ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী-১১
চৌধুরী সালাহউদ্দীন মাহমুদ
(পূর্ব প্রকাশের পর)
গ্রানাদা থেকে ঘণ্টাখানেক উড়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বিমান নেমেছে সাগর ছুঁয়ে সাগর পাড়েই- মেলিইয়া বিমান বন্দরে। সামনে দেখি আদিগন্ত সমুদ্র- তার ঢেউয়ের নৃত্য-সঙ্গীত বারবার আছড়ে পড়ছে আমাদের হৃদয়-মনে। বিমান বন্দরে ঢুকে মনে হলো কোনো আরব দেশে আসলাম- চারিদিকে আরবদের আনাগোনা, শোনা যাচ্ছে আরবিকথাবার্তা। পরে বুঝতে পারলাম কারণ- মেলিইয়া-র তিনদিক জুড়ে আছে মরক্কো, একদিকে ভূমধ্যসাগর, যা একে আলাদা করে রেখেছে মূল স্পেন থেকে। তবে শহরটি মরক্কোর না হয়ে স্পেনের অধিকারে আছে ৫২৭ বছর। সেরকম জিব্রাল্টার-এর উত্তরদিকে স্পেন, বাকি তিন দিকে সাগর। তা স্পেনের না হয়ে বৃটেনের অধিকারে আছে ৩১২ বছর। ভূগোল ও ইতিহাসের এ এক বিচিত্র গতি, তা সব সময় সরল পথে চলে না।
নাবিল ও নাতাশাকে বললাম- ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে মূল উপকূল থেকে ১৩০ কিমি দূরে আমরা আসলাম ইউরোপের স্পেন থেকে আফ্রিকার স্পেনে- মেলিইয়া শহরে। তারা গুগল ম্যাপে এর মাঝেই সব বের করে বলল- শুধু এ শহরটি নয়, একটু দূরে পশ্চিমে এ রকম আরেকটি শহর আছে- সেওতা- জিব্রাল্টার প্রণালীর অপর পাশে, এরও তিন দিকে স্থল- মরক্কো, আরেক দিকে জল- ভূমধ্যসাগর, তবুও তা মরক্কোর মাঝে এক টুকরো স্পেন।
বিমান বন্দর থেকে ৩ কিমি দূরের শহরে টেক্সি করে যেতে বেশি সময় লাগল না। কারো ক্লান্তি নেই, গ্রানাদা থেকে স্বল্প দূরত্বের বিমান ভ্রমণ আর অফুরান উৎসাহ তার কারণ। হোটেলে চেক ইন করে ঘুরতে বের হলাম। মেলিইয়া-তে আমরা একদিন থাকব। তাই যা দেখার তা তাড়াতাড়ি দেখে নিতে হবে। ছোট শহর- মাত্র ১২ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা ১ লাখেরও কম- চাইলে শহরের এক মাথা থেকে অপর মাথায় সব এক বেলার মাঝেই দেখা যায়। তবে আমরা একটু ধীরেসুস্থে ভালোভাবে সব দেখতে চাই।
পাশের এক ক্যাফেতে যেয়ে বসলাম সবাই; উদ্দেশ্য- একটু ¯œ্যাক ও ড্রিংক্স, সাথে আজকের ভ্রমণের প্ল্যান করা। গুগল থেকে নাবিল ও নাতাশা এর মধ্যে জেনে গেছে এখানে কী কী দেখার আছে। নাবিল বলল, প্লাজা দে এসপানা দেখব, এটি এখানকার মডার্নিস্ট আরকিটেকচার এর সেন্টার। নাতাশা বলল, পার্কে এরনান্দেজ এ যাবো, এ অনেক বড়, সুন্দর পার্ক। ফারজানা বলল, কাছাকাছি এক শপিং সেন্টারে ঘুরব, শুধু দেখবো, কিছু কিনবো না (এতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে)। আমি বিনীতভাবে, কিছুটা ভয়ে ভয়ে বললাম, আমরা দেখতে পারি মেলিইয়া লা ভিয়াহা- এটি যেন মেলিইয়া-র আলহাম্বরা। জানি, এ মিউজিয়মে কেউ যাবে না, কারণ, গ্রানাদায় ইতিহাস দেখতে দেখতে সবাই বিরক্ত হয়ে গেছে। বাকি থাকে তিনটি। এর মধ্যে ফারজানা তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিল। সে হয়তো ভাবল, না কিনলে জিনিস দেখে লাভ কী! বাকি থাকে দুইটি।
নাবিল নাতাশার প্রস্তাবিত জায়গা দুটি খুব কাছাকাছি। তাই বললাম, তোমাদের দুটিতেই যাব। এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই, তাই আগে পার্কে যাওয়াটা ভাল হবে। পরে যাব প্লাজায়- রাত যত বাড়বে, ভিড় ততই বাড়বে, তাতে আরো মজা হবে। আর কাল দেখব মেলিইয়া লা ভিয়াহা, সবার পরে যাব শপিং সেন্টারে। সবাই আমার প্রস্তাব সানন্দে মেনে নিল। এটিই হয়তো সেই আলোচিত উইন-উইন সলিউশন।
একটু হাঁটতেই চোখে পড়ল- পাম গাছের অগণন সারি দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে, তার মাঝের রাস্তা রঙিন মোজাইকে করা ঢেউয়ের নকশায় উজ্জ¦ল হয়ে আছে, যেন ভূমধ্যসাগরের ঢেউ পার্কের মেঝেতে আছড়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে এটিই নাতাশার পার্কে এরনান্দেজ। সামনে এগুতেই দেখতে পেলাম এক ল্যাম্পপোস্ট, ওপরে এক ভাস্কর্য, নাম লেখা জেনারেল ভেনানসিও এরনান্দেজ। আর সন্দেহ রইল না যে, এটিই পার্কে এরনান্দেজ। পার্কটি যার স্বপ্ন, পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার ফসল, সেই জেনারেল এরনান্দেজ এর ভাস্কর্যের সামনে সবাই ছ্িব তুললাম। বিশাল পার্ক, ১৪০০০ বর্গফুটের, বিচিত্র রকমের গাছপালা-লতাপাতায় নিবিড় সবুজ, মাঝে মাঝে চাঁদোয়া ঘেরা বসার জায়গা, ফাঁকে ফাঁকে জলাধার, ফোয়ারা, ভাস্কর্য ও মনুমেন্ট- বারবার গ্রানাদার দৃশ্যকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল। এর মাঝে দেখলাম মালিইয়া-র বহু দালানের স্থপতি এনরিকে নায়েতো-র এক সুন্দর ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য। এ রকম আরো অনেকের ভাস্কর্য ও মনুমেন্ট পার্কটিকে শোভিত করে রেখেছে। পার্কের বিশাল নিসর্গে ছড়িয়ে আছে বিচিত্র বর্ণের, বিভিন্ন ভাষার মানুষ। তাদের তেমন শব্দ নেই, তবে মাঝে মাঝে পাখির কলকাকলি আর ওড়াউড়িতে পার্কের চারপাশটা মুখর হয়ে উঠছিল।
হাঁটতে হাঁটতে কখন যে নাবিলের প্লাজা দে এসপানা-য় চলে আসলাম, কেউ বুঝতে পারিনি। এটাকে বলা হয় মেলিইয়া শহরের হৃৎপি-- এর আধুনিকতার কেন্দ্রবিন্দু। এ প্লাজাকে ঘিরে রেখেছে এক বড় গোলচক্কর, যার চারপাশে রয়েছে সারি সারি পাম গাছ, ফাঁকে ফাঁকে সবুজ ঘাস ছাওয়া ফুলের বাগান। সবকিছুকে উজ্জ্বল করে রেখেছে আলোকিত এক ফোয়ারা। ১৪৯৭ সালে মেলিইয়া শহরটি দখল করেছিলেন হুয়ান আলনসো পেরেজ দে গুজম্যান, তার ৫০০ বছরপূর্তিতে এটি বসানো হয়। এর আশেপাশে রয়েছে বিখ্যাত সব দালান ও মনুমেন্ট- টাউন হল, ক্যাসিনো মিলিটার, ব্যাঙ্ক অফ স্পেন, আর ঠিক মাঝখানেই রয়েছে- প্লাজা হিরোজ দে এসপানা- স্পেনের বীরদের স্মরণে নির্মিত পাথরের এক বিশাল মনুমেন্ট। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ মনুমেন্টের চারপাশে বসানো মডার্নিস্ট ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন সব মোজাইকের বেঞ্চ ও ফুলের কেয়ারী, যার স্থপতি হলেন এনরিকে নিয়েতো- তিনি করেছেন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন।
পরদিন ভোরের নরম রোদ আর হিমেল হাওয়ায় হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম সাগরের পাড়ে। এখানে হেঁটে নাবিল ও নাতাশা বেশ আনন্দ পাচ্ছে। কায়ে সান মিগেল থেকে প্লাজা দে লা প্লাদা পর্যন্ত এক সুদৃশ্য হাঁটার পথ। তা ধরে যেতেই দেখলাম অনেকগুলো পুরনো কামান- ভূমধ্যসাগরের দিকে তাক করে রাখা- যা স্মরণ করিয়ে দিল যে মেলিইয়াকে মূলত দুর্গশহর হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল। আরো এগিয়ে পেলাম একটি রাস্তা- কায়ে মিগেল একস্তা- যার পাশ বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে ঝকমকে সুন্দর ব্লু সি- নীল সাগর- যা সত্যিই বিশুদ্ধ নীল রঙের সমাহার।
ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে এখানকার প্রাণকেন্দ্র মেলিইয়া দে ভিয়েহা, যা ভিয়েহা হিসেবে পরিচিত। এটি একটি দুর্গ- প্রাচীন ফিনিশীয় ও রোমান স্থাপনার উপর ১৫ শতাব্দী থেকে এ দুর্গের সম্প্রসারণ শুরু হয়। তবে পুরনো ঘোরানো পেছানো রাস্তাগুলো রয়েছে আগের মতোই- এখন তা হয়ে উঠেছে শহরের বড় আকর্ষণ- তার সাথে রয়েছে শহর প্রাচীর, যা সয়ে গেছে বহু শতাব্দীর আক্রমণ ও ক্ষয়। এ দুর্গের ভেতরে আছে আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ম, মিলিটারি মিউজিয়াম, চার্চ অফ দ্য কনসেপশান, আর অনেক গুহা ও টানেল। হাতে সময় আছে, তাই মিলিটারি মিউজিয়ামে ঢুকে গেলাম। আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নিল এক জোড়া কামান- এল কামিনান্তে ও কালাব্রিনো। বেশি বিখ্যাত হয়ে আছে এল কামিনান্তে- এ কামানটি থেকে ছোড়া হয়েছিল এক গোলা, যেখানে গোলাটি পড়েছিল সেটি হয়ে যায় মেলিইয়া-মরক্কোর সীমান্ত। এটি কোনো কল্প-কাহিনী নয়, এটি এক ইতিহাস- স্পেন ও মরক্কোর মাঝে সংঘটিত যুদ্ধের পর ১৮৫৯ সালে শান্তি চুক্তি হয়, যার অন্যতম শর্ত হিসেবে ১৪ই জুন, ১৮৬২ সালে এল কামিনান্তে কামান থেকে গোলা ছোড়া হয়, যা যেয়ে পড়ে ভিক্টোরিয়া গ্র্যান্ডে দুর্গের ৩ কিমি দূরে, সেটিই স্পেন ও মরক্কোর সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
মেলিইয়া শহরের পুরনো ও নতুন অংশ এখানে দৃশ্যমান। নতুন শহর নির্মাণে মডার্নিস্ট চিন্তা-ভাবনা ছিল মূল প্রেরণা। ততদিনে বার্সেলোনা-য় মডার্নিস্ট স্থাপত্য-বিপ্লব শুরু করেছেন অ্যান্টনি গাউদি- এক অধুনাবাদী স্থপতি ও শিল্পী। তাঁর শিয্য এনরিকে নিয়েতো সে বিপ্লবকে ছড়িয়ে দিয়েছেন মেলিইয়া শহরে- একে করে তুলেছেন আফ্রিকার প্রধান মডার্নিস্ট কেন্দ্র হিসেবে। এ শহরে ৯০০-এর অধিক মডার্নিস্ট ও আর্ট ডেকো স্থাপনা রয়েছে, পুরো স্পেনে এসবে মেলিইয়া-র স্থান বার্সেলোনা-র পরেই। ভৌগোলিকভাবে মেলিইয়া-র অবস্থান আফ্রিকায়, আর স্থাপত্য-সম্ভারে এর অবস্থান ইউরোপে। চোখে ভেসে উঠল আরেকটি শহর- ইস্তান্বুল- যা প্রাচ্য-প্রতীচ্য, এশিয়া-ইউরোপের মেলবন্ধন। সে রকম মেলিইয়াকে বলা যায় আফ্রিকা-ইউরোপের মেলবন্ধন।
কায়ে মিগেল একস্টা এর কাছে আসতে চোখে পড়ল এক ব্যানার- রুটা পর লস টেমপ্লোস, অর্থাৎ উপাসনা-গৃহ সরণি। বাসে করে পর্যটকদের মেলিইয়া-র প্রধান ৪টি ধর্মমতের উপাসনা-গৃহ দেখানের জন্য একটি গাইডেড ট্যুর। ভাবলাম, এতে যোগ দিই, সময় অনেক বাঁচবে, আর গাইডের কাছ থেকে এসবের ইতিহাসও জানা যাবে। সবাই রাজি হওয়াতে টিকিট কেটে উঠে পড়লাম ট্যুর বাসে। প্রথম আসল লা পুরিসিমা কনসেপসিঁও চার্চ- ১৬৫৭ সালে নির্মিত মেলিইয়া-র সবচেয়ে পুরনো চার্চ। গাইডকে অনুসরণ করে সবাই ভেতরে গেলাম। বাইরের দিক থেকে চার্চটি রোমানেস্ক স্থাপত্যরীতির, যার বৈশিষ্ট্য ধনুকাকৃতি খিলান এবং পুরো দেয়াল। আর ভেতরে তা বারোক শিল্প-রীতির, যা বিশদ ও অলঙ্কারবহুল। এরপর আসল ওর জারুয়াহ সিনাগগ- ইহুদীদের উপসনালয়। ১৯২৪ সালে নির্মিত এটি এক মডার্নিস্ট দালান, যার নকশা করেছিলেন এনরিকে নিয়েতো। তিন-তলা ভবনে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা সুসজ্জিত কক্ষ রয়েছে। এর পরে বাস থামল এক হিন্দু মন্দির- টেম্পলো হিন্দু-এর সামনে। ২০০৬ সালে মডার্নিস্ট নকশায় মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে, সে বছরই চালু করা হয় উপাসনা-গৃহ ভ্রমণ- রুটা পর লস টেমপ্লোস। সবশেষে বাস এসে থামল এ ট্যুরের শেষ মাথায়, সামনে এক মসজিদ- মাজকুইটা সেন্ট্রাল দে মেলিইয়া- শহরের প্রধান মসজিদ। নব্য মুরিশ স্থাপত্যের উপর ভিত্তি করে ১৯৫০ সালে নির্মিত মসজিদটির ডিজাইন করেছিলেন সেই একই বিখ্যাত স্থপতি এনরিকে নিয়েতো।
খ্রিস্টান, মুসলিম, ইহুদী ও হিন্দু- এ ৪টি ধর্মমত ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন মেলিইয়া- এর ছাপ দেখা যায় পুরো শহরে- ঘর-বাড়িতে, চলনে-বলনে, আহারে-বিহারে, গান-বাজনায়।
মাজকুইটা সেন্ট্রাল দে মেলিইয়া থেকে মেলিইয়া বন্দর ৩ কিমি দূরে; সবাই বলল হেঁটে যাবে, আমি বললাম, সারাদিন অনেক হাঁটাহাঁটি হয়েছে, এখন একটু আরাম করি টেক্সিতে যাই। ক্লান্তির ভারে সবাই তা মেনে নিল।
ভূমধ্যসাগর বিধৌত মেলিইয়া বন্দর- সূর্য ঢলে পড়তেই বন্দরের শত আলো জ¦লে উঠল। একদিকে পাম গাছের সারির ফাঁকে যাত্রী ওঠানামার জেটি, এখন যাত্রীদের আনাগোনা কিছুটা কমেছে। অন্যদিকের জেটিতে সারি সারি জাহাজ নোঙর করে বিশ্রাম নিচ্ছে। একটু দূরে দেখা যাচ্ছে বিশাল সব গ্যান্ট্রি ক্রেন আর পাশে কনটেইনারের স্তূপ। তারাময় আকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে আলোর ফোয়ারা বইয়ে দিচ্ছে পাশের মেলিইয়া মেরিনা- আলোর সাথে মিশেছে বহু মানুষের আনন্দধারা। জন¯্রােতের ফাঁকে দেখা যাচ্ছে জেটিতে বাঁধা অগণন স্পীড বোট, ইয়ট ও জেট স্কি- অনেকে এইমাত্র শুরু করল সাগরের বুকে তাদের আনন্দ যাত্রা। সাগরের অন্য দিকে ছোট ছোট পাহাড়। দূরে দেখা যাচ্ছে সাগর ভেদ করে উঠে আসা মেলিইয়া লা ভিয়েহা, আর সাগরেই পড়েছে তার প্রতিচ্ছবি, যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে তার অপরূপ বর্ণচ্ছটা। আজ ভোরে দেখা মেলিইয়া লা ভিয়েহাকে এখন মনে হচ্ছে কেমন যেন রহস্যময়, মায়াবী।
এ রহস্যময়, মায়াবী পরিবেশে অনেকক্ষণ কেটে গেল। নাবিল, নাতাশা, ফারজানা- কেউ সমুদ্র পাড় থেকে উঠে যাবার কথা বলছে না। আমি ভাবলাম, কাল ভোরে মালাগা যাবার বিমান ধরতে হবে। তাই সবাইকে সমুদ্রের রহস্য ও মায়া ছেড়ে উঠতে বললাম। (চলবে)
ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী-১১
চৌধুরী সালাহউদ্দীন মাহমুদ
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
(পূর্ব প্রকাশের পর)
গ্রানাদা থেকে ঘণ্টাখানেক উড়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বিমান নেমেছে সাগর ছুঁয়ে সাগর পাড়েই- মেলিইয়া বিমান বন্দরে। সামনে দেখি আদিগন্ত সমুদ্র- তার ঢেউয়ের নৃত্য-সঙ্গীত বারবার আছড়ে পড়ছে আমাদের হৃদয়-মনে। বিমান বন্দরে ঢুকে মনে হলো কোনো আরব দেশে আসলাম- চারিদিকে আরবদের আনাগোনা, শোনা যাচ্ছে আরবিকথাবার্তা। পরে বুঝতে পারলাম কারণ- মেলিইয়া-র তিনদিক জুড়ে আছে মরক্কো, একদিকে ভূমধ্যসাগর, যা একে আলাদা করে রেখেছে মূল স্পেন থেকে। তবে শহরটি মরক্কোর না হয়ে স্পেনের অধিকারে আছে ৫২৭ বছর। সেরকম জিব্রাল্টার-এর উত্তরদিকে স্পেন, বাকি তিন দিকে সাগর। তা স্পেনের না হয়ে বৃটেনের অধিকারে আছে ৩১২ বছর। ভূগোল ও ইতিহাসের এ এক বিচিত্র গতি, তা সব সময় সরল পথে চলে না।
নাবিল ও নাতাশাকে বললাম- ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে মূল উপকূল থেকে ১৩০ কিমি দূরে আমরা আসলাম ইউরোপের স্পেন থেকে আফ্রিকার স্পেনে- মেলিইয়া শহরে। তারা গুগল ম্যাপে এর মাঝেই সব বের করে বলল- শুধু এ শহরটি নয়, একটু দূরে পশ্চিমে এ রকম আরেকটি শহর আছে- সেওতা- জিব্রাল্টার প্রণালীর অপর পাশে, এরও তিন দিকে স্থল- মরক্কো, আরেক দিকে জল- ভূমধ্যসাগর, তবুও তা মরক্কোর মাঝে এক টুকরো স্পেন।
বিমান বন্দর থেকে ৩ কিমি দূরের শহরে টেক্সি করে যেতে বেশি সময় লাগল না। কারো ক্লান্তি নেই, গ্রানাদা থেকে স্বল্প দূরত্বের বিমান ভ্রমণ আর অফুরান উৎসাহ তার কারণ। হোটেলে চেক ইন করে ঘুরতে বের হলাম। মেলিইয়া-তে আমরা একদিন থাকব। তাই যা দেখার তা তাড়াতাড়ি দেখে নিতে হবে। ছোট শহর- মাত্র ১২ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা ১ লাখেরও কম- চাইলে শহরের এক মাথা থেকে অপর মাথায় সব এক বেলার মাঝেই দেখা যায়। তবে আমরা একটু ধীরেসুস্থে ভালোভাবে সব দেখতে চাই।
পাশের এক ক্যাফেতে যেয়ে বসলাম সবাই; উদ্দেশ্য- একটু ¯œ্যাক ও ড্রিংক্স, সাথে আজকের ভ্রমণের প্ল্যান করা। গুগল থেকে নাবিল ও নাতাশা এর মধ্যে জেনে গেছে এখানে কী কী দেখার আছে। নাবিল বলল, প্লাজা দে এসপানা দেখব, এটি এখানকার মডার্নিস্ট আরকিটেকচার এর সেন্টার। নাতাশা বলল, পার্কে এরনান্দেজ এ যাবো, এ অনেক বড়, সুন্দর পার্ক। ফারজানা বলল, কাছাকাছি এক শপিং সেন্টারে ঘুরব, শুধু দেখবো, কিছু কিনবো না (এতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে)। আমি বিনীতভাবে, কিছুটা ভয়ে ভয়ে বললাম, আমরা দেখতে পারি মেলিইয়া লা ভিয়াহা- এটি যেন মেলিইয়া-র আলহাম্বরা। জানি, এ মিউজিয়মে কেউ যাবে না, কারণ, গ্রানাদায় ইতিহাস দেখতে দেখতে সবাই বিরক্ত হয়ে গেছে। বাকি থাকে তিনটি। এর মধ্যে ফারজানা তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিল। সে হয়তো ভাবল, না কিনলে জিনিস দেখে লাভ কী! বাকি থাকে দুইটি।
নাবিল নাতাশার প্রস্তাবিত জায়গা দুটি খুব কাছাকাছি। তাই বললাম, তোমাদের দুটিতেই যাব। এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই, তাই আগে পার্কে যাওয়াটা ভাল হবে। পরে যাব প্লাজায়- রাত যত বাড়বে, ভিড় ততই বাড়বে, তাতে আরো মজা হবে। আর কাল দেখব মেলিইয়া লা ভিয়াহা, সবার পরে যাব শপিং সেন্টারে। সবাই আমার প্রস্তাব সানন্দে মেনে নিল। এটিই হয়তো সেই আলোচিত উইন-উইন সলিউশন।
একটু হাঁটতেই চোখে পড়ল- পাম গাছের অগণন সারি দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে, তার মাঝের রাস্তা রঙিন মোজাইকে করা ঢেউয়ের নকশায় উজ্জ¦ল হয়ে আছে, যেন ভূমধ্যসাগরের ঢেউ পার্কের মেঝেতে আছড়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে এটিই নাতাশার পার্কে এরনান্দেজ। সামনে এগুতেই দেখতে পেলাম এক ল্যাম্পপোস্ট, ওপরে এক ভাস্কর্য, নাম লেখা জেনারেল ভেনানসিও এরনান্দেজ। আর সন্দেহ রইল না যে, এটিই পার্কে এরনান্দেজ। পার্কটি যার স্বপ্ন, পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার ফসল, সেই জেনারেল এরনান্দেজ এর ভাস্কর্যের সামনে সবাই ছ্িব তুললাম। বিশাল পার্ক, ১৪০০০ বর্গফুটের, বিচিত্র রকমের গাছপালা-লতাপাতায় নিবিড় সবুজ, মাঝে মাঝে চাঁদোয়া ঘেরা বসার জায়গা, ফাঁকে ফাঁকে জলাধার, ফোয়ারা, ভাস্কর্য ও মনুমেন্ট- বারবার গ্রানাদার দৃশ্যকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল। এর মাঝে দেখলাম মালিইয়া-র বহু দালানের স্থপতি এনরিকে নায়েতো-র এক সুন্দর ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য। এ রকম আরো অনেকের ভাস্কর্য ও মনুমেন্ট পার্কটিকে শোভিত করে রেখেছে। পার্কের বিশাল নিসর্গে ছড়িয়ে আছে বিচিত্র বর্ণের, বিভিন্ন ভাষার মানুষ। তাদের তেমন শব্দ নেই, তবে মাঝে মাঝে পাখির কলকাকলি আর ওড়াউড়িতে পার্কের চারপাশটা মুখর হয়ে উঠছিল।
হাঁটতে হাঁটতে কখন যে নাবিলের প্লাজা দে এসপানা-য় চলে আসলাম, কেউ বুঝতে পারিনি। এটাকে বলা হয় মেলিইয়া শহরের হৃৎপি-- এর আধুনিকতার কেন্দ্রবিন্দু। এ প্লাজাকে ঘিরে রেখেছে এক বড় গোলচক্কর, যার চারপাশে রয়েছে সারি সারি পাম গাছ, ফাঁকে ফাঁকে সবুজ ঘাস ছাওয়া ফুলের বাগান। সবকিছুকে উজ্জ্বল করে রেখেছে আলোকিত এক ফোয়ারা। ১৪৯৭ সালে মেলিইয়া শহরটি দখল করেছিলেন হুয়ান আলনসো পেরেজ দে গুজম্যান, তার ৫০০ বছরপূর্তিতে এটি বসানো হয়। এর আশেপাশে রয়েছে বিখ্যাত সব দালান ও মনুমেন্ট- টাউন হল, ক্যাসিনো মিলিটার, ব্যাঙ্ক অফ স্পেন, আর ঠিক মাঝখানেই রয়েছে- প্লাজা হিরোজ দে এসপানা- স্পেনের বীরদের স্মরণে নির্মিত পাথরের এক বিশাল মনুমেন্ট। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ মনুমেন্টের চারপাশে বসানো মডার্নিস্ট ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন সব মোজাইকের বেঞ্চ ও ফুলের কেয়ারী, যার স্থপতি হলেন এনরিকে নিয়েতো- তিনি করেছেন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন।
পরদিন ভোরের নরম রোদ আর হিমেল হাওয়ায় হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম সাগরের পাড়ে। এখানে হেঁটে নাবিল ও নাতাশা বেশ আনন্দ পাচ্ছে। কায়ে সান মিগেল থেকে প্লাজা দে লা প্লাদা পর্যন্ত এক সুদৃশ্য হাঁটার পথ। তা ধরে যেতেই দেখলাম অনেকগুলো পুরনো কামান- ভূমধ্যসাগরের দিকে তাক করে রাখা- যা স্মরণ করিয়ে দিল যে মেলিইয়াকে মূলত দুর্গশহর হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল। আরো এগিয়ে পেলাম একটি রাস্তা- কায়ে মিগেল একস্তা- যার পাশ বরাবর প্রবাহিত হচ্ছে ঝকমকে সুন্দর ব্লু সি- নীল সাগর- যা সত্যিই বিশুদ্ধ নীল রঙের সমাহার।
ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে এখানকার প্রাণকেন্দ্র মেলিইয়া দে ভিয়েহা, যা ভিয়েহা হিসেবে পরিচিত। এটি একটি দুর্গ- প্রাচীন ফিনিশীয় ও রোমান স্থাপনার উপর ১৫ শতাব্দী থেকে এ দুর্গের সম্প্রসারণ শুরু হয়। তবে পুরনো ঘোরানো পেছানো রাস্তাগুলো রয়েছে আগের মতোই- এখন তা হয়ে উঠেছে শহরের বড় আকর্ষণ- তার সাথে রয়েছে শহর প্রাচীর, যা সয়ে গেছে বহু শতাব্দীর আক্রমণ ও ক্ষয়। এ দুর্গের ভেতরে আছে আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ম, মিলিটারি মিউজিয়াম, চার্চ অফ দ্য কনসেপশান, আর অনেক গুহা ও টানেল। হাতে সময় আছে, তাই মিলিটারি মিউজিয়ামে ঢুকে গেলাম। আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নিল এক জোড়া কামান- এল কামিনান্তে ও কালাব্রিনো। বেশি বিখ্যাত হয়ে আছে এল কামিনান্তে- এ কামানটি থেকে ছোড়া হয়েছিল এক গোলা, যেখানে গোলাটি পড়েছিল সেটি হয়ে যায় মেলিইয়া-মরক্কোর সীমান্ত। এটি কোনো কল্প-কাহিনী নয়, এটি এক ইতিহাস- স্পেন ও মরক্কোর মাঝে সংঘটিত যুদ্ধের পর ১৮৫৯ সালে শান্তি চুক্তি হয়, যার অন্যতম শর্ত হিসেবে ১৪ই জুন, ১৮৬২ সালে এল কামিনান্তে কামান থেকে গোলা ছোড়া হয়, যা যেয়ে পড়ে ভিক্টোরিয়া গ্র্যান্ডে দুর্গের ৩ কিমি দূরে, সেটিই স্পেন ও মরক্কোর সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
মেলিইয়া শহরের পুরনো ও নতুন অংশ এখানে দৃশ্যমান। নতুন শহর নির্মাণে মডার্নিস্ট চিন্তা-ভাবনা ছিল মূল প্রেরণা। ততদিনে বার্সেলোনা-য় মডার্নিস্ট স্থাপত্য-বিপ্লব শুরু করেছেন অ্যান্টনি গাউদি- এক অধুনাবাদী স্থপতি ও শিল্পী। তাঁর শিয্য এনরিকে নিয়েতো সে বিপ্লবকে ছড়িয়ে দিয়েছেন মেলিইয়া শহরে- একে করে তুলেছেন আফ্রিকার প্রধান মডার্নিস্ট কেন্দ্র হিসেবে। এ শহরে ৯০০-এর অধিক মডার্নিস্ট ও আর্ট ডেকো স্থাপনা রয়েছে, পুরো স্পেনে এসবে মেলিইয়া-র স্থান বার্সেলোনা-র পরেই। ভৌগোলিকভাবে মেলিইয়া-র অবস্থান আফ্রিকায়, আর স্থাপত্য-সম্ভারে এর অবস্থান ইউরোপে। চোখে ভেসে উঠল আরেকটি শহর- ইস্তান্বুল- যা প্রাচ্য-প্রতীচ্য, এশিয়া-ইউরোপের মেলবন্ধন। সে রকম মেলিইয়াকে বলা যায় আফ্রিকা-ইউরোপের মেলবন্ধন।
কায়ে মিগেল একস্টা এর কাছে আসতে চোখে পড়ল এক ব্যানার- রুটা পর লস টেমপ্লোস, অর্থাৎ উপাসনা-গৃহ সরণি। বাসে করে পর্যটকদের মেলিইয়া-র প্রধান ৪টি ধর্মমতের উপাসনা-গৃহ দেখানের জন্য একটি গাইডেড ট্যুর। ভাবলাম, এতে যোগ দিই, সময় অনেক বাঁচবে, আর গাইডের কাছ থেকে এসবের ইতিহাসও জানা যাবে। সবাই রাজি হওয়াতে টিকিট কেটে উঠে পড়লাম ট্যুর বাসে। প্রথম আসল লা পুরিসিমা কনসেপসিঁও চার্চ- ১৬৫৭ সালে নির্মিত মেলিইয়া-র সবচেয়ে পুরনো চার্চ। গাইডকে অনুসরণ করে সবাই ভেতরে গেলাম। বাইরের দিক থেকে চার্চটি রোমানেস্ক স্থাপত্যরীতির, যার বৈশিষ্ট্য ধনুকাকৃতি খিলান এবং পুরো দেয়াল। আর ভেতরে তা বারোক শিল্প-রীতির, যা বিশদ ও অলঙ্কারবহুল। এরপর আসল ওর জারুয়াহ সিনাগগ- ইহুদীদের উপসনালয়। ১৯২৪ সালে নির্মিত এটি এক মডার্নিস্ট দালান, যার নকশা করেছিলেন এনরিকে নিয়েতো। তিন-তলা ভবনে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা সুসজ্জিত কক্ষ রয়েছে। এর পরে বাস থামল এক হিন্দু মন্দির- টেম্পলো হিন্দু-এর সামনে। ২০০৬ সালে মডার্নিস্ট নকশায় মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে, সে বছরই চালু করা হয় উপাসনা-গৃহ ভ্রমণ- রুটা পর লস টেমপ্লোস। সবশেষে বাস এসে থামল এ ট্যুরের শেষ মাথায়, সামনে এক মসজিদ- মাজকুইটা সেন্ট্রাল দে মেলিইয়া- শহরের প্রধান মসজিদ। নব্য মুরিশ স্থাপত্যের উপর ভিত্তি করে ১৯৫০ সালে নির্মিত মসজিদটির ডিজাইন করেছিলেন সেই একই বিখ্যাত স্থপতি এনরিকে নিয়েতো।
খ্রিস্টান, মুসলিম, ইহুদী ও হিন্দু- এ ৪টি ধর্মমত ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন মেলিইয়া- এর ছাপ দেখা যায় পুরো শহরে- ঘর-বাড়িতে, চলনে-বলনে, আহারে-বিহারে, গান-বাজনায়।
মাজকুইটা সেন্ট্রাল দে মেলিইয়া থেকে মেলিইয়া বন্দর ৩ কিমি দূরে; সবাই বলল হেঁটে যাবে, আমি বললাম, সারাদিন অনেক হাঁটাহাঁটি হয়েছে, এখন একটু আরাম করি টেক্সিতে যাই। ক্লান্তির ভারে সবাই তা মেনে নিল।
ভূমধ্যসাগর বিধৌত মেলিইয়া বন্দর- সূর্য ঢলে পড়তেই বন্দরের শত আলো জ¦লে উঠল। একদিকে পাম গাছের সারির ফাঁকে যাত্রী ওঠানামার জেটি, এখন যাত্রীদের আনাগোনা কিছুটা কমেছে। অন্যদিকের জেটিতে সারি সারি জাহাজ নোঙর করে বিশ্রাম নিচ্ছে। একটু দূরে দেখা যাচ্ছে বিশাল সব গ্যান্ট্রি ক্রেন আর পাশে কনটেইনারের স্তূপ। তারাময় আকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে আলোর ফোয়ারা বইয়ে দিচ্ছে পাশের মেলিইয়া মেরিনা- আলোর সাথে মিশেছে বহু মানুষের আনন্দধারা। জন¯্রােতের ফাঁকে দেখা যাচ্ছে জেটিতে বাঁধা অগণন স্পীড বোট, ইয়ট ও জেট স্কি- অনেকে এইমাত্র শুরু করল সাগরের বুকে তাদের আনন্দ যাত্রা। সাগরের অন্য দিকে ছোট ছোট পাহাড়। দূরে দেখা যাচ্ছে সাগর ভেদ করে উঠে আসা মেলিইয়া লা ভিয়েহা, আর সাগরেই পড়েছে তার প্রতিচ্ছবি, যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে তার অপরূপ বর্ণচ্ছটা। আজ ভোরে দেখা মেলিইয়া লা ভিয়েহাকে এখন মনে হচ্ছে কেমন যেন রহস্যময়, মায়াবী।
এ রহস্যময়, মায়াবী পরিবেশে অনেকক্ষণ কেটে গেল। নাবিল, নাতাশা, ফারজানা- কেউ সমুদ্র পাড় থেকে উঠে যাবার কথা বলছে না। আমি ভাবলাম, কাল ভোরে মালাগা যাবার বিমান ধরতে হবে। তাই সবাইকে সমুদ্রের রহস্য ও মায়া ছেড়ে উঠতে বললাম। (চলবে)