চরু হক
প্রতিদিনই ভোরবেলায় তার ঘুম ভাঙে। সূর্য তখনও উঁকি দেয়না ঢাকার আকাশে। শুধু পাখিদের কিচিরমিচিরের সুবাস জুড়ে থাকে বাড়ির চারপাশে।ব্যতিক্রম নয় আজও। তারপর শুরু হয়তার বাচ্চাকাচ্চাদের ঘুম থেকে তোলার কসরত। ‘মাহিন, এই মাহিন,ওঠো ওঠো তাড়াতাড়ি।জুঁই আম্মু, উঠে পড়ো গাড়ি চলে আসবে এক্ষুনি।’ বাচ্চাগুলো একেবারে কুম্ভকর্ণের বংশধর।নড়তে চড়তে চায় না কিছুতেই। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ চলে কিছুক্ষণ। ঠেলাঠেলি, গুঁতাগুঁতি। তারপর একসময় মেজাজ সপ্তমে। স্কুলের গাড়ি দাঁড়ানো গেটে। ওরা জামাকাপড় পড়ে কোনোদিন খেয়ে আবার কোনোদিন না খেয়েই মুখ না ধুয়েই ভোঁ দৌড়। এ হলো আদি পর্ব।
একই কাহিনী আজও। সকাল ছয়টা। কখনো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই শুনতে হয় কাকের একটানা কা কা ডাক।পাখির কিচিরমিচিরেরসাথে মিশে একটা মিশ্র রাগ তৈরি করে। সকালবেলা কাক ডাকলে অবশ্য মনটা কেমন যেনো করে ওঠে শুচির। মলিন হয়ে যায় কী এক কুসংস্কারে। হ্যাঁ,তখন সে খুব নিবিড়ভাবে কান পাতে। আবারো অন্য পাখিদের ডাক শোনার জন্য সূক্ষ্মভাবেফাঁদ পাতে মনের জানালায়। তারপর যখন দূর থেকে ভেসে আসে দু’একটা পাখির কলকলানি,তখন তার মনটা শান্ত হয় ধীরে ধীরে। আজকেও সেই ছ’টা কিংবা ছ’টা দশেই ঘুম ভাঙলো কিন্তু ঘুম ভাঙার সাথে সাথে এসে শুনতে পায় বৃষ্টির রিমঝিম। যেন জ্যোৎস্নার মতো শান্ত আর পবিত্র। চোখ মেলেই বৃষ্টি দেখে কেন যেনো নিজের অজান্তেই এক আনন্দের শিহরন খেলে গেল শুচির মধ্যে। যে শিহরনের কোনো মানে নেই, নেই কোন ব্যাখ্যা, কিংবা বাক্যগত বিশ্লেষণ।
কিছুক্ষণ ডাকাডাকি। যাক বাচ্চারা তাহলে ঘুম থেকে উঠলো। আলু ভাজি আর মাগুর মাছের ঝোল রাতেই করে রেখেছিল বুয়া। শুধু তাড়াতাড়ি ওদের ওই দিয়ে খাইয়ে দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দেয় শুচি। তারপর ব্রাশে পেস্ট লাগাতে লাগাতে আস্তে করে দরজাটা খুলে দিয়ে বারান্দায়।হলুদ আলো ঠিকরে পড়েছে।আহ কি অদ্ভুত বৃষ্টি, রিমঝিম রিমঝিম। যেন অনবদ্য এক গাথা,এক কবিতা রচিত হয়ে যাচ্ছে।শুচির প্রাণ এক পাখি হয়ে বেরিয়ে এলো দেহ ছেড়ে- উড়তে লাগলো বাইরে, ভিজতে লাগলো বৃষ্টিতে। জানালার পাশের গাছটায় একটু এসে বসলো, তারপর ফুড়–ৎ করে আরেক ডালে। তারপর আরেকটায়, তারপর আরো একটায়। গাছের পাতা থেকে পানি খেলো, লেজ দিয়ে বাড়ি মেরে ছড়িয়ে দিল দু’এক ফোঁটা জল।
আড়মোড়া ভাঙে তুহিন।‘ফ্যানটা একটু বন্ধ করে দাও না। খুব শীত লাগছে।’ ‘আসছি’ বলে চড়–ই পাখিটাকে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ঘরের ভেতর চলে এলো সে। তুহিনের ঘুম জড়ানো শরীর শীতে কুঁকড়ে আছে। শুচি তাড়াতাড়ি ফ্যানের সুইচ অফ করে দেয়।
‘একটু আসো নাএদিকে। এত সকালে উঠে কী কর?আমি যতক্ষণ বাসায় থাকি একটু গল্প করতে পারো না আমার সাথে?’ শুচি মশারির ভেতর ঢুকে গা এলিয়ে দেয়। জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে। তুহিন বউয়ের গায়ের গন্ধ পেয়ে বউয়ের দিকে মুখ ফিরিয়ে শোয়।মুখটা এগিয়ে দেয়া শুচির দিকে কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাত্র। এক ঝটকায় শুচি মুখ সরিয়ে নেয়। ‘সরো কাজ আছে আমার।’
বৃষ্টি কমলো।
তুহিন আহমেদ। লেকচারার।হ্যান্ডসাম স্মার্ট। প্রগ্রেসিভ মানসিকতার অধিকারী। অন্তত প্রথম দিকে ওর কাছে তাই মনে হয়েছিল। এখন অবশ্য আর ভালো করে বুঝতে পারে না। শুচি পড়তো ঢাকা ইউনিভার্সিটি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে, আর তুহিন আহমেদ ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগেরইফ্রেশ জয়েন করা লেকচারার। চোখে মুখে পা-িত্যের ছাপ ধারালো হীরার মতো চারদিকে কিরণ ছড়ায়। তুহিনের ছিপছিপে দীর্ঘ দেহ, মাথাভর্তি কোঁকড়া চুল, তীক্ষè চোখ, খাড়া নাক সবই ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের চমকে দেয়ার মতো। সে যখন কথা বলে, পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে সারা ক্লাসরুমে আর বজ্রের মতো প্রতিধ্বনিত হতে থাকে তার উদাত্ত কণ্ঠস্বর। প্রথম ক্লাসেই শুচি নজরে পড়েছিল সেই প্রাণ প্রাচুর্যপূর্ণ তুহিন আহমেদের। তারপর জানাজানি, একসময় তার পরিণতি হলো বিয়ে এবং দুই সন্তানের জননী আজকের শুচিতা আহমেদ।
এই যে ভাই যাবেন?
কই যাইবেন আপা?
মতিঝিল শাপলা চত্বর।
কত?
একশ বিশ টাকা।
অন্যদিন হলে দর কষাকষি করত সে, কিন্তু আজ অলরেডি নয়টা বেজে গেছে। এমনিতেই লেট। তাই কথা না বাড়িয়েরিক্সায় উঠে বসে। রিক্সাওয়ালা মতিঝিলের দিকে যাত্রা শুরু করে।
শুচি দীর্ঘাঙ্গী। দীর্ঘ কালো তার চুল। গায়ের রঙ স্বর্ণাভ।পাতলা ঠোঁট আর নিবিড় কালো চোখের অধিকারিণী শুচি এই সাঁইত্রিশেও অসামান্যা।রাস্তায় যেতে যেতে পথচারীদের নজর কাড়েতার ঢলোঢলো মুখ। শুধু চুলের জায়গায় জায়গায় পাক ধরেছে, মেহেদির গুণে যা রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে। তবু চোখে তার খুব গোপনে কি এক বিষণœতা,এক অতল হাহাকার রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলে। ফেইসপাউডার, কাজল আর লিপস্টিক ভেদ করে সে রৌদ্রছায়া ঢুকে যায় কোনো এক গভীর গোপন কুঠুরিতে। কেউ তারনাগাল পায় না কোনোদিন।
আপা ও আপা, অনেক ধরে আপনার ফোন বাজে।
রিক্সাওয়ালা ছেলেটার কথায় সম্বিত ফিরে পায় শুচি।
ও হ্যাঁ।
তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করল সে।
হ্যালো স্লামালাইকুম। কে বলছেন প্লিজ?
হ্যালো? হ্যালো?
লাইনটা কেটে গেল। ফোন ব্যাগে রেখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বেজে গেছে। আবার রিং হচ্ছে। শুচি ফোন রিসিভ করলে সেই একইকণ্ঠ,
হ্যালো? হ্যালো?
কে বলছেন আপনি?
হ্যালো, এটা কি ডাক্তার রায়হানের নাম্বার?
জ্বী না, এটা ডাক্তার রায়হানের নাম্বার না। রং নাম্বার।
ফোন রেখে দেয় শুচি। আবার ফোন।
হ্যালো? সেই একইকণ্ঠ,
এটা কি ডাক্তার রায়হানের নাম্বার না?
জ্বী না।
কিন্তু আমি তো কালকে ওই নাম্বারে ফোন করেছি।
কী আশ্চর্য! বলছি তো ওনার নাম্বার না এটা। আপনি রং নাম্বারে ফোন করেছেন।
মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে উঠতে থাকে তার। এই সময় আবার- হ্যালো?
দাঁতে দাঁত চেপে এবার জবাব দেয় সে,
কী, কী পেয়েছেন আপনি? আরেকবার ডিস্টার্ব করলে আমি কিন্তু,
কথা শেষ করার আগেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো ভারি অথচ মোলায়েম এক কণ্ঠ-
হ্যালো? শুচিতা আহমেদ বলছেন? আমি অগ্রণী ব্যাংকের হেড অফিসের ডেপুটি ম্যানেজার বলছি। আপনার শাখার ম্যানেজার আশরাফ ফারুক-এর বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে যে দুর্নীতির মামলাটা উত্থাপন করা হয়েছে সেটার উপর একটা তদন্ত করতে হবে।এ্যান্ড নাও উই নিড ইওর হেল্প ম্যাম।আপনি কি আগামীকাল আমাদের টিমকে একটু সময় দিতে পারবেন?
এক্সট্রিমলি সরি স্যার। একটা রং নাম্বার এতক্ষণ খুব বিরক্ত করছিল আমাকে। তাই-
অপ্রস্তুত কণ্ঠ খাদে নামে।
ইটস ওকে, থ্যাঙ্ক ইউ। আমরা এ ব্যাপারে আপনার একটা ইন্টারভিউ নিতে চাই।
অফকোর্স স্যার।
কাইন্ডলি কখন সেটা সম্ভব হবে বলবেন?
শুচি এ ব্যাপারে ডিটেলস কথা বলে।
ঠিক হলো আগামীকাল দুইটায় অফিসে ইন্টারভিউ।কপালে তার দেখা দেয় বিন্দু বিন্দু ঘাম। রিক্সা ততক্ষণে গুলিস্তানের মোড়ে আবার জ্যামে। চিরাচরিত গল্প নামে রাস্তার ফুটপাতে।
‘হয়তো তুমি আজকের সন্ধ্যায়
দেখছো এক স্বপ্ন অদ্ভুত
যখন তুমি নিজেকে আয়নায়
দেখলে তাকে ভাবলে দেবদূত।’
কামাল মাক্স জাকবের লাইন আওড়াতে আওড়াতে ঢুকে যায় চুলের গহীন অরণ্যে। ফুরফুরে মাদকতময় গন্ধে আমোদিত ওর ঝর্নাধারার মতো চুলে হাত বোলাতে বোলাতেসে আওরাতে থাকে-
পালাতে গিয়ে ‘এলিওনোর’ তার
দীর্ঘ কেশরাশিকে দিল মেলে
যা কিছু ধন আমার কামনার
ঊষার চোখ যাতে না দেখে ফেলে।
শুচি যখন মোচড়াচ্ছে কামালের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য, তখন তাকে আরো শক্তভাবে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করার খেলায় মাতেসেই যুবক। বেলা সাড়ে তিনটা। সূর্য তখন মধ্যগগন থেকে সামান্য হেলে পড়ছে। তা সত্ত্বেও তার তীব্র হলাহল ভরা তপ্ত নিঃশ্বাস ঢেলে দিচ্ছে সমগ্র চরাচরে। গাছের পাতারা স্থির। পশুপাখি আর মানুষের বুক শুষ্ক হয়ে আসে খররৌদ্রে-তৃষ্ণায়। পিচঢালা রাস্তার ধারেরগাছের ছায়াগুলো হয়ে ওঠে হ্রস্ব থেকে হ্রস্বতর।
তার ঠোঁট নড়ছে ফিসফিস করে-
‘মেনোনা আজ স্বামীর কোনো মানা
হোক সে যত তোমার অনুগামী
প্রেমিক আমি আমার আছে ডানা
তোমাকে ওড়া শেখাবো আজ আমি।
সময় গড়ায় যেনো মার্বেল,নাকি শুঁয়োপোকা, নাকি রঙিন উৎসব, কে জানে!
বেটোফেন আর অরণ্যের মাদকতায় ডুবে যায় তারা।
একসময় চোখে পড়ে লোকটাকে। পেছনে মুখ করে বসে থাকায় পুরোটা দেখা যায়না। শুধু সাইড থেকে হালকা দেখা যাচ্ছে। আধটুকু।
কে ও?
কার কথা বলছো?
ওই যে।ঢোকার সময় ড্রয়িং রুমে যে লোকটাকে বসে থাকতে দেখলাম, সে কে?
ওহ।ও আমার এক ফ্রেন্ড। অনেক পুরনো ফ্রেন্ড। বউ বাড়ি গেছে কোনো কাজ নাই বলে চলে এসেছে আমার এখানে।
হ্যাঁ, আর বসেঢক ঢক করে মদ গিলছে।
উফ তোমার কেন যে এত কিছু খেয়াল করতে হয়। কাম অনবেবি। দোহাই তোদের এতোটুকু চুপ কর ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর। টুপ করে খসে পড়ে কোনো এক বিরহীবধূর নাকের নথ। জলে।
ইস আটটা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি করতে হবে।কখন অফিসের জন্য রেডি হবে, কখন কী করবে ভেবে পায় না।এই, একটু শুনে যাও তো!
ড্রয়িং রুমে তুহিনের গলা-
না, না। আমি এখন আসতে পারবো না। তুমি কি বলতো? দেখছো না দেরি হয়ে গেছে? তারপর আজকে দুপুরে ব্যাংকে জরুরি মিটিং। তদন্ত কমিটি আসবে। আমাদের ব্রাঞ্চের ম্যানেজার আশরাফ ফারুকীর দুর্নীতির মামলাটা নিয়ে ডিলকরবে। তারা খুবই সেনসিটিভ। তো বুঝতেই পারছ।
গালে ফেইস পাউডারের পাফ বোলাতে বোলাতে জবাব দেয় শুচি।
ও।
এগ হোয়াইট মিশিয়ে ব্রেড টোস্ট এ কামড় বসাতে বসাতে তুহিন জানায়। ইয়ে মানে আমার আজকে একটু দেরি হবে। সন্ধ্যার দিকে মিটিং আছে তো একটা।
কত দেরি?
এই ধরো দশটা কিংবা এগারোটা। জরুরি মিটিং তো, বারোটাও বেজে যেতে পারে।
জবাব না দিয়ে শুচি তুহিনকে লক্ষ্য করে। আজ সে পড়েছে এক দুধ সাদা শার্ট। তার ওপর ব্লেজার। চমৎকার লাগছে তুহিনকে। ঝটপট খাওয়া শেষ করে দরজার দিকে এগিয়ে জুতার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলল আমার জন্য অপেক্ষা করো না তুমি খেয়ে নিও কেমন?
শুচি চোখ বন্ধ করে। রেহানা, রেহানা, রেহানা। অজগরের মতো গ্রাস করে নিয়েছো তুমি আমার অতীত, বর্তমানকে। বোধ করি ভবিষ্যতকেও। আর পারিনা আমি। ধরণী দ্বিধা হও। আমি প্রবেশ করি। খা-বদাহন আর কতদূর। রেহানা।
তোমার চা।
সময় নাই। আর হ্যাঁ, এটা রাখো দশ হাজারআছে। মাহিনের টিচার কী কারণে যেনো এক মাসের এডভান্স চেয়েছিল।
এই যে ভাই যাবেন?
কই যাইবেন আপা?
মতিঝিল শাপলা চত্বর।
কত?
একশ টাকা।
বয়স্ক রিক্সাওয়ালা। আস্তে আস্তে চালাচ্ছে। থাক সমস্যা নেই। এমডি স্যার আজকে একটু দেরি করেই ঢুকবেন। পথে যেতে যেতে চোখে পড়ল দুই শালিক। যাক।মনটা ভালো হয়ে গেলো।সত্যিই কি ভালো হয়ে গেলো? জ্যাম লেগেছে। এরই মধ্যে একটা ভিখারী এসে টাকা চাইলো। বিশ টাকা বের করে দেয় শুচি।
এমডি স্যারের রুম থেকে কল আসে ঠিক দুইটা দশে। মিটিং শুরু হবে। তদন্ত কমিটি এসে গেছে। শুচিকে এবং আরো দুই একজন অফিসার কে কনফারেন্স রুমে যাবার জন্য ডাকা হলো। শুচি শাড়িটা একটু ঠিকঠাক করে নেয়। আবার একটু লিপস্টিক বুলায় ঠোঁটে। তারপর আড়ং থেকে কেনা লেদারের নতুন ভ্যানিটি ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়েকনফারেন্স রুমের দরজাটা ঠেলে ঢুকে পড়ে।
স্লামালাইকুম।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
একদম সামনের চেয়ারে বসা ভদ্রলোক উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
গুড আফটারনুন মিসেস শুচিতা। এন্ড নাইস টু মিট ইউ।
ভূত দেখার মতো চমকে উঠে শুচি। এই লোকটাকেই তো কাল দেখতে পেয়েছিল কামালের বাসায়। সাইড থেকে দেখা এক পলকের জন্য, তবু চিনতে ভুল করেনি সে। অপলক চোখে তাকিয়ে আছে শুচির দিকে। সে চোখে বিস্ময়, নাকি প্রেম নাকি রহস্য, কে জানে।
ধীরে চোখটা নামিয়ে নেয় সে।
আসুন তাহলে মিটিং শুরু করি?
চরু হক
বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫
প্রতিদিনই ভোরবেলায় তার ঘুম ভাঙে। সূর্য তখনও উঁকি দেয়না ঢাকার আকাশে। শুধু পাখিদের কিচিরমিচিরের সুবাস জুড়ে থাকে বাড়ির চারপাশে।ব্যতিক্রম নয় আজও। তারপর শুরু হয়তার বাচ্চাকাচ্চাদের ঘুম থেকে তোলার কসরত। ‘মাহিন, এই মাহিন,ওঠো ওঠো তাড়াতাড়ি।জুঁই আম্মু, উঠে পড়ো গাড়ি চলে আসবে এক্ষুনি।’ বাচ্চাগুলো একেবারে কুম্ভকর্ণের বংশধর।নড়তে চড়তে চায় না কিছুতেই। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ চলে কিছুক্ষণ। ঠেলাঠেলি, গুঁতাগুঁতি। তারপর একসময় মেজাজ সপ্তমে। স্কুলের গাড়ি দাঁড়ানো গেটে। ওরা জামাকাপড় পড়ে কোনোদিন খেয়ে আবার কোনোদিন না খেয়েই মুখ না ধুয়েই ভোঁ দৌড়। এ হলো আদি পর্ব।
একই কাহিনী আজও। সকাল ছয়টা। কখনো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই শুনতে হয় কাকের একটানা কা কা ডাক।পাখির কিচিরমিচিরেরসাথে মিশে একটা মিশ্র রাগ তৈরি করে। সকালবেলা কাক ডাকলে অবশ্য মনটা কেমন যেনো করে ওঠে শুচির। মলিন হয়ে যায় কী এক কুসংস্কারে। হ্যাঁ,তখন সে খুব নিবিড়ভাবে কান পাতে। আবারো অন্য পাখিদের ডাক শোনার জন্য সূক্ষ্মভাবেফাঁদ পাতে মনের জানালায়। তারপর যখন দূর থেকে ভেসে আসে দু’একটা পাখির কলকলানি,তখন তার মনটা শান্ত হয় ধীরে ধীরে। আজকেও সেই ছ’টা কিংবা ছ’টা দশেই ঘুম ভাঙলো কিন্তু ঘুম ভাঙার সাথে সাথে এসে শুনতে পায় বৃষ্টির রিমঝিম। যেন জ্যোৎস্নার মতো শান্ত আর পবিত্র। চোখ মেলেই বৃষ্টি দেখে কেন যেনো নিজের অজান্তেই এক আনন্দের শিহরন খেলে গেল শুচির মধ্যে। যে শিহরনের কোনো মানে নেই, নেই কোন ব্যাখ্যা, কিংবা বাক্যগত বিশ্লেষণ।
কিছুক্ষণ ডাকাডাকি। যাক বাচ্চারা তাহলে ঘুম থেকে উঠলো। আলু ভাজি আর মাগুর মাছের ঝোল রাতেই করে রেখেছিল বুয়া। শুধু তাড়াতাড়ি ওদের ওই দিয়ে খাইয়ে দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দেয় শুচি। তারপর ব্রাশে পেস্ট লাগাতে লাগাতে আস্তে করে দরজাটা খুলে দিয়ে বারান্দায়।হলুদ আলো ঠিকরে পড়েছে।আহ কি অদ্ভুত বৃষ্টি, রিমঝিম রিমঝিম। যেন অনবদ্য এক গাথা,এক কবিতা রচিত হয়ে যাচ্ছে।শুচির প্রাণ এক পাখি হয়ে বেরিয়ে এলো দেহ ছেড়ে- উড়তে লাগলো বাইরে, ভিজতে লাগলো বৃষ্টিতে। জানালার পাশের গাছটায় একটু এসে বসলো, তারপর ফুড়–ৎ করে আরেক ডালে। তারপর আরেকটায়, তারপর আরো একটায়। গাছের পাতা থেকে পানি খেলো, লেজ দিয়ে বাড়ি মেরে ছড়িয়ে দিল দু’এক ফোঁটা জল।
আড়মোড়া ভাঙে তুহিন।‘ফ্যানটা একটু বন্ধ করে দাও না। খুব শীত লাগছে।’ ‘আসছি’ বলে চড়–ই পাখিটাকে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ঘরের ভেতর চলে এলো সে। তুহিনের ঘুম জড়ানো শরীর শীতে কুঁকড়ে আছে। শুচি তাড়াতাড়ি ফ্যানের সুইচ অফ করে দেয়।
‘একটু আসো নাএদিকে। এত সকালে উঠে কী কর?আমি যতক্ষণ বাসায় থাকি একটু গল্প করতে পারো না আমার সাথে?’ শুচি মশারির ভেতর ঢুকে গা এলিয়ে দেয়। জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে। তুহিন বউয়ের গায়ের গন্ধ পেয়ে বউয়ের দিকে মুখ ফিরিয়ে শোয়।মুখটা এগিয়ে দেয়া শুচির দিকে কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাত্র। এক ঝটকায় শুচি মুখ সরিয়ে নেয়। ‘সরো কাজ আছে আমার।’
বৃষ্টি কমলো।
তুহিন আহমেদ। লেকচারার।হ্যান্ডসাম স্মার্ট। প্রগ্রেসিভ মানসিকতার অধিকারী। অন্তত প্রথম দিকে ওর কাছে তাই মনে হয়েছিল। এখন অবশ্য আর ভালো করে বুঝতে পারে না। শুচি পড়তো ঢাকা ইউনিভার্সিটি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে, আর তুহিন আহমেদ ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগেরইফ্রেশ জয়েন করা লেকচারার। চোখে মুখে পা-িত্যের ছাপ ধারালো হীরার মতো চারদিকে কিরণ ছড়ায়। তুহিনের ছিপছিপে দীর্ঘ দেহ, মাথাভর্তি কোঁকড়া চুল, তীক্ষè চোখ, খাড়া নাক সবই ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের চমকে দেয়ার মতো। সে যখন কথা বলে, পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে সারা ক্লাসরুমে আর বজ্রের মতো প্রতিধ্বনিত হতে থাকে তার উদাত্ত কণ্ঠস্বর। প্রথম ক্লাসেই শুচি নজরে পড়েছিল সেই প্রাণ প্রাচুর্যপূর্ণ তুহিন আহমেদের। তারপর জানাজানি, একসময় তার পরিণতি হলো বিয়ে এবং দুই সন্তানের জননী আজকের শুচিতা আহমেদ।
এই যে ভাই যাবেন?
কই যাইবেন আপা?
মতিঝিল শাপলা চত্বর।
কত?
একশ বিশ টাকা।
অন্যদিন হলে দর কষাকষি করত সে, কিন্তু আজ অলরেডি নয়টা বেজে গেছে। এমনিতেই লেট। তাই কথা না বাড়িয়েরিক্সায় উঠে বসে। রিক্সাওয়ালা মতিঝিলের দিকে যাত্রা শুরু করে।
শুচি দীর্ঘাঙ্গী। দীর্ঘ কালো তার চুল। গায়ের রঙ স্বর্ণাভ।পাতলা ঠোঁট আর নিবিড় কালো চোখের অধিকারিণী শুচি এই সাঁইত্রিশেও অসামান্যা।রাস্তায় যেতে যেতে পথচারীদের নজর কাড়েতার ঢলোঢলো মুখ। শুধু চুলের জায়গায় জায়গায় পাক ধরেছে, মেহেদির গুণে যা রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে। তবু চোখে তার খুব গোপনে কি এক বিষণœতা,এক অতল হাহাকার রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলে। ফেইসপাউডার, কাজল আর লিপস্টিক ভেদ করে সে রৌদ্রছায়া ঢুকে যায় কোনো এক গভীর গোপন কুঠুরিতে। কেউ তারনাগাল পায় না কোনোদিন।
আপা ও আপা, অনেক ধরে আপনার ফোন বাজে।
রিক্সাওয়ালা ছেলেটার কথায় সম্বিত ফিরে পায় শুচি।
ও হ্যাঁ।
তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করল সে।
হ্যালো স্লামালাইকুম। কে বলছেন প্লিজ?
হ্যালো? হ্যালো?
লাইনটা কেটে গেল। ফোন ব্যাগে রেখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বেজে গেছে। আবার রিং হচ্ছে। শুচি ফোন রিসিভ করলে সেই একইকণ্ঠ,
হ্যালো? হ্যালো?
কে বলছেন আপনি?
হ্যালো, এটা কি ডাক্তার রায়হানের নাম্বার?
জ্বী না, এটা ডাক্তার রায়হানের নাম্বার না। রং নাম্বার।
ফোন রেখে দেয় শুচি। আবার ফোন।
হ্যালো? সেই একইকণ্ঠ,
এটা কি ডাক্তার রায়হানের নাম্বার না?
জ্বী না।
কিন্তু আমি তো কালকে ওই নাম্বারে ফোন করেছি।
কী আশ্চর্য! বলছি তো ওনার নাম্বার না এটা। আপনি রং নাম্বারে ফোন করেছেন।
মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে উঠতে থাকে তার। এই সময় আবার- হ্যালো?
দাঁতে দাঁত চেপে এবার জবাব দেয় সে,
কী, কী পেয়েছেন আপনি? আরেকবার ডিস্টার্ব করলে আমি কিন্তু,
কথা শেষ করার আগেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো ভারি অথচ মোলায়েম এক কণ্ঠ-
হ্যালো? শুচিতা আহমেদ বলছেন? আমি অগ্রণী ব্যাংকের হেড অফিসের ডেপুটি ম্যানেজার বলছি। আপনার শাখার ম্যানেজার আশরাফ ফারুক-এর বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে যে দুর্নীতির মামলাটা উত্থাপন করা হয়েছে সেটার উপর একটা তদন্ত করতে হবে।এ্যান্ড নাও উই নিড ইওর হেল্প ম্যাম।আপনি কি আগামীকাল আমাদের টিমকে একটু সময় দিতে পারবেন?
এক্সট্রিমলি সরি স্যার। একটা রং নাম্বার এতক্ষণ খুব বিরক্ত করছিল আমাকে। তাই-
অপ্রস্তুত কণ্ঠ খাদে নামে।
ইটস ওকে, থ্যাঙ্ক ইউ। আমরা এ ব্যাপারে আপনার একটা ইন্টারভিউ নিতে চাই।
অফকোর্স স্যার।
কাইন্ডলি কখন সেটা সম্ভব হবে বলবেন?
শুচি এ ব্যাপারে ডিটেলস কথা বলে।
ঠিক হলো আগামীকাল দুইটায় অফিসে ইন্টারভিউ।কপালে তার দেখা দেয় বিন্দু বিন্দু ঘাম। রিক্সা ততক্ষণে গুলিস্তানের মোড়ে আবার জ্যামে। চিরাচরিত গল্প নামে রাস্তার ফুটপাতে।
‘হয়তো তুমি আজকের সন্ধ্যায়
দেখছো এক স্বপ্ন অদ্ভুত
যখন তুমি নিজেকে আয়নায়
দেখলে তাকে ভাবলে দেবদূত।’
কামাল মাক্স জাকবের লাইন আওড়াতে আওড়াতে ঢুকে যায় চুলের গহীন অরণ্যে। ফুরফুরে মাদকতময় গন্ধে আমোদিত ওর ঝর্নাধারার মতো চুলে হাত বোলাতে বোলাতেসে আওরাতে থাকে-
পালাতে গিয়ে ‘এলিওনোর’ তার
দীর্ঘ কেশরাশিকে দিল মেলে
যা কিছু ধন আমার কামনার
ঊষার চোখ যাতে না দেখে ফেলে।
শুচি যখন মোচড়াচ্ছে কামালের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য, তখন তাকে আরো শক্তভাবে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করার খেলায় মাতেসেই যুবক। বেলা সাড়ে তিনটা। সূর্য তখন মধ্যগগন থেকে সামান্য হেলে পড়ছে। তা সত্ত্বেও তার তীব্র হলাহল ভরা তপ্ত নিঃশ্বাস ঢেলে দিচ্ছে সমগ্র চরাচরে। গাছের পাতারা স্থির। পশুপাখি আর মানুষের বুক শুষ্ক হয়ে আসে খররৌদ্রে-তৃষ্ণায়। পিচঢালা রাস্তার ধারেরগাছের ছায়াগুলো হয়ে ওঠে হ্রস্ব থেকে হ্রস্বতর।
তার ঠোঁট নড়ছে ফিসফিস করে-
‘মেনোনা আজ স্বামীর কোনো মানা
হোক সে যত তোমার অনুগামী
প্রেমিক আমি আমার আছে ডানা
তোমাকে ওড়া শেখাবো আজ আমি।
সময় গড়ায় যেনো মার্বেল,নাকি শুঁয়োপোকা, নাকি রঙিন উৎসব, কে জানে!
বেটোফেন আর অরণ্যের মাদকতায় ডুবে যায় তারা।
একসময় চোখে পড়ে লোকটাকে। পেছনে মুখ করে বসে থাকায় পুরোটা দেখা যায়না। শুধু সাইড থেকে হালকা দেখা যাচ্ছে। আধটুকু।
কে ও?
কার কথা বলছো?
ওই যে।ঢোকার সময় ড্রয়িং রুমে যে লোকটাকে বসে থাকতে দেখলাম, সে কে?
ওহ।ও আমার এক ফ্রেন্ড। অনেক পুরনো ফ্রেন্ড। বউ বাড়ি গেছে কোনো কাজ নাই বলে চলে এসেছে আমার এখানে।
হ্যাঁ, আর বসেঢক ঢক করে মদ গিলছে।
উফ তোমার কেন যে এত কিছু খেয়াল করতে হয়। কাম অনবেবি। দোহাই তোদের এতোটুকু চুপ কর ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর। টুপ করে খসে পড়ে কোনো এক বিরহীবধূর নাকের নথ। জলে।
ইস আটটা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি করতে হবে।কখন অফিসের জন্য রেডি হবে, কখন কী করবে ভেবে পায় না।এই, একটু শুনে যাও তো!
ড্রয়িং রুমে তুহিনের গলা-
না, না। আমি এখন আসতে পারবো না। তুমি কি বলতো? দেখছো না দেরি হয়ে গেছে? তারপর আজকে দুপুরে ব্যাংকে জরুরি মিটিং। তদন্ত কমিটি আসবে। আমাদের ব্রাঞ্চের ম্যানেজার আশরাফ ফারুকীর দুর্নীতির মামলাটা নিয়ে ডিলকরবে। তারা খুবই সেনসিটিভ। তো বুঝতেই পারছ।
গালে ফেইস পাউডারের পাফ বোলাতে বোলাতে জবাব দেয় শুচি।
ও।
এগ হোয়াইট মিশিয়ে ব্রেড টোস্ট এ কামড় বসাতে বসাতে তুহিন জানায়। ইয়ে মানে আমার আজকে একটু দেরি হবে। সন্ধ্যার দিকে মিটিং আছে তো একটা।
কত দেরি?
এই ধরো দশটা কিংবা এগারোটা। জরুরি মিটিং তো, বারোটাও বেজে যেতে পারে।
জবাব না দিয়ে শুচি তুহিনকে লক্ষ্য করে। আজ সে পড়েছে এক দুধ সাদা শার্ট। তার ওপর ব্লেজার। চমৎকার লাগছে তুহিনকে। ঝটপট খাওয়া শেষ করে দরজার দিকে এগিয়ে জুতার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলল আমার জন্য অপেক্ষা করো না তুমি খেয়ে নিও কেমন?
শুচি চোখ বন্ধ করে। রেহানা, রেহানা, রেহানা। অজগরের মতো গ্রাস করে নিয়েছো তুমি আমার অতীত, বর্তমানকে। বোধ করি ভবিষ্যতকেও। আর পারিনা আমি। ধরণী দ্বিধা হও। আমি প্রবেশ করি। খা-বদাহন আর কতদূর। রেহানা।
তোমার চা।
সময় নাই। আর হ্যাঁ, এটা রাখো দশ হাজারআছে। মাহিনের টিচার কী কারণে যেনো এক মাসের এডভান্স চেয়েছিল।
এই যে ভাই যাবেন?
কই যাইবেন আপা?
মতিঝিল শাপলা চত্বর।
কত?
একশ টাকা।
বয়স্ক রিক্সাওয়ালা। আস্তে আস্তে চালাচ্ছে। থাক সমস্যা নেই। এমডি স্যার আজকে একটু দেরি করেই ঢুকবেন। পথে যেতে যেতে চোখে পড়ল দুই শালিক। যাক।মনটা ভালো হয়ে গেলো।সত্যিই কি ভালো হয়ে গেলো? জ্যাম লেগেছে। এরই মধ্যে একটা ভিখারী এসে টাকা চাইলো। বিশ টাকা বের করে দেয় শুচি।
এমডি স্যারের রুম থেকে কল আসে ঠিক দুইটা দশে। মিটিং শুরু হবে। তদন্ত কমিটি এসে গেছে। শুচিকে এবং আরো দুই একজন অফিসার কে কনফারেন্স রুমে যাবার জন্য ডাকা হলো। শুচি শাড়িটা একটু ঠিকঠাক করে নেয়। আবার একটু লিপস্টিক বুলায় ঠোঁটে। তারপর আড়ং থেকে কেনা লেদারের নতুন ভ্যানিটি ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়েকনফারেন্স রুমের দরজাটা ঠেলে ঢুকে পড়ে।
স্লামালাইকুম।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
একদম সামনের চেয়ারে বসা ভদ্রলোক উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
গুড আফটারনুন মিসেস শুচিতা। এন্ড নাইস টু মিট ইউ।
ভূত দেখার মতো চমকে উঠে শুচি। এই লোকটাকেই তো কাল দেখতে পেয়েছিল কামালের বাসায়। সাইড থেকে দেখা এক পলকের জন্য, তবু চিনতে ভুল করেনি সে। অপলক চোখে তাকিয়ে আছে শুচির দিকে। সে চোখে বিস্ময়, নাকি প্রেম নাকি রহস্য, কে জানে।
ধীরে চোখটা নামিয়ে নেয় সে।
আসুন তাহলে মিটিং শুরু করি?