alt

সাময়িকী

লরেন্স ফারলিঙ্ঘেতির কবিতা

মূল ইংরেজি থেকে অনুবাদ : মালেকা পারভীন

: শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

আমেরিকান কবি, শিল্পী ও অনুবাদক লরেন্স ফারলিঙ্ঘেতি ১০১ বছরের একটি দীর্ঘ কবিতাময় জীবন শেষে ২০২১-এর ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ তারিখে পৃথিবী থেকে শারীরিকভাবে বিদায় নিয়েছেন। জীবদ্দশায় বিস্তর লেখালেখি, নৈরাজ্যবাদ আর পরিবেশ সচেতনতার মিশেলে তৈরি নিজস্ব রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং বিশেষ করে স্যান ফ্রান্সিকোতে সিটি লাইটস বুক সেলারস এন্ড পাবলিশার্স নামে প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত বই প্রকাশনা ও বিপণন প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞের সাথে আমার সেভাবে পরিচয় ছিল না। তিনি ত্রিশটির বেশি বই লিখেছেন যার মধ্যে কাব্যগ্রন্থ হিসেবে ‘এ কোনি আইল্যান্ড অফ দ্য মাইন্ড’, ‘স্য সিক্রেট মিনিং অফ থিংগস’, ‘এন্ডলেস লাইফ’ আর দুটি উপন্যাস, ‘লাভ ইন দ্য ডেইজ অফ রেইজ’ এবং ‘হার’ অন্যতম। এগুলো ছাড়াও তাঁর আরও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম আছে।

প্রকাশক হিসেবে লরেন্সের যে অবদান বিশেষ উল্লেখের দাবিদার সেটি হলো তিনি অ্যালেন গিন্সবার্গ-এর বিখ্যাত ‘হাউল এন্ড আদার পোয়েমস’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করে চলমান বিট আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন কাব্যজগতে আলোড়ন তোলার পাকা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এসবই জেনেছি তাঁর চলে যাবার পরে। তাঁর একেকটি কবিতা পড়া আর শিউরে ওঠার ব্যাপারটা সমান্তরালভাবে ঘটতে থাকে, যদিও ওয়াল্ট হুইটম্যান আর উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস-এর আদলে লেখা তাঁর কবিতাশৈলীর আটপৌরে-ঢিলেঢালা ভাব নিয়ে তর্ক-বিতর্কের সুযোগ আছে।

লরেন্সকে নিয়ে অল্প পরিসরে কিছু লেখার অভিপ্রায়ে তাঁর সামগ্রিক সাহিত্যিক জীবন ও কর্মকা- সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার সঙ্কল্প-পথে যাত্রা এখনও চলমান। এর মাঝখানে, তাঁর নানা কবিতা পড়ার ফাঁকে, ব্যাঙ্গ আর শ্লেষ-মেশানো ‘দুনিয়াটা একটা সুন্দর জায়গা’ নামে তাঁর চমৎকার একটি কবিতা বাংলায় অনুবাদ শুরু করার দুঃসাহস করেও ফেলে রাখতে হয়েছিল নানামুখী ব্যস্ততার অজুহাতে। এতদিন বাদে নিজেকে অনেকটা জোর করে লেখার টেবিলে বসিয়ে অনুবাদটি শেষ করবার চেষ্টা করলাম।]

দুনিয়াটা একটা সুন্দর জায়গা

জন্মগ্রহণ করবার জন্য

দুনিয়াটা একটা সুন্দর জায়গা

যদি তুমি সুখ জাতীয় ব্যাপারটাকে

সবসময় খুব আনন্দের কিছু ভেবে না বসো

যখন সবকিছু ভালোই চলছে

তার মধ্যিখানে হঠাৎ একটুখানি

নরক যন্ত্রণায় যদি তোমার আপত্তি না থাকে

কারণ এমনকি স্বর্গেও

সঙ্গীতের সুর ওঠে না

সবসময়, জানো নিশ্চয়

জন্মগ্রহণ করবার জন্য

দুনিয়াটা সুন্দর একটা জায়গা

যদি ক্রমাগত কিছু মানুষের মৃত্যুতে

তুমি খুব একটা ব্যথিত না হও

অথবা কেবল অভুক্ত থাকায়

সামান্য কিছু সময়

যেটা খুব খারাপ কিছু নয়

যদি তোমাকে তা না ছুঁয়ে যায়

ওহ জন্মগ্রহণ করবার জন্য

দুনিয়াটা একটা সুন্দর জায়গা

যদি তুমি খুব বেশি উষ্মা না দেখাও

কিছু অনুভূতিশূন্য প্রাণীর

ক্ষমতার গদিগুলো আঁকড়ে থাকায়

অথবা তোমার ঊর্ধ্বমুখে

হঠাৎ কখনও কখনও

দুয়েকটা বোমার বিস্ফোরণে

অথবা এ ধরনের কিছু অসঙ্গতিতে

যাতে আমাদের ব্র্যান্ডসর্বস্ব সোসাইটি

শিকারে পরিণত হয়

এর নানা রুই-কাতলাসমেত

এবং এর যাবতীয় রসাতল-বিশেষজ্ঞ নিয়ে

এবং এর ধর্মের ধ্বজাধারীসহ

এবং আরও অন্যান্য পাহারদার বাহিনীযোগে

এবং এর বিভিন্ন বিভক্তিতে

এবং দাপ্তরিক তদন্তসমূহে

এবং বিবিধ কোষ্ঠকাঠিন্যে

যা আমাদের হাঁদারাম শরীর মশায়

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়

আসলেই দুনিয়াটা সবচেয়ে সুন্দর জায়গা

এ ধরনের অনেক কিছুর জন্য যেমন ধরো

দারুণ মজার কিছু করা

অথবা ভালোবাসায় মজে যাওয়া

অথবা বেদনা-বিরহে ডুবে যাওয়া

অথবা নিচু স্বরে গান গাওয়া আর উৎসাহ পাওয়া

অথবা এদিক-সেদিক ঘুরতে চলে যাওয়া

আর সবকিছু চুপচাপ দেখতে থাকা

এবং ফুলের গন্ধ শুঁকে নেওয়া

আর মূর্তিগুলোকে খোঁচা দেওয়া

আর এমনকি একটু চিন্তাও করা

আর মানুষকে চুমুটুমু খাওয়া এবং

শিশুর জন্ম দিয়ে পাতলুন গুটিয়ে ফেলা

সেই সাথে টুপি ঘোরাতে থাকা আর

এক মনে নেচে যাওয়া

এবং নদীতে সাঁতরানো

পিকনিকে যাওয়ার পর

গ্রীষ্মের মাঝামাঝি একসময়

এবং এভাবে খুব স্বাভাবিকভাবে

‘বাঁচার চেষ্টা করে যাওয়া’

আসলেই তাই

আর ঠিক তখনই এসবের মাঝখানে

মৃদু হেসে হাজির হয়ে যান

মূর্তিমান মরটিশিয়ান, মানে দাফনকারী

ছবি

রক্তে লেখা প্রেম: রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিপ্লব

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

শঙ্খজীবন: যাপিত জীবনের অন্তর্গূঢ় প্রতিকথা

ছবি

ওসামা অ্যালোমার এক ঝুড়ি খুদে গল্প

ছবি

প্রযুক্তির আলোয় বিশ্বব্যাপী বইবাণিজ্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

কাফকার কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

সূর্যের দেশ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

লড়াই

সাময়িকী কবিতা

ছবি

প্রচলিত সাহিত্যধারার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন মধুসূদন

ছবি

মেধাসম্পদের ছন্দে মাতুন

ছবি

উত্তর-মানবতাবাদ ও শিল্প-সাহিত্যে তার প্রভাব

ছবি

আমজাদ হোসেনের ‘ভিন্ন ভাষার কবিতা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

দুই ঋতপার কিসসা এবং এক ন্যাকা চৈতন্য

ছবি

অন্যজীবন অন্যআগুন ছোঁয়া

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কবিজীবন, দর্শন ও কাব্যসন্ধান

ছবি

অসামান্য গদ্যশৈলীর রূপকার

ছবি

পিয়াস মজিদের ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’

ছবি

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

ছবি

বাঘাডাঙা গাঁও

ছবি

বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ বিষয়ভাবনা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

পথকবিতা: লোকবাংলার সাধারণ কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

ক্ষমতার ভাষার বিপরীতে মাতৃভাষার সাধনা

ছবি

ফিলিস্তিনের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে অণুগল্প

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

tab

সাময়িকী

লরেন্স ফারলিঙ্ঘেতির কবিতা

মূল ইংরেজি থেকে অনুবাদ : মালেকা পারভীন

শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

আমেরিকান কবি, শিল্পী ও অনুবাদক লরেন্স ফারলিঙ্ঘেতি ১০১ বছরের একটি দীর্ঘ কবিতাময় জীবন শেষে ২০২১-এর ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ তারিখে পৃথিবী থেকে শারীরিকভাবে বিদায় নিয়েছেন। জীবদ্দশায় বিস্তর লেখালেখি, নৈরাজ্যবাদ আর পরিবেশ সচেতনতার মিশেলে তৈরি নিজস্ব রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং বিশেষ করে স্যান ফ্রান্সিকোতে সিটি লাইটস বুক সেলারস এন্ড পাবলিশার্স নামে প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত বই প্রকাশনা ও বিপণন প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞের সাথে আমার সেভাবে পরিচয় ছিল না। তিনি ত্রিশটির বেশি বই লিখেছেন যার মধ্যে কাব্যগ্রন্থ হিসেবে ‘এ কোনি আইল্যান্ড অফ দ্য মাইন্ড’, ‘স্য সিক্রেট মিনিং অফ থিংগস’, ‘এন্ডলেস লাইফ’ আর দুটি উপন্যাস, ‘লাভ ইন দ্য ডেইজ অফ রেইজ’ এবং ‘হার’ অন্যতম। এগুলো ছাড়াও তাঁর আরও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম আছে।

প্রকাশক হিসেবে লরেন্সের যে অবদান বিশেষ উল্লেখের দাবিদার সেটি হলো তিনি অ্যালেন গিন্সবার্গ-এর বিখ্যাত ‘হাউল এন্ড আদার পোয়েমস’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করে চলমান বিট আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন কাব্যজগতে আলোড়ন তোলার পাকা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এসবই জেনেছি তাঁর চলে যাবার পরে। তাঁর একেকটি কবিতা পড়া আর শিউরে ওঠার ব্যাপারটা সমান্তরালভাবে ঘটতে থাকে, যদিও ওয়াল্ট হুইটম্যান আর উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস-এর আদলে লেখা তাঁর কবিতাশৈলীর আটপৌরে-ঢিলেঢালা ভাব নিয়ে তর্ক-বিতর্কের সুযোগ আছে।

লরেন্সকে নিয়ে অল্প পরিসরে কিছু লেখার অভিপ্রায়ে তাঁর সামগ্রিক সাহিত্যিক জীবন ও কর্মকা- সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার সঙ্কল্প-পথে যাত্রা এখনও চলমান। এর মাঝখানে, তাঁর নানা কবিতা পড়ার ফাঁকে, ব্যাঙ্গ আর শ্লেষ-মেশানো ‘দুনিয়াটা একটা সুন্দর জায়গা’ নামে তাঁর চমৎকার একটি কবিতা বাংলায় অনুবাদ শুরু করার দুঃসাহস করেও ফেলে রাখতে হয়েছিল নানামুখী ব্যস্ততার অজুহাতে। এতদিন বাদে নিজেকে অনেকটা জোর করে লেখার টেবিলে বসিয়ে অনুবাদটি শেষ করবার চেষ্টা করলাম।]

দুনিয়াটা একটা সুন্দর জায়গা

জন্মগ্রহণ করবার জন্য

দুনিয়াটা একটা সুন্দর জায়গা

যদি তুমি সুখ জাতীয় ব্যাপারটাকে

সবসময় খুব আনন্দের কিছু ভেবে না বসো

যখন সবকিছু ভালোই চলছে

তার মধ্যিখানে হঠাৎ একটুখানি

নরক যন্ত্রণায় যদি তোমার আপত্তি না থাকে

কারণ এমনকি স্বর্গেও

সঙ্গীতের সুর ওঠে না

সবসময়, জানো নিশ্চয়

জন্মগ্রহণ করবার জন্য

দুনিয়াটা সুন্দর একটা জায়গা

যদি ক্রমাগত কিছু মানুষের মৃত্যুতে

তুমি খুব একটা ব্যথিত না হও

অথবা কেবল অভুক্ত থাকায়

সামান্য কিছু সময়

যেটা খুব খারাপ কিছু নয়

যদি তোমাকে তা না ছুঁয়ে যায়

ওহ জন্মগ্রহণ করবার জন্য

দুনিয়াটা একটা সুন্দর জায়গা

যদি তুমি খুব বেশি উষ্মা না দেখাও

কিছু অনুভূতিশূন্য প্রাণীর

ক্ষমতার গদিগুলো আঁকড়ে থাকায়

অথবা তোমার ঊর্ধ্বমুখে

হঠাৎ কখনও কখনও

দুয়েকটা বোমার বিস্ফোরণে

অথবা এ ধরনের কিছু অসঙ্গতিতে

যাতে আমাদের ব্র্যান্ডসর্বস্ব সোসাইটি

শিকারে পরিণত হয়

এর নানা রুই-কাতলাসমেত

এবং এর যাবতীয় রসাতল-বিশেষজ্ঞ নিয়ে

এবং এর ধর্মের ধ্বজাধারীসহ

এবং আরও অন্যান্য পাহারদার বাহিনীযোগে

এবং এর বিভিন্ন বিভক্তিতে

এবং দাপ্তরিক তদন্তসমূহে

এবং বিবিধ কোষ্ঠকাঠিন্যে

যা আমাদের হাঁদারাম শরীর মশায়

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়

আসলেই দুনিয়াটা সবচেয়ে সুন্দর জায়গা

এ ধরনের অনেক কিছুর জন্য যেমন ধরো

দারুণ মজার কিছু করা

অথবা ভালোবাসায় মজে যাওয়া

অথবা বেদনা-বিরহে ডুবে যাওয়া

অথবা নিচু স্বরে গান গাওয়া আর উৎসাহ পাওয়া

অথবা এদিক-সেদিক ঘুরতে চলে যাওয়া

আর সবকিছু চুপচাপ দেখতে থাকা

এবং ফুলের গন্ধ শুঁকে নেওয়া

আর মূর্তিগুলোকে খোঁচা দেওয়া

আর এমনকি একটু চিন্তাও করা

আর মানুষকে চুমুটুমু খাওয়া এবং

শিশুর জন্ম দিয়ে পাতলুন গুটিয়ে ফেলা

সেই সাথে টুপি ঘোরাতে থাকা আর

এক মনে নেচে যাওয়া

এবং নদীতে সাঁতরানো

পিকনিকে যাওয়ার পর

গ্রীষ্মের মাঝামাঝি একসময়

এবং এভাবে খুব স্বাভাবিকভাবে

‘বাঁচার চেষ্টা করে যাওয়া’

আসলেই তাই

আর ঠিক তখনই এসবের মাঝখানে

মৃদু হেসে হাজির হয়ে যান

মূর্তিমান মরটিশিয়ান, মানে দাফনকারী

back to top