামের চিরন্তন সৌন্দর্যে মুগ্ধ এবং আচ্ছন্ন ছিলেন তিনি। রাজধানীর বাইরে আনাচে কানাচে যখন যেখানে গেছেন স্মৃতি কুড়িয়ে এনেছেন- যা তার লেখায় এসেছে বার বার।
‘জারুল পাতায় চিকন রোদের হাসি
ন্যাংটা ছেলের পথ ফুরানো বাঁশী
ঢিল ছোঁড়া ঐ পুকুরজলে কাঁপায় কলমিলতা
আমার চোখে এরই নাম স্বাধীনতা।’’
‘এক কলাম তিন ইঞ্চি সংবাদ’ কবিতাটি ভিন্ন মাত্রার। সমাজের রাখঢাক করে রাখা যৌনকর্মীদের নিয়ে এই কবিতার তাঁর হাহাকার পাই।
‘কান্দুপট্টিতে লেগেছে আগুন
ফায়ার ব্রিগেড এসে ফিরে গেছে
পুলিশ বাহিনী এসে ফিরে গেছে
বেদম প্রহার করে
ফিরিয়ে দিয়েছে বেশ্যা সকল।’
যারা পেটের তাগিদে দেহকে বাজি রেখে কোনও মতে টিকে আছে, তাদের জীবনকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেয় সভ্য সমাজ। পুড়িয়ে দেয় গুঁড়িয়ে দেয় তাবৎ আবর্জনা। তারাও মানুষ। সমাজের প্রয়োজনীয় সময়ের নির্ধারিত মানুষ।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য রয়েছে কবি কাজী রোজীর মায়া মাখানো হাত। এই শিশুদের স্বার্থ রক্ষায় নানা সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত থেকে ফুল শিশুদের কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। লিখেছেন ‘লড়াই’ নামের বইটি। সংলাপধর্মী এই বইটি সাধারণ পাঠক ছাড়াও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়ার জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছে BVIPS নামক একটি সংগঠন। ফলে সকলেই এই বইটি পাঠের আনন্দ উপভোগ করতে পেরেছেন।
কবি কাজী রোজী তার প্রতিটি লেখায় তারিখ দিতেন। ফলে তিনি মুহূর্তেই দশ বছর পেছনের স্মৃতি সামনে নিয়ে আসতে পারতেন। তারিখ দেয়ার এই অভ্যাস সবার মধ্যে নেই। যখন খুশি নিজের পার হয়ে যাওয়া সময়কে সামনে নিয়ে আসতেন।
‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’ কবিতায় মিশে আছে টুঙ্গীপাড়ার মাটি, মধুমতি নদী, ডুবসাঁতার , ছেলেবেলা , জাতির পিতা।
‘কোটি কোটি মানুষের নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে
সেই নাম বাংলার ভূগোল সীমানায়
বঙ্গবন্ধু তিনি... তিনি বিশ্বময়।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মবার্ষিকীতে তার অনবদ্য উচ্চারণ
‘বার বার মৃত্যু ত্রিশূল তাকে বিদ্ধ করতে চেয়েছে
পারেনি... তবু সে তো আছে,
তার এই থাকাটাই... এই রয়ে যাওয়াটাই
আকাশ সমুদ্দুরে আনবে সকাল
শোনাবে দিনরাত্রির স্বপ্ন কোকিলের গান।’’
নিজ সন্তানকে নিয়ে লিখেছেন ‘আত্মজার কাছে’
‘শিশুকাল থেকে ষে আমার গলার তাবিজ
কত ধ্যান আরাধনা শেষে ষোড়শীর মতো প্রায় আজ
আমার অতীত নিয়ে হাতে
অদ্ভুত শাসনের সাথে
বন্ধুর মতো কাছে এসে চোখের উপরে রাখে চোখ’।
ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা হবার কারণে মাঠে ময়দানে নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কিছুটা নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর অনেক পরে তিনি নিজের অবস্থান প্রকাশ করেন ১৯৭১ সালের এক কালো অধ্যায়ের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে।
১৯৭১ সালে পাক সেনাদের হাতে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা ছিলেন তাঁর বন্ধু, প্রতিবেশী, সহযোদ্ধা। কবি মেহেরুন্নেসা চাকরির পাশাপাশি বাংলা একাডেমিতে অনুলেখনের কাজ করতেন। মিরপুরের অবাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকায় তাদের বাসস্থান এই দুই কবির এক মেরুর তথা এক মানসিকতার মানুষকে কাছে নিয়ে আসে।
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর ২৩ শে মার্চ কবি মেহেরুন্নেসা তার বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং এই পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে অবাঙ্গালিদের সাথে প্রত্যক্ষ হাতাহাতি হয়। কবি মেহেরুন্নেসা অবাঙ্গালিদের টার্গেটে পরিণত হন। সেই সময় দলে দলে লোক মিরপুর ছেড়ে সরে যাচ্ছিলেন। কবি কাজী রোজী তাকে পরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেছিলেন। পরে তিনি নিরাপদ আশ্রয় বা সুবিধা পাননি। তার ভাইয়েরাও ছিল অনেক ছোট। সুযোগ মতো অবাঙ্গালি হানাদারেরা পরিবারটিকে একে একে জবাই করে শেষ করে। এই ঘটনা কবি কাজী রোজীকে কঠিন আঘাত করে।
পরবর্তীতে তিনি ঘাতক কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন কোর্টে উপস্থিত হয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকিকে অগ্রাহ্য করে। আজও বন্ধুর জন্য বন্ধুর এই ত্যাগ স্বীকার তুলনার যোগ্য নয়।
কবি মেহেরুন্নেসাকে নিয়ে লেখা কবি কাজী রোজীর এই বইটির নাম ‘শহিদ কবি মেহেরুন্নেসা’। বইটা প্রকাশ করেছিল বাংলা একাডেমি।
কাজী রোজীর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। অজস্র গান তিনি লিখে রেখেগেছেন, যা বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে এক সময় প্রচুর প্রচার হয়েছে। তার গানের একমাত্র বই ‘সূর্যের সিড়ি বেয়ে’। এই বইয়ের বাইরেও তার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গান শ্রোতা সমাদৃত হয়েছিলো। আমার দোষে কারো নাকি কপাল ভেঙ্গেছে, ওগো নদী কেন বও নিরবধি, ঐ পতাকা আমার মায়ের মুখের মতো কারুকার্যময়, আকাশ আঁধার হোক, এমনি করে সবাই যাবে যেতেই হবে, এরকম বহু জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি।
১৯৯৩ সালে তার শরীরে বাসা বাঁধে ক্যান্সারের জীবানু- যা ছড়িয়ে পড়ার আগেই তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং ফের নিজের চাকরি এবং লেখালেখির জগত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি তথ্য অধিদপ্তরের অধীনে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ দশম জাতীয় সংসদের মাননীয় সাংসদ নির্বাচিত হন।
মঞ্চের জন্য নাটক লেখা তাঁর জন্য চ্যলেঞ্জ ছিলো। তিনি লিখেছেন ‘কুসুম বেত্তান্ত’ যা ভারতের উড়িষ্যায় সাত্ত্বিক নাট্যসম্প্রদায় মঞ্চস্থ করেছে। এছাড়া ‘কুসুম উপাখ্যান’ নিয়মিত সে সময় শিল্পকলা একাডেমি এবং মহিলা সমিতি মঞ্চে প্রদর্শিত হয়েছে। বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলেও তার কিছু নাটক প্রচারিত হয়েছিল।
বাংলাদেশে বেতারের বহু অনুষ্ঠান গ্রন্থনা এবং উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন কবি কাজী রোজী নিয়মিত। কবিতা আবৃত্তিতে তিনি ছিলেন চেনা মুখ।
জাতির জনককে নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘শেখ মুজিব বাঙ্গালির বাতিঘর’। এই বইয়ের উল্লেখযোগ্য কবিতা যুদ্ধচিত্র।
খালটুকু শুকিয়ে গেছে
লাশগুলো হয়েছে কংকাল
দালানবাড়ির নিয়ন বাতি অপেক্ষাতেই আছে
তবু মোছাতে পারিনি মায়ের চোখের পানি
ফোটাতে পারিনি মায়ের মুখের ভাষা।
ডিসেম্বর কবিতার লাইন অনন্যমাত্রা দেয়
‘ছেলেদের তাক করে গুলি ছুঁড়তে হয়
মেয়েদের চোখে চোখ রেখে তাকাতে হয়।’
জাতির পিতার প্রতি তাঁর সম্মানের পরিধি নির্ণয়ের অতীত। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তিনি লিখলেন।
‘কাঁদলেন একজন নিপাট মানুষ
হয়তো মায়ের উঠোন খানি মলিন ধুলোয় পূর্ণ ছিল
হয়তো গাঁয়ের বৃদ্ধ, যুবা মত্ত ছিলো ট্রেনিং নিয়ে
হয়তো বোনের নকশি আঁচল সুবিন্যস্ত ছিলো মেঘনার জলে
ভয়াবহ স্মৃতির ফ্রেম খসে গেল অকস্মাৎ
তিনি কাঁদলেন
কাঁদলেন একজন সহজ মানুষ।’’
কবি কাজী রোজীর কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন সিদ্দিক মাহমুদুর রহমান। নিজের মা-বাবাকে উৎসর্গ করা এই বইটি নিয়ে তার অনেক আনন্দ ছিলো। বইটির নাম Selected Poems of Quazi Rosy, which was published in February 2015, was translated by Siddique Mahmudur Rahman.,
এছাড়া বাংলাদেশের ৫০ জন কবির কবিতা নিয়ে একটি বই সংকলিত হয়েছিলো যা তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। তিনি এই বইটিতে সবার মাঝে রয়ে গেলেন। বইটির নাম Arise out of the Lock, which was published in 2022, was curated by Alam Khorshed and translated by Nabina Das.
তাঁর লেখা একটি কবিত্যার অনুবাদের কিছু অংশ পাঠকের জন্য দিলাম।
“Ornament”.
ÒNow woman means
The male sun of an unadorned sky,
Man means the womanÕs tidy courtyard;
After all ornaments of wars are shed,
Now a manÕs ornament is the sun
A woman’s ornament is the creative woman herself..”
কবি কাজী রোজী জীবদ্দশায় পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, ২০০৮ সালে কোলকাতা থেকে মহাদিগন্ত পুরস্কার, ২০০৮ সালে নির্ণয় পদক, ২০১৩ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৩ সালে সা’দত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৬ সালে শুভজন সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৮ সালে কবিতায় অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০২১ সালে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পদকসহ আরও উল্লেখযোগ্য পদক, পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন।
কবি কাজী রোজী তার প্রতিটি বইতে তার ঠিকানায় লিখতেন তিনি তাঁর একমাত্র মেয়ে সুমী সিকানদারের সাথে বসবাস করেন। দৈহিক ভাবে না হলেও তিনি আজও তার সন্তানের সাথেই বসবাস করেন, করবেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হিসেবে তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে এই স্বল্প পরিসরের লেখায় তাঁকে প্রণতি জানাই।