alt

সাময়িকী

দুই ঋতপার কিসসা এবং এক ন্যাকা চৈতন্য

গৌতম রায়

: বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন

ন্যাকা চৈতন্যের প্রেমের কথা, তা সে বৈধ হোক বা অবৈধ, খুল্লাম খুল্লা যদি লিখে ফেলি, বাঙালি পাঠক সমাজ কি আমার জাত-কুল-মান- এইসব কিছু হরণ করে এই আমাকে এক্কেবারে নাঙ্গা করে ছাড়বে?

এই প্রশ্ন যদি পাঠক সমাজের কাছে রাখি, তবে দুই সুতপার দলের কেউই নয়, কারণ; বাঙালি সমাজে ঋতপার বা ঋতপাদের কখনো তেমন কোনও প্রভাব শেষ পর্যন্ত এতটুকু কার্যকরী হয় না। কিন্তু ন্যাকা চৈতন্যের?

মরেও মরে না এই ন্যাকা চৈতন্যের রক্তবীজ। শুম্ভ-নিশুম্ভের বেড়া টপকে, পুরুত ঋতপা বনাম বদ্দি ঋতপার ক্যাওড়ামোতে এরা যযাতির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে জেগে থাকে। জেগেই থাকে। আর সেই জেগে থাকার মধ্যে দিয়েই ন্যাকা পিপুপিশুকে নিয়ে কেউ একটা অক্ষরও খরচ করলে, তাকে জানে খতম করবার জন্যে সুযোগ খোঁজে। খুঁজতেই থাকে। আর একবার যদি সেই সুযোগ তাদের হাতের কাছে শেষ পর্যন্ত এসে পড়ে সেই সুকুমার রায়ের ভাষায়; একেবারে প্রপাত চ, মমাত চ, হয়ে যায় আর কি!

পড়ে যেতে কে-ই-বা চায়? পড়তে চাইলেও মরতে তো একজনও স্বেচ্ছায় চাইবে না। তাই ন্যাকা চৈতন্যের প্রেম থেকে যায় গুটিকতকের চুপচাপ, ফিসফাসের মধ্যি। ফিসফাসের বাইরে এসব প্রেমের কিসসা লেখা তো দূরের কথা, বলতেও কেমন ভয় ভয় লাগে। বললে বুঝি ভাত কোন ছাড়, এক্কেবারে ধোপা নাপিত বন্ধ হয়ে যাবে।

বন্ধু, তাও আবার গলায় গলায়, তার বৌয়ের সঙ্গে প্রেম- এটা যদি শ্রীধর বন্দ্যোপাধ্যায় করতে পারে, তবে ন্যাকা চৈতন্য কেন করবে না? তবে লোকজন বলে পরকীয়ার ইনস্পিরেশনটা শ্রীধর নাকি প্রথম পায় ন্যাকা চৈতন্যের কাছ থেকেই। যদিও শ্রীধর নিজের হ্যাটট্রিক করা পরকীয়ার আইডিয়া তার একান্ত নিজস্ব বলেই দাবি করে। এ বিষয়ে ন্যাকা চৈতন্য কোন ছাড়, কাউকে কোনো রকম কৃতিত্ব দিতেই শ্রীধর রাজি নয়।

শ্রীধর রাজি হলেইবা কী, আর না হলেইবা কী যায় আসে?

নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হরিৎকিশোরের ধর্মপতœী বামনাই ঋতপা কিন্তু ন্যাকা চৈতন্যের মনে সেই ভবাণী দত্ত লেনের দিনগুলো থেকেই বেশ দাগ কেটে রেখেছিল। ভবাণী দত্ত লেন বেয়ে মুরলীধর লেনের পাশ দিয়ে রতু সরকার লেনের দিকে যেতে গিয়ে অপালার সঙ্গে প্রেম আর সেই প্রেমের পরিণতিতে বিয়ের পিড়েতে বসে পড়তে হলেও ন্যাকা চৈতন্য কিন্তু হরিৎয়ের বামনাই ঋতপার সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাওয়াটা কখনো কোনও মতেই এক্কেবারে মেনে নেওয়া- এটা ঠিক মতো হয়ে উঠছিল না।

অপালা প্রথম দিনই বিছানার নিভৃত অন্তরালে ন্যাকা চৈতন্যকে ডেকে ফেলেছিল ‘তুলসী’ বলে। অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তীর মুখের সঙ্গে নিজের জীবনসঙ্গীর মুখাবয়বের দারুণ মিল খুঁজে পেয়েছিল অপালা। তাই বিশেষ মুহূর্তে কেমন যেন মন আর শরীরকে আলাদা হয়ে যেতে দেখতে পেতো সে। কিন্তু দেখতে পেলে কী হবে? এত সামাজিক প্রতিপত্তি সম্পন্ন বরের কাছে কি মন খুলে বলতে পারে অপালা, ‘ওগো তোমার মুখ যেন এক্কেবারে তুলসী চক্তোত্তির মোখখানি বসানো!

বৌয়ের কথাতে ন্যাকাচৈতন্য একটু বিরক্তই হয়েছিল। কারণ, তখনও বাঙালি সমাজে অভিনেতা হিসেবে তুলসী চক্রবর্তীর তেমন কদর ছিল না। অভিনেতা মানে অভিনয় জানুক বা না জানুক, লালটুস মার্কা দেখতে হবে, উত্তমকুমার, বসন্ত চৌধুরী বা বিশ্বজিৎয়ের মতো, তবেই সে অভিনেতা। অভিনয় দক্ষতা ঘিরে বাঙালি সমাজের সেদিনের ট্যাবুতেই ন্যাকাচৈতন্যের সেই রাতটা আদৌ ভালো কাটলো না বৌয়ের সঙ্গে।

পরের দিন সকালেই বড়ো ঋতপাকে একখানা লম্বা চিঠি লিখে ফেললো ন্যাকাচৈতন্য। আগের রাতের মানসিক এবং জৈবিক বিরক্তি কথা সরাসরি না লিখেও মনের চাহিদা আর শরীরের চাহিদার কেমন একটা ছায়া সে চিঠিতে এলো। ঋতপার ঠোঁটের উপরের আঁচিল ঘিরে ন্যাকাচৈতন্যের মতো এমন দুঁদে উকিলও সময়কালের দু’একটা কবিতার কোটেশন দিয়ে ফেললো।

ওকালতি করতে ন্যাকা চৈতন্য কিন্তু স্যুটের ধার ধারেন না। ধুতি পাঞ্জাবির উপর কালো কোট পরেন। গলায় দেন নেক টাই। বামুন ঋতপাকে তাই ন্যাকাচৈতন্য চিঠিতে লেখেন;

সুচরিতাষু,

মাটির প্রতিমা তৈরি হয় কাদা মাটি দিয়ে। এঁটেল মাটির প্রতিমা সুন্দর হয়, নাকি দোঁয়াশ মাটির- প্রতিমার রূপ-রস-সৌন্দর্য-উৎপর্ষ- এসব নানা কিছু বিচারের পর তা নির্ধারিত হয়।

কিন্তু ঋতপা, তুমি আমার দেহতন্তুতে যে রসের ধারার প্রবাহ সঞ্চারিত করতে পেরেছ- এটা আগে কেউ পারেনি।

পরের কথা কেউ বলতে পারে না ঋতপা। পরে তোমার বা আমার কখন কী ঘটে যাবে, সেটা কেউই হলফ করে কি বলতে পারে? বলতে পারলেই কি সব বলা হয়ে যায়? না বলা কি কিছুই থাকে না? যদি না বলা কিছু নাইইবা থাকে, তবে রবীন্দ্রনাথ কেন বলেছিলেন; আমার না বাণী?

আচ্ছা, ঘন যামিনীর মাঝে আমাকে তুমি কেমন দেখেছিলে?

তোমার আলুলায়িত কেশ রাশির মাঝে তোমার সেই তন্বী বেশ, না- না না- ঋতপা আজকের মতো তখন তুমি পৃথুলা নও। একান্ত মুহূর্তে বলেছিলাম তোমাকে, হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথের ভাষাতেই, জন্মকালের পোশাকে তোমাকে বলেছিলাম; একদম এমনটাই থাকবে।

মোটাও হবে না। রোগাও না-

আচ্ছা আমার কথা কেন রাখলে না?

আমি তো আমার কথা রেখেছি অক্ষরে অক্ষরে-

কী হলো? আমার কথা রাখার এই স্বীকারোক্তিতে আস্থা রাখতে পারলে না? বিশ্বাস করতে পারলে না? ইতি-

শেষে কোনও নাম নেই। নামছাড়া এই চিঠি, অন্যের হাতে পড়বার আশঙ্কাতেই? আশঙ্কা সব সময়ে যে সত্যে পরিণত হয়, তা নয়। আবার কখনও সখনও চরম সত্যি হয়েই দেখা দেয় এই ‘আশঙ্কা’ নামক বস্তুটি।

তেমন কোনও আশঙ্কা থেকেই কি তার প্রতি ভক্তি গদগদ প্রকাশক অংশুকে সেদিন ডেকে পাঠিয়েছিল সত্যকাম? যাকে আড়ালে আবডালে, আবছা ছায়ায় সকলেই ন্যাকা চৈতন্য বলে, সেই প্রাজ্ঞ পুরুষ, সেই জ্ঞানবৃক্ষের সবথেকে পুরুষ্টু ফল যখন হাসিমারার মালিক অংশুর হাতে একতারা চিঠি দিয়ে বই করতে বললো, প্রকাশক অংশু একটু অবাকই হয়ে পড়েছিল।

সত্যকাম তার স্বভাবসুলভ ফিসফিসে গলায় বলেছিল; এ বই তোমার বেশি বিক্রি হবে না। সেটা জেনেই তোমাকে দিচ্ছি এটা ছাপতে। তবে তোমার থেকে বইটার একশো কপি আমি নিজেই কিনে নেব।

অংশুর এবার ও একটু বেশিই অবাক হওয়ার পালা। এমন ব্যক্তিগত চিঠি কেউ প্রকাশ্যে আনতে পারে? পা-ুলিপিটার দুএকটা পাতা উল্টতে উল্টতে প্রথম এই কথাটাই ওর মনে পড়ল। সত্যদার দু একটা বই আগে করেছে অংশু। সত্যদার অনুরোধেও অন্য একজন, দুজনের বই ও করেছে। আসলে বিক্রি হোক বা না হোক, বাংলা বাজারে সত্যদার অনুরোধ উপেক্ষা করবে- ঘাড়ে এমন মাথা কজনের আছে? সত্যদার অনুরোধ মানেই আদেশ। সত্যদার অনুরোধ না রাখলে বাংলা বাজারে টেকা যাবে না- এটা জেনেও এমন ব্যক্তিগত প্রেমপত্র ছাপতে খানিকটা সঙ্কোচই হচ্ছে অংশুর।

ঠিক আছে স্যার, ফাইলটা নিয়ে যাচ্ছি- অংশুর কথার জের টেনেই সত্যকাম বললো, নিয়ে যাচ্ছি মানে কী? কতদিনে করে উঠতে পারবে বইটা সেটা বলো। ফাইনাল প্রুফটা আমাকে দেখিয়ে নিও।

একথার পর দেখছি, দেখব- এমনটা বলা অংশুর পক্ষে সম্ভব না। অমনটা বললে আজই তাকে বাংলা বাজার থেকে একেবারে পাততাড়ি গোটাতে হবে- সেটা সে বেশ ভালোভাবেই জানে। তাই একটু হেসে বললো, স্যার ম্যাক্সিমাম দেড় মাস। তার মধ্যেই একদম বইটা আপনার হাতে তুলে দেব।

কথাটা শুনে মনে মনে খুশি হলেও সেই খুশিটি অংশুকে বুঝতে দিলো না সত্য। বরঞ্চ একটু আগে তার লিপ কাউন্টিংয়ের মতো আবছা গলায় যে আদেশের আমেজ রেখেছিল, সেটা একটু অদল বদল করে বললো; দেখো, যেন তার থেকে বেশি সময় নিয়ে ফেলো না যেন।

অংশু সেদিন রাত জেগে সত্যকামের দেওয়া পা-ুলিপিটা পড়লো। প্রথমটা পড়তে গিয়ে ওর একটু অস্বস্তিই লাগছিল। এত ব্যক্তিগত চিঠি কেউ অন্যকে পড়তে দিতে পারে? পড়তে না হয় দিলো; তা বলে সেই চিঠি ছাপতে দিতে পারে কেউ? দশজনকে পড়বার সুযোগ করে দিতে পারে? এভাবে ব্যক্তিগতকে পণ্য করা? অংশু ঠিক মেলাতে পারছিল না। কেমন যেন সেল্ফ কনট্রাডিশন মনে হচ্ছিল। অথচ মনে একটা আশঙ্কাও তার ছিল- সত্যকাম ওরফে পাবলিকলি ন্যাকা চৈতন্য নামে খ্যাত বা অখ্যাত লোকটার কোনও কাজ নিয়ে বাইরে প্রশ্ন তোলা তো দূরের কথা, মনের মধ্যে প্রশ্ন তুললেও যদি লোকটা জেনে যায়, তবে পেটের ভাত তো কোন দূর অস্ত, একেবারে ধোপা-নাপিত পর্যন্ত উঠে যাওয়ার জোগার হবে।

একটা চিঠি খুলেছে অংশু। পড়তে গিয়ে কেমন একটা কিন্তু কিন্তু লাগছে- প্রতুল তোমাকে কী এমন দিয়েছে, যার জন্যে এখনও আমার ওই বন্ধুর প্রতি তোমার এত আকর্ষণ? যা প্রতুল তোমাকে দিতে পেরেছে, আমি কি তা পারিনি তোমাকে দিতে? সন্তান? প্রতুল তা তোমাকে দিয়েছে আইনের জোরে। আমি প্রেমের জোরে যদি তোমার কোল ভরাতে চাই, তুমিই তো তা গ্রহণ করবে না। সমাজের কথা বলবে। সময়ের কথা বলবে।

সমাজকে ঘিরে যদি আমার ভয় না থাকে, তবে তোমার এতো ভয় কেন ঋতপা? প্রতুলের সন্তান আর আমার সন্তান পালাক্রমে তোমার জঠরে বিকশিত হয়ে বেড়ে উঠবে তোমারই উঠোনে।

জানো তো, সোনাপদ্মা গাঁয়ে আমাদের সেই বাসা বাড়িতে কী সুন্দর একটা উঠোন ছিল। উঠোনটা ছিল একটা হালকা সিমেন্টের আস্তরণে ঢাকা। মাঝখানে একটা ছোট উঁচু ঢিপি মতো ছিল উঠোনের। তার মধ্যে একটা ছোট্ট পাথর ছিল। মামুলি পাথর। কিন্তু কী অদ্ভুত সুন্দর লাগতো সেই পাথরটাকে তোমাকে কী বলবো।

তোমার কুচযোগের মধ্যের আঁচিল- সেটা আমার সব সময়ে মনে হয়, আমাদের সোনাপদ্মার সেই বাসার উঠোনের ছোট্ট উঁচু ঢিবির উপরে সেই ছোট্ট সাদা অনামী পাথর...

অংশুর বেশ অস্বস্তি লাগছে। বেশি এগোতে পারছে না পা-ুলিপিটা। মেলাতে পারছে না পত্রলেখক আর তার গোটা জীবনের বলা কথাকে। এমনও হতে পারে? সম্ভব এমনটা হওয়া? কোনও কিছুরই তো অভাব নেই মানুষটার। সুখের অভাব নেই। স্বস্তি তার নিত্য সঙ্গী। স্ত্রী-সন্তান সুখ- তাও আছে পুরোমাত্রায়। আর্থিক নিরাপত্তা টইটম্বুর। সামাজিক প্রতিষ্ঠা দিনে দিনেই বাড়বাড়ন্ত হয়েই চলেছে, হয়েই চলেছে। খ্যাতির শীর্ষে লোকটার অবস্থানে টান দেওয়ার মতো ক্ষমতা কারো নেই।

তাহলে? কেন এমন চতুষ্কোণ? একজন সফল পুরুষ, একসঙ্গে তিনটি নারীকে নিজের জীবনে ছেয়ে নিয়ে নি-িদ্র নিরাপত্তায় দিন কাটাচ্ছে। এসব কথা ভাসা ভাসা শুনেছিল বটে অংশু। কিন্তু বিশ্বাস করে নি। ভেবেছিল, সেলিব্রেটিদের সম্পর্কে এমন কতো কিছুই না রটে। বলা ভালো, সত্যদাকে ঘিরে কিছু অন্য রকম ভাবতে মন চায়নি অংশুর। কেন চায় নি?

গসিপ নিয়ে খিল্লি কি কখনও করে না সে? করে তো। চায়ের ঠেক থেকে পানির সা¤্রাজ্য- এসব গসিপই তো মাথা হালকা করে। জীবনের যন্ত্রণাকে একটু সময়ের জন্যে ভুলিয়ে রাখে।

কিন্তু সত্যবাবুকে ঘিরে কিছু নেগেটিভ আলোচনা হলেই নিজেকে গুটিয়ে দেয় অংশু। ওর ভয়, যদি একবার ঋতপার কানে যায় অংশু এসব খিল্লিতে অংশ নিয়েছে, চিরজীবন তাকে পেটে গামছা বেঁধে থাকতে হবে।

পা-ুলিপিটার শেষের দিকটা উল্টোচ্ছে অংশু। বদ্দি ঋতপাকে লেখা চিঠি। একবার পড়েই ফেললো একটা চিঠি। না আর পারছে না এ চিঠি পড়ে নিজেকে ধরে রাখতে অংশু। ঘরের দরজাতে ছিটকিনি দিয়ে হাতকে কাজে লাগাতে বাধ্য হলো প্রকাশক।

ছবি

আমজাদ হোসেনের ‘ভিন্ন ভাষার কবিতা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

অন্যজীবন অন্যআগুন ছোঁয়া

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কবিজীবন, দর্শন ও কাব্যসন্ধান

ছবি

অসামান্য গদ্যশৈলীর রূপকার

ছবি

পিয়াস মজিদের ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’

ছবি

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

ছবি

বাঘাডাঙা গাঁও

ছবি

বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ বিষয়ভাবনা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

পথকবিতা: লোকবাংলার সাধারণ কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

ক্ষমতার ভাষার বিপরীতে মাতৃভাষার সাধনা

ছবি

ফিলিস্তিনের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে অণুগল্প

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

শিল্পী সুনীল কুমারের ‘পথের গল্প’-এর স্বরূপ

ছবি

রাত গভীর

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

‘এ নয় আঁখিজল’

জ্যৈষ্ঠের পদাবলি

ছবি

ওসামা অ্যালোমারের একঝুড়ি খুদে গল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

‘ব্রহ্মপুত্র দাঁড়াও’ কাব্যগ্রন্থে নীলদ্রোহের রেখাপাত

ছবি

নার্গিস-নজরুলের স্মৃতিধন্য দৌলতপুরে একদিন

ছবি

যেভাবে ভেঙেছিল এক মৌনতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি : একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

নজরুল সাহিত্যে নন্দনতত্ত্বের প্রেক্ষিত

ছবি

স্বাধীনতার কবি নজরুল

ছবি

নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত প্রতিভা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

দাউদ হায়দার: স্বকীয় ও নির্বাসিত

ছবি

অটোগ্রাফ

tab

সাময়িকী

দুই ঋতপার কিসসা এবং এক ন্যাকা চৈতন্য

গৌতম রায়

শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

ন্যাকা চৈতন্যের প্রেমের কথা, তা সে বৈধ হোক বা অবৈধ, খুল্লাম খুল্লা যদি লিখে ফেলি, বাঙালি পাঠক সমাজ কি আমার জাত-কুল-মান- এইসব কিছু হরণ করে এই আমাকে এক্কেবারে নাঙ্গা করে ছাড়বে?

এই প্রশ্ন যদি পাঠক সমাজের কাছে রাখি, তবে দুই সুতপার দলের কেউই নয়, কারণ; বাঙালি সমাজে ঋতপার বা ঋতপাদের কখনো তেমন কোনও প্রভাব শেষ পর্যন্ত এতটুকু কার্যকরী হয় না। কিন্তু ন্যাকা চৈতন্যের?

মরেও মরে না এই ন্যাকা চৈতন্যের রক্তবীজ। শুম্ভ-নিশুম্ভের বেড়া টপকে, পুরুত ঋতপা বনাম বদ্দি ঋতপার ক্যাওড়ামোতে এরা যযাতির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে জেগে থাকে। জেগেই থাকে। আর সেই জেগে থাকার মধ্যে দিয়েই ন্যাকা পিপুপিশুকে নিয়ে কেউ একটা অক্ষরও খরচ করলে, তাকে জানে খতম করবার জন্যে সুযোগ খোঁজে। খুঁজতেই থাকে। আর একবার যদি সেই সুযোগ তাদের হাতের কাছে শেষ পর্যন্ত এসে পড়ে সেই সুকুমার রায়ের ভাষায়; একেবারে প্রপাত চ, মমাত চ, হয়ে যায় আর কি!

পড়ে যেতে কে-ই-বা চায়? পড়তে চাইলেও মরতে তো একজনও স্বেচ্ছায় চাইবে না। তাই ন্যাকা চৈতন্যের প্রেম থেকে যায় গুটিকতকের চুপচাপ, ফিসফাসের মধ্যি। ফিসফাসের বাইরে এসব প্রেমের কিসসা লেখা তো দূরের কথা, বলতেও কেমন ভয় ভয় লাগে। বললে বুঝি ভাত কোন ছাড়, এক্কেবারে ধোপা নাপিত বন্ধ হয়ে যাবে।

বন্ধু, তাও আবার গলায় গলায়, তার বৌয়ের সঙ্গে প্রেম- এটা যদি শ্রীধর বন্দ্যোপাধ্যায় করতে পারে, তবে ন্যাকা চৈতন্য কেন করবে না? তবে লোকজন বলে পরকীয়ার ইনস্পিরেশনটা শ্রীধর নাকি প্রথম পায় ন্যাকা চৈতন্যের কাছ থেকেই। যদিও শ্রীধর নিজের হ্যাটট্রিক করা পরকীয়ার আইডিয়া তার একান্ত নিজস্ব বলেই দাবি করে। এ বিষয়ে ন্যাকা চৈতন্য কোন ছাড়, কাউকে কোনো রকম কৃতিত্ব দিতেই শ্রীধর রাজি নয়।

শ্রীধর রাজি হলেইবা কী, আর না হলেইবা কী যায় আসে?

নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হরিৎকিশোরের ধর্মপতœী বামনাই ঋতপা কিন্তু ন্যাকা চৈতন্যের মনে সেই ভবাণী দত্ত লেনের দিনগুলো থেকেই বেশ দাগ কেটে রেখেছিল। ভবাণী দত্ত লেন বেয়ে মুরলীধর লেনের পাশ দিয়ে রতু সরকার লেনের দিকে যেতে গিয়ে অপালার সঙ্গে প্রেম আর সেই প্রেমের পরিণতিতে বিয়ের পিড়েতে বসে পড়তে হলেও ন্যাকা চৈতন্য কিন্তু হরিৎয়ের বামনাই ঋতপার সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাওয়াটা কখনো কোনও মতেই এক্কেবারে মেনে নেওয়া- এটা ঠিক মতো হয়ে উঠছিল না।

অপালা প্রথম দিনই বিছানার নিভৃত অন্তরালে ন্যাকা চৈতন্যকে ডেকে ফেলেছিল ‘তুলসী’ বলে। অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তীর মুখের সঙ্গে নিজের জীবনসঙ্গীর মুখাবয়বের দারুণ মিল খুঁজে পেয়েছিল অপালা। তাই বিশেষ মুহূর্তে কেমন যেন মন আর শরীরকে আলাদা হয়ে যেতে দেখতে পেতো সে। কিন্তু দেখতে পেলে কী হবে? এত সামাজিক প্রতিপত্তি সম্পন্ন বরের কাছে কি মন খুলে বলতে পারে অপালা, ‘ওগো তোমার মুখ যেন এক্কেবারে তুলসী চক্তোত্তির মোখখানি বসানো!

বৌয়ের কথাতে ন্যাকাচৈতন্য একটু বিরক্তই হয়েছিল। কারণ, তখনও বাঙালি সমাজে অভিনেতা হিসেবে তুলসী চক্রবর্তীর তেমন কদর ছিল না। অভিনেতা মানে অভিনয় জানুক বা না জানুক, লালটুস মার্কা দেখতে হবে, উত্তমকুমার, বসন্ত চৌধুরী বা বিশ্বজিৎয়ের মতো, তবেই সে অভিনেতা। অভিনয় দক্ষতা ঘিরে বাঙালি সমাজের সেদিনের ট্যাবুতেই ন্যাকাচৈতন্যের সেই রাতটা আদৌ ভালো কাটলো না বৌয়ের সঙ্গে।

পরের দিন সকালেই বড়ো ঋতপাকে একখানা লম্বা চিঠি লিখে ফেললো ন্যাকাচৈতন্য। আগের রাতের মানসিক এবং জৈবিক বিরক্তি কথা সরাসরি না লিখেও মনের চাহিদা আর শরীরের চাহিদার কেমন একটা ছায়া সে চিঠিতে এলো। ঋতপার ঠোঁটের উপরের আঁচিল ঘিরে ন্যাকাচৈতন্যের মতো এমন দুঁদে উকিলও সময়কালের দু’একটা কবিতার কোটেশন দিয়ে ফেললো।

ওকালতি করতে ন্যাকা চৈতন্য কিন্তু স্যুটের ধার ধারেন না। ধুতি পাঞ্জাবির উপর কালো কোট পরেন। গলায় দেন নেক টাই। বামুন ঋতপাকে তাই ন্যাকাচৈতন্য চিঠিতে লেখেন;

সুচরিতাষু,

মাটির প্রতিমা তৈরি হয় কাদা মাটি দিয়ে। এঁটেল মাটির প্রতিমা সুন্দর হয়, নাকি দোঁয়াশ মাটির- প্রতিমার রূপ-রস-সৌন্দর্য-উৎপর্ষ- এসব নানা কিছু বিচারের পর তা নির্ধারিত হয়।

কিন্তু ঋতপা, তুমি আমার দেহতন্তুতে যে রসের ধারার প্রবাহ সঞ্চারিত করতে পেরেছ- এটা আগে কেউ পারেনি।

পরের কথা কেউ বলতে পারে না ঋতপা। পরে তোমার বা আমার কখন কী ঘটে যাবে, সেটা কেউই হলফ করে কি বলতে পারে? বলতে পারলেই কি সব বলা হয়ে যায়? না বলা কি কিছুই থাকে না? যদি না বলা কিছু নাইইবা থাকে, তবে রবীন্দ্রনাথ কেন বলেছিলেন; আমার না বাণী?

আচ্ছা, ঘন যামিনীর মাঝে আমাকে তুমি কেমন দেখেছিলে?

তোমার আলুলায়িত কেশ রাশির মাঝে তোমার সেই তন্বী বেশ, না- না না- ঋতপা আজকের মতো তখন তুমি পৃথুলা নও। একান্ত মুহূর্তে বলেছিলাম তোমাকে, হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথের ভাষাতেই, জন্মকালের পোশাকে তোমাকে বলেছিলাম; একদম এমনটাই থাকবে।

মোটাও হবে না। রোগাও না-

আচ্ছা আমার কথা কেন রাখলে না?

আমি তো আমার কথা রেখেছি অক্ষরে অক্ষরে-

কী হলো? আমার কথা রাখার এই স্বীকারোক্তিতে আস্থা রাখতে পারলে না? বিশ্বাস করতে পারলে না? ইতি-

শেষে কোনও নাম নেই। নামছাড়া এই চিঠি, অন্যের হাতে পড়বার আশঙ্কাতেই? আশঙ্কা সব সময়ে যে সত্যে পরিণত হয়, তা নয়। আবার কখনও সখনও চরম সত্যি হয়েই দেখা দেয় এই ‘আশঙ্কা’ নামক বস্তুটি।

তেমন কোনও আশঙ্কা থেকেই কি তার প্রতি ভক্তি গদগদ প্রকাশক অংশুকে সেদিন ডেকে পাঠিয়েছিল সত্যকাম? যাকে আড়ালে আবডালে, আবছা ছায়ায় সকলেই ন্যাকা চৈতন্য বলে, সেই প্রাজ্ঞ পুরুষ, সেই জ্ঞানবৃক্ষের সবথেকে পুরুষ্টু ফল যখন হাসিমারার মালিক অংশুর হাতে একতারা চিঠি দিয়ে বই করতে বললো, প্রকাশক অংশু একটু অবাকই হয়ে পড়েছিল।

সত্যকাম তার স্বভাবসুলভ ফিসফিসে গলায় বলেছিল; এ বই তোমার বেশি বিক্রি হবে না। সেটা জেনেই তোমাকে দিচ্ছি এটা ছাপতে। তবে তোমার থেকে বইটার একশো কপি আমি নিজেই কিনে নেব।

অংশুর এবার ও একটু বেশিই অবাক হওয়ার পালা। এমন ব্যক্তিগত চিঠি কেউ প্রকাশ্যে আনতে পারে? পা-ুলিপিটার দুএকটা পাতা উল্টতে উল্টতে প্রথম এই কথাটাই ওর মনে পড়ল। সত্যদার দু একটা বই আগে করেছে অংশু। সত্যদার অনুরোধেও অন্য একজন, দুজনের বই ও করেছে। আসলে বিক্রি হোক বা না হোক, বাংলা বাজারে সত্যদার অনুরোধ উপেক্ষা করবে- ঘাড়ে এমন মাথা কজনের আছে? সত্যদার অনুরোধ মানেই আদেশ। সত্যদার অনুরোধ না রাখলে বাংলা বাজারে টেকা যাবে না- এটা জেনেও এমন ব্যক্তিগত প্রেমপত্র ছাপতে খানিকটা সঙ্কোচই হচ্ছে অংশুর।

ঠিক আছে স্যার, ফাইলটা নিয়ে যাচ্ছি- অংশুর কথার জের টেনেই সত্যকাম বললো, নিয়ে যাচ্ছি মানে কী? কতদিনে করে উঠতে পারবে বইটা সেটা বলো। ফাইনাল প্রুফটা আমাকে দেখিয়ে নিও।

একথার পর দেখছি, দেখব- এমনটা বলা অংশুর পক্ষে সম্ভব না। অমনটা বললে আজই তাকে বাংলা বাজার থেকে একেবারে পাততাড়ি গোটাতে হবে- সেটা সে বেশ ভালোভাবেই জানে। তাই একটু হেসে বললো, স্যার ম্যাক্সিমাম দেড় মাস। তার মধ্যেই একদম বইটা আপনার হাতে তুলে দেব।

কথাটা শুনে মনে মনে খুশি হলেও সেই খুশিটি অংশুকে বুঝতে দিলো না সত্য। বরঞ্চ একটু আগে তার লিপ কাউন্টিংয়ের মতো আবছা গলায় যে আদেশের আমেজ রেখেছিল, সেটা একটু অদল বদল করে বললো; দেখো, যেন তার থেকে বেশি সময় নিয়ে ফেলো না যেন।

অংশু সেদিন রাত জেগে সত্যকামের দেওয়া পা-ুলিপিটা পড়লো। প্রথমটা পড়তে গিয়ে ওর একটু অস্বস্তিই লাগছিল। এত ব্যক্তিগত চিঠি কেউ অন্যকে পড়তে দিতে পারে? পড়তে না হয় দিলো; তা বলে সেই চিঠি ছাপতে দিতে পারে কেউ? দশজনকে পড়বার সুযোগ করে দিতে পারে? এভাবে ব্যক্তিগতকে পণ্য করা? অংশু ঠিক মেলাতে পারছিল না। কেমন যেন সেল্ফ কনট্রাডিশন মনে হচ্ছিল। অথচ মনে একটা আশঙ্কাও তার ছিল- সত্যকাম ওরফে পাবলিকলি ন্যাকা চৈতন্য নামে খ্যাত বা অখ্যাত লোকটার কোনও কাজ নিয়ে বাইরে প্রশ্ন তোলা তো দূরের কথা, মনের মধ্যে প্রশ্ন তুললেও যদি লোকটা জেনে যায়, তবে পেটের ভাত তো কোন দূর অস্ত, একেবারে ধোপা-নাপিত পর্যন্ত উঠে যাওয়ার জোগার হবে।

একটা চিঠি খুলেছে অংশু। পড়তে গিয়ে কেমন একটা কিন্তু কিন্তু লাগছে- প্রতুল তোমাকে কী এমন দিয়েছে, যার জন্যে এখনও আমার ওই বন্ধুর প্রতি তোমার এত আকর্ষণ? যা প্রতুল তোমাকে দিতে পেরেছে, আমি কি তা পারিনি তোমাকে দিতে? সন্তান? প্রতুল তা তোমাকে দিয়েছে আইনের জোরে। আমি প্রেমের জোরে যদি তোমার কোল ভরাতে চাই, তুমিই তো তা গ্রহণ করবে না। সমাজের কথা বলবে। সময়ের কথা বলবে।

সমাজকে ঘিরে যদি আমার ভয় না থাকে, তবে তোমার এতো ভয় কেন ঋতপা? প্রতুলের সন্তান আর আমার সন্তান পালাক্রমে তোমার জঠরে বিকশিত হয়ে বেড়ে উঠবে তোমারই উঠোনে।

জানো তো, সোনাপদ্মা গাঁয়ে আমাদের সেই বাসা বাড়িতে কী সুন্দর একটা উঠোন ছিল। উঠোনটা ছিল একটা হালকা সিমেন্টের আস্তরণে ঢাকা। মাঝখানে একটা ছোট উঁচু ঢিপি মতো ছিল উঠোনের। তার মধ্যে একটা ছোট্ট পাথর ছিল। মামুলি পাথর। কিন্তু কী অদ্ভুত সুন্দর লাগতো সেই পাথরটাকে তোমাকে কী বলবো।

তোমার কুচযোগের মধ্যের আঁচিল- সেটা আমার সব সময়ে মনে হয়, আমাদের সোনাপদ্মার সেই বাসার উঠোনের ছোট্ট উঁচু ঢিবির উপরে সেই ছোট্ট সাদা অনামী পাথর...

অংশুর বেশ অস্বস্তি লাগছে। বেশি এগোতে পারছে না পা-ুলিপিটা। মেলাতে পারছে না পত্রলেখক আর তার গোটা জীবনের বলা কথাকে। এমনও হতে পারে? সম্ভব এমনটা হওয়া? কোনও কিছুরই তো অভাব নেই মানুষটার। সুখের অভাব নেই। স্বস্তি তার নিত্য সঙ্গী। স্ত্রী-সন্তান সুখ- তাও আছে পুরোমাত্রায়। আর্থিক নিরাপত্তা টইটম্বুর। সামাজিক প্রতিষ্ঠা দিনে দিনেই বাড়বাড়ন্ত হয়েই চলেছে, হয়েই চলেছে। খ্যাতির শীর্ষে লোকটার অবস্থানে টান দেওয়ার মতো ক্ষমতা কারো নেই।

তাহলে? কেন এমন চতুষ্কোণ? একজন সফল পুরুষ, একসঙ্গে তিনটি নারীকে নিজের জীবনে ছেয়ে নিয়ে নি-িদ্র নিরাপত্তায় দিন কাটাচ্ছে। এসব কথা ভাসা ভাসা শুনেছিল বটে অংশু। কিন্তু বিশ্বাস করে নি। ভেবেছিল, সেলিব্রেটিদের সম্পর্কে এমন কতো কিছুই না রটে। বলা ভালো, সত্যদাকে ঘিরে কিছু অন্য রকম ভাবতে মন চায়নি অংশুর। কেন চায় নি?

গসিপ নিয়ে খিল্লি কি কখনও করে না সে? করে তো। চায়ের ঠেক থেকে পানির সা¤্রাজ্য- এসব গসিপই তো মাথা হালকা করে। জীবনের যন্ত্রণাকে একটু সময়ের জন্যে ভুলিয়ে রাখে।

কিন্তু সত্যবাবুকে ঘিরে কিছু নেগেটিভ আলোচনা হলেই নিজেকে গুটিয়ে দেয় অংশু। ওর ভয়, যদি একবার ঋতপার কানে যায় অংশু এসব খিল্লিতে অংশ নিয়েছে, চিরজীবন তাকে পেটে গামছা বেঁধে থাকতে হবে।

পা-ুলিপিটার শেষের দিকটা উল্টোচ্ছে অংশু। বদ্দি ঋতপাকে লেখা চিঠি। একবার পড়েই ফেললো একটা চিঠি। না আর পারছে না এ চিঠি পড়ে নিজেকে ধরে রাখতে অংশু। ঘরের দরজাতে ছিটকিনি দিয়ে হাতকে কাজে লাগাতে বাধ্য হলো প্রকাশক।

back to top