alt

সাময়িকী

অনুবাদ ও ভূমিকা : আলী সিদ্দিকী

: বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

কুর্দি কবি কাজল আহমদের গুচ্ছকবিতা

কাজল আহমদ (জন্ম ১৯৬৭) একজন আধুনিক কুর্দি কবি এবং সাংবাদিক- যিনি কুর্দসাট চ্যানেলে “ডিজেবাও” শো-এর জন্য বিশেষ পরিচিত। ১৯৮৭ সালে কবিতা লেখা শুরু করার পর, তিনি দ্রুত তার সাহসী এবং হৃদয়গ্রাহী কবিতার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। কাজল আহমদ কিরকুক শহরে কুর্দি বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতা প্রকাশ করেন। “প্রচ-” এবং “আকর্ষণীয়” গুণের জন্য তাঁর কবিতাগুলি পরিচিত এবং কুর্দিভাষী বিশ্বে সাহসী, গভীর এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। তার কবিতা আরবি, ফার্সি, তুর্কি, নরওয়েজিয়ান এবং ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশেষভাবে, ইংরেজি ভাষায় অনূদিত কবিতার সংগ্রহ Handful of Salt ২০১৬ সালে World Works প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়।

জীবনধারার জন্য কাজল আহমদ রক্ষণশীল সমাজের কঠোর সমালোচনার শিকার হন। তিনি হিজাব পরতে অস্বীকার করেন এবং নারী স্বাধীনতা এবং জীবনযাত্রা সীমাবদ্ধ করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তার কবিতা কুর্দি সমাজের সাংস্কৃতিক বিরোধ এবং নারীর পরিস্থিতি তুলে ধরে। তিনি নারীর সমানাধিকার এবং স্বাধীনতার কথা বলেন। পুরুষরা যদিও তাকে আকর্ষণ করে, কিন্তু তারা কোনো স্থির প্রতিশ্রুতি দেয় না; এবং মহিলারাও রক্ষণশীলতার গ্যাঁড়াকলে পড়ে তাকে এড়িয়ে চলে। ফলে তিনি একাকী এবং নিঃসঙ্গ বোধ করেন।

কবিতা লেখার পাশাপাশি কাজল আহমদ সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে কলম ধরেন এবং বিশেষত নারীবাদ ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রবন্ধ লেখেন। তিনি কহবি (“News”), পেট্রিওটিক ইউনিয়ন অফ কুর্দিস্তানের দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। কুর্দসাট চ্যানেলে বিভিন্ন প্রোগ্রাম উপস্থাপন করেছেন। তার লেখাগুলি কুর্দি সংস্কৃতি, কুর্দিস্তানের মুক্তি এবং লিঙ্গ সমতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। কাজল আহমদ, তার contemporaries নাজিবা আহমদসহ (১৯৫৪-) কুর্দি সাহিত্য উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তারা কুর্দি সাহিত্যকে বিশ্বব্যাপী একটি নতুন দৃষ্টিকোণ এবং শক্তি দিয়েছে।

কাজল আহমদের কবিতা কুর্দি ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং তার লেখার মূল বিষয়গুলো অভিবাসন, একাকীত্ব, মাতৃভূমি এবং পরস্পরবিরোধী আবেগকে ঘিরে। তার কবিতা কুর্দি সংস্কৃতির গভীরতা এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামকে উচ্চকিত করে। তিনি সাতটি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন এবং তার কবিতা ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

অনূদিত কাজ:

১. Erobringer, 2005 (The Conqueror), হাউডেম সালিহ জাফ ও ইনগার স্টেনস্টাড কর্তৃক নরওয়েজিয়ান ভাষায় অনূদিত।

২. Kajal Ahmad Poems (2008), মিমি খালভাতি ও চোমান হার্দি কর্তৃক ইংরেজিতে অনূদিত।

৩. Qasaed tumtr narjsan, 2008 (The Poem of the Dying Narcissus), কুর্দি থেকে আরবিতে অনূদিত

৪. Handful of Salt (2016), ইংরেজিতে অনূদিত, আলানা মেরি লেভিনসন-লাব্রস এবং অন্যান্য অনুবাদক কর্তৃক ইংরেজিতে অনূদিত।

তার উল্লেখযোগ্য কাজ হলো-

1. Benderî Bermoda (The Bermoda Bend), 1999

2. Wutekanî Wutin (The Words of the Returning), 1999

3. Qaweyek le gel ev da (A Strength with This), 2001

4. Awênem ?ikand (I Broke the Winds), 2004

5. Diwanî Kajal Ahmad (The Diwan of Kajal Ahmad), 2006

6. Min Dibêt Xom Bismîl Bikem (I Must Paint Myself in Red), 2014

7. Zmanî balndem dezanî (The Time I Forget to Speak), 2019

কবি কাজল আহমদ-এর গুচ্ছ কবিতা
[কবিতাগুলো কুর্দি ভাষা থেকে ইরেজিতে অনুবাদ করেছেন: মাইকেল আর বার্চ]

আয়না
আমার যুগের অস্পষ্ট আয়না

ভেঙে গেছে

কারণ এটি ক্ষুদ্রতাকে করেছিল বিশাল

আর বিশালতাকে করেছিল তুচ্ছ।

নির্দয় একনায়ক আর দানবরা পূর্ণ করেছিল

তার ফাঁকফোকর।

এখন আমি যখন শ্বাস নিই,

তার ভাঙা টুকরো আমার হৃদয়ে বিদ্ধ করে,

আর ঘামের বদলে

আমার দেহ থেকে নিসৃত হয় কাচ।

একাকী পৃথিবী
সুবর্ণ আকাশম-লী কখনো বলে না তাকে,

“শুভ সকাল!”

তারা তাকে চুম্বন করে না।

পৃথিবী, যেখানে এত মধুর প্রলোভন আর

গোলাপ শায়িত মাটিতে,

একটি পলক দৃষ্টি বা সুবাসের অভাবে

তা নিঃশেষ হতে পারে।

সে একাকী, ধুলোমলিন গোলক,

অত্যন্ত একাকী!

সে যখন চাঁদের জোড়াতালি দেয়া পোশাক দেখে,

সে জানে সূর্য এক প্রতারক,

যে নিজের জন্য চুরি করা রশ্মিতে পুড়িয়ে দেয়,

আর ভাড়াটিয়া ভাবে চাঁদ ও পৃথিবীকে।

কুর্দিরা পাখি
বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণ অনুযায়ী

কুর্দিরা এখন পাখিদের একটি প্রজাতি!

তারা তাই ইতিহাসের ছেঁড়া পাতায়

যাযাবরের মতো ভ্রমণ করে,

তারা তাদের কাফেলার জন্য স্বীকৃত।

হ্যাঁ, কুর্দিরা পাখি!

আরও করুণ হলো, যখন বসার মতো কোথাও

কিছু নেই, ব্যথা থেকেও রেহাই নেই,

তারা আবার ফিরে যায় ভ্রমণে

তাদের স্বদেশের উষ্ণ আর বরফাবৃত অঞ্চলে।

আমি অদ্ভুত মনে করি না যে

কুর্দিরা উড়তে পারে কিন্তু অবতরণ করতে পারে না।

অঞ্চল থেকে অঞ্চলে ঘোরে তারা

নিজেদের স্বপ্ন বুঝতে পারে না

বসতি গড়ে তোলার, কোনো উপনিবেশ তৈরি করার,

বাসা বাঁধার স্বপ্ন।

না, তারা কখনোই স্থির হয় না

রুমির খবর নিতে বা

নালির মতো ঝড় তোলা ধুলোয় নত হতে।

যদি আমি শহিদ হতাম
আমি চাই না কোনো ফুল,

না ঐক্যের কোনো যুগ,

না বিচ্ছেদের কোনো ভোর।

আমি চাই না ফুল,

কারণ আমি নিজেই সবচেয়ে সুন্দর ফুল।

আমি চাই না কোনো চুম্বন,

যদি সত্যিকারের প্রেমের জন্য

কোনো পুরুষকে ধারণ করতে হয়-

না কোনো বিবাহের যুগ,

না বিচ্ছেদের কোনো ভোর,

না বিধবা মায়ের জ্বালা।

আমি চাই না কোনো চুম্বন,

যদি প্রেমের সাথে আমি একসাথে শহিদ হয়ে যাই।

আমি চাই না কোনো অশ্রু

আমার কফিন বা মৃতদেহের জন্য।

আমি চাই না সহানুভূতির কোনো চেরিগাছ

আমার কবরের দেয়ালে টানা হোক,

না ফুল, না চুম্বন,

না অশ্রু, না দুঃখ।

কিছু এনো না।

কিছু ধারণ করো না।

আমি মরছি একটি পতাকা ছাড়া, এক কণ্ঠবিহীন মাতৃভূমির মতো।

আমি কৃতজ্ঞ।

আমি কিছু চাই না।

আমি কিছু গ্রহণ করব না।

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

মননশস্যের অমৃত মন্থন

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বড়শি

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

এ মুখর বরষায়

ছবি

রক্তে লেখা প্রেম: রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিপ্লব

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

শঙ্খজীবন: যাপিত জীবনের অন্তর্গূঢ় প্রতিকথা

ছবি

ওসামা অ্যালোমার এক ঝুড়ি খুদে গল্প

ছবি

প্রযুক্তির আলোয় বিশ্বব্যাপী বইবাণিজ্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

কাফকার কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

সূর্যের দেশ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

লড়াই

সাময়িকী কবিতা

ছবি

প্রচলিত সাহিত্যধারার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন মধুসূদন

ছবি

মেধাসম্পদের ছন্দে মাতুন

ছবি

উত্তর-মানবতাবাদ ও শিল্প-সাহিত্যে তার প্রভাব

ছবি

আমজাদ হোসেনের ‘ভিন্ন ভাষার কবিতা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

দুই ঋতপার কিসসা এবং এক ন্যাকা চৈতন্য

ছবি

অন্যজীবন অন্যআগুন ছোঁয়া

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কবিজীবন, দর্শন ও কাব্যসন্ধান

ছবি

অসামান্য গদ্যশৈলীর রূপকার

ছবি

পিয়াস মজিদের ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’

ছবি

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

ছবি

বাঘাডাঙা গাঁও

ছবি

বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ বিষয়ভাবনা

সাময়িকী কবিতা

tab

সাময়িকী

অনুবাদ ও ভূমিকা : আলী সিদ্দিকী

কুর্দি কবি কাজল আহমদের গুচ্ছকবিতা

বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

কাজল আহমদ (জন্ম ১৯৬৭) একজন আধুনিক কুর্দি কবি এবং সাংবাদিক- যিনি কুর্দসাট চ্যানেলে “ডিজেবাও” শো-এর জন্য বিশেষ পরিচিত। ১৯৮৭ সালে কবিতা লেখা শুরু করার পর, তিনি দ্রুত তার সাহসী এবং হৃদয়গ্রাহী কবিতার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। কাজল আহমদ কিরকুক শহরে কুর্দি বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতা প্রকাশ করেন। “প্রচ-” এবং “আকর্ষণীয়” গুণের জন্য তাঁর কবিতাগুলি পরিচিত এবং কুর্দিভাষী বিশ্বে সাহসী, গভীর এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। তার কবিতা আরবি, ফার্সি, তুর্কি, নরওয়েজিয়ান এবং ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশেষভাবে, ইংরেজি ভাষায় অনূদিত কবিতার সংগ্রহ Handful of Salt ২০১৬ সালে World Works প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়।

জীবনধারার জন্য কাজল আহমদ রক্ষণশীল সমাজের কঠোর সমালোচনার শিকার হন। তিনি হিজাব পরতে অস্বীকার করেন এবং নারী স্বাধীনতা এবং জীবনযাত্রা সীমাবদ্ধ করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তার কবিতা কুর্দি সমাজের সাংস্কৃতিক বিরোধ এবং নারীর পরিস্থিতি তুলে ধরে। তিনি নারীর সমানাধিকার এবং স্বাধীনতার কথা বলেন। পুরুষরা যদিও তাকে আকর্ষণ করে, কিন্তু তারা কোনো স্থির প্রতিশ্রুতি দেয় না; এবং মহিলারাও রক্ষণশীলতার গ্যাঁড়াকলে পড়ে তাকে এড়িয়ে চলে। ফলে তিনি একাকী এবং নিঃসঙ্গ বোধ করেন।

কবিতা লেখার পাশাপাশি কাজল আহমদ সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে কলম ধরেন এবং বিশেষত নারীবাদ ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রবন্ধ লেখেন। তিনি কহবি (“News”), পেট্রিওটিক ইউনিয়ন অফ কুর্দিস্তানের দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। কুর্দসাট চ্যানেলে বিভিন্ন প্রোগ্রাম উপস্থাপন করেছেন। তার লেখাগুলি কুর্দি সংস্কৃতি, কুর্দিস্তানের মুক্তি এবং লিঙ্গ সমতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। কাজল আহমদ, তার contemporaries নাজিবা আহমদসহ (১৯৫৪-) কুর্দি সাহিত্য উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তারা কুর্দি সাহিত্যকে বিশ্বব্যাপী একটি নতুন দৃষ্টিকোণ এবং শক্তি দিয়েছে।

কাজল আহমদের কবিতা কুর্দি ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং তার লেখার মূল বিষয়গুলো অভিবাসন, একাকীত্ব, মাতৃভূমি এবং পরস্পরবিরোধী আবেগকে ঘিরে। তার কবিতা কুর্দি সংস্কৃতির গভীরতা এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামকে উচ্চকিত করে। তিনি সাতটি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন এবং তার কবিতা ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

অনূদিত কাজ:

১. Erobringer, 2005 (The Conqueror), হাউডেম সালিহ জাফ ও ইনগার স্টেনস্টাড কর্তৃক নরওয়েজিয়ান ভাষায় অনূদিত।

২. Kajal Ahmad Poems (2008), মিমি খালভাতি ও চোমান হার্দি কর্তৃক ইংরেজিতে অনূদিত।

৩. Qasaed tumtr narjsan, 2008 (The Poem of the Dying Narcissus), কুর্দি থেকে আরবিতে অনূদিত

৪. Handful of Salt (2016), ইংরেজিতে অনূদিত, আলানা মেরি লেভিনসন-লাব্রস এবং অন্যান্য অনুবাদক কর্তৃক ইংরেজিতে অনূদিত।

তার উল্লেখযোগ্য কাজ হলো-

1. Benderî Bermoda (The Bermoda Bend), 1999

2. Wutekanî Wutin (The Words of the Returning), 1999

3. Qaweyek le gel ev da (A Strength with This), 2001

4. Awênem ?ikand (I Broke the Winds), 2004

5. Diwanî Kajal Ahmad (The Diwan of Kajal Ahmad), 2006

6. Min Dibêt Xom Bismîl Bikem (I Must Paint Myself in Red), 2014

7. Zmanî balndem dezanî (The Time I Forget to Speak), 2019

কবি কাজল আহমদ-এর গুচ্ছ কবিতা
[কবিতাগুলো কুর্দি ভাষা থেকে ইরেজিতে অনুবাদ করেছেন: মাইকেল আর বার্চ]

আয়না
আমার যুগের অস্পষ্ট আয়না

ভেঙে গেছে

কারণ এটি ক্ষুদ্রতাকে করেছিল বিশাল

আর বিশালতাকে করেছিল তুচ্ছ।

নির্দয় একনায়ক আর দানবরা পূর্ণ করেছিল

তার ফাঁকফোকর।

এখন আমি যখন শ্বাস নিই,

তার ভাঙা টুকরো আমার হৃদয়ে বিদ্ধ করে,

আর ঘামের বদলে

আমার দেহ থেকে নিসৃত হয় কাচ।

একাকী পৃথিবী
সুবর্ণ আকাশম-লী কখনো বলে না তাকে,

“শুভ সকাল!”

তারা তাকে চুম্বন করে না।

পৃথিবী, যেখানে এত মধুর প্রলোভন আর

গোলাপ শায়িত মাটিতে,

একটি পলক দৃষ্টি বা সুবাসের অভাবে

তা নিঃশেষ হতে পারে।

সে একাকী, ধুলোমলিন গোলক,

অত্যন্ত একাকী!

সে যখন চাঁদের জোড়াতালি দেয়া পোশাক দেখে,

সে জানে সূর্য এক প্রতারক,

যে নিজের জন্য চুরি করা রশ্মিতে পুড়িয়ে দেয়,

আর ভাড়াটিয়া ভাবে চাঁদ ও পৃথিবীকে।

কুর্দিরা পাখি
বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণ অনুযায়ী

কুর্দিরা এখন পাখিদের একটি প্রজাতি!

তারা তাই ইতিহাসের ছেঁড়া পাতায়

যাযাবরের মতো ভ্রমণ করে,

তারা তাদের কাফেলার জন্য স্বীকৃত।

হ্যাঁ, কুর্দিরা পাখি!

আরও করুণ হলো, যখন বসার মতো কোথাও

কিছু নেই, ব্যথা থেকেও রেহাই নেই,

তারা আবার ফিরে যায় ভ্রমণে

তাদের স্বদেশের উষ্ণ আর বরফাবৃত অঞ্চলে।

আমি অদ্ভুত মনে করি না যে

কুর্দিরা উড়তে পারে কিন্তু অবতরণ করতে পারে না।

অঞ্চল থেকে অঞ্চলে ঘোরে তারা

নিজেদের স্বপ্ন বুঝতে পারে না

বসতি গড়ে তোলার, কোনো উপনিবেশ তৈরি করার,

বাসা বাঁধার স্বপ্ন।

না, তারা কখনোই স্থির হয় না

রুমির খবর নিতে বা

নালির মতো ঝড় তোলা ধুলোয় নত হতে।

যদি আমি শহিদ হতাম
আমি চাই না কোনো ফুল,

না ঐক্যের কোনো যুগ,

না বিচ্ছেদের কোনো ভোর।

আমি চাই না ফুল,

কারণ আমি নিজেই সবচেয়ে সুন্দর ফুল।

আমি চাই না কোনো চুম্বন,

যদি সত্যিকারের প্রেমের জন্য

কোনো পুরুষকে ধারণ করতে হয়-

না কোনো বিবাহের যুগ,

না বিচ্ছেদের কোনো ভোর,

না বিধবা মায়ের জ্বালা।

আমি চাই না কোনো চুম্বন,

যদি প্রেমের সাথে আমি একসাথে শহিদ হয়ে যাই।

আমি চাই না কোনো অশ্রু

আমার কফিন বা মৃতদেহের জন্য।

আমি চাই না সহানুভূতির কোনো চেরিগাছ

আমার কবরের দেয়ালে টানা হোক,

না ফুল, না চুম্বন,

না অশ্রু, না দুঃখ।

কিছু এনো না।

কিছু ধারণ করো না।

আমি মরছি একটি পতাকা ছাড়া, এক কণ্ঠবিহীন মাতৃভূমির মতো।

আমি কৃতজ্ঞ।

আমি কিছু চাই না।

আমি কিছু গ্রহণ করব না।

back to top