alt

সারাদেশ

রংপুর বিভাগজুড়ে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শহীদদের স্মরণ

প্রতিনিধি, রংপুর : সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। পাকিস্তানি শোষণ-শাসন ও পরাধীনতার শিকল ভেঙে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের ৫৩ বছর পূর্ণতা পেল। সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করছে জাতি। ফুলে ফুলে ভরে উঠছে দেশের সবগুলো শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ।

একাত্তরের চেতনা ও চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রেখে নূতন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে এবার বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। ফুলেল শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধাহতদের পাশাপাশি ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণ করছে দেশবাসী। রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিজয় দিবসের আয়োজন নিয়ে জানাচ্ছেন প্রতিনিধিরা।

বিভাগীয় নগরী রংপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এ সময় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সুসজ্জিত দল শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে।

শ্রদ্ধা নিবেদন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিভাগীয় প্রশাসন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলীর নেতৃত্বে মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল এবং পুলিশ সুপার শরীফ আহমেদের নেতৃত্বে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। এর পরপরই জেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

এরপর সকাল ৯টায় রংপুর সার্কিট হাউসে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে উদ্বোধন করা হয় দিনব্যাপী বিজয় মেলার। বেলা ১১টায় রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অতিথি ছিলেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের স্বজন ও অতিথিরা বলেন, মহান বিজয় দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। একাত্তরের রণাঙ্গনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস লড়াই-সংগ্রাম করে

চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের সঙ্গে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সব শহীদ, সম্ভ্রম হারানো মা-বোন ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যাদের আত্মত্যাগে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের অভ্যুদয় ঘটেছে। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রেখে স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রস্তুত থাকতে তারুণ্যের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে বিজয় দিবসে রংপুরে বিজয় র‍্যালি ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি রংপুর জেলা ও মহানগর। এতে দলটির সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পাশাপাশি নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও বিজয় র‍্যালি করেছে।

এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনার পাশাপাশি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। শিশুদের চিত্রাঙ্গন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রীড়া অনুষ্ঠান, শহরের সিনেমা হল ও উন্মুক্ত স্থানে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত এবং হাসপাতাল, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশুপরিবারসহ ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন কর্মসূচি ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহরজুড়ে সাটানো ফেস্টুনে তুলে ধরা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আলোকচিত্র।

এদিকে মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাতে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষজন। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ জাসদ, বাসসসহ সাংবাদিক সংগঠন প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানুষজন।

ঠাকুরগাঁও

জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (বড় মাঠ) ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

পরে শহরের পাবলিক ক্লাব মাঠে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা, পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, জেলা বিএনপি, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিজয় র‍্যালি বের হয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার পর বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপি বিজয় মেলার উদ্বোধন করা হয়।

এ ছাড়া দিবসটিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদানসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বিজয় দিবস উদ্যাপন করা হচ্ছে।

গাইবান্ধা

সোমবার সকালেই ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা করা হয়। এরপর পৌর পার্কের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়স্তম্ভে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, গাইবান্ধা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে।

সকাল সাড়ে ৯টায় সার্কিট হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ এবং পুলিশ সুপার মো. মোশাররফ হোসেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাধীনতা প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিজয়মেলা শুরু হয়। মেলায় বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ, পুলিশ সুপার মো. মোশাররফ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির আব্দুল করিম এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়ারেছ।

বেরা সাড়ে ১১টায় স্টেডিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ।

দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল দুপুরে বিশেষ মোনাজাত। হাসপাতাল, জেলখানা ও সরকারি শিশু পরিবারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা।

এ ছাড়াও জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিজয় দিবসের পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

ছবি

ভৈরবে কাভার্ডভ্যান চাপায় নারীসহ নিহত ৫

ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় নাগরিক কমিটির তিন নেতাকে মারধরের অভিযোগ

ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের গাড়িকে ট্রাকের ধাক্কা

ছবি

সখীপুরে ঐতিহ্যবাহী কুটুম পাগলা মেলার চালুর দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের ১৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন

সিলেটের তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ আহত অর্ধশত

ছবি

ফেইসবুক পোস্টের কারণে স্বামীকে চাপ, মারধরের অভিযোগ

ছবি

নড়াইলে ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় ১৮ জন কারাগারে

আরাকান আর্মিকে মুক্তিপণ দিয়ে ঘরে ফিরলো ৬ জেলে

ছবি

গ্রেপ্তার এড়াতে পালালেন তাহেরি, পুলিশি অভিযানে বাধা, ‘ভক্তদের’ ভাঙচুর

ছবি

মাহফিল থেকে পালালেন তাহেরি, পুলিশের গাড়ি ভাঙল ভক্তরা

ছবি

কুমিল্লায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় নিহত ৩

ছবি

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে পঞ্চগড়ে , তাপমাত্রা ৯.৩ ডিগ্রি

ছবি

অংশিক কাজ শেষেও বিআরটি প্রকল্পের বাস চালু, পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু

ছবি

সিরিয়ায় ক্ষমতা দখলকারী হায়াত তাহরির আল-শামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন চালু

ছবি

গাজীপুর-ঢাকা বিআরটি লেনে অবশেষে বাস চালু

আরিচায় অগ্নিকান্ডে ৮ দোকান পুড়ে ছাই ক্ষতি পরিমান কোটি টাকা

ছবি

আখাউড়ায় পুলিশের উপর হামলা, উস্কানি দেওয়ায় তাহেরির বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার তিন

সদরপুরে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটক ২

শীতে জুবুথুবু উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণের জেলাতেও জেঁকে বসেছে

ছবি

অষ্টগ্রামে মহিষ চুরির অভিযোগে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যা

ছবি

কক্সবাজারে বন্যহাতির আক্রমণে একজনের মৃত্যু

ছবি

সুনামগঞ্জে ধর্মীয় উত্তেজনার জেরে হিন্দু বাড়িঘরে হামলা, চারজন গ্রেপ্তার

ছবি

কক্সবাজারে হাতির পদপিষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যু

ছবি

কিশোরগঞ্জে ‘চুরি হওয়া মহিষ’ নিয়ে আটক ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা

ছবি

তিনদিনের ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়

নাফনদী থেকে ‘আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাওয়া’ ৪ জেলের হদিস নেই

ছবি

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রির ঘরে

ছবি

শীতে জবুথুবু উত্তরাঞ্চল, জেঁকে বসেছে দক্ষিণেও

ছবি

দীর্ঘ ১৮ বছরেও চালু হয়নি মোরেলগঞ্জে পানগুছি নদীর সন্ন্যাসী কলারন ফেরিঘাট, ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রী

ছবি

শরীয়তপুরে রাসেল’স ভাইপারের কামড় খেয়ে সাপ নিয়েই হাসপাতালে হাজির হলেন আক্রান্ত ব্যক্তি

ছবি

তর্ক করায় বাস ভাঙচুর, চালক-যাত্রীকে মারধর করলেন বিএনপি নেতা

ছবি

বিডিআর বিদ্রোহ: ‘নির্দোষ’ কারাবন্দি সদস্যদের মুক্তিসহ আট দফা দাবি

ছবি

পারিবারিক কলহের জের ধরে শিশুকে হত্যার অভিযোগ, আটক মা

ছবি

ভারত থেকে ট্রেনে বেনাপোলে এলো ৪৬৮ টন আলু

tab

সারাদেশ

রংপুর বিভাগজুড়ে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শহীদদের স্মরণ

প্রতিনিধি, রংপুর

সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। পাকিস্তানি শোষণ-শাসন ও পরাধীনতার শিকল ভেঙে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের ৫৩ বছর পূর্ণতা পেল। সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করছে জাতি। ফুলে ফুলে ভরে উঠছে দেশের সবগুলো শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ।

একাত্তরের চেতনা ও চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রেখে নূতন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে এবার বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। ফুলেল শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধাহতদের পাশাপাশি ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণ করছে দেশবাসী। রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিজয় দিবসের আয়োজন নিয়ে জানাচ্ছেন প্রতিনিধিরা।

বিভাগীয় নগরী রংপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এ সময় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সুসজ্জিত দল শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে।

শ্রদ্ধা নিবেদন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিভাগীয় প্রশাসন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলীর নেতৃত্বে মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল এবং পুলিশ সুপার শরীফ আহমেদের নেতৃত্বে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। এর পরপরই জেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

এরপর সকাল ৯টায় রংপুর সার্কিট হাউসে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে উদ্বোধন করা হয় দিনব্যাপী বিজয় মেলার। বেলা ১১টায় রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অতিথি ছিলেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের স্বজন ও অতিথিরা বলেন, মহান বিজয় দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। একাত্তরের রণাঙ্গনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস লড়াই-সংগ্রাম করে

চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের সঙ্গে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সব শহীদ, সম্ভ্রম হারানো মা-বোন ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যাদের আত্মত্যাগে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের অভ্যুদয় ঘটেছে। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রেখে স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রস্তুত থাকতে তারুণ্যের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে বিজয় দিবসে রংপুরে বিজয় র‍্যালি ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি রংপুর জেলা ও মহানগর। এতে দলটির সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পাশাপাশি নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও বিজয় র‍্যালি করেছে।

এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনার পাশাপাশি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। শিশুদের চিত্রাঙ্গন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রীড়া অনুষ্ঠান, শহরের সিনেমা হল ও উন্মুক্ত স্থানে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত এবং হাসপাতাল, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশুপরিবারসহ ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন কর্মসূচি ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহরজুড়ে সাটানো ফেস্টুনে তুলে ধরা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আলোকচিত্র।

এদিকে মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাতে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষজন। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ জাসদ, বাসসসহ সাংবাদিক সংগঠন প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানুষজন।

ঠাকুরগাঁও

জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (বড় মাঠ) ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

পরে শহরের পাবলিক ক্লাব মাঠে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা, পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, জেলা বিএনপি, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিজয় র‍্যালি বের হয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার পর বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপি বিজয় মেলার উদ্বোধন করা হয়।

এ ছাড়া দিবসটিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদানসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বিজয় দিবস উদ্যাপন করা হচ্ছে।

গাইবান্ধা

সোমবার সকালেই ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা করা হয়। এরপর পৌর পার্কের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়স্তম্ভে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, গাইবান্ধা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে।

সকাল সাড়ে ৯টায় সার্কিট হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ এবং পুলিশ সুপার মো. মোশাররফ হোসেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাধীনতা প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিজয়মেলা শুরু হয়। মেলায় বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ, পুলিশ সুপার মো. মোশাররফ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির আব্দুল করিম এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়ারেছ।

বেরা সাড়ে ১১টায় স্টেডিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ।

দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল দুপুরে বিশেষ মোনাজাত। হাসপাতাল, জেলখানা ও সরকারি শিশু পরিবারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা।

এ ছাড়াও জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিজয় দিবসের পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

back to top