অন্যান্য ক্যাডারে বঞ্চনা ও হতাশা
বিশেষায়িত ক্যাডারের সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। সরকারি চাকরিতে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও শিক্ষকরা প্রশাসন ক্যাডারের তুলনায় প্রায় সবক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার। পদোন্নতি, পদায়ন, আবাসন ও যাতায়াত-এই চারটি ক্ষেত্রেই প্রশাসন ক্যাডার এবং আন্যান্য ক্যাডার চাকরিতে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য বিরাজমান। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, বিশেষায়িত ক্যাডারের পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন পাচ্ছেন, কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের পদে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন পাচ্ছেন বা পেয়েছেন, তা অন্তত সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন।
বিসিএস আন্তঃক্যাডারের এই বৈষমের ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘২৬ ক্যাডার বিসিএস সমন্বয় কমিটি’র আহ্বায়ক ও গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূঁইয়া সংবাদকে বলেন, ‘এর প্রধান কারণ হলো- প্রশাসন ক্যাডারের পদায়ন, পদোন্নতি ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করেন। আবার অন্য ক্যাডারগুলোর পদায়ন ও পদোন্নতিসহ ভাগ্যের উন্নয়নের চাবিকাঠিও প্রশাসন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণে। বিদ্যমান সরকারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় প্রশাসন ক্যাডারকে বাদ দিয়ে অন্য ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার কোন সুযোগই নেই।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রায় ৩২ হাজার কর্মকর্তা আছেন। কিন্তু যথাসময়ে পদোন্নতি না হওয়ায় প্রায় ১৫ হাজার স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তাই নবম গ্রেডে চাকরি করছেন। ২০১৪ সালে ৩৩তম বিসিএসে যোগ দেয়া কয়েকজন চিকিৎসক জানান, ৩৩তম বিসিএসে ছয় হাজার ৩৩ জন চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের বড় অংশ ইতোমধ্যে বিভাগীয় পরীক্ষা, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনকভাবে চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ এবং সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। অথচ ওই ব্যাচের ৩৯ জনকে গত জুনে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দেয়া। একই বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া অন্য কয়েকটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছেন।
ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় কর্মরত একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, ‘আমরা অবিচারের শিকার। একজন সহকারী পুলিশ সুপার বা একজন সহকারী কমিশনার সরকারি গাড়ি পেলে আমি সরকারি গাড়ি পাব না কেন? একজন সহকারী পুলিশ সুপার বা সহকারী কমিশনার তার চাকরি জীবনের পাঁচ বছর পূর্ণ করা মাত্র পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হচ্ছেন বা সিনিয়র সহকারী সচিব হচ্ছেন। কিন্তু মেডিকেল অফিসাররা কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি পাচ্ছেন না। একই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বৈষম্য কেন?’
ক্যাডারভিত্তিক ফোরামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ সির্ভিল সার্ভিসে (বিসিএস) শর্ত পূরণ করে প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেলেও অন্য ক্যাডারে তা হয় না। বর্তমানে ডাক্তার বা চিকিৎসকদের পদোন্নতি পুলিশ বা প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ নয়। পদোন্নতি ও উপজেলায় ভালো আবাসনের ব্যবস্থা না থাকা এবং অপ্রীতিকর অবস্থায় সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় চিকিৎসকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশিদিন থাকতে চান না। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন না করলে তাদের পদোন্নতি হয় না, এ কারণে চিকিৎসকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনভাবে দুই তিন বছর পার করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাওয়ার চেষ্টা-তদবির করেন।
কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে বদলি হয়ে আসা একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের পর সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সহকারী কমিশনার হিসেবে। দুই তিন বছরের মধ্যে তারা অ্যাসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার) হিসেবে পদোন্নতি পান। ছয় বছরের মধ্যে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হন। চাকরিতে প্রবেশ করার সময় যে ডিগ্রি ছিল, ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) হওয়ার সময়ও একই ডিগ্রি। মানে তাদের ২-৩টা পদোন্নতি পেতে বেসিক গ্র্যাজুয়েশন ছাড়া অন্য কোন ডিগ্রির প্রয়োজন হচ্ছে না। চিকিৎসকেরও বেসিক ডিগ্রি গ্র্যাজুয়েশন। একজন চিকিৎসক চাকরিতে যোগ দেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিবেসে, অথচ তিনবছর পরও তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, কখনও ছয় বছরে তার কোন পদোন্নতি হয় না।’
৩৩তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া একজন চিকিৎসক আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার পদোন্নতি হয়নি, এখনও পড়ে আছি নবম গ্রেডে। অথচ একই ব্যাচের (৩৩তম বিসিএস) অন্য ক্যাডারে যোগদান করা সহকর্মীরা অনেকেই এরই মধ্যে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছেন।’
প্রশাসন ও চিকিৎসা ক্যাডারের তুলনামূলক চিত্র :
প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা চাকরির দশ বছরের মাথায় উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পান। চাকরির দশ বছর পরেও চিকিৎসকের কোন উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন না হলে, তার মাত্র একটা পদোন্নতি হবে। অর্থাৎ চাকরিতে যে গ্রেডে যোগ দিয়েছিলেন, তার চেয়ে মাত্র এক ধাপ উপরে উন্নীত হবেন, নবম গ্রেড থেকে অষ্টম গ্রেডে উন্নীত হবেন। এই সময়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা তখন উপসচিব হবেন, যার গ্রেড পঞ্চম। প্রশাসন ক্যাডারে চতুর্থ গ্রেড বিলুপ্ত করা হয়েছে।
পদায়নে বৈষম্য
বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া যে কোন সরকারি অফিসারের ন্যূনতম পোস্টিং হয় থানা পর্যায়ে। আর পররাষ্ট্র ক্যাডারে যারা পাস করেন, তাদের রাজধানীর বাইরে যেতে হয় না। বিসিএসে পুলিশের প্রথম পোস্টিং হয় অন্তত জেলা পর্যায়ে। প্রশাসন ক্যাডারদের প্রথম পোস্টিং হয় ডিসি অফিসে। শুধুমাত্র বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মীদের পোস্টিং হয় থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে ইউনিয়ন সাব-সেন্টারগুলোতেও।
কিন্তু থানা পর্যায়েই অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের জন্য নেই ভালো কোন আবাসন ব্যবস্থা। ইউনিয়ন পর্যায়ে অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগদান করা তরুণ চিকিৎসককে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর (এফডব্লিউভি) নামে পরিচিত একজন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে অফিস শেয়ার করতে হয়। অধিকাংশ সময়ে এসব সাব-সেন্টার এতো দুর্গম জায়গায় থাকে যে, সেখানে কোন গাড়ি চলাচল করে না। অথচ প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করা তরুণ কর্মকর্তার জন্য রয়েছে আলাদা সরকারি কোয়ার্টার ও পৃথক অফিস রুম।
বেতন ভাতায়ও বৈষম্য
চিকিৎসকদের কোন ঝুঁকিভাতা পান না। নেই ওভারটাইমের কোন ব্যবস্থা। যে কোন ছুটির দিনে আগে থেকেই জরুরি বিভাগ চব্বিশ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়। ইদানীং শুরু হয়েছে বন্ধের দিনেও বহিঃবিভাগ চালু রাখার নিয়ম। এজন্যও নেই কোন বাড়তি প্রণোদনা।
অথচ প্রশাসন, পুলিশসহ অন্য ক্যাডারে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তারা আলাদা ভাতা পান, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিদর্শনের জন্য পান নানা ধরনের টিএডিএ। প্রশাসন ক্যাডারের উপ-সচিব থেকে শুরু করে উপরের দিকের অফিসারদের জন্য নানা রকম আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি গাড়ি কেনার জন্য আলাদা করে ৪০ লাখ টাকার সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা, মোবাইল কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা এবং মোবাইলের জন্য আলাদা করে বিলসহ নানা ধরনের বরাদ্দ থাকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য প্রেষণ লাভের ক্ষেত্রে বৈষম্য
বর্তমানে অধিকাংশ ক্যাডার কর্মকর্তা ৫৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটি নেয়ার সুযোগ পান। অথচ স্বাস্থ্য ক্যাডারের অফিসাররা ৪৫ বছর পর্যন্ত ছুটি নেয়ার সুযোগ পান। এ বৈষম্য থাকার কারণে চাকরিতে ঢোকার পরপরই চিকিৎসকরা শিক্ষা ছুটির সুযোগ হারানোর ভয়ে চিন্তিত থাকেন।
পদোন্নতিতে বৈষম্য
একজন চিকিৎসক অধ্যাপক হিসেবে তৃতীয় গ্রেডের উপরে উঠতে পারেন না, যেখানে একজন সচিব গ্রেড ওয়ান কর্মকর্তা হওয়ার পর আবার অতিরিক্ত আরেক ধাপ প্রমোশন পেয়ে ‘সুপার গ্রেড’ সিনিয়র সচিব হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার স্বাস্থ্য ক্যাডারে পদোন্নতির জন্য উচ্চশিক্ষাকে একদিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, অন্যদিকে কঠিন করে দেয়া হয়েছে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ। ফলে একজন চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি শুরু করে মেডিকেল অফিসার হিসেবেই কর্মজীবন শেষ করেছেন এমন নজিরও রয়েছে।
একই ক্যাডারে ভিন্ন নিয়মে পদোন্নতি
ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি না হওয়ার কারণে শিক্ষা ক্যাডারেও চলছে বিশৃঙ্খলা। বিশেষ করে, শিক্ষা ক্যাডারের ২৪তম বিসিএস উদ্ভিদবিজ্ঞানের সব কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়নি। কিন্তু ইংরেজি বিভাগের কর্মরত ২৪, ২৫ এবং ২৬তম বিসিএস কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয়েছে। অন্যান্য ব্যাচে এই ধরণের বৈষম্যের কারণে সহযোগী অধ্যাপক উপাধ্যক্ষের অধীনে থাকেন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক।
‘২৪তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ফোরাম’র সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিখন সংবাদকে বলেন, ‘অন্য সব ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি হলেও আমাদের তা হয় বিষয়ভিত্তিক। এ কারণে একই ব্যাচে নিয়োগ পেয়ে দেড় শতাধিক সহকর্মী ২০১৫ সালেই সহযোগী অধ্যাপক হয়েছেন। কিন্তু বিষয়ভিত্তিক পদ স্বল্পতা বা পদ শূন্য না থাকায় আমরা ২০১৫ সালে ফিডার সার্ভিস পূর্ণ করে এখনও সহকারী অধ্যাপকই আছি। এই বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যেই আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছি। এই ২৪তম ব্যাচেই প্রায় শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় আড়াই হাজার সদস্য রয়েছেন।’
অন্য ক্যাডারে পদ সৃষ্টিতে ঢিলেমি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসনে ২০১২ সালে গণপদোন্নতি শুরু হলে পরবর্তীতে পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াও তরান্বিত হয়। ২০১৭ সালে উপসচিবের পদ ছিল এক হাজার ৩২৪টি। বর্তমানে এই স্তরে পদ এক হাজার ৭৫০টি। যুগ্ম সচিবের পদও বেড়েছে, এই স্তরে বর্তমানে পদ ৫০২টি। অতিরিক্ত সচিবের পদ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, এই স্তরে বর্তমানে ২১২টি। এই সময় কয়েকটি মন্ত্রণালয় ভাগ হওয়ায় সচিবের পদও বেড়েছে চারটি। বর্তমানে সচিব ও সিনিয়র সচিবের পদ ৯৩টি।
ক্যাডারভিত্তিক কয়েকটি ফোরামের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টিতে যত সময় লাগে, তার চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ সৃষ্টিতে। পদ সৃষ্টির মূল কাজটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যা প্রশাসন ক্যাডারের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়।
সরকার নতুন পদ সৃষ্টি ও শূন্যপদ পূরণের কাজ গতিশীল করার লক্ষে ২০১৫ সালে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বে একটি সচিব কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি নতুন পদ সৃষ্টি করতে সরকারের বিভিন্ন দফতরের সময় লাগে ২ হাজার ৬০০ দিন বা সাত বছরের বেশি।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সদস্য সচিব অধ্যাপক শাহেদুল কবীর চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘সরকারি কলেজে পদের যে বিন্যাস তা আশির দশকে নির্ধারিত। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিগ্রি পাস কোর্স, অনার্স বা মাস্টার্স থাকলে পদ বিন্যাস কী হবে, তা এনাম কমিশনের পর কেউই সংস্কার করেনি। এরপর প্রতি বছর বিভিন্ন কলেজে যে হারে অনার্স ও মাস্টার্স খোলা হচ্ছে, পদ সেভাবে বাড়েনি। শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা অধ্যাপক হয়ে সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত যেতে পারেন। ফলে তারা যুগ্ম সচিব পর্যন্তও যেতে পারেন না। কারণ যুগ্ম সচিব পদটি হচ্ছে তৃতীয় গ্রেডের। প্রত্যেক ক্যাডারের একটি ‘এ’ গ্রেডের পদ থাকার কথা। ‘এ’ গেডের সঙ্গে মিল রেখে অন্যান্য পদের বিন্যাস হবে। অর্থাৎ, গ্রেড ওয়ান থাকলে টু এবং থ্রি থাকতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারে তা হচ্ছে না। এসব কাজের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, যখনই ডেস্ক অফিসার পরিবর্তন হয়, তখন সব কাগজপত্র নতুন করে দিতে হয়।’
অন্যান্য ক্যাডারে বঞ্চনা ও হতাশা
মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর ২০২০
বিশেষায়িত ক্যাডারের সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। সরকারি চাকরিতে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও শিক্ষকরা প্রশাসন ক্যাডারের তুলনায় প্রায় সবক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার। পদোন্নতি, পদায়ন, আবাসন ও যাতায়াত-এই চারটি ক্ষেত্রেই প্রশাসন ক্যাডার এবং আন্যান্য ক্যাডার চাকরিতে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য বিরাজমান। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, বিশেষায়িত ক্যাডারের পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন পাচ্ছেন, কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের পদে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন পাচ্ছেন বা পেয়েছেন, তা অন্তত সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন।
বিসিএস আন্তঃক্যাডারের এই বৈষমের ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘২৬ ক্যাডার বিসিএস সমন্বয় কমিটি’র আহ্বায়ক ও গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূঁইয়া সংবাদকে বলেন, ‘এর প্রধান কারণ হলো- প্রশাসন ক্যাডারের পদায়ন, পদোন্নতি ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করেন। আবার অন্য ক্যাডারগুলোর পদায়ন ও পদোন্নতিসহ ভাগ্যের উন্নয়নের চাবিকাঠিও প্রশাসন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণে। বিদ্যমান সরকারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় প্রশাসন ক্যাডারকে বাদ দিয়ে অন্য ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার কোন সুযোগই নেই।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রায় ৩২ হাজার কর্মকর্তা আছেন। কিন্তু যথাসময়ে পদোন্নতি না হওয়ায় প্রায় ১৫ হাজার স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তাই নবম গ্রেডে চাকরি করছেন। ২০১৪ সালে ৩৩তম বিসিএসে যোগ দেয়া কয়েকজন চিকিৎসক জানান, ৩৩তম বিসিএসে ছয় হাজার ৩৩ জন চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের বড় অংশ ইতোমধ্যে বিভাগীয় পরীক্ষা, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনকভাবে চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ এবং সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। অথচ ওই ব্যাচের ৩৯ জনকে গত জুনে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দেয়া। একই বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া অন্য কয়েকটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছেন।
ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় কর্মরত একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, ‘আমরা অবিচারের শিকার। একজন সহকারী পুলিশ সুপার বা একজন সহকারী কমিশনার সরকারি গাড়ি পেলে আমি সরকারি গাড়ি পাব না কেন? একজন সহকারী পুলিশ সুপার বা সহকারী কমিশনার তার চাকরি জীবনের পাঁচ বছর পূর্ণ করা মাত্র পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হচ্ছেন বা সিনিয়র সহকারী সচিব হচ্ছেন। কিন্তু মেডিকেল অফিসাররা কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি পাচ্ছেন না। একই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বৈষম্য কেন?’
ক্যাডারভিত্তিক ফোরামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ সির্ভিল সার্ভিসে (বিসিএস) শর্ত পূরণ করে প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেলেও অন্য ক্যাডারে তা হয় না। বর্তমানে ডাক্তার বা চিকিৎসকদের পদোন্নতি পুলিশ বা প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ নয়। পদোন্নতি ও উপজেলায় ভালো আবাসনের ব্যবস্থা না থাকা এবং অপ্রীতিকর অবস্থায় সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় চিকিৎসকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশিদিন থাকতে চান না। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন না করলে তাদের পদোন্নতি হয় না, এ কারণে চিকিৎসকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনভাবে দুই তিন বছর পার করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাওয়ার চেষ্টা-তদবির করেন।
কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে বদলি হয়ে আসা একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের পর সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সহকারী কমিশনার হিসেবে। দুই তিন বছরের মধ্যে তারা অ্যাসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার) হিসেবে পদোন্নতি পান। ছয় বছরের মধ্যে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হন। চাকরিতে প্রবেশ করার সময় যে ডিগ্রি ছিল, ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) হওয়ার সময়ও একই ডিগ্রি। মানে তাদের ২-৩টা পদোন্নতি পেতে বেসিক গ্র্যাজুয়েশন ছাড়া অন্য কোন ডিগ্রির প্রয়োজন হচ্ছে না। চিকিৎসকেরও বেসিক ডিগ্রি গ্র্যাজুয়েশন। একজন চিকিৎসক চাকরিতে যোগ দেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিবেসে, অথচ তিনবছর পরও তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, কখনও ছয় বছরে তার কোন পদোন্নতি হয় না।’
৩৩তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া একজন চিকিৎসক আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার পদোন্নতি হয়নি, এখনও পড়ে আছি নবম গ্রেডে। অথচ একই ব্যাচের (৩৩তম বিসিএস) অন্য ক্যাডারে যোগদান করা সহকর্মীরা অনেকেই এরই মধ্যে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছেন।’
প্রশাসন ও চিকিৎসা ক্যাডারের তুলনামূলক চিত্র :
প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা চাকরির দশ বছরের মাথায় উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পান। চাকরির দশ বছর পরেও চিকিৎসকের কোন উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন না হলে, তার মাত্র একটা পদোন্নতি হবে। অর্থাৎ চাকরিতে যে গ্রেডে যোগ দিয়েছিলেন, তার চেয়ে মাত্র এক ধাপ উপরে উন্নীত হবেন, নবম গ্রেড থেকে অষ্টম গ্রেডে উন্নীত হবেন। এই সময়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা তখন উপসচিব হবেন, যার গ্রেড পঞ্চম। প্রশাসন ক্যাডারে চতুর্থ গ্রেড বিলুপ্ত করা হয়েছে।
পদায়নে বৈষম্য
বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া যে কোন সরকারি অফিসারের ন্যূনতম পোস্টিং হয় থানা পর্যায়ে। আর পররাষ্ট্র ক্যাডারে যারা পাস করেন, তাদের রাজধানীর বাইরে যেতে হয় না। বিসিএসে পুলিশের প্রথম পোস্টিং হয় অন্তত জেলা পর্যায়ে। প্রশাসন ক্যাডারদের প্রথম পোস্টিং হয় ডিসি অফিসে। শুধুমাত্র বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মীদের পোস্টিং হয় থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে ইউনিয়ন সাব-সেন্টারগুলোতেও।
কিন্তু থানা পর্যায়েই অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের জন্য নেই ভালো কোন আবাসন ব্যবস্থা। ইউনিয়ন পর্যায়ে অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগদান করা তরুণ চিকিৎসককে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর (এফডব্লিউভি) নামে পরিচিত একজন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে অফিস শেয়ার করতে হয়। অধিকাংশ সময়ে এসব সাব-সেন্টার এতো দুর্গম জায়গায় থাকে যে, সেখানে কোন গাড়ি চলাচল করে না। অথচ প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করা তরুণ কর্মকর্তার জন্য রয়েছে আলাদা সরকারি কোয়ার্টার ও পৃথক অফিস রুম।
বেতন ভাতায়ও বৈষম্য
চিকিৎসকদের কোন ঝুঁকিভাতা পান না। নেই ওভারটাইমের কোন ব্যবস্থা। যে কোন ছুটির দিনে আগে থেকেই জরুরি বিভাগ চব্বিশ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়। ইদানীং শুরু হয়েছে বন্ধের দিনেও বহিঃবিভাগ চালু রাখার নিয়ম। এজন্যও নেই কোন বাড়তি প্রণোদনা।
অথচ প্রশাসন, পুলিশসহ অন্য ক্যাডারে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তারা আলাদা ভাতা পান, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিদর্শনের জন্য পান নানা ধরনের টিএডিএ। প্রশাসন ক্যাডারের উপ-সচিব থেকে শুরু করে উপরের দিকের অফিসারদের জন্য নানা রকম আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি গাড়ি কেনার জন্য আলাদা করে ৪০ লাখ টাকার সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা, মোবাইল কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা এবং মোবাইলের জন্য আলাদা করে বিলসহ নানা ধরনের বরাদ্দ থাকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য প্রেষণ লাভের ক্ষেত্রে বৈষম্য
বর্তমানে অধিকাংশ ক্যাডার কর্মকর্তা ৫৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটি নেয়ার সুযোগ পান। অথচ স্বাস্থ্য ক্যাডারের অফিসাররা ৪৫ বছর পর্যন্ত ছুটি নেয়ার সুযোগ পান। এ বৈষম্য থাকার কারণে চাকরিতে ঢোকার পরপরই চিকিৎসকরা শিক্ষা ছুটির সুযোগ হারানোর ভয়ে চিন্তিত থাকেন।
পদোন্নতিতে বৈষম্য
একজন চিকিৎসক অধ্যাপক হিসেবে তৃতীয় গ্রেডের উপরে উঠতে পারেন না, যেখানে একজন সচিব গ্রেড ওয়ান কর্মকর্তা হওয়ার পর আবার অতিরিক্ত আরেক ধাপ প্রমোশন পেয়ে ‘সুপার গ্রেড’ সিনিয়র সচিব হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার স্বাস্থ্য ক্যাডারে পদোন্নতির জন্য উচ্চশিক্ষাকে একদিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, অন্যদিকে কঠিন করে দেয়া হয়েছে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ। ফলে একজন চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি শুরু করে মেডিকেল অফিসার হিসেবেই কর্মজীবন শেষ করেছেন এমন নজিরও রয়েছে।
একই ক্যাডারে ভিন্ন নিয়মে পদোন্নতি
ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি না হওয়ার কারণে শিক্ষা ক্যাডারেও চলছে বিশৃঙ্খলা। বিশেষ করে, শিক্ষা ক্যাডারের ২৪তম বিসিএস উদ্ভিদবিজ্ঞানের সব কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়নি। কিন্তু ইংরেজি বিভাগের কর্মরত ২৪, ২৫ এবং ২৬তম বিসিএস কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয়েছে। অন্যান্য ব্যাচে এই ধরণের বৈষম্যের কারণে সহযোগী অধ্যাপক উপাধ্যক্ষের অধীনে থাকেন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক।
‘২৪তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ফোরাম’র সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিখন সংবাদকে বলেন, ‘অন্য সব ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি হলেও আমাদের তা হয় বিষয়ভিত্তিক। এ কারণে একই ব্যাচে নিয়োগ পেয়ে দেড় শতাধিক সহকর্মী ২০১৫ সালেই সহযোগী অধ্যাপক হয়েছেন। কিন্তু বিষয়ভিত্তিক পদ স্বল্পতা বা পদ শূন্য না থাকায় আমরা ২০১৫ সালে ফিডার সার্ভিস পূর্ণ করে এখনও সহকারী অধ্যাপকই আছি। এই বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যেই আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছি। এই ২৪তম ব্যাচেই প্রায় শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় আড়াই হাজার সদস্য রয়েছেন।’
অন্য ক্যাডারে পদ সৃষ্টিতে ঢিলেমি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসনে ২০১২ সালে গণপদোন্নতি শুরু হলে পরবর্তীতে পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াও তরান্বিত হয়। ২০১৭ সালে উপসচিবের পদ ছিল এক হাজার ৩২৪টি। বর্তমানে এই স্তরে পদ এক হাজার ৭৫০টি। যুগ্ম সচিবের পদও বেড়েছে, এই স্তরে বর্তমানে পদ ৫০২টি। অতিরিক্ত সচিবের পদ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, এই স্তরে বর্তমানে ২১২টি। এই সময় কয়েকটি মন্ত্রণালয় ভাগ হওয়ায় সচিবের পদও বেড়েছে চারটি। বর্তমানে সচিব ও সিনিয়র সচিবের পদ ৯৩টি।
ক্যাডারভিত্তিক কয়েকটি ফোরামের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টিতে যত সময় লাগে, তার চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ সৃষ্টিতে। পদ সৃষ্টির মূল কাজটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যা প্রশাসন ক্যাডারের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়।
সরকার নতুন পদ সৃষ্টি ও শূন্যপদ পূরণের কাজ গতিশীল করার লক্ষে ২০১৫ সালে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বে একটি সচিব কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি নতুন পদ সৃষ্টি করতে সরকারের বিভিন্ন দফতরের সময় লাগে ২ হাজার ৬০০ দিন বা সাত বছরের বেশি।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সদস্য সচিব অধ্যাপক শাহেদুল কবীর চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘সরকারি কলেজে পদের যে বিন্যাস তা আশির দশকে নির্ধারিত। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিগ্রি পাস কোর্স, অনার্স বা মাস্টার্স থাকলে পদ বিন্যাস কী হবে, তা এনাম কমিশনের পর কেউই সংস্কার করেনি। এরপর প্রতি বছর বিভিন্ন কলেজে যে হারে অনার্স ও মাস্টার্স খোলা হচ্ছে, পদ সেভাবে বাড়েনি। শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা অধ্যাপক হয়ে সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত যেতে পারেন। ফলে তারা যুগ্ম সচিব পর্যন্তও যেতে পারেন না। কারণ যুগ্ম সচিব পদটি হচ্ছে তৃতীয় গ্রেডের। প্রত্যেক ক্যাডারের একটি ‘এ’ গ্রেডের পদ থাকার কথা। ‘এ’ গেডের সঙ্গে মিল রেখে অন্যান্য পদের বিন্যাস হবে। অর্থাৎ, গ্রেড ওয়ান থাকলে টু এবং থ্রি থাকতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারে তা হচ্ছে না। এসব কাজের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, যখনই ডেস্ক অফিসার পরিবর্তন হয়, তখন সব কাগজপত্র নতুন করে দিতে হয়।’