বিষ্ণু দে’র লেখা চিঠি
১/১০, প্রিন্স গোলাম মোহম্মদ রোড
কলকাতা-২৬
৩/১/৭১
প্রিয়বরেষু,
অনেকদিন পরে আপনার চিঠি পেয়ে খুশি হয়েছি বেশ। এবং দেখা হতে পারে জেনেও। জানুআরর শেষ দিকে থাকছি। বন্যার খবর আমরা দূর থেকে প্রচুর পেয়েছি, কষ্ট পেয়েছি সবাই। তারপরে নির্বাচনের খবরে উন্মুখ হয়ে আছি।
“সাম্প্রতিক” বেরোচ্ছে না? রাজশাহীর দুটি-পত্রিকাও পাই না। “বই” পত্রটি কিরকম? “স্বদেশ”? “পরিক্রমা”? আমি নিজেকে অনিশ্চিত মনে করছি, কবিতার সংকলনের ইচ্ছাই প্রথমে ছিল, কিন্তু মনে হয় সব পড়িনি, যা পড়া উচিত ছিল। দেখি কি করতে পারি। প্রকাশকরাও কিছুকাল দুস্থ দিনযাপন করছেন, বইয়ের পাড়াতেই দিনগুলি বড় অস্থির। দক্ষিণ পাড়ায় তুলনায় গোলমাল কম, কিন্তু বইয়ের কারবার এদিকে নগণ্য।
ভাষা আন্দোলনসংক্রান্ত একটি বই পেয়ে ও পড়ে কৃতজ্ঞ বোধ করেছি। উমর সাহেবকে লিখে জানাব কিনা ভাবছি।
আপনি এলে অবশ্যই জানাবেন। কোন ঠিকানায় থাকবেন ইত্যাদি। আমি থাকি দক্ষিণে, লেকমার্কেট অঞ্চলে, পারডেনু পাড়ায়। সস্ত্রীক আসছেন?
শামসুর রাহমানের সঙ্গে দেখা হলেও বেশ হত।
শুভ ইচ্ছাসহ আপনাদের
বিষ্ণু দে
রিখিয়া, সাঁওতাল পরগনা
বিহার
১/২/৭৪
প্রিয়বরেষু,
বহুকাল আপনার ও সাম্প্রতিক-এর কোনো খবর পাই নি। আশা করি খবর ভালো। জলি কলকাতায় এসেছিলেন এবং এক টিন অলিভ ওয়েলও পাঠিয়ে দেন। সেটি উপকারে লেগেছে। কিন্তু তাঁকে ধন্যবাদ দিতে পারি নি, কারণ জলি নামে ডাকা যায় কিন্তু ডাকে লেখা যায় না! জলি-র পোশাকী নাম জানা দরকার। বাঁধন এসেছে, সেও বলতে পারল না! জিষ্ণুরাও না।
সুতরাং প্রায়ই আপনাদের কথা মনে হয়েছে চিঠি লেখা হয়নি। আজ মনস্থির করে বসেছি। ঢাকার সাহিত্যজগতের কি খবর? আর সামাজিক?
আমাদের বড় মেয়ে ইরা ও জামাই সত্যেশ চক্রবর্তি, দুই নাতিকে নিয়ে ২৫শে নাগাদ্ ঢাকায় যাবে, সেখান থেকে সত্যেশ হয়তো হাওয়াই যাবে বা ফিরে এসে তারপরে যাবে। রাজ্জাক শাহেবদের ওদের অন্তরঙ্গ পরিচয়। আতিকুল্লাহ্ সাহেবকে লিখেছি। ‘রবিকরোজ্জ্বল নিজ দেশে’ সংক্রান্ত চিঠি, মাওলা তো নেই!
আমার চেনা সাহিত্যিকদের খবর জানতে ইচ্ছা করে। কি কি বই বেরোল?
শুভাকাক্সক্ষী
বিষ্ণু দে
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা চিঠি
ভাই শিকদার
তোমার চিঠি পেয়েছি। পরে বিস্তৃত লিখবো। অঞ্জনের চিঠির মধ্যে একটা ছোট্ট লেখা পাঠাচ্ছি। তুমি, অঞ্জনের চিঠির মধ্যে সবই জানতে পারবে। এই বইটার জন্যে তোমার সাহায্য খুবই জরুরি। প্রাণপণ করো।
ভালোবাসাসহ
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৬ ডি, বনডেল রোড
কলকাতা-১৯।
ভাই শিকদার
সুযোগ হয়ে গেল, তাই হাতে হাতে চিঠি দিতে পারছি। তুমি রবীনের হাতে বিপ্লব-এর কপি পাঠাতে পারো। কেমন আছো? মেম সাহেব বাচ্চারা কেমন? আমি পুজোর আগে আবার একবার ঢাকা যেতে চাইÑ দিন ১৫-র জন্যে। তুমি অতি অবশ্য রবীনের হাতে আমার জন্য স্পন্সরশিপের কাগজ পাঠাবে। বেলালকে বলো। বেলাল আর বটুর দুটো ছোট্ট ছিঠি পৌঁছে দিও। শফিকের কী খবর? সমরেশদাও ঐ সময় যেতে চান। তাহলে একসঙ্গে খুব হৈ হৈ করা যাবে।
তুমি কোনো গদ্য লেখা আনন্দবাজারের নতুন কাগজ ‘সানন্দা’র জন্যে দেবে? তরুণ ভালো লেখা কিছু যোগাড় করে পাঠাতে পারো। ঢাকার সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের খবর নিয়ে প্রতিপক্ষে ‘ঢাকার চিঠি’ লিখতেও পারো। আমায় পত্রপাঠ জানাবে। আমরা ভালো আছি। ঢাকার উপর লেখা (বড়) সানন্দা-য় বেরুচ্ছে ১৫ই আগস্ট।
ভালোবাসা
শক্তি দা
১০/৭/৮৩
শিবনারায়ণ রায়ের লেখা চিঠি
২৬/ ০৫/ ৯৩
কল্যানীয়েষু,
গতকাল কবি কালীকৃষ্ণ গুহ তোমার কাব্যগ্রন্থ সতত ডানার মানুষ, এবং দুটি পত্রিকাÑ কিছুধ্বনি ও মাটি দিয়ে গিয়েছেন। কলকাতায় দেখা হলে ভাল লাগত। শরীর এখন আশা করি সুস্থ অবস্থায় আছে।
সতত ডানার মানুষ প্রথমেই নজর কাড়ে প্রচ্ছদ চিত্রণ, ছাপা, কাগজ, বাঁধাই এই সবের অভিনবত্ব এবং উঁচু মানের জন্য। এ জন্য প্রকাশকের রুচির তারিফ করি। তোমার কবিতায় চোখ বুলিয়েছিÑ কিন্তু আগাগোড়া যতœ করে পড়তে সময় লাগবে। যতটা অল্প সময়ের মধ্যে পড়েছি তাতে মনে হয় সুধীন্দ্রের মতো তুমি একটা বড় মাপের কাব্য বুনে তুলেছো, তাতে সুরের ওঠাপড়া আছে, ভাবের এবং রূপের বৈচিত্র্য এবং বিন্যাস আছে, পুরোটা একসঙ্গে না পড়লে যার সম্পন্নতা এবং ঐক্য ধরা যাবে না। ইচ্ছে রইলো পরে বইটি নিয়ে জিজ্ঞাসায় বা অন্যত্র আলোচনা করবার।
জিজ্ঞাসা বাংলাদেশ সংখ্যা কি পেয়েছো? তোমার একটি কবিতা জিজ্ঞাসার জন্য পাঠালে খুশি হই।
কিছুধ্বনি এবং মাটি কি তুমিই পাঠিয়েছো? যদি সম্পাদক বা প্রকাশকরা তোমার মারফৎ পাঠিয়ে থাকেন তাঁদের আমার ধন্যবাদ জানিও।
প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো
শিবনারায়ণ রায়
ভবিষ্যতে চিঠি বা লেখা শান্তিনিকেতনের ঠিকানায় পাঠিও।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা চিঠি
সিকদার আমিনুল হক
প্রীতিভাজনেষু
তোমার চিঠি যথাসময়ে পেয়েছিলাম। তোমাকে আমার মনে থাকবে না কেন, খুব ভালোই মনে আছে। মাঝখানে আমি রাশিয়া গিয়েছিলুম। সেই জন্য তক্ষুণি উত্তর দিতে পারিনি। তুমি আমার কাছে যে লেখা চেয়েছিলে, তাও দিতে পারিনি ওই কারণে। পরে কখনো আগে থেকে বেশি সময় পেলে বিস্তারিত লেখা দেবো। ভালো আছো নিশ্চয়ই। বাংলাদেশে প্রায়ই যেতে ইচ্ছে করে। সুযোগ-সুবিধা করে যে কোন দিন উপস্থিত হতে পারি।
প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
২৫-৮-৮৩
শহীদ কাদরীর লেখা চিঠি
12 BERNHARD BARON HOUSE
HENRIQUE’S STREET
LONDON E-1
1st Feb, 1983
সিকদার আমিনুল হক
প্রিয়বরেষু,
অনেক আগেই আপনাদেরকে চিঠি লেখা উচিত ছিল। কিন্তু নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। যে-চাকরির প্রতিশ্রুতি পেয়ে লন্ডনে ফিরে এসেছিলাম, সেটি পাইনি। অত্যন্ত অস্থায়ী অবস্থায় এ্যাদ্দিন বসবাস করছিলাম, এখনও অবস্থা তথৈবচ। একটি চাকরি অবশ্য পেয়েছি। কিন্তু আমার মন এদেশে বসছে না। কী যে করি কিছু বুঝতে পারছি না।
বিভিন্ন ধরনের কান্না আমার অনুভব এবং অনুভবের স্মৃতির মধ্যে রয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি নতুন ধরনের কান্না, সে কান্না হচ্ছে দেশে-না-থাকার কান্না। আমার সমস্ত জীবন বিস্বাদ হয়ে গেছে। ভালো লাগছে না কিছুই। সমস্ত দিন, সারা দিন বন্ধুদের মুখ মনে পড়ে, অনবরত, বার বার। আশা করছি আপনারা সবাই কুশলে রয়েছেন। আরো আশা করছি, আপনার পত্রিকা ‘বিপ্লব’-এর শ্রী ও কলেবর আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখুন না আপনার ছোট্টো নৌকোয় আমার ঠাঁই হয় কিনা। সত্যি একটা চাকরি-বাকরির সন্ধান পেলে দেশে ফিরে যেতাম। কয়েক কপি আমার লন্ডনের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলে বাধিত হবো। বেলালের খবর কি? অনুরোধ করছি, আলস্য ঝেড়ে ফেলে আমার এ চিঠির উত্তর দ্রুত পাঠাবেন।
প্রীত্যন্তে
কাদরী
সমরেশ বসুর লেখা চিঠি
১২,পারভেজ শহীদী রেন্জ
কলকাতা-১৯
৩.৮.৮৩
সিকদার আমিনুল হক
সম্পাদক ‘বিপ্লব’
প্রীতিভাজনেষু,
আপনার ‘বিপ্লব’ পত্রিকায়, ঈদ সংখ্যায় আমার উপন্যাসের দরুন যে দক্ষিণা দেবার মনস্থ করেছেন, তা সফিক খানের মারফৎ পাঠালেই আমি পেয়ে যাবো।
আশা করি আপনি কুশলে আছেন।
খোদা হাফেজ,
সমরেশ বসু
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
বিষ্ণু দে’র লেখা চিঠি
১/১০, প্রিন্স গোলাম মোহম্মদ রোড
কলকাতা-২৬
৩/১/৭১
প্রিয়বরেষু,
অনেকদিন পরে আপনার চিঠি পেয়ে খুশি হয়েছি বেশ। এবং দেখা হতে পারে জেনেও। জানুআরর শেষ দিকে থাকছি। বন্যার খবর আমরা দূর থেকে প্রচুর পেয়েছি, কষ্ট পেয়েছি সবাই। তারপরে নির্বাচনের খবরে উন্মুখ হয়ে আছি।
“সাম্প্রতিক” বেরোচ্ছে না? রাজশাহীর দুটি-পত্রিকাও পাই না। “বই” পত্রটি কিরকম? “স্বদেশ”? “পরিক্রমা”? আমি নিজেকে অনিশ্চিত মনে করছি, কবিতার সংকলনের ইচ্ছাই প্রথমে ছিল, কিন্তু মনে হয় সব পড়িনি, যা পড়া উচিত ছিল। দেখি কি করতে পারি। প্রকাশকরাও কিছুকাল দুস্থ দিনযাপন করছেন, বইয়ের পাড়াতেই দিনগুলি বড় অস্থির। দক্ষিণ পাড়ায় তুলনায় গোলমাল কম, কিন্তু বইয়ের কারবার এদিকে নগণ্য।
ভাষা আন্দোলনসংক্রান্ত একটি বই পেয়ে ও পড়ে কৃতজ্ঞ বোধ করেছি। উমর সাহেবকে লিখে জানাব কিনা ভাবছি।
আপনি এলে অবশ্যই জানাবেন। কোন ঠিকানায় থাকবেন ইত্যাদি। আমি থাকি দক্ষিণে, লেকমার্কেট অঞ্চলে, পারডেনু পাড়ায়। সস্ত্রীক আসছেন?
শামসুর রাহমানের সঙ্গে দেখা হলেও বেশ হত।
শুভ ইচ্ছাসহ আপনাদের
বিষ্ণু দে
রিখিয়া, সাঁওতাল পরগনা
বিহার
১/২/৭৪
প্রিয়বরেষু,
বহুকাল আপনার ও সাম্প্রতিক-এর কোনো খবর পাই নি। আশা করি খবর ভালো। জলি কলকাতায় এসেছিলেন এবং এক টিন অলিভ ওয়েলও পাঠিয়ে দেন। সেটি উপকারে লেগেছে। কিন্তু তাঁকে ধন্যবাদ দিতে পারি নি, কারণ জলি নামে ডাকা যায় কিন্তু ডাকে লেখা যায় না! জলি-র পোশাকী নাম জানা দরকার। বাঁধন এসেছে, সেও বলতে পারল না! জিষ্ণুরাও না।
সুতরাং প্রায়ই আপনাদের কথা মনে হয়েছে চিঠি লেখা হয়নি। আজ মনস্থির করে বসেছি। ঢাকার সাহিত্যজগতের কি খবর? আর সামাজিক?
আমাদের বড় মেয়ে ইরা ও জামাই সত্যেশ চক্রবর্তি, দুই নাতিকে নিয়ে ২৫শে নাগাদ্ ঢাকায় যাবে, সেখান থেকে সত্যেশ হয়তো হাওয়াই যাবে বা ফিরে এসে তারপরে যাবে। রাজ্জাক শাহেবদের ওদের অন্তরঙ্গ পরিচয়। আতিকুল্লাহ্ সাহেবকে লিখেছি। ‘রবিকরোজ্জ্বল নিজ দেশে’ সংক্রান্ত চিঠি, মাওলা তো নেই!
আমার চেনা সাহিত্যিকদের খবর জানতে ইচ্ছা করে। কি কি বই বেরোল?
শুভাকাক্সক্ষী
বিষ্ণু দে
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা চিঠি
ভাই শিকদার
তোমার চিঠি পেয়েছি। পরে বিস্তৃত লিখবো। অঞ্জনের চিঠির মধ্যে একটা ছোট্ট লেখা পাঠাচ্ছি। তুমি, অঞ্জনের চিঠির মধ্যে সবই জানতে পারবে। এই বইটার জন্যে তোমার সাহায্য খুবই জরুরি। প্রাণপণ করো।
ভালোবাসাসহ
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৬ ডি, বনডেল রোড
কলকাতা-১৯।
ভাই শিকদার
সুযোগ হয়ে গেল, তাই হাতে হাতে চিঠি দিতে পারছি। তুমি রবীনের হাতে বিপ্লব-এর কপি পাঠাতে পারো। কেমন আছো? মেম সাহেব বাচ্চারা কেমন? আমি পুজোর আগে আবার একবার ঢাকা যেতে চাইÑ দিন ১৫-র জন্যে। তুমি অতি অবশ্য রবীনের হাতে আমার জন্য স্পন্সরশিপের কাগজ পাঠাবে। বেলালকে বলো। বেলাল আর বটুর দুটো ছোট্ট ছিঠি পৌঁছে দিও। শফিকের কী খবর? সমরেশদাও ঐ সময় যেতে চান। তাহলে একসঙ্গে খুব হৈ হৈ করা যাবে।
তুমি কোনো গদ্য লেখা আনন্দবাজারের নতুন কাগজ ‘সানন্দা’র জন্যে দেবে? তরুণ ভালো লেখা কিছু যোগাড় করে পাঠাতে পারো। ঢাকার সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের খবর নিয়ে প্রতিপক্ষে ‘ঢাকার চিঠি’ লিখতেও পারো। আমায় পত্রপাঠ জানাবে। আমরা ভালো আছি। ঢাকার উপর লেখা (বড়) সানন্দা-য় বেরুচ্ছে ১৫ই আগস্ট।
ভালোবাসা
শক্তি দা
১০/৭/৮৩
শিবনারায়ণ রায়ের লেখা চিঠি
২৬/ ০৫/ ৯৩
কল্যানীয়েষু,
গতকাল কবি কালীকৃষ্ণ গুহ তোমার কাব্যগ্রন্থ সতত ডানার মানুষ, এবং দুটি পত্রিকাÑ কিছুধ্বনি ও মাটি দিয়ে গিয়েছেন। কলকাতায় দেখা হলে ভাল লাগত। শরীর এখন আশা করি সুস্থ অবস্থায় আছে।
সতত ডানার মানুষ প্রথমেই নজর কাড়ে প্রচ্ছদ চিত্রণ, ছাপা, কাগজ, বাঁধাই এই সবের অভিনবত্ব এবং উঁচু মানের জন্য। এ জন্য প্রকাশকের রুচির তারিফ করি। তোমার কবিতায় চোখ বুলিয়েছিÑ কিন্তু আগাগোড়া যতœ করে পড়তে সময় লাগবে। যতটা অল্প সময়ের মধ্যে পড়েছি তাতে মনে হয় সুধীন্দ্রের মতো তুমি একটা বড় মাপের কাব্য বুনে তুলেছো, তাতে সুরের ওঠাপড়া আছে, ভাবের এবং রূপের বৈচিত্র্য এবং বিন্যাস আছে, পুরোটা একসঙ্গে না পড়লে যার সম্পন্নতা এবং ঐক্য ধরা যাবে না। ইচ্ছে রইলো পরে বইটি নিয়ে জিজ্ঞাসায় বা অন্যত্র আলোচনা করবার।
জিজ্ঞাসা বাংলাদেশ সংখ্যা কি পেয়েছো? তোমার একটি কবিতা জিজ্ঞাসার জন্য পাঠালে খুশি হই।
কিছুধ্বনি এবং মাটি কি তুমিই পাঠিয়েছো? যদি সম্পাদক বা প্রকাশকরা তোমার মারফৎ পাঠিয়ে থাকেন তাঁদের আমার ধন্যবাদ জানিও।
প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো
শিবনারায়ণ রায়
ভবিষ্যতে চিঠি বা লেখা শান্তিনিকেতনের ঠিকানায় পাঠিও।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা চিঠি
সিকদার আমিনুল হক
প্রীতিভাজনেষু
তোমার চিঠি যথাসময়ে পেয়েছিলাম। তোমাকে আমার মনে থাকবে না কেন, খুব ভালোই মনে আছে। মাঝখানে আমি রাশিয়া গিয়েছিলুম। সেই জন্য তক্ষুণি উত্তর দিতে পারিনি। তুমি আমার কাছে যে লেখা চেয়েছিলে, তাও দিতে পারিনি ওই কারণে। পরে কখনো আগে থেকে বেশি সময় পেলে বিস্তারিত লেখা দেবো। ভালো আছো নিশ্চয়ই। বাংলাদেশে প্রায়ই যেতে ইচ্ছে করে। সুযোগ-সুবিধা করে যে কোন দিন উপস্থিত হতে পারি।
প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
২৫-৮-৮৩
শহীদ কাদরীর লেখা চিঠি
12 BERNHARD BARON HOUSE
HENRIQUE’S STREET
LONDON E-1
1st Feb, 1983
সিকদার আমিনুল হক
প্রিয়বরেষু,
অনেক আগেই আপনাদেরকে চিঠি লেখা উচিত ছিল। কিন্তু নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। যে-চাকরির প্রতিশ্রুতি পেয়ে লন্ডনে ফিরে এসেছিলাম, সেটি পাইনি। অত্যন্ত অস্থায়ী অবস্থায় এ্যাদ্দিন বসবাস করছিলাম, এখনও অবস্থা তথৈবচ। একটি চাকরি অবশ্য পেয়েছি। কিন্তু আমার মন এদেশে বসছে না। কী যে করি কিছু বুঝতে পারছি না।
বিভিন্ন ধরনের কান্না আমার অনুভব এবং অনুভবের স্মৃতির মধ্যে রয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি নতুন ধরনের কান্না, সে কান্না হচ্ছে দেশে-না-থাকার কান্না। আমার সমস্ত জীবন বিস্বাদ হয়ে গেছে। ভালো লাগছে না কিছুই। সমস্ত দিন, সারা দিন বন্ধুদের মুখ মনে পড়ে, অনবরত, বার বার। আশা করছি আপনারা সবাই কুশলে রয়েছেন। আরো আশা করছি, আপনার পত্রিকা ‘বিপ্লব’-এর শ্রী ও কলেবর আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখুন না আপনার ছোট্টো নৌকোয় আমার ঠাঁই হয় কিনা। সত্যি একটা চাকরি-বাকরির সন্ধান পেলে দেশে ফিরে যেতাম। কয়েক কপি আমার লন্ডনের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলে বাধিত হবো। বেলালের খবর কি? অনুরোধ করছি, আলস্য ঝেড়ে ফেলে আমার এ চিঠির উত্তর দ্রুত পাঠাবেন।
প্রীত্যন্তে
কাদরী
সমরেশ বসুর লেখা চিঠি
১২,পারভেজ শহীদী রেন্জ
কলকাতা-১৯
৩.৮.৮৩
সিকদার আমিনুল হক
সম্পাদক ‘বিপ্লব’
প্রীতিভাজনেষু,
আপনার ‘বিপ্লব’ পত্রিকায়, ঈদ সংখ্যায় আমার উপন্যাসের দরুন যে দক্ষিণা দেবার মনস্থ করেছেন, তা সফিক খানের মারফৎ পাঠালেই আমি পেয়ে যাবো।
আশা করি আপনি কুশলে আছেন।
খোদা হাফেজ,
সমরেশ বসু