২০২৫ সালের পুলিৎজারপ্রাপ্ত কবি মেরি হাউ
ভূমিকা ও অনুবাদ : আলী সিদ্দিকী
আমেরিকান কবি মেরি হাউ (Marie Howe) এবছর পুলিৎজার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। আধুনিক আমেরিকান কবিতার প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে যিনি ব্যক্তিগত শোক, আত্মিক অন্বেষণ এবং আধ্যাত্মিক সম্ভাবনাকে কবিতার ছন্দে রূপ দিয়েছেন- তিনি মেরি হাউ। তাঁর কবিতা যেমন আত্মা-নির্ভর, তেমনি দৈনন্দিন জীবনের ভেতরে রহস্যের সন্ধান করে। মৃত্যু, বেঁচে থাকা, ভালোবাসা, এবং নারীত্ব- এই চিরন্তন প্রসঙ্গগুলোর গভীর মানবিক পাঠ মেলে তাঁর কাব্যে।
“Poetry holds the knowledge that we are alive”- মেরি হাউয়ের এই গভীর উচ্চারণ তাঁর কাব্যিক দর্শনের কেন্দ্রে রয়েছে। মার্কিন কবিতা জগতের এক অগ্রগণ্য কণ্ঠস্বর মেরি হাউ (জন্ম ১৯৫০), যিনি তাঁর কবিতায় গভীর জীবনবোধ, শোক, প্রেম, দৈনন্দিনের অন্তর্নিহিত জটিলতা, এবং আধ্যাত্মিকতা একত্রে মিলিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কাব্যকর্ম শুধু সাহিত্য নয়, বরং অস্তিত্ববাদ, নারীবাদ, খ্রিস্টীয় আধ্যাত্মিকতা এবং মানব-অভিজ্ঞতার অন্তঃস্থ রূপগুলি বিশ্লেষণের এক শক্তিশালী উপকরণ।
মেরি হাউয়ের জন্ম নিউ ইয়র্কে, একটি বড় ক্যাথলিক পরিবারে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন- বিশেষ করে ছোট ভাই জনি হাউয়ের এইডসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু- তাঁর কবিতার অন্যতম অনুপ্রেরণা। তিনি হার্ভার্ড এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন এবং পরবর্তীতে শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিভিন্ন সাহিত্যিক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি নিউ ইয়র্ক স্টেটের “Poet Laureate” হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন (২০১২-২০১৪)।
মেরী হাউয়ের কবিতা পাঠ করলে আমরা দেখি তাঁর ভাষা সরল, কিন্তু তা গভীরভাবে আঘাত করে পাঠকের হৃদয় ও চেতনায়। দৈনন্দিন জীবনের চিত্র, কথোপকথনের ভাষা, পারিবারিক সম্পর্ক, মৃত্যুর বেদনা, এবং ঈশ্বরের সন্ধান- সবকিছু এক মর্মস্পর্শী আন্তরিকতায় মিশে থাকে তাঁর কবিতায়। তাঁর কাব্যদর্শন অনেকটাই অন্তর্মুখী, নিরাভরণ, আত্মশোধনের প্রবণতায় পূর্ণ। বিশেষ করে তাঁর কাব্যগ্রন্থ What the Living Do (১৯৯৭) শোককে, স্মৃতিকে, জীবনের নিঃসঙ্গতা এবং নতুন করে বেঁচে ওঠার সংকল্পকে কবিতায় রূপ দিয়েছে। আমরা হাউয়ের কবিতায় পাই অস্তিত্ববাদী কণ্ঠ। তাঁর কবিতায় আধ্যাত্মিকতা, খ্রিস্টীয় প্রতীক, নারীবাদী স্বর, এবং দার্শনিক অনুসন্ধান একত্রে বিস্তার লাভ করে। মেরি হাউয়ের কবিতার ভাষা স্পষ্ট, সরল, কথ্যভাষার ধারায়- কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত এক প্রতীকচর্চা ও অভ্যন্তরীণ অনুরণন। তিনি “যে কথা বলা যায় না, তাকেও ভাষায় আনা যায়”- এই বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত। তাঁর কবিতায় চিত্রকল্প প্রায় নেই বললেই চলে, অথচ অনুভব তীব্র ও সংবেদনশীল। অ্যান সেক্সটনের Confessional কবিতায় ব্যক্তিগত যন্ত্রণার প্রকাশ আমরা যেমন দেখি, হাউয়ের কবিতায় তার আরও সংযত, মরমী রূপ পাই। শ্যারন ওল্ডসের মতো তিনিও নারীর শরীর, মাতৃত্ব, শোক ও প্রেম নিয়ে লেখেন, তবে হাউ বেশি অন্তর্মুখী, প্রায় আধ্যাত্মিক। মেরি হাউ ক্যাথলিক ধর্মপ্রবণতা ও আধ্যাত্মিক চিন্তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর কবিতায় ঈশ্বরকে প্রায়শই এক অস্পষ্ট, কিন্তু নিরবিচারে উপস্থিত সত্তা হিসেবে পাওয়া যায়। তার প্রার্থনা কবিতাটি তার অন্যতম উদাহরণ। মেরি হাউ এমন এক কবি যিনি দুঃখের গভীরে থেকে আলো খুঁজে পান। তিনি শোককে রূপ দিয়েছেন আত্মশুদ্ধির ভাষায়। নারীর অভিজ্ঞতা, ঈশ্বর ও মানুষের সম্পর্ক, মৃত্যুর ছায়া ও বেঁচে থাকার জেদ- সব একসাথে লিপ্ত হয় তাঁর কবিতায়। আজকের বৈশ্বিক ও ব্যক্তিগত সংকটের যুগে, মেরি হাউয়ের কবিতা আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার জন্য আহ্বান জানায়, শান্ত, স্পষ্ট এবং অকপটে।
তার অন্যতম কাব্যগ্রন্থ হলো: What the Living Do (1997), The Kingdom of Ordinary Time (2008), Magdalene (2017)
What the Living Do কাব্যগ্রন্থটি হাউয়ের ভাই জনির মৃত্যুর পর রচিত হয়। এটি শোক ও বেঁচে থাকার কষ্টের মধ্যেকার সম্পর্ককে কবিতায় রূপান্তর করে। শোক এখানে নিছক বেদনাবোধ নয়, বরং বেঁচে থাকার আত্মদ্বন্দ্ব, স্মৃতি, এবং জীবনের ছোট ছোট ঘটনাগুলির প্রতি এক গভীর মনোযোগ।
The Kingdom of Ordinary Time গ্রন্থে হাউ ধর্মীয় উপমা, দৈনন্দিন বাস্তবতা, এবং আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসার সমন্বয় করেছেন। এখানকার কবিতাগুলো অন্তর্র্বিশ্বের দিকে তাকিয়ে থাকে- কখনো মা হওয়ার অভিজ্ঞতা, কখনো দার্শনিক দ্বিধা।
Magdalene হাউ ইতিহাস ও ধর্মীয়প্রতীক (বিশেষত ম্যাগডালেন) ব্যবহার করে নারীর যৌনতা, দুঃখ, বিশ্বাসঘাতকতা এবং আত্মশুদ্ধিকে কবিতার রূপ দিয়েছেন। এতে নারীবাদী স্বর অত্যন্ত স্পষ্ট- কোনো সাজানো আধ্যাত্মিকতা নয়, বরং নারীর বাস্তব অভিজ্ঞতা।
মেরি হাউয়ের কবিতা যা বেঁচে থাকা মানুষরা করে
জনি,
রান্নাঘরের সিঙ্কটা কয়েকদিন ধরে আটকে আছে,
সম্ভবত কোনো চামচ পড়ে গিয়েছিলো নিচে।
আমি টানছি, ঘষছি, ঘুরিয়ে দেখছি-
তবু কিছুতেই খুলছে না।
এই সকালেই আমি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম,
চুলগুলো উড়ছে জানালার ফাঁকা থেকে,
আমার মুখে কফি ছুঁয়ে যাচ্ছে হালকা হাওয়ায়।
আর আমি জানি তুমি নেই,
তবু আমি দাঁড়িয়ে আছি এই ঘরে,
এই জানালার পাশে,
এবং ভাবছি-
এই তো, এই হলো
বেঁচে থাকা।
ছোট ছোট কাজ,
দুপুরের দিকে ডাকবাক্স খুলে দেখা,
খুব হালকা চিঠি হাতে পেয়ে বুঝি,
ভালোবাসা কী করে নিজের ওজন হারায়।
আমি দাঁড়িয়ে থাকি রাস্তায়,
আমার কাঁধে ব্যাগ,
হাঁটছি জানালার ছায়া মাড়িয়ে,
যেন কিছুই হয়নি,
তবু প্রতিটি পায়ে পায়ে তুমি আছো।
আর আমি শিখছি-
এটাই আমরা যারা বেঁচে আছি তাদের কাজ:
কান্না না পেলে দাঁত মাজা,
ভালোবাসা না পেলে লাল টুকটুকে জামা পরা,
খোলা সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাওয়ার আগে একবার দেখে নেওয়া-
দরজাটা ঠিক মতো বন্ধ করেছি তো?
সাতটি দানব
তারা বলল-
আমার ভেতরে সাতটি দানব বাস করত।
আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি,
ওরা কাদের কথা বলছে।
প্রথমটা-
হয়তো ছিল সেই চোখ,
যে আয়নাতে নিজেকে দেখত
আর মনে করত-
‘তুমি ভালোবাসার যোগ্য নও।’
দ্বিতীয়টা-
যে প্রতিবার ভালোবাসায় ডুব দিত,
তবু ফিরে আসত ভাঙা হাতে,
শূন্য বুক নিয়ে।
তৃতীয়টা-
ভয়-
যা আমাকে মধ্যরাতে জাগিয়ে রাখত,
চুপিচুপি বলত,
‘তুমি যথেষ্ট নও, কখনও ছিলেও না।’
চতুর্থ দানব-
কামনা।
চোখে আগুন,
যা জল চায়, অথচ তৃষ্ণা বাড়িয়ে চলে।
আমি সেই আগুনে বারবার পুড়েছি।
পঞ্চমটি-
লজ্জা।
যা আমার কণ্ঠে পরিয়ে দিয়েছিলো
নির্বাক শেকল।
আমি কথা বলতাম-
কিন্তু ভেতরে ছিল একটা নতস্বরে কাঁপা চিৎকার।
ষষ্ঠ-
স্মৃতি।
যা আমাকে টেনে নিয়ে যেত
সেই বন্ধ দরজা, অন্ধকার ঘরের ভিতর,
যেখানে এক সময়ের আমি পড়ে থাকতাম।
সপ্তম দানব-
নিঃসঙ্গতা।
যা ভবিষ্যতের নাম করে
আমার কানে কেবল আমার নিজের শ্বাস ফেলে যেত,
আর বলত- ‘তুমি একা।’
তারা বলল-
এই সাত দানব নাকি এখন আর নেই।
তারা চলে গেছে।
কিন্তু আমি এখনো শুনি,
আমার ছায়ার ভেতরে ওদের নিঃশব্দ পায়ের শব্দ।
ওরা আমার সঙ্গে হাঁটে।
আমার দেহে ঢেউ তোলে।
তবু প্রতিদিন,
আমি একটু করে আলোয় হেঁটে চলি-
একটু করে।
কারণ আমি জানি-
আলোই শেষ পর্যন্ত আমাকে আমার
নিজের কাছে ফিরিয়ে দেবে।
২০২৫ সালের পুলিৎজারপ্রাপ্ত কবি মেরি হাউ
ভূমিকা ও অনুবাদ : আলী সিদ্দিকী
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
আমেরিকান কবি মেরি হাউ (Marie Howe) এবছর পুলিৎজার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। আধুনিক আমেরিকান কবিতার প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে যিনি ব্যক্তিগত শোক, আত্মিক অন্বেষণ এবং আধ্যাত্মিক সম্ভাবনাকে কবিতার ছন্দে রূপ দিয়েছেন- তিনি মেরি হাউ। তাঁর কবিতা যেমন আত্মা-নির্ভর, তেমনি দৈনন্দিন জীবনের ভেতরে রহস্যের সন্ধান করে। মৃত্যু, বেঁচে থাকা, ভালোবাসা, এবং নারীত্ব- এই চিরন্তন প্রসঙ্গগুলোর গভীর মানবিক পাঠ মেলে তাঁর কাব্যে।
“Poetry holds the knowledge that we are alive”- মেরি হাউয়ের এই গভীর উচ্চারণ তাঁর কাব্যিক দর্শনের কেন্দ্রে রয়েছে। মার্কিন কবিতা জগতের এক অগ্রগণ্য কণ্ঠস্বর মেরি হাউ (জন্ম ১৯৫০), যিনি তাঁর কবিতায় গভীর জীবনবোধ, শোক, প্রেম, দৈনন্দিনের অন্তর্নিহিত জটিলতা, এবং আধ্যাত্মিকতা একত্রে মিলিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কাব্যকর্ম শুধু সাহিত্য নয়, বরং অস্তিত্ববাদ, নারীবাদ, খ্রিস্টীয় আধ্যাত্মিকতা এবং মানব-অভিজ্ঞতার অন্তঃস্থ রূপগুলি বিশ্লেষণের এক শক্তিশালী উপকরণ।
মেরি হাউয়ের জন্ম নিউ ইয়র্কে, একটি বড় ক্যাথলিক পরিবারে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন- বিশেষ করে ছোট ভাই জনি হাউয়ের এইডসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু- তাঁর কবিতার অন্যতম অনুপ্রেরণা। তিনি হার্ভার্ড এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন এবং পরবর্তীতে শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিভিন্ন সাহিত্যিক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি নিউ ইয়র্ক স্টেটের “Poet Laureate” হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন (২০১২-২০১৪)।
মেরী হাউয়ের কবিতা পাঠ করলে আমরা দেখি তাঁর ভাষা সরল, কিন্তু তা গভীরভাবে আঘাত করে পাঠকের হৃদয় ও চেতনায়। দৈনন্দিন জীবনের চিত্র, কথোপকথনের ভাষা, পারিবারিক সম্পর্ক, মৃত্যুর বেদনা, এবং ঈশ্বরের সন্ধান- সবকিছু এক মর্মস্পর্শী আন্তরিকতায় মিশে থাকে তাঁর কবিতায়। তাঁর কাব্যদর্শন অনেকটাই অন্তর্মুখী, নিরাভরণ, আত্মশোধনের প্রবণতায় পূর্ণ। বিশেষ করে তাঁর কাব্যগ্রন্থ What the Living Do (১৯৯৭) শোককে, স্মৃতিকে, জীবনের নিঃসঙ্গতা এবং নতুন করে বেঁচে ওঠার সংকল্পকে কবিতায় রূপ দিয়েছে। আমরা হাউয়ের কবিতায় পাই অস্তিত্ববাদী কণ্ঠ। তাঁর কবিতায় আধ্যাত্মিকতা, খ্রিস্টীয় প্রতীক, নারীবাদী স্বর, এবং দার্শনিক অনুসন্ধান একত্রে বিস্তার লাভ করে। মেরি হাউয়ের কবিতার ভাষা স্পষ্ট, সরল, কথ্যভাষার ধারায়- কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত এক প্রতীকচর্চা ও অভ্যন্তরীণ অনুরণন। তিনি “যে কথা বলা যায় না, তাকেও ভাষায় আনা যায়”- এই বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত। তাঁর কবিতায় চিত্রকল্প প্রায় নেই বললেই চলে, অথচ অনুভব তীব্র ও সংবেদনশীল। অ্যান সেক্সটনের Confessional কবিতায় ব্যক্তিগত যন্ত্রণার প্রকাশ আমরা যেমন দেখি, হাউয়ের কবিতায় তার আরও সংযত, মরমী রূপ পাই। শ্যারন ওল্ডসের মতো তিনিও নারীর শরীর, মাতৃত্ব, শোক ও প্রেম নিয়ে লেখেন, তবে হাউ বেশি অন্তর্মুখী, প্রায় আধ্যাত্মিক। মেরি হাউ ক্যাথলিক ধর্মপ্রবণতা ও আধ্যাত্মিক চিন্তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর কবিতায় ঈশ্বরকে প্রায়শই এক অস্পষ্ট, কিন্তু নিরবিচারে উপস্থিত সত্তা হিসেবে পাওয়া যায়। তার প্রার্থনা কবিতাটি তার অন্যতম উদাহরণ। মেরি হাউ এমন এক কবি যিনি দুঃখের গভীরে থেকে আলো খুঁজে পান। তিনি শোককে রূপ দিয়েছেন আত্মশুদ্ধির ভাষায়। নারীর অভিজ্ঞতা, ঈশ্বর ও মানুষের সম্পর্ক, মৃত্যুর ছায়া ও বেঁচে থাকার জেদ- সব একসাথে লিপ্ত হয় তাঁর কবিতায়। আজকের বৈশ্বিক ও ব্যক্তিগত সংকটের যুগে, মেরি হাউয়ের কবিতা আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার জন্য আহ্বান জানায়, শান্ত, স্পষ্ট এবং অকপটে।
তার অন্যতম কাব্যগ্রন্থ হলো: What the Living Do (1997), The Kingdom of Ordinary Time (2008), Magdalene (2017)
What the Living Do কাব্যগ্রন্থটি হাউয়ের ভাই জনির মৃত্যুর পর রচিত হয়। এটি শোক ও বেঁচে থাকার কষ্টের মধ্যেকার সম্পর্ককে কবিতায় রূপান্তর করে। শোক এখানে নিছক বেদনাবোধ নয়, বরং বেঁচে থাকার আত্মদ্বন্দ্ব, স্মৃতি, এবং জীবনের ছোট ছোট ঘটনাগুলির প্রতি এক গভীর মনোযোগ।
The Kingdom of Ordinary Time গ্রন্থে হাউ ধর্মীয় উপমা, দৈনন্দিন বাস্তবতা, এবং আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসার সমন্বয় করেছেন। এখানকার কবিতাগুলো অন্তর্র্বিশ্বের দিকে তাকিয়ে থাকে- কখনো মা হওয়ার অভিজ্ঞতা, কখনো দার্শনিক দ্বিধা।
Magdalene হাউ ইতিহাস ও ধর্মীয়প্রতীক (বিশেষত ম্যাগডালেন) ব্যবহার করে নারীর যৌনতা, দুঃখ, বিশ্বাসঘাতকতা এবং আত্মশুদ্ধিকে কবিতার রূপ দিয়েছেন। এতে নারীবাদী স্বর অত্যন্ত স্পষ্ট- কোনো সাজানো আধ্যাত্মিকতা নয়, বরং নারীর বাস্তব অভিজ্ঞতা।
মেরি হাউয়ের কবিতা যা বেঁচে থাকা মানুষরা করে
জনি,
রান্নাঘরের সিঙ্কটা কয়েকদিন ধরে আটকে আছে,
সম্ভবত কোনো চামচ পড়ে গিয়েছিলো নিচে।
আমি টানছি, ঘষছি, ঘুরিয়ে দেখছি-
তবু কিছুতেই খুলছে না।
এই সকালেই আমি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম,
চুলগুলো উড়ছে জানালার ফাঁকা থেকে,
আমার মুখে কফি ছুঁয়ে যাচ্ছে হালকা হাওয়ায়।
আর আমি জানি তুমি নেই,
তবু আমি দাঁড়িয়ে আছি এই ঘরে,
এই জানালার পাশে,
এবং ভাবছি-
এই তো, এই হলো
বেঁচে থাকা।
ছোট ছোট কাজ,
দুপুরের দিকে ডাকবাক্স খুলে দেখা,
খুব হালকা চিঠি হাতে পেয়ে বুঝি,
ভালোবাসা কী করে নিজের ওজন হারায়।
আমি দাঁড়িয়ে থাকি রাস্তায়,
আমার কাঁধে ব্যাগ,
হাঁটছি জানালার ছায়া মাড়িয়ে,
যেন কিছুই হয়নি,
তবু প্রতিটি পায়ে পায়ে তুমি আছো।
আর আমি শিখছি-
এটাই আমরা যারা বেঁচে আছি তাদের কাজ:
কান্না না পেলে দাঁত মাজা,
ভালোবাসা না পেলে লাল টুকটুকে জামা পরা,
খোলা সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাওয়ার আগে একবার দেখে নেওয়া-
দরজাটা ঠিক মতো বন্ধ করেছি তো?
সাতটি দানব
তারা বলল-
আমার ভেতরে সাতটি দানব বাস করত।
আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি,
ওরা কাদের কথা বলছে।
প্রথমটা-
হয়তো ছিল সেই চোখ,
যে আয়নাতে নিজেকে দেখত
আর মনে করত-
‘তুমি ভালোবাসার যোগ্য নও।’
দ্বিতীয়টা-
যে প্রতিবার ভালোবাসায় ডুব দিত,
তবু ফিরে আসত ভাঙা হাতে,
শূন্য বুক নিয়ে।
তৃতীয়টা-
ভয়-
যা আমাকে মধ্যরাতে জাগিয়ে রাখত,
চুপিচুপি বলত,
‘তুমি যথেষ্ট নও, কখনও ছিলেও না।’
চতুর্থ দানব-
কামনা।
চোখে আগুন,
যা জল চায়, অথচ তৃষ্ণা বাড়িয়ে চলে।
আমি সেই আগুনে বারবার পুড়েছি।
পঞ্চমটি-
লজ্জা।
যা আমার কণ্ঠে পরিয়ে দিয়েছিলো
নির্বাক শেকল।
আমি কথা বলতাম-
কিন্তু ভেতরে ছিল একটা নতস্বরে কাঁপা চিৎকার।
ষষ্ঠ-
স্মৃতি।
যা আমাকে টেনে নিয়ে যেত
সেই বন্ধ দরজা, অন্ধকার ঘরের ভিতর,
যেখানে এক সময়ের আমি পড়ে থাকতাম।
সপ্তম দানব-
নিঃসঙ্গতা।
যা ভবিষ্যতের নাম করে
আমার কানে কেবল আমার নিজের শ্বাস ফেলে যেত,
আর বলত- ‘তুমি একা।’
তারা বলল-
এই সাত দানব নাকি এখন আর নেই।
তারা চলে গেছে।
কিন্তু আমি এখনো শুনি,
আমার ছায়ার ভেতরে ওদের নিঃশব্দ পায়ের শব্দ।
ওরা আমার সঙ্গে হাঁটে।
আমার দেহে ঢেউ তোলে।
তবু প্রতিদিন,
আমি একটু করে আলোয় হেঁটে চলি-
একটু করে।
কারণ আমি জানি-
আলোই শেষ পর্যন্ত আমাকে আমার
নিজের কাছে ফিরিয়ে দেবে।