alt

সারাদেশ

রাজশাহীতে নগরায়নে কমেছে পুকুর , গ্রামে বাড়ছে পুকুর কমছে ফসলী জমি, কৃষি জমি রক্ষাও স্মারকলিপি প্রদান

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী : বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে এক কালের সবুজ ফসলের মাঠ জুড়ে বিভিন্ন ফসল দেখা গেলেও গত কয়েক বছর জুড়ে সেই ফসলের বুকচিরে খনন করা হয়েছে শত শত অবৈধ পুকুর। এসব পুকুর বন্ধে স্থানীয় কৃষকরা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনসহ উচ্চ পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেও কোন সুফল পায়নি

একসময় রাজশাহী মহানগরীতে অসংখ্য পুকুর ছিল, তবে অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। ২০১৪ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে রিট করলে, বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয়ের জরিপে নগরীতে ৯৫২টি পুকুরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট এসব পুকুর সংরক্ষণ এবং ভরাট হওয়া পুকুরগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদফতর, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশকে এ নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের নির্দেশনার পর শহরের একাধিক পুকুর ভরাট হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও কোনো পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়নি। তবে এবারই প্রথম ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লার পুকুরটি উদ্ধার করা হচ্ছে, যা এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।

মহানগরী ঘোষপাড়া মোড় এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা আয়তনের এই পুকুরটি কিছুদিন ধরে ধীরে ধীরে ভরাট করা হচ্ছিল। ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করেন এবং শ্রমিক নিয়োগ করে পুকুরটির উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন।

নগরীর ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লায় অবস্থিত এই পুকুরটি ‘জোড়া পুকুর’ নামে পরিচিত। এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সংরক্ষণের তালিকায় রয়েছে। পুকুরের অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি করে হিকু নামের এক ঠিকাদার কিছুদিন ধরে এটি ভরাট করছিলেন। বর্তমানে ২১ জন শ্রমিক পুকুর থেকে মাটি অপসারণের কাজ করছেন। পুকুরের সামনে টাঙানো নোটিশে উল্যেখ করা হয়েছে, ‘এই পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ। ময়লা/আবর্জনাসহ অন্য যে কোনো উপায়ে পুকুর ভরাট করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদেশক্রমে সহকারী কমিশনার, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।’

ভূমি অফিসের কর্মচারীরা জানান, পুকুরটির আয়তন প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা, যার মধ্যে দুই পাড়ে প্রায় ১০ কাঠা ভরাট করা হয়েছে। খতিয়ানে যে অংশটি পুকুর হিসেবে চিহ্নিত, সেটুকু উদ্ধার করা হবে এবং সেই মাটি পাড়ের অংশে ফেলা হবে।

বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের জানানোর পর আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। ভবিষ্যতেও যদি পুকুর ভরাটের কোনো তথ্য পাই, তাহলে অবশ্যই এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে রাজশাহীর, পুঠিয়া উপজেলার মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৫৬৫ একর। উপজেলার ছয়টি ইউপির মধ্যে মোট চারটি ইউনিয়ান ভূমি অফিস রয়েছে। ভূমি অফিসগুলোর অধিনে গত কয়েক বছরে প্রায় ১৩ হাজার একর ধানী, ফলের বাগান, ভিটা জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এরমধ্যে শিলমাড়িয়া ও ভালুকগাছি ইউপিতে প্রায় ১১ হাজার একর ধানী জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে মোট কত একর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান উপজেলা ভূমি অফিস দিতে পারেনি।

উপজেলা ভূমি অফিস বলছে, সরকারী নিয়ম অনুসারে ১৪২২বাংলা সাল থেকে ধানী জমি প্রতি শতাংশ দুই টাকা হারে খাজনা ধার্য করা হয়েছে। বাণিজ্যিক পুকুরের খাজনা ধরা হয়েছে প্রতি শতাংশ পৌর এলাকায় ৪০ টাকা, ইউনিয়ন এলাকায় ৩০ টাকা হারে। সরকার প্রতিবছর নতুন খননকৃত উপজেলার বানিজ্যিক পুকুরগুলো হতে মোটা অংকের রাজস্ব আদায় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পচামাড়িয়া এলাকার কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, এই এলাকায় গত কয়েক বছরে কী পরিমাণ নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে তা বলা খুব কঠিন। তবে শিলমাড়িয়ার অধিকাংশ ধানী জমিগুলো বর্তমানে নতুন করে পুকুর খনন করা হয়েছে।

শিলমাড়িয়ার ছত্রারপাড়া গ্রামে সামছুদ্দিন নামের ব্যক্তি বলেন, জমির মালিকরা বেশি লাভের আশায়, পুকুর খননকারীদের সঙ্গে চুক্তি করে খনন করে নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে মৎস্য চাষীরা বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করছে। এমন কিছু বিলের পানি বাহির হওয়ার স্থানে পুকুর খনন করা হয়েছে। যা আগামী বর্ষা মৌসুমের অনেকের জমির পানি বাহির হতে পারবে না এবং জলাবদ্ধ হয়ে থাকবে।

এদিকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর চারঘাটে মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় অবৈধভাবে পুকুর খনন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। অবেধভাবে পুকুর খননকারীদের কাছে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রশাসনসহ ভুক্তভোগী কৃষকরা।

জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে চারঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন অবৈধভাবে পুকুর বন্ধে কয়েক জনের বিরুদ্ধে চারঘাট মডেল থানায় নিয়মিত একটি মামলা করেন।

রাজশাহীতে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস এর শতাধিক বৃক্ষ নির্বিচারে হত্যা ও পুকুর ভরাট বন্ধ এবং রাজশাহীর বাগমারায় জোর জবরদস্তি পুকুর খননের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

আজ বুধবার, রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এর সামনে দুপুর বারো টায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগঠন জুলাই-৩৬ পরিষদ, বরেন্দ্র অঞ্চলের তরুণ-যুবদের বৃহৎ ঐক্য বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও সবুজ সংহতি রাজশাহী মহানগরের উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও স¥ারকলিপি প্রদান করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রাজশাহীতে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও পুকুর ভরাটের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। গত বছরের নভেম্বরে লিজ নিয়ে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসে প্রায় তিন শতাধিক বৃক্ষ নিধন করেছে এবং টেক্সটাইল মিলের ভেতরে অবস্থিত পুকুর ভরাট করেছে। অন্যদিকে, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি জমিতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে পুকুর খনন চলছে। এর মধ্যে উল্যেখযোগ্য হচ্ছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের খোর্দ্দকৌর মৌজার নিমাই বিল। সেখানে কৃষি জমিতে রাতের অন্ধকারে পুকুর কাটছে স্থনীয় ভূমিদস্যুরা। তারা রীতিমতো ওই এলাকার বহু মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল করেছে। কৃষকের ধান খেত নষ্ট করেছে। এক/দেড় মাসের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারতো কৃষকেরা অথচ, তাদের জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে রাতের আধাঁরে জমিতে স্কেভেটর মেশিন নামিয়ে সেই ধানক্ষেত নষ্ট করেছে। ভূমিদস্যুরা,ধানক্ষেত নষ্ট করেছে। প্রতিবাদ করায় তারা জমির মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এমনকি তাদের ফসলের সেচের পানি বন্ধ করে দেন।

মাববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন, জুলাই-৩৬ পরিষদের উপদেষ্টা তৌফিক পারভেজ এলাহী, আইনজীবী হোসেন আলী পিয়ারা, সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান জুয়েল, পারিবেশ আইন গবেষক মো. শহিদুল ইসলাম, সবুজ সংহতি রাজশাহীর সদস্য সচিব মো. নাজমুল হোসেন রাজু,বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক, ভুক্তভোগী ঈশিতা ইয়াসমিন ও মো. আমজাদ হোসেনসহ প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে ১০ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার এর মাধ্যমে স্মারকলিপির দাবি সমুহ হলো- অবিলম্বে কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং চিহ্নিত ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ভূমিদস্যুতায় সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণ সহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; বিএমডিএর সেচের পানি বন্ধ করার হুমকি প্রদানকারীদের চিহ্নিত করে

তাদের শাস্তি ও সেচের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে; জোড়পূর্বক পুকুর খনন করতে গিয়ে যে ফসলের ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দ্রুততম সময়ের

মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে; সমগ্র ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও এধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে; রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি জমিতে পুকুর খননের যে মহোৎসব চলছে, তা অতিদ্রুত বন্ধ করতে হবে; রাজশাহী টেক্সটাইলস মিলস চত্বরে অবাধে গাছ কাটা ও

পুকুর ভরাট বন্ধ করতে হবে। সেখানে বিদ্যমান গাছগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং আর একটিও গাছ কাটা যাবেনা। কর্তনকৃত বৃক্ষের জায়গায় দেশী জাতের বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ লাগাতে হবে; এই প্রকৃতি ধ্বংসকারী কাজের সাথে জড়িত প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এবং এর পরিবেশ ধ্বংসকারী অসাধু কর্মকর্তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ভরাটকৃত পুকুরটি অতিদ্রুত পুনরুদ্ধার করে পূর্বের অবস্থ্ায় ফিরিয়ে দিতে হবে এবং উচ্চ আদালত কর্তৃক রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকা ৯৫২টি পুকুর সংরক্ষণসহ উচ্চ আদালতের ৫ দফা নির্দেশনা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে; রাজশাহী শহরে বৃক্ষ নিধন, পুকুর ভরাট বন্ধ করাসহ পরিবেশ-প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা চোখে পড়ে না। এটি দ্রুত কার্যকর করতে হবে ।

সিলেটে শিশুদের জন্য ৭৮ হাজার ভিটামিন এ ক্যাপসুল

ছবি

ধর্ষণ মামলার বাদীর লাশ উদ্ধার, পরিবারের হত্যার অভিযোগ

ছবি

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের কল্যাণ ও অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

ময়মনসিংহে বাম জোটের মিছিলে সংঘর্ষ, আহত ২

পলাশে তুচ্ছ ঘটনায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার

সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ দল সিটিটিসির বিষ্ফোরক বোমা সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার পরিদর্শন করেন

রায়গঞ্জে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো অবৈধ ইটভাটা

শার্শায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ

ছবি

চট্টগ্রামে মাত্র এক টাকায় মিলছে হাজার টাকার রোজার বাজার

ছবি

দুমকিতে হাঁস পালনে লাভের স্বপ্ন দেখছেন মোশারফ

ছবি

মতলবে ধনাগোদা নদী ঢেকে আছে কচুরিপানায়, নৌ চলাচলে বাধা

ছবি

মাতামুহুরীর চরে স্ট্রবেরি চাষে কৃষক সফল

ডিবি পরিচয়ে শিক্ষার্থীকে অপহরণচেষ্টা, আটকের পর থানা থেকে মুক্ত

ছবি

কষ্টি পাথরের মূর্তি উদ্ধার

মসজিদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইমামের মৃত্যু

দুই জেলায় সড়কে ও রেলে কৃষক ও যুবদল নেতার মৃত্যু

দুর্বৃত্তদের হাতে গৃহবধূ খুন

গ্যাস সিলিন্ডারের অবৈধ মজুদ, জরিমানা

২ জেলায় নারী ও শিশুসহ ৩ মরদেহ উদ্ধার

কুমিল্লায় অস্ত্র-গুলিসহ ২ ডাকাত গ্রেপ্তার

ব্যবসায়ী হত্যায় ৪ জনের যাবজ্জীবন

চট্টগ্রামে পৃথক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ল ৬৪ দোকান-বসতঘর

ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, নারীসহ আহত শতাধিক

ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার ১

বগুড়া জেলা কারাগারে আ’লীগ নেতার মৃত্যু

দিনে-দুপুরে ডাকাতি নিহত ১

ছবি

আক্কেলপুরে বিনা পয়সায় ইফতার ও সেহরি খাওয়ান হোটেল মালিক রফিকুল

বেনাপোলে সড়ক দুর্ঘটনায় বিজিবি সদস্য নিহত

ঘরে ঘরে জ্বরসর্দি ও কাশি আক্রান্ত সব বয়সী মানুষ

গ্রাহকদের কোটি টাকা নিয়ে উধাও মাল্টিপারপাস মালিক শাহ আলম

ছবি

আদমজীতে সংঘর্ষের ৮ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

অবশেষে সালথা-ফরিদপুর সড়কে বাস চলাচল শুরু

ভৈরবের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে রুগ্ন গরুর মাংস

গোবিন্দগঞ্জে সেচ লাইসেন্স বাতিল না করার দাবি ভুক্তভোগীর

পলাশে অবৈধ ইটভাটাকে জরিমানা

tab

সারাদেশ

রাজশাহীতে নগরায়নে কমেছে পুকুর , গ্রামে বাড়ছে পুকুর কমছে ফসলী জমি, কৃষি জমি রক্ষাও স্মারকলিপি প্রদান

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে এক কালের সবুজ ফসলের মাঠ জুড়ে বিভিন্ন ফসল দেখা গেলেও গত কয়েক বছর জুড়ে সেই ফসলের বুকচিরে খনন করা হয়েছে শত শত অবৈধ পুকুর। এসব পুকুর বন্ধে স্থানীয় কৃষকরা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনসহ উচ্চ পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেও কোন সুফল পায়নি

একসময় রাজশাহী মহানগরীতে অসংখ্য পুকুর ছিল, তবে অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। ২০১৪ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে রিট করলে, বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয়ের জরিপে নগরীতে ৯৫২টি পুকুরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট এসব পুকুর সংরক্ষণ এবং ভরাট হওয়া পুকুরগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদফতর, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশকে এ নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের নির্দেশনার পর শহরের একাধিক পুকুর ভরাট হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও কোনো পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়নি। তবে এবারই প্রথম ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লার পুকুরটি উদ্ধার করা হচ্ছে, যা এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।

মহানগরী ঘোষপাড়া মোড় এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা আয়তনের এই পুকুরটি কিছুদিন ধরে ধীরে ধীরে ভরাট করা হচ্ছিল। ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করেন এবং শ্রমিক নিয়োগ করে পুকুরটির উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন।

নগরীর ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লায় অবস্থিত এই পুকুরটি ‘জোড়া পুকুর’ নামে পরিচিত। এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সংরক্ষণের তালিকায় রয়েছে। পুকুরের অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি করে হিকু নামের এক ঠিকাদার কিছুদিন ধরে এটি ভরাট করছিলেন। বর্তমানে ২১ জন শ্রমিক পুকুর থেকে মাটি অপসারণের কাজ করছেন। পুকুরের সামনে টাঙানো নোটিশে উল্যেখ করা হয়েছে, ‘এই পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ। ময়লা/আবর্জনাসহ অন্য যে কোনো উপায়ে পুকুর ভরাট করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদেশক্রমে সহকারী কমিশনার, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।’

ভূমি অফিসের কর্মচারীরা জানান, পুকুরটির আয়তন প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা, যার মধ্যে দুই পাড়ে প্রায় ১০ কাঠা ভরাট করা হয়েছে। খতিয়ানে যে অংশটি পুকুর হিসেবে চিহ্নিত, সেটুকু উদ্ধার করা হবে এবং সেই মাটি পাড়ের অংশে ফেলা হবে।

বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের জানানোর পর আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। ভবিষ্যতেও যদি পুকুর ভরাটের কোনো তথ্য পাই, তাহলে অবশ্যই এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে রাজশাহীর, পুঠিয়া উপজেলার মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৫৬৫ একর। উপজেলার ছয়টি ইউপির মধ্যে মোট চারটি ইউনিয়ান ভূমি অফিস রয়েছে। ভূমি অফিসগুলোর অধিনে গত কয়েক বছরে প্রায় ১৩ হাজার একর ধানী, ফলের বাগান, ভিটা জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এরমধ্যে শিলমাড়িয়া ও ভালুকগাছি ইউপিতে প্রায় ১১ হাজার একর ধানী জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে মোট কত একর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান উপজেলা ভূমি অফিস দিতে পারেনি।

উপজেলা ভূমি অফিস বলছে, সরকারী নিয়ম অনুসারে ১৪২২বাংলা সাল থেকে ধানী জমি প্রতি শতাংশ দুই টাকা হারে খাজনা ধার্য করা হয়েছে। বাণিজ্যিক পুকুরের খাজনা ধরা হয়েছে প্রতি শতাংশ পৌর এলাকায় ৪০ টাকা, ইউনিয়ন এলাকায় ৩০ টাকা হারে। সরকার প্রতিবছর নতুন খননকৃত উপজেলার বানিজ্যিক পুকুরগুলো হতে মোটা অংকের রাজস্ব আদায় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পচামাড়িয়া এলাকার কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, এই এলাকায় গত কয়েক বছরে কী পরিমাণ নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে তা বলা খুব কঠিন। তবে শিলমাড়িয়ার অধিকাংশ ধানী জমিগুলো বর্তমানে নতুন করে পুকুর খনন করা হয়েছে।

শিলমাড়িয়ার ছত্রারপাড়া গ্রামে সামছুদ্দিন নামের ব্যক্তি বলেন, জমির মালিকরা বেশি লাভের আশায়, পুকুর খননকারীদের সঙ্গে চুক্তি করে খনন করে নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে মৎস্য চাষীরা বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করছে। এমন কিছু বিলের পানি বাহির হওয়ার স্থানে পুকুর খনন করা হয়েছে। যা আগামী বর্ষা মৌসুমের অনেকের জমির পানি বাহির হতে পারবে না এবং জলাবদ্ধ হয়ে থাকবে।

এদিকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর চারঘাটে মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় অবৈধভাবে পুকুর খনন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। অবেধভাবে পুকুর খননকারীদের কাছে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রশাসনসহ ভুক্তভোগী কৃষকরা।

জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে চারঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন অবৈধভাবে পুকুর বন্ধে কয়েক জনের বিরুদ্ধে চারঘাট মডেল থানায় নিয়মিত একটি মামলা করেন।

রাজশাহীতে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস এর শতাধিক বৃক্ষ নির্বিচারে হত্যা ও পুকুর ভরাট বন্ধ এবং রাজশাহীর বাগমারায় জোর জবরদস্তি পুকুর খননের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

আজ বুধবার, রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এর সামনে দুপুর বারো টায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগঠন জুলাই-৩৬ পরিষদ, বরেন্দ্র অঞ্চলের তরুণ-যুবদের বৃহৎ ঐক্য বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও সবুজ সংহতি রাজশাহী মহানগরের উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও স¥ারকলিপি প্রদান করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রাজশাহীতে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও পুকুর ভরাটের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। গত বছরের নভেম্বরে লিজ নিয়ে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসে প্রায় তিন শতাধিক বৃক্ষ নিধন করেছে এবং টেক্সটাইল মিলের ভেতরে অবস্থিত পুকুর ভরাট করেছে। অন্যদিকে, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি জমিতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে পুকুর খনন চলছে। এর মধ্যে উল্যেখযোগ্য হচ্ছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের খোর্দ্দকৌর মৌজার নিমাই বিল। সেখানে কৃষি জমিতে রাতের অন্ধকারে পুকুর কাটছে স্থনীয় ভূমিদস্যুরা। তারা রীতিমতো ওই এলাকার বহু মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল করেছে। কৃষকের ধান খেত নষ্ট করেছে। এক/দেড় মাসের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারতো কৃষকেরা অথচ, তাদের জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে রাতের আধাঁরে জমিতে স্কেভেটর মেশিন নামিয়ে সেই ধানক্ষেত নষ্ট করেছে। ভূমিদস্যুরা,ধানক্ষেত নষ্ট করেছে। প্রতিবাদ করায় তারা জমির মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এমনকি তাদের ফসলের সেচের পানি বন্ধ করে দেন।

মাববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন, জুলাই-৩৬ পরিষদের উপদেষ্টা তৌফিক পারভেজ এলাহী, আইনজীবী হোসেন আলী পিয়ারা, সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান জুয়েল, পারিবেশ আইন গবেষক মো. শহিদুল ইসলাম, সবুজ সংহতি রাজশাহীর সদস্য সচিব মো. নাজমুল হোসেন রাজু,বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক, ভুক্তভোগী ঈশিতা ইয়াসমিন ও মো. আমজাদ হোসেনসহ প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে ১০ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার এর মাধ্যমে স্মারকলিপির দাবি সমুহ হলো- অবিলম্বে কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং চিহ্নিত ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ভূমিদস্যুতায় সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণ সহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; বিএমডিএর সেচের পানি বন্ধ করার হুমকি প্রদানকারীদের চিহ্নিত করে

তাদের শাস্তি ও সেচের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে; জোড়পূর্বক পুকুর খনন করতে গিয়ে যে ফসলের ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দ্রুততম সময়ের

মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে; সমগ্র ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও এধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে; রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি জমিতে পুকুর খননের যে মহোৎসব চলছে, তা অতিদ্রুত বন্ধ করতে হবে; রাজশাহী টেক্সটাইলস মিলস চত্বরে অবাধে গাছ কাটা ও

পুকুর ভরাট বন্ধ করতে হবে। সেখানে বিদ্যমান গাছগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং আর একটিও গাছ কাটা যাবেনা। কর্তনকৃত বৃক্ষের জায়গায় দেশী জাতের বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ লাগাতে হবে; এই প্রকৃতি ধ্বংসকারী কাজের সাথে জড়িত প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এবং এর পরিবেশ ধ্বংসকারী অসাধু কর্মকর্তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ভরাটকৃত পুকুরটি অতিদ্রুত পুনরুদ্ধার করে পূর্বের অবস্থ্ায় ফিরিয়ে দিতে হবে এবং উচ্চ আদালত কর্তৃক রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকা ৯৫২টি পুকুর সংরক্ষণসহ উচ্চ আদালতের ৫ দফা নির্দেশনা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে; রাজশাহী শহরে বৃক্ষ নিধন, পুকুর ভরাট বন্ধ করাসহ পরিবেশ-প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা চোখে পড়ে না। এটি দ্রুত কার্যকর করতে হবে ।

back to top