alt

সাময়িকী

এ মুখর বরষায়

: বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

মধ্যরাতের ক্ষণস্থায়ী বৃষ্টির প্রতি
নির্মলেন্দু গুণ
আমায় এমন পাগল করে আকাশ থেকে নামলে কেন?

নামলে যখন মধ্যরাতেই চোখের দেখা না ফুরাতেই থামলে কেন?

নামতে তোমায় কে বলেছে? মেঘে মেঘে মেঘ গলেছে অন্ধকারে।

মরা গাছের ডাল কাঁপিয়ে, ভাঙা ঘরের চাল কাঁপিয়ে চুপিসারে-

আমায় তুমি এমন করে বৃষ্টি মধুর মিষ্টি সুরে টানলে কেন?

ভালোবাসার হাত বুলিয়ে, আমায় তুমি পথ ভুলিয়ে আনলে কেন?

অঝোর বৃষ্টির ধারা
বিমল গুহ
বাইরে অঝোর ধারা ঝুম বরিষণ

বাগানের কাঁটাঝোপে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সকালের রোদ

ঘনমেঘ গিলেছে সময় সূর্যালোক, গিলেছে প্রকৃতি;

জানালার কাচে দূরে দেখা যায় মগ্ন-ছায়াপথ

যে-পথে এখনো ওড়ে ঝাঁক-ঝাঁক প্রাগৈতিহাসিক রাজহাঁস

প্রবল বর্ষণে তার শুভ্র পাখা থেকে

ঝরে পড়ে অপসৃত স্মৃতির পালক আমাদের চেনা আঙ্গিনায়?

তুমি কি এখনো হাঁটো ছায়াঘন পল্লবের নিমগ্ন আড়ালে

ঝুম বরিষণে নিত্যদিন?

দেখো ওই ধারাজলে মুছে গেছে তোমার পায়ের কারুকাজ।

কান পেতে শোনো দূরে মেঘের মন্দিরা

দিনভর বৃষ্টি হবে আরও;

এ বৃষ্টি মাথায় করে কী করে এখনো হাঁটো নিমগ্ন ছায়ায়?

তোমরা কি জানো- অঝোর বৃষ্টির ধারা পালাক্রমে

মানুষের ছায়ালিপি লেখে

লিখে রাখে কালচিহ্ন আকাশের বিস্তীর্ণ পাতায়?

হায় বরষা!
হাসান হাফিজ
ঝরো ঝরো বৃষ্টি নয়

বিরহের না-পাওয়ার সূক্ষ্ম মিহি ব্যথা

টুপটাপ ঝরে

আষাঢ়ে কান্দন শুনি

লৌহজং নদীটির গোপন বেদনাধ্বনি

অনুভবে ছলকায়,

বৃষ্টিছাঁট দূরের এলানো চুল

খোঁপা ঘ্রাণ সম্মোহিত করে

সন্তরণ জেনেও তো হায়

অসম প্রেমের হাবুডুবু

শ্রাবণ আগুন জ্বেলে

দ্রুত মূর্ছা যায়

জেগে উঠবে? সম্ভাবনা নাই,

রুদ্ধ সব দরোজা, উপায়...

তুমি কেন এমতো বরষায় মেঘের দেয়াল তুলেছো
আবদুর রাজ্জাক
কখনো চাঁদ, কখনো কবিতা, কখনো একভাবে জেগে থাকে আকাশ,

পাশাপাশি তুমিও জেগে থাকো অপরূপ হাস্য বেদনায়।

অফুরন্ত শৈশব, তুমি কেনো সেসবে দেয়াল তুলেছো!

নারকেল পাতার চিরল বাতাস, প্রহরে প্রহরে পাখি হয়ে উড়ি তোমার

ধানখেতে, সারাদিন উড়ি চিল ও শকুন সম।

অবশেষে দলছুট না-হয়ে তোমার ভাঙা কুটিরেই থেকে যাই।

আমার প্রতিটি চাওয়া তোমার অদম্য আত্মার,

তুমি আমার ভেতরে একটি ভাস্কর্য মুখ।

তোমার বৈধ অবৈধ সকল ঐশ্বর্য আমাকে দিয়ে তুমি-

প্রাণযোগিনী কোনো সন্ধ্যার দাগ।

তোমার চোখের পাতায় আমার উষ্ণ ঠোঁট, প্রশ্রয় পেয়ে

কী যে করেছি সেদিন!

নিঃশব্দ আগুনের ফোয়ারা- তুমুল বরষা, এখনো ফোটেনি

শাপলা কিম্বা কদম কেয়া, আমি তবুও সীমানা লঙ্ঘন করিনি

তোমার অপূর্ব গুঞ্জন রেখার।

প্রস্তুতি নিচ্ছে শরৎ
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে-

আমাদের বর্ষাকাল,

জলরঙে ভাসছে ভূগোলের পাতাপৃষ্ঠা

শ্রাবণের ডালে ডালে

প্রাক্তন মেঘজল নামান্তরিত পানিপথে।

বর্ষার ভাষায় লেখা হচ্ছে গান

‘শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম’

আজ বৃষ্টি দিবস

আজ চায়ের গরম ধোঁয়া থেকে

ছড়াচ্ছে বৃষ্টির ঘ্রাণ।

প্রস্তুতি নিচ্ছে শরৎ

এ ঝুম-বর্ষায়
মাসুদ খান
মনটা মন্থর ছিল যে সারাদিন

তোমার কথা ভেবে, দূর থেকে।

কথিত, অকথিত কথার শিখাগুলি

লতিয়ে ওঠে মনে এঁকেবেঁকে।

লুপ্ত কথা যত গুপ্তচর্চায়

আসছে ফিরে ফিরে, আসবেই।

পুনর্জন্মের চক্র থেকে কথা

মুক্তি পাবে না যে কিছুতেই।

কথার উষ্ণতা, কথার আলোড়ন,

আগুন ও মধুমাখা কথকতা...

কথাই শেষ নয়, কথারও শেষে থাকে

মেদুর, বিধুর এক নীরবতা।

তোমার নীরবতা নিলাম তুলে হৃদে

এবং উত্তাপটুকু শিরে।

এ ঝুম-বর্ষায় নিঝুম অবসরে

ডিকোড করে নেব ধীরে ধীরে।

একদিন বৃষ্টিদিন
রাজা হাসান
বৃষ্টির ছাঁট পরস্পরকে কাছাকাছি নিয়ে এলো।

মনখারাপ, ভুল বোঝাবুঝি মুহুর্মুহু দূরে সরে যেতে লাগল।

কেয়াঝোপ থেকে ঝেঁপে এলো বাতাস। সুবাস সুবাস।

এবার তবে,

বর্ষাতি উড়িয়ে দেয়া যাক মেঘের তল্লাটে।

এই যে তুমুল বৃষ্টি আচ্ছন্নতা

ঢেকে দিক,

পরস্পর শারীরিক ঘনিষ্ঠতা।

নখে ফোটাও বর্ষা
শিহাব শাহরিয়ার
এভাবে আর কাছে এসো না

তাকিয়ে দেখো পিছে

দাঁড়িয়ে আছে পা

ও ভাঙা বিকেল

শ্বাস নাও অথবা ছাড়ো

তবেই টুকরো কাঁচগুলো

পড়বে চোখ ও ফ্রেম থেকে

মূলতঃ চশমার নিচেই তুমি সুন্দর

সাদা বর্ষা ও বৃষ্টিফুলের মতো

মনে করেছ

ব্যালকনি বা বারান্দা

তোমার নখে ফোটাবে

সাদা বর্ষা

অথচ

শব্দগুলো ভেঙে দিয়েছে

তোমার অতীত এবং হাতের শিহরন

শত্রুকে তাড়াতে হলে

রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ লাগে বালিকা?

ধুয়ে যাবে না এক বরষায়
আব্দুল্লাহ জামিল
এমনই শ্রাবণ দিনে জন্মেছিলাম আমি

চিরবিদায় নিয়েছিলেন রবি ঠাকুর

তাই অবিরাম শ্রাবণ-ধারা অন্তরে।

সেদিন এমনই এক শ্রাবণ দিনে

আকাশ থেকে ঝরেছিলো প্রাণ সংহারী বৃষ্টি

মাটিতে ঝরেছিলো তাজা রক্ত-রঙ।

এতো যে রক্ত, এতো আত্মাহুতি

এতো যে গ্লানি, এতো সব কলঙ্ক

ধুয়ে তো যাবে না এক বরষায়।

ফল মৌসুমের কবিতা
মুজিব ইরম
আমারে রাখিছে মনে আমের বাগান

তুমিও রাখিও...

বৃষ্টি নামে হাঁড়িভাঙা আমের বাগানে

আ¤্রপালি, ফজলি বাগানে...

গুঁটিগুলো ভিজে ওঠে জলের জৌলুসে...

লিচু গাছে রং লাগিয়াছে

বারি-চারে ধরিয়াছে ঘোর

কাটিমন গাছে

ল্যাংড়া আমের দেহে

গৌড়মতি আশ্বিনা বাগানে ধরিয়াছে সুর...

লখনা বাগানে

কাটিনা আমের ডালে রোদ উঠিয়াছে...

হিমসাগরের দেহ পুরুষ্ট হয়েছে

লাগিয়াছে রোদ গোপালভোগ আমের শরীরে...

মধুমাস চলে যায়

মধুমেঘ জমে ওঠে আকাশে আকাশে...

বর্ষা নামে আমের বাগানে

বর্ষা নামে ভয়াবহ জখমি হৃদয়ে, ঘরছুট মনে।

শেষ বৃষ্টির গান
জুনান নাশিত
বলেছিলাম,

পিথাগোরাসের রহস্য ঢাকা সন্ধ্যায়

তোমাকে শোনাব শেষ বৃষ্টির গান

আজ সেই বৃষ্টির দিন

আজ নীরবতার গন্ধ ছড়ানোর রাত

শুরু হোক তবে

ডুবে যাই অনিদ্রার আলিঙ্গনে

আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে ঘষি পাথরে পাথর

আগুন উঠুক জ্বলে

ধসে যাক মূর্তিমান বেদনার বাঁধ

হাওয়ার আদল নিক স্মৃতির কঙ্কাল।

একদিন দুঃখ অথবা মৃত্যুর তারাখসা ভোরে

কিংবা শেষ চুম্বনের কালে

বিজয়ী ভস্ম এসে বলে,

শেষ বৃষ্টির রাতে জীবন উৎসর্গ করেছো তুমি

প্রেমে অথবা সমর্পণে

আমি কি তবে বেঁচে আছি?

নাকি ভেসে যাই

জলবিন্দুহীন ডানার ধু ধু আর্তনাদে?

তিন যুগ পর
মিলটন রহমান
বহু বছর পর বৃষ্টি হলো-

প্রায় তিন যুগ পর

সেই বৃষ্টিতে ভেজা কলেজের গেটে এখনো

মায়াদৃষ্টি মার্বেল পাথরে খোদাই হয়ে আছে

চোখ থেকে এতটুকু খসে পড়েনি মোহ

এত যুগ পর নেমে আসা বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে

চোখের তীব্রতা আরো গাঢ় হয়েছে,

প্রায় ক্লান্ত কিন্তু নিষ্পলক চোখে বললে

এতো দেরি করে এলে কেন?

মানবজন্মে সময় ক্ষয়ে যাবে এটাই নিয়ম,

তারপরও অতৃপ্তির দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অপেক্ষারত

মানুষের ক্ষয়ে না যাওয়া অত্যাশ্চর্য ঘটনা!

যাত্রা শুরু করে মানুষ কিসের লোভে যেন

পাহাড়ে উঠতে উঠতে, একসময় পাঁজরে ঘাঁই দিয়ে

মনে হয় কি যেনো ফেলে এসেছে বহু দূরে,

ছেঁড়া মেঘের ফাঁক গলে কোথায় যেনো আলো উঁকি দেয়

স্মৃতিভ্রমে শত সহ¯্র ঘটনা সাদা পৃষ্ঠা হয়ে গেলেও

কোনো একটা স্বর্ণকাঠি অর্ধেক আলো অর্ধেক ছায়ায়

উদাস দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে অনন্তের দিকে

যদি আবার বৃষ্টি হয়, যদি আবার তার দেখা পাই!

প্রায় তিন যুগ পর সেই বৃষ্টি এলো, বলে গেলো

কেমন আছিস বন্ধু? কোথায় ছিলি এতোদিন!

আমি তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে, জং ধরা শরীর থেকে

মুছে ফেলেছি কালের চিহ্ন,

সময় কেটে বানিয়েছি শখের জামা

বন্ধু তোর জন্য, কেবল তোর জন্য।

কোথায় ছিলি, কেমন ছিলি এতো দিন?

বৃষ্টির টেনিস বল
হেনরী স্বপন
টেইলারিং মেশিনের ঘর্ঘর শব্দগুলো

ক্রিস্টাল কাচের ফুটো দিয়ে

টিনের চালে লাফাচ্ছে

বৃষ্টির টেনিস বল;

গলা তুলে ডাহুকের মতো

তর্কের ভাইব্রেশন হচ্ছে আষাঢ়ে মেষের গর্জন,

আগুনমুখার ব্যাকুল দুপাড়

নিম্নচাপের রাগে-

উঠছে মেতে- ‘উন্মাদের পাঠক্রম’

হেঁটে হেঁটে পার হচ্ছি;

আমতলা মোড়ের সড়ক বাহারি

পাতাবাহারের ট্রাফিক জ্যাম।

সুখ-নিশি
আফরোজা সোমা
আকন্দ ফুলের দেশে মায়া পাতা আছে

রোদ এসে পাশ ফিরে শোয় ধানক্ষেতে

উঠানে চুকাই গাছ লাল তার ফল

নয়নে নীরদ জমা নামবে বাদল।

লাউয়ের ডগা বেয়ে উঠে যায় চালে

আমের গাছের নিচে তিলাঘুঘু হাঁটে

দুপুর ঘনিয়ে এলো চাড়ি আছে খালি

গরুদের দানাপানি দিতে হবে ভেবে

বিমনা সে হেঁটে যায়, আবিষ্ট দুপুরে।

দিন যায়, মাস যায়, ফুরায় বছর

প্রবাসীর কথা ভেবে হৃদয় কাতর

দারুণ আষাঢ় মাসে তনু উচাটন

ধারা তুমি জোরে নামো সারাও বেদন,

কল্প-নিশি-সুখে আজ দুপুর হাসুক।

উড়ো মেঘে অধ্যাপিকা
এমরান কবির
নিবিড় পাতার দিকে তীক্ষè চোখে তাকিয়েছিলেন অধ্যাপিকা। যমজ পাহাড়ে চেয়ে, তার কোমলতায় তাকিয়ে বলেছিলেন তিনি- এর গিরিখাতে আছে নদীবাহিত ¯্রােতের খনি।

আপনার সম্মানেও বৈশাখের উড়ো মেঘ পাহাড়ে পাহাড়ে ফিরে আসে গীতিময় ছন্দে। আর আমি গিরিখাতে চেয়ে চেয়ে থাকি। কবে আসবেন তিনি, সেই মনোমুগ্ধকর খুনি, দেখা হবে পাহাড় ও নদীর মোকাম!

ও মা! দেখি, অধ্যাপিকা আসছেন গিরিখাত কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে, ব্লাউজে লাগিয়ে বোতাম

পহেলা শ্রাবণ
চামেলী বসু
অহর্নিশ জেগে থাকো চৌরাসিয়া

রীতিসিদ্ধ মূর্ছনায়

প্রখর দিন- ফালি ফালি রাত- বিপন্ন জোছনা-

উষার প্লাবনে ডুবে যাক!

রূপকাথার ছেঁড়া পাতায় ম্লান বৃষ্টি-মেঘ মন্দ্রি,

তামাক প্রহর- নামানুষের ভিড়- অথবা নীলচে ধোঁয়া-

তুমিও দিতে পারো বিষাঞ্জলি!

যযাতি যৌবন আর অবাধ্য মন,

স্বাদহীন রোজকার হাঁসফাঁস বাঁচা...

পহেলা শ্রাবণে

যে হৃদয় ভেঙ্গে যায় চৌরাসিয়া,

দুর্বিষহ! বড় দুর্বিষহ! তোমার সে বাঁশির

অকারণ অঝর ধারা...

ঘোর বর্ষা
তাহিতি ফারজানা
এই রাত ঘন হয়ে আসে একাকী

শরীর থেকে স্মৃতিভার খুলে রাখি।

ঘোর বর্ষণে মুঠো খুলি আলগোছে

কিছু বিরহ ছুটি চায়, রঙ মাখে-

যে রঙের উৎস প্রেম, স্বয়ং ঈশ্বর,

শুকনো গোলাপের লুকানো ঘ্রাণ

বর্ষা দুয়ারে এসে জানান দেয়

ঝরে যাওয়াও মহা পরিত্রাণ।

কিছু রাত এতো মিহি, লীন হয়ে যায়

অন্ধকারের আত্মা জেগে থাকে

তুমিহীনতাকে ঈশ্বর ভাবি,

মোহমায়া ভেঙে পড়ে বর্ষার ডাকে।

উড়াল
অনুপমা অপরাজিতা
শ্রাবণের আমন্ত্রণে ঠায় দাঁড়িয়ে

একটি কদম্ব হাত

অথবা

চাঁদের আলোর স্নিগ্ধতার গল্প

মধ্যদুপুরে শুরু হয়

জ্বরের প্রলাপে জলপট্টির মুহূর্ত

সময়ের চামড়া ঢেকে দেয় উড়াল

প্রয়োজনটুকু ছাড়া বাকি সব কুয়াশা

রোদ ফুরোলেই মিলিয়ে যায়

দীর্ঘ ছায়াটাও

ছোট হয়ে যায় মধ্যাহ্ন

ছোট হয়ে যায় লাবণ্য

রঙের আড়ালটুকু স্পর্শ করবার

থাকে না মুষ্টিবদ্ধ করতল!!

পাণ্ডুলিপি
ডালিয়া চৌধুরী
ছিলো শূন্যতার মতো অসুখ,

আলোর ভাঁজে কালো অক্ষরে

ঝড়ের বিজ্ঞপ্তি পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে।

জল জমে যাওয়া আকাশে

বর্ষার পা-ুলিপি খোলে,

নদীটা ছিলো উড়ন্ত উচ্ছ্বাসে।

রঙহীন বিকেলের রোমন্থনে

দিগন্তঘেঁষা কৃষ্ণচূড়া রোদে

পাখিরা জড়ো হয়েছিলো

ডানার ভারে

উড়তে না পারার অভিমানে।

গন্তব্য ছুঁতে অগোছালো হেঁটে

ঘাসগুল্মের বনের ধারে,

বিগত কুয়াশার পর্দা তুলে মঞ্চস্থ

করেছিলো অবগুণ্ঠিত দুঃখটারে।

বর্ষার ক্লেশ
তানজীনা ফেরদৌস
এবারের বর্ষা বাতাসের মিহি ছোঁয়া দিয়ে রচনা করেছে কারাগার।

যার কোনো দৃশ্য নেই, প্রহরী তো থাকার-ই কথা নয়।

মাথার দিব্যি দেওয়া মানুষটি আজ অচেনা স্টেশনে নেমে পড়েছে ট্রেন থেকে।

বর্ষার সাথে ভাঙা স্বপ্নের চরিত্রদের রোজনামচা শোনায়।

তারপর বৃষ্টি আমায় ভুলিয়ে দেয় অপঘাত।

তাঁকে ছুঁতে গিয়ে আবারও ছুঁয়ে ফেলি অসমতা...

দ্বিধাগ্রস্ত হাতে পান করি বেপরোয়া ভোর, আর কাক্সিক্ষত নিশির চপল সময়।

এই বৃষ্টি যেন বশীভূত নামতা পড়া ঘোর, যার আগমনে উল্টো ত্রিভুজে আটকা পড়ে ভূত ভবিষ্যতের দু-পা।

এ যুগে ছাতাগুলো সব মায়াহরিণ।

বারবার বৃষ্টি চেয়ে শ্রাবণ আকাশের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়, আকাশ আমাকে রোদ দিয়ে ছলনা করে।

আমি অভিমানে ঘরে ফিরতে চাইলে, সংকল্পবদ্ধ রোদ আর নির্বোধ ভারী বর্ষণ আকাশ ছিঁড়ে নামে।

কিন্তু ছাতার দেখা আর মেলে না।

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

মননশস্যের অমৃত মন্থন

ছবি

অনুবাদ ও ভূমিকা : আলী সিদ্দিকী

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বড়শি

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

ছবি

রক্তে লেখা প্রেম: রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিপ্লব

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

শঙ্খজীবন: যাপিত জীবনের অন্তর্গূঢ় প্রতিকথা

ছবি

ওসামা অ্যালোমার এক ঝুড়ি খুদে গল্প

ছবি

প্রযুক্তির আলোয় বিশ্বব্যাপী বইবাণিজ্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

কাফকার কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

সূর্যের দেশ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

লড়াই

সাময়িকী কবিতা

ছবি

প্রচলিত সাহিত্যধারার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন মধুসূদন

ছবি

মেধাসম্পদের ছন্দে মাতুন

ছবি

উত্তর-মানবতাবাদ ও শিল্প-সাহিত্যে তার প্রভাব

ছবি

আমজাদ হোসেনের ‘ভিন্ন ভাষার কবিতা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

দুই ঋতপার কিসসা এবং এক ন্যাকা চৈতন্য

ছবি

অন্যজীবন অন্যআগুন ছোঁয়া

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কবিজীবন, দর্শন ও কাব্যসন্ধান

ছবি

অসামান্য গদ্যশৈলীর রূপকার

ছবি

পিয়াস মজিদের ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’

ছবি

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

ছবি

বাঘাডাঙা গাঁও

ছবি

বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ বিষয়ভাবনা

সাময়িকী কবিতা

tab

সাময়িকী

এ মুখর বরষায়

বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

মধ্যরাতের ক্ষণস্থায়ী বৃষ্টির প্রতি
নির্মলেন্দু গুণ
আমায় এমন পাগল করে আকাশ থেকে নামলে কেন?

নামলে যখন মধ্যরাতেই চোখের দেখা না ফুরাতেই থামলে কেন?

নামতে তোমায় কে বলেছে? মেঘে মেঘে মেঘ গলেছে অন্ধকারে।

মরা গাছের ডাল কাঁপিয়ে, ভাঙা ঘরের চাল কাঁপিয়ে চুপিসারে-

আমায় তুমি এমন করে বৃষ্টি মধুর মিষ্টি সুরে টানলে কেন?

ভালোবাসার হাত বুলিয়ে, আমায় তুমি পথ ভুলিয়ে আনলে কেন?

অঝোর বৃষ্টির ধারা
বিমল গুহ
বাইরে অঝোর ধারা ঝুম বরিষণ

বাগানের কাঁটাঝোপে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সকালের রোদ

ঘনমেঘ গিলেছে সময় সূর্যালোক, গিলেছে প্রকৃতি;

জানালার কাচে দূরে দেখা যায় মগ্ন-ছায়াপথ

যে-পথে এখনো ওড়ে ঝাঁক-ঝাঁক প্রাগৈতিহাসিক রাজহাঁস

প্রবল বর্ষণে তার শুভ্র পাখা থেকে

ঝরে পড়ে অপসৃত স্মৃতির পালক আমাদের চেনা আঙ্গিনায়?

তুমি কি এখনো হাঁটো ছায়াঘন পল্লবের নিমগ্ন আড়ালে

ঝুম বরিষণে নিত্যদিন?

দেখো ওই ধারাজলে মুছে গেছে তোমার পায়ের কারুকাজ।

কান পেতে শোনো দূরে মেঘের মন্দিরা

দিনভর বৃষ্টি হবে আরও;

এ বৃষ্টি মাথায় করে কী করে এখনো হাঁটো নিমগ্ন ছায়ায়?

তোমরা কি জানো- অঝোর বৃষ্টির ধারা পালাক্রমে

মানুষের ছায়ালিপি লেখে

লিখে রাখে কালচিহ্ন আকাশের বিস্তীর্ণ পাতায়?

হায় বরষা!
হাসান হাফিজ
ঝরো ঝরো বৃষ্টি নয়

বিরহের না-পাওয়ার সূক্ষ্ম মিহি ব্যথা

টুপটাপ ঝরে

আষাঢ়ে কান্দন শুনি

লৌহজং নদীটির গোপন বেদনাধ্বনি

অনুভবে ছলকায়,

বৃষ্টিছাঁট দূরের এলানো চুল

খোঁপা ঘ্রাণ সম্মোহিত করে

সন্তরণ জেনেও তো হায়

অসম প্রেমের হাবুডুবু

শ্রাবণ আগুন জ্বেলে

দ্রুত মূর্ছা যায়

জেগে উঠবে? সম্ভাবনা নাই,

রুদ্ধ সব দরোজা, উপায়...

তুমি কেন এমতো বরষায় মেঘের দেয়াল তুলেছো
আবদুর রাজ্জাক
কখনো চাঁদ, কখনো কবিতা, কখনো একভাবে জেগে থাকে আকাশ,

পাশাপাশি তুমিও জেগে থাকো অপরূপ হাস্য বেদনায়।

অফুরন্ত শৈশব, তুমি কেনো সেসবে দেয়াল তুলেছো!

নারকেল পাতার চিরল বাতাস, প্রহরে প্রহরে পাখি হয়ে উড়ি তোমার

ধানখেতে, সারাদিন উড়ি চিল ও শকুন সম।

অবশেষে দলছুট না-হয়ে তোমার ভাঙা কুটিরেই থেকে যাই।

আমার প্রতিটি চাওয়া তোমার অদম্য আত্মার,

তুমি আমার ভেতরে একটি ভাস্কর্য মুখ।

তোমার বৈধ অবৈধ সকল ঐশ্বর্য আমাকে দিয়ে তুমি-

প্রাণযোগিনী কোনো সন্ধ্যার দাগ।

তোমার চোখের পাতায় আমার উষ্ণ ঠোঁট, প্রশ্রয় পেয়ে

কী যে করেছি সেদিন!

নিঃশব্দ আগুনের ফোয়ারা- তুমুল বরষা, এখনো ফোটেনি

শাপলা কিম্বা কদম কেয়া, আমি তবুও সীমানা লঙ্ঘন করিনি

তোমার অপূর্ব গুঞ্জন রেখার।

প্রস্তুতি নিচ্ছে শরৎ
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে-

আমাদের বর্ষাকাল,

জলরঙে ভাসছে ভূগোলের পাতাপৃষ্ঠা

শ্রাবণের ডালে ডালে

প্রাক্তন মেঘজল নামান্তরিত পানিপথে।

বর্ষার ভাষায় লেখা হচ্ছে গান

‘শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম’

আজ বৃষ্টি দিবস

আজ চায়ের গরম ধোঁয়া থেকে

ছড়াচ্ছে বৃষ্টির ঘ্রাণ।

প্রস্তুতি নিচ্ছে শরৎ

এ ঝুম-বর্ষায়
মাসুদ খান
মনটা মন্থর ছিল যে সারাদিন

তোমার কথা ভেবে, দূর থেকে।

কথিত, অকথিত কথার শিখাগুলি

লতিয়ে ওঠে মনে এঁকেবেঁকে।

লুপ্ত কথা যত গুপ্তচর্চায়

আসছে ফিরে ফিরে, আসবেই।

পুনর্জন্মের চক্র থেকে কথা

মুক্তি পাবে না যে কিছুতেই।

কথার উষ্ণতা, কথার আলোড়ন,

আগুন ও মধুমাখা কথকতা...

কথাই শেষ নয়, কথারও শেষে থাকে

মেদুর, বিধুর এক নীরবতা।

তোমার নীরবতা নিলাম তুলে হৃদে

এবং উত্তাপটুকু শিরে।

এ ঝুম-বর্ষায় নিঝুম অবসরে

ডিকোড করে নেব ধীরে ধীরে।

একদিন বৃষ্টিদিন
রাজা হাসান
বৃষ্টির ছাঁট পরস্পরকে কাছাকাছি নিয়ে এলো।

মনখারাপ, ভুল বোঝাবুঝি মুহুর্মুহু দূরে সরে যেতে লাগল।

কেয়াঝোপ থেকে ঝেঁপে এলো বাতাস। সুবাস সুবাস।

এবার তবে,

বর্ষাতি উড়িয়ে দেয়া যাক মেঘের তল্লাটে।

এই যে তুমুল বৃষ্টি আচ্ছন্নতা

ঢেকে দিক,

পরস্পর শারীরিক ঘনিষ্ঠতা।

নখে ফোটাও বর্ষা
শিহাব শাহরিয়ার
এভাবে আর কাছে এসো না

তাকিয়ে দেখো পিছে

দাঁড়িয়ে আছে পা

ও ভাঙা বিকেল

শ্বাস নাও অথবা ছাড়ো

তবেই টুকরো কাঁচগুলো

পড়বে চোখ ও ফ্রেম থেকে

মূলতঃ চশমার নিচেই তুমি সুন্দর

সাদা বর্ষা ও বৃষ্টিফুলের মতো

মনে করেছ

ব্যালকনি বা বারান্দা

তোমার নখে ফোটাবে

সাদা বর্ষা

অথচ

শব্দগুলো ভেঙে দিয়েছে

তোমার অতীত এবং হাতের শিহরন

শত্রুকে তাড়াতে হলে

রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ লাগে বালিকা?

ধুয়ে যাবে না এক বরষায়
আব্দুল্লাহ জামিল
এমনই শ্রাবণ দিনে জন্মেছিলাম আমি

চিরবিদায় নিয়েছিলেন রবি ঠাকুর

তাই অবিরাম শ্রাবণ-ধারা অন্তরে।

সেদিন এমনই এক শ্রাবণ দিনে

আকাশ থেকে ঝরেছিলো প্রাণ সংহারী বৃষ্টি

মাটিতে ঝরেছিলো তাজা রক্ত-রঙ।

এতো যে রক্ত, এতো আত্মাহুতি

এতো যে গ্লানি, এতো সব কলঙ্ক

ধুয়ে তো যাবে না এক বরষায়।

ফল মৌসুমের কবিতা
মুজিব ইরম
আমারে রাখিছে মনে আমের বাগান

তুমিও রাখিও...

বৃষ্টি নামে হাঁড়িভাঙা আমের বাগানে

আ¤্রপালি, ফজলি বাগানে...

গুঁটিগুলো ভিজে ওঠে জলের জৌলুসে...

লিচু গাছে রং লাগিয়াছে

বারি-চারে ধরিয়াছে ঘোর

কাটিমন গাছে

ল্যাংড়া আমের দেহে

গৌড়মতি আশ্বিনা বাগানে ধরিয়াছে সুর...

লখনা বাগানে

কাটিনা আমের ডালে রোদ উঠিয়াছে...

হিমসাগরের দেহ পুরুষ্ট হয়েছে

লাগিয়াছে রোদ গোপালভোগ আমের শরীরে...

মধুমাস চলে যায়

মধুমেঘ জমে ওঠে আকাশে আকাশে...

বর্ষা নামে আমের বাগানে

বর্ষা নামে ভয়াবহ জখমি হৃদয়ে, ঘরছুট মনে।

শেষ বৃষ্টির গান
জুনান নাশিত
বলেছিলাম,

পিথাগোরাসের রহস্য ঢাকা সন্ধ্যায়

তোমাকে শোনাব শেষ বৃষ্টির গান

আজ সেই বৃষ্টির দিন

আজ নীরবতার গন্ধ ছড়ানোর রাত

শুরু হোক তবে

ডুবে যাই অনিদ্রার আলিঙ্গনে

আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে ঘষি পাথরে পাথর

আগুন উঠুক জ্বলে

ধসে যাক মূর্তিমান বেদনার বাঁধ

হাওয়ার আদল নিক স্মৃতির কঙ্কাল।

একদিন দুঃখ অথবা মৃত্যুর তারাখসা ভোরে

কিংবা শেষ চুম্বনের কালে

বিজয়ী ভস্ম এসে বলে,

শেষ বৃষ্টির রাতে জীবন উৎসর্গ করেছো তুমি

প্রেমে অথবা সমর্পণে

আমি কি তবে বেঁচে আছি?

নাকি ভেসে যাই

জলবিন্দুহীন ডানার ধু ধু আর্তনাদে?

তিন যুগ পর
মিলটন রহমান
বহু বছর পর বৃষ্টি হলো-

প্রায় তিন যুগ পর

সেই বৃষ্টিতে ভেজা কলেজের গেটে এখনো

মায়াদৃষ্টি মার্বেল পাথরে খোদাই হয়ে আছে

চোখ থেকে এতটুকু খসে পড়েনি মোহ

এত যুগ পর নেমে আসা বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে

চোখের তীব্রতা আরো গাঢ় হয়েছে,

প্রায় ক্লান্ত কিন্তু নিষ্পলক চোখে বললে

এতো দেরি করে এলে কেন?

মানবজন্মে সময় ক্ষয়ে যাবে এটাই নিয়ম,

তারপরও অতৃপ্তির দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অপেক্ষারত

মানুষের ক্ষয়ে না যাওয়া অত্যাশ্চর্য ঘটনা!

যাত্রা শুরু করে মানুষ কিসের লোভে যেন

পাহাড়ে উঠতে উঠতে, একসময় পাঁজরে ঘাঁই দিয়ে

মনে হয় কি যেনো ফেলে এসেছে বহু দূরে,

ছেঁড়া মেঘের ফাঁক গলে কোথায় যেনো আলো উঁকি দেয়

স্মৃতিভ্রমে শত সহ¯্র ঘটনা সাদা পৃষ্ঠা হয়ে গেলেও

কোনো একটা স্বর্ণকাঠি অর্ধেক আলো অর্ধেক ছায়ায়

উদাস দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে অনন্তের দিকে

যদি আবার বৃষ্টি হয়, যদি আবার তার দেখা পাই!

প্রায় তিন যুগ পর সেই বৃষ্টি এলো, বলে গেলো

কেমন আছিস বন্ধু? কোথায় ছিলি এতোদিন!

আমি তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে, জং ধরা শরীর থেকে

মুছে ফেলেছি কালের চিহ্ন,

সময় কেটে বানিয়েছি শখের জামা

বন্ধু তোর জন্য, কেবল তোর জন্য।

কোথায় ছিলি, কেমন ছিলি এতো দিন?

বৃষ্টির টেনিস বল
হেনরী স্বপন
টেইলারিং মেশিনের ঘর্ঘর শব্দগুলো

ক্রিস্টাল কাচের ফুটো দিয়ে

টিনের চালে লাফাচ্ছে

বৃষ্টির টেনিস বল;

গলা তুলে ডাহুকের মতো

তর্কের ভাইব্রেশন হচ্ছে আষাঢ়ে মেষের গর্জন,

আগুনমুখার ব্যাকুল দুপাড়

নিম্নচাপের রাগে-

উঠছে মেতে- ‘উন্মাদের পাঠক্রম’

হেঁটে হেঁটে পার হচ্ছি;

আমতলা মোড়ের সড়ক বাহারি

পাতাবাহারের ট্রাফিক জ্যাম।

সুখ-নিশি
আফরোজা সোমা
আকন্দ ফুলের দেশে মায়া পাতা আছে

রোদ এসে পাশ ফিরে শোয় ধানক্ষেতে

উঠানে চুকাই গাছ লাল তার ফল

নয়নে নীরদ জমা নামবে বাদল।

লাউয়ের ডগা বেয়ে উঠে যায় চালে

আমের গাছের নিচে তিলাঘুঘু হাঁটে

দুপুর ঘনিয়ে এলো চাড়ি আছে খালি

গরুদের দানাপানি দিতে হবে ভেবে

বিমনা সে হেঁটে যায়, আবিষ্ট দুপুরে।

দিন যায়, মাস যায়, ফুরায় বছর

প্রবাসীর কথা ভেবে হৃদয় কাতর

দারুণ আষাঢ় মাসে তনু উচাটন

ধারা তুমি জোরে নামো সারাও বেদন,

কল্প-নিশি-সুখে আজ দুপুর হাসুক।

উড়ো মেঘে অধ্যাপিকা
এমরান কবির
নিবিড় পাতার দিকে তীক্ষè চোখে তাকিয়েছিলেন অধ্যাপিকা। যমজ পাহাড়ে চেয়ে, তার কোমলতায় তাকিয়ে বলেছিলেন তিনি- এর গিরিখাতে আছে নদীবাহিত ¯্রােতের খনি।

আপনার সম্মানেও বৈশাখের উড়ো মেঘ পাহাড়ে পাহাড়ে ফিরে আসে গীতিময় ছন্দে। আর আমি গিরিখাতে চেয়ে চেয়ে থাকি। কবে আসবেন তিনি, সেই মনোমুগ্ধকর খুনি, দেখা হবে পাহাড় ও নদীর মোকাম!

ও মা! দেখি, অধ্যাপিকা আসছেন গিরিখাত কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে, ব্লাউজে লাগিয়ে বোতাম

পহেলা শ্রাবণ
চামেলী বসু
অহর্নিশ জেগে থাকো চৌরাসিয়া

রীতিসিদ্ধ মূর্ছনায়

প্রখর দিন- ফালি ফালি রাত- বিপন্ন জোছনা-

উষার প্লাবনে ডুবে যাক!

রূপকাথার ছেঁড়া পাতায় ম্লান বৃষ্টি-মেঘ মন্দ্রি,

তামাক প্রহর- নামানুষের ভিড়- অথবা নীলচে ধোঁয়া-

তুমিও দিতে পারো বিষাঞ্জলি!

যযাতি যৌবন আর অবাধ্য মন,

স্বাদহীন রোজকার হাঁসফাঁস বাঁচা...

পহেলা শ্রাবণে

যে হৃদয় ভেঙ্গে যায় চৌরাসিয়া,

দুর্বিষহ! বড় দুর্বিষহ! তোমার সে বাঁশির

অকারণ অঝর ধারা...

ঘোর বর্ষা
তাহিতি ফারজানা
এই রাত ঘন হয়ে আসে একাকী

শরীর থেকে স্মৃতিভার খুলে রাখি।

ঘোর বর্ষণে মুঠো খুলি আলগোছে

কিছু বিরহ ছুটি চায়, রঙ মাখে-

যে রঙের উৎস প্রেম, স্বয়ং ঈশ্বর,

শুকনো গোলাপের লুকানো ঘ্রাণ

বর্ষা দুয়ারে এসে জানান দেয়

ঝরে যাওয়াও মহা পরিত্রাণ।

কিছু রাত এতো মিহি, লীন হয়ে যায়

অন্ধকারের আত্মা জেগে থাকে

তুমিহীনতাকে ঈশ্বর ভাবি,

মোহমায়া ভেঙে পড়ে বর্ষার ডাকে।

উড়াল
অনুপমা অপরাজিতা
শ্রাবণের আমন্ত্রণে ঠায় দাঁড়িয়ে

একটি কদম্ব হাত

অথবা

চাঁদের আলোর স্নিগ্ধতার গল্প

মধ্যদুপুরে শুরু হয়

জ্বরের প্রলাপে জলপট্টির মুহূর্ত

সময়ের চামড়া ঢেকে দেয় উড়াল

প্রয়োজনটুকু ছাড়া বাকি সব কুয়াশা

রোদ ফুরোলেই মিলিয়ে যায়

দীর্ঘ ছায়াটাও

ছোট হয়ে যায় মধ্যাহ্ন

ছোট হয়ে যায় লাবণ্য

রঙের আড়ালটুকু স্পর্শ করবার

থাকে না মুষ্টিবদ্ধ করতল!!

পাণ্ডুলিপি
ডালিয়া চৌধুরী
ছিলো শূন্যতার মতো অসুখ,

আলোর ভাঁজে কালো অক্ষরে

ঝড়ের বিজ্ঞপ্তি পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে।

জল জমে যাওয়া আকাশে

বর্ষার পা-ুলিপি খোলে,

নদীটা ছিলো উড়ন্ত উচ্ছ্বাসে।

রঙহীন বিকেলের রোমন্থনে

দিগন্তঘেঁষা কৃষ্ণচূড়া রোদে

পাখিরা জড়ো হয়েছিলো

ডানার ভারে

উড়তে না পারার অভিমানে।

গন্তব্য ছুঁতে অগোছালো হেঁটে

ঘাসগুল্মের বনের ধারে,

বিগত কুয়াশার পর্দা তুলে মঞ্চস্থ

করেছিলো অবগুণ্ঠিত দুঃখটারে।

বর্ষার ক্লেশ
তানজীনা ফেরদৌস
এবারের বর্ষা বাতাসের মিহি ছোঁয়া দিয়ে রচনা করেছে কারাগার।

যার কোনো দৃশ্য নেই, প্রহরী তো থাকার-ই কথা নয়।

মাথার দিব্যি দেওয়া মানুষটি আজ অচেনা স্টেশনে নেমে পড়েছে ট্রেন থেকে।

বর্ষার সাথে ভাঙা স্বপ্নের চরিত্রদের রোজনামচা শোনায়।

তারপর বৃষ্টি আমায় ভুলিয়ে দেয় অপঘাত।

তাঁকে ছুঁতে গিয়ে আবারও ছুঁয়ে ফেলি অসমতা...

দ্বিধাগ্রস্ত হাতে পান করি বেপরোয়া ভোর, আর কাক্সিক্ষত নিশির চপল সময়।

এই বৃষ্টি যেন বশীভূত নামতা পড়া ঘোর, যার আগমনে উল্টো ত্রিভুজে আটকা পড়ে ভূত ভবিষ্যতের দু-পা।

এ যুগে ছাতাগুলো সব মায়াহরিণ।

বারবার বৃষ্টি চেয়ে শ্রাবণ আকাশের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়, আকাশ আমাকে রোদ দিয়ে ছলনা করে।

আমি অভিমানে ঘরে ফিরতে চাইলে, সংকল্পবদ্ধ রোদ আর নির্বোধ ভারী বর্ষণ আকাশ ছিঁড়ে নামে।

কিন্তু ছাতার দেখা আর মেলে না।

back to top