‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয় বলে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়নি
পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার শিয়ালদহ আদালতের অতিরিক্ত দায়রা জজ অনির্বাণ দাস এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় বিচারক বলেন, ঘটনাটি ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩(১) ধারায় সঞ্জয়ের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে তিনটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা আমৃত্যু কার্যকর থাকবে। এ ছাড়াও তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও পাঁচ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
রায়ের পর সঞ্জয়ের প্রতিক্রিয়া ছিল আবেগঘন। আদালতে উপস্থিত থেকে তিনি বিড়বিড় করে বলেন, “আমার তো বদনাম হয়ে গেল।” তার আইনজীবী তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “মৃত্যুদণ্ড হয়নি, আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”
নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নন। তাদের দাবি, ঘটনাটি ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ প্রমাণে সিবিআই ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে সঞ্জয়কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি।
বিচারক নিহতের পরিবারকে ১৭ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে নিহতের বাবা-মা হাত জোড় করে আদালতে বলেন, তারা ক্ষতিপূরণ চান না, শুধু ন্যায়বিচার চান। বিচারক জবাবে বলেন, “এই ক্ষতিপূরণ ভুক্তভোগীর পরিবারের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ঘটনায় ফাঁসির দাবি জানিয়ে বলেন, “আমাদের হাতে কেস থাকলে আমরা আগেই ফাঁসির অর্ডার দিয়ে দিতাম।”
২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে কলকাতায় আরজি কর মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সারা ভারত স্তম্ভিত হয়েছিল। ঘটনার বিচার চেয়ে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ।
নিহত চিকিৎসক টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটির পর সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে গেলে তার ওপর এই নির্মম ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে সহকর্মীরা তার মরদেহ উদ্ধার করেন। প্রথমে আত্মহত্যা বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তীব্র জনরোষের মুখে পুলিশ ধর্ষণ ও খুনের মামলা দায়ের করে।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার নেয় সিবিআই। সিবিআই তদন্তের সময় আদালতে ৫০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়, যার মধ্যে নিহতের বাবা, তদন্ত কর্মকর্তারা, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং সহপাঠীরা ছিলেন।
তদন্তে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে বায়োলজিক্যাল এবং ডিজিটাল প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। তবে নিহতের পরিবার অভিযোগ করে, সিবিআই শুধুমাত্র সঞ্জয়কেই দোষী প্রমাণে মনোযোগ দিয়েছে এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের আড়ালে রাখছে।
ঘটনার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচারের দাবিতে একাত্ম হয়। নিহত চিকিৎসকের পরিবারসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায়। আদালতের রায়ের পরও নিহতের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে, যারা মনে করেন ন্যায়বিচার এখনো পূর্ণতা পায়নি।
এ মামলার রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, যেখানে একদিকে ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে ভুক্তভোগীর পরিবারের অসন্তোষ আরও গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয় বলে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়নি
সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার শিয়ালদহ আদালতের অতিরিক্ত দায়রা জজ অনির্বাণ দাস এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় বিচারক বলেন, ঘটনাটি ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩(১) ধারায় সঞ্জয়ের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে তিনটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা আমৃত্যু কার্যকর থাকবে। এ ছাড়াও তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও পাঁচ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
রায়ের পর সঞ্জয়ের প্রতিক্রিয়া ছিল আবেগঘন। আদালতে উপস্থিত থেকে তিনি বিড়বিড় করে বলেন, “আমার তো বদনাম হয়ে গেল।” তার আইনজীবী তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “মৃত্যুদণ্ড হয়নি, আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”
নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নন। তাদের দাবি, ঘটনাটি ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ প্রমাণে সিবিআই ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে সঞ্জয়কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি।
বিচারক নিহতের পরিবারকে ১৭ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে নিহতের বাবা-মা হাত জোড় করে আদালতে বলেন, তারা ক্ষতিপূরণ চান না, শুধু ন্যায়বিচার চান। বিচারক জবাবে বলেন, “এই ক্ষতিপূরণ ভুক্তভোগীর পরিবারের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ঘটনায় ফাঁসির দাবি জানিয়ে বলেন, “আমাদের হাতে কেস থাকলে আমরা আগেই ফাঁসির অর্ডার দিয়ে দিতাম।”
২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে কলকাতায় আরজি কর মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সারা ভারত স্তম্ভিত হয়েছিল। ঘটনার বিচার চেয়ে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ।
নিহত চিকিৎসক টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটির পর সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে গেলে তার ওপর এই নির্মম ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে সহকর্মীরা তার মরদেহ উদ্ধার করেন। প্রথমে আত্মহত্যা বলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তীব্র জনরোষের মুখে পুলিশ ধর্ষণ ও খুনের মামলা দায়ের করে।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার নেয় সিবিআই। সিবিআই তদন্তের সময় আদালতে ৫০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়, যার মধ্যে নিহতের বাবা, তদন্ত কর্মকর্তারা, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং সহপাঠীরা ছিলেন।
তদন্তে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে বায়োলজিক্যাল এবং ডিজিটাল প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। তবে নিহতের পরিবার অভিযোগ করে, সিবিআই শুধুমাত্র সঞ্জয়কেই দোষী প্রমাণে মনোযোগ দিয়েছে এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের আড়ালে রাখছে।
ঘটনার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচারের দাবিতে একাত্ম হয়। নিহত চিকিৎসকের পরিবারসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায়। আদালতের রায়ের পরও নিহতের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে, যারা মনে করেন ন্যায়বিচার এখনো পূর্ণতা পায়নি।
এ মামলার রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, যেখানে একদিকে ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে ভুক্তভোগীর পরিবারের অসন্তোষ আরও গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।