alt

সারাদেশ

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লোকসান দেখিয়ে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ

সাইফ বাবলু : শুক্রবার, ০২ অক্টোবর ২০২০

সরকারের অংশীদারিত্বে গাড়ির পেট্রল, কেরোসিন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের ফার্নেস তেলসহ অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ্বালানি আমদানিকারক এবং বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে লুটপাট চলছে! প্রতিষ্ঠানটিতে বছরের পর বছর লোকসান দেখিয়ে হাজার কোটি টাকা তসরুপ করা হয়েছে। ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগের ভিত্তিতে মাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন রতন এবং মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে তদন্ত শুরু করে ৬ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে (২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত)। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ তসরুপের অভিযোগে একই বছর তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে বিপিসি ও দুদকের অনুসন্ধানে দুই অর্থবছরে (২০১১-১২ এবং ২০১২ -১৩) ১৩৮ কোটি টাকা আত্মসাতের করার প্রমাণ পাওয়া গেছে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। দুদকের ধারণা, ৬ অর্থবছরে (২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত) কোম্পানি থেকে হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। আর এ অর্থ লুটের মূল কারিগর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ রতন এবং মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদ গং। এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মঈন উদ্দিন রতনকে দুদকে তলব করা হলেও হাজির হননি। আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের কাছে বক্তব্য উপস্থাপন করলেও তা আমলে নেয়নি দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লোকসান দেখিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা তশরুপের অভিযোগ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তদন্ত শুরু করে বিপিসি। একই বছরের মার্চে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের উপ-পরিচালক তালেবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন টিমকে দায়িত্ব দেয় কমিশন। বিপিসি অনুসন্ধানে দুই অর্থবছরে হিসেবে ১৩৮ কোটি টাকা তসরুপের গড়মিলের নথিপত্র নিয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে রীতিমতো বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়।

দুদকের উপ-পরিচালক তালেবুর রহমান সংবাদকে জানান, তার টিমের একজন সহকারী পরিচালককে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের ইতোমধ্যে দুদকে তবল করে নোটিস পাঠিয়েছেন। দুদক টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। গত ৬ অর্থবছরের কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসেব খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হবে।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের কর্মকর্তারা জানান, গাড়ির পেট্রল, বাড়ির কেরোসিন, শিল্পের ফার্নিশ এবং রাস্তার বিটুমিনসহ বিভিন্ন তরল জ্বালানি যোগান দেয়ার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসি মূলত পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল আমদানি করে সেগুলো পরিশোধিত ও বিক্রির দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এরমধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের পুরো দায়িত্ব বিপিসির। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ আলাদা প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এখানে অংশিদারিত্বের মালিকানা সরকার এবং কোম্পানি অর্ধেক অর্ধেক। মোহাম্মদ শামসুর রহমান বিপিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর জানতে পারেন সরকারের সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে সংশ্লিষ্ট সাতটি প্রতিষ্ঠানে। পাওনা আদায় হলেও লাভ লোকসান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। বড় অঙ্কের অর্থ তসরুপ হয়েছে এমন অভিযোগে বিপিসি এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটিকে শুরু থেকে থোরাই কেয়ার করে স্ট্যার্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ রতন। এরপর তদন্ত কমিটি তদন্ত করে জানতে পারেন স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি থেকে রীতিমতো বড় অর্থ লুটপাট হয়েছে। আর এ লুটপাটের নেপথ্যে ছিলেন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ রতন।

দুদক সূত্র জানায়, মহাব্যবস্থাপক সাহেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতনের লোভে রীতিমতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠাটিতে লোকসান দেখিয়ে রীতিমতো বড় অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ১৩৮ কোটি টাকা লুটের তথ্য প্রমাণ দুদক পেলেও দুদকের সন্দেহ আরও বেশি পরিমাণ অর্থ এ প্রতিষ্ঠান থেকে তসরুফ করেছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক। দুদক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কারখানা। এখান থেকে তেল, লুব্রিকেন্ট বিক্রি ছাড়াও গাড়ির ইঞ্জিনের কাজ হয়। প্রতিষ্ঠানটি চলে একটি পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে। সরকার ও কোম্পানির পক্ষ থেকে যৌথভাবে শীর্ষ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে দেখবালের জন্য একজন মহাব্যবস্থাপক নিয়োগ দেয়া হয় মোহাম্মদ সাহেদকে। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে মঈনউদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব পান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সরকারের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ সাহেদ মহাব্যবস্থাপক আর কোম্পানির পক্ষ থেকে মঈনউদ্দিন আহমেদ রতনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে তারা দুইজন মিলে কোস্পানির অর্থ তসরুফ শুরু করেন। তাদের যৌথ দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ডুবতে বসেছে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানি তেল, লুব্রিকেন্ট বিক্রি এবং গাড়ির ইঞ্জিন মেরামত করে যে টাকা পাচ্ছে তার সিংহভাগই চলে গেছে এই দু’জন কর্মকর্তার নিজস্ব একাউন্টে।

দুদক সূত্র জানায়, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড আর এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে একটি সুক্ষ কারচুপি আছে। যৌথ মালিকানার কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এ বিপিসির পঞ্চাশ ভাগ অংশীদারি থাকলেও এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। এটির মালিকানায় মঈনউদ্দিন আহমেদ রনি। অংশীদারিত্বের প্রতিষ্ঠান স্ট্যার্ন্ডার্ড এশিয়াটিক ওয়েল কোম্পানির তেল বিক্রির পে-অর্ডারের টাকা চলে যাচ্ছে মঈনউদ্দিনের নিজস্ব এশিয়াটিক ওয়েল কোম্পানিসহ একাধিক কোম্পানির ব্যাংক হিসেবে। এভাবেই সরকারকে ঠকিয়ে মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদের মাধ্যমে দিনের পর দিন দুর্নীতি করে গেছে মঈন উদ্দিন আহমেদ রনি। এ কারণেই বিপিসির তদন্ত কমিটিকে কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। বিপিসি বিগত ছয় বছরে অডিট রিপোর্ট চাইলেও তাদের দেয়া হয় মাত্র দু’বছরের। ২০১১-১২ এবং ২০১২ -২০১৩ অর্থবছরের (দু’বছরে) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন রতন এবং মহাব্যবস্থাপক প্রয়াত মোহাম্মদ সাহেদ ১৩৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিপিসির তদন্তে বেরিয়ে আসে ১৩৮ কোটি টাকা কিভাবে লুটপাট করা হয়েছে। ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি থেকে মঈনউদ্দিনের ব্যক্তি মালিকানা কোম্পানি এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানিতে টাকা সরানোর প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির মতো আরও একাধিক ভুয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে মঈনউদ্দিন আহমেদ রনির। পিরামিড এক্সিম ও গুডউইনসহ একাধিক কোম্পানির একাউন্টেও টাকা সরিয়াছেন মঈনউদ্দিন রতন। সরকারি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের টাকা জমা হয়েছে পিরামিড এক্সিম ও গুডউইন একাধিক নামহীন কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে। মঈনউদ্দিন আহমেদ রনির ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক পাটনার তার স্ত্রী শামিমা আহমেদ সিমা। ১৩৮ কোটি টাকা চুরির পিছনের গল্পের কারিগর শামিমা আহমেদ সিমাও। অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাবাদের জন্য দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক আবু তালেবের স্বাক্ষরিত নোটিসে মঈন উদ্দিন রতনকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। ও নোটিসে তার সম্পদ বিবরণীও দাখিল করতে বলা হয়েছিল। গত ১৬ সেপ্টেম্বর মঈনউদ্দিন আহমেদকে দুদকে হাজির হওয়ার কথা থাকালেও তিনি সশরীরে উপস্থিত না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেন। যদিও দুদক আইনজীবীর বক্তব্য আমলে নেয়নি।

কোম্পানি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিপিসির সঙ্গে যুক্ত হয় স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি বিক্রি করতো কোম্পানিটি। বেসরকারি অংশের মালিক মঈনউদ্দিন এবং মিনহাজ উদ্দিন। মিনহাজ উদ্দিন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে কোম্পানির পরিচালক হিসেবে ২০১৩ সালে যুক্ত হন। তখন মঈনউদ্দিন রতন রীতিমতো কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শুরু থেকেই মঈনউদ্দিন কোম্পানিটিতে একচ্ছত্র অধিপত্য বিস্তার করেছেন। এরমধ্যে সরকারের অংশিদারিত্ব বিষয়টি দেখবাল করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ সাহেদকে ২০০২ সালে মহাব্যবস্থাপক (জেনারেল ম্যানেজার) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ পাওয়ার পরই মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদকে নিজের দলে যুক্ত করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন রতন। দুইজন মিলে মাসতুত ভাই হয়ে রীতিমতো বছরের পর বছর লোকসান দেখিয়ে কোম্পানির অর্থ সরাতে শুরু করেন। মঈনউদ্দিন গুডইউন পাওয়ার লিমিটেড, কুলসী লিমিটেড ইঞ্জিনিয়ারিং এনার্জি অ্যান্ড ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডসহ নামে-বেনামে একাধিক ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ওইসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে স্টার্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির টাকা সরিয়ে নেয়া শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে লোকসান ও লুটপাটের অভিযোগ পেয়ে ২০১৯ সালে বিপিসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২০১১- ১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪.২০১৪, ১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬ ১৭, ২০১৭-১৮ এ ৬ অর্থবছরে কোম্পানির আয়-ব্যায়ের হিসেব চাওয়া হয় মঈনউদ্দিন রতন ও মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদের কাছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও আসে। বিপিসি ২০১১ ১২ এবং ২০১২ -১৩ দুই অর্থবছরের হিসেব পর্যালোচনা জানতে পারে শুধু মইনউদ্দিন রতন দুই অর্থবছরে এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি থেকে ৮০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লুট করেছেন। এছাড়া মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদও ৫৭ কোটি টাকা লুট করেছেন। সব মিলিয়ে দুই অর্থবছরে ১৩৭ কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ পেয়েছে বিপিসি। তখন নথিপত্র চাওয়া হলেও মঈনউদ্দিন ও সাহেদ নানাভাবে তদন্ত ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করতে আদালতে রিট করে। আদালতের রিটের কারণে তদন্ত পুরো শেষ করতে পারেনি বিপিসি। এরমধ্যে ২০১৯ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। চলতি বছরের আগস্টে মারা যান মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদ। কিন্তু বহাল তবিয়তে আছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন রতন।

ছবি

জোড়া খুন মামলায় ‘ছোট সাজ্জাদের’ স্ত্রী তামান্না গ্রেপ্তার

ছবি

ঈদগাঁওতে একসঙ্গে ৬ সন্তান জন্ম দিলেন গৃহবধূ

ছবি

মুন্সিগঞ্জে লঞ্চে দুই তরুণীকে মারধর, ভিডিও ভাইরালের পর নেহাল আহমেদ নামে যুবক আটক

জমি নিয়ে সংঘর্ষে বসতঘর ভাঙচুর, আহত ১০

ছবি

সিয়ামের মৃত্যুর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি শিক্ষার্থীদের

গাংনীতে ট্রলিচাপায় শিশু নিহত

আকিকার মাংস নিয়ে সংঘর্ষ বাড়িঘর ভাঙচুর, আহত ১৫

ভারতীয় তোতাপুরি ছাগল-দুম্বাসহ পাচারকারী আটক

শরণখোলায় সুন্দরবন থেকে আসা হরিণ উদ্ধার

স্বামীর নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যু

এক হাজার টাকায় স্ত্রীকে বিক্রি, নির্যাতনের পর হত্যা, গ্রেপ্তার ৪

স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ায় আগুনে পুড়ল ভাড়া বাড়ির ৫ কক্ষ

ফিলিং স্টেশনে যানবাহনের গ্যাস যাচ্ছে কলকারখানা বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্তোরাঁয়

চুয়াডাঙ্গার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

বাঁকখালী নদীতে ডুবে কলেজছাত্রের মৃত্যু

ছবি

রাঙ্গুনিয়ায় কৃষিজমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়, খালের গতিপথ বিপন্ন

ছবি

গাছ ও পাহাড় কেটে সীমান্তে তৈরি হচ্ছে চোরাই পথ

অপারেশন ডেভিল হান্টে আ’লীগ নেতাসহ আটক ৩

চাটখিলে সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ গ্রেপ্তার ৯

অনলাইন জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে যুবকের দুধ দিয়ে গোসল

ছবি

তিল চাষ লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

মাদারগঞ্জে সংযোগ সড়কে ধস, ৫ মাসে সংস্কারের উদ্যোগ

মুন্সীগঞ্জে বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার

নকল শিশু খাদ্যের কারখানায় অভিযান, জরিমানা

নাসিরনগরে পূর্বশত্রুতার জেরে নিহত ১

হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ৪ ছাত্রকে পিটিয়ে আহত

ছবি

ভালুকায় বোরো ধান কাটায় শ্রমিক সংকট, হিমশিম খাচ্ছে কৃষক

ছবি

ভোলায় বাস শ্রমিকদের বাধা ও আরোপিত শর্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিক্ষোভ

যশোরে ‘ছদ্মবেশে’ পালিয়ে থাকা ৩৩ মামলার আসামি কাজী তারেক আটক

পোরশায় বর্গাচাষিদের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা, আটক ২

রাজশাহী সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার

লোহাগড়ায় নিখোঁজ তরুণের মরদেহ উদ্ধার

বেরোবিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে এসে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া যুবক আটক

রংপুরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল

ছবি

আঙুর চাষে ঝুঁকি নিয়ে সফল কালীগঞ্জের আলামিন

গৌরনদীতে রাস্তা পারাপারের সময় বৃদ্ধ পথচারীর মৃত্যু

tab

সারাদেশ

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লোকসান দেখিয়ে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ

সাইফ বাবলু

শুক্রবার, ০২ অক্টোবর ২০২০

সরকারের অংশীদারিত্বে গাড়ির পেট্রল, কেরোসিন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের ফার্নেস তেলসহ অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ্বালানি আমদানিকারক এবং বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে লুটপাট চলছে! প্রতিষ্ঠানটিতে বছরের পর বছর লোকসান দেখিয়ে হাজার কোটি টাকা তসরুপ করা হয়েছে। ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগের ভিত্তিতে মাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন রতন এবং মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে তদন্ত শুরু করে ৬ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে (২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত)। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ তসরুপের অভিযোগে একই বছর তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে বিপিসি ও দুদকের অনুসন্ধানে দুই অর্থবছরে (২০১১-১২ এবং ২০১২ -১৩) ১৩৮ কোটি টাকা আত্মসাতের করার প্রমাণ পাওয়া গেছে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। দুদকের ধারণা, ৬ অর্থবছরে (২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত) কোম্পানি থেকে হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। আর এ অর্থ লুটের মূল কারিগর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ রতন এবং মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদ গং। এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মঈন উদ্দিন রতনকে দুদকে তলব করা হলেও হাজির হননি। আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের কাছে বক্তব্য উপস্থাপন করলেও তা আমলে নেয়নি দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লোকসান দেখিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা তশরুপের অভিযোগ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তদন্ত শুরু করে বিপিসি। একই বছরের মার্চে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের উপ-পরিচালক তালেবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন টিমকে দায়িত্ব দেয় কমিশন। বিপিসি অনুসন্ধানে দুই অর্থবছরে হিসেবে ১৩৮ কোটি টাকা তসরুপের গড়মিলের নথিপত্র নিয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে রীতিমতো বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়।

দুদকের উপ-পরিচালক তালেবুর রহমান সংবাদকে জানান, তার টিমের একজন সহকারী পরিচালককে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের ইতোমধ্যে দুদকে তবল করে নোটিস পাঠিয়েছেন। দুদক টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। গত ৬ অর্থবছরের কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসেব খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হবে।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের কর্মকর্তারা জানান, গাড়ির পেট্রল, বাড়ির কেরোসিন, শিল্পের ফার্নিশ এবং রাস্তার বিটুমিনসহ বিভিন্ন তরল জ্বালানি যোগান দেয়ার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসি মূলত পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল আমদানি করে সেগুলো পরিশোধিত ও বিক্রির দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এরমধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের পুরো দায়িত্ব বিপিসির। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ আলাদা প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এখানে অংশিদারিত্বের মালিকানা সরকার এবং কোম্পানি অর্ধেক অর্ধেক। মোহাম্মদ শামসুর রহমান বিপিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর জানতে পারেন সরকারের সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে সংশ্লিষ্ট সাতটি প্রতিষ্ঠানে। পাওনা আদায় হলেও লাভ লোকসান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। বড় অঙ্কের অর্থ তসরুপ হয়েছে এমন অভিযোগে বিপিসি এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটিকে শুরু থেকে থোরাই কেয়ার করে স্ট্যার্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ রতন। এরপর তদন্ত কমিটি তদন্ত করে জানতে পারেন স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি থেকে রীতিমতো বড় অর্থ লুটপাট হয়েছে। আর এ লুটপাটের নেপথ্যে ছিলেন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন আহমেদ রতন।

দুদক সূত্র জানায়, মহাব্যবস্থাপক সাহেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতনের লোভে রীতিমতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠাটিতে লোকসান দেখিয়ে রীতিমতো বড় অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ১৩৮ কোটি টাকা লুটের তথ্য প্রমাণ দুদক পেলেও দুদকের সন্দেহ আরও বেশি পরিমাণ অর্থ এ প্রতিষ্ঠান থেকে তসরুফ করেছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক। দুদক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কারখানা। এখান থেকে তেল, লুব্রিকেন্ট বিক্রি ছাড়াও গাড়ির ইঞ্জিনের কাজ হয়। প্রতিষ্ঠানটি চলে একটি পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে। সরকার ও কোম্পানির পক্ষ থেকে যৌথভাবে শীর্ষ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে দেখবালের জন্য একজন মহাব্যবস্থাপক নিয়োগ দেয়া হয় মোহাম্মদ সাহেদকে। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে মঈনউদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব পান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সরকারের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ সাহেদ মহাব্যবস্থাপক আর কোম্পানির পক্ষ থেকে মঈনউদ্দিন আহমেদ রতনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে তারা দুইজন মিলে কোস্পানির অর্থ তসরুফ শুরু করেন। তাদের যৌথ দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ডুবতে বসেছে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানি তেল, লুব্রিকেন্ট বিক্রি এবং গাড়ির ইঞ্জিন মেরামত করে যে টাকা পাচ্ছে তার সিংহভাগই চলে গেছে এই দু’জন কর্মকর্তার নিজস্ব একাউন্টে।

দুদক সূত্র জানায়, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড আর এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে একটি সুক্ষ কারচুপি আছে। যৌথ মালিকানার কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এ বিপিসির পঞ্চাশ ভাগ অংশীদারি থাকলেও এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। এটির মালিকানায় মঈনউদ্দিন আহমেদ রনি। অংশীদারিত্বের প্রতিষ্ঠান স্ট্যার্ন্ডার্ড এশিয়াটিক ওয়েল কোম্পানির তেল বিক্রির পে-অর্ডারের টাকা চলে যাচ্ছে মঈনউদ্দিনের নিজস্ব এশিয়াটিক ওয়েল কোম্পানিসহ একাধিক কোম্পানির ব্যাংক হিসেবে। এভাবেই সরকারকে ঠকিয়ে মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদের মাধ্যমে দিনের পর দিন দুর্নীতি করে গেছে মঈন উদ্দিন আহমেদ রনি। এ কারণেই বিপিসির তদন্ত কমিটিকে কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। বিপিসি বিগত ছয় বছরে অডিট রিপোর্ট চাইলেও তাদের দেয়া হয় মাত্র দু’বছরের। ২০১১-১২ এবং ২০১২ -২০১৩ অর্থবছরের (দু’বছরে) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন রতন এবং মহাব্যবস্থাপক প্রয়াত মোহাম্মদ সাহেদ ১৩৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিপিসির তদন্তে বেরিয়ে আসে ১৩৮ কোটি টাকা কিভাবে লুটপাট করা হয়েছে। ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি থেকে মঈনউদ্দিনের ব্যক্তি মালিকানা কোম্পানি এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানিতে টাকা সরানোর প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির মতো আরও একাধিক ভুয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে মঈনউদ্দিন আহমেদ রনির। পিরামিড এক্সিম ও গুডউইনসহ একাধিক কোম্পানির একাউন্টেও টাকা সরিয়াছেন মঈনউদ্দিন রতন। সরকারি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের টাকা জমা হয়েছে পিরামিড এক্সিম ও গুডউইন একাধিক নামহীন কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে। মঈনউদ্দিন আহমেদ রনির ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক পাটনার তার স্ত্রী শামিমা আহমেদ সিমা। ১৩৮ কোটি টাকা চুরির পিছনের গল্পের কারিগর শামিমা আহমেদ সিমাও। অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাবাদের জন্য দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক আবু তালেবের স্বাক্ষরিত নোটিসে মঈন উদ্দিন রতনকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। ও নোটিসে তার সম্পদ বিবরণীও দাখিল করতে বলা হয়েছিল। গত ১৬ সেপ্টেম্বর মঈনউদ্দিন আহমেদকে দুদকে হাজির হওয়ার কথা থাকালেও তিনি সশরীরে উপস্থিত না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেন। যদিও দুদক আইনজীবীর বক্তব্য আমলে নেয়নি।

কোম্পানি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিপিসির সঙ্গে যুক্ত হয় স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি বিক্রি করতো কোম্পানিটি। বেসরকারি অংশের মালিক মঈনউদ্দিন এবং মিনহাজ উদ্দিন। মিনহাজ উদ্দিন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে কোম্পানির পরিচালক হিসেবে ২০১৩ সালে যুক্ত হন। তখন মঈনউদ্দিন রতন রীতিমতো কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শুরু থেকেই মঈনউদ্দিন কোম্পানিটিতে একচ্ছত্র অধিপত্য বিস্তার করেছেন। এরমধ্যে সরকারের অংশিদারিত্ব বিষয়টি দেখবাল করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ সাহেদকে ২০০২ সালে মহাব্যবস্থাপক (জেনারেল ম্যানেজার) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ পাওয়ার পরই মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদকে নিজের দলে যুক্ত করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন রতন। দুইজন মিলে মাসতুত ভাই হয়ে রীতিমতো বছরের পর বছর লোকসান দেখিয়ে কোম্পানির অর্থ সরাতে শুরু করেন। মঈনউদ্দিন গুডইউন পাওয়ার লিমিটেড, কুলসী লিমিটেড ইঞ্জিনিয়ারিং এনার্জি অ্যান্ড ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডসহ নামে-বেনামে একাধিক ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ওইসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে স্টার্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির টাকা সরিয়ে নেয়া শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে লোকসান ও লুটপাটের অভিযোগ পেয়ে ২০১৯ সালে বিপিসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২০১১- ১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪.২০১৪, ১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬ ১৭, ২০১৭-১৮ এ ৬ অর্থবছরে কোম্পানির আয়-ব্যায়ের হিসেব চাওয়া হয় মঈনউদ্দিন রতন ও মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদের কাছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও আসে। বিপিসি ২০১১ ১২ এবং ২০১২ -১৩ দুই অর্থবছরের হিসেব পর্যালোচনা জানতে পারে শুধু মইনউদ্দিন রতন দুই অর্থবছরে এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি থেকে ৮০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লুট করেছেন। এছাড়া মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদও ৫৭ কোটি টাকা লুট করেছেন। সব মিলিয়ে দুই অর্থবছরে ১৩৭ কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ পেয়েছে বিপিসি। তখন নথিপত্র চাওয়া হলেও মঈনউদ্দিন ও সাহেদ নানাভাবে তদন্ত ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করতে আদালতে রিট করে। আদালতের রিটের কারণে তদন্ত পুরো শেষ করতে পারেনি বিপিসি। এরমধ্যে ২০১৯ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। চলতি বছরের আগস্টে মারা যান মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহেদ। কিন্তু বহাল তবিয়তে আছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন রতন।

back to top