alt

সাময়িকী

সালভাতর কোয়াসিমোদোর কবিতা

অনুবাদ : কামাল রাহমান

: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সালভাতর কোয়াসিমোদো

শরৎ
মৃদু শরৎ, আকাশে চুমুক দেয়ার জন্য

প্রস্তুত করি নিজেকে এবং আনত হই তোমার জলে,

গভীরতায়, ও গাছেদের মিষ্টি সুরের অন্তরায়।

জন্ম নেয়ার জন্য নিঠুর শাস্তি

নিজেকে খুঁজে পাই তোমার কাছে

এবং তোমাতে চূর্ণ হই ও সেরে ওঠি:

ঝরে যাওয়া পাতাগুলো

কুড়োয় পৃথিবী।

কুঞ্জবীথিকা
কখনো তোমার কণ্ঠ ডেকে যায় এই আমাকে,

এবং জানি না কত আকাশ

ও কত জল জাগিয়ে তোলো তুমি আমার ভেতর:

সূর্যরশ্মির একটা জাল, চকচকে

সন্ধ্যায় তোমার দেয়ালগুলোয় ছিল

ক্ষয়িষ্ণু পিদিমের দোলা

এক আলোচনাচক্রে বয়ে যাওয়া

মৃদুমন্দ বাতাস ও গভীর বিষাদ।

অন্য কখনো: উঠোনে খটখটে তাঁত

এবং রাতে শিশুদের কান্না

ও কুকুরছানার বিলাপ।

কুঞ্জবীথিকা: বাড়িগুলোর আড়াআড়ি এক বিন্যাস-

যদি ডাকা হয় হালকা সুরে,

এবং ভয় জানে না

অন্ধকারের ভেতর একা থাকতে।

মৃত্যুর স্মৃতিহীন
বসন্ত জাগিয়ে তোলে গাছ ও নদী

গভীর স্বর শুনতে পাই না আমি

তোমাতে হারিয়ে গেছি, প্রিয়তম।

যুক্ত শরীরের ভেতর

মৃত্যুর স্মৃতিহীন

চূড়ান্ত দিনের গর্জন

জাগিয়ে তোলে আমাদের বয়সন্ধি।

বেড়ে ওঠা শাখা

আমার হাত,

ফুলগুলো তোমার দিকে...

অন্ধকার ও দীর্ঘ হয়ে ওঠা
আমার কণ্ঠে আসো তুমি

এবং আমি দেখি চমৎকার আলো নেমে যায়

বর্ণিল রশ্মিতে, এবং তোমাকে নিয়ে তারাদের

একটা মেঘ তৈরি করে

আমার মাথা ঘিরে, এবং ঝুলে থাকি আমি সেখানে,

স্তম্ভিত হয়ে থাকি পরীদের সঙ্গে,

এবং মৃতদের, ও বাতাসের উজ্জ্বল খিলানের ভেতর।

আমার নয়; কিন্তু শূন্যতার ভেতর

পূর্ণ-প্রবিষ্ট, আমার ভেতর কম্পমান

অন্ধকার ও দীর্ঘ হয়ে ওঠা।

গানের জন্ম
জেগে ওঠো: পুন-প্রকাশমান আলোর রশ্মি:

উজ্জ্বল জ্বলন্ত পাতারা।

কানায় কানায় পূর্ণ নদীর ভেতর শুয়ে পড়ি আমি

যেখানে জেগে আছে দ্বীপগুলো

আছে ছায়াদের আয়না ও তারারা।

তোমার আকাশ-ছোঁয়া ঔদার্য অভিভূত করে আমাকে

লালন করে সারাক্ষণ

আমার অন্য জীবন, সকল আনন্দ নিয়ে।

এড়িয়ে যাই ফিরে পেতে তোমাকে

যদিও মোহমুক্ত ও

বয়সন্ধিতে দুর্বল

প্রত্যঙ্গ।

ঘুমের ভেতর নদীগুলোর সজীবতা
সৌভাগ্যবান পোতাশ্রয়ে খুঁজে পাই তোমাকে

রাতের সঙ্গিনী

বের করে আনি মুহূর্তগুলো,

প্রায় এক নব-আনন্দ উষ্ণতা,

নিশ্চুপ বেঁচে থাকার তিক্ত প্রতিদান।

দোলে কুমারী পথ

ঘুমের ভেতর নদীগুলোর সজীবতায়:

তখনো ঐ অপরিনামদর্শী আমি, যে শোনে

নীরবতার ভেতর উচ্চারিত তার নাম

যখন ওরা ডেকে পাঠায় মৃতদের।

এবং মৃত্যু হল:

হৃৎপিণ্ডের ভেতর এক শূন্যতা।

আমাকে দাও আমার দিনগুলো
আমাকে দাও আমার দিনগুলো

এখনো খুঁজে পেতে পারি নিজেকে

বছরের কিছু অচল সুখের জন্য

জলের একটা শূন্য খোলস

ফিরে আসে এটার স্বচ্ছতায়

এবং কাঁদে আমার ভালোবাসার জন্য।

হৃদয়ের ভেতর প্রশস্ত একটা সড়ক তুমি

এবং নিদ্রাহীন মেরু-দ্বীপগুলোয়

তারাদের একটা নিশানা,

রাত্রি, এখনো দয়ালু আমার প্রতি

ক্লান্ত ঢেউ হতে ছুঁড়ে দেয়া এক টুকরো জীবাশ্ম;

গোপন কক্ষপথের একটা বাঁক,

যেখানে খুব ঘনিষ্ঠ আমরা

পাহাড়ের ভাঁজে ও ঘাসের বনে।

অপ্রকৃত আনন্দ
সন্ধ্যাকে প্রতিদান দেয় গাছেরা

আরো পরিত্যক্ত ওরা এখন

কত নিরুদ্যম

তোমার শেষ পদক্ষেপ

মিলিয়ে যায় নেবুফুলের সঙ্গে এবং

সনির্বন্ধ ওটার বিধিলিপির প্রতি।

খুঁজে বেড়াও মমত্বের কারণ

অর্জন করো জীবনে নীরবতার অভিজ্ঞান।

অন্য একটা বিষয় ফুটে ওঠে চোখে আমার

মুকুরিত সময়, মৃতের মতো

শোক ছড়ায়, সুন্দর এখন

অন্য মুখগুলোর উপর বিদ্যুচ্চমকের মতো আলো ছড়ায়

হারিয়ে ফেলেছি নির্দোষ সবকিছু

এবং এমনকি এই স্বর, যা টিকে থাকে শেষ পর্যন্ত

ভান করতে আনন্দ।

আয়না
এবং দেখো, বেরিয়ে আসে

কিশলয়, শাখা হতে:

ঘাসে উঁকি দেয় নতুন সবুজ

প্রশান্তি বুকের ভেতর:

গাছটাকে মনে হয় মৃত এখনি,

ঢালের ধারে পড়েছে নুয়ে

এবং যা-কিছু জানি আমি ঐ অলৌকিকের;

এবং এই জলমগ্ন মেঘ আমি

জলাশয়ে আজ যার প্রতিফলন,

আরো নীল, স্বর্গের চূর্ণ এটা

এই সবুজ, পৃথক করে দেয় বাকল

গতরাতেও ছিল না ওখানে।

ছবি

সামান্য ভুল

সাময়িকী কবিতা

ছবি

আধুনিক বাংলা কবিতার প্রথাভাঙা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত

ছবি

ধুলোময় জীবনের মেটাফর

ছবি

স্কুলটি ছোট্ট বটে

ছবি

নতুন বইয়ের খবর

ছবি

পালকের চিহ্নগুলো

ছবি

আদোনিসের কবিতা

ছবি

আড়াই লেনের কৃষ্ণচূড়া

ছবি

গিরিশচন্দ্র ঘোষের নাটক ইতিহাস ও দেশপ্রেম

ছবি

নিজস্বতার অনন্য প্রমাণ

ছবি

বইমেলায় আসছে নতুন বই

ছবি

সরল প্রাণের সোপান

ছবি

হাসান আজিজুল হকের দর্শনচিন্তা

ছবি

শীতের পদাবলি

সাময়িকী কবিতা

ছবি

মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ’ কাব্য মানবতারই জয়গান

ছবি

বইতরণী সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শুক্লা গাঙ্গুলী

ছবি

‘শব্দঘর’ আহমদ রফিক সংখ্যা ও তাঁকে সম্মাননা প্রদান

ছবি

নিজস্বতার অনন্য প্রমাণ

ছবি

ঈশ্বরের সত্য দর্শন

ছবি

মঞ্চে প্রবেশ

ছবি

আমি মাকারিও নই

ছবি

মৃতজন গল্প রচনা করে

ছবি

সম্পত্তি বিতর্ক: কেন পদত্যাগ করতে হলো টিউলিপ সিদ্দিককে

ছবি

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ফেব্রুয়ারিতে

ছবি

মধুসূদনের সাহিত্যে নৈরাশ্যবাদ

ছবি

বিদূষী নবনীতা বনাম মানুষ নবনীতা

ছবি

দুটি অণুগল্প

ছবি

উপমা-চিত্রে দ্যোতনার সঞ্চারণ

সাময়িকী কবিতা

ছবি

প্রয়োজনে ডাক দিও

ছবি

মাকারিও

ছবি

আমার সহযাত্রী

ছবি

নাগিব মাহফুজের নির্বাচিত ১০ স্বপ্ন

ছবি

একটি ভাঙ্গা থালা

tab

সাময়িকী

সালভাতর কোয়াসিমোদোর কবিতা

অনুবাদ : কামাল রাহমান

সালভাতর কোয়াসিমোদো

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শরৎ
মৃদু শরৎ, আকাশে চুমুক দেয়ার জন্য

প্রস্তুত করি নিজেকে এবং আনত হই তোমার জলে,

গভীরতায়, ও গাছেদের মিষ্টি সুরের অন্তরায়।

জন্ম নেয়ার জন্য নিঠুর শাস্তি

নিজেকে খুঁজে পাই তোমার কাছে

এবং তোমাতে চূর্ণ হই ও সেরে ওঠি:

ঝরে যাওয়া পাতাগুলো

কুড়োয় পৃথিবী।

কুঞ্জবীথিকা
কখনো তোমার কণ্ঠ ডেকে যায় এই আমাকে,

এবং জানি না কত আকাশ

ও কত জল জাগিয়ে তোলো তুমি আমার ভেতর:

সূর্যরশ্মির একটা জাল, চকচকে

সন্ধ্যায় তোমার দেয়ালগুলোয় ছিল

ক্ষয়িষ্ণু পিদিমের দোলা

এক আলোচনাচক্রে বয়ে যাওয়া

মৃদুমন্দ বাতাস ও গভীর বিষাদ।

অন্য কখনো: উঠোনে খটখটে তাঁত

এবং রাতে শিশুদের কান্না

ও কুকুরছানার বিলাপ।

কুঞ্জবীথিকা: বাড়িগুলোর আড়াআড়ি এক বিন্যাস-

যদি ডাকা হয় হালকা সুরে,

এবং ভয় জানে না

অন্ধকারের ভেতর একা থাকতে।

মৃত্যুর স্মৃতিহীন
বসন্ত জাগিয়ে তোলে গাছ ও নদী

গভীর স্বর শুনতে পাই না আমি

তোমাতে হারিয়ে গেছি, প্রিয়তম।

যুক্ত শরীরের ভেতর

মৃত্যুর স্মৃতিহীন

চূড়ান্ত দিনের গর্জন

জাগিয়ে তোলে আমাদের বয়সন্ধি।

বেড়ে ওঠা শাখা

আমার হাত,

ফুলগুলো তোমার দিকে...

অন্ধকার ও দীর্ঘ হয়ে ওঠা
আমার কণ্ঠে আসো তুমি

এবং আমি দেখি চমৎকার আলো নেমে যায়

বর্ণিল রশ্মিতে, এবং তোমাকে নিয়ে তারাদের

একটা মেঘ তৈরি করে

আমার মাথা ঘিরে, এবং ঝুলে থাকি আমি সেখানে,

স্তম্ভিত হয়ে থাকি পরীদের সঙ্গে,

এবং মৃতদের, ও বাতাসের উজ্জ্বল খিলানের ভেতর।

আমার নয়; কিন্তু শূন্যতার ভেতর

পূর্ণ-প্রবিষ্ট, আমার ভেতর কম্পমান

অন্ধকার ও দীর্ঘ হয়ে ওঠা।

গানের জন্ম
জেগে ওঠো: পুন-প্রকাশমান আলোর রশ্মি:

উজ্জ্বল জ্বলন্ত পাতারা।

কানায় কানায় পূর্ণ নদীর ভেতর শুয়ে পড়ি আমি

যেখানে জেগে আছে দ্বীপগুলো

আছে ছায়াদের আয়না ও তারারা।

তোমার আকাশ-ছোঁয়া ঔদার্য অভিভূত করে আমাকে

লালন করে সারাক্ষণ

আমার অন্য জীবন, সকল আনন্দ নিয়ে।

এড়িয়ে যাই ফিরে পেতে তোমাকে

যদিও মোহমুক্ত ও

বয়সন্ধিতে দুর্বল

প্রত্যঙ্গ।

ঘুমের ভেতর নদীগুলোর সজীবতা
সৌভাগ্যবান পোতাশ্রয়ে খুঁজে পাই তোমাকে

রাতের সঙ্গিনী

বের করে আনি মুহূর্তগুলো,

প্রায় এক নব-আনন্দ উষ্ণতা,

নিশ্চুপ বেঁচে থাকার তিক্ত প্রতিদান।

দোলে কুমারী পথ

ঘুমের ভেতর নদীগুলোর সজীবতায়:

তখনো ঐ অপরিনামদর্শী আমি, যে শোনে

নীরবতার ভেতর উচ্চারিত তার নাম

যখন ওরা ডেকে পাঠায় মৃতদের।

এবং মৃত্যু হল:

হৃৎপিণ্ডের ভেতর এক শূন্যতা।

আমাকে দাও আমার দিনগুলো
আমাকে দাও আমার দিনগুলো

এখনো খুঁজে পেতে পারি নিজেকে

বছরের কিছু অচল সুখের জন্য

জলের একটা শূন্য খোলস

ফিরে আসে এটার স্বচ্ছতায়

এবং কাঁদে আমার ভালোবাসার জন্য।

হৃদয়ের ভেতর প্রশস্ত একটা সড়ক তুমি

এবং নিদ্রাহীন মেরু-দ্বীপগুলোয়

তারাদের একটা নিশানা,

রাত্রি, এখনো দয়ালু আমার প্রতি

ক্লান্ত ঢেউ হতে ছুঁড়ে দেয়া এক টুকরো জীবাশ্ম;

গোপন কক্ষপথের একটা বাঁক,

যেখানে খুব ঘনিষ্ঠ আমরা

পাহাড়ের ভাঁজে ও ঘাসের বনে।

অপ্রকৃত আনন্দ
সন্ধ্যাকে প্রতিদান দেয় গাছেরা

আরো পরিত্যক্ত ওরা এখন

কত নিরুদ্যম

তোমার শেষ পদক্ষেপ

মিলিয়ে যায় নেবুফুলের সঙ্গে এবং

সনির্বন্ধ ওটার বিধিলিপির প্রতি।

খুঁজে বেড়াও মমত্বের কারণ

অর্জন করো জীবনে নীরবতার অভিজ্ঞান।

অন্য একটা বিষয় ফুটে ওঠে চোখে আমার

মুকুরিত সময়, মৃতের মতো

শোক ছড়ায়, সুন্দর এখন

অন্য মুখগুলোর উপর বিদ্যুচ্চমকের মতো আলো ছড়ায়

হারিয়ে ফেলেছি নির্দোষ সবকিছু

এবং এমনকি এই স্বর, যা টিকে থাকে শেষ পর্যন্ত

ভান করতে আনন্দ।

আয়না
এবং দেখো, বেরিয়ে আসে

কিশলয়, শাখা হতে:

ঘাসে উঁকি দেয় নতুন সবুজ

প্রশান্তি বুকের ভেতর:

গাছটাকে মনে হয় মৃত এখনি,

ঢালের ধারে পড়েছে নুয়ে

এবং যা-কিছু জানি আমি ঐ অলৌকিকের;

এবং এই জলমগ্ন মেঘ আমি

জলাশয়ে আজ যার প্রতিফলন,

আরো নীল, স্বর্গের চূর্ণ এটা

এই সবুজ, পৃথক করে দেয় বাকল

গতরাতেও ছিল না ওখানে।

back to top