alt

সাময়িকী

জন ডস প্যাসোজ

সমকালিক ঘটনাবলির রূপকার

সরকার মাসুদ

: বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

জন ডস প্যাসোজ

১৯৬১ সালটি যে যে কারণে সর্বাধিক উল্লেখ্য, তার একটি হচ্ছে Midcentury-র প্রকাশ। এটা মূলত চারটি উপন্যাসের সমন্বিত রূপ। কথাসাহিত্যের শ্রেণিভুক্ত হলেও এর প্রকাশক A contemporary cronicle উপশিরোনাম ব্যবহার করেছেন গ্রন্থটির। প্রথম উপন্যাস Three Soldiers (১৯২২) ও Midcentury (১৯৬১)-এর মাঝখানে জন ডস প্যাসোজ সতেরোটি বই লিখেছেন। ১৯৬১ সালের পরেও The Shackles of power (১৯৬৬) নামে তার একটি অসাধারণ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

কিন্তু জন ডস প্যাসোজের খ্যাতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল Three Soldiers, The Big Money (১৯২৬) ও Nineteen Ninteen (১৯৩২) নামের উপন্যাসত্রয়ী।

বিশ শতকের মার্কিন জীবনের চালচিত্র হিসেবে জন ডস প্যাসোজের উপন্যাসগুলো এককথায় অতুল। কোনো নির্দিষ্ট কালের ঘটনাবলির বিশ্বাস্য বর্ণনা দিতে হলে লেখককে অবশ্যই ইতিহাসের সহায়তা নিতে হয়। ডস প্যাসোজ ইতিহাসের সঙ্গে নিজের লেখক প্রতিকৃতি চমৎকারভাবে সংযোজিত করেছেন। তাঁর জীবন উপন্যাসের মতোই বর্ণাঢ্য আর সেখান থেকেই লেখক নিয়েছেন বহু গল্প-উপন্যাসের কাচামাল। শিকাগোতে জন্মগ্রহণকারী জন ডস প্যাসোজ (১৮৯৬-১৯৭০) হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর স্থাপত্যশিল্প সম্বন্ধে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে স্পেনে যান। সে সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং তিনি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে যোগ দেন। পরে বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে চাকরি করেন ইউএস মেডিকেল কোর-এ। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা-বিশেষ করে ভবঘুরে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার হিসেবে ফ্রান্সে ও ইতালিতে যে জীবন তিনি কাটিয়েছেন- তা-ই তাকে প্রাণিত করেছিল One man’s Initiation (১৯২০) লিখতে। সন্দেহ নেই, যুদ্ধের নৃশংসতা ও বিচিত্র বাস্তবতা এবং তার প্রতি লেখকের ঘৃণা ও ক্ষোভ বেশ ভালোভাবেই উঠে এসেছে এখানে। কিন্তু কথাসাহিত্য তো কেবল নিপুণ বর্ণনা ও বাস্তবানুগ জীবনছবি নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। সেই জায়গায় বেশ ঊনতা ছিল গ্রন্থটির।

Three Soldiers উপন্যাসে দেখা যাচ্ছে, ওই দুর্বলতা লেখক অনেকখানি এড়াতে পেরেছেন। এ বই কেবল সুলিখিত নয়, এর মাধ্যমে উপন্যাসকার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তথাকথিত গৌরবের গালে প্রচণ্ড চপেটাঘাত করেছেন। এটা সাহিত্যিক-সমালোচক-পাঠক মহলে উচ্চ-প্রশংসিত হয়েছে। ডস প্যাসোজের সত্যিকার সাহিত্যিক জীবন শুরু হয়েছিল এর মাধ্যমেই।

ডস প্যাসোজের বড় সাহিত্যপ্রয়াস ‘USA’। এতে মার্কিন জীবনের প্রায় সমস্ত দিকের ছবি অঙ্কিত হয়েছে। আছে বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিরিশ বছরের পরিপ্রেক্ষিতে তিরিশটির মতো চরিত্র। দেশবাস্তবতা ও সমাজের চিত্র যথেষ্ট বিশ্বাস্য ভঙ্গিতে উপস্থাপিত হয়েছে এ ত্রয়ী উপন্যাসে। ফলে সমাজই হয়ে উঠেছে উপন্যাসটির প্রকৃত কেন্দ্রীয় চরিত্র; ঠিক যেমন- উপন্যাসে প্রকৃত নায়ক হয়ে উঠেছে মানুষ নয়, একটি নীল তিমি। ডস প্যাসোজ তার উপন্যাসগুলোতে বক্তব্যবিষয় স্পষ্ট করে তোলার গরজে যতটা সম্ভব স্বচ্ছ একটা যুগচিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন। সেজন্য নানা অপ্রচলিত কৌশল বা আঙ্গিকের আশ্রয় নিয়েছেন যার মধ্যে আছে ‘নিউজ রিল’- জনপ্রিয় সঙ্গীতের অংশবিশেষ, সমকালীন সংবাদের শিরোনাম, বক্তৃতার উদ্ধৃতি প্রভৃতির সুচিন্তিত ব্যবহার।

USA-তে যেমন গত শতাব্দীর গোড়ার দিকের কথা আছে তেমনি Midcentury ধরে রেখেছে ওই শতকের পঞ্চাশের দশকের যুগচিত্র। ইতিহাস, জীবনী ও কথাসাহিত্যের সমন্বিত রূপ রক্ষ্য করা যায় ডস প্যাসোজের উপন্যাসে। তার পাঠকবৃন্দ ও তাদের স্বকাল ও সমসাময়িক ঘটনাবলিকে ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপলব্ধি করতে পারেন। ওই দৃষ্টিভঙ্গির বেশিরভাগটাই পাঠক অর্জন করেন প্যাসোজের উপন্যাস ও সাক্ষাৎকারে ধৃত কথাবার্তা থেকে। “কোয়ার্টারলি আটলান্টিক’ পত্রিকায় প্রদত্ত এক ইন্টারভিউয়ে প্যাসোজ বলেছিলেন, “প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি কেবলমাত্র কথাবার্তার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়, সে ভিত্তি আমাদের জীবনের মধ্যে প্রোথিত।” এখানে যে ‘ভিত্তি’র কথা বলা হলো তা বেশ ভালোভাবে বোঝা যায় প্যাসোজ অঙ্কিত প্রধান কুশীলবদের কার্যকলাপ ও আচরণের মাধ্যমে। Midcentury-তে দেখতে পাই, অমিল-সম্পন্ন কবিতার ছন্দ, জীবনীর আংশিক উদ্ধৃতি, সংবাদপত্রে আশ্রিত খবরের শিরোনামসহ আরও বহু কিছু প্রযুক্ত হয়েছে। তাছাড়া ইতিহাসের ঘটনাপঞ্জির প্রাঞ্জল বিবরণ তিনি দিলেন, সেখানে অতীত থেকে শিক্ষালাভের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কেননা প্যাসোজ মনে করতেন (তার সাক্ষাৎকার পড়ে এমনটাই ধারণা হয়), মানবজাতির প্রধান সমস্যাসমূহ সমাধানের আগে সেসবের স্বরূপ- তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা বিষয়-আশয় ভালো করে বুঝে নেয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ মনের ব্যাপারটাই আগে। এখানে ব্যক্তিমন ও ব্যক্তিস্বার্থের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা কর্তব্য, সবার আগে।

গ্রন্থের যথাযথ পটভূমি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জন ডস প্যাজোস ১৯৩০-এর মাঝামাঝি আমেরিকার অতীত পর্যালোচনা শুরু করেন। তবে সমকালিক ঘটনাবলির হৃদয়গ্রাহী চিত্রণই মূলত লক্ষ্য ছিল তার। ১৯৪১ সালে তিনি The Ground we stand on নামে ইতিহাস খ্যাত আমেরিকানদের মতাদর্শ ও জীবনীভিত্তিক যে বইটি লেখেন সেখানে ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও প্রশাসনিক দক্ষতা মূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, একনায়ক প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থার প্রকৃত রূপ উদ্ঘাটন করা হোক। আমেরিকার বর্তমান অবস্থা- সাম্প্রতিক ধ্যান-ধারণাগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি তার উপন্যাস ও ছোটগল্পগুলোকে যথাসম্ভব বাস্তবসম্মত করে তোলার জন্য প্যাসোজ ১৯৪১-এর মধ্যভাগ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত দেশের বহু অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান। এ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত হয়েছে State of the Nation গ্রন্থটি। এর ১১৭ নং পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ‘এমন একটা দেশ আমেরিকা যেখানে সাধারণ মানুষের জীবনে কাজের বৈচিত্র্য ও বিশ্রাম আছে। মানুষ এখানে একটু চেষ্টা করলেই পাল্টাতে পারে তার পেশা, জীবনযাত্রার পদ্ধতি, অর্থ-সম্পদের পরিমাণ। এ যেন সকালের নাশতা খাওয়ার মতই সহজ ব্যাপার।” (অনুবাদ-লেখক)

এখন আমি যে বইটির কথা বলবো তার নাম Manhattan Transfer। এটা বিখ্যাত হয়ে আছে যুদ্ধের অভিজ্ঞতাজাত নৈরাশ্য ও অস্থিরতার মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরার কারণে। এ গ্রন্থ ডস প্যাসোজের জন্য নিয়ে আসে প্রচুর খ্যাতি ও অর্থকড়ি। নিউইয়র্কের ওপর এ যাবৎ রচিত সেরা বইগুলোর অন্যতম হিসেবে এর সুনাম আছে। এর উপজীব্য হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান নগরের কৃত্রিমতা ও মমতাহীনতা। ১৮৯০ থেকে ১৯২৫/১৯৩০-এর ভেতর মার্কিন জনজীবনে যে প্রভূত পরিবর্তন ঘটে, তার এবং মহানগরীর বিক্ষুব্ধ চেতনার মর্মগ্রাহী ছবি এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় আকর্ষণ। এখানে উঠে এসেছে দারিদ্র্যে নিমজ্জিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা। সাধারণ মানুষের কষ্টের জীবন সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি প্যাসোজকে নিয়ে গেছে মার্কসবাদের দিকে। সেটাই আবার সাকার হয়ে উঠেছে তার সৃষ্টিশীল গদ্যে। এক পর্যায়ে ডস প্যাসোজ মার্কসবাদের ওপর আস্থা হারান। কেননা তিনি দেখেছেন, একনায়ক সম্বলিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণমানুষের দুঃখ-কষ্টের লাঘব হয় না; বরঞ্চ তা আরও বেড়ে যায়। প্যাসোজ কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থা ও ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর আরোপিত বিধি-নিষেধের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রবন্ধে ও বক্তৃতায়।

Manhattan Transfer উপন্যাসটি লিখবার বেশ কয়েক বছর আগে ডস প্যাসোজ স্পেন মেক্সিকোতে সংবাদদাতা ও স্বাধীন লেখক হিসেবে বছর দেড়েক কাজ করেছিলেন। তারপর দ্রুত আমেরিকায় ফিরে এসে নিউইয়র্কস্থ ‘গ্রিনউইচ ভিলেজ’-এর এক বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এটা তার লেখক জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট। কেননা ওই বাড়িতে তিনি নিরুদ্বেগ অবসর কাটিয়েছেন- যা তাকে ভাবতে সাহায্য করেছিল, কী তিনি লিখবেন; কেমনইবা হবে তার লেখক ভাবমূর্তি। মহাযুদ্ধ প্যাসোজকে শিখিয়েছে সত্যসন্ধ হতে, প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধগুলোকে প্রশ্ন করতে। মুখোশ ছিঁড়ে ফেলার সাহসও জুগিয়েছে ওই যুদ্ধ।

লেখক ও তার স্বকালের মধ্যে কী সম্পর্ক যে স্বকালের একজন অংশী তিনি (লেখক) নিজেও? গোড়র দিকের উপন্যাস ঞযৎবব ঝড়ষফরবৎং-এর ভূমিকায় প্যাসোজ এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এভাবে- কাল-আশ্রিত মনের ভাষা তুলে আনে কথাশিল্প। লেখক ওই ভাষাকে পরিশীলিত করে তাকে প্রকাশ করেন লেখায়। এর ভেতর দিয়ে ভাবীকালের রুচি ও মানসতার একটা অবয়ব তিনি গড়ে তোলেন। এরই নাম ইতিহাস আর লেখক এ ইতিহাসের কারিগর।” (অনুবাদ : বর্তমান লেখক)

ডস প্যাসোজের সুপরিচিতি আছে আমেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হিসেবে। সারা সাহিত্যজীবনে প্যাসোজ এ বিশ্বাসে অটল ছিলেন যে, সুলেখক অবশ্যই একজন ইতিহাসস্রষ্টা। তিনি মনে করতেন, অতীতের ভালো-মন্দ অনুসন্ধানের মাধ্যমে বর্তমানের এমনকি ভবিষ্যতের সমস্যাগুলোর শ্রেষ্ঠ সমাধান সম্ভব। সেজন্য ডস প্যাসোজ তাঁর চারপাশের পৃথিবীতে যা কিছু দেখেছেন, যা কিছু শুনেছেন তার গ্রন্থসমূহেও সে সবের নিখুঁত ছবি তুলে এনেছেন।

প্যাসোজের গল্প-উপন্যাসে বিংশ শতাব্দীর আমেরিকার জীবনচিত্র যে ধরনের ভাষায় ও ভঙ্গিতে আঁকা হয়েছে তার কোনো তুলনা হয় না। লেখক হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রধানত দুটি কারণে। এক. তিনি যুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে গ্রহণযোগ্য সৃজনশীলতায় রূপান্তরিত করতে পেরেছেন; দুই. নগর জীবনের ক্ষত, দাগ ও দীর্ঘশ্বাস সার্থকভাবে রূপায়িত হয়েছে তাঁর কথাসাহিত্যে। এছাড়াও আরও কিছু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য আছে তাঁর লেখায়- যা অভিনিবেশী পাঠকের দৃষ্টি এড়াবে না।

ঞযৎবব ঝড়ষফরবৎং, Three Soldiers, Manhattan Transfer, USA, Thd Big Money(১৯২৬), The Great Days (১৯৫৮), The Shackles of Power (১৯৬৬) প্রভৃতি গ্রন্থ ইতোমধ্যে চিরায়ত সাহিত্যেও পঙ্ক্তিভুক্ত হয়েছে। ব্যতিক্রম জীবনদৃষ্টি এবং বিশিষ্ট রচনরারীতি প্যাসোজের সাহিত্যকর্মকে স্পষ্টত আলাদা করেছে প্রতিভাবান অন্য লেখকদের রচনা থেকে। কথ্যভাষার সহজ গাম্ভীর্য আর ভাবনার বৈচিত্র্যে-গভীরতায় জন ডস প্যাসোজ নিজেকে অনন্য উচ্চতায় স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। হয়ে উঠেছেন এমন এক সাহিত্যিক যার গৌণ ‘কাজ’গুলোও মূল্যবান। তার কারণ গুরুত্বপূর্ণ লেখকের অপেক্ষাকৃত দুর্বল রচনাসমূহেও ‘মনের চিরপদার্থ’ নিহিত থাকে।

ছবি

কবিতা পড়া, কবিতা লেখা

ছবি

‘ধুলোয় সব মলিন’, পাঠকের কথা

ছবি

মহত্ত্বর কবি সিকদার আমিনুল হক

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

কয়েকটি অনুগল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

যেভাবে লেখা হলো ‘শিকিবু’

ছবি

জাঁ জোসেফ রাবেয়ারিভেলোর কবিতা

ছবি

সিকদার আমিনুল হকের গদ্য

ছবি

সিকদার আমিনুল হককে লেখা অগ্রজ ও খ্যাতিমান লেখক-সম্পাদকের চিঠি

ছবি

ফিওদর দস্তয়েভস্কি: রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

একজন গফুর মল্লিক

ছবি

অগ্রবীজের ‘অনুবাদ সাহিত্য’ সংখ্যা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

গোপন কথা

ছবি

র’নবীর টোকাই-কথন

ছবি

শিল্পচর্চায় তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি ইনোভেটিভ

ছবি

শামসুর রাহমানের কবিতা বৈভব ও বহুমাত্রিকতা

ছবি

উইলিয়াম রাদিচের অধ্যয়নে অনন্য রবীন্দ্রনাথ

দিলারা হাফিজের কবিতা

ছবি

অবরুদ্ধ বর্ণমালার শৃঙ্খলমুক্তি

ছবি

আহমদুল কবির স্মরণে

ছবি

আহমদুল কবিরের সদাশয়তা

ছবি

রবীন্দ্রসংগীতের অপাপভূমি

ছবি

স্বপ্ন অথবা বিপন্ন বিস্ময়

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

ছাতিম যেন হেমন্তেরই গায়ের গন্ধ

ছবি

সমরেশ মজুমদার স্মারকগ্রন্থ

ছবি

হেমন্ত পদাবলি

ছবি

আমার রমণীর ফল

ছবি

রূপান্তরিত

সাময়িকী কবিতা

ছবি

আমেরিকার কবিতাকাশে এক স্বতন্ত্র নক্ষত্র

ছবি

কবি বেলাল চৌধুরী কাছ থেকে দেখা

ছবি

ফিওদর দস্তয়েভস্কি রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

কামুর ‘দ্য স্ট্রেইঞ্জার’-এ প্রকৃতি ও সূর্য

tab

সাময়িকী

জন ডস প্যাসোজ

সমকালিক ঘটনাবলির রূপকার

সরকার মাসুদ

জন ডস প্যাসোজ

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

১৯৬১ সালটি যে যে কারণে সর্বাধিক উল্লেখ্য, তার একটি হচ্ছে Midcentury-র প্রকাশ। এটা মূলত চারটি উপন্যাসের সমন্বিত রূপ। কথাসাহিত্যের শ্রেণিভুক্ত হলেও এর প্রকাশক A contemporary cronicle উপশিরোনাম ব্যবহার করেছেন গ্রন্থটির। প্রথম উপন্যাস Three Soldiers (১৯২২) ও Midcentury (১৯৬১)-এর মাঝখানে জন ডস প্যাসোজ সতেরোটি বই লিখেছেন। ১৯৬১ সালের পরেও The Shackles of power (১৯৬৬) নামে তার একটি অসাধারণ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

কিন্তু জন ডস প্যাসোজের খ্যাতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল Three Soldiers, The Big Money (১৯২৬) ও Nineteen Ninteen (১৯৩২) নামের উপন্যাসত্রয়ী।

বিশ শতকের মার্কিন জীবনের চালচিত্র হিসেবে জন ডস প্যাসোজের উপন্যাসগুলো এককথায় অতুল। কোনো নির্দিষ্ট কালের ঘটনাবলির বিশ্বাস্য বর্ণনা দিতে হলে লেখককে অবশ্যই ইতিহাসের সহায়তা নিতে হয়। ডস প্যাসোজ ইতিহাসের সঙ্গে নিজের লেখক প্রতিকৃতি চমৎকারভাবে সংযোজিত করেছেন। তাঁর জীবন উপন্যাসের মতোই বর্ণাঢ্য আর সেখান থেকেই লেখক নিয়েছেন বহু গল্প-উপন্যাসের কাচামাল। শিকাগোতে জন্মগ্রহণকারী জন ডস প্যাসোজ (১৮৯৬-১৯৭০) হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর স্থাপত্যশিল্প সম্বন্ধে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে স্পেনে যান। সে সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং তিনি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে যোগ দেন। পরে বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে চাকরি করেন ইউএস মেডিকেল কোর-এ। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা-বিশেষ করে ভবঘুরে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার হিসেবে ফ্রান্সে ও ইতালিতে যে জীবন তিনি কাটিয়েছেন- তা-ই তাকে প্রাণিত করেছিল One man’s Initiation (১৯২০) লিখতে। সন্দেহ নেই, যুদ্ধের নৃশংসতা ও বিচিত্র বাস্তবতা এবং তার প্রতি লেখকের ঘৃণা ও ক্ষোভ বেশ ভালোভাবেই উঠে এসেছে এখানে। কিন্তু কথাসাহিত্য তো কেবল নিপুণ বর্ণনা ও বাস্তবানুগ জীবনছবি নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। সেই জায়গায় বেশ ঊনতা ছিল গ্রন্থটির।

Three Soldiers উপন্যাসে দেখা যাচ্ছে, ওই দুর্বলতা লেখক অনেকখানি এড়াতে পেরেছেন। এ বই কেবল সুলিখিত নয়, এর মাধ্যমে উপন্যাসকার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তথাকথিত গৌরবের গালে প্রচণ্ড চপেটাঘাত করেছেন। এটা সাহিত্যিক-সমালোচক-পাঠক মহলে উচ্চ-প্রশংসিত হয়েছে। ডস প্যাসোজের সত্যিকার সাহিত্যিক জীবন শুরু হয়েছিল এর মাধ্যমেই।

ডস প্যাসোজের বড় সাহিত্যপ্রয়াস ‘USA’। এতে মার্কিন জীবনের প্রায় সমস্ত দিকের ছবি অঙ্কিত হয়েছে। আছে বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিরিশ বছরের পরিপ্রেক্ষিতে তিরিশটির মতো চরিত্র। দেশবাস্তবতা ও সমাজের চিত্র যথেষ্ট বিশ্বাস্য ভঙ্গিতে উপস্থাপিত হয়েছে এ ত্রয়ী উপন্যাসে। ফলে সমাজই হয়ে উঠেছে উপন্যাসটির প্রকৃত কেন্দ্রীয় চরিত্র; ঠিক যেমন- উপন্যাসে প্রকৃত নায়ক হয়ে উঠেছে মানুষ নয়, একটি নীল তিমি। ডস প্যাসোজ তার উপন্যাসগুলোতে বক্তব্যবিষয় স্পষ্ট করে তোলার গরজে যতটা সম্ভব স্বচ্ছ একটা যুগচিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন। সেজন্য নানা অপ্রচলিত কৌশল বা আঙ্গিকের আশ্রয় নিয়েছেন যার মধ্যে আছে ‘নিউজ রিল’- জনপ্রিয় সঙ্গীতের অংশবিশেষ, সমকালীন সংবাদের শিরোনাম, বক্তৃতার উদ্ধৃতি প্রভৃতির সুচিন্তিত ব্যবহার।

USA-তে যেমন গত শতাব্দীর গোড়ার দিকের কথা আছে তেমনি Midcentury ধরে রেখেছে ওই শতকের পঞ্চাশের দশকের যুগচিত্র। ইতিহাস, জীবনী ও কথাসাহিত্যের সমন্বিত রূপ রক্ষ্য করা যায় ডস প্যাসোজের উপন্যাসে। তার পাঠকবৃন্দ ও তাদের স্বকাল ও সমসাময়িক ঘটনাবলিকে ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপলব্ধি করতে পারেন। ওই দৃষ্টিভঙ্গির বেশিরভাগটাই পাঠক অর্জন করেন প্যাসোজের উপন্যাস ও সাক্ষাৎকারে ধৃত কথাবার্তা থেকে। “কোয়ার্টারলি আটলান্টিক’ পত্রিকায় প্রদত্ত এক ইন্টারভিউয়ে প্যাসোজ বলেছিলেন, “প্রজাতন্ত্রের ভিত্তি কেবলমাত্র কথাবার্তার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়, সে ভিত্তি আমাদের জীবনের মধ্যে প্রোথিত।” এখানে যে ‘ভিত্তি’র কথা বলা হলো তা বেশ ভালোভাবে বোঝা যায় প্যাসোজ অঙ্কিত প্রধান কুশীলবদের কার্যকলাপ ও আচরণের মাধ্যমে। Midcentury-তে দেখতে পাই, অমিল-সম্পন্ন কবিতার ছন্দ, জীবনীর আংশিক উদ্ধৃতি, সংবাদপত্রে আশ্রিত খবরের শিরোনামসহ আরও বহু কিছু প্রযুক্ত হয়েছে। তাছাড়া ইতিহাসের ঘটনাপঞ্জির প্রাঞ্জল বিবরণ তিনি দিলেন, সেখানে অতীত থেকে শিক্ষালাভের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কেননা প্যাসোজ মনে করতেন (তার সাক্ষাৎকার পড়ে এমনটাই ধারণা হয়), মানবজাতির প্রধান সমস্যাসমূহ সমাধানের আগে সেসবের স্বরূপ- তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা বিষয়-আশয় ভালো করে বুঝে নেয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ মনের ব্যাপারটাই আগে। এখানে ব্যক্তিমন ও ব্যক্তিস্বার্থের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা কর্তব্য, সবার আগে।

গ্রন্থের যথাযথ পটভূমি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জন ডস প্যাজোস ১৯৩০-এর মাঝামাঝি আমেরিকার অতীত পর্যালোচনা শুরু করেন। তবে সমকালিক ঘটনাবলির হৃদয়গ্রাহী চিত্রণই মূলত লক্ষ্য ছিল তার। ১৯৪১ সালে তিনি The Ground we stand on নামে ইতিহাস খ্যাত আমেরিকানদের মতাদর্শ ও জীবনীভিত্তিক যে বইটি লেখেন সেখানে ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও প্রশাসনিক দক্ষতা মূল্যায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, একনায়ক প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থার প্রকৃত রূপ উদ্ঘাটন করা হোক। আমেরিকার বর্তমান অবস্থা- সাম্প্রতিক ধ্যান-ধারণাগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি তার উপন্যাস ও ছোটগল্পগুলোকে যথাসম্ভব বাস্তবসম্মত করে তোলার জন্য প্যাসোজ ১৯৪১-এর মধ্যভাগ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত দেশের বহু অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান। এ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত হয়েছে State of the Nation গ্রন্থটি। এর ১১৭ নং পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ‘এমন একটা দেশ আমেরিকা যেখানে সাধারণ মানুষের জীবনে কাজের বৈচিত্র্য ও বিশ্রাম আছে। মানুষ এখানে একটু চেষ্টা করলেই পাল্টাতে পারে তার পেশা, জীবনযাত্রার পদ্ধতি, অর্থ-সম্পদের পরিমাণ। এ যেন সকালের নাশতা খাওয়ার মতই সহজ ব্যাপার।” (অনুবাদ-লেখক)

এখন আমি যে বইটির কথা বলবো তার নাম Manhattan Transfer। এটা বিখ্যাত হয়ে আছে যুদ্ধের অভিজ্ঞতাজাত নৈরাশ্য ও অস্থিরতার মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরার কারণে। এ গ্রন্থ ডস প্যাসোজের জন্য নিয়ে আসে প্রচুর খ্যাতি ও অর্থকড়ি। নিউইয়র্কের ওপর এ যাবৎ রচিত সেরা বইগুলোর অন্যতম হিসেবে এর সুনাম আছে। এর উপজীব্য হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান নগরের কৃত্রিমতা ও মমতাহীনতা। ১৮৯০ থেকে ১৯২৫/১৯৩০-এর ভেতর মার্কিন জনজীবনে যে প্রভূত পরিবর্তন ঘটে, তার এবং মহানগরীর বিক্ষুব্ধ চেতনার মর্মগ্রাহী ছবি এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় আকর্ষণ। এখানে উঠে এসেছে দারিদ্র্যে নিমজ্জিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা। সাধারণ মানুষের কষ্টের জীবন সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি প্যাসোজকে নিয়ে গেছে মার্কসবাদের দিকে। সেটাই আবার সাকার হয়ে উঠেছে তার সৃষ্টিশীল গদ্যে। এক পর্যায়ে ডস প্যাসোজ মার্কসবাদের ওপর আস্থা হারান। কেননা তিনি দেখেছেন, একনায়ক সম্বলিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণমানুষের দুঃখ-কষ্টের লাঘব হয় না; বরঞ্চ তা আরও বেড়ে যায়। প্যাসোজ কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থা ও ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর আরোপিত বিধি-নিষেধের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রবন্ধে ও বক্তৃতায়।

Manhattan Transfer উপন্যাসটি লিখবার বেশ কয়েক বছর আগে ডস প্যাসোজ স্পেন মেক্সিকোতে সংবাদদাতা ও স্বাধীন লেখক হিসেবে বছর দেড়েক কাজ করেছিলেন। তারপর দ্রুত আমেরিকায় ফিরে এসে নিউইয়র্কস্থ ‘গ্রিনউইচ ভিলেজ’-এর এক বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এটা তার লেখক জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট। কেননা ওই বাড়িতে তিনি নিরুদ্বেগ অবসর কাটিয়েছেন- যা তাকে ভাবতে সাহায্য করেছিল, কী তিনি লিখবেন; কেমনইবা হবে তার লেখক ভাবমূর্তি। মহাযুদ্ধ প্যাসোজকে শিখিয়েছে সত্যসন্ধ হতে, প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধগুলোকে প্রশ্ন করতে। মুখোশ ছিঁড়ে ফেলার সাহসও জুগিয়েছে ওই যুদ্ধ।

লেখক ও তার স্বকালের মধ্যে কী সম্পর্ক যে স্বকালের একজন অংশী তিনি (লেখক) নিজেও? গোড়র দিকের উপন্যাস ঞযৎবব ঝড়ষফরবৎং-এর ভূমিকায় প্যাসোজ এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এভাবে- কাল-আশ্রিত মনের ভাষা তুলে আনে কথাশিল্প। লেখক ওই ভাষাকে পরিশীলিত করে তাকে প্রকাশ করেন লেখায়। এর ভেতর দিয়ে ভাবীকালের রুচি ও মানসতার একটা অবয়ব তিনি গড়ে তোলেন। এরই নাম ইতিহাস আর লেখক এ ইতিহাসের কারিগর।” (অনুবাদ : বর্তমান লেখক)

ডস প্যাসোজের সুপরিচিতি আছে আমেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হিসেবে। সারা সাহিত্যজীবনে প্যাসোজ এ বিশ্বাসে অটল ছিলেন যে, সুলেখক অবশ্যই একজন ইতিহাসস্রষ্টা। তিনি মনে করতেন, অতীতের ভালো-মন্দ অনুসন্ধানের মাধ্যমে বর্তমানের এমনকি ভবিষ্যতের সমস্যাগুলোর শ্রেষ্ঠ সমাধান সম্ভব। সেজন্য ডস প্যাসোজ তাঁর চারপাশের পৃথিবীতে যা কিছু দেখেছেন, যা কিছু শুনেছেন তার গ্রন্থসমূহেও সে সবের নিখুঁত ছবি তুলে এনেছেন।

প্যাসোজের গল্প-উপন্যাসে বিংশ শতাব্দীর আমেরিকার জীবনচিত্র যে ধরনের ভাষায় ও ভঙ্গিতে আঁকা হয়েছে তার কোনো তুলনা হয় না। লেখক হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রধানত দুটি কারণে। এক. তিনি যুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে গ্রহণযোগ্য সৃজনশীলতায় রূপান্তরিত করতে পেরেছেন; দুই. নগর জীবনের ক্ষত, দাগ ও দীর্ঘশ্বাস সার্থকভাবে রূপায়িত হয়েছে তাঁর কথাসাহিত্যে। এছাড়াও আরও কিছু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য আছে তাঁর লেখায়- যা অভিনিবেশী পাঠকের দৃষ্টি এড়াবে না।

ঞযৎবব ঝড়ষফরবৎং, Three Soldiers, Manhattan Transfer, USA, Thd Big Money(১৯২৬), The Great Days (১৯৫৮), The Shackles of Power (১৯৬৬) প্রভৃতি গ্রন্থ ইতোমধ্যে চিরায়ত সাহিত্যেও পঙ্ক্তিভুক্ত হয়েছে। ব্যতিক্রম জীবনদৃষ্টি এবং বিশিষ্ট রচনরারীতি প্যাসোজের সাহিত্যকর্মকে স্পষ্টত আলাদা করেছে প্রতিভাবান অন্য লেখকদের রচনা থেকে। কথ্যভাষার সহজ গাম্ভীর্য আর ভাবনার বৈচিত্র্যে-গভীরতায় জন ডস প্যাসোজ নিজেকে অনন্য উচ্চতায় স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। হয়ে উঠেছেন এমন এক সাহিত্যিক যার গৌণ ‘কাজ’গুলোও মূল্যবান। তার কারণ গুরুত্বপূর্ণ লেখকের অপেক্ষাকৃত দুর্বল রচনাসমূহেও ‘মনের চিরপদার্থ’ নিহিত থাকে।

back to top