হাবিবুল্লাহ রাসেল
অন্তর
শিশু কাক উঁচু গাছের এক ডালে উড়ে এসে মা কাককে বলল, দেখো মা, মানুষের বাড়ি থেকে ঠোঁটে করে কী নিয়ে এসেছি?
- কী এনেছিস বাছা।
- সাবান এনেছি! দেখো, কী সুন্দর ঘ্রাণ!
- উড়তে শেখাতে না শেখাতে তুই চুরি করতে শিখে গেলি বাছা?
- বেশ করেছি মা। মানুষ যে গাছ কেটে আমাদের বাসা ভেঙে দেয়! সে কিছু না?
- হয়েছে হয়েছে, এ যুগের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে আর কথায় পারা যাবে না। আয়, লক্ষ্মীটি হয়ে বস, এবার তোকে সাবান খাইয়ে দিই।
- না মা, আমি সাবান খাব না।
- খাবি না তো এনেছিস কেন?
- সাবান দিয়ে গোসল করব।
- আমরা কি মানুষ যে সাবান দিয়ে গোসল করব?
- দেখনি, মানুষেরা সাবান দিয়ে গোসল করে গায়ের ময়লা দূর করে কত ফর্সা হয়ে যায়? আমিও সাবান দিয়ে গোসল করে গায়ের কালো দূর করে ফর্সা হয়ে যাব এবার।
- দূর বোকা, কালোই তো সুন্দর।
- তাহলে মানুষ সাবান মাখে কেন?
- শরীরে সাবান মাখলেও মানুষের অন্তরের কালো যদি তুই দেখতি তবে আর সাবান মেখে ফর্সা হতে চাইতি না।
- তাই মা? চলো, তবে সাবান খাই।
নবীন ও প্রবীণ শয়তান
তরুণ শয়তান এসে প্রবীণ শয়তানকে বলল, এটা কী হচ্ছে বড় ভাই?
প্রবীণ শয়তান বলল, কী হয়েছে? এত ক্ষেপলি কেন? শয়তানের মাথা সব সময় ঠা-া রাখতে হয়।
- আমার প্রতি অন্যায় হবে আর আমি মাথা ঠা-া রাখব?
- মাথা গরম করবে মানুষ, আমরা কেন? আমরা সর্বক্ষণ প্ররোচনা দিয়ে ওদের মাথা গরম করে রাখব, যাতে ওরা অন্যায় করে। মনে রাখবি, মাথা গরম করা শয়তানের ধর্ম না।
- কিন্তু আমার প্রতি যদি বারবার অন্যায় করা হয়? এতদিন মাথা ঠা-া রেখে আসছিলাম। কিন্তু আর না।
- কে অন্যায় করেছে তা তো বলবি?
- এ্যাঁ, এখন একেবারে ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানো না। অন্যায় করে এখন নিজে স্বীকার করছ না?
- এ তুই কী বলছিস ছোটো?
- কেন তুমি আমার এলাকায় প্রবেশ করে মানুষকে অপরাধ করতে উসকে দাওনি? আমি আর ওদের প্ররোচনা দিতে পারিনি! আমার পেটে এখনও ক্ষুধা।
- না না, মিথ্যা কথা, আমি তোর এলাকায় একদম যাইনি।
- ওরা তো রিমান্ডে ডা-া খেয়ে বলছে, ‘আমার কোনো দোষ নেই, ঘুষ খেয়েছি, যত দুর্নীতি করেছি সব শয়তানের প্ররোচনায়।’ সে প্ররোচনা তুমি ছাড়া আর কে দিয়েছে?
- প্রবীণ শয়তান এবার দারুণ ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার করছে, ‘কী মিথ্যা কথা, মানুষগুলো তো আমাদের চেয়েও শয়তান, দিনদিন ওদের সঙ্গে আর পারা যাচ্ছে না। যতসব বজ্জাতের দল!’
- তুমিও কিন্তু মানুষের মতো রেগে যাচ্ছ, বড় ভাই।
- আমরা মনেহয় মানুষ হয়ে যাচ্ছি রে!
পরিচয়
টমি বলে মনিব ডাকতেই কুকুরটি দৌড়ে এল। মনিবের চারপাশঘুরে পা চেটে বশ্যতা দেখাল।
মনিব বলল, হয়েছে হয়েছে, এবার বিস্কুটগুলো খেয়ে নে। অনেক দামী বিস্কুট- কখনও খাসনি। আজ বড্ড আনন্দের দিন, তাই তোর জন্য নিয়ে এসেছি।
তবু টমি বারবার মনিবের চারপাশে ঘুরছে। আর গন্ধ শুঁকছে।
মনিব বলল, আজ কী হলো তোর? খাচ্ছিস না কেন? বাসার সবার জন্য মিষ্টি এনেছি, কিন্তু তোর জন্য আনিনি তুই মিষ্টি পছন্দ করিস না বলে।
তবু টমি খাচ্ছে না।
মনিব বলল, দামী বিস্কুটও তুই পছন্দ করিস না?
এবার টমি মনিবের শরীর অনবরত শুঁকতে লাগল।
মনিব দারুণ বিস্মিত! বুঝতে পেরেছি, আমার মতো তুইও প্রফুল্ল, এই না হলে আমার কুকুর!
টমি এবার কথা বলে উঠল, প্র্রভু, আপনার কণ্ঠস্বর ঠিক আছে, কিন্তু আপনাকে তো আমি চিনতে পারছি না।
মনিব বলল, একসঙ্গে থেকেও রক্তের সম্পর্ক চিনতে পারছিস না? আরে, আমি তো এতদিন মানুষের মুখোশ পরে ছিলাম।
অভিভাবক
নেতার পাশে দাঁড়িয়ে তরুণটি মোবাইলে সেলফি তুলে সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট করল। ক্যাপশনে লিখে দিলো- ‘আমার অভিভাবক’।
মোবাইলটির চোখে বিরক্তি ফুটে উঠল।
তরুণ জিজ্ঞেস করল, কী হলো তোর আবার?
- ভাইজান, চাচাজানের ছবি কি আপনি কোনোদিন তুলছেন? তারে লইয়া ফেসবুকে পোস্ট দিছেন?
- আরে বোকা, আব্বায় হইছে ব্যাকডেটেড, এইসব বোঝে নাকি? তুই যে কী সব কথা কস?
- চাচাজান অনেক কষ্ট কইর্যা আপনারে খাওয়ায়, লেখা-পড়ার অর্থ যোগায়, নিজে শান্তি না কইর্যা আপনাগো সব দাবি পূরণ করে, আর এই নেতা হইছে আপনার অভিভাবক?
- তুই লেখা-পড়া করস নাই, তুই এইসব বুঝবি না।
- কেন আপনার লগেই তো আমি ছিলাম। আপনে যে কয়টা ক্লাস করছেন, আমিও সেই কয়টা ক্লাস করছি।
- আরে তুই তো পরীক্ষা দিস নাই। বহিষ্কার হওয়ার ভয়ে পরীক্ষার দিন তোরে না বাড়ি রাইখ্যা গেছি? পরীক্ষা না দিলে পাস হয় না। পাস না করলে ক্লাস করার কোনো দাম নাই। তুই আর আব্বায় এখন সমান- ব্যাকডেটেড, য্যামনে চালাই তেমনে চলস। কিচ্ছু বোঝস না।
কিছুদিন পর রাজনৈতিক মারামারির কারণে তরুণকে পুলিশ ধরল, তারপর পিতা অনেক অর্থ খরচ করে ছাড়িয়ে আনল। ছাড়া পেয়ে তরুণ বাসায় এসে নিজ মোবাইলে হাত দিতেই মোবাইলটি গর্জন করে উঠল- এবার আপনারে ছাড়িয়ে আনছে কোন অভিভাবক?
পথ
অনেকদিন পর ভিত্তিপ্রস্তরকে পথ জিজ্ঞেস করল- কিরে ভাই, কেমন আছ?
- আরে তুমি এখনও বেঁচে আছ?
- বেঁচে না থাকলে এত মানুষ, গাড়ি-ঘোড়া যায় কীভাবে? তা তোমার খবর বলো।
- এতদিন ছিলাম তো ভালো, কিন্তু...
- কিন্তু কী আবার?
- শুনছি তোমার নামে নতুন করে টেন্ডার হয়েছে, নতুন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নাকি ভিত্তিপ্রস্তর করবেন?
- ঠিকই শুনেছ।
- তবে তো সাবেক মন্ত্রীর নামফলকসহ আমাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে। আমার এবার কী হবে গো!
- মনখারাপ কোরো না, আমি তো আছি।
- আমাকে তবে তোমার সঙ্গে নিয়ে নাও বন্ধু।
- নিজের দুঃসময়ে আজ বন্ধু বলছ! অথচ একদিন কত দম্ভ ছিল তোমার।
- ক্ষমা চাই, আমাকে আর লজ্জা দিও না ভাই। দয়াকরে একটু আশ্রয় দাও।
-আমাকে নিতে হবে না, ওরাই তোমাকে ভেঙে আমার সঙ্গে মিলিয়ে দেবে। সবাইকেই পথে আসতে হয় একদিন- কী মন্ত্রী, কী ভিত্তিপ্রস্তর।
ণত্বষত্বজ্ঞান
একদিন নদীর পাড় পর্যবেক্ষণ করতে এল শেয়াল, মনে ছিল দু-একটা মাছ পাওয়া যায় কি-না কিংবা কাছিম বা কুমিরের ডিম।
জলে লুকিয়ে থাকা কুমির হঠাৎ শেয়ালের পা কামড়ে ধরল।
শেয়াল ব্যথায় কঁকিয়ে উঠতে গিয়েও মাথা ঠা-া রেখে বলল, আমার লাঠিটা কামড়ে ধরল কে?
কুমির বুঝতে পারল এটা শেয়ালের চালাকি। শেয়ালের দাদার বাবাও এমন চালাকি করেছিল কুমিরের দাদার বাবার সঙ্গে। সে কাহিনি কুমির অনেকবার শুনেছে দাদির কাছে। তাই আজ আর শেয়ালকে বিন্দুমাত্র ছাড় নয়।
শেয়েল বুঝতে পারল, অবস্থা মোটেই সুবিধার নয়। নতুন বুদ্ধি খাটিয়ে বলল, আমি তোমার জন্য নিমন্ত্রণ নিয়ে এসেছি গো, আর তুমি এভাবে কামড়ে ধরলে?
কুমির পণ করেছে কিছুতেই কথা বলবে না। বললেই শত্রু হাতছাড়া হয়ে যাবে। মহারাজ বাঘ ডাঙায় কুমির নিষিদ্ধ করেছে। আর তাকে সহযোগিতা করেছে শেয়াল। আজ যখন দাঁতের নাগালে পাওয়া গেছে শেয়ালকে একটা উচিত শিক্ষা দেবে।
শেয়াল বলল, কার পক্ষ থেকে নিমন্ত্রণ নিয়ে এসেছি শুনবে না? মহারাজের পক্ষ থেকে! তোমার শত্রু বাঘকে তাড়িয়ে হাতি এখন মহারাজ, জানো তো? জঙ্গল পরিচালনার জন্য মহারাজ তোমার পরামর্শ চান। তোমাকেও মন্ত্রী করা হবে।
প্রধান শত্রু বধ আর মহারাজের পক্ষ থেকে এমন সম্মানের কথা শুনে কুমির খুশিতে লাফিয়ে উঠল- তাই নাকি!
পা ছাড়া পেয়ে শেয়াল এক দৌড়ে কিনারায় উঠে গেল।
তখনও কুমির চিৎকার করে জিজ্ঞেস করছে, নিমন্ত্রণ কখন তা তো বললে না?
হাবিবুল্লাহ রাসেল
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
অন্তর
শিশু কাক উঁচু গাছের এক ডালে উড়ে এসে মা কাককে বলল, দেখো মা, মানুষের বাড়ি থেকে ঠোঁটে করে কী নিয়ে এসেছি?
- কী এনেছিস বাছা।
- সাবান এনেছি! দেখো, কী সুন্দর ঘ্রাণ!
- উড়তে শেখাতে না শেখাতে তুই চুরি করতে শিখে গেলি বাছা?
- বেশ করেছি মা। মানুষ যে গাছ কেটে আমাদের বাসা ভেঙে দেয়! সে কিছু না?
- হয়েছে হয়েছে, এ যুগের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে আর কথায় পারা যাবে না। আয়, লক্ষ্মীটি হয়ে বস, এবার তোকে সাবান খাইয়ে দিই।
- না মা, আমি সাবান খাব না।
- খাবি না তো এনেছিস কেন?
- সাবান দিয়ে গোসল করব।
- আমরা কি মানুষ যে সাবান দিয়ে গোসল করব?
- দেখনি, মানুষেরা সাবান দিয়ে গোসল করে গায়ের ময়লা দূর করে কত ফর্সা হয়ে যায়? আমিও সাবান দিয়ে গোসল করে গায়ের কালো দূর করে ফর্সা হয়ে যাব এবার।
- দূর বোকা, কালোই তো সুন্দর।
- তাহলে মানুষ সাবান মাখে কেন?
- শরীরে সাবান মাখলেও মানুষের অন্তরের কালো যদি তুই দেখতি তবে আর সাবান মেখে ফর্সা হতে চাইতি না।
- তাই মা? চলো, তবে সাবান খাই।
নবীন ও প্রবীণ শয়তান
তরুণ শয়তান এসে প্রবীণ শয়তানকে বলল, এটা কী হচ্ছে বড় ভাই?
প্রবীণ শয়তান বলল, কী হয়েছে? এত ক্ষেপলি কেন? শয়তানের মাথা সব সময় ঠা-া রাখতে হয়।
- আমার প্রতি অন্যায় হবে আর আমি মাথা ঠা-া রাখব?
- মাথা গরম করবে মানুষ, আমরা কেন? আমরা সর্বক্ষণ প্ররোচনা দিয়ে ওদের মাথা গরম করে রাখব, যাতে ওরা অন্যায় করে। মনে রাখবি, মাথা গরম করা শয়তানের ধর্ম না।
- কিন্তু আমার প্রতি যদি বারবার অন্যায় করা হয়? এতদিন মাথা ঠা-া রেখে আসছিলাম। কিন্তু আর না।
- কে অন্যায় করেছে তা তো বলবি?
- এ্যাঁ, এখন একেবারে ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানো না। অন্যায় করে এখন নিজে স্বীকার করছ না?
- এ তুই কী বলছিস ছোটো?
- কেন তুমি আমার এলাকায় প্রবেশ করে মানুষকে অপরাধ করতে উসকে দাওনি? আমি আর ওদের প্ররোচনা দিতে পারিনি! আমার পেটে এখনও ক্ষুধা।
- না না, মিথ্যা কথা, আমি তোর এলাকায় একদম যাইনি।
- ওরা তো রিমান্ডে ডা-া খেয়ে বলছে, ‘আমার কোনো দোষ নেই, ঘুষ খেয়েছি, যত দুর্নীতি করেছি সব শয়তানের প্ররোচনায়।’ সে প্ররোচনা তুমি ছাড়া আর কে দিয়েছে?
- প্রবীণ শয়তান এবার দারুণ ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার করছে, ‘কী মিথ্যা কথা, মানুষগুলো তো আমাদের চেয়েও শয়তান, দিনদিন ওদের সঙ্গে আর পারা যাচ্ছে না। যতসব বজ্জাতের দল!’
- তুমিও কিন্তু মানুষের মতো রেগে যাচ্ছ, বড় ভাই।
- আমরা মনেহয় মানুষ হয়ে যাচ্ছি রে!
পরিচয়
টমি বলে মনিব ডাকতেই কুকুরটি দৌড়ে এল। মনিবের চারপাশঘুরে পা চেটে বশ্যতা দেখাল।
মনিব বলল, হয়েছে হয়েছে, এবার বিস্কুটগুলো খেয়ে নে। অনেক দামী বিস্কুট- কখনও খাসনি। আজ বড্ড আনন্দের দিন, তাই তোর জন্য নিয়ে এসেছি।
তবু টমি বারবার মনিবের চারপাশে ঘুরছে। আর গন্ধ শুঁকছে।
মনিব বলল, আজ কী হলো তোর? খাচ্ছিস না কেন? বাসার সবার জন্য মিষ্টি এনেছি, কিন্তু তোর জন্য আনিনি তুই মিষ্টি পছন্দ করিস না বলে।
তবু টমি খাচ্ছে না।
মনিব বলল, দামী বিস্কুটও তুই পছন্দ করিস না?
এবার টমি মনিবের শরীর অনবরত শুঁকতে লাগল।
মনিব দারুণ বিস্মিত! বুঝতে পেরেছি, আমার মতো তুইও প্রফুল্ল, এই না হলে আমার কুকুর!
টমি এবার কথা বলে উঠল, প্র্রভু, আপনার কণ্ঠস্বর ঠিক আছে, কিন্তু আপনাকে তো আমি চিনতে পারছি না।
মনিব বলল, একসঙ্গে থেকেও রক্তের সম্পর্ক চিনতে পারছিস না? আরে, আমি তো এতদিন মানুষের মুখোশ পরে ছিলাম।
অভিভাবক
নেতার পাশে দাঁড়িয়ে তরুণটি মোবাইলে সেলফি তুলে সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট করল। ক্যাপশনে লিখে দিলো- ‘আমার অভিভাবক’।
মোবাইলটির চোখে বিরক্তি ফুটে উঠল।
তরুণ জিজ্ঞেস করল, কী হলো তোর আবার?
- ভাইজান, চাচাজানের ছবি কি আপনি কোনোদিন তুলছেন? তারে লইয়া ফেসবুকে পোস্ট দিছেন?
- আরে বোকা, আব্বায় হইছে ব্যাকডেটেড, এইসব বোঝে নাকি? তুই যে কী সব কথা কস?
- চাচাজান অনেক কষ্ট কইর্যা আপনারে খাওয়ায়, লেখা-পড়ার অর্থ যোগায়, নিজে শান্তি না কইর্যা আপনাগো সব দাবি পূরণ করে, আর এই নেতা হইছে আপনার অভিভাবক?
- তুই লেখা-পড়া করস নাই, তুই এইসব বুঝবি না।
- কেন আপনার লগেই তো আমি ছিলাম। আপনে যে কয়টা ক্লাস করছেন, আমিও সেই কয়টা ক্লাস করছি।
- আরে তুই তো পরীক্ষা দিস নাই। বহিষ্কার হওয়ার ভয়ে পরীক্ষার দিন তোরে না বাড়ি রাইখ্যা গেছি? পরীক্ষা না দিলে পাস হয় না। পাস না করলে ক্লাস করার কোনো দাম নাই। তুই আর আব্বায় এখন সমান- ব্যাকডেটেড, য্যামনে চালাই তেমনে চলস। কিচ্ছু বোঝস না।
কিছুদিন পর রাজনৈতিক মারামারির কারণে তরুণকে পুলিশ ধরল, তারপর পিতা অনেক অর্থ খরচ করে ছাড়িয়ে আনল। ছাড়া পেয়ে তরুণ বাসায় এসে নিজ মোবাইলে হাত দিতেই মোবাইলটি গর্জন করে উঠল- এবার আপনারে ছাড়িয়ে আনছে কোন অভিভাবক?
পথ
অনেকদিন পর ভিত্তিপ্রস্তরকে পথ জিজ্ঞেস করল- কিরে ভাই, কেমন আছ?
- আরে তুমি এখনও বেঁচে আছ?
- বেঁচে না থাকলে এত মানুষ, গাড়ি-ঘোড়া যায় কীভাবে? তা তোমার খবর বলো।
- এতদিন ছিলাম তো ভালো, কিন্তু...
- কিন্তু কী আবার?
- শুনছি তোমার নামে নতুন করে টেন্ডার হয়েছে, নতুন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নাকি ভিত্তিপ্রস্তর করবেন?
- ঠিকই শুনেছ।
- তবে তো সাবেক মন্ত্রীর নামফলকসহ আমাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে। আমার এবার কী হবে গো!
- মনখারাপ কোরো না, আমি তো আছি।
- আমাকে তবে তোমার সঙ্গে নিয়ে নাও বন্ধু।
- নিজের দুঃসময়ে আজ বন্ধু বলছ! অথচ একদিন কত দম্ভ ছিল তোমার।
- ক্ষমা চাই, আমাকে আর লজ্জা দিও না ভাই। দয়াকরে একটু আশ্রয় দাও।
-আমাকে নিতে হবে না, ওরাই তোমাকে ভেঙে আমার সঙ্গে মিলিয়ে দেবে। সবাইকেই পথে আসতে হয় একদিন- কী মন্ত্রী, কী ভিত্তিপ্রস্তর।
ণত্বষত্বজ্ঞান
একদিন নদীর পাড় পর্যবেক্ষণ করতে এল শেয়াল, মনে ছিল দু-একটা মাছ পাওয়া যায় কি-না কিংবা কাছিম বা কুমিরের ডিম।
জলে লুকিয়ে থাকা কুমির হঠাৎ শেয়ালের পা কামড়ে ধরল।
শেয়াল ব্যথায় কঁকিয়ে উঠতে গিয়েও মাথা ঠা-া রেখে বলল, আমার লাঠিটা কামড়ে ধরল কে?
কুমির বুঝতে পারল এটা শেয়ালের চালাকি। শেয়ালের দাদার বাবাও এমন চালাকি করেছিল কুমিরের দাদার বাবার সঙ্গে। সে কাহিনি কুমির অনেকবার শুনেছে দাদির কাছে। তাই আজ আর শেয়ালকে বিন্দুমাত্র ছাড় নয়।
শেয়েল বুঝতে পারল, অবস্থা মোটেই সুবিধার নয়। নতুন বুদ্ধি খাটিয়ে বলল, আমি তোমার জন্য নিমন্ত্রণ নিয়ে এসেছি গো, আর তুমি এভাবে কামড়ে ধরলে?
কুমির পণ করেছে কিছুতেই কথা বলবে না। বললেই শত্রু হাতছাড়া হয়ে যাবে। মহারাজ বাঘ ডাঙায় কুমির নিষিদ্ধ করেছে। আর তাকে সহযোগিতা করেছে শেয়াল। আজ যখন দাঁতের নাগালে পাওয়া গেছে শেয়ালকে একটা উচিত শিক্ষা দেবে।
শেয়াল বলল, কার পক্ষ থেকে নিমন্ত্রণ নিয়ে এসেছি শুনবে না? মহারাজের পক্ষ থেকে! তোমার শত্রু বাঘকে তাড়িয়ে হাতি এখন মহারাজ, জানো তো? জঙ্গল পরিচালনার জন্য মহারাজ তোমার পরামর্শ চান। তোমাকেও মন্ত্রী করা হবে।
প্রধান শত্রু বধ আর মহারাজের পক্ষ থেকে এমন সম্মানের কথা শুনে কুমির খুশিতে লাফিয়ে উঠল- তাই নাকি!
পা ছাড়া পেয়ে শেয়াল এক দৌড়ে কিনারায় উঠে গেল।
তখনও কুমির চিৎকার করে জিজ্ঞেস করছে, নিমন্ত্রণ কখন তা তো বললে না?