alt

সাময়িকী

ধারাবাহিক উপন্যাস : সাতাশ

শিকিবু

আবুল কাসেম

: বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২১

(পূর্ব প্রকাশের পর)
পঁয়তাল্লিশ.

প্রাক্তন সম্রাট রেইঝেই গেছেন সম্রাটের দরবারে। অবশ্য আগেই সংবাদ দেয়া ছিল। তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং সম্রাট ইচিঝোও তাকে ভক্তি করেন।

একটা কথা তোমাকে বলা দরকার ইচিজো। বলে কথা শুরুকরলেন রেইঝেই। মানুষের জন্ম মৃত্যু নিয়ে আগাম কিছু বলা মুস্কিল। কখন কার কী হয় বলা তো যায় না। তোমাদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের বোঝাপড়াটা ভালো। তুমি যখন সম্রাট হলে লিয়াসাদা সিননু (সানজু) তখন তোমার বড়। তা সত্ত্বেও তোমাকে ছয় বৎসর বয়সে সম্রাট করে ওকে করা হল ক্রাউন প্রিন্স। ওর বয়স তখন ছিল এগার।

আমার সব মনে আছে, মহামান্য।

কিছুদিন আগে মিচিনাগা আমার ওখানে গিয়েছিল। সে চিন্তিত। তার কন্যা সম্রাজ্ঞী শোশির কোনো পুত্র সন্তান নেই। তেইশির এক পুত্র রয়েছে।

এখন তিনি কী করতে চাইছেন?

সে চাচ্ছে তোমার পরে লিয়াসাদাই সম্রাট হোক।

সবই তো ঠিক আছে।

কথাটা তো গোপন রাখা হয়েছিল ওর নিরাপত্তার কথা ভেবে। তুমি, আমি আর ফুজিওয়ারা নো কানেই একথা জানি। মিচিনাগারা জানে না। এমন কি লিয়াসাদাইও না।

কাগজপত্রতো করা আছে। আমার অবর্তমানে এই কাগজই কথা বলবে।

আমি কাগজের কথা না বলে তাকে বলে দিয়েছি লিয়াসাদাই (সানজু) সম্রাট হবে।

ভালো করেছেন। তা তাঁর জানা থাকা দরকার।

আমি তাকে বলে দিয়েছি সানজুর পর তোমার বড় ছেলে সম্রাট হবে।

আমার পুত্র তো একটাই।

সে আপত্তি করেছে। কিন্তু আমি শক্ত ছিলাম।

আমি আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

এখন মনে হয় ব্যাপারটা গোপন রাখার কোনো দরকার নেই।

আমারও তা-ই মনে হয়।

লিয়াসাদাকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করা হলো।

অতসুমিচি প্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। তার বাবা তাঁকে মিথ্যা বলেছেন। ইঝোমি তাকে সত্য তথ্যই দিয়েছিলেন। তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠলেন। বাবা রেইঝেইকে বললেন, আপনি আমার কাছে সত্য বলেননি। আমি বঞ্চিত হতে পারি না। আমাকে দুইভাবে বঞ্চিত করা হল। এখন তো নয়ই ভবিষ্যতেও না।

রেইঝেই তার সমস্ত অভিযোগ অনুযোগ শুনে বললেন, শান্ত হও তুমি। এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বিশ বছর আগে, তোমার নানা তা করেছেন আমাদের উপস্থিতিতে। নিরাপত্তার খাতিরে তা গোপন রাখা হয়। সম্রাটের সম্মতি ছাড়া গোপন দলিলের তথ্য কাউকে বলা যায় না।

তাহলে মিচিনাগা জানলেন কেমন করে?

সে জানে না। আশঙ্কা থেকে তার পদ নিষ্কন্টক করতে সে অনুরোধ জানাতে এসেছে। তোমরা কোথা থেকে জেনেছ জানি না। সম্রাটের সঙ্গে পরামর্শ করে সে দলিল প্রকাশ করে দিয়েছি।

অতসুমিচি তাতেও সন্তুষ্ট নন। বললেন, সে দলির বুদ্ধের সূত্র নয় যে, বদলানো যাবে না। অনুগ্রহ করে ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনা করুন।

ভেবে দেখি কী করা যায়। তুমি এখন এসো।

অতসুমিচি রাগ করে চলে গেলেন, তবে আশা ছাড়লেন না। বড় ভাইয়ের সঙ্গে গিয়ে ঝগড়া বাঁধালেন। সেখান থেকে শকটে চড়ে ইঝোমির বাড়ি।

ইঝোমি শুনে বললেন, আপনি তো আমার কথা বিশ্বাস করেননি। এখন আমাদের উচিত হবে সম্রাট ইচিঝোকে বাঁচিয়ে রাখা এবং সানজুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকিয়ে তোলা। আমি এখন মিচিনাগার কাছে যাব। কেন তিনি আমাকে মিথ্যে বললেন।

আমিও সম্রাটের দরবারে যাব। এরা এত বছর আগে কেন পরিকল্পনা করে আমাকে ঠকাতে চাইছেন তা আমার জানা দরকার।

আমার মতে সম্রাটের সঙ্গে গোল না বাঁধানোই উত্তম। তাঁর সুনজরে থাকলে অনেক সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা।

গোল বাঁধাবো না। তার মনোভাব জানব। তুমি ভেবো না আমি ব্যাপারটা এমনি এমনি ছেড়ে দেব।

মিচিনাগা মন খারাপ করে তার নিজের, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর দরবারে আছেন। তাকে না জানিয়েই সম্রাট এবং রেইঝেই মিলে দলিলটা প্রকাশ করে দিলেন। রেইঝেই-এর সঙ্গে তো এমন কথা ছিল না। এখানে নতুন কোনো ষড়যন্ত্র নেই তো? ব্যাপারটা এমন যে, তা সম্পূর্ণ সম্রাট সংশ্লিষ্ট, প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক কোনো বিষয় নয়, চাইলেও সেখানে তার হস্তক্ষেপের কিছু নেই। এখানে সামুরাইদের মাধ্যমে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সম্রাট পরিবর্তনেরও সুযোগ নেই। তিনি যা করতে চেয়েছিলেন তা-ই সঠিক পথ। এখন একটাই পথ উন্মুক্ত আছে, তা হলো সম্রাটকে সকল বিপদাপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখা। তার মৃত্যু হলেই সকল সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।

এ সময়ই ইঝোমি এসে তার দপ্তরে প্রবেশ করলেন। তাকে দেখে মিচিনাগার রাগই হল। র্তাআগেই ইঝোমি তাকে অনুযোগ করে বললেন, আপনি আমাকে মিথ্যে বলেছেন। সানজুকে সম্রাট করার লক্ষ্যেই আপনারা তাকে ক্রাউন প্রিন্স করেছেন। এই ষড়যন্ত্রের মূলব্যক্তি আপনি।

মিচিনাগার প্রথমে এত রাগ হয়েছিল যে, যা তা বলতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎই তার মনে হলো, তাকে হাতে রাখা দরকার। ভবিষ্যতে কাজে আসতে পারে। উত্তেজিত অবস্থা থেকে মেজাজ ঠা-া করে আনলেন। বললেন, তোমাকে আমি কী বলব, আমিএ সবের কিছুই জানি না। আমাকে জিজ্ঞেস করলে প্রিন্স অতসুমিচির কথাই বলতাম। সেই আমার কাছে সম্রাট হবার উপযুক্ত। তুমি নিজেই দেখো, সানজু হচ্ছে একটা অপদার্থ। তাকে দিয়ে সাম্রাজ্য চলবে? এটা শুনবার পর আমার মাথা ঠিক নেই, আমি সম্রাটের দরবারে যাইনি।

প্রাক্তন সম্রাট রেইঝেই এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পরামর্শ করেননি?

না, করেননি। পরে জানলাম বিশ বছর আগে নাকি এরকম ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে আছে। আমি তেইশির ওপর যেমন ভরসা রাখতে পারি না, সানজুর ওপরও নয়। আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

আসলে তাই?

তুমি বিশ্বাস কর। আমি অতসুমিচির পক্ষে।

অতসুমিচি গেছেন সম্রাটের দরবারে। সম্রাট তাকে দেখে স্মিত হাসলেন। তিনি বললেন, শুনেছ বোধহয় বিশ বছর আগের দলিল প্রকাশ করে দিয়েছি। পরবর্তী সম্রাট তোমার ভাই সানজু। আমি আপনার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে পারি?

কেন নয়? সম্রাটের ইশারায় সবাই দরবার ত্যাগ করলো। প্রিন্স অতসুমিচি বললেন, সংবাদটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।

কেন?

আমি কেন নই?

তুমি তো বলেছিলে এজগৎ শুধু বোগময়, অন্যসব অর্থহীন, সাম্রাজ্য, প্রাসাদ, ধন-সম্পদ কিছু নয়। বলনি?

হ্যাঁ, বলেছিলাম এই কিছুদিন পূর্বে মাত্র। কিন্তু আপনারা তো আমার ভাগ্যবিড়ম্বনা নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিশ্ব বছর আগে।

তখন আমি ছোট ছিলাম। মাত্র ছয় বৎসর বয়স, তোমার চেয়েও কম। তোমার নানা আর বাবা আমাকে দিয়ে ঐ দলিল সই করিয়েছিলেন।

এটা তো বৌদ্ধ সূত্র নয় যে বদলানো যাবে না।

আমাকে আগে মরতে দাও তারপর বদলে দিও।

আপনার বেঁচে থাকা কালেই করে যেতে হবে।

তোমাকে কি করে বুঝাব, তুমি আমার কতটা প্রিয়। কিন্তু যা একবার বলা হয়ে গেছে কিসের ভিত্তিতে তা বদলানো হবে? ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা কর, কৌশলী হও।

বুঝতে পারছি। আসি তাহলে।

অতসুমিচির উঠে যাবার পর দরবারে মিচিনাগা একা প্রবেশ করলেন। অন্য সময় মন্ত্রী, আমলা, সেনাপতিদের কেউ কেউ থাকেন।

সম্রাট তাকে সমীহই করেন। তিনি কেন এসেছেন সম্রাট তা অনুধাবন করতে পারেন। কিন্তু আগে কিছু বললেন না।

মেঝেতে কিমোনো গুছিয়ে দু’জন পদ্মাসনে সামনাসামনি বসলেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর মিচিনাগা বললেন, দলিলটা প্রকাশিত হলো, আমি তার কিছুই জানলাম না। তুমি আমার পর নও। ভাগ্নে আর মেয়ের জামাইও। আমি জানি এটা একান্তই সম্রাটের এখতিয়ার, কিন্তু আমাকে জানালে তো ক্ষতি ছিল না। আমাকে রেইঝেই-এর কাছে ছোট করা হল। ছোট করা হলো অন্যদের কাছেও। আমি কি এ কাজে তোমাকে বাধা দিতাম?

সম্রাট ইচিজো বললেন, এটা একটা অঙ্গীকারনামা। বিশ বছর আগে সম্পাদিত। বদল করার কোনো সুযোগই নেই। শুধু নিরাপত্তার কথা ভেবে এতদিন গোপন রাখা হয়েছে। যদি মনে করেন এতে আপনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, তার জন্য আমি দুঃখিত। আমি একটা বিষয় স্থির করেছি। সেটা কি?

ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি একাদশ শতকের জাপানের গৌরবময় সাহিত্য-সমৃদ্ধির পটভূমিতে চারজন বিখ্যাত নারী কবি ও ঔপন্যাসিককে নিয়ে রচিত। বিশ্বসাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক মুরাসাকি শিকিবু আছেন এর কেন্দ্রে। আরও আছেন কবি আকাঝুমি ইমন, কবি ইঝোমি শিকিবু এবং বিখ্যাত “দ্য পিলুবুক” রচয়িতা সেইসোনাগান

আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ থেকে আপনাকে কাম্পাকু উপাধিতে ভূষিত করা হবে। তা হলে শুধু আপনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই নয়, আমার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সম্রাটকে উপদেশ দিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে এ পদের সম্মান অনেক বড়।

মিচিনাগা কাম্পাকুর মর্ম বোঝেন। তিনি খুশি হলেন এবং উপাধি নিয়ে চলে গেলেন।

এদিকে পরবর্তী সম্রাট কে হবেন সে সংবাদ সম্রাজ্ঞী তেইশির কাছেও পৌচেছে। অসুস্থাবস্থায় তার অস্থিরতা খুব বেড়ে গেছে। তা অন্তসত্তা নারীর জন্য খুবই ক্ষতিকর। তারপরও তিনি বললেন, পালকি প্রস্তুত কর। আমি সম্রাটের দরবারে যাব।

লেডি ডাক্তার বললেন, তা মোটেও ঠিক হবে না মহামান্যা। সন্তানের ক্ষতি হতে পারে।

তুমি আমাকে বাধা দিচ্ছ? আমি যে কোনো মূল্যে সম্রাটের মুখোমুখি হবো। আমি জানতে চাইব, আমার পুত্রকে কেন বঞ্চিত করা হল? কী তার অপরাধ? আমিই বা কী এমন অন্যায় করেছি। কার ষড়যন্ত্রে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাও জানতে হবে। আমার সন্তানের চেয়ে কেন সানজু এত প্রিয় তা না জেনে আমার শান্তি নেই।

ছেচল্লিশ.

কাম্পাকু উপাধি পেয়ে মিচিনাগা মুরাসাকির দপ্তরের দিকে আসছেন। শরতের প্রকৃতিটা বড় সুন্দর। শরতের সাদাফুলগুলো এ সময়ে ফুটে আছে। তাতে পবিত্রতার একটা প্রতীকিভাব। আকাশের সাদা মেঘ উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বেপরোয়া বাতাস। মিচিনাগার মনটা ফুরফুরে।

মুরাসাকি জানালা দিয়ে দেখলেন তিনি আসছেন। তাকে দেখে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয় তার। তিনি আসলেই নিরিবিলি থাকতে চান এবং কবিতাপত্র লেখালেখিটাই উপভোগ করতে চান।

সাম্রাজ্যের পরবর্তী সম্রাট নিয়ে এতকিছু ঘটে যাচ্ছে সে দিকে তার খবর নেই।

মিচিনাগা দপ্তরে এলেন এবং যথারীতি পদ্মাসন করে বসলেন। মুরাসাকিকে বললেন, দু’টো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আছে। একটি ভালো, আরেকটি মন্দ। কোনটি শুনতে চাও আগে?

আপনিই বলুন মহামান্য।

খারাপ সংবাদটি হলো পরবর্তী সম্রাট হচ্ছেন রেইঝেই পুত্র সানজু। মুরাসাকি জানেন তার সম্রাঙ্গীর কোনো সন্তান নেই বলে সম্রাঙ্গী তেইশির পুত্রই অবধারিতভাবে সম্রাট হবেন। আর তা কোনভাবেই মিচিনাগা চান না। এটা খারাপ সংবাদ কেন?

সাম্রাজ্যের অধিকারটা আবার রেইঝেই পরিবারে চলে যাচ্ছে। এরা গেঞ্জি সম্প্রদায়ভুক্ত।

ইচ্ছার বাইরে মুরাসাকি বললেন, তা ঠিক। সুসংবাদ সম্পর্কে বলুন।

সম্রাট আমাকে কাম্পাকু উপাধি দিয়েছেন।

অভিনন্দন আপনাকে। এটা তো সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান। দুর্লভ সম্মান।

শিশু সম্রাটের উপদেষ্টা হিসেবে মিচিতাকা সেসশু উপাধি পেয়েছিলান। পরিনত সম্রাটের প্রধান উপদেষ্টা হওয়া সত্যিই খুব মর্যাদার।

আপনাকে এখন আরো সতর্ক ও মর্যাদাবোধ নিয়ে চলতে হবে।

তা তো ঠিকই।

তা হলে একটা কথা বলি?

বল।

কবিতা বিনিময়টা বন্ধ থাকুক?

বাইরের সাদা ফুল আর আকাশের সাদা সাদা মেঘ দেখেছ? ঐ রকম পবিত্র ভালোবাসা। তা কলুষিত হয় এমন আত্মঘাতি কাজ আমি করব না।তোমাকে ভালোলাগে এই-ই তো। তুমি পছন্দ না করলে আসব না। ভালোবাসা দূর থেকেও হয়।

না না, সেকথা আমি বলিনি। আপনার মর্যাদার কথা ভেবে বলেছি। আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য না।

তুমি শুধু বড় লেখক না, বড় মনের মানুষও। কী অদ্ভুত ব্যাপার দেখো, মর্যাদাপূর্ণ উপাধিটা পেয়ে সর্বপ্রথম তোমার কাছেই ছুটে এলাম।

আমি তাতে সম্মানিতবোধ করছি। মহামান্য, আপনার এই উপাধি প্রাপ্তিতে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি।

ধন্যবাদ তোমাকে, তাকাকু।

মিচিনাগা উঠে যাবার পর মুরাসাকি ভাবতে বসলেন। সাম্রাজ্যের একনম্বর ব্যক্তি তাকে ভালোবাসেন, সে কথা আজ মুখে বলেও গেলেন এবং সে ভালোবাসায় কোনো কালিমা নেই শরতের সাদা সাদা ফুল আর উরন্ত সাদা সাদা মেঘের মতই পবিত্র। কিন্তু মানুষটি তো নির্ভেজাল নয়। তাকে কী বিশ্বাস করা যায়? তিনি এত শক্তিমান যে, জোর করলেও কিছু করার নেই। তবে তার কন্যা সম্রাজ্ঞী শোশি আছেন মাঝখানে। তিনি তার লেডি-ইন-ওয়েটিংকে নিশ্চয়ই রক্ষা করতে চাইবেন। তারপরও তাকে সতর্ক থাকতে হবে। ইঝোমি যেমন উচ্চাশার গগণচুম্বী রখে চড়ে প্রিন্সকে সম্রাট বানাতে মরিয়া, অথচ তিনি জানেনও না প্রিন্সের হৃদয়ে তার স্থান কোথায়, মুরাসাকি সব জেনেও নিজেকে সংযমী করে রাখছেন, দু’জনের মধ্যে দেয়াল তৈরি করে ভালোবাসাকে স্বর্গীয় মহিমা দিতে আত্মসংযমের পথ বেছে নিয়েছেন।

এদিকে ইঝোমি থেমে নেই। অতসুমিচিকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছেন। সম্রাট তাকে যে কোনো মূল্যে হতে হবে।

আর কি করতে বল? অতসুমিচির ক্লান্তভাব।

ইঝোমি বললেন, রণক্লান্ত হলে চলবে কেন, আমার প্রিয়? সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না, আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে। গুটি চালতে হবে। আমি যে জেনারেলের কাছ থেকে প্রথম জেনেছি, তার সঙ্গে যোগাযোগ করি, নিশ্চয়ই সামুরাই সৈন্যদের সহায়তা পাব।

অতসুমিচি জেনারেলদের সঙ্গে ইঝোমির মাখামাখি পছন্দ করেন না। কিন্তু তাকে সরাসরি কিছু বললেন না। বললেন, সে সময় এখনো আসেনি। আমাকে ভাবতে দাও। সম্রাট এবং বাবার সঙ্গে কথা বলেছি, দেখি এরা প্রত্যাশিত কিছু করেন কিনা। এছাড়া সময়ে কত ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। সবার কাছে আমি আমার দাবি তো করে রেখেছি। ভয় হচ্ছে মিচিনাগাকে।

তাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তার ব্যাপারটা আমি দেখবো। এখন আপনার দরবারে আসা যাওয়া বাড়াতে হবে। আমিও প্রাসাদে যাব ঘনঘন। কান খোলা রাখতে হবে। নিশ্চয়ই সেখানে কোনো না কোনো পথের সন্ধান পাওয়া যাবে।

সম্রাজ্ঞী তেইশি কোনো প্রকার সংবাদ না দিয়ে সম্রাটের দরবারে উপস্থিত হলেন। সম্রাট দরবারে কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তেইশিকে দেখে খুবই অবাক হলেন। বললেন, শরীরের এই অবস্থা নিয়ে তুমি কেন এলে, বললে আমিই যেতাম।

আমি একা কথা বলতে চাই আপনার সঙ্গে। সম্রাটের সভাসদরা বাইরে গেলেন।সম্রাজ্ঞীর মেঝেতে বসতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও বসলেন সম্রাটের মুখোমুখি। সম্রাজ্ঞীর সম্মানিত সহকারী তার কিমোনো ঠিকঠাক করে দেবার পর বাইরে চলে গেল। সম্রাট বললেন, শরীরের অবস্থা তোমার ভালো নয়। বার বার তার চোখ যাচ্ছে সম্রাজ্ঞী উচু তলপেটের দিকে। বোঝা যাচ্ছে বাচ্চাটা বড় হয়ে গেছে। সম্রাজ্ঞী যে কোনো সময় বাচ্চা প্রসব করবেন।

সম্রাজ্ঞীর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও তাকে কথা বলতে হবে। হবু সম্রাটের মাতা বলেই এতদিন জানতেন। কত স্বপ্ন, কত পরিকল্পনা। পুত্র সম্রাট হবার সঙ্গে সঙ্গে মিচিনাগাদের প্রাসাদ থেকে বিতাড়িত করবেন। বিতাড়িত ভাইকে এনে বালক সম্রাটের সেসশু নিযুক্ত করবেন। সব ক্ষমতা থাকবে তার কাছে।

কিন্তু একি হলো? সম্রাটকে অভিযোগের কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, যা শুনলাম তা কি সত্যি?

কী শুনেছ প্রিয়? আমার সন্তান আপনার পর সম্রাট হচ্ছে না।

আংশিক সত্য শুনেছ তুমি।

তা হলে পুরো সত্যটি কী?

সম্রাট বললেন, সম্রাট রেইঝেইদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটি বোঝাপড়া আছে যে, আমার পরে তার সন্তান সানজু সম্রাট হবে।

এটা নিশ্চয়ই মিচিনাগার ষড়ষন্ত্র।

মিচিনাগার ষড়ষন্ত্র হতে যাবে কেন? এ দলিল সম্পাদিত হয়েছে বিশ বছর আগে। সে কথা মিচিনাগা জানবেন কেমন করে? তিনি তো তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। দলিলে স্পষ্ট লেখা রয়েছে সানজুর পর আমাদের সন্তান অতসুইয়াগু সম্রাট হবে।

বিশ বছর আগে তার নাম কোথায় পেল?

সম্রাট হেসে দিয়ে বললেন, নাম নেই, বলা আছে জৈষ্ঠ পুত্রসন্তান। আমি তার নাম বললাম।

আমি এ দলিল মানি না। আপনি নতুন আদেশ জারি করুন।

তা কি ঠিক হবে সম্রাজ্ঞী? অঙ্গীকারনামা দিয়েছি আমি।

আপনি তখন শিশু ছিলেন। আপনার মাতামহের কথায় স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়া এ দলিলের শর্ত বৌদ্ধসূত্র নয় যে, মোছা যাবে না।

আমাকে একটু ভাবতে দাও। বড় অন্যায় হবে, বড় অন্যায়।

ন্যায়-অন্যায় আমি বুঝি না। আমার সন্তান সম্রাট হবে, তার মধ্যে আর কোনো কথা নেই।

একথা বলে তিনি রাগত বসা থেকে উঠতে যাবেন, কিমোনো প্যাঁচিয়ে পড়ে গেলেন। সম্রাট দ্রুত তাকে ধরলেন। লোকজন ডাকলেন। দ্রুত তাকে তার সেবাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হল।

সম্রাটও সঙ্গে সঙ্গে গেলেন। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সম্রাজ্ঞীকে নিয়ে। লেডি ডাক্তার বললেন, তার বিশ্রামের প্রয়োজন। তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।

সম্রাট বসে রইলেন কিছুক্ষণ। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়ে উঠে গেলেন। সম্রাজ্ঞীকে কোনো আশ্বাস না দিয়েই চলে গেলেন। ক্রমশ...

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

ধারাবাহিক উপন্যাস : সাতাশ

শিকিবু

আবুল কাসেম

বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২১

(পূর্ব প্রকাশের পর)
পঁয়তাল্লিশ.

প্রাক্তন সম্রাট রেইঝেই গেছেন সম্রাটের দরবারে। অবশ্য আগেই সংবাদ দেয়া ছিল। তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং সম্রাট ইচিঝোও তাকে ভক্তি করেন।

একটা কথা তোমাকে বলা দরকার ইচিজো। বলে কথা শুরুকরলেন রেইঝেই। মানুষের জন্ম মৃত্যু নিয়ে আগাম কিছু বলা মুস্কিল। কখন কার কী হয় বলা তো যায় না। তোমাদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের বোঝাপড়াটা ভালো। তুমি যখন সম্রাট হলে লিয়াসাদা সিননু (সানজু) তখন তোমার বড়। তা সত্ত্বেও তোমাকে ছয় বৎসর বয়সে সম্রাট করে ওকে করা হল ক্রাউন প্রিন্স। ওর বয়স তখন ছিল এগার।

আমার সব মনে আছে, মহামান্য।

কিছুদিন আগে মিচিনাগা আমার ওখানে গিয়েছিল। সে চিন্তিত। তার কন্যা সম্রাজ্ঞী শোশির কোনো পুত্র সন্তান নেই। তেইশির এক পুত্র রয়েছে।

এখন তিনি কী করতে চাইছেন?

সে চাচ্ছে তোমার পরে লিয়াসাদাই সম্রাট হোক।

সবই তো ঠিক আছে।

কথাটা তো গোপন রাখা হয়েছিল ওর নিরাপত্তার কথা ভেবে। তুমি, আমি আর ফুজিওয়ারা নো কানেই একথা জানি। মিচিনাগারা জানে না। এমন কি লিয়াসাদাইও না।

কাগজপত্রতো করা আছে। আমার অবর্তমানে এই কাগজই কথা বলবে।

আমি কাগজের কথা না বলে তাকে বলে দিয়েছি লিয়াসাদাই (সানজু) সম্রাট হবে।

ভালো করেছেন। তা তাঁর জানা থাকা দরকার।

আমি তাকে বলে দিয়েছি সানজুর পর তোমার বড় ছেলে সম্রাট হবে।

আমার পুত্র তো একটাই।

সে আপত্তি করেছে। কিন্তু আমি শক্ত ছিলাম।

আমি আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

এখন মনে হয় ব্যাপারটা গোপন রাখার কোনো দরকার নেই।

আমারও তা-ই মনে হয়।

লিয়াসাদাকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করা হলো।

অতসুমিচি প্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন। তার বাবা তাঁকে মিথ্যা বলেছেন। ইঝোমি তাকে সত্য তথ্যই দিয়েছিলেন। তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠলেন। বাবা রেইঝেইকে বললেন, আপনি আমার কাছে সত্য বলেননি। আমি বঞ্চিত হতে পারি না। আমাকে দুইভাবে বঞ্চিত করা হল। এখন তো নয়ই ভবিষ্যতেও না।

রেইঝেই তার সমস্ত অভিযোগ অনুযোগ শুনে বললেন, শান্ত হও তুমি। এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বিশ বছর আগে, তোমার নানা তা করেছেন আমাদের উপস্থিতিতে। নিরাপত্তার খাতিরে তা গোপন রাখা হয়। সম্রাটের সম্মতি ছাড়া গোপন দলিলের তথ্য কাউকে বলা যায় না।

তাহলে মিচিনাগা জানলেন কেমন করে?

সে জানে না। আশঙ্কা থেকে তার পদ নিষ্কন্টক করতে সে অনুরোধ জানাতে এসেছে। তোমরা কোথা থেকে জেনেছ জানি না। সম্রাটের সঙ্গে পরামর্শ করে সে দলিল প্রকাশ করে দিয়েছি।

অতসুমিচি তাতেও সন্তুষ্ট নন। বললেন, সে দলির বুদ্ধের সূত্র নয় যে, বদলানো যাবে না। অনুগ্রহ করে ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনা করুন।

ভেবে দেখি কী করা যায়। তুমি এখন এসো।

অতসুমিচি রাগ করে চলে গেলেন, তবে আশা ছাড়লেন না। বড় ভাইয়ের সঙ্গে গিয়ে ঝগড়া বাঁধালেন। সেখান থেকে শকটে চড়ে ইঝোমির বাড়ি।

ইঝোমি শুনে বললেন, আপনি তো আমার কথা বিশ্বাস করেননি। এখন আমাদের উচিত হবে সম্রাট ইচিঝোকে বাঁচিয়ে রাখা এবং সানজুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকিয়ে তোলা। আমি এখন মিচিনাগার কাছে যাব। কেন তিনি আমাকে মিথ্যে বললেন।

আমিও সম্রাটের দরবারে যাব। এরা এত বছর আগে কেন পরিকল্পনা করে আমাকে ঠকাতে চাইছেন তা আমার জানা দরকার।

আমার মতে সম্রাটের সঙ্গে গোল না বাঁধানোই উত্তম। তাঁর সুনজরে থাকলে অনেক সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা।

গোল বাঁধাবো না। তার মনোভাব জানব। তুমি ভেবো না আমি ব্যাপারটা এমনি এমনি ছেড়ে দেব।

মিচিনাগা মন খারাপ করে তার নিজের, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর দরবারে আছেন। তাকে না জানিয়েই সম্রাট এবং রেইঝেই মিলে দলিলটা প্রকাশ করে দিলেন। রেইঝেই-এর সঙ্গে তো এমন কথা ছিল না। এখানে নতুন কোনো ষড়যন্ত্র নেই তো? ব্যাপারটা এমন যে, তা সম্পূর্ণ সম্রাট সংশ্লিষ্ট, প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক কোনো বিষয় নয়, চাইলেও সেখানে তার হস্তক্ষেপের কিছু নেই। এখানে সামুরাইদের মাধ্যমে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সম্রাট পরিবর্তনেরও সুযোগ নেই। তিনি যা করতে চেয়েছিলেন তা-ই সঠিক পথ। এখন একটাই পথ উন্মুক্ত আছে, তা হলো সম্রাটকে সকল বিপদাপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখা। তার মৃত্যু হলেই সকল সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।

এ সময়ই ইঝোমি এসে তার দপ্তরে প্রবেশ করলেন। তাকে দেখে মিচিনাগার রাগই হল। র্তাআগেই ইঝোমি তাকে অনুযোগ করে বললেন, আপনি আমাকে মিথ্যে বলেছেন। সানজুকে সম্রাট করার লক্ষ্যেই আপনারা তাকে ক্রাউন প্রিন্স করেছেন। এই ষড়যন্ত্রের মূলব্যক্তি আপনি।

মিচিনাগার প্রথমে এত রাগ হয়েছিল যে, যা তা বলতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎই তার মনে হলো, তাকে হাতে রাখা দরকার। ভবিষ্যতে কাজে আসতে পারে। উত্তেজিত অবস্থা থেকে মেজাজ ঠা-া করে আনলেন। বললেন, তোমাকে আমি কী বলব, আমিএ সবের কিছুই জানি না। আমাকে জিজ্ঞেস করলে প্রিন্স অতসুমিচির কথাই বলতাম। সেই আমার কাছে সম্রাট হবার উপযুক্ত। তুমি নিজেই দেখো, সানজু হচ্ছে একটা অপদার্থ। তাকে দিয়ে সাম্রাজ্য চলবে? এটা শুনবার পর আমার মাথা ঠিক নেই, আমি সম্রাটের দরবারে যাইনি।

প্রাক্তন সম্রাট রেইঝেই এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পরামর্শ করেননি?

না, করেননি। পরে জানলাম বিশ বছর আগে নাকি এরকম ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে আছে। আমি তেইশির ওপর যেমন ভরসা রাখতে পারি না, সানজুর ওপরও নয়। আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

আসলে তাই?

তুমি বিশ্বাস কর। আমি অতসুমিচির পক্ষে।

অতসুমিচি গেছেন সম্রাটের দরবারে। সম্রাট তাকে দেখে স্মিত হাসলেন। তিনি বললেন, শুনেছ বোধহয় বিশ বছর আগের দলিল প্রকাশ করে দিয়েছি। পরবর্তী সম্রাট তোমার ভাই সানজু। আমি আপনার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে পারি?

কেন নয়? সম্রাটের ইশারায় সবাই দরবার ত্যাগ করলো। প্রিন্স অতসুমিচি বললেন, সংবাদটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।

কেন?

আমি কেন নই?

তুমি তো বলেছিলে এজগৎ শুধু বোগময়, অন্যসব অর্থহীন, সাম্রাজ্য, প্রাসাদ, ধন-সম্পদ কিছু নয়। বলনি?

হ্যাঁ, বলেছিলাম এই কিছুদিন পূর্বে মাত্র। কিন্তু আপনারা তো আমার ভাগ্যবিড়ম্বনা নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিশ্ব বছর আগে।

তখন আমি ছোট ছিলাম। মাত্র ছয় বৎসর বয়স, তোমার চেয়েও কম। তোমার নানা আর বাবা আমাকে দিয়ে ঐ দলিল সই করিয়েছিলেন।

এটা তো বৌদ্ধ সূত্র নয় যে বদলানো যাবে না।

আমাকে আগে মরতে দাও তারপর বদলে দিও।

আপনার বেঁচে থাকা কালেই করে যেতে হবে।

তোমাকে কি করে বুঝাব, তুমি আমার কতটা প্রিয়। কিন্তু যা একবার বলা হয়ে গেছে কিসের ভিত্তিতে তা বদলানো হবে? ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা কর, কৌশলী হও।

বুঝতে পারছি। আসি তাহলে।

অতসুমিচির উঠে যাবার পর দরবারে মিচিনাগা একা প্রবেশ করলেন। অন্য সময় মন্ত্রী, আমলা, সেনাপতিদের কেউ কেউ থাকেন।

সম্রাট তাকে সমীহই করেন। তিনি কেন এসেছেন সম্রাট তা অনুধাবন করতে পারেন। কিন্তু আগে কিছু বললেন না।

মেঝেতে কিমোনো গুছিয়ে দু’জন পদ্মাসনে সামনাসামনি বসলেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর মিচিনাগা বললেন, দলিলটা প্রকাশিত হলো, আমি তার কিছুই জানলাম না। তুমি আমার পর নও। ভাগ্নে আর মেয়ের জামাইও। আমি জানি এটা একান্তই সম্রাটের এখতিয়ার, কিন্তু আমাকে জানালে তো ক্ষতি ছিল না। আমাকে রেইঝেই-এর কাছে ছোট করা হল। ছোট করা হলো অন্যদের কাছেও। আমি কি এ কাজে তোমাকে বাধা দিতাম?

সম্রাট ইচিজো বললেন, এটা একটা অঙ্গীকারনামা। বিশ বছর আগে সম্পাদিত। বদল করার কোনো সুযোগই নেই। শুধু নিরাপত্তার কথা ভেবে এতদিন গোপন রাখা হয়েছে। যদি মনে করেন এতে আপনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, তার জন্য আমি দুঃখিত। আমি একটা বিষয় স্থির করেছি। সেটা কি?

ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি একাদশ শতকের জাপানের গৌরবময় সাহিত্য-সমৃদ্ধির পটভূমিতে চারজন বিখ্যাত নারী কবি ও ঔপন্যাসিককে নিয়ে রচিত। বিশ্বসাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক মুরাসাকি শিকিবু আছেন এর কেন্দ্রে। আরও আছেন কবি আকাঝুমি ইমন, কবি ইঝোমি শিকিবু এবং বিখ্যাত “দ্য পিলুবুক” রচয়িতা সেইসোনাগান

আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ থেকে আপনাকে কাম্পাকু উপাধিতে ভূষিত করা হবে। তা হলে শুধু আপনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই নয়, আমার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সম্রাটকে উপদেশ দিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে এ পদের সম্মান অনেক বড়।

মিচিনাগা কাম্পাকুর মর্ম বোঝেন। তিনি খুশি হলেন এবং উপাধি নিয়ে চলে গেলেন।

এদিকে পরবর্তী সম্রাট কে হবেন সে সংবাদ সম্রাজ্ঞী তেইশির কাছেও পৌচেছে। অসুস্থাবস্থায় তার অস্থিরতা খুব বেড়ে গেছে। তা অন্তসত্তা নারীর জন্য খুবই ক্ষতিকর। তারপরও তিনি বললেন, পালকি প্রস্তুত কর। আমি সম্রাটের দরবারে যাব।

লেডি ডাক্তার বললেন, তা মোটেও ঠিক হবে না মহামান্যা। সন্তানের ক্ষতি হতে পারে।

তুমি আমাকে বাধা দিচ্ছ? আমি যে কোনো মূল্যে সম্রাটের মুখোমুখি হবো। আমি জানতে চাইব, আমার পুত্রকে কেন বঞ্চিত করা হল? কী তার অপরাধ? আমিই বা কী এমন অন্যায় করেছি। কার ষড়যন্ত্রে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাও জানতে হবে। আমার সন্তানের চেয়ে কেন সানজু এত প্রিয় তা না জেনে আমার শান্তি নেই।

ছেচল্লিশ.

কাম্পাকু উপাধি পেয়ে মিচিনাগা মুরাসাকির দপ্তরের দিকে আসছেন। শরতের প্রকৃতিটা বড় সুন্দর। শরতের সাদাফুলগুলো এ সময়ে ফুটে আছে। তাতে পবিত্রতার একটা প্রতীকিভাব। আকাশের সাদা মেঘ উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বেপরোয়া বাতাস। মিচিনাগার মনটা ফুরফুরে।

মুরাসাকি জানালা দিয়ে দেখলেন তিনি আসছেন। তাকে দেখে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয় তার। তিনি আসলেই নিরিবিলি থাকতে চান এবং কবিতাপত্র লেখালেখিটাই উপভোগ করতে চান।

সাম্রাজ্যের পরবর্তী সম্রাট নিয়ে এতকিছু ঘটে যাচ্ছে সে দিকে তার খবর নেই।

মিচিনাগা দপ্তরে এলেন এবং যথারীতি পদ্মাসন করে বসলেন। মুরাসাকিকে বললেন, দু’টো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আছে। একটি ভালো, আরেকটি মন্দ। কোনটি শুনতে চাও আগে?

আপনিই বলুন মহামান্য।

খারাপ সংবাদটি হলো পরবর্তী সম্রাট হচ্ছেন রেইঝেই পুত্র সানজু। মুরাসাকি জানেন তার সম্রাঙ্গীর কোনো সন্তান নেই বলে সম্রাঙ্গী তেইশির পুত্রই অবধারিতভাবে সম্রাট হবেন। আর তা কোনভাবেই মিচিনাগা চান না। এটা খারাপ সংবাদ কেন?

সাম্রাজ্যের অধিকারটা আবার রেইঝেই পরিবারে চলে যাচ্ছে। এরা গেঞ্জি সম্প্রদায়ভুক্ত।

ইচ্ছার বাইরে মুরাসাকি বললেন, তা ঠিক। সুসংবাদ সম্পর্কে বলুন।

সম্রাট আমাকে কাম্পাকু উপাধি দিয়েছেন।

অভিনন্দন আপনাকে। এটা তো সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান। দুর্লভ সম্মান।

শিশু সম্রাটের উপদেষ্টা হিসেবে মিচিতাকা সেসশু উপাধি পেয়েছিলান। পরিনত সম্রাটের প্রধান উপদেষ্টা হওয়া সত্যিই খুব মর্যাদার।

আপনাকে এখন আরো সতর্ক ও মর্যাদাবোধ নিয়ে চলতে হবে।

তা তো ঠিকই।

তা হলে একটা কথা বলি?

বল।

কবিতা বিনিময়টা বন্ধ থাকুক?

বাইরের সাদা ফুল আর আকাশের সাদা সাদা মেঘ দেখেছ? ঐ রকম পবিত্র ভালোবাসা। তা কলুষিত হয় এমন আত্মঘাতি কাজ আমি করব না।তোমাকে ভালোলাগে এই-ই তো। তুমি পছন্দ না করলে আসব না। ভালোবাসা দূর থেকেও হয়।

না না, সেকথা আমি বলিনি। আপনার মর্যাদার কথা ভেবে বলেছি। আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য না।

তুমি শুধু বড় লেখক না, বড় মনের মানুষও। কী অদ্ভুত ব্যাপার দেখো, মর্যাদাপূর্ণ উপাধিটা পেয়ে সর্বপ্রথম তোমার কাছেই ছুটে এলাম।

আমি তাতে সম্মানিতবোধ করছি। মহামান্য, আপনার এই উপাধি প্রাপ্তিতে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি।

ধন্যবাদ তোমাকে, তাকাকু।

মিচিনাগা উঠে যাবার পর মুরাসাকি ভাবতে বসলেন। সাম্রাজ্যের একনম্বর ব্যক্তি তাকে ভালোবাসেন, সে কথা আজ মুখে বলেও গেলেন এবং সে ভালোবাসায় কোনো কালিমা নেই শরতের সাদা সাদা ফুল আর উরন্ত সাদা সাদা মেঘের মতই পবিত্র। কিন্তু মানুষটি তো নির্ভেজাল নয়। তাকে কী বিশ্বাস করা যায়? তিনি এত শক্তিমান যে, জোর করলেও কিছু করার নেই। তবে তার কন্যা সম্রাজ্ঞী শোশি আছেন মাঝখানে। তিনি তার লেডি-ইন-ওয়েটিংকে নিশ্চয়ই রক্ষা করতে চাইবেন। তারপরও তাকে সতর্ক থাকতে হবে। ইঝোমি যেমন উচ্চাশার গগণচুম্বী রখে চড়ে প্রিন্সকে সম্রাট বানাতে মরিয়া, অথচ তিনি জানেনও না প্রিন্সের হৃদয়ে তার স্থান কোথায়, মুরাসাকি সব জেনেও নিজেকে সংযমী করে রাখছেন, দু’জনের মধ্যে দেয়াল তৈরি করে ভালোবাসাকে স্বর্গীয় মহিমা দিতে আত্মসংযমের পথ বেছে নিয়েছেন।

এদিকে ইঝোমি থেমে নেই। অতসুমিচিকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছেন। সম্রাট তাকে যে কোনো মূল্যে হতে হবে।

আর কি করতে বল? অতসুমিচির ক্লান্তভাব।

ইঝোমি বললেন, রণক্লান্ত হলে চলবে কেন, আমার প্রিয়? সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না, আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে। গুটি চালতে হবে। আমি যে জেনারেলের কাছ থেকে প্রথম জেনেছি, তার সঙ্গে যোগাযোগ করি, নিশ্চয়ই সামুরাই সৈন্যদের সহায়তা পাব।

অতসুমিচি জেনারেলদের সঙ্গে ইঝোমির মাখামাখি পছন্দ করেন না। কিন্তু তাকে সরাসরি কিছু বললেন না। বললেন, সে সময় এখনো আসেনি। আমাকে ভাবতে দাও। সম্রাট এবং বাবার সঙ্গে কথা বলেছি, দেখি এরা প্রত্যাশিত কিছু করেন কিনা। এছাড়া সময়ে কত ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। সবার কাছে আমি আমার দাবি তো করে রেখেছি। ভয় হচ্ছে মিচিনাগাকে।

তাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তার ব্যাপারটা আমি দেখবো। এখন আপনার দরবারে আসা যাওয়া বাড়াতে হবে। আমিও প্রাসাদে যাব ঘনঘন। কান খোলা রাখতে হবে। নিশ্চয়ই সেখানে কোনো না কোনো পথের সন্ধান পাওয়া যাবে।

সম্রাজ্ঞী তেইশি কোনো প্রকার সংবাদ না দিয়ে সম্রাটের দরবারে উপস্থিত হলেন। সম্রাট দরবারে কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তেইশিকে দেখে খুবই অবাক হলেন। বললেন, শরীরের এই অবস্থা নিয়ে তুমি কেন এলে, বললে আমিই যেতাম।

আমি একা কথা বলতে চাই আপনার সঙ্গে। সম্রাটের সভাসদরা বাইরে গেলেন।সম্রাজ্ঞীর মেঝেতে বসতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও বসলেন সম্রাটের মুখোমুখি। সম্রাজ্ঞীর সম্মানিত সহকারী তার কিমোনো ঠিকঠাক করে দেবার পর বাইরে চলে গেল। সম্রাট বললেন, শরীরের অবস্থা তোমার ভালো নয়। বার বার তার চোখ যাচ্ছে সম্রাজ্ঞী উচু তলপেটের দিকে। বোঝা যাচ্ছে বাচ্চাটা বড় হয়ে গেছে। সম্রাজ্ঞী যে কোনো সময় বাচ্চা প্রসব করবেন।

সম্রাজ্ঞীর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও তাকে কথা বলতে হবে। হবু সম্রাটের মাতা বলেই এতদিন জানতেন। কত স্বপ্ন, কত পরিকল্পনা। পুত্র সম্রাট হবার সঙ্গে সঙ্গে মিচিনাগাদের প্রাসাদ থেকে বিতাড়িত করবেন। বিতাড়িত ভাইকে এনে বালক সম্রাটের সেসশু নিযুক্ত করবেন। সব ক্ষমতা থাকবে তার কাছে।

কিন্তু একি হলো? সম্রাটকে অভিযোগের কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, যা শুনলাম তা কি সত্যি?

কী শুনেছ প্রিয়? আমার সন্তান আপনার পর সম্রাট হচ্ছে না।

আংশিক সত্য শুনেছ তুমি।

তা হলে পুরো সত্যটি কী?

সম্রাট বললেন, সম্রাট রেইঝেইদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটি বোঝাপড়া আছে যে, আমার পরে তার সন্তান সানজু সম্রাট হবে।

এটা নিশ্চয়ই মিচিনাগার ষড়ষন্ত্র।

মিচিনাগার ষড়ষন্ত্র হতে যাবে কেন? এ দলিল সম্পাদিত হয়েছে বিশ বছর আগে। সে কথা মিচিনাগা জানবেন কেমন করে? তিনি তো তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। দলিলে স্পষ্ট লেখা রয়েছে সানজুর পর আমাদের সন্তান অতসুইয়াগু সম্রাট হবে।

বিশ বছর আগে তার নাম কোথায় পেল?

সম্রাট হেসে দিয়ে বললেন, নাম নেই, বলা আছে জৈষ্ঠ পুত্রসন্তান। আমি তার নাম বললাম।

আমি এ দলিল মানি না। আপনি নতুন আদেশ জারি করুন।

তা কি ঠিক হবে সম্রাজ্ঞী? অঙ্গীকারনামা দিয়েছি আমি।

আপনি তখন শিশু ছিলেন। আপনার মাতামহের কথায় স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়া এ দলিলের শর্ত বৌদ্ধসূত্র নয় যে, মোছা যাবে না।

আমাকে একটু ভাবতে দাও। বড় অন্যায় হবে, বড় অন্যায়।

ন্যায়-অন্যায় আমি বুঝি না। আমার সন্তান সম্রাট হবে, তার মধ্যে আর কোনো কথা নেই।

একথা বলে তিনি রাগত বসা থেকে উঠতে যাবেন, কিমোনো প্যাঁচিয়ে পড়ে গেলেন। সম্রাট দ্রুত তাকে ধরলেন। লোকজন ডাকলেন। দ্রুত তাকে তার সেবাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হল।

সম্রাটও সঙ্গে সঙ্গে গেলেন। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সম্রাজ্ঞীকে নিয়ে। লেডি ডাক্তার বললেন, তার বিশ্রামের প্রয়োজন। তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।

সম্রাট বসে রইলেন কিছুক্ষণ। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়ে উঠে গেলেন। সম্রাজ্ঞীকে কোনো আশ্বাস না দিয়েই চলে গেলেন। ক্রমশ...

back to top