alt

সাময়িকী

জ্যৈষ্ঠের পদাবলি

: বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

ফুটেছে ফুল, বিরহী তবু চাঁদ
মহাদেব সাহা
ফুটেছে ফুল ঠোঁটের মতো লাল

আকাশে চাঁদ- বিরহী চিরকাল;

কে যেন একা গাইছে বসে গান

সন্ধ্যা নামে, দিনের অবসান।

দুর পাহাড়ে শান্ত মৃদু পায়ে

রাত্রি নামে স্তব্ধ নিঝুম গাঁয়ে;

শূন্যে ভাসে মেঘের জলাশয়

এই জীবনে সবকিছুই তো সয়।

বিরহী চাঁদ মোমের মতো গলে

বুকের মাঝে কিসের আগুন জ্বলে;

মন পড়ে রয় কোন অজানালোকে

নিজেকেই সে পোড়ায় নিজের শোকে।

ফুটেছে ফুল ঠোঁটের মতো লাল

বিরহী চাঁদ বিরহী চিরকাল;

ফুটেছে ফুল বিরহী তবু চাঁদ,

বাইরে আলো, ভেতরে অবসাদ।

ঢের বেশি জানো তুমি
দিলারা মেসবাহ
ঢের বেশি জানো তুমি আমার খামার নেই

নেই দীপাবলি দয়ালু দহলিজ। নেই জানো

স্বপ্নের অধিক একফালি বিভোর বাগিচা।

বেকুব আহ্লাদের নাটাই কার্নিশে ঝুলে থাকে

ত্রিভঙ্গ মুরারি।

জানি বড়শি পেতে বসে থাকে মৎস্য শিকারী

ফাতনার কারুকলা কুহক ফেরারি,

ঢের বেশি জানো তুমি!

বেলা ডুবে যায়- অস্তরাগ রেখা

পুবের আকাশ জানে নতুন ইন্ধন

সেই সূত্র জেনে ফের সলতে সাজাই!

এবার যুদ্ধ নিজের সঙ্গে
খোরশেদ বাহার
সারাদিন কত না কথা বলি

কথা হয় তোমার সঙ্গে তাদের সঙ্গে

শুধু নিজের সঙ্গেই কথা হয় না কখনো

জানা হয় না নিজের খবর, নিজস্বতার খবর।

শুক্র আর মঙ্গল একীভূত হলে

আমার সময়গুলো অজানা গ্রহে হারিয়ে যায়।

আমি পৃথিবীর পথে পথে দৌড়াতে থাকি।

শুধু নিজের সঙ্গে কথা হয় না বলে

রূপসা থেকে পদ্মা, লুনি থেকে যমুনা

দাঁড়াই নিঃসঙ্গতায়, তবুও কথা হয় না।

আজকাল কথাগুলো মানুষ ভেদে ভিন্নতর

আমাকে তারা উপেক্ষা করেছে

মিশে গেছে অমানিশার গহীন আঁধারে

দুষ্টুমিতে শিস্ দিয়েছে মনের জানালায়

তবু একদ- কথা বলেনি সে।

আমার বুকের পাঁজরে জমানো কথাগুলো

নিজেকেই সঙ্গোপনে জানান দেবো ভেবে

নাফের পারে এসে দাঁড়িয়েছি একটুক্ষণ

বাঁক ঘুরে সে ফিরে যায় অন্য মোহনায়।

এবার যুদ্ধ নিজের সঙ্গে নিজকে নিয়ে।

গ্রীষ্মের ভাবনা
হাইকেল হাশমী
গ্রীষ্মের দিনে,

সূর্যের আলো আমার ত্বকে

এঁকে যায় সহ¯্র কবিতা।

গরম বাতাসের গুঞ্জনে

নিহিত থাকে কত একান্ত সুর ও কথা।

গ্রীষ্মের ভোরে,

একটি সূর্যমুখী মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে

বাগানের এক কোণে

আকাশের অসীম ভার মাথায় নিয়ে।

গ্রীষ্মের সকালে,

শিশুদের সুরেলা হাসি

ঢেকে রাখে পরিবেশ,

পাখির কলরবের মতো,

আর সময়ের গতি ভুলে যায় অগ্রসর হতে।

গ্রীষ্মের বিকালে,

দূর আকাশের ঝাপসা প্রান্তে

মনে সংশয় জাগে,

স্মৃতিগুলো অস্থিরতা প্রত্যাখ্যান করে

চায় স্থির থাকতে।

গ্রীষ্মের নিঃশব্দ দুপুরে,

উত্তপ্ত সূর্যের প্রতাপে

পৃথিবী যেন থমকে দাঁড়ায় তার কক্ষপথে।

গ্রীষ্মের নির্জন রাতে,

আমরা ছুটে বেড়াই জোনাকির পিছনে

যেন ধরতে পারলে আমাদের সুপ্ত বাসনাগুলো

সব হয়ে যাবে পূর্ণ।

যেতে চায় যে, তাকে থাকতে বলতে নেই
চয়ন শায়েরী
সপ্তর্ষিতারারা প্রশ্ন করে

কোথায় যাবে?

-অন্য কোনোখানে চলে যাবো;

এরপর তুমি তৎসম শব্দের খটরমটর কমাতে

তৎসমশব্দ ভেঙে ভেঙে

তদ্ভবে উদ্ভবে চলে যাওয়ার অর্থ খুঁজে ফিরবে!

সপ্তর্ষির কাঁধে বসে আছে যে-অরুন্ধতী-

সে-অরুন্ধতী নক্ষত্রের ঠিকুজি খুঁজে বের করতে করতে

রাত পার করে দেবে

এই ভেবে- চলে যাওয়ার মানে কী?

-চলে যাওয়া মানে কি চলেই যাওয়া?

-চলে যাওয়া মানে কি ফিরে না-আসা?

-চলে যাওয়া মানে কি শুধু প্রস্থান?

-চলে যাওয়া কি জরুরি ছিল, ছিল না নাকি?

স্বাতী তারা চেয়ে দেখে অরুন্ধতী নক্ষত্রের ম্লান মুখ,

কালপুরুষটা জ্যৈষ্ঠের আকাশে নেই- চলে গেছে;

নেই আকাশে এখন ক্যাসিওপিয়াও

চলে গেছে সেও

শুধু জেগে আছে সপ্তর্ষিতারারা

সেই চিরকালিক প্রশ্ন এঁকে-

-তবু চলে যাবে?

বিদায় বন্ধু, ফিরে তাকাতে নেই!

যে-কালপুরুষ যে-ক্যাসিওপিয়া

তোমাদের জ্যৈষ্ঠের আকাশে নেই

অসীমের নীরবতা দেখে আকাশে হারাও খেই

কাউকে বোলো না- যেও না!

সপ্তর্ষিম-লের মতো কোনো প্রশ্ন এঁকে

তাকে বিব্রত কোরো না

-যে যাওয়ার, চলে যেতে দিতে হয় তাকে।

মধুমাসের কবিতা
মুশাররাত
খররৌদ্রে

প্রেমে আর্দ্র

নয় আশ্বিন

মরা ভাদ্র

মরি নিদ্রায়

কী যে ভাতঘুম

মধুমাসে পাই

সূর্যপুরীর দম

থাকি প্রতীক্ষায়

শান্তি বারির ধারা

কালো ঈশান হোক

ভিজে হই সারা

এসো লক্ষ্মী নারায়ণ ঘরে

মধুরেণ সমাপয়েৎ

মধু মাসের প্রিয় ফলাহারে।

ভাঙন
পিন্টু ভৌমিক
তোমার হাত ধরা খুব ভুল ছিলো, ভুল ছিলো আরো কিছু-

ভাঙনের নেপথ্য সংগীত, তোমাকে ডেকেছে অন্ধকারে।

সারা বাড়ি আলোয় মেখেছো রাতের রূপবতী...

এইসব আলোকসজ্জার নিচে হেঁটে যায় বিষণœ যুবকেরা।

কিছুই আভাসিত হয়নি বলে সরিয়ে নিয়েছো মুখ,

চোখ ভেঙে কত রাত চোরা স্রোতে ভাসে জলের শহর।

এখানে ওখানে গুঁজে রাখা কিছু গোপন ব্যথা-

গড়িয়ে পড়া দুপুর, একটা নিঃসঙ্গ জানালা- নীল শূনতার পাশে একা

হলুদ খামে পড়ে আছে ধুলোচাপা আশ^াস...

উগ্র গন্ধ কোথাও, মুছে ফেলি প্রকৃতি পাঠ।

নিভছে কাছে দূরের আলো

অন্ধকারের হাত ধরে যাচ্ছ...

যার হাতে জমা ছিলো তোমার গোপন প্রতিশ্রুতি।{

মানুষ হওয়ার কলঙ্ক
তানজীনা ফেরদৌস
গ্রীষ্মের ঝড়ো হাওয়ায়

মুখর হয় আমাদের অনুভূত প্রেম।

মেঘলা আকাশে চাঁদের নাগাল পেতে সিঁড়িপথ ধরে উঠতে থাকি।

আচানক কালবৈশাখী এসে বুঝিয়ে দেয় আঁধারের হোমানলে দিন ও গাঢ় হয় রাত্রির মতো।

চাঁদের নাগাল না পেয়ে দুঃখ লাগে না,

যখন মনে পড়ে-

গতজন্মে এক গ্রীষ্মে আমি কোকিলের ডিম হয়ে কাকের ঘরে জন্মেছিলাম।

আজ মানুষ হয়ে কাক শিকারের বিরুদ্ধে কথা বলি।

মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণি পোশাক পরে না জানি

আবার এই মানুষ ছাড়া কোনো প্রাণি পোশাক পরে উলঙ্গ নৃত্যও করে না।

আবার কোন গ্রীষ্মের ঝড়ে আমি মানুষ হওয়ার এই কলঙ্ক ঘুচিয়ে নদী হয়ে জন্মাতে চাই।

যে নদীর বুকে থাকবে স্বপ্নস্রোতে আর চাঁদের চুম্বনে যে নদীতে ফুঁসে উঠবে যুবতী জোয়ার।

পরিচয়
মোস্তফা মঈন
আমাকে জিজ্ঞেস করো না

আমার পরিচয়, নামধাম

আমার ভাগ্যে জোটেনি কোনো আয়না

আমি দেখিনি কারোর চোখ, কারোর হৃদয়

দেখিনি নিজের মুখ

আমি নিজের ভেতর খুব অচেনা প্রাণি

গোঁয়ার্তুমি দেখতে দেখতে বড় হয়েছি

আমি আমাকে চিনি না

আমাকে জিজ্ঞেস করো না, কী নাম, কী পরিচয়

ছবি

ফিলিস্তিনের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে অণুগল্প

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

শিল্পী সুনীল কুমারের ‘পথের গল্প’-এর স্বরূপ

ছবি

রাত গভীর

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

‘এ নয় আঁখিজল’

ছবি

ওসামা অ্যালোমারের একঝুড়ি খুদে গল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

‘ব্রহ্মপুত্র দাঁড়াও’ কাব্যগ্রন্থে নীলদ্রোহের রেখাপাত

ছবি

নার্গিস-নজরুলের স্মৃতিধন্য দৌলতপুরে একদিন

ছবি

যেভাবে ভেঙেছিল এক মৌনতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি : একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

নজরুল সাহিত্যে নন্দনতত্ত্বের প্রেক্ষিত

ছবি

স্বাধীনতার কবি নজরুল

ছবি

নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত প্রতিভা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

দাউদ হায়দার: স্বকীয় ও নির্বাসিত

ছবি

অটোগ্রাফ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি : একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

আলবেয়ার কামুর গল্পে অস্তিত্বের নিষ্ঠুরতা

ছবি

উপন্যাসের জন্মবীক্ষা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কানাগলি

ছবি

পার্ল এস বাক-এর কবিতা

ছবি

হোসে এচেগারাই স্প্যানিশ আলোকবর্তিকা

ছবি

নববীণায় বাজে নতুনের জয়গান

ছবি

রবীন্দ্রনাথের ‘করুণা’ ঘিরে কিছু কথা

ছবি

গীতাঞ্জলির ইতিবৃত্ত ও বেদনাহত রবীন্দ্রনাথ

ছবি

রবীন্দ্রনাথ, শিলাইদহ ও ‘ছিন্নপত্র’

ছবি

নিউ নেদারল্যান্ডস: জার্র্সি এবং লেনাপি জনগোষ্ঠী

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বকুলীর সেইরাত

ছবি

আকাশের প্রান্ত

tab

সাময়িকী

জ্যৈষ্ঠের পদাবলি

বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

ফুটেছে ফুল, বিরহী তবু চাঁদ
মহাদেব সাহা
ফুটেছে ফুল ঠোঁটের মতো লাল

আকাশে চাঁদ- বিরহী চিরকাল;

কে যেন একা গাইছে বসে গান

সন্ধ্যা নামে, দিনের অবসান।

দুর পাহাড়ে শান্ত মৃদু পায়ে

রাত্রি নামে স্তব্ধ নিঝুম গাঁয়ে;

শূন্যে ভাসে মেঘের জলাশয়

এই জীবনে সবকিছুই তো সয়।

বিরহী চাঁদ মোমের মতো গলে

বুকের মাঝে কিসের আগুন জ্বলে;

মন পড়ে রয় কোন অজানালোকে

নিজেকেই সে পোড়ায় নিজের শোকে।

ফুটেছে ফুল ঠোঁটের মতো লাল

বিরহী চাঁদ বিরহী চিরকাল;

ফুটেছে ফুল বিরহী তবু চাঁদ,

বাইরে আলো, ভেতরে অবসাদ।

ঢের বেশি জানো তুমি
দিলারা মেসবাহ
ঢের বেশি জানো তুমি আমার খামার নেই

নেই দীপাবলি দয়ালু দহলিজ। নেই জানো

স্বপ্নের অধিক একফালি বিভোর বাগিচা।

বেকুব আহ্লাদের নাটাই কার্নিশে ঝুলে থাকে

ত্রিভঙ্গ মুরারি।

জানি বড়শি পেতে বসে থাকে মৎস্য শিকারী

ফাতনার কারুকলা কুহক ফেরারি,

ঢের বেশি জানো তুমি!

বেলা ডুবে যায়- অস্তরাগ রেখা

পুবের আকাশ জানে নতুন ইন্ধন

সেই সূত্র জেনে ফের সলতে সাজাই!

এবার যুদ্ধ নিজের সঙ্গে
খোরশেদ বাহার
সারাদিন কত না কথা বলি

কথা হয় তোমার সঙ্গে তাদের সঙ্গে

শুধু নিজের সঙ্গেই কথা হয় না কখনো

জানা হয় না নিজের খবর, নিজস্বতার খবর।

শুক্র আর মঙ্গল একীভূত হলে

আমার সময়গুলো অজানা গ্রহে হারিয়ে যায়।

আমি পৃথিবীর পথে পথে দৌড়াতে থাকি।

শুধু নিজের সঙ্গে কথা হয় না বলে

রূপসা থেকে পদ্মা, লুনি থেকে যমুনা

দাঁড়াই নিঃসঙ্গতায়, তবুও কথা হয় না।

আজকাল কথাগুলো মানুষ ভেদে ভিন্নতর

আমাকে তারা উপেক্ষা করেছে

মিশে গেছে অমানিশার গহীন আঁধারে

দুষ্টুমিতে শিস্ দিয়েছে মনের জানালায়

তবু একদ- কথা বলেনি সে।

আমার বুকের পাঁজরে জমানো কথাগুলো

নিজেকেই সঙ্গোপনে জানান দেবো ভেবে

নাফের পারে এসে দাঁড়িয়েছি একটুক্ষণ

বাঁক ঘুরে সে ফিরে যায় অন্য মোহনায়।

এবার যুদ্ধ নিজের সঙ্গে নিজকে নিয়ে।

গ্রীষ্মের ভাবনা
হাইকেল হাশমী
গ্রীষ্মের দিনে,

সূর্যের আলো আমার ত্বকে

এঁকে যায় সহ¯্র কবিতা।

গরম বাতাসের গুঞ্জনে

নিহিত থাকে কত একান্ত সুর ও কথা।

গ্রীষ্মের ভোরে,

একটি সূর্যমুখী মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে

বাগানের এক কোণে

আকাশের অসীম ভার মাথায় নিয়ে।

গ্রীষ্মের সকালে,

শিশুদের সুরেলা হাসি

ঢেকে রাখে পরিবেশ,

পাখির কলরবের মতো,

আর সময়ের গতি ভুলে যায় অগ্রসর হতে।

গ্রীষ্মের বিকালে,

দূর আকাশের ঝাপসা প্রান্তে

মনে সংশয় জাগে,

স্মৃতিগুলো অস্থিরতা প্রত্যাখ্যান করে

চায় স্থির থাকতে।

গ্রীষ্মের নিঃশব্দ দুপুরে,

উত্তপ্ত সূর্যের প্রতাপে

পৃথিবী যেন থমকে দাঁড়ায় তার কক্ষপথে।

গ্রীষ্মের নির্জন রাতে,

আমরা ছুটে বেড়াই জোনাকির পিছনে

যেন ধরতে পারলে আমাদের সুপ্ত বাসনাগুলো

সব হয়ে যাবে পূর্ণ।

যেতে চায় যে, তাকে থাকতে বলতে নেই
চয়ন শায়েরী
সপ্তর্ষিতারারা প্রশ্ন করে

কোথায় যাবে?

-অন্য কোনোখানে চলে যাবো;

এরপর তুমি তৎসম শব্দের খটরমটর কমাতে

তৎসমশব্দ ভেঙে ভেঙে

তদ্ভবে উদ্ভবে চলে যাওয়ার অর্থ খুঁজে ফিরবে!

সপ্তর্ষির কাঁধে বসে আছে যে-অরুন্ধতী-

সে-অরুন্ধতী নক্ষত্রের ঠিকুজি খুঁজে বের করতে করতে

রাত পার করে দেবে

এই ভেবে- চলে যাওয়ার মানে কী?

-চলে যাওয়া মানে কি চলেই যাওয়া?

-চলে যাওয়া মানে কি ফিরে না-আসা?

-চলে যাওয়া মানে কি শুধু প্রস্থান?

-চলে যাওয়া কি জরুরি ছিল, ছিল না নাকি?

স্বাতী তারা চেয়ে দেখে অরুন্ধতী নক্ষত্রের ম্লান মুখ,

কালপুরুষটা জ্যৈষ্ঠের আকাশে নেই- চলে গেছে;

নেই আকাশে এখন ক্যাসিওপিয়াও

চলে গেছে সেও

শুধু জেগে আছে সপ্তর্ষিতারারা

সেই চিরকালিক প্রশ্ন এঁকে-

-তবু চলে যাবে?

বিদায় বন্ধু, ফিরে তাকাতে নেই!

যে-কালপুরুষ যে-ক্যাসিওপিয়া

তোমাদের জ্যৈষ্ঠের আকাশে নেই

অসীমের নীরবতা দেখে আকাশে হারাও খেই

কাউকে বোলো না- যেও না!

সপ্তর্ষিম-লের মতো কোনো প্রশ্ন এঁকে

তাকে বিব্রত কোরো না

-যে যাওয়ার, চলে যেতে দিতে হয় তাকে।

মধুমাসের কবিতা
মুশাররাত
খররৌদ্রে

প্রেমে আর্দ্র

নয় আশ্বিন

মরা ভাদ্র

মরি নিদ্রায়

কী যে ভাতঘুম

মধুমাসে পাই

সূর্যপুরীর দম

থাকি প্রতীক্ষায়

শান্তি বারির ধারা

কালো ঈশান হোক

ভিজে হই সারা

এসো লক্ষ্মী নারায়ণ ঘরে

মধুরেণ সমাপয়েৎ

মধু মাসের প্রিয় ফলাহারে।

ভাঙন
পিন্টু ভৌমিক
তোমার হাত ধরা খুব ভুল ছিলো, ভুল ছিলো আরো কিছু-

ভাঙনের নেপথ্য সংগীত, তোমাকে ডেকেছে অন্ধকারে।

সারা বাড়ি আলোয় মেখেছো রাতের রূপবতী...

এইসব আলোকসজ্জার নিচে হেঁটে যায় বিষণœ যুবকেরা।

কিছুই আভাসিত হয়নি বলে সরিয়ে নিয়েছো মুখ,

চোখ ভেঙে কত রাত চোরা স্রোতে ভাসে জলের শহর।

এখানে ওখানে গুঁজে রাখা কিছু গোপন ব্যথা-

গড়িয়ে পড়া দুপুর, একটা নিঃসঙ্গ জানালা- নীল শূনতার পাশে একা

হলুদ খামে পড়ে আছে ধুলোচাপা আশ^াস...

উগ্র গন্ধ কোথাও, মুছে ফেলি প্রকৃতি পাঠ।

নিভছে কাছে দূরের আলো

অন্ধকারের হাত ধরে যাচ্ছ...

যার হাতে জমা ছিলো তোমার গোপন প্রতিশ্রুতি।{

মানুষ হওয়ার কলঙ্ক
তানজীনা ফেরদৌস
গ্রীষ্মের ঝড়ো হাওয়ায়

মুখর হয় আমাদের অনুভূত প্রেম।

মেঘলা আকাশে চাঁদের নাগাল পেতে সিঁড়িপথ ধরে উঠতে থাকি।

আচানক কালবৈশাখী এসে বুঝিয়ে দেয় আঁধারের হোমানলে দিন ও গাঢ় হয় রাত্রির মতো।

চাঁদের নাগাল না পেয়ে দুঃখ লাগে না,

যখন মনে পড়ে-

গতজন্মে এক গ্রীষ্মে আমি কোকিলের ডিম হয়ে কাকের ঘরে জন্মেছিলাম।

আজ মানুষ হয়ে কাক শিকারের বিরুদ্ধে কথা বলি।

মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণি পোশাক পরে না জানি

আবার এই মানুষ ছাড়া কোনো প্রাণি পোশাক পরে উলঙ্গ নৃত্যও করে না।

আবার কোন গ্রীষ্মের ঝড়ে আমি মানুষ হওয়ার এই কলঙ্ক ঘুচিয়ে নদী হয়ে জন্মাতে চাই।

যে নদীর বুকে থাকবে স্বপ্নস্রোতে আর চাঁদের চুম্বনে যে নদীতে ফুঁসে উঠবে যুবতী জোয়ার।

পরিচয়
মোস্তফা মঈন
আমাকে জিজ্ঞেস করো না

আমার পরিচয়, নামধাম

আমার ভাগ্যে জোটেনি কোনো আয়না

আমি দেখিনি কারোর চোখ, কারোর হৃদয়

দেখিনি নিজের মুখ

আমি নিজের ভেতর খুব অচেনা প্রাণি

গোঁয়ার্তুমি দেখতে দেখতে বড় হয়েছি

আমি আমাকে চিনি না

আমাকে জিজ্ঞেস করো না, কী নাম, কী পরিচয়

back to top