দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর বউমেলা। যেখানে বিক্রেতা পুরুষ হলেও ক্রেতা শুধুই নারী। মেলায় ঢুকতে পারেন না পুরুষরা। ৬৫ বছরের অধিক সময় ধরে প্রতিবছর লক্ষ্মীপূজার পরদিন বসে এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামের সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির চত্বরে বসেছিল এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা।
জানা যায়, মেলায় বিক্রেতা নারী পুরুষ উভয়ে হলেও ক্রেতা ছিলেন শুধুই নারী। তবে মেলায় কোনো পুরুষ মানুষকে ঢুকতে দেয়া হয় না। এমন কি এলাকার জামাইদেরও না। মেলার আশপাশে অসংখ্য উৎসুক দর্শনার্থী পুরুষ ভিড় জমালেও মেলায় প্রবেশাধিকার নেই। শিশু ও নারী ক্রেতাদের নিয়ে জমে উঠেছিল দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এই মেলাটি। তবে মেলা থেকে নারীরা বেরিয়ে আসার পর সন্ধ্যায় ভাঙা-মেলায় প্রবেশের অনুমতি পান পুরুষরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই ত্রিপল ও শামিয়ানা টানিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন দোকানিরা। নারীদের প্রসাধন সামগ্রীই মেলার প্রধান উপজীব্য হলেও ছোটদের খেলনা, গৃহস্থালির নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ রকমারি মুখরোচক খাবারও ছিল। বিকেল গড়িয়ে এলে সেখানে ভিড় জমতে শুরু করেন বিভিন্ন বয়সী নারী ও শিশুদের।
বউমেলায় কেনাকাটা করতে আসা অর্পিতা সরকার, মানসি মহন্ত, টুম্পা রানী, মনিষা সাহাসহ আগত একাধিক নারী বলেন, লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা হয়ে থাকে। মেলায় শুধু নারীরাই ক্রেতা-বিক্রেতা হওয়ায় নির্বিঘেœ মেলায় অবস্থান করাসহ কেনাকাটা করা যায়। তবে মেলায় আসলে খুব আনন্দ লাগে। অনেক পরিচিত ও আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা-স্বাক্ষাৎ হয়। জমিয়ে আড্ডা দেয়া যায়। বউমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বহু আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে আসেন। সবাই মিলে মেলায় ঘোরাঘুরি আর আড্ডা দেয়া যায়, মেলার আনন্দ উপভোগ করা যায়।
মেলায় আসা নববধূ অঞ্জলি রায় বলেন, নতুন বিয়ে হয়েছে। বরসহ এসেছিলাম। কিন্তু মেলায় পুরুষ প্রবেশ নিষেধ। তাই বরকে ছেড়ে একা ঢুকতে হয়েছে মেলায়। তবে মেলার পরিবেশ খুবই ভালো ছিল।
গেটে দাঁড়িয়ে থাকা সঞ্জয় রায়, তাপস মহন্তসহ অনেক পুরুষ বলেন, জানি বউ মেলাতে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ তবুও নিজেদের বউ, বাচ্চাদের নিয়ে আসতে হয়েছে। তারা ভেতরে কেনাকাটা করছে। তাদের ঘোরাফেরাসহ কেনাকাটা শেষ হলে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। তাই আমরা মেলার বাইরে অপেক্ষা করছি। মেলাটি প্রতিষ্ঠা থেকেই একই নিয়মে পরিচালনা হয়ে আসছে।
প্রসাধন সামগ্রী বিক্রেতা হেলাল উদ্দিন ও মোবারক হোসেন বলেন, বউমেলার আগত ক্রেতা সবাই নারী হওয়ায় মেলায় প্রসাধনী সামগ্রীই বেশি বিক্রি হয়। নারীদের প্রসাধনীর পাশাপাশি শিশুদের খেলনা সামগ্রীও মেলার আয়োজক সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অশেষ রঞ্জন দাস ও সাধারণ সম্পাদক সুজন সরকার বলেন, লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর পূজার পরদিন বউমেলার আয়োজন করা হয়। এটি জমিদার বিমল বাবু মেলাটি শুরু করেন। জমিদার স্বপরিবারে ভারতে চলে গেলেও তার রেখে যাওয়া দীর্ঘ ৬৫ বছরের বেশি সময়ের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বউমেলাটি সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে প্রতি বছর হয়ে আসছে। তবে মেলাটি জমিদারের আমল থেকেই শুধুমাত্র নারীদের জন্যই। এ কারণে মেলায় কোনো পুরুষকে ঢুকতে দেয়া হয় না। মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন।
ফুলবাড়ী থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী বউমেলার নিরাপত্তায় জোরদার করা হয়েছিল। মেলায় অনেক নারী-শিশু এসেছিল। তাদের নিরাপত্তায় সজাগ ও সক্রিয় অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোনো বিপত্তি ছাড়াই মেলা শেষ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, বউমেলায় সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা হয়েছে। সেখানে কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি। নির্বিঘেœ মেলা সম্পন্ন হয়েছে। বউমেলায় মূলত দর্শনার্থী নারী হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর বউমেলা। যেখানে বিক্রেতা পুরুষ হলেও ক্রেতা শুধুই নারী। মেলায় ঢুকতে পারেন না পুরুষরা। ৬৫ বছরের অধিক সময় ধরে প্রতিবছর লক্ষ্মীপূজার পরদিন বসে এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামের সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির চত্বরে বসেছিল এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা।
জানা যায়, মেলায় বিক্রেতা নারী পুরুষ উভয়ে হলেও ক্রেতা ছিলেন শুধুই নারী। তবে মেলায় কোনো পুরুষ মানুষকে ঢুকতে দেয়া হয় না। এমন কি এলাকার জামাইদেরও না। মেলার আশপাশে অসংখ্য উৎসুক দর্শনার্থী পুরুষ ভিড় জমালেও মেলায় প্রবেশাধিকার নেই। শিশু ও নারী ক্রেতাদের নিয়ে জমে উঠেছিল দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এই মেলাটি। তবে মেলা থেকে নারীরা বেরিয়ে আসার পর সন্ধ্যায় ভাঙা-মেলায় প্রবেশের অনুমতি পান পুরুষরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই ত্রিপল ও শামিয়ানা টানিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন দোকানিরা। নারীদের প্রসাধন সামগ্রীই মেলার প্রধান উপজীব্য হলেও ছোটদের খেলনা, গৃহস্থালির নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ রকমারি মুখরোচক খাবারও ছিল। বিকেল গড়িয়ে এলে সেখানে ভিড় জমতে শুরু করেন বিভিন্ন বয়সী নারী ও শিশুদের।
বউমেলায় কেনাকাটা করতে আসা অর্পিতা সরকার, মানসি মহন্ত, টুম্পা রানী, মনিষা সাহাসহ আগত একাধিক নারী বলেন, লক্ষ্মী পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা হয়ে থাকে। মেলায় শুধু নারীরাই ক্রেতা-বিক্রেতা হওয়ায় নির্বিঘেœ মেলায় অবস্থান করাসহ কেনাকাটা করা যায়। তবে মেলায় আসলে খুব আনন্দ লাগে। অনেক পরিচিত ও আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা-স্বাক্ষাৎ হয়। জমিয়ে আড্ডা দেয়া যায়। বউমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বহু আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে আসেন। সবাই মিলে মেলায় ঘোরাঘুরি আর আড্ডা দেয়া যায়, মেলার আনন্দ উপভোগ করা যায়।
মেলায় আসা নববধূ অঞ্জলি রায় বলেন, নতুন বিয়ে হয়েছে। বরসহ এসেছিলাম। কিন্তু মেলায় পুরুষ প্রবেশ নিষেধ। তাই বরকে ছেড়ে একা ঢুকতে হয়েছে মেলায়। তবে মেলার পরিবেশ খুবই ভালো ছিল।
গেটে দাঁড়িয়ে থাকা সঞ্জয় রায়, তাপস মহন্তসহ অনেক পুরুষ বলেন, জানি বউ মেলাতে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ তবুও নিজেদের বউ, বাচ্চাদের নিয়ে আসতে হয়েছে। তারা ভেতরে কেনাকাটা করছে। তাদের ঘোরাফেরাসহ কেনাকাটা শেষ হলে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। তাই আমরা মেলার বাইরে অপেক্ষা করছি। মেলাটি প্রতিষ্ঠা থেকেই একই নিয়মে পরিচালনা হয়ে আসছে।
প্রসাধন সামগ্রী বিক্রেতা হেলাল উদ্দিন ও মোবারক হোসেন বলেন, বউমেলার আগত ক্রেতা সবাই নারী হওয়ায় মেলায় প্রসাধনী সামগ্রীই বেশি বিক্রি হয়। নারীদের প্রসাধনীর পাশাপাশি শিশুদের খেলনা সামগ্রীও মেলার আয়োজক সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অশেষ রঞ্জন দাস ও সাধারণ সম্পাদক সুজন সরকার বলেন, লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর পূজার পরদিন বউমেলার আয়োজন করা হয়। এটি জমিদার বিমল বাবু মেলাটি শুরু করেন। জমিদার স্বপরিবারে ভারতে চলে গেলেও তার রেখে যাওয়া দীর্ঘ ৬৫ বছরের বেশি সময়ের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বউমেলাটি সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে প্রতি বছর হয়ে আসছে। তবে মেলাটি জমিদারের আমল থেকেই শুধুমাত্র নারীদের জন্যই। এ কারণে মেলায় কোনো পুরুষকে ঢুকতে দেয়া হয় না। মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন।
ফুলবাড়ী থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী বউমেলার নিরাপত্তায় জোরদার করা হয়েছিল। মেলায় অনেক নারী-শিশু এসেছিল। তাদের নিরাপত্তায় সজাগ ও সক্রিয় অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোনো বিপত্তি ছাড়াই মেলা শেষ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, বউমেলায় সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা হয়েছে। সেখানে কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি। নির্বিঘেœ মেলা সম্পন্ন হয়েছে। বউমেলায় মূলত দর্শনার্থী নারী হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।