কম খরচে অধিক উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও রপ্তানি আয় বাড়াতে দুই বছর ধরে দেশে বিদেশি প্রজাতির চিংড়ি ভেনামি চাষের অনুমোদন মিললেও রপ্তানি হয়নি এক ছটাকও। পাশাপাশি এই চিংড়ির চাষ পদ্ধতিতে বিদেশ থেকে খাদ্য, ওষুধ ও পোনা আমদানি এবং চাষের স্থানে জৈবনিরাপত্তা (বায়োসিকিউরিটি) নিশ্চিতসহ বেশ কিছু শর্ত থাকলেও তা নিশ্চিত হচ্ছে না। উল্টো শর্ত না মেনে ভেনামি প্রজাতির চাষ হচ্ছে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সনাতন পদ্ধতির ঘেরগুলোতে। ফলে এসব এলাকার পানি, প্রতিবেশ ও প্রাকৃতিক শৃঙ্খল নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন আট টন হলেও সেখানে ভেনামির উৎপাদন ২০ টন। তাই চিংড়ি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে ২০২৩ সালে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয় সরকার।
কিন্তু দুই বছরেও এক ছটাক ভেনামি চিংড়ি রপ্তানি করেননি রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানিকারক ও গবেষকরা বলেছেন, ভেনামি চিংড়ি চাষে নির্দেশিত নীতিমালা বাধ্যতামূলক প্রতিপালন করতে হবে। অন্যথায় দেশীয় প্রজাতির চিংড়িতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। দেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী হিমায়িত চিংড়ি খাত একসময় পোশাক খাতের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। বর্তমানে সপ্তম স্থানে নেমে এসেছে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, অনিয়ন্ত্রিকভাবে যদি ভেনামি চাষ করা হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়বে দেশি প্রজাতির চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের ওপর। এতে পরিবেশ-প্রতিবেশে ভারসাম্যহীন প্রতিযোগিতা শুরু হবে। বায়োডারভারসিটি নষ্ট হবে। রোগবালাই, প্যাথোজেন সৃষ্টি হবে, যা দেশি প্রজাতিতে ছড়িয়ে পড়বে।
খুলনা বিভাগীয় পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাইকগাছা উপজেলার পুরস্কারপ্রাপ্ত চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, আমদানি নির্ভরতার কারণে ভেনামি চিংড়ি চাষ বাড়ছে না। ইচ্ছে থাকলেও এই চিংড়ি চাষ বাড়াতে পারছেন না চাষিরা। কারণ নানা ধরনের বিধিনিষেধ আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেল অর্থবছরে (২০২৩-২৪) চিংড়ি রপ্তানি থেকে আয় এসেছে দুই হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। চিংড়ি রপ্তানির সংকট কাটাতে ২০০৫ সালে ভেনামি প্রজাতির চাষ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীকে চিঠি প্রদান করে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। পরে একাধিক চিঠি চালাচালি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষ প্রবর্তনের জন্য গঠিত কারিগরি কমিটি ‘খুলনা ও কক্সবাজার এলাকায় পৃথক পৃথকভাবে ১০-২০ একর আয়তনের সম্পূর্ণ আলাদা স্থানে বায়ো-সিকিউরিটি নিশ্চিত করে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দেয়।
২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল খুলনা ও কক্সবাজার এলাকায় পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি চাষ ও পিএল উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি ও স্থান নির্বাচন, উদ্যোক্তা নির্বাচন, ভেনামি চিংড়ি চাষ পরীবিক্ষণ, মূল্যায়ন ও প্রতিবেদন প্রদানের জন্য গঠিত উপকমিটিপ্রাপ্ত আবেদনের আলোকে খুলনা অঞ্চলে বিএফআরআইয়ের নোনা পানি কেন্দ্র, পাইকগাছার উদ্যোক্তা হিসেবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন ও কক্সবাজারে গোল্ডেন একুয়া শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেডকে প্রাথমিক কাজের জন্য নির্বাচন করে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. ফারহানা তাসলিমা জানান, ২০২৩ সাল থেকে মূলত বাণিজ্যিক ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ভেনামি চাষের অনুমোদন পেয়েছেন ১৪ জন, যারা ৬৭ একর জমিতে এই প্রজাতির চিংড়ি চাষ করছেন।
বাংলাদেশে ১০৫টি হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াকারী কারখানা রয়েছে। যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন। কাঁচামালের স্বল্পতার কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০-১৫ শতাংশ, যা কারখানা বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনুকূল নয়। আবার কোথাও কোথাও সনাতনি পদ্ধতিতে নোনা পানিতে চিংড়ি চাষ পরিবেশসহ নানা সংকটের মুখোমুখি করেছে।
সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
কম খরচে অধিক উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও রপ্তানি আয় বাড়াতে দুই বছর ধরে দেশে বিদেশি প্রজাতির চিংড়ি ভেনামি চাষের অনুমোদন মিললেও রপ্তানি হয়নি এক ছটাকও। পাশাপাশি এই চিংড়ির চাষ পদ্ধতিতে বিদেশ থেকে খাদ্য, ওষুধ ও পোনা আমদানি এবং চাষের স্থানে জৈবনিরাপত্তা (বায়োসিকিউরিটি) নিশ্চিতসহ বেশ কিছু শর্ত থাকলেও তা নিশ্চিত হচ্ছে না। উল্টো শর্ত না মেনে ভেনামি প্রজাতির চাষ হচ্ছে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সনাতন পদ্ধতির ঘেরগুলোতে। ফলে এসব এলাকার পানি, প্রতিবেশ ও প্রাকৃতিক শৃঙ্খল নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন আট টন হলেও সেখানে ভেনামির উৎপাদন ২০ টন। তাই চিংড়ি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে ২০২৩ সালে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয় সরকার।
কিন্তু দুই বছরেও এক ছটাক ভেনামি চিংড়ি রপ্তানি করেননি রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানিকারক ও গবেষকরা বলেছেন, ভেনামি চিংড়ি চাষে নির্দেশিত নীতিমালা বাধ্যতামূলক প্রতিপালন করতে হবে। অন্যথায় দেশীয় প্রজাতির চিংড়িতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। দেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী হিমায়িত চিংড়ি খাত একসময় পোশাক খাতের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। বর্তমানে সপ্তম স্থানে নেমে এসেছে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, অনিয়ন্ত্রিকভাবে যদি ভেনামি চাষ করা হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়বে দেশি প্রজাতির চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের ওপর। এতে পরিবেশ-প্রতিবেশে ভারসাম্যহীন প্রতিযোগিতা শুরু হবে। বায়োডারভারসিটি নষ্ট হবে। রোগবালাই, প্যাথোজেন সৃষ্টি হবে, যা দেশি প্রজাতিতে ছড়িয়ে পড়বে।
খুলনা বিভাগীয় পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাইকগাছা উপজেলার পুরস্কারপ্রাপ্ত চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, আমদানি নির্ভরতার কারণে ভেনামি চিংড়ি চাষ বাড়ছে না। ইচ্ছে থাকলেও এই চিংড়ি চাষ বাড়াতে পারছেন না চাষিরা। কারণ নানা ধরনের বিধিনিষেধ আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেল অর্থবছরে (২০২৩-২৪) চিংড়ি রপ্তানি থেকে আয় এসেছে দুই হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। চিংড়ি রপ্তানির সংকট কাটাতে ২০০৫ সালে ভেনামি প্রজাতির চাষ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীকে চিঠি প্রদান করে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। পরে একাধিক চিঠি চালাচালি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষ প্রবর্তনের জন্য গঠিত কারিগরি কমিটি ‘খুলনা ও কক্সবাজার এলাকায় পৃথক পৃথকভাবে ১০-২০ একর আয়তনের সম্পূর্ণ আলাদা স্থানে বায়ো-সিকিউরিটি নিশ্চিত করে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দেয়।
২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল খুলনা ও কক্সবাজার এলাকায় পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি চাষ ও পিএল উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি ও স্থান নির্বাচন, উদ্যোক্তা নির্বাচন, ভেনামি চিংড়ি চাষ পরীবিক্ষণ, মূল্যায়ন ও প্রতিবেদন প্রদানের জন্য গঠিত উপকমিটিপ্রাপ্ত আবেদনের আলোকে খুলনা অঞ্চলে বিএফআরআইয়ের নোনা পানি কেন্দ্র, পাইকগাছার উদ্যোক্তা হিসেবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন ও কক্সবাজারে গোল্ডেন একুয়া শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেডকে প্রাথমিক কাজের জন্য নির্বাচন করে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. ফারহানা তাসলিমা জানান, ২০২৩ সাল থেকে মূলত বাণিজ্যিক ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ভেনামি চাষের অনুমোদন পেয়েছেন ১৪ জন, যারা ৬৭ একর জমিতে এই প্রজাতির চিংড়ি চাষ করছেন।
বাংলাদেশে ১০৫টি হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াকারী কারখানা রয়েছে। যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন। কাঁচামালের স্বল্পতার কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০-১৫ শতাংশ, যা কারখানা বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনুকূল নয়। আবার কোথাও কোথাও সনাতনি পদ্ধতিতে নোনা পানিতে চিংড়ি চাষ পরিবেশসহ নানা সংকটের মুখোমুখি করেছে।