কবি কামাল চৌধুরী
প্রতিবিম্ব
ভেঙে ফেলার পর খুঁজে দেখবো আবার তোমাকে
দরোজার পাশে লেগে থাকা চুরমার অশ্রুকণায়
যেখানে দালান উঠছে তার নিচে সিঁড়ি ভাঙছে কেউ
তোমার হাঁটার শব্দে খুঁজে ফিরবো ভাঙা কাঁচ!
হাত ধরতে গিয়ে ভেঙে যাচ্ছে হাতলহীন চেয়ার
ভেতরে উঁকি দিচ্ছে যারা, তারাও চুরমার একা একা
সেখানে প্রতিটি বিন্দু ও ভরকেন্দ্রে ভেঙে পড়ছে সেতু
গোলকধাঁধার তীরে প্রতিবিম্বের আলো ও চিৎকার!
ভাঙা কাঁচে, অশ্রুকণায় এভাবেই খুঁজবো তোমাকে।
জন্ম-নিবন্ধন
আমার জন্ম হয়েছিল বৃষ্টির আগে, তোমাদের বর্ষাকালে
পরের শ্রাবণ মাসে আমার জন্মদিনÑ
ভেজা শালিকের ঠোঁট থেকে খড়কুটো আর ভাটফুলের আর্দ্রতা নিয়ে
নদী পার হতে দেখি ফেরিঘাটে মেঘের চিৎকার,
দেখি মাছেদের ঢেউয়ে শীত এসে গেছে।
বহুকাল আগে আমি কারো পুত্র কারো কন্যা
কারো শীত, কারো গ্রীষ্ম
বহুকাল আগে আমি আমি আমি আমি আমি আমি
বহুকাল পরে আমি আমি আমি আমি আমি আমি
আরো পরে আমি আমি আমি আমি আমি আমি
জামা উড়িয়ে দেখি আস্তিন গলিয়ে কোনো ইতিহাস নাই
ইস্কুলের খাতায় লেখা আছে জন্ম তারিখ!
শুধু ইস্কুল জানে জন্মেরও দুবছর অথবা তিন বছর পরে
আবার জন্মাবো আমি
শীত কিংবা গ্রীষ্মকালে হয়তোবা বৃষ্টির আগে...
প্রতিপৃষ্ঠা নদীর জীবন
সন্ধ্যার আগেই তুমি পার হলে নদী
নদীটা পলাশরাঙ্গা, নদীটা শিমুল
এভাবে ছাপিয়ে যদি উঠেছি দুকূল
কী নাম আমার বল, অদূরে যমুনা...
নাম নাই, পাখি ওড়েÑ ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিও অস্থির
বিকেলে কি বসেছিলে, সন্ধ্যাতারা খসেছে কখন?
দূরে আমি গৃহবন্দিÑ কে ডেকেছে গোধূলির মন
রক্তমাংসে পরিবাহী, আদিগন্তে মাতাল মাস্তুল...
স্রোতের সহায় চাঁদ; ছুটন্ত, তির্যক
বহু পূর্ণিমার পরে জেগেছে শরীর
ভাটায় এমন দৃশ্য! নিঃসঙ্গ নদীর
পর্যটন শেষ হলে মেঘ জন্ম হও...
ব্যাকুল সন্ধ্যায় তুমি আঁকাবাঁকা রাতের মোহর
প্রাচীন ভাষার পাশে নীরবতা দাঁড়াও ক্ষণিক
পথে পথে জনশূন্য, কাশবন আজ চিনে নিক
বন্দনা গৃহের করিÑ প্রতিপৃষ্ঠা নদীর জীবন!
গালগল্প
নিজের মতোই বলি ফিরে এসো বসন্তে আবার
তোমাকে পাখির মূল্যে ফেরি করে উড়িয়ে দিয়েছি সেই কবে!
এখন চিৎকার এসে ডাক দিলে চেয়ে দেখি সকলি কাহিনী
সেই কবে লিখেছি খাতায়, রোজনামচার আগে হেঁটে যাচ্ছি তোমাদের বাড়ি।
আলোটা জ্বালিয়ে দিলে বলি ভোর এসে যাচ্ছে ফের
নিজের মতোই আমি অসম্পূর্ণ সাঁকোর দুপাশে
এই শীতে উপলক্ষ্য ছাড়া বৃন্দাবন!
কুয়াশা পড়ার পরে মনে রেখ হাবিজাবি আমিই লিখেছি।
বোঝাতে চেয়েছি আমি প্রলাপের আগে আমাদের ঘরবাড়ি ছিল
আমাদের ছিল কিছু রাজনীতি প্রেম ও বিজ্ঞান
কিছুই সম্পূর্ণ নয়, প্রতিটি চরণ পড়োÑ কবি এসে অবিদ্যা শিখাক
নিজের মতোই ভাবি, বসন্তের গালগল্প সামান্য উপম
তোমাকে চিনতে চাই
মুখোশ সরিয়ে তোমাকে চিনতে চাই
ভোরে আমাদের দেখা হবে কোনোদিন
এখনো সময় রাস্তা পেরুতে বাকি
কবে হেমন্তে পেয়ে যাবো ভ্যাকসিন?
স্মৃতির শহরে কবিতা ফিরেছে ফের
অলসযাপনে ফেসবুকে এত ছবি
তিরিশ পেরুতে পারলো না পাঠিকারা
আপেলে কামড় দিয়ে ভাবে বড়ো কবি!
বাজারে তোমাকে খুঁজে পাচ্ছে না কেউ
তোমার শাড়িটা কাটা আঙুলের শাড়ি
আলপথ থেকে জোছনার খতিয়ানে
সামান্য আলো, তাই আমাদের বাড়ি।
আমি যে তোমার ঘোরে, মৌতাতে আছি
খুব ভোরে আমি মহুয়া পাতার শিসে,
ভাবি প্রতিদিন, পাখি হয়ে যাবো ঘ্রাণে
রঙধনু আর পালকের ওমে মিশে।
কিন্তু তোমার কররেখা, গোধূলিতে
খোয়াওঠা পথে ফেলে রাখে উত্তাপ
আমি এসে গেছি, কার্তিকে খড়কুটো
ভেঙে দিতে এই দূরত্বরেখার পাপ।
আর যদি তুমি খড়কুটো জ্বেলে দিয়ে
হতে পারো কোনো উন্মুখ শীতরাত
দুখী কম্বলে জেগে যাবে ভরা চাঁদ
শরীরে আমার ধ্বংসের শ্বাসাঘাত!
কবি কামাল চৌধুরী
শনিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২১
প্রতিবিম্ব
ভেঙে ফেলার পর খুঁজে দেখবো আবার তোমাকে
দরোজার পাশে লেগে থাকা চুরমার অশ্রুকণায়
যেখানে দালান উঠছে তার নিচে সিঁড়ি ভাঙছে কেউ
তোমার হাঁটার শব্দে খুঁজে ফিরবো ভাঙা কাঁচ!
হাত ধরতে গিয়ে ভেঙে যাচ্ছে হাতলহীন চেয়ার
ভেতরে উঁকি দিচ্ছে যারা, তারাও চুরমার একা একা
সেখানে প্রতিটি বিন্দু ও ভরকেন্দ্রে ভেঙে পড়ছে সেতু
গোলকধাঁধার তীরে প্রতিবিম্বের আলো ও চিৎকার!
ভাঙা কাঁচে, অশ্রুকণায় এভাবেই খুঁজবো তোমাকে।
জন্ম-নিবন্ধন
আমার জন্ম হয়েছিল বৃষ্টির আগে, তোমাদের বর্ষাকালে
পরের শ্রাবণ মাসে আমার জন্মদিনÑ
ভেজা শালিকের ঠোঁট থেকে খড়কুটো আর ভাটফুলের আর্দ্রতা নিয়ে
নদী পার হতে দেখি ফেরিঘাটে মেঘের চিৎকার,
দেখি মাছেদের ঢেউয়ে শীত এসে গেছে।
বহুকাল আগে আমি কারো পুত্র কারো কন্যা
কারো শীত, কারো গ্রীষ্ম
বহুকাল আগে আমি আমি আমি আমি আমি আমি
বহুকাল পরে আমি আমি আমি আমি আমি আমি
আরো পরে আমি আমি আমি আমি আমি আমি
জামা উড়িয়ে দেখি আস্তিন গলিয়ে কোনো ইতিহাস নাই
ইস্কুলের খাতায় লেখা আছে জন্ম তারিখ!
শুধু ইস্কুল জানে জন্মেরও দুবছর অথবা তিন বছর পরে
আবার জন্মাবো আমি
শীত কিংবা গ্রীষ্মকালে হয়তোবা বৃষ্টির আগে...
প্রতিপৃষ্ঠা নদীর জীবন
সন্ধ্যার আগেই তুমি পার হলে নদী
নদীটা পলাশরাঙ্গা, নদীটা শিমুল
এভাবে ছাপিয়ে যদি উঠেছি দুকূল
কী নাম আমার বল, অদূরে যমুনা...
নাম নাই, পাখি ওড়েÑ ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিও অস্থির
বিকেলে কি বসেছিলে, সন্ধ্যাতারা খসেছে কখন?
দূরে আমি গৃহবন্দিÑ কে ডেকেছে গোধূলির মন
রক্তমাংসে পরিবাহী, আদিগন্তে মাতাল মাস্তুল...
স্রোতের সহায় চাঁদ; ছুটন্ত, তির্যক
বহু পূর্ণিমার পরে জেগেছে শরীর
ভাটায় এমন দৃশ্য! নিঃসঙ্গ নদীর
পর্যটন শেষ হলে মেঘ জন্ম হও...
ব্যাকুল সন্ধ্যায় তুমি আঁকাবাঁকা রাতের মোহর
প্রাচীন ভাষার পাশে নীরবতা দাঁড়াও ক্ষণিক
পথে পথে জনশূন্য, কাশবন আজ চিনে নিক
বন্দনা গৃহের করিÑ প্রতিপৃষ্ঠা নদীর জীবন!
গালগল্প
নিজের মতোই বলি ফিরে এসো বসন্তে আবার
তোমাকে পাখির মূল্যে ফেরি করে উড়িয়ে দিয়েছি সেই কবে!
এখন চিৎকার এসে ডাক দিলে চেয়ে দেখি সকলি কাহিনী
সেই কবে লিখেছি খাতায়, রোজনামচার আগে হেঁটে যাচ্ছি তোমাদের বাড়ি।
আলোটা জ্বালিয়ে দিলে বলি ভোর এসে যাচ্ছে ফের
নিজের মতোই আমি অসম্পূর্ণ সাঁকোর দুপাশে
এই শীতে উপলক্ষ্য ছাড়া বৃন্দাবন!
কুয়াশা পড়ার পরে মনে রেখ হাবিজাবি আমিই লিখেছি।
বোঝাতে চেয়েছি আমি প্রলাপের আগে আমাদের ঘরবাড়ি ছিল
আমাদের ছিল কিছু রাজনীতি প্রেম ও বিজ্ঞান
কিছুই সম্পূর্ণ নয়, প্রতিটি চরণ পড়োÑ কবি এসে অবিদ্যা শিখাক
নিজের মতোই ভাবি, বসন্তের গালগল্প সামান্য উপম
তোমাকে চিনতে চাই
মুখোশ সরিয়ে তোমাকে চিনতে চাই
ভোরে আমাদের দেখা হবে কোনোদিন
এখনো সময় রাস্তা পেরুতে বাকি
কবে হেমন্তে পেয়ে যাবো ভ্যাকসিন?
স্মৃতির শহরে কবিতা ফিরেছে ফের
অলসযাপনে ফেসবুকে এত ছবি
তিরিশ পেরুতে পারলো না পাঠিকারা
আপেলে কামড় দিয়ে ভাবে বড়ো কবি!
বাজারে তোমাকে খুঁজে পাচ্ছে না কেউ
তোমার শাড়িটা কাটা আঙুলের শাড়ি
আলপথ থেকে জোছনার খতিয়ানে
সামান্য আলো, তাই আমাদের বাড়ি।
আমি যে তোমার ঘোরে, মৌতাতে আছি
খুব ভোরে আমি মহুয়া পাতার শিসে,
ভাবি প্রতিদিন, পাখি হয়ে যাবো ঘ্রাণে
রঙধনু আর পালকের ওমে মিশে।
কিন্তু তোমার কররেখা, গোধূলিতে
খোয়াওঠা পথে ফেলে রাখে উত্তাপ
আমি এসে গেছি, কার্তিকে খড়কুটো
ভেঙে দিতে এই দূরত্বরেখার পাপ।
আর যদি তুমি খড়কুটো জ্বেলে দিয়ে
হতে পারো কোনো উন্মুখ শীতরাত
দুখী কম্বলে জেগে যাবে ভরা চাঁদ
শরীরে আমার ধ্বংসের শ্বাসাঘাত!