চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় পৃথক অগ্নিকাণ্ডে চট্টগ্রাম জেলার ৬৪টি দোকান ও বাড়িঘর পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে, আগুন কেড়ে নিয়েছে এক শিশুর প্রাণ। গত শনিবার এবং রোববার জেলার রাউজান, ফটিকছড়ি, পটিয়া, চন্দনাইশ, হাটহাজারী এবং বোয়ালখালী উপজেলায় এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, হাটহাজারীতে আগুনে পুড়ে গেছে ৪ পরিবারের ঘর। গত রোববার দুপুরে উপজেলার ৫ নং ওয়ার্ডের আসাদ আলী তালুকদার বাড়িতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, উক্ত বাড়ির একটি রান্না ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হলে মুহূর্তের মধ্যে আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে একটি টিনের ঘরসহ ৩টি পাকা ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন মো. মোরশেদ, নুরুল হুদা, নুরুল হক এবং সাহাবুদ্দিন। আগুনে তাদের ৪টি পরিবারের মূল্যবান আসবাবপত্রসহ একটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০ লাখ টাকা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে খবর পেয়ে হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আব্দুল মান্নান জানান, আগুনে ৪টি পরিবারের ঘর পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে। ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদ দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে তৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল প্রদান করেন। এদিকে, বোয়ালখালীতে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট হয়ে আগুনে পুড়ে গেছে বসতঘর। এ সময় ঘরে থাকা ৬টি ছাগলও পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। গত রোববার রাত ৮টায় উপজেলার করলডেঙ্গা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের গাজীর পাড়ার খলিল মাস্টার বাড়ির নূর হোসেন বাবুর্চির বসতঘরে এই অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটে। বোয়ালখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ ফিরোজ খান বলেন, খবর পেয়ে বোয়ালখালী ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট বাঁশের বেড়া ও টিনে চালা দেয়া বসতঘর পুড়ে গেছে। এ সময় ঘরে থাকা ৬টি ছাগল পুড়ে মারা গেছে। তাৎক্ষডুক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। স্থানীয়রা জানান, ঘরে মৃত নূর হোসেন বাবুর্চির স্ত্রী লেদা বুড়ি এবং তার দুই ছেলে থাকেন। গতকাল রবিবার ইফতারের পর তারা কোনো কাজে বের হয়েছিলেন। এর মধ্যে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফলে পরনের কাপড় ছাড়া ঘরের কোনো মালামাল রক্ষা করা যায়নি। অপরদিকে, পটিয়ার স্থানীয় সুত্র জানা গেছে, পটিয়ায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারালো ২২ দরিদ্র জেলে পরিবার। এতে তাদের নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার এবং আসবাবপত্রসহ ঘরের সব অবকাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত রোববার দুপুর একটার দিকে উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের নাইখাইন সর্দার পাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় প্রায় দেড়ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ততক্ষণে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া পরিবারগুলোর মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ডে মিলন সর্দার, স্বপন সর্দার, স্বদেশ, সুভাস, শ্যামল, শিবু, দীপু, রানা, তপন, মন্না, রিপু, ইমন, শংকর, সুব্রত, সুবল, রুবেল, গণেশ, খোকন, রিশু, কৃষ্ণা, বাবলা এবং শাপলা সর্দারের ঘর সম্পুর্ণ পুড়ে গেছে। এতে এসব পরিবারের অন্তত ৩০-৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দাবি করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মিলন সর্দার জানান, আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। এ কারণে বিয়ের জন্য জমানো ২ লাখ টাকা ও বানানো স্বর্ণগুলো ঘরে নিরাপদ মনে করে আলমিরায় তুলে রেখেছি। এখনতো আগুনে সব ছাই হয়ে গেছে। যেন আমার কপাল পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ক্ষতিগ্রস্ত সুমন সর্দার বলেন, হঠাৎ আগুন লাগলে আমরা নিজেরা কোনো রকম বের হতে পারলেও ঘরের কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। এখন আমাদের মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকুও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
পটিয়া ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রাজেশ বড়ুয়া জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও সব ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ফটিকছড়ির আরেকটি সূত্র জানায়, উত্তর ফটিকছড়ির শান্তিরহাট বাজারে গত ৮ মার্চ দিবাগত গভীর রাতে আগুন লেগে ৩০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে অন্তত আড়াই কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উক্ত বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান আলি জানান, গত ৮ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটায় উক্ত বাজারের জালাল সওদাগরের ভাড়া বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনে একে একে জালাল সওদাগরের বাসা বাড়ি, শেখ আহম্মদের ফার্নিচার দোকান, রূপনের মুদি দোকান, সঞ্জয়য়ের ওষুধের দোকান, দেলোয়ারের ক্রোকারিজ দোকান, খোকনের কসমেটিকসের দোকান, আবু তাহেরের হার্ডওয়ার দোকান, আহমদ ছাফার স’মিল, সাহাবুদ্দিনের দুটি ফার্নিচার দোকান, মো. ইসমাইলের দুটি ফার্নিচার দোকান, আব্দুস সালামের চা দোকান, মো. শফিকের তিনটি ফার্নিচার দোকান, খোরশেদের টিউবওয়েলের দোকান, মো. শহীদের বেকারি, মো. এমরানের পাঁচটি ফার্নিচার দোকান, জসিম সওদাগরের তিনটি ফার্নিচার দোকান, রিপনের ফার্নিচার দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফটিকছড়ি সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে উক্ত বাজারের ব্যবসায়ীরা হতাশায় দিন গুজরান করছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
এদিকে, চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীতে চায়ের দোকানের চুলা থেকে আগুন লেগে ৭টি দোকানের মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকানের মালিকেরা। রোববার ভোররাতে দোহাজারী হাজারী বাড়ি গলিতে এই অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আধাঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। স্থানীয় এলাকাবাসী ও দোকানের মালিকেরা জানান, হাজারী বাড়ি গলিতে অবস্থিত পানাহার চায়ের দোকানের চুলার থেকে প্রথম আগুন লাগে। মুহূর্তেই সেই আগুন পাশে থাকা মুদির দোকান পাল স্টোরে লাগে। এরপর দ্রুত আগুন পাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা আগুন নিভানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে প্রায় একঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।আগুনে অঞ্জন পালের একটি মুদির দোকান, জাহাঙ্গীর আলম মেম্বার, পেটান আলী, নাছির উদ্দীন ও জসিম উদ্দীনেরসহ ৪টি চায়ের দোকান, মনোজ সিংহ হাজারীর নির্মাণাধীন একটি দোকান, একটি কুলিং কর্নার মিলিয়ে ৭টি দোকানের মালামাল পুড়ে যায়। আগুনে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি দোকানিদের। চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ বলেছেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আমাদের মতো পাশের সাতকানিয়া উপজেলা ইউনিট চলে আসে। দুটি ইউনিট আধাঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিকভাবে পানাহার চায়ের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করছি। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।
বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় পৃথক অগ্নিকাণ্ডে চট্টগ্রাম জেলার ৬৪টি দোকান ও বাড়িঘর পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে, আগুন কেড়ে নিয়েছে এক শিশুর প্রাণ। গত শনিবার এবং রোববার জেলার রাউজান, ফটিকছড়ি, পটিয়া, চন্দনাইশ, হাটহাজারী এবং বোয়ালখালী উপজেলায় এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, হাটহাজারীতে আগুনে পুড়ে গেছে ৪ পরিবারের ঘর। গত রোববার দুপুরে উপজেলার ৫ নং ওয়ার্ডের আসাদ আলী তালুকদার বাড়িতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, উক্ত বাড়ির একটি রান্না ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হলে মুহূর্তের মধ্যে আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে একটি টিনের ঘরসহ ৩টি পাকা ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন মো. মোরশেদ, নুরুল হুদা, নুরুল হক এবং সাহাবুদ্দিন। আগুনে তাদের ৪টি পরিবারের মূল্যবান আসবাবপত্রসহ একটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০ লাখ টাকা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে খবর পেয়ে হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আব্দুল মান্নান জানান, আগুনে ৪টি পরিবারের ঘর পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে। ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদ দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে তৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল প্রদান করেন। এদিকে, বোয়ালখালীতে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট হয়ে আগুনে পুড়ে গেছে বসতঘর। এ সময় ঘরে থাকা ৬টি ছাগলও পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। গত রোববার রাত ৮টায় উপজেলার করলডেঙ্গা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের গাজীর পাড়ার খলিল মাস্টার বাড়ির নূর হোসেন বাবুর্চির বসতঘরে এই অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটে। বোয়ালখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ ফিরোজ খান বলেন, খবর পেয়ে বোয়ালখালী ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট বাঁশের বেড়া ও টিনে চালা দেয়া বসতঘর পুড়ে গেছে। এ সময় ঘরে থাকা ৬টি ছাগল পুড়ে মারা গেছে। তাৎক্ষডুক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। স্থানীয়রা জানান, ঘরে মৃত নূর হোসেন বাবুর্চির স্ত্রী লেদা বুড়ি এবং তার দুই ছেলে থাকেন। গতকাল রবিবার ইফতারের পর তারা কোনো কাজে বের হয়েছিলেন। এর মধ্যে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফলে পরনের কাপড় ছাড়া ঘরের কোনো মালামাল রক্ষা করা যায়নি। অপরদিকে, পটিয়ার স্থানীয় সুত্র জানা গেছে, পটিয়ায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারালো ২২ দরিদ্র জেলে পরিবার। এতে তাদের নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার এবং আসবাবপত্রসহ ঘরের সব অবকাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত রোববার দুপুর একটার দিকে উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের নাইখাইন সর্দার পাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় প্রায় দেড়ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ততক্ষণে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া পরিবারগুলোর মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ডে মিলন সর্দার, স্বপন সর্দার, স্বদেশ, সুভাস, শ্যামল, শিবু, দীপু, রানা, তপন, মন্না, রিপু, ইমন, শংকর, সুব্রত, সুবল, রুবেল, গণেশ, খোকন, রিশু, কৃষ্ণা, বাবলা এবং শাপলা সর্দারের ঘর সম্পুর্ণ পুড়ে গেছে। এতে এসব পরিবারের অন্তত ৩০-৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দাবি করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মিলন সর্দার জানান, আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। এ কারণে বিয়ের জন্য জমানো ২ লাখ টাকা ও বানানো স্বর্ণগুলো ঘরে নিরাপদ মনে করে আলমিরায় তুলে রেখেছি। এখনতো আগুনে সব ছাই হয়ে গেছে। যেন আমার কপাল পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ক্ষতিগ্রস্ত সুমন সর্দার বলেন, হঠাৎ আগুন লাগলে আমরা নিজেরা কোনো রকম বের হতে পারলেও ঘরের কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। এখন আমাদের মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকুও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
পটিয়া ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রাজেশ বড়ুয়া জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও সব ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ফটিকছড়ির আরেকটি সূত্র জানায়, উত্তর ফটিকছড়ির শান্তিরহাট বাজারে গত ৮ মার্চ দিবাগত গভীর রাতে আগুন লেগে ৩০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে অন্তত আড়াই কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উক্ত বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান আলি জানান, গত ৮ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটায় উক্ত বাজারের জালাল সওদাগরের ভাড়া বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনে একে একে জালাল সওদাগরের বাসা বাড়ি, শেখ আহম্মদের ফার্নিচার দোকান, রূপনের মুদি দোকান, সঞ্জয়য়ের ওষুধের দোকান, দেলোয়ারের ক্রোকারিজ দোকান, খোকনের কসমেটিকসের দোকান, আবু তাহেরের হার্ডওয়ার দোকান, আহমদ ছাফার স’মিল, সাহাবুদ্দিনের দুটি ফার্নিচার দোকান, মো. ইসমাইলের দুটি ফার্নিচার দোকান, আব্দুস সালামের চা দোকান, মো. শফিকের তিনটি ফার্নিচার দোকান, খোরশেদের টিউবওয়েলের দোকান, মো. শহীদের বেকারি, মো. এমরানের পাঁচটি ফার্নিচার দোকান, জসিম সওদাগরের তিনটি ফার্নিচার দোকান, রিপনের ফার্নিচার দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফটিকছড়ি সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে উক্ত বাজারের ব্যবসায়ীরা হতাশায় দিন গুজরান করছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
এদিকে, চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীতে চায়ের দোকানের চুলা থেকে আগুন লেগে ৭টি দোকানের মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকানের মালিকেরা। রোববার ভোররাতে দোহাজারী হাজারী বাড়ি গলিতে এই অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আধাঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। স্থানীয় এলাকাবাসী ও দোকানের মালিকেরা জানান, হাজারী বাড়ি গলিতে অবস্থিত পানাহার চায়ের দোকানের চুলার থেকে প্রথম আগুন লাগে। মুহূর্তেই সেই আগুন পাশে থাকা মুদির দোকান পাল স্টোরে লাগে। এরপর দ্রুত আগুন পাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা আগুন নিভানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে প্রায় একঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।আগুনে অঞ্জন পালের একটি মুদির দোকান, জাহাঙ্গীর আলম মেম্বার, পেটান আলী, নাছির উদ্দীন ও জসিম উদ্দীনেরসহ ৪টি চায়ের দোকান, মনোজ সিংহ হাজারীর নির্মাণাধীন একটি দোকান, একটি কুলিং কর্নার মিলিয়ে ৭টি দোকানের মালামাল পুড়ে যায়। আগুনে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি দোকানিদের। চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ বলেছেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আমাদের মতো পাশের সাতকানিয়া উপজেলা ইউনিট চলে আসে। দুটি ইউনিট আধাঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিকভাবে পানাহার চায়ের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করছি। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।