নাড়া
রাহমান ওয়াহিদ
দিন কেটে যায় দিনের স্বভাবে
রাতও কেটে যায় স্পর্শবিহীন
তবুও ঘোলাজল, কেন চিৎকার
কেন কার এত কিসের তাড়া?
সন্ধ্যার ছায়ায় ভূতুড়ে নাচন
কে দিয়েছে তারে ভূষণ আসন
কারা ডেকে যায় নিশিডাক হয়ে
বলে ইশারায়, সরে দাঁড়া?
যেতে যদি হয় ঠিক চলে যাবো
ভরা কলসিটিও উল্টে দেব
চুপচাপ থাকি, তা বলে কি ভাবো
লেজের পশমে দেব না নাড়া?
প্রেম, স্বপ্ন এবং ইচ্ছেগুলো
ইলিয়াস ফারুকী
চারিদিকে ধবধবে উজ্জ্বল প্রহর। তবুও পৃথিবীর ভাঁজে বাড়ছে অপছায়া। জমকালো অন্ধকার, তথাপি সেখানে ফুটে আছে আশা! নিশ্চিত প্রেমময় ভূষণ।
পূর্ণতা পাওনি বলে দারুণ ক্ষরা মেজাজে, ঋতুহীন তুমি বিড়বিড় করে নিজেকে অভিসম্পাতে ব্যস্ত ছিলে। হঠাৎ আমি এসে বললাম ‘কন্যা আমার সকল ভালোবাসা তোমায় জ্ঞাপন।’
তুমি দ্বিধায়। বিরক্ত হবে? নাকি বাদামের পাতলা আবরণের মতো নিজেকে উন্মুক্ত করে দেবে। আর বলবে, দেখেছো এটাই আমার রূপ, তুকি কী সত্যিই এতে বিভোর!
আশারা স্বপ্নের মতো দাবি তোলে। জল্লাদের রোমশ হাত থেকে তোমার দু’চোখ যেন থাকে সুরক্ষিত। কারণ ওই চোখ গভীর সরোবর, যেখানে আমার প্রেম স্থিতি পায়।
গুমটি ঘরের ঘণ্টার মতোন, যখন সময় সংকেত বেজে ওঠে, আমি ভুলে যাই আগপাশ সব। শুধু তোমার চোখের গভীরে তখন, আমার আশাগুলো উঁকি দেয়।
আমি নির্লজ্জের মতো লজ্জা পেয়ে, শুধু তোমার ভাঁজে ভাঁজে নিজেকে খুঁজে পাই।
উত্তরফাল্গুনীর পড়শি
ভূঁইয়া বুলবুল
মৃত্তিকার মহান উদরে বদহজমের ব্যাপার নেই
যাকে দাও যা-ই দাও অনঙ্গ সেই
আমি ভূমির পুত্র, জলের সন্তান
আকাশ গঙ্গায় বাড়ি আমার জলে স্থলে ম্লান
এ অবয়বের ঋণ পরিশোধ হয় জলে জঙ্গলে
উত্তরফাল্গুনীর পড়শি ফিরে যাই উৎসের স্থলে
কবরে আর চিতায় কার করো খোঁজ
আমার তো আসা যাওয়া সপ্তম আসমানে রোজ
ছল
তানিয়া হাসান
কথা ছিল ঢাকনা বন্ধ করেই রান্না হবে চাঁদ
বিক্রি হবে সোনাপুকুর
কেউ কথা রাখেনি। সবাই মেনেই নিলো,
মৃতদের পকেটে পোস্টকার্ড থাকতে নেই
সাদা মোমের ঝলকানি আঙুল এড়িয়ে যায়
কথার ভ্রমণ পেরিয়ে নড়বড়ে বেহেশত!
প্রমাণিত সত্য থেকে চুইয়ে পড়ে নিমনির্যাস
আড়নদীতে তলিয়ে যায় মতলব
ঔষধিবার্তায় শুকায় না শোকÑ
মোমের জীবনে আগুনই একমাত্র সত্য
এমন ভবিতব্যে, ফুটতে থাকে চাঁদ
সোনাপুকুরের পাড় ভাঙেÑ দীর্ঘ হয় জোছনা
আয়ত্বে আসে ছল ও জলরঙের গালিচা!
ডুবুচর
মহসিন খোন্দকার
মানুষের নিজস্ব ডুবুচরে
কেউ যায় না। ওখানে কান্না জমে জমে শ্যাওলা হয়, ব্যথারা ফোটে থাকে নিজস্ব নৈপুণ্যে, খুব সংসারী হয় নির্জনতার নুন আর বিষণœতার বোন!
ডুবুচরে জেগে থাকে নিঃসঙ্গ ঝিনুক, হি¯্র হাঙ্গরের মতো বুকে আসে জলঘূর্ণন, ব্যথার বেহাগে বড় হয় অন্ধকারের আরশোলা আর ক্রমশ ছোট হয়
জীবনের জলজ জিজ্ঞাসা!
ডুবুচরের নিজস্ব গান আছে, শ্রোতাহীন পড়ে থাকে
প্রাচীন সেতারের শ্যাওলায়, গান বড় হয় খেয়ে খেয়ে নিঃসঙ্গতার নুন আর হতাশার নীল আগুন!
বনদেবীর বন্দনা
মাহফুজ রিপন
বাদাবনের দক্ষিণা হাওয়ায় ভেসে আসে হরেক রকম শব্দ। মৌয়াল আর বাওয়ালীরা বোঝে সে ভাষা। আমি শহরে পোলা মায়াবতী চিত্রা হরিণ আর ইরাবতী রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে সুন্দরবনে এসেছি। গেওয়া, গরান আর সুন্দরী গাছের পাতায় পাতায় যে ভয়ঙ্কর সুন্দর লুকিয়ে রয়েছে তার ভাব অর্থ বুঝি না। সোনালি সূর্য ওঠে নীল জলের ভেতর থেকে সবুজ জঙ্গলে। ঝিরি ঝিরি পাতার ফাঁক দিয়ে চোখে আসে আলো। মনে মনে ভাবি এই সেই নোনা জলের কেওড়া বনÑ দুর্যোগে লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় প্রাকৃতিক সামনে। আমি জানি না চাঁদের হিসাব আর জোয়ার ভাটার খেলা। জলে কুমির আর ডাঙ্গায় বাঘ যেন হরর ছড়িয়ে আছে জঙ্গলের মায়ায়। মৌয়াল মধুর আশায় নৌকা বেয়ে বনে যায় আর বাঘের কিচ্ছা শোনায়। বাদাবনের মানুষ নিজের অজান্তেই একদিন বাঘ হয়ে ওঠে। পিতা বাঘের পেটে গেলেও, পুত্রও আবার বনদেবীর পশরা সাজায়। নৌকা থেকে বনে নামার আগে মাঝি মাল্লার সাথে সুর মিলিয়ে বনদেবীর বন্দনা করিÑ ‘আঠারো ভাটির মাঝে তুমি সবার মা। মা বলে ডাকলে কারো বিপদ থাকে না।’
অবিশ্বাসের মোড়কে মোড়া
সফিক ইসলাম
রোদ্দুরের পিছু পিছু আমিও হেঁটে যাই ক্রমাগত
কতদূর রোদ্দুর?
আমাকে লুকিয়ে রোদ্দুর ডুব দেয় দিগন্তের ওপারে
সেখানে আঁধারের সাথে প্রেম ও সঙ্গমের পৈশাচিক উন্মাদনা
নতুন ভোরের জন্য আমাদের প্রতীক্ষার পথচলা অনন্তকাল কি?
শুধু রক্তের ¯্রােতে সময়ের ওলট-পালট
একই অংকে আবর্তিত ঘড়ির কাঁটা।
দৃশ্যমান অনেক কিছুর অন্তরালে আরো কিছু থাকে
যা অনুমেয় অথবা অবিশ্বাসের মোড়কে মোড়া।
বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
নাড়া
রাহমান ওয়াহিদ
দিন কেটে যায় দিনের স্বভাবে
রাতও কেটে যায় স্পর্শবিহীন
তবুও ঘোলাজল, কেন চিৎকার
কেন কার এত কিসের তাড়া?
সন্ধ্যার ছায়ায় ভূতুড়ে নাচন
কে দিয়েছে তারে ভূষণ আসন
কারা ডেকে যায় নিশিডাক হয়ে
বলে ইশারায়, সরে দাঁড়া?
যেতে যদি হয় ঠিক চলে যাবো
ভরা কলসিটিও উল্টে দেব
চুপচাপ থাকি, তা বলে কি ভাবো
লেজের পশমে দেব না নাড়া?
প্রেম, স্বপ্ন এবং ইচ্ছেগুলো
ইলিয়াস ফারুকী
চারিদিকে ধবধবে উজ্জ্বল প্রহর। তবুও পৃথিবীর ভাঁজে বাড়ছে অপছায়া। জমকালো অন্ধকার, তথাপি সেখানে ফুটে আছে আশা! নিশ্চিত প্রেমময় ভূষণ।
পূর্ণতা পাওনি বলে দারুণ ক্ষরা মেজাজে, ঋতুহীন তুমি বিড়বিড় করে নিজেকে অভিসম্পাতে ব্যস্ত ছিলে। হঠাৎ আমি এসে বললাম ‘কন্যা আমার সকল ভালোবাসা তোমায় জ্ঞাপন।’
তুমি দ্বিধায়। বিরক্ত হবে? নাকি বাদামের পাতলা আবরণের মতো নিজেকে উন্মুক্ত করে দেবে। আর বলবে, দেখেছো এটাই আমার রূপ, তুকি কী সত্যিই এতে বিভোর!
আশারা স্বপ্নের মতো দাবি তোলে। জল্লাদের রোমশ হাত থেকে তোমার দু’চোখ যেন থাকে সুরক্ষিত। কারণ ওই চোখ গভীর সরোবর, যেখানে আমার প্রেম স্থিতি পায়।
গুমটি ঘরের ঘণ্টার মতোন, যখন সময় সংকেত বেজে ওঠে, আমি ভুলে যাই আগপাশ সব। শুধু তোমার চোখের গভীরে তখন, আমার আশাগুলো উঁকি দেয়।
আমি নির্লজ্জের মতো লজ্জা পেয়ে, শুধু তোমার ভাঁজে ভাঁজে নিজেকে খুঁজে পাই।
উত্তরফাল্গুনীর পড়শি
ভূঁইয়া বুলবুল
মৃত্তিকার মহান উদরে বদহজমের ব্যাপার নেই
যাকে দাও যা-ই দাও অনঙ্গ সেই
আমি ভূমির পুত্র, জলের সন্তান
আকাশ গঙ্গায় বাড়ি আমার জলে স্থলে ম্লান
এ অবয়বের ঋণ পরিশোধ হয় জলে জঙ্গলে
উত্তরফাল্গুনীর পড়শি ফিরে যাই উৎসের স্থলে
কবরে আর চিতায় কার করো খোঁজ
আমার তো আসা যাওয়া সপ্তম আসমানে রোজ
ছল
তানিয়া হাসান
কথা ছিল ঢাকনা বন্ধ করেই রান্না হবে চাঁদ
বিক্রি হবে সোনাপুকুর
কেউ কথা রাখেনি। সবাই মেনেই নিলো,
মৃতদের পকেটে পোস্টকার্ড থাকতে নেই
সাদা মোমের ঝলকানি আঙুল এড়িয়ে যায়
কথার ভ্রমণ পেরিয়ে নড়বড়ে বেহেশত!
প্রমাণিত সত্য থেকে চুইয়ে পড়ে নিমনির্যাস
আড়নদীতে তলিয়ে যায় মতলব
ঔষধিবার্তায় শুকায় না শোকÑ
মোমের জীবনে আগুনই একমাত্র সত্য
এমন ভবিতব্যে, ফুটতে থাকে চাঁদ
সোনাপুকুরের পাড় ভাঙেÑ দীর্ঘ হয় জোছনা
আয়ত্বে আসে ছল ও জলরঙের গালিচা!
ডুবুচর
মহসিন খোন্দকার
মানুষের নিজস্ব ডুবুচরে
কেউ যায় না। ওখানে কান্না জমে জমে শ্যাওলা হয়, ব্যথারা ফোটে থাকে নিজস্ব নৈপুণ্যে, খুব সংসারী হয় নির্জনতার নুন আর বিষণœতার বোন!
ডুবুচরে জেগে থাকে নিঃসঙ্গ ঝিনুক, হি¯্র হাঙ্গরের মতো বুকে আসে জলঘূর্ণন, ব্যথার বেহাগে বড় হয় অন্ধকারের আরশোলা আর ক্রমশ ছোট হয়
জীবনের জলজ জিজ্ঞাসা!
ডুবুচরের নিজস্ব গান আছে, শ্রোতাহীন পড়ে থাকে
প্রাচীন সেতারের শ্যাওলায়, গান বড় হয় খেয়ে খেয়ে নিঃসঙ্গতার নুন আর হতাশার নীল আগুন!
বনদেবীর বন্দনা
মাহফুজ রিপন
বাদাবনের দক্ষিণা হাওয়ায় ভেসে আসে হরেক রকম শব্দ। মৌয়াল আর বাওয়ালীরা বোঝে সে ভাষা। আমি শহরে পোলা মায়াবতী চিত্রা হরিণ আর ইরাবতী রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে সুন্দরবনে এসেছি। গেওয়া, গরান আর সুন্দরী গাছের পাতায় পাতায় যে ভয়ঙ্কর সুন্দর লুকিয়ে রয়েছে তার ভাব অর্থ বুঝি না। সোনালি সূর্য ওঠে নীল জলের ভেতর থেকে সবুজ জঙ্গলে। ঝিরি ঝিরি পাতার ফাঁক দিয়ে চোখে আসে আলো। মনে মনে ভাবি এই সেই নোনা জলের কেওড়া বনÑ দুর্যোগে লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় প্রাকৃতিক সামনে। আমি জানি না চাঁদের হিসাব আর জোয়ার ভাটার খেলা। জলে কুমির আর ডাঙ্গায় বাঘ যেন হরর ছড়িয়ে আছে জঙ্গলের মায়ায়। মৌয়াল মধুর আশায় নৌকা বেয়ে বনে যায় আর বাঘের কিচ্ছা শোনায়। বাদাবনের মানুষ নিজের অজান্তেই একদিন বাঘ হয়ে ওঠে। পিতা বাঘের পেটে গেলেও, পুত্রও আবার বনদেবীর পশরা সাজায়। নৌকা থেকে বনে নামার আগে মাঝি মাল্লার সাথে সুর মিলিয়ে বনদেবীর বন্দনা করিÑ ‘আঠারো ভাটির মাঝে তুমি সবার মা। মা বলে ডাকলে কারো বিপদ থাকে না।’
অবিশ্বাসের মোড়কে মোড়া
সফিক ইসলাম
রোদ্দুরের পিছু পিছু আমিও হেঁটে যাই ক্রমাগত
কতদূর রোদ্দুর?
আমাকে লুকিয়ে রোদ্দুর ডুব দেয় দিগন্তের ওপারে
সেখানে আঁধারের সাথে প্রেম ও সঙ্গমের পৈশাচিক উন্মাদনা
নতুন ভোরের জন্য আমাদের প্রতীক্ষার পথচলা অনন্তকাল কি?
শুধু রক্তের ¯্রােতে সময়ের ওলট-পালট
একই অংকে আবর্তিত ঘড়ির কাঁটা।
দৃশ্যমান অনেক কিছুর অন্তরালে আরো কিছু থাকে
যা অনুমেয় অথবা অবিশ্বাসের মোড়কে মোড়া।