alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: শনিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২১

অগ্রহায়ণ
কালীকৃষ্ণ গুহ
আবার অগ্রহায়ণ মাস
ফিরে এল।
আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকৃতির কাছে।
এই হিম এই সুসময়
বছরের শ্রেষ্ঠ এই কালখণ্ড-
বিনম্র প্রণাম।
বহু-প্রশংসিত এই মাসে
বহুকাল আগে
শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের সব পরামর্শ অস্বীকার করে
কুরুক্ষেত্রে
ভ্রাতৃঘাতী ‘ধর্মযুদ্ধ’ শুরুহয়েছিল।
সেই থেকে বছরের এই কালখ-টুকু
স্মরণের
আত্মজিজ্ঞাসার
বিস্মরণের
শরশয্যার...

দুটি কবিতা
নাসির আহমেদ
সময়ের সেই ট্রেনে যেতে যেতে
ট্রেন এসে হয়তোবা থামবে এখানে এই অগ্নির জংশনে
স্মৃতিকণা থেকে জল ঝরবে তখনও মনে মনে।
ট্রেন যায় সময়ের ধারাবাহিকতা লাইন ধরে
অগ্নি আর রক্তভেজা সেই দিনগুলি মনে পড়ে।

আমরা পেরিয়ে যাই এইভাবে ইতিহাস- ভূগোলের সীমা
একাত্তর জেগে থাকে রক্তস্নাত স্মৃতির নীলিমা!
উপনিবেশের কালো চাবুকের নিচে ক্রোধ আর্তনাদ করে
তেইশটি বছর পরে ‘সাহস’ শব্দটি লিখি রক্তের অক্ষরে।

ট্রেন আসে ট্রেন যায় স্মৃতির জংশনে নামে রাত
রাত্রি শেষে ভোর হবে, আমাদের রক্তে জ্বলে মুষ্টিবদ্ধ হাত।
আলোর প্রপাত চোখে অন্ধকার খেলে যায় দূরে
দেবদূতের মতো পিতা সহসা ওঠেন জেগে অন্ধকার ফুঁড়ে।

তাঁর সঙ্গে পথে নামি, তাঁরই ইশারায় পথ চলি
সেই তো প্রথম আমি আর বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞায় জ্বলি।
জ্বলে ওঠে দাউদাউ সাহসের তীব্র শিখা এই লোকালয়ে
একটি আঙুল উঠে যায় আকাশের দিকে অসীম প্রত্যয়ে!

সেই মহাসময়ের জনসমুদ্রেই শুনি বজ্রকণ্ঠ-স্বর
স্বাধিকার হয়ে যায় কী নির্ভয়ে স্বাধীনতা-যুদ্ধজয়ী ঝড়!
অগ্নির দেবতা যেন পুড়ে দেন দুঃস্বপ্নের যত আবর্জনা
শত্রুর বিরুদ্ধে তুলি একযোগে ছোবলের সাত কোটি ফণা।

পঞ্চাশ বছর পরে আজ দেখি সময়ের তীব্র ঝড় শেষে
অপমান-লাঞ্ছনার গ্লানি পার হয়ে মহাগৌরবের দেশে
দাঁড়িয়েছে মাতৃভাষা আর স্বাধীনতা এই রূপসী বাংলায়,
বিস্ময়ে পৃথিবী দেখে একই ট্রেনে বঙ্গবন্ধু-রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলাদেশ যায়!

রক্তস্নাত অগ্নিদগ্ধ সেই যে চরম স্মৃতিমাখা দুঃসময়
সে-সময় পাড়ি দিয়ে আমরা গর্বিত আজ প্রত্যয়ী নির্ভয়।

দেহ
গৌতম গুহ রায়
হোমাগ্নির উত্থিত বিল্বপত্র মন্ত্রের স্বরে বলে
‘শান্ত হও এবার, জলের দিকে তাকাও,
একদা যেখানে লিপ্ত ছিলে কামের চৌষট্টিকলায়,
মীনজন্মের রমণী তল্লাশে।
আজ সেখানে দেখো প্রাণহীন ঝিনুক ভাসে,
যুদ্ধস্মৃতিপূর্ণ সেনার ছিন্নভিন্ন দেহ ভেসে যায়,
ভেসে যায় নগর বাউলের অর্ধদগ্ধ দেহ।

আত্মরতি মগ্ন প্রাজ্ঞ ঋষি, রক্ষ পায়নি,
অগ্নির অগম্য মন্ত্র কোলাহল হয়ে পোড়ায়, ভষ্ম
পাতাদের মতো উড়ে উড়ে পড়ে ক্ষীণতোয়া জলদেহে।

অসুখ
রাতুল দেববর্মণ
কখন লুকিয়ে এসে
বুকের গভীরে
রোগ বাসা বাঁধে,
কেউ জানে না; জেনো
জীবন শুধুই নয়
অনাময় জীবন;

আলো চলে গেলে
বুঝি, অন্ধকার আছে,
অন্ধকারে-
স্বগতোক্তি আলোর অধিক।


কবিতা ধ্বংসকামী
নেশার ঘোর
ধমনীর ভেতরে তার
যন্ত্রণার রোগ
কবিকে বাঁচাতে পারে
উৎকম্পন চোখ
অতিমারিহীন উছল জীবন

ক্ষতহীন ভালবাসা
মুখোশহীন মুখ

আত্মপরিচয়
সব সমুদ্রের জল যদি একই, নোনা
সমস্ত জ্যোৎস্নার রং অবিকল সোনা
তাহলে তোমার পরিচয় তুমি খোঁজো
তুমি যে ‘মানুষ’ এই পরিচয় বোঝো?

ভীষণ সন্দেহ জাগে মানুষ চিনো না তুমি কতটা ‘মানুষ’
তোমার থাকতো যদি এতোটুকু হুঁশ
তাহলে দাঙ্গায় তুমি মেতে উঠবে কেন!
তুমি তো মানুষ নও মনুষ্য আকৃতি শুধু যেন!

একই আকাশের নীল আলোতে থেকেও তাই নিত্য আলোহীন
একই বাতাসের শ্বাস-নিঃশ্বাস নিয়েও তুমি ভিন্ন প্রতিদিন।
যাকে হত্যা করো তারও রক্তরং লাল
অভিন্ন রক্তের সত্তা, তবু মনুষত্বহীন অন্ধ চিরকাল!

তুমিতো নদীর ভাই, অরণ্যের বোন
প্রকৃতির সৌন্দর্যের সব আলোড়ন
তোমার সত্তাকে ছুঁয়ে থাকে আজীবন
তবু অন্ধ হত্যা করো নিসর্গ-প্রকৃতি, নদী-বন।

অভিন্ন কান্নার ভাষা, সব আনন্দের উচ্ছলতা
সুখেদুঃখে মানুষের মানবিক যত বিহ্বলতা
সবই যদি এক, কেন দেশকালে ভেদ!
ধর্মবর্ণ ভাগ করে কী নির্মম অনর্থ বিভেদ!

অপেক্ষায় আছি কবে ‘মানুষ’ তোমার হবে সেই বোধোদয়
প্রথমে মানুষ তুমি, তারপরে যাবতীয় অন্য পরিচয়।
[আগামী ৫ ডিসেম্বর কবি নাসির আহমেদের জন্মদিন। তাকে শুভেচ্ছা।]

ঘর আর পর
খোরশেদ বাহার
সন্ধ্যা উতরে এখন বেশ রাত
রাস্তায় আলোর ঝলকানি যেমন বেড়েছে
তেমনি কমে এসেছে ট্রাফিকের কোলাহল।
ব্যস্ত দিনের শেষে প্রতিদিনের মতো ঘরে ফেরা।

আজ কারও সাথে কথা হয়নি
অনেক কথা উঁকিঝুঁকি মারছে
তেলাপোকার মতো সমস্ত বুকের উঠোনজুড়ে
কথাগুলো কেমন দৌড়াচ্ছে কেবল।

হাঁটতে হাঁটতে তিন রাস্তার মোড়ে এসে
ভাবতে থাকি, কী এমন কথা?
নাহ্, তেমন কিছুই নয়। না প্রেম
না ভালোবাসা, না সংসার, না আপন
না স্নিগ্ধতা, না বিমুগ্ধতা
তবুও কিসের আঁচড়ানি বুকে মোচড় তোলে।
ঘরেই ফিরে চলি
কে আছে আর এমন আপন
যাকে বুক খুলে সব দেখিয়ে বলি
দেখোতো, তেলাপোকাটা বুকের ঠিক কোনখানে?

সাইন্সল্যাব মোড়ে রিক্সাকে ইউটার্ন নিতে বলি
হালকা বাতাস লাগে শরীরে
বেশ চনমনে, বেশ উচ্ছল, বেশ প্রাণবন্ত
বাতাসের সাথে কথা বলি,
কথা বলি দোকানের নিয়ন বোর্ডের সাথে
স্ট্রিট লাইটের সাথে, তার সাথে
কথা বলি, যাব যার কাছে।

অবশেষে ফিরে আসি, ঘরে নয়
রইলো পড়ে ঘর
চিরচেনা পর, বাড়ায় দু’হাত
চিবুকে হাত রেখে বলেছে সে,
এতোটা দেরিতে এলে, এতোটা অন্ধকারে
এতটুকু পথ!
শুধু বলেছিলাম, একটা সিগ্রেট হবে, দেশলাই।

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

শনিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২১

অগ্রহায়ণ
কালীকৃষ্ণ গুহ
আবার অগ্রহায়ণ মাস
ফিরে এল।
আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকৃতির কাছে।
এই হিম এই সুসময়
বছরের শ্রেষ্ঠ এই কালখণ্ড-
বিনম্র প্রণাম।
বহু-প্রশংসিত এই মাসে
বহুকাল আগে
শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের সব পরামর্শ অস্বীকার করে
কুরুক্ষেত্রে
ভ্রাতৃঘাতী ‘ধর্মযুদ্ধ’ শুরুহয়েছিল।
সেই থেকে বছরের এই কালখ-টুকু
স্মরণের
আত্মজিজ্ঞাসার
বিস্মরণের
শরশয্যার...

দুটি কবিতা
নাসির আহমেদ
সময়ের সেই ট্রেনে যেতে যেতে
ট্রেন এসে হয়তোবা থামবে এখানে এই অগ্নির জংশনে
স্মৃতিকণা থেকে জল ঝরবে তখনও মনে মনে।
ট্রেন যায় সময়ের ধারাবাহিকতা লাইন ধরে
অগ্নি আর রক্তভেজা সেই দিনগুলি মনে পড়ে।

আমরা পেরিয়ে যাই এইভাবে ইতিহাস- ভূগোলের সীমা
একাত্তর জেগে থাকে রক্তস্নাত স্মৃতির নীলিমা!
উপনিবেশের কালো চাবুকের নিচে ক্রোধ আর্তনাদ করে
তেইশটি বছর পরে ‘সাহস’ শব্দটি লিখি রক্তের অক্ষরে।

ট্রেন আসে ট্রেন যায় স্মৃতির জংশনে নামে রাত
রাত্রি শেষে ভোর হবে, আমাদের রক্তে জ্বলে মুষ্টিবদ্ধ হাত।
আলোর প্রপাত চোখে অন্ধকার খেলে যায় দূরে
দেবদূতের মতো পিতা সহসা ওঠেন জেগে অন্ধকার ফুঁড়ে।

তাঁর সঙ্গে পথে নামি, তাঁরই ইশারায় পথ চলি
সেই তো প্রথম আমি আর বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞায় জ্বলি।
জ্বলে ওঠে দাউদাউ সাহসের তীব্র শিখা এই লোকালয়ে
একটি আঙুল উঠে যায় আকাশের দিকে অসীম প্রত্যয়ে!

সেই মহাসময়ের জনসমুদ্রেই শুনি বজ্রকণ্ঠ-স্বর
স্বাধিকার হয়ে যায় কী নির্ভয়ে স্বাধীনতা-যুদ্ধজয়ী ঝড়!
অগ্নির দেবতা যেন পুড়ে দেন দুঃস্বপ্নের যত আবর্জনা
শত্রুর বিরুদ্ধে তুলি একযোগে ছোবলের সাত কোটি ফণা।

পঞ্চাশ বছর পরে আজ দেখি সময়ের তীব্র ঝড় শেষে
অপমান-লাঞ্ছনার গ্লানি পার হয়ে মহাগৌরবের দেশে
দাঁড়িয়েছে মাতৃভাষা আর স্বাধীনতা এই রূপসী বাংলায়,
বিস্ময়ে পৃথিবী দেখে একই ট্রেনে বঙ্গবন্ধু-রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলাদেশ যায়!

রক্তস্নাত অগ্নিদগ্ধ সেই যে চরম স্মৃতিমাখা দুঃসময়
সে-সময় পাড়ি দিয়ে আমরা গর্বিত আজ প্রত্যয়ী নির্ভয়।

দেহ
গৌতম গুহ রায়
হোমাগ্নির উত্থিত বিল্বপত্র মন্ত্রের স্বরে বলে
‘শান্ত হও এবার, জলের দিকে তাকাও,
একদা যেখানে লিপ্ত ছিলে কামের চৌষট্টিকলায়,
মীনজন্মের রমণী তল্লাশে।
আজ সেখানে দেখো প্রাণহীন ঝিনুক ভাসে,
যুদ্ধস্মৃতিপূর্ণ সেনার ছিন্নভিন্ন দেহ ভেসে যায়,
ভেসে যায় নগর বাউলের অর্ধদগ্ধ দেহ।

আত্মরতি মগ্ন প্রাজ্ঞ ঋষি, রক্ষ পায়নি,
অগ্নির অগম্য মন্ত্র কোলাহল হয়ে পোড়ায়, ভষ্ম
পাতাদের মতো উড়ে উড়ে পড়ে ক্ষীণতোয়া জলদেহে।

অসুখ
রাতুল দেববর্মণ
কখন লুকিয়ে এসে
বুকের গভীরে
রোগ বাসা বাঁধে,
কেউ জানে না; জেনো
জীবন শুধুই নয়
অনাময় জীবন;

আলো চলে গেলে
বুঝি, অন্ধকার আছে,
অন্ধকারে-
স্বগতোক্তি আলোর অধিক।


কবিতা ধ্বংসকামী
নেশার ঘোর
ধমনীর ভেতরে তার
যন্ত্রণার রোগ
কবিকে বাঁচাতে পারে
উৎকম্পন চোখ
অতিমারিহীন উছল জীবন

ক্ষতহীন ভালবাসা
মুখোশহীন মুখ

আত্মপরিচয়
সব সমুদ্রের জল যদি একই, নোনা
সমস্ত জ্যোৎস্নার রং অবিকল সোনা
তাহলে তোমার পরিচয় তুমি খোঁজো
তুমি যে ‘মানুষ’ এই পরিচয় বোঝো?

ভীষণ সন্দেহ জাগে মানুষ চিনো না তুমি কতটা ‘মানুষ’
তোমার থাকতো যদি এতোটুকু হুঁশ
তাহলে দাঙ্গায় তুমি মেতে উঠবে কেন!
তুমি তো মানুষ নও মনুষ্য আকৃতি শুধু যেন!

একই আকাশের নীল আলোতে থেকেও তাই নিত্য আলোহীন
একই বাতাসের শ্বাস-নিঃশ্বাস নিয়েও তুমি ভিন্ন প্রতিদিন।
যাকে হত্যা করো তারও রক্তরং লাল
অভিন্ন রক্তের সত্তা, তবু মনুষত্বহীন অন্ধ চিরকাল!

তুমিতো নদীর ভাই, অরণ্যের বোন
প্রকৃতির সৌন্দর্যের সব আলোড়ন
তোমার সত্তাকে ছুঁয়ে থাকে আজীবন
তবু অন্ধ হত্যা করো নিসর্গ-প্রকৃতি, নদী-বন।

অভিন্ন কান্নার ভাষা, সব আনন্দের উচ্ছলতা
সুখেদুঃখে মানুষের মানবিক যত বিহ্বলতা
সবই যদি এক, কেন দেশকালে ভেদ!
ধর্মবর্ণ ভাগ করে কী নির্মম অনর্থ বিভেদ!

অপেক্ষায় আছি কবে ‘মানুষ’ তোমার হবে সেই বোধোদয়
প্রথমে মানুষ তুমি, তারপরে যাবতীয় অন্য পরিচয়।
[আগামী ৫ ডিসেম্বর কবি নাসির আহমেদের জন্মদিন। তাকে শুভেচ্ছা।]

ঘর আর পর
খোরশেদ বাহার
সন্ধ্যা উতরে এখন বেশ রাত
রাস্তায় আলোর ঝলকানি যেমন বেড়েছে
তেমনি কমে এসেছে ট্রাফিকের কোলাহল।
ব্যস্ত দিনের শেষে প্রতিদিনের মতো ঘরে ফেরা।

আজ কারও সাথে কথা হয়নি
অনেক কথা উঁকিঝুঁকি মারছে
তেলাপোকার মতো সমস্ত বুকের উঠোনজুড়ে
কথাগুলো কেমন দৌড়াচ্ছে কেবল।

হাঁটতে হাঁটতে তিন রাস্তার মোড়ে এসে
ভাবতে থাকি, কী এমন কথা?
নাহ্, তেমন কিছুই নয়। না প্রেম
না ভালোবাসা, না সংসার, না আপন
না স্নিগ্ধতা, না বিমুগ্ধতা
তবুও কিসের আঁচড়ানি বুকে মোচড় তোলে।
ঘরেই ফিরে চলি
কে আছে আর এমন আপন
যাকে বুক খুলে সব দেখিয়ে বলি
দেখোতো, তেলাপোকাটা বুকের ঠিক কোনখানে?

সাইন্সল্যাব মোড়ে রিক্সাকে ইউটার্ন নিতে বলি
হালকা বাতাস লাগে শরীরে
বেশ চনমনে, বেশ উচ্ছল, বেশ প্রাণবন্ত
বাতাসের সাথে কথা বলি,
কথা বলি দোকানের নিয়ন বোর্ডের সাথে
স্ট্রিট লাইটের সাথে, তার সাথে
কথা বলি, যাব যার কাছে।

অবশেষে ফিরে আসি, ঘরে নয়
রইলো পড়ে ঘর
চিরচেনা পর, বাড়ায় দু’হাত
চিবুকে হাত রেখে বলেছে সে,
এতোটা দেরিতে এলে, এতোটা অন্ধকারে
এতটুকু পথ!
শুধু বলেছিলাম, একটা সিগ্রেট হবে, দেশলাই।

back to top