# পুরাতন জেলখানায় তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল পার্ক ও বাণিজ্যিক ভবন
# ২৩ ফেব্রুয়ারি চালু হচ্ছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২
অবশেষে ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন সিলেট মেট্রো অঞ্চলের বন্দিরা। "রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ"-এ স্লোগানের আলোকে ২৩ ফেব্রুয়ারি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ আট বছর আগে এই কারাগারের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি তৎকালীন সময় আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান সরকারের আমলে সংশ্লিষ্টদের চিঠি চালাচালির পর কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয়। নগরীর বন্দর বাজার এলাকায় যদিও এটি ২৩৬ বছরের পুরনো জেলখানা ছিল। তবে ২০১৯
সালে বাদাঘাট এলাকায় এই কারাগার স্থানান্তরিত হওয়ার পর সকলের চোখ পড়ে স্থাপনার প্রতি। কেউ বলছিলেন, "বঙ্গবন্ধু পার্ক" করবেন, আবার কেউ বলছিলেন, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কথা। কিন্তু, জেল কর্তৃপক্ষ স্থাপনাটি হাতছাড়া করেননি। আর এ কারণেই নতুন করে পুরনো এই জেলখানা মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের সুবিধার্থে "সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২" হিসেবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো: ছগির মিয়া স্বাক্ষরিত এক পত্রে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রদান করেন।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৭৮৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকের প্রতিনিধি সিলেটের কালেক্টর জন উইলসন সিলেট নগরের ধোপাদীঘির পারে ২৪ দশমিক ৬৭ একর জায়গায় নির্মাণ করেন সিলেট কারাগার। এতে তৎকালীন এক লাখ রুপি ব্যয় হয়েছিল। কারাগার নির্মাণের বছর সিলেট জেলার জনসংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৩৮২ জন। সময়ের ব্যবধানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্দির সংখ্যা বাড়তে থাকে। কারাগার নির্মাণের দুই শতাধিক বছর পর নগরের বাইরে বাদাঘাট এলাকায় কারাগার স্থানান্তরিত হয়।
এই কারাগারে জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের রাখা হচ্ছে। তবে নিয়ম বা আইন বলছে, মেট্রো বা জেলা এলাকার বন্দিদের আলাদা আলাদা করে রাখার কথা। বিশেষজ্ঞদের মতামতও একই। তাদের মতে, গ্রামের বন্দিরা অনেকটা সহজ সরল। তারা বেশিরভাগ গ্রামে চুরি, জায়গা জমি নিয়ে সংঘর্ষ ইত্যাদি বিষয়ে আসামি হয়ে জেলখানায় আসেন। আর মেট্রো এলাকার বেশিরভাগই রাজনৈতিক, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক মামলার আসামি। গ্রামের আসামিরা যখন মেট্রো এলাকার আসামিদের সাথে মুখোমুখি হন তখন তাদের অনেকে ওই অপরাধীদের মুখ থেকে গল্প শুনে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ফলে তাদের আলাদা রাখা প্রয়োজন। কিন্তু সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার কার্যক্রম ১৬ বছর আগে শুরু হলেও বন্দিদের ক্ষেত্রে ছিল ব্যতিক্রম। আইন অনুযায়ী, তাদের আলাদা রাখার কথা থাকলেও তারা ছিল বৈষম্যের শিকার।
সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহা পরিদর্শক মোঃ ছগির মিয়া বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের জন্য সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ চালু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই প্রক্রিয়া থমকে যায়। সরকার পতনের পর গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই প্রেক্ষিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি কারা অধিদপ্তর থেকে "সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ " চালুর নির্দেশ প্রদান করা হয়। অথচ সিলেট জেলা ভেঙ্গে ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যক্রম। এর আগে বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯৫ সালে চারটি জেলা নিয়ে গঠিত হয় সিলেট বিভাগ। অন্যদিকে ২০০২ সালে গঠন হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আর সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। এরপরও সুযোগ সুবিধা পায়নি মহানগরের (মেট্রোপলিটন) বন্দিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বন্দিদের ক্ষেত্রে চারটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে মামলা বা আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা, দ্বিতীয়তঃ আইনজীবী ও কোর্ট পুলিশের ভূমিকা, তৃতীয়তঃ বিচারকের ভূমিকা এবং সর্বশেষ আসলে কে কারাগারে প্রেরণ করা হলে জেল পুলিশের ভূমিকা। আর এই সর্বশেষ ধাপই মেট্রোপলিটন বন্দিদের জন্য ছিল বৈষম্য। অবশেষে সেই বৈষম্য থেকে বের হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের ভোগান্তি দূর হতে যাচ্ছে। এইদিন থেকেই মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের আর শহরতলীর বাদাঘাট যেতে হবে না। নতুন করে চালু হতে যাওয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার- দুই থেকেই তাদেরকে আদালতে আনা নেয়া করা হবে। ইতিমধ্যে এধরনের সকল প্রকার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপ-কারা মহাপরিদর্শক মো: ছগির মিয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে তিনি বলেন, "২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সিলেট মেট্রো অঞ্চলের আদালতসমূহের হাজতি বন্দিদের হাজিরা শেষে সিলেট কারাগার-২ এ প্রেরণ এবং পর্যায়ক্রমে কারাগার-২ থেকে সংশ্লিষ্ট হাজতি বন্দীদের যাবতীয় কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।"
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
# পুরাতন জেলখানায় তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল পার্ক ও বাণিজ্যিক ভবন
# ২৩ ফেব্রুয়ারি চালু হচ্ছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২
অবশেষে ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন সিলেট মেট্রো অঞ্চলের বন্দিরা। "রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ"-এ স্লোগানের আলোকে ২৩ ফেব্রুয়ারি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ আট বছর আগে এই কারাগারের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি তৎকালীন সময় আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান সরকারের আমলে সংশ্লিষ্টদের চিঠি চালাচালির পর কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয়। নগরীর বন্দর বাজার এলাকায় যদিও এটি ২৩৬ বছরের পুরনো জেলখানা ছিল। তবে ২০১৯
সালে বাদাঘাট এলাকায় এই কারাগার স্থানান্তরিত হওয়ার পর সকলের চোখ পড়ে স্থাপনার প্রতি। কেউ বলছিলেন, "বঙ্গবন্ধু পার্ক" করবেন, আবার কেউ বলছিলেন, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কথা। কিন্তু, জেল কর্তৃপক্ষ স্থাপনাটি হাতছাড়া করেননি। আর এ কারণেই নতুন করে পুরনো এই জেলখানা মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের সুবিধার্থে "সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২" হিসেবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো: ছগির মিয়া স্বাক্ষরিত এক পত্রে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রদান করেন।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৭৮৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকের প্রতিনিধি সিলেটের কালেক্টর জন উইলসন সিলেট নগরের ধোপাদীঘির পারে ২৪ দশমিক ৬৭ একর জায়গায় নির্মাণ করেন সিলেট কারাগার। এতে তৎকালীন এক লাখ রুপি ব্যয় হয়েছিল। কারাগার নির্মাণের বছর সিলেট জেলার জনসংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৩৮২ জন। সময়ের ব্যবধানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্দির সংখ্যা বাড়তে থাকে। কারাগার নির্মাণের দুই শতাধিক বছর পর নগরের বাইরে বাদাঘাট এলাকায় কারাগার স্থানান্তরিত হয়।
এই কারাগারে জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের রাখা হচ্ছে। তবে নিয়ম বা আইন বলছে, মেট্রো বা জেলা এলাকার বন্দিদের আলাদা আলাদা করে রাখার কথা। বিশেষজ্ঞদের মতামতও একই। তাদের মতে, গ্রামের বন্দিরা অনেকটা সহজ সরল। তারা বেশিরভাগ গ্রামে চুরি, জায়গা জমি নিয়ে সংঘর্ষ ইত্যাদি বিষয়ে আসামি হয়ে জেলখানায় আসেন। আর মেট্রো এলাকার বেশিরভাগই রাজনৈতিক, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক মামলার আসামি। গ্রামের আসামিরা যখন মেট্রো এলাকার আসামিদের সাথে মুখোমুখি হন তখন তাদের অনেকে ওই অপরাধীদের মুখ থেকে গল্প শুনে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ফলে তাদের আলাদা রাখা প্রয়োজন। কিন্তু সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার কার্যক্রম ১৬ বছর আগে শুরু হলেও বন্দিদের ক্ষেত্রে ছিল ব্যতিক্রম। আইন অনুযায়ী, তাদের আলাদা রাখার কথা থাকলেও তারা ছিল বৈষম্যের শিকার।
সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহা পরিদর্শক মোঃ ছগির মিয়া বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের জন্য সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ চালু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই প্রক্রিয়া থমকে যায়। সরকার পতনের পর গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই প্রেক্ষিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি কারা অধিদপ্তর থেকে "সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ " চালুর নির্দেশ প্রদান করা হয়। অথচ সিলেট জেলা ভেঙ্গে ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যক্রম। এর আগে বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯৫ সালে চারটি জেলা নিয়ে গঠিত হয় সিলেট বিভাগ। অন্যদিকে ২০০২ সালে গঠন হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আর সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। এরপরও সুযোগ সুবিধা পায়নি মহানগরের (মেট্রোপলিটন) বন্দিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বন্দিদের ক্ষেত্রে চারটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে মামলা বা আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা, দ্বিতীয়তঃ আইনজীবী ও কোর্ট পুলিশের ভূমিকা, তৃতীয়তঃ বিচারকের ভূমিকা এবং সর্বশেষ আসলে কে কারাগারে প্রেরণ করা হলে জেল পুলিশের ভূমিকা। আর এই সর্বশেষ ধাপই মেট্রোপলিটন বন্দিদের জন্য ছিল বৈষম্য। অবশেষে সেই বৈষম্য থেকে বের হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের ভোগান্তি দূর হতে যাচ্ছে। এইদিন থেকেই মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের আর শহরতলীর বাদাঘাট যেতে হবে না। নতুন করে চালু হতে যাওয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার- দুই থেকেই তাদেরকে আদালতে আনা নেয়া করা হবে। ইতিমধ্যে এধরনের সকল প্রকার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপ-কারা মহাপরিদর্শক মো: ছগির মিয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে তিনি বলেন, "২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সিলেট মেট্রো অঞ্চলের আদালতসমূহের হাজতি বন্দিদের হাজিরা শেষে সিলেট কারাগার-২ এ প্রেরণ এবং পর্যায়ক্রমে কারাগার-২ থেকে সংশ্লিষ্ট হাজতি বন্দীদের যাবতীয় কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।"