মনিজা রহমান
ফার্স্ট টিউসডে’স-এর আসরে উপস্থিত কবি-লেখকবৃন্দ
বুঝতে পারিনি এক অনির্বচনীয় আনন্দ অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। দুহাজার তেইশ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। মাসের প্রথম মঙ্গলবার। জ্যাকসন হাইটসের এস্প্রেসো ৭৭ ক্যাফে। তখনো আউটডোর ডাইনিঙের শেড নামানো হয়নি। সাইডওয়াকে এবং স্ট্রিটের কারবে নিমগ্ন আলোতে বসে কেউ ডিনার খাচ্ছে, কেউ কফি, ক্যাপুচিনো বা এস্প্রেসো। ভেতরের পরিবেশ অন্যরকম। বলতে গেলে কোনো চেয়ার খালি নেই। কেউ চোখ রেখেছে ল্যাপটপে, কেউ ফোনে। কেউ কেবল কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। কেউ কেউ গলা নামিয়ে কথা বলছে। মেহগনি কাঠের টেবিলে পেন্সিলের মতো লেড বাতির রোমান্টিক আলো। পশ্চিম ও দক্ষিণের দেয়ালে বেশ কিছু বিমূর্ত শিল্পকর্ম ঝোলানো। আমার কাছে অচেনা পরিবেশ। অথচ মনে হচ্ছিল সবই যেন চেনা। আমার মতো ওরাও কবিতা লেখে। প্রতি মাসের প্রথম মঙ্গলবার এখানে বসে কবিতা পাঠের আসর। সে জন্য আসরের নাম ফার্স্ট টিউসডে’স। নিউ ইয়র্কের একটি বিখ্যাত ওপেন মাইক্রোফোনে এখানে নিজের লেখা কবিতা পড়েন আগ্রহী কবিরা।
২০১৪ সালে নিউ ইয়র্কে আসার পর থেকে বাঙালিদের কয়েকটি সাহিত্য আসরে গিয়েছি। তার মধ্যে একটি হলো কবি শহীদ কাদরীর ‘একটি কবিতা সন্ধ্যা’ অপরটি সাহিত্য একাডেমি। শহীদ কাদরীর প্রয়াণের পর একটি কবিতা সন্ধ্যা বন্ধ হয়ে যায়। কোভিডকালীন ঘরবন্দি জীবনে বই পড়া, সিনেমা দেখা এবং লেখালিখিই ছিল প্রধান অবলম্বন। করোনার প্রভাব কমতে থাকায় আবার জীবনানন্দে মুখর হয়ে ওঠে নিউ ইয়র্ক। ২০২৩ সালের শুরুতেই খবর পাই ফার্স্ট টিউসডে’স নামের আমেরিকার মূল্ধারার কবিতার অনুষ্ঠানের। অপ্রকাশিত কবিতার মধ্য থেকে বেছে নিয়ে অনুবাদ করে ফেলি। ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় উপস্থিত হই সেই কবিতা নিয়ে। খুঁজে বের করি রিচারড জেফরি নিউম্যানকে। ওঁর সাথে আমার কথা হয়েছিল ফোনে।
সন্ধ্যা সাতটায় দীর্ঘদেহী রিচারড মাইক্রোফোনে দাঁড়িয়ে সকলকে স্বাগত জানালেন। জানিয়ে দিলেন ফার্স্ট টিউসডে’স এর নিয়ম-কানুন। এরপর যে কিছু কথা বললেন তা শুনে আমি রীতিমত শিহরিত হয়ে উঠি। মনে হলো এমন একটি ফোরামই তো খুঁজছিলাম। রিচারড নিউম্যান এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এবং কিউরেটর। তিনি নিজেও প্রথিতযশা কবি। কবিতার বইও আছে। লং আইল্যান্ডে একটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্য পড়ান।
সূচনাতে রিচারড বললেন, এখানে যেসব লেখক আসেন তারা প্রতি মুহূর্তে বর্ণ বৈষম্য, যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক অসমতার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তারা এখানে নিশ্চয় সেইসব পাঠক খুঁজে পাবেন যাদের সাথে তাদের নিজস্ব মতামত শেয়ার করার জানালা খোলা থাকবে। এখানকার পরিবেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধার ও সৌহার্দের।
রিচারড ফার্স্ট টিউসডে’স-এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানান, এই আসর বিশ্বাস করে ডাইভারসিটি ও ইনক্লুসিভনেসে। যেসব বিষয় পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস ও বৈষম্যের সৃষ্টি করে যেমন রেসিজম, সেক্সিজম, এন্টাইসেমিটিজম, ইসলামোফোবিয়া, হোমোফোবিয়া, ট্রান্সফোবিয়া থেকে আমরা দূরত্বে থাকতে চাই। কারণ এই সব ফোবিয়া ও ইজম মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়। আমরা ওপেন মাইক্রোফোনে এই ধারণাগুলোকে আশ্রয় দেইনা। তবে বলে রাখি আমি অবশ্যই পারফেক্ট নই এবং আমি সব কিছুই দেখতে পাই এমন দাবিও করিনা।
রিচারড নিউম্যানের কথাগুলো আমার চিরদিনের লালিত আদর্শকেই যেন তুলে ধরল। আমি তো এমন একটি প্লাটফর্মই চাচ্ছিলাম। অতএব প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি এটাই হবে আমার প্রতি মাসে প্রথম মঙ্গলবার সন্ধ্যার গন্তব্য।
চমকের শেষ এখানেই নয়। ওপেন মাইক্রোফোন উন্মুক্ত করা হলো। তালিকা দেখে কবিদের ডাকেন রিচারড। কবিরা মাইকে গিয়ে নিজের লেখা কবিতা পড়েন। একজনের কবিতা পড়া শেষ হলে তিনি উপস্থিত কবি ও কবিতাপ্রেমিদের কাছে জানতে চান পঠিত কবিতার কোনো বা কোনো পংক্তি ভাল লেগেছে। এক বা একাধিক ¯্রােতা তাদের ভাললাগা পংক্তি উল্লেখ করলে অন্যদের মতামতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে তিনি তা গ্রহণ করেন। এরপর অন্য যারা কবিতা পড়েন তাঁদের কবিতা থেকেও একইভাবে পংক্তি নির্বাচন করা হয়। ফলে সেগুলো পংক্তি বা চরণ থাকেনা, হয়ে যায় সেন্টো। কারণ তখন প্রথম পংক্তির ভাবের সাথে মিল রেখে পরবর্তী পংক্তি নির্বাচন করা হয় যাতে শেষে একটি কবিতা হয়ে ওঠে। কাজটি সহজ নয়। সকলের মতামত নিয়ে এই সেন্টো নির্বাচন পদ্ধতি অনেকটা ওয়ার্কশপের মতো।
মজার ও আশ্চর্যের দিকটি হলো এ সবই হয় মুখে মুখে। নির্বাচিত হওয়ার পর রিচারড সব সেন্টো আবৃত্তি করেন স্মৃতি থেকে। ফলে এর ধারাবাহিকতায় কোনো ব্যত্যয় আছে কিনা তা বোঝা যায়। সেন্টো বেছে নেয়ার মধ্য দিয়ে কবিতা রচনার প্রক্রিয়া বেশ উপভোগ্য ও শিক্ষণীয়। সেন্টোর দিয়ে রচিত কোলাজ কবিতা সবসময় যে ভাল হয় তা নয়। এটা নির্ভর করে ওইদিনের পঠিত কবিতাগুলির মানের ওপর।
ফার্স্ট টিউসডে’স-এর প্রতিটি আসরে একজন বিশিষ্ট কবি ও লেখককে ফিচারড কবি বা লেখক হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওপেন মাইক্রোফোন শেষে ফিচারড পোয়েট একগুচ্ছ কবিতা পড়েন। ফিচারড পোয়েট হওয়ার জন্য ইংরেজিতে প্রকাশিত বই থাকতে হয়। খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, একসময় পিইএন এই আসরকে আর্থিক সহয়তা করলেও সম্প্রতি সাহিত্য পত্রিকা পোয়েটস এন্ড রাইটারস সহায়তা দেয়।
এই আসরে যারা নিয়মিত আসেন এবং ভাল কবিতা লেখেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- কুইন্স পোয়েট লরিয়েট মারিয়া লিসেলা, হেনরি সসম্যান, ডেভিড সিলার, ড্যান ফ্লেশার, এন্ড্রু ডিক, স্কট ব্যাঙ্কারট প্রমুখ। আর ফিচারড লেখক হিসাবে যারা আমন্ত্রিত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রেচেল জাকার, মারটাইন বেলেন, ব্যারি ওয়ালেনস্টাইন, আন্ড্রিয়া কার্টার ব্রাউন, সকুন্থানি সেভয়, এলেক্স সেগুরা, স্যারাহ গ্যাম্বিটো, নিকোল কুলি, নানা ইকুয়া ব্রু হ্যামন্ড, হ্যালা আইলান, নন্দনা দেবসেন, লিডিয়া করটেস, ভিশান ভার্বানি, কেভিন ক্যারি, স্যারা খলিলি, র?্যালফ নাযারেথ, শামস আল মমিন।
এখানে একটি আসরের সেন্টো দেয়া হলো যাতে পাঠকরা ধারণা করতে পারেন:
Like a blob of snot dangling from god’s left nostril,
Everything is becoming artificial quickly.
Give me a voice, give me a new face,
Jaws endless, stomach bottomless.
ii.
One hand on her hand, one hand on aluminum bars.
Her eyelids spread over the top of her eyeballs,
Pinwheeling like lovers over a precipice.
iii.
Step forward. We hear you are a good man.
Bury you with a good shovel in the good earth.
That was the year the rains came, all in a whisper.
iv.
The curse you gave me keeps me up at night.
In the spotlight of Death,
Life shines in its brightest colors.
In this life and the next, may the Muses take your hand.
v.
The best call: I wish it wasn’t.
Steel heated to the color of the moving sun.
You tack your promises to the wall with nails made of ice,
The thinnest ice anyone had ever seen.
vi.
My first real home, my first real love,
If one steps on it, they fall into another dimension.
এখানে সম্পূর্ণ সেন্টোকে ছয় পর্বে ভাগ করা হয়েছে। কারণ সব পংক্তিকে একই ভাবধারায় সাজানো সম্ভব হয়নি। এই সেন্টোর প্রথম Everything is becoming artificial quickly আমার পঠিত কবিতা থেকে নেয়া।
এই আসরে গিয়ে আমি আমাকে প্রতি মাসে মিলিয়ে নিই অন্য কবিদের সাথে। নিজের জায়গাটি বুঝতে চেষ্টা করি। আমার সাফল্য-ব্যর্থতাও পরখ করি।নিউইয়র্ক, ৬ এপ্রিল ২০২৫
মনিজা রহমান
ফার্স্ট টিউসডে’স-এর আসরে উপস্থিত কবি-লেখকবৃন্দ
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
বুঝতে পারিনি এক অনির্বচনীয় আনন্দ অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। দুহাজার তেইশ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। মাসের প্রথম মঙ্গলবার। জ্যাকসন হাইটসের এস্প্রেসো ৭৭ ক্যাফে। তখনো আউটডোর ডাইনিঙের শেড নামানো হয়নি। সাইডওয়াকে এবং স্ট্রিটের কারবে নিমগ্ন আলোতে বসে কেউ ডিনার খাচ্ছে, কেউ কফি, ক্যাপুচিনো বা এস্প্রেসো। ভেতরের পরিবেশ অন্যরকম। বলতে গেলে কোনো চেয়ার খালি নেই। কেউ চোখ রেখেছে ল্যাপটপে, কেউ ফোনে। কেউ কেবল কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। কেউ কেউ গলা নামিয়ে কথা বলছে। মেহগনি কাঠের টেবিলে পেন্সিলের মতো লেড বাতির রোমান্টিক আলো। পশ্চিম ও দক্ষিণের দেয়ালে বেশ কিছু বিমূর্ত শিল্পকর্ম ঝোলানো। আমার কাছে অচেনা পরিবেশ। অথচ মনে হচ্ছিল সবই যেন চেনা। আমার মতো ওরাও কবিতা লেখে। প্রতি মাসের প্রথম মঙ্গলবার এখানে বসে কবিতা পাঠের আসর। সে জন্য আসরের নাম ফার্স্ট টিউসডে’স। নিউ ইয়র্কের একটি বিখ্যাত ওপেন মাইক্রোফোনে এখানে নিজের লেখা কবিতা পড়েন আগ্রহী কবিরা।
২০১৪ সালে নিউ ইয়র্কে আসার পর থেকে বাঙালিদের কয়েকটি সাহিত্য আসরে গিয়েছি। তার মধ্যে একটি হলো কবি শহীদ কাদরীর ‘একটি কবিতা সন্ধ্যা’ অপরটি সাহিত্য একাডেমি। শহীদ কাদরীর প্রয়াণের পর একটি কবিতা সন্ধ্যা বন্ধ হয়ে যায়। কোভিডকালীন ঘরবন্দি জীবনে বই পড়া, সিনেমা দেখা এবং লেখালিখিই ছিল প্রধান অবলম্বন। করোনার প্রভাব কমতে থাকায় আবার জীবনানন্দে মুখর হয়ে ওঠে নিউ ইয়র্ক। ২০২৩ সালের শুরুতেই খবর পাই ফার্স্ট টিউসডে’স নামের আমেরিকার মূল্ধারার কবিতার অনুষ্ঠানের। অপ্রকাশিত কবিতার মধ্য থেকে বেছে নিয়ে অনুবাদ করে ফেলি। ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় উপস্থিত হই সেই কবিতা নিয়ে। খুঁজে বের করি রিচারড জেফরি নিউম্যানকে। ওঁর সাথে আমার কথা হয়েছিল ফোনে।
সন্ধ্যা সাতটায় দীর্ঘদেহী রিচারড মাইক্রোফোনে দাঁড়িয়ে সকলকে স্বাগত জানালেন। জানিয়ে দিলেন ফার্স্ট টিউসডে’স এর নিয়ম-কানুন। এরপর যে কিছু কথা বললেন তা শুনে আমি রীতিমত শিহরিত হয়ে উঠি। মনে হলো এমন একটি ফোরামই তো খুঁজছিলাম। রিচারড নিউম্যান এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এবং কিউরেটর। তিনি নিজেও প্রথিতযশা কবি। কবিতার বইও আছে। লং আইল্যান্ডে একটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্য পড়ান।
সূচনাতে রিচারড বললেন, এখানে যেসব লেখক আসেন তারা প্রতি মুহূর্তে বর্ণ বৈষম্য, যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক অসমতার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তারা এখানে নিশ্চয় সেইসব পাঠক খুঁজে পাবেন যাদের সাথে তাদের নিজস্ব মতামত শেয়ার করার জানালা খোলা থাকবে। এখানকার পরিবেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধার ও সৌহার্দের।
রিচারড ফার্স্ট টিউসডে’স-এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানান, এই আসর বিশ্বাস করে ডাইভারসিটি ও ইনক্লুসিভনেসে। যেসব বিষয় পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস ও বৈষম্যের সৃষ্টি করে যেমন রেসিজম, সেক্সিজম, এন্টাইসেমিটিজম, ইসলামোফোবিয়া, হোমোফোবিয়া, ট্রান্সফোবিয়া থেকে আমরা দূরত্বে থাকতে চাই। কারণ এই সব ফোবিয়া ও ইজম মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়। আমরা ওপেন মাইক্রোফোনে এই ধারণাগুলোকে আশ্রয় দেইনা। তবে বলে রাখি আমি অবশ্যই পারফেক্ট নই এবং আমি সব কিছুই দেখতে পাই এমন দাবিও করিনা।
রিচারড নিউম্যানের কথাগুলো আমার চিরদিনের লালিত আদর্শকেই যেন তুলে ধরল। আমি তো এমন একটি প্লাটফর্মই চাচ্ছিলাম। অতএব প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি এটাই হবে আমার প্রতি মাসে প্রথম মঙ্গলবার সন্ধ্যার গন্তব্য।
চমকের শেষ এখানেই নয়। ওপেন মাইক্রোফোন উন্মুক্ত করা হলো। তালিকা দেখে কবিদের ডাকেন রিচারড। কবিরা মাইকে গিয়ে নিজের লেখা কবিতা পড়েন। একজনের কবিতা পড়া শেষ হলে তিনি উপস্থিত কবি ও কবিতাপ্রেমিদের কাছে জানতে চান পঠিত কবিতার কোনো বা কোনো পংক্তি ভাল লেগেছে। এক বা একাধিক ¯্রােতা তাদের ভাললাগা পংক্তি উল্লেখ করলে অন্যদের মতামতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে তিনি তা গ্রহণ করেন। এরপর অন্য যারা কবিতা পড়েন তাঁদের কবিতা থেকেও একইভাবে পংক্তি নির্বাচন করা হয়। ফলে সেগুলো পংক্তি বা চরণ থাকেনা, হয়ে যায় সেন্টো। কারণ তখন প্রথম পংক্তির ভাবের সাথে মিল রেখে পরবর্তী পংক্তি নির্বাচন করা হয় যাতে শেষে একটি কবিতা হয়ে ওঠে। কাজটি সহজ নয়। সকলের মতামত নিয়ে এই সেন্টো নির্বাচন পদ্ধতি অনেকটা ওয়ার্কশপের মতো।
মজার ও আশ্চর্যের দিকটি হলো এ সবই হয় মুখে মুখে। নির্বাচিত হওয়ার পর রিচারড সব সেন্টো আবৃত্তি করেন স্মৃতি থেকে। ফলে এর ধারাবাহিকতায় কোনো ব্যত্যয় আছে কিনা তা বোঝা যায়। সেন্টো বেছে নেয়ার মধ্য দিয়ে কবিতা রচনার প্রক্রিয়া বেশ উপভোগ্য ও শিক্ষণীয়। সেন্টোর দিয়ে রচিত কোলাজ কবিতা সবসময় যে ভাল হয় তা নয়। এটা নির্ভর করে ওইদিনের পঠিত কবিতাগুলির মানের ওপর।
ফার্স্ট টিউসডে’স-এর প্রতিটি আসরে একজন বিশিষ্ট কবি ও লেখককে ফিচারড কবি বা লেখক হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওপেন মাইক্রোফোন শেষে ফিচারড পোয়েট একগুচ্ছ কবিতা পড়েন। ফিচারড পোয়েট হওয়ার জন্য ইংরেজিতে প্রকাশিত বই থাকতে হয়। খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, একসময় পিইএন এই আসরকে আর্থিক সহয়তা করলেও সম্প্রতি সাহিত্য পত্রিকা পোয়েটস এন্ড রাইটারস সহায়তা দেয়।
এই আসরে যারা নিয়মিত আসেন এবং ভাল কবিতা লেখেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- কুইন্স পোয়েট লরিয়েট মারিয়া লিসেলা, হেনরি সসম্যান, ডেভিড সিলার, ড্যান ফ্লেশার, এন্ড্রু ডিক, স্কট ব্যাঙ্কারট প্রমুখ। আর ফিচারড লেখক হিসাবে যারা আমন্ত্রিত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রেচেল জাকার, মারটাইন বেলেন, ব্যারি ওয়ালেনস্টাইন, আন্ড্রিয়া কার্টার ব্রাউন, সকুন্থানি সেভয়, এলেক্স সেগুরা, স্যারাহ গ্যাম্বিটো, নিকোল কুলি, নানা ইকুয়া ব্রু হ্যামন্ড, হ্যালা আইলান, নন্দনা দেবসেন, লিডিয়া করটেস, ভিশান ভার্বানি, কেভিন ক্যারি, স্যারা খলিলি, র?্যালফ নাযারেথ, শামস আল মমিন।
এখানে একটি আসরের সেন্টো দেয়া হলো যাতে পাঠকরা ধারণা করতে পারেন:
Like a blob of snot dangling from god’s left nostril,
Everything is becoming artificial quickly.
Give me a voice, give me a new face,
Jaws endless, stomach bottomless.
ii.
One hand on her hand, one hand on aluminum bars.
Her eyelids spread over the top of her eyeballs,
Pinwheeling like lovers over a precipice.
iii.
Step forward. We hear you are a good man.
Bury you with a good shovel in the good earth.
That was the year the rains came, all in a whisper.
iv.
The curse you gave me keeps me up at night.
In the spotlight of Death,
Life shines in its brightest colors.
In this life and the next, may the Muses take your hand.
v.
The best call: I wish it wasn’t.
Steel heated to the color of the moving sun.
You tack your promises to the wall with nails made of ice,
The thinnest ice anyone had ever seen.
vi.
My first real home, my first real love,
If one steps on it, they fall into another dimension.
এখানে সম্পূর্ণ সেন্টোকে ছয় পর্বে ভাগ করা হয়েছে। কারণ সব পংক্তিকে একই ভাবধারায় সাজানো সম্ভব হয়নি। এই সেন্টোর প্রথম Everything is becoming artificial quickly আমার পঠিত কবিতা থেকে নেয়া।
এই আসরে গিয়ে আমি আমাকে প্রতি মাসে মিলিয়ে নিই অন্য কবিদের সাথে। নিজের জায়গাটি বুঝতে চেষ্টা করি। আমার সাফল্য-ব্যর্থতাও পরখ করি।নিউইয়র্ক, ৬ এপ্রিল ২০২৫