alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪

তোমাকে দেখার পর থেকে
মহাদেব সাহা

তোমাকে দেখার পর থেকে কীরকম গ-গোল

হয়ে গেলো সমস্ত জীবন,

ওলটপালট হয়ে গেলো সবকিছু-

সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেললাম বুঝ খেই, চিন্তাসূত্র হয়ে গেলো

বিশৃঙ্খল, এলোমেলো;

কেবল তোমারই মুখ দেখি বৃক্ষপত্রে, জ্যোতিস্কম-লে

উচ্ছল ঝর্নার জলে, বুকশেলফে, পড়ার টেবিলে,

টেলিভিশনের উজ্জ্বল পর্দায়-

এমনকি ডিশ অ্যান্টেনাও ঢেকে দিতে পারেনি তোমার মুখ

রেডিও বা ক্যাসেট খুলেই শুনি তোমার নিবিড় কণ্ঠস্বর।

তোমাকে দেখার পর থেকে কীরকম পাল্টে গেলো

আমার আকাশ

সেখানে এখন শুধু চাঁদের বদলে তুমি ওঠো,

আর একটাই ওঠে সন্ধ্যাতারা, সেও তুমি।

বইগুলো খুলে দেখি সব গ্রন্থজুড়ে শুধু

এই একটাই শব্দ তাতে লেখা-

তোমাকে দেখার পর থেকে অসম্ভব বদলে গেছে

আমার ভুবন

বদলে গেছে জলবায়ু, দিনরাত্রি, ঋতু।

একটি শব্দের অন্বেষায়
রাহমান ওয়াহিদ

একটা শব্দ খুঁজছি। শব্দটির কোনো শব্দ থাকবে না।

পাঁজরের হাড়ে নিঃশব্দে বসে থেকে কুট কুট করে কাটতে

থাকবে শরীরের সমস্ত অণু পরমাণু, উষ্ণ অনুভবে।

শব্দটি আমার হারিয়ে যাবার ইচ্ছেটিতে ওম্ দেবে, যেন

রূপান্তরিত হতে পারি অনস্পর্শী মানবের প্রতিশব্দে।

সে কোন শাসনের দ- নিয়ে দাঁড়াবে না কোথাও,

আমাকেও দাঁড়াতে দেবে না হিম পাহাড়ের গায়ে

হেলান দিয়ে দু’দ- ক্লান্তি জুড়োতে কখনও।

কোথাও এমন তুখোর শব্দ নেই জানি, আকাশও রাখেনি

তারে জমিয়ে, তবু শব্দটিকে খুঁজছি আমি হৃদয় হারানোর

মতো ত্রস্ততায়, সৃজনজন্মের গূঢ় মগ্নতায়।

কুয়োতলায় একবারই দাঁড়িয়েছিল সে একাকী হয়ে, তার

নিশ্বাসে টের পেতাম টেনে নেবার মতো দারুণ হিং¯্রতা!

তেমন একটি শব্দই যেন খুঁজে চলেছি এখনও, এই অবেলায়

অসহ্য দূরত্বের বিবমিষায়, অজ¯্র ভাঙচুরের বিচূর্ণ বিষাদে...

সিনা টানটান একুশ শতক
আহমেদ ফরিদ

কী ভয়ানক সুন্দর এক মূর্তি!

সিনা টানটান করে রয়েছে দাঁড়িয়ে, হাজারো সঙ্গিন সামনে,

আজানুলম্বিত দুইবাহু প্রসারিত, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া।

পটভূমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে বৃক্ষ, শূল দ- হয়ে

এ যেন এক যিশু, একবিংশ শতকের যিশু।

যিশু বলেছিলেন এ রাজত্ব, এ সা¤্রাজ্য কারো নয়

সা¤্রাজ্যের মালিকানা শুধুই মহান প্রভুর,

ঈশ্বরের পক্ষে মানুষের, কিংডম অফ গড,

হাজারো মানুষের কণ্ঠস্বরই ঈশ্বরের বাণীর প্রতিধ্বনি।

রাজা ক্রোধানলে জ্বলে উঠলেন

না, ঈশ্বরের প্রতিনিধি শুধুই রাজা, আর প্রজারা শুধুই প্রজা।

অতএব যিশু ঈশ্বরদ্রোহী, তাঁর সাজা শূলদ-।

পন্তিয় পিলাত ধর্মের গুরু, রাজার সুরেই কথা বলেন।

“ওরা কি করছে তা জানে না প্রভু” বলে যিশু শুলে চড়ে পড়েন,

পৃথিবীর সমস্ত পাপ তাপ বুকে নিয়ে।

অতঃপর ঈশ্বর তাঁকে তুলে নেন স্বমহিমায় তাঁরই কাছে।

এমন দৃশ্য আবার নেমে আসে, এই বাংলায়,

নূরল দিনের এই দেশে।

মানুষের কণ্ঠস্বর যখন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর

তাদের আত্মাগুলো যখন মৃত্যুর দরোজায়,

আর স্বপ্নগুলো কাঁঠাল পাতার মতোই তির তির করে খুন হয়ে ঝরে পড়ে

যখন তারা রাজাদের ক্রীতদাস হয়ে যায়

মুক্তির দূত হয়ে তখনই একজন যিশু আসে কিংবা একজন নূরল দিন।

সেদিন, পড়ন্ত এক বিকেল, পাখিরা তাদের প্রণয় ভুলে গেছে,

ভালোবাসার লাল গোলাপেরা লজ্জায় ম্লান হয়ে গেছে,

গুল্ম আর বৃক্ষ বৃষ্টিয় প্রার্থনা তুলে রেখেছে,

মমতাময়ী জননীদের হৃদয় চৌচির হয়ে দর বিগলিত জলধারায় অশ্রুসিক্ত

যুবক আর যুবতীদের পদভারে রাজপথগুলো মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত, রক্তাক্ত

ঘাতকদের সঙ্গিনে হাজারো মানুষের রক্তপানে উন্মত্ত পানৌখির লকলকে জিব

ঠিক তখনই আকাশ থেকে নেমে আসে যিশু, নূরল দিন- এক আবু সাঈদ।

রক্ত নেবে? কত রক্ত লাগবে তোমার?

ভালোবাসার লাল গোলাপে আবৃত বুক পেতে টানটান হয়ে দাঁড়ান তিনি

অতঃপর রচিত হয় মুক্তির এক ইতিহাস, এক ক্রুশারোপন।

মানুষ মৃত্যুকে যুগে যুগে প্রত্যাখ্যান করেছে

আর তুমি মৃত্যুকে প্রত্যাঘাত করে তাকেই শূলে চড়িয়েছো

আহা! মৃত্যুর কী দারুণ পরাজয়!

বিজয়, মানুষের মুক্তির বিজয় মৃন্ময় হয়ে রয়।

কীভাবে আমরা তোমার এই রক্তঋণ পরিশোধ করব?

ঠিক জানি না। আমাদের প্রতিশ্রুতি-

আমরা পল হয়ে তোমার এই ত্যাগের মহিমা প্রচার করব,

পিটার হয়ে তোমার স্মৃতি আমাদের বক্ষে ধারণ করবো,

আমাদের ইস্টার সানডে হলো সতেরো জুলাই, মঙ্গলবার।

সুখ সুখ দুঃখগুলো
সন্জীবন কুমার

সমস্ত অরণ্য ভরে গেছে কাক,

গানের পাখিরা সব চলে গেছে দূরতম দেশে...

গাছের ছায়ায় বসলেই, মানুষেরা ফুল হয়ে যাবে

মন থেকে বুনো মেঘ উধাও হবে নিমিষে

নক্ষত্রের কাছে, তেমন ভরসা কই?

বিষাদ নারীর মতো নদী চলে হায়!

যাবতীয় দুঃখগুলো টেড তরঙ্গে মিশে যায়।

ধানক্ষেতে একাকার ওই যে পাহাড়

সেও জানে না কতটুকু সুখ আছে তার।

এখন এই সমস্ত আকাশে নবমী নিশির

কোনো বেদনা নেই, নেই কোনো হাহাকার।

শুধু সময়ের আবরণে মুখ বুজে থাকে ইতিহাস।

প্রতিটা মুহূর্ত যেন দেশভাগের কান্না ভেসে ওঠে

চোখে নামে উদ্বাস্তুর হাঁসফাঁস।

সভ্যতার আলো ধীরে ধীরে

নিভে যায়, আহা কী যে সর্বনাশ!

বয়ে যাচ্ছে মানুষ
মালেক মুস্তাকিম

জল কেটে কেটে সাঁতরে পার হচ্ছে ঘুম; রাতগুলো রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একটানা হাঁফাচ্ছে- স্ট্রেচারে ভাঙছে ঢেউ, বৃক্ষের কোমর জড়িয়ে শুয়ে আছে ব্যালকনি- যেভাবেই হাওয়া বয়ে যায়, শুকনো পাতায় ওড়ে মৃত হরিণের গান; এ মিউজিক কেবল ঘুমন্ত শালিকেরা শুনতে পায়- আমি বহুবার শুনেছি আমার নামে বেজে-ওঠা অচেনা বালিকার নাভিস্বর; যা কিছু ডুবে গেছে কুয়াশার কোমরে, স্তনে, নিয়তির ন্যাপকিনে- ঘোর সন্ধ্যায় ডেকে নিয়ে তাকে খুন করে চলে গেছে দুপুরের নির্জনতা। ভেসে গেছে নদীমুখ- এমন কোলাহলে কোনদিকে হাঁটা দেবে জলের টাইপরাইটার? সেখানে কি থরে থরে সাজানো আছে ধানের কান্না? নবান্নের ঘ্রাণে পেঁচিয়ে গেছে মৃত সময়ের নাকফুল; স্মৃতির সারিন্দা বাজিয়ে তবু বয়ে যাচ্ছে মানুষ।

দিব্যি দেখে থাকবে
তোফায়েল তফাজ্জল

তৃতীয় নয়ন থাকলে দিব্যি দেখে থাকবে

পরের পকেট কাটাদের পায়ের তলায় কয় সিকি মাটি!

এক পা উঠিয়ে অন্য পা ফেলতেই দ্বন্দ্ব-চোরাবালি

বা এমন গর্ত যার ওপর সামান্য আস্তরণ,

কিছু মরা ঘাস আর কিছু ধুলোবালির খেলাও;

মানুষের সারা দেহ দূরে থাক, এক পা পড়তেই

শুনতে পাবে ধপাস আওয়াজ

যার তলদেশে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা সাপ-বিচ্ছুর রাজত্ব।

তাহলে, অর্জিত বিদ্যা বেপথে খাটিয়ে

নাক উঁচু দেখিয়ে কী লাভ?

নোংরা হাতে কামানো অর্থ কি ঢাল হবে

দম সংকুচিত হয়ে আসা কালটায়?

এসব করে কি কেউ ছুঁতে পেরেছে বা পারবে চন্দ্র-সূর্যের বয়স?

এগুলো কি হবে নিরুদ্দেশে পাড়ি জমানোর অবিচ্ছিন্ন সঙ্গী?

যদি তা না হয়, হাত ধুয়ে, মন ধুয়ে নত হও,

কেননা, এটাই ব্রত।

নিত্যদফতর
ফারুখ সিদ্ধার্থ

অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার নিত্যদফতর

তবু অধিকাল ভাতা কাজীর গরু...

সস্তা রঙ ও তামাশাপূর্ণ জন্মান্ধ বিধিমালা

তাকেই জপমালা করে যাপন করতে হয়

আস্ত ভেড়া অথবা দু-পায়া জন্তুজীবন

দেয়াল-ঘড়ির মতো বর্ষপঞ্জিটাও লোকদেখানো

সারিবদ্ধ কালো সংখ্যাগুলো কর্মদিবস নয়- প্রতীক

দুঃখ ও শোকের; লালগুলো ছুটি নয়- সমূহ সংকেত

এমন দফতর- একবার নাম লিখালে

হাজির থাকতে হয় খোদার তিরিশ দিন

আর হামেশা দেখা হয় শুভংকরের সাথে...

ছবি

অস্থির পৃথিবীর মায়াবী কবি

ছবি

সম্প্রীতির সাধক মরমী বাউল উকিল মুন্সী

ছবি

‘দিবারাত্রির কাব্য’ এবং ‘দ্য আউটসাইডার’ এক নিবিড় সাযুজ্য

ছবি

চুক্তি লিখন

ছবি

লিওপল্ড সেদর সেঙ্ঘর-এর কবিতা

ছবি

হিমু ও হুমায়ূন আহমেদ

শরতের পদাবলি

সাময়িকী কবিতা

মার্কিন চলচ্চিত্র জগতের প্রাণকেন্দ্র লস এঞ্জেলেস

ছবি

যুদ্ধের জানালায় দাঁড়িয়ে

ছবি

শব্দঘর : বিপ্লব, দ্রোহ ও গুচ্ছ কবিতা সংখ্যা

ছবি

সাহিত্যের দর্শনানুসন্ধান

ছবি

সালভাতর কোয়াসিমোদোর কবিতা

ছবি

টুটু

ছবি

অর্ধেক জীবন

ছবি

ক্যান্ডি, শ্রীলঙ্কায় বেড়ানোর আদর্শ জায়গা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

‘দূরের কার্নিশ’

ছবি

কবিতায় উড়ন্ত সারস

ছবি

সাহিত্যের দর্শনানুসন্ধান

ছবি

রবীন্দ্রসংগীত চর্চা, বাংলাদেশে-

শক্তিমান কবির কলমে গল্প

ছবি

শহীদুল হকের জীবন ও আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা

ছবি

জলবন্দী স্বপ্ন

সাময়িকী কবিতা

ছবি

কমল চক্রবর্তী, আদি ও অকৃত্রিম রিংমাস্টার

ছবি

নূরুল হক : আধুনিক মরমি কবি

ছবি

ও. হেনরি : ছোটগল্পের কালজয়ী অগ্রদূত

ছবি

নজরুল : বিশ্বতোরণে বৈজয়ন্তী মানব-বিজয়-কেতন

ছবি

নিছক সাজুর গল্প

ছবি

কবিতায় বিশ্বস্ত স্বর

ছবি

স্মৃতির আয়নাজুড়ে শহীদ ভাই

ছবি

ব্যক্তিগত শহীদ

ছবি

দূরের তারাটিকে

ছবি

একটি দুর্বিনীত নাশকতার অন্তিম চিৎকার

ছবি

যেদিন সুবিমল মিশ্র চলে গেলেন

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪

তোমাকে দেখার পর থেকে
মহাদেব সাহা

তোমাকে দেখার পর থেকে কীরকম গ-গোল

হয়ে গেলো সমস্ত জীবন,

ওলটপালট হয়ে গেলো সবকিছু-

সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেললাম বুঝ খেই, চিন্তাসূত্র হয়ে গেলো

বিশৃঙ্খল, এলোমেলো;

কেবল তোমারই মুখ দেখি বৃক্ষপত্রে, জ্যোতিস্কম-লে

উচ্ছল ঝর্নার জলে, বুকশেলফে, পড়ার টেবিলে,

টেলিভিশনের উজ্জ্বল পর্দায়-

এমনকি ডিশ অ্যান্টেনাও ঢেকে দিতে পারেনি তোমার মুখ

রেডিও বা ক্যাসেট খুলেই শুনি তোমার নিবিড় কণ্ঠস্বর।

তোমাকে দেখার পর থেকে কীরকম পাল্টে গেলো

আমার আকাশ

সেখানে এখন শুধু চাঁদের বদলে তুমি ওঠো,

আর একটাই ওঠে সন্ধ্যাতারা, সেও তুমি।

বইগুলো খুলে দেখি সব গ্রন্থজুড়ে শুধু

এই একটাই শব্দ তাতে লেখা-

তোমাকে দেখার পর থেকে অসম্ভব বদলে গেছে

আমার ভুবন

বদলে গেছে জলবায়ু, দিনরাত্রি, ঋতু।

একটি শব্দের অন্বেষায়
রাহমান ওয়াহিদ

একটা শব্দ খুঁজছি। শব্দটির কোনো শব্দ থাকবে না।

পাঁজরের হাড়ে নিঃশব্দে বসে থেকে কুট কুট করে কাটতে

থাকবে শরীরের সমস্ত অণু পরমাণু, উষ্ণ অনুভবে।

শব্দটি আমার হারিয়ে যাবার ইচ্ছেটিতে ওম্ দেবে, যেন

রূপান্তরিত হতে পারি অনস্পর্শী মানবের প্রতিশব্দে।

সে কোন শাসনের দ- নিয়ে দাঁড়াবে না কোথাও,

আমাকেও দাঁড়াতে দেবে না হিম পাহাড়ের গায়ে

হেলান দিয়ে দু’দ- ক্লান্তি জুড়োতে কখনও।

কোথাও এমন তুখোর শব্দ নেই জানি, আকাশও রাখেনি

তারে জমিয়ে, তবু শব্দটিকে খুঁজছি আমি হৃদয় হারানোর

মতো ত্রস্ততায়, সৃজনজন্মের গূঢ় মগ্নতায়।

কুয়োতলায় একবারই দাঁড়িয়েছিল সে একাকী হয়ে, তার

নিশ্বাসে টের পেতাম টেনে নেবার মতো দারুণ হিং¯্রতা!

তেমন একটি শব্দই যেন খুঁজে চলেছি এখনও, এই অবেলায়

অসহ্য দূরত্বের বিবমিষায়, অজ¯্র ভাঙচুরের বিচূর্ণ বিষাদে...

সিনা টানটান একুশ শতক
আহমেদ ফরিদ

কী ভয়ানক সুন্দর এক মূর্তি!

সিনা টানটান করে রয়েছে দাঁড়িয়ে, হাজারো সঙ্গিন সামনে,

আজানুলম্বিত দুইবাহু প্রসারিত, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া।

পটভূমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে বৃক্ষ, শূল দ- হয়ে

এ যেন এক যিশু, একবিংশ শতকের যিশু।

যিশু বলেছিলেন এ রাজত্ব, এ সা¤্রাজ্য কারো নয়

সা¤্রাজ্যের মালিকানা শুধুই মহান প্রভুর,

ঈশ্বরের পক্ষে মানুষের, কিংডম অফ গড,

হাজারো মানুষের কণ্ঠস্বরই ঈশ্বরের বাণীর প্রতিধ্বনি।

রাজা ক্রোধানলে জ্বলে উঠলেন

না, ঈশ্বরের প্রতিনিধি শুধুই রাজা, আর প্রজারা শুধুই প্রজা।

অতএব যিশু ঈশ্বরদ্রোহী, তাঁর সাজা শূলদ-।

পন্তিয় পিলাত ধর্মের গুরু, রাজার সুরেই কথা বলেন।

“ওরা কি করছে তা জানে না প্রভু” বলে যিশু শুলে চড়ে পড়েন,

পৃথিবীর সমস্ত পাপ তাপ বুকে নিয়ে।

অতঃপর ঈশ্বর তাঁকে তুলে নেন স্বমহিমায় তাঁরই কাছে।

এমন দৃশ্য আবার নেমে আসে, এই বাংলায়,

নূরল দিনের এই দেশে।

মানুষের কণ্ঠস্বর যখন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর

তাদের আত্মাগুলো যখন মৃত্যুর দরোজায়,

আর স্বপ্নগুলো কাঁঠাল পাতার মতোই তির তির করে খুন হয়ে ঝরে পড়ে

যখন তারা রাজাদের ক্রীতদাস হয়ে যায়

মুক্তির দূত হয়ে তখনই একজন যিশু আসে কিংবা একজন নূরল দিন।

সেদিন, পড়ন্ত এক বিকেল, পাখিরা তাদের প্রণয় ভুলে গেছে,

ভালোবাসার লাল গোলাপেরা লজ্জায় ম্লান হয়ে গেছে,

গুল্ম আর বৃক্ষ বৃষ্টিয় প্রার্থনা তুলে রেখেছে,

মমতাময়ী জননীদের হৃদয় চৌচির হয়ে দর বিগলিত জলধারায় অশ্রুসিক্ত

যুবক আর যুবতীদের পদভারে রাজপথগুলো মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত, রক্তাক্ত

ঘাতকদের সঙ্গিনে হাজারো মানুষের রক্তপানে উন্মত্ত পানৌখির লকলকে জিব

ঠিক তখনই আকাশ থেকে নেমে আসে যিশু, নূরল দিন- এক আবু সাঈদ।

রক্ত নেবে? কত রক্ত লাগবে তোমার?

ভালোবাসার লাল গোলাপে আবৃত বুক পেতে টানটান হয়ে দাঁড়ান তিনি

অতঃপর রচিত হয় মুক্তির এক ইতিহাস, এক ক্রুশারোপন।

মানুষ মৃত্যুকে যুগে যুগে প্রত্যাখ্যান করেছে

আর তুমি মৃত্যুকে প্রত্যাঘাত করে তাকেই শূলে চড়িয়েছো

আহা! মৃত্যুর কী দারুণ পরাজয়!

বিজয়, মানুষের মুক্তির বিজয় মৃন্ময় হয়ে রয়।

কীভাবে আমরা তোমার এই রক্তঋণ পরিশোধ করব?

ঠিক জানি না। আমাদের প্রতিশ্রুতি-

আমরা পল হয়ে তোমার এই ত্যাগের মহিমা প্রচার করব,

পিটার হয়ে তোমার স্মৃতি আমাদের বক্ষে ধারণ করবো,

আমাদের ইস্টার সানডে হলো সতেরো জুলাই, মঙ্গলবার।

সুখ সুখ দুঃখগুলো
সন্জীবন কুমার

সমস্ত অরণ্য ভরে গেছে কাক,

গানের পাখিরা সব চলে গেছে দূরতম দেশে...

গাছের ছায়ায় বসলেই, মানুষেরা ফুল হয়ে যাবে

মন থেকে বুনো মেঘ উধাও হবে নিমিষে

নক্ষত্রের কাছে, তেমন ভরসা কই?

বিষাদ নারীর মতো নদী চলে হায়!

যাবতীয় দুঃখগুলো টেড তরঙ্গে মিশে যায়।

ধানক্ষেতে একাকার ওই যে পাহাড়

সেও জানে না কতটুকু সুখ আছে তার।

এখন এই সমস্ত আকাশে নবমী নিশির

কোনো বেদনা নেই, নেই কোনো হাহাকার।

শুধু সময়ের আবরণে মুখ বুজে থাকে ইতিহাস।

প্রতিটা মুহূর্ত যেন দেশভাগের কান্না ভেসে ওঠে

চোখে নামে উদ্বাস্তুর হাঁসফাঁস।

সভ্যতার আলো ধীরে ধীরে

নিভে যায়, আহা কী যে সর্বনাশ!

বয়ে যাচ্ছে মানুষ
মালেক মুস্তাকিম

জল কেটে কেটে সাঁতরে পার হচ্ছে ঘুম; রাতগুলো রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একটানা হাঁফাচ্ছে- স্ট্রেচারে ভাঙছে ঢেউ, বৃক্ষের কোমর জড়িয়ে শুয়ে আছে ব্যালকনি- যেভাবেই হাওয়া বয়ে যায়, শুকনো পাতায় ওড়ে মৃত হরিণের গান; এ মিউজিক কেবল ঘুমন্ত শালিকেরা শুনতে পায়- আমি বহুবার শুনেছি আমার নামে বেজে-ওঠা অচেনা বালিকার নাভিস্বর; যা কিছু ডুবে গেছে কুয়াশার কোমরে, স্তনে, নিয়তির ন্যাপকিনে- ঘোর সন্ধ্যায় ডেকে নিয়ে তাকে খুন করে চলে গেছে দুপুরের নির্জনতা। ভেসে গেছে নদীমুখ- এমন কোলাহলে কোনদিকে হাঁটা দেবে জলের টাইপরাইটার? সেখানে কি থরে থরে সাজানো আছে ধানের কান্না? নবান্নের ঘ্রাণে পেঁচিয়ে গেছে মৃত সময়ের নাকফুল; স্মৃতির সারিন্দা বাজিয়ে তবু বয়ে যাচ্ছে মানুষ।

দিব্যি দেখে থাকবে
তোফায়েল তফাজ্জল

তৃতীয় নয়ন থাকলে দিব্যি দেখে থাকবে

পরের পকেট কাটাদের পায়ের তলায় কয় সিকি মাটি!

এক পা উঠিয়ে অন্য পা ফেলতেই দ্বন্দ্ব-চোরাবালি

বা এমন গর্ত যার ওপর সামান্য আস্তরণ,

কিছু মরা ঘাস আর কিছু ধুলোবালির খেলাও;

মানুষের সারা দেহ দূরে থাক, এক পা পড়তেই

শুনতে পাবে ধপাস আওয়াজ

যার তলদেশে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা সাপ-বিচ্ছুর রাজত্ব।

তাহলে, অর্জিত বিদ্যা বেপথে খাটিয়ে

নাক উঁচু দেখিয়ে কী লাভ?

নোংরা হাতে কামানো অর্থ কি ঢাল হবে

দম সংকুচিত হয়ে আসা কালটায়?

এসব করে কি কেউ ছুঁতে পেরেছে বা পারবে চন্দ্র-সূর্যের বয়স?

এগুলো কি হবে নিরুদ্দেশে পাড়ি জমানোর অবিচ্ছিন্ন সঙ্গী?

যদি তা না হয়, হাত ধুয়ে, মন ধুয়ে নত হও,

কেননা, এটাই ব্রত।

নিত্যদফতর
ফারুখ সিদ্ধার্থ

অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার নিত্যদফতর

তবু অধিকাল ভাতা কাজীর গরু...

সস্তা রঙ ও তামাশাপূর্ণ জন্মান্ধ বিধিমালা

তাকেই জপমালা করে যাপন করতে হয়

আস্ত ভেড়া অথবা দু-পায়া জন্তুজীবন

দেয়াল-ঘড়ির মতো বর্ষপঞ্জিটাও লোকদেখানো

সারিবদ্ধ কালো সংখ্যাগুলো কর্মদিবস নয়- প্রতীক

দুঃখ ও শোকের; লালগুলো ছুটি নয়- সমূহ সংকেত

এমন দফতর- একবার নাম লিখালে

হাজির থাকতে হয় খোদার তিরিশ দিন

আর হামেশা দেখা হয় শুভংকরের সাথে...

back to top