alt

সাময়িকী

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫

যদিও চারপাশে
গ্রামগুলি যদি পাখি হতো

এসব কথা ভাবতে ভাবতে হতচ্ছাড়া রাস্তা দিয়ে হাঁটি,

গতকালের ভায়োলেন্সের টুকরো টুকরো ছড়ানো

একটা গাড়ি পোড়া, একটা দোকান ছিনতাই, ফুটপাথে চাপ চাপ রক্ত।

গ্রামগুলি যদি পাখি হতো

গ্রামগুলি আর শহরগুলি উড়ত আকাশে হাত ধরাধরি করে।

রাজনীতির মধ্যে এসব নেই

শুধু ভায়োলেন্স, শুধু রক্তপাত, শুধু বোমাবাজি;

কেউ মারা গেল ঘটা করে সান্ত¡না দেয়া

যিনি সান্ত¡না দেন তারই লোকজনের গুলিতে খুব সম্ভব

মারা গেছে বউটি কিংবা স্বামীটি কিংবা বাড়ির বড়ো ছেলে,

এরই নাম নেতৃত্ব।

এই যদি নেতৃত্ব হয় তাহলে নরক কাকে বলে

এসব ভাবতে ভাবতে হতচ্ছাড়া রাস্তা দিয়ে হাঁটি।

পোড়াগাড়ির পাশে একজন টোকাই বসে আছে

ছিনতাই দোকানের সামনে একটি কুকুর বসে আছে

চাপ চাপ রক্ত এড়িয়ে একজন মহিলা সওদা নিয়ে বাসায় ফিরছে,

নরক ছড়ানো রাজনীতি হায়রে নরক ছড়ানো রাজনীতি।

এই রাজনীতির হাত থেকে পাখিগুলি বেঁচে গেছে

আমরা মানুষ আমাদের নিস্তার নেই।

তবু বলি গ্রামগুলি যদি পাখি হতো

শহরগুলি যদি পাখি হতো

গ্রামগুলি আর শহরগুলি উড়ত আকাশে হাত ধরাধরি করে

আমরা হাততালি দিতে দিতে এগোতাম

বিজয়ের দিকে।

একজন যোদ্ধার একটা পা নেই, দেখা হয় হতচ্ছাড়া রাস্তায়

সে হাত বাড়ায় আমার দিকে

আমার বুকের মধ্যে ভালবাসা হাততালি দিতে থাকে।

যদিও চাপারশে হতচ্ছাড়া রাস্তা, ছিনতাই দোকান

আর চাপ চাপ রক্ত।

আমার রক্তে তুমি
আমার রক্তে তুমি।

বাইরে রাস্তায় রাজনীতির রক্তপাত

মানুষ হত্যা করে গণতন্ত্র দখলের প্রতিযোগিতা।

আমি শুধু তোমার কথা ভাবি,

চিলের আকাশ দেখি

নদীর নিরবধি ঢেউ দেখি

আর রক্তে শুনি তোমার নাম।

বাইরে রাস্তায় রাজনীতির রক্তপাত,

যারা মানুষ হত্যা করে তারা সদুপদেশ দেয়

গণতন্ত্র কেন দখল করা দরকার।

আমার রক্তে তুমি

তুমি তো কখনো সদুপদেশ দাও না

কখনো বলো না আমাকে দখল করো তুমি।

মানুষ তো মানুষকে দখল করে না

মানুষ তো মানুষকে স্বাধীন করে।

রাজনীতির রক্ত বহিষ্কার করে,

আমার রক্তে তুমি অপেক্ষমাণ।

এই উৎসব, বৃক্ষের উৎসব, বাঁশির উৎসব

তোমার নাম,

নেতা বা নেত্রীর নাম আমার মনে পড়ে না

তারা রাস্তায় রাজনীতির রক্তপাতে ব্যস্ত।

আমি শস্যের ভেতর হেঁটে যেতে যেতে

তোমার শস্যের কাছে ফিরে আসি,

ফিরে আসা ফিরে ফিরে সেই দিনগুলোর কাছে

সেসব দিন আর রাত

স্তূপাকার শস্যের মতো তোমার শরীরে বাসা বাঁধে।

রাজনীতির লোভ আমার নেই

যেখানে হত্যা,

গণতন্ত্রের লোভ আমার নেই

যেখানে রক্তপাত।

লাস্ট ট্রেন চলে গেলে
লাস্ট ট্রেন চলে গেলে রেলওয়ে লাইন যেমন পড়ে থাকে

আমি তেমনি টেনস,

আমাদের শরীর নাকি মিনার

মনে পড়ে?

চাঁদের আলোয় শরীরটা টেনস

আর লাস্ট ট্রেনে তুমি দূরে,

আমাকে ঘিরে পাতা আর চাঁদের জটলা

আমাকে ঘিরে ভুতুড়ে রেললাইন,

তোমার শরীরের সিলক

আমার শরীরে এখনো শিউরে ওঠে,

তুমি একটা নিরিবিলি প্রজাপতি

প্রজাপতির দিকে হাত বাড়িয়ে

সেই ছেলেবেলার মতো তোমার দিকে যেতেই থাকি,

তুমি ক্যাথিড্রালের মতো দাঁড়িয়ে থাকো

শূন্যের ভেতর,

বাড়ি ফিরে নিজেকে নগ্ন করো

আমার দুচোখে,

আমার দু’চোখ থেকে ঝরতে থাকে

চেস্টনাট পাতা আর চাঁদের আলো,

আমি লাস্ট ট্রেনের মতো টেনস

তোমার দিকে যেতেই থাকি ভূতুড়ে আলোয়।

ক্যাথিড্রালের মতো দাঁড়িয়ে থাকে চাঁদ

আমার পায়ের শব্দ শূন্যের মধ্যে সঙ্গীত

তোমার শরীরে বাজতে থাকে প্রচ-।

আমি বৃষ্টির জন্য
আমি বৃষ্টির অপেক্ষা করি।

ডালিমের দানার মতো রোদ

গাছপালাগুলি চিরকাল

গাছপালাগুরি শান্তি।

পাউন্ড তাঁর খাঁচায় বসে ভাবতেন

অপেক্ষা করতেন বৃষ্টির,

এক একটা দিন তাঁর মনে হতো হাজার বছর

আর ভাবতেন পুদিনার গন্ধের।

আমি বৃষ্টির কথা ভাবতে ভাবতে ভাবি

আমার যখন দিন শেষ হবে

তখনও চাষাবাদ হবে জমিতে

জমি তৈরি করবে ফসল আর সুগন্ধ।

পাউন্ড বোধহয় হাত তুলে কোনো এক করুণার স্বর্গের কথা ভাবতেন

যুদ্ধ বিধ্বস্ত চতুর্দিকে।

আর আমি ভাবি আমার অহংকার

যে-অহংকারের কণামাত্র দাম নেই মৃত্যুর কাছে।

রাত্রে শীতের বরফ জমা অন্ধকারে

পাউন্ড কম্বল টেনে টুনে বসতেন,

আর হাত মেলে ধরতেন চাঁদের দিকে

শরীরে উত্তাপ সংগ্রহের জন্য।

আমি তাই ভাবি

যতদিন ধরে রাখা যায় উত্তাপ শরীরে

যতদিন চাষাবাদ করা যায় জমিতে

তৈরি করা যায ফসল আর সুগন্ধ,

ততদিন পর্যন্ত জীবনের মানে,

তারপর কিছুই থাকে না।

পাউন্ড খাঁচার মধ্যে বসে

এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

ছবি

রক্তে লেখা প্রেম: রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিপ্লব

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

শঙ্খজীবন: যাপিত জীবনের অন্তর্গূঢ় প্রতিকথা

ছবি

ওসামা অ্যালোমার এক ঝুড়ি খুদে গল্প

ছবি

প্রযুক্তির আলোয় বিশ্বব্যাপী বইবাণিজ্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

কাফকার কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

সূর্যের দেশ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

লড়াই

সাময়িকী কবিতা

ছবি

প্রচলিত সাহিত্যধারার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন মধুসূদন

ছবি

মেধাসম্পদের ছন্দে মাতুন

ছবি

উত্তর-মানবতাবাদ ও শিল্প-সাহিত্যে তার প্রভাব

ছবি

আমজাদ হোসেনের ‘ভিন্ন ভাষার কবিতা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

দুই ঋতপার কিসসা এবং এক ন্যাকা চৈতন্য

ছবি

অন্যজীবন অন্যআগুন ছোঁয়া

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কবিজীবন, দর্শন ও কাব্যসন্ধান

ছবি

অসামান্য গদ্যশৈলীর রূপকার

ছবি

পিয়াস মজিদের ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’

ছবি

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

ছবি

বাঘাডাঙা গাঁও

ছবি

বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ বিষয়ভাবনা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

পথকবিতা: লোকবাংলার সাধারণ কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

ক্ষমতার ভাষার বিপরীতে মাতৃভাষার সাধনা

ছবি

ফিলিস্তিনের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে অণুগল্প

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

tab

সাময়িকী

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কবিতা

বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫

যদিও চারপাশে
গ্রামগুলি যদি পাখি হতো

এসব কথা ভাবতে ভাবতে হতচ্ছাড়া রাস্তা দিয়ে হাঁটি,

গতকালের ভায়োলেন্সের টুকরো টুকরো ছড়ানো

একটা গাড়ি পোড়া, একটা দোকান ছিনতাই, ফুটপাথে চাপ চাপ রক্ত।

গ্রামগুলি যদি পাখি হতো

গ্রামগুলি আর শহরগুলি উড়ত আকাশে হাত ধরাধরি করে।

রাজনীতির মধ্যে এসব নেই

শুধু ভায়োলেন্স, শুধু রক্তপাত, শুধু বোমাবাজি;

কেউ মারা গেল ঘটা করে সান্ত¡না দেয়া

যিনি সান্ত¡না দেন তারই লোকজনের গুলিতে খুব সম্ভব

মারা গেছে বউটি কিংবা স্বামীটি কিংবা বাড়ির বড়ো ছেলে,

এরই নাম নেতৃত্ব।

এই যদি নেতৃত্ব হয় তাহলে নরক কাকে বলে

এসব ভাবতে ভাবতে হতচ্ছাড়া রাস্তা দিয়ে হাঁটি।

পোড়াগাড়ির পাশে একজন টোকাই বসে আছে

ছিনতাই দোকানের সামনে একটি কুকুর বসে আছে

চাপ চাপ রক্ত এড়িয়ে একজন মহিলা সওদা নিয়ে বাসায় ফিরছে,

নরক ছড়ানো রাজনীতি হায়রে নরক ছড়ানো রাজনীতি।

এই রাজনীতির হাত থেকে পাখিগুলি বেঁচে গেছে

আমরা মানুষ আমাদের নিস্তার নেই।

তবু বলি গ্রামগুলি যদি পাখি হতো

শহরগুলি যদি পাখি হতো

গ্রামগুলি আর শহরগুলি উড়ত আকাশে হাত ধরাধরি করে

আমরা হাততালি দিতে দিতে এগোতাম

বিজয়ের দিকে।

একজন যোদ্ধার একটা পা নেই, দেখা হয় হতচ্ছাড়া রাস্তায়

সে হাত বাড়ায় আমার দিকে

আমার বুকের মধ্যে ভালবাসা হাততালি দিতে থাকে।

যদিও চাপারশে হতচ্ছাড়া রাস্তা, ছিনতাই দোকান

আর চাপ চাপ রক্ত।

আমার রক্তে তুমি
আমার রক্তে তুমি।

বাইরে রাস্তায় রাজনীতির রক্তপাত

মানুষ হত্যা করে গণতন্ত্র দখলের প্রতিযোগিতা।

আমি শুধু তোমার কথা ভাবি,

চিলের আকাশ দেখি

নদীর নিরবধি ঢেউ দেখি

আর রক্তে শুনি তোমার নাম।

বাইরে রাস্তায় রাজনীতির রক্তপাত,

যারা মানুষ হত্যা করে তারা সদুপদেশ দেয়

গণতন্ত্র কেন দখল করা দরকার।

আমার রক্তে তুমি

তুমি তো কখনো সদুপদেশ দাও না

কখনো বলো না আমাকে দখল করো তুমি।

মানুষ তো মানুষকে দখল করে না

মানুষ তো মানুষকে স্বাধীন করে।

রাজনীতির রক্ত বহিষ্কার করে,

আমার রক্তে তুমি অপেক্ষমাণ।

এই উৎসব, বৃক্ষের উৎসব, বাঁশির উৎসব

তোমার নাম,

নেতা বা নেত্রীর নাম আমার মনে পড়ে না

তারা রাস্তায় রাজনীতির রক্তপাতে ব্যস্ত।

আমি শস্যের ভেতর হেঁটে যেতে যেতে

তোমার শস্যের কাছে ফিরে আসি,

ফিরে আসা ফিরে ফিরে সেই দিনগুলোর কাছে

সেসব দিন আর রাত

স্তূপাকার শস্যের মতো তোমার শরীরে বাসা বাঁধে।

রাজনীতির লোভ আমার নেই

যেখানে হত্যা,

গণতন্ত্রের লোভ আমার নেই

যেখানে রক্তপাত।

লাস্ট ট্রেন চলে গেলে
লাস্ট ট্রেন চলে গেলে রেলওয়ে লাইন যেমন পড়ে থাকে

আমি তেমনি টেনস,

আমাদের শরীর নাকি মিনার

মনে পড়ে?

চাঁদের আলোয় শরীরটা টেনস

আর লাস্ট ট্রেনে তুমি দূরে,

আমাকে ঘিরে পাতা আর চাঁদের জটলা

আমাকে ঘিরে ভুতুড়ে রেললাইন,

তোমার শরীরের সিলক

আমার শরীরে এখনো শিউরে ওঠে,

তুমি একটা নিরিবিলি প্রজাপতি

প্রজাপতির দিকে হাত বাড়িয়ে

সেই ছেলেবেলার মতো তোমার দিকে যেতেই থাকি,

তুমি ক্যাথিড্রালের মতো দাঁড়িয়ে থাকো

শূন্যের ভেতর,

বাড়ি ফিরে নিজেকে নগ্ন করো

আমার দুচোখে,

আমার দু’চোখ থেকে ঝরতে থাকে

চেস্টনাট পাতা আর চাঁদের আলো,

আমি লাস্ট ট্রেনের মতো টেনস

তোমার দিকে যেতেই থাকি ভূতুড়ে আলোয়।

ক্যাথিড্রালের মতো দাঁড়িয়ে থাকে চাঁদ

আমার পায়ের শব্দ শূন্যের মধ্যে সঙ্গীত

তোমার শরীরে বাজতে থাকে প্রচ-।

আমি বৃষ্টির জন্য
আমি বৃষ্টির অপেক্ষা করি।

ডালিমের দানার মতো রোদ

গাছপালাগুলি চিরকাল

গাছপালাগুরি শান্তি।

পাউন্ড তাঁর খাঁচায় বসে ভাবতেন

অপেক্ষা করতেন বৃষ্টির,

এক একটা দিন তাঁর মনে হতো হাজার বছর

আর ভাবতেন পুদিনার গন্ধের।

আমি বৃষ্টির কথা ভাবতে ভাবতে ভাবি

আমার যখন দিন শেষ হবে

তখনও চাষাবাদ হবে জমিতে

জমি তৈরি করবে ফসল আর সুগন্ধ।

পাউন্ড বোধহয় হাত তুলে কোনো এক করুণার স্বর্গের কথা ভাবতেন

যুদ্ধ বিধ্বস্ত চতুর্দিকে।

আর আমি ভাবি আমার অহংকার

যে-অহংকারের কণামাত্র দাম নেই মৃত্যুর কাছে।

রাত্রে শীতের বরফ জমা অন্ধকারে

পাউন্ড কম্বল টেনে টুনে বসতেন,

আর হাত মেলে ধরতেন চাঁদের দিকে

শরীরে উত্তাপ সংগ্রহের জন্য।

আমি তাই ভাবি

যতদিন ধরে রাখা যায় উত্তাপ শরীরে

যতদিন চাষাবাদ করা যায় জমিতে

তৈরি করা যায ফসল আর সুগন্ধ,

ততদিন পর্যন্ত জীবনের মানে,

তারপর কিছুই থাকে না।

পাউন্ড খাঁচার মধ্যে বসে

এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

back to top