নুরুন্নাহার মুন্নি
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা সাহিত্যের এক তীব্র প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর- যার কবিতায় প্রেম, দ্রোহ, সামাজিক-রাজনৈতিক চেতনা ও মানবিক আবেগ গভীরভাবে প্রবাহিত। তারুণ্যশাসিত এই দ্রোহ বিস্তার লাভ করেছে সকল অসাম্য, শোষণ, বৈষম্য আর সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। তিনি ছিলেন একাধারে একজন কবি, গায়ক ও মুক্তচিন্তার মানুষ। আশির দশকের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম কণ্ঠস্বর হিসেবেও তার অবস্থান উজ্জ্বল।
তার অসংখ্য উল্লেখযোগ্য কবিতার মধ্যে “বিপ্লব আমি তোমায় ভালোবাসি” এক অনন্য সৃষ্টি। এই কবিতায় কবির রাজনৈতিক প্রেম ও স্বপ্নদ্রষ্টা মননের প্রতিফলন দেখা যায়। কবি বিপ্লবকে তুলে এনেছেন এক সজীব মানবিক রূপে যেখানে তার অনুভব ভালোবাসার মতো প্রবহমান, অথচ এক বিপ্লবী জাগরণ তার সমস্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত।
“বিপ্লব, আমি তোমায় ভালোবাসি
প্রেমিকার মতো, আগুনের মতো,
চুম্বনের মতো, মৃত্যুর মতো ভালোবাসি।
তোমার নাম যখন উচ্চারণ করি,
তখন আর কোনো কথা থাকেনা বলার।
তোমার চোখের দিকে তাকালে আমি সব ভুলে যাই,
এমনকি নিজের নামও।
তোমাকে ছুঁতে পারলেই আমি মহাজাগতিক আনন্দে কাঁপি।
তোমার বুকে মাথা রাখলেই আমার ঘুম আসে
শিশুর মতো, বিপ্লব।
তোমায় ভালোবাসি আমি
যেন প্রথম প্রেমিকের মতো-
অবচেতন, আবেগপূর্ণ, উন্মাদ।”
এই পঙ্ক্তিগুলোর মাধ্যমে কবি বিপ্লবের সঙ্গে এমন এক আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যা প্রেম, আকাক্সক্ষা ও আত্মনিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশিত। কবি দেখাতে চেয়েছেন ব্যক্তি মানুষের অনুভূতির সঙ্গে বিপ্লবও গভীরভাবে জড়িত। প্রেমের মতো করেই বিপ্লবকেও ধারণ করতে হয়, হৃদয়ে স্থান দিতে হয় গভীর নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের সঙ্গে। কবিতায় রোমান্টিকতা ও রাজনৈতিক আদর্শ মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠেছে।
“তোমার চোখের দিকে তাকালে আমি সব ভুলে যাই, এমনকি নিজের নামও।”
এই এক পঙ্ক্তিতে কবি আত্মবিসর্জনের চূড়ান্ত রূপ দেখিয়েছেন। একজন প্রেমিক যেমন নিজেকে হারিয়ে ফেলেন ভালোবাসার কাছে, ঠিক তেমনই একজন বিপ্লবী নিজেকে বিলিয়ে দেন বৃহত্তর সমাজের স্বার্থে। এই ভালোবাসায় নেই কোনো অহংকার বা প্রাপ্তির দাবি। আছে আত্মদানের নির্মোহ আকাক্সক্ষা।
কবিতায় ব্যবহৃত প্রতীক, ব্যঞ্জনা ও আবেগময় শব্দচয়ন একটি সহজ ভাষায় জটিল রাজনৈতিক অবস্থানকে ব্যক্ত করেছে। যেমন তিনি লিখেছেন:
“তোমাকে ছুঁতে পারলেই আমি মহাজাগতিক আনন্দে কাঁপি।”
এ কাঁপুনি কেবল প্রেমিকের নয়, এটি সেই তরুণেরও, যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজের বুক পেতে দিতে পারে স্বপ্নের জন্য। যে ভালোবাসা এখানে ব্যক্ত হয়েছে, তা কেবল হৃদয়ের নয়, তা এক বিপ্লবের মশাল, ঝড়ের মুখোমুখি দাঁড়ানো সাহস।
“বিপ্লব আমি তোমায় ভালোবাসি” কবিতার শব্দস্রোতে রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ এক নতুন উপলব্ধির দ্বার খুলে দেন। এই কবিতা আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ আজও বিপ্লবের দরকার আছে। আজও ভালোবাসা মানে কেবল আত্মনিবেদন নয়, পরিবর্তনের দায়বদ্ধতা।
এই কবিতা কেবল একটি কাব্যিক উচ্চারণ নয়, এটি একটি জীবনচিন্তা, একটি দায়।একটি প্রেম- যেখানে হাত ধরার আগেই উঠে দাঁড়ায় প্রতিবাদের মুখোমুখি।
নুরুন্নাহার মুন্নি
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা সাহিত্যের এক তীব্র প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর- যার কবিতায় প্রেম, দ্রোহ, সামাজিক-রাজনৈতিক চেতনা ও মানবিক আবেগ গভীরভাবে প্রবাহিত। তারুণ্যশাসিত এই দ্রোহ বিস্তার লাভ করেছে সকল অসাম্য, শোষণ, বৈষম্য আর সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। তিনি ছিলেন একাধারে একজন কবি, গায়ক ও মুক্তচিন্তার মানুষ। আশির দশকের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম কণ্ঠস্বর হিসেবেও তার অবস্থান উজ্জ্বল।
তার অসংখ্য উল্লেখযোগ্য কবিতার মধ্যে “বিপ্লব আমি তোমায় ভালোবাসি” এক অনন্য সৃষ্টি। এই কবিতায় কবির রাজনৈতিক প্রেম ও স্বপ্নদ্রষ্টা মননের প্রতিফলন দেখা যায়। কবি বিপ্লবকে তুলে এনেছেন এক সজীব মানবিক রূপে যেখানে তার অনুভব ভালোবাসার মতো প্রবহমান, অথচ এক বিপ্লবী জাগরণ তার সমস্ত শরীরজুড়ে প্রবাহিত।
“বিপ্লব, আমি তোমায় ভালোবাসি
প্রেমিকার মতো, আগুনের মতো,
চুম্বনের মতো, মৃত্যুর মতো ভালোবাসি।
তোমার নাম যখন উচ্চারণ করি,
তখন আর কোনো কথা থাকেনা বলার।
তোমার চোখের দিকে তাকালে আমি সব ভুলে যাই,
এমনকি নিজের নামও।
তোমাকে ছুঁতে পারলেই আমি মহাজাগতিক আনন্দে কাঁপি।
তোমার বুকে মাথা রাখলেই আমার ঘুম আসে
শিশুর মতো, বিপ্লব।
তোমায় ভালোবাসি আমি
যেন প্রথম প্রেমিকের মতো-
অবচেতন, আবেগপূর্ণ, উন্মাদ।”
এই পঙ্ক্তিগুলোর মাধ্যমে কবি বিপ্লবের সঙ্গে এমন এক আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যা প্রেম, আকাক্সক্ষা ও আত্মনিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশিত। কবি দেখাতে চেয়েছেন ব্যক্তি মানুষের অনুভূতির সঙ্গে বিপ্লবও গভীরভাবে জড়িত। প্রেমের মতো করেই বিপ্লবকেও ধারণ করতে হয়, হৃদয়ে স্থান দিতে হয় গভীর নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের সঙ্গে। কবিতায় রোমান্টিকতা ও রাজনৈতিক আদর্শ মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠেছে।
“তোমার চোখের দিকে তাকালে আমি সব ভুলে যাই, এমনকি নিজের নামও।”
এই এক পঙ্ক্তিতে কবি আত্মবিসর্জনের চূড়ান্ত রূপ দেখিয়েছেন। একজন প্রেমিক যেমন নিজেকে হারিয়ে ফেলেন ভালোবাসার কাছে, ঠিক তেমনই একজন বিপ্লবী নিজেকে বিলিয়ে দেন বৃহত্তর সমাজের স্বার্থে। এই ভালোবাসায় নেই কোনো অহংকার বা প্রাপ্তির দাবি। আছে আত্মদানের নির্মোহ আকাক্সক্ষা।
কবিতায় ব্যবহৃত প্রতীক, ব্যঞ্জনা ও আবেগময় শব্দচয়ন একটি সহজ ভাষায় জটিল রাজনৈতিক অবস্থানকে ব্যক্ত করেছে। যেমন তিনি লিখেছেন:
“তোমাকে ছুঁতে পারলেই আমি মহাজাগতিক আনন্দে কাঁপি।”
এ কাঁপুনি কেবল প্রেমিকের নয়, এটি সেই তরুণেরও, যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজের বুক পেতে দিতে পারে স্বপ্নের জন্য। যে ভালোবাসা এখানে ব্যক্ত হয়েছে, তা কেবল হৃদয়ের নয়, তা এক বিপ্লবের মশাল, ঝড়ের মুখোমুখি দাঁড়ানো সাহস।
“বিপ্লব আমি তোমায় ভালোবাসি” কবিতার শব্দস্রোতে রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ এক নতুন উপলব্ধির দ্বার খুলে দেন। এই কবিতা আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ আজও বিপ্লবের দরকার আছে। আজও ভালোবাসা মানে কেবল আত্মনিবেদন নয়, পরিবর্তনের দায়বদ্ধতা।
এই কবিতা কেবল একটি কাব্যিক উচ্চারণ নয়, এটি একটি জীবনচিন্তা, একটি দায়।একটি প্রেম- যেখানে হাত ধরার আগেই উঠে দাঁড়ায় প্রতিবাদের মুখোমুখি।