‘বনের পাতা খেয়ে পোকা দেয় সোনার টাকা’
প্রাচীনকাল থেকেই রাজশাহী রেশম সিল্কের জন্য বিখ্যাত। দেশে-বিদেশে রয়েছে রাজশাহীর রেশমশিল্পের সুনাম। রাজশাহী ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পের উন্নয়নের ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেমন বৃদ্ধি করা যায় তেমনি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এ শিল্পই হতে পারে বাংলাদেশেকে বিশ্বে পরিচিত করার মাধ্যম। সেই প্রাচীনকাল থেকে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে রাজশাহীর রেশম শিল্প। রাজশাহীর সিল্কের শাড়ি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।
প্রতিটি উৎসবে সিল্ক কাপড়ের যেন জুড়ি মেলে না। অন্যান্য কাপড় যত দামিই হোক না কেন, তার সঙ্গে একটা সিল্ক কাপড় থাকলে সেটিই আগে পছন্দের তালিকায় রাখেন বাঙালি বধূরা। ফলে ইদ এলে সিল্ক কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ। বিশেষ করে যারা সামর্থ্যবান পরিবার এবং সিল্ক কাপড়ের প্রতি যাদের আগ্রহ বরাবর থাকে, তাদের মধ্যে ইদের সময় এই কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ফলে এবার ইদকে ঘিরেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
তবে সিল্কের কাপড়েরর উৎপাদন হয় সরকারিভাবে তাহলে তো কথায় নেই। এর চাহিদা যেমন বাড়ছে ঠিক তেমনই বাড়ছে বিক্রিও। শুধু রাজশাহী নয়, এর চাহিদা এখন দেশজুড়ে।
রাজশাহী রেশম কারখানা থেকে সরাসরি করা হচ্ছে কাপড়ের উৎপাদন। বিক্রি করা হচ্ছে নিজস্ব শোরুমে। এখান থেকে অনেক ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কাপড়। ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকেও আসছেন এখানে কাপড় কিনতে।
‘বনের পাতা খেয়ে পোকা দেয় সোনার টাকা’সিল্কের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত প্রবাদ এটি। রাজশাহী অঞ্চলে সরকারি তত্ত্বাবধানে ১৯৫২ সালে রাজশাহী সিল্কের যাত্রা শুরু হয় যা বাংলাদেশে প্রথম। রাজশাহী রেশম কারখানা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা যা ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮ সালের পর এই রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পটি রেশম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। লোকসানের মুখে একপর্যায়ে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর এ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে ১৬ বছরের মাথায় ২০১৭ সালের শেষ দিকে পরীক্ষামূলক পুনরায় এটি চালু করা হয়। রাজশাহী রেশম কারখানার তৈরি শাড়ি এবং অন্যান্য পণ্য দেশ-বিদেশে জনপ্রিয়। আগে এই কারখানাটি চালুর পর এর ৪২টি লুম মেরামত করা হয়। বর্তমানে এর ১৯টি লুমে ৪১ জন শ্রমিক ও তাঁতি কাপড় উৎপাদন করছেন। চালু হয়েছে বন্ধ শোরুমও। এই শোরুমে বিক্রি হচ্ছে সরকারি কারখানার পোশাক।
রেশমের গুটি থেকে বের করা হচ্ছে সুতা। বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর এই গুটি চাষের মাধ্যমে উৎপাদন করছে। বোর্ডের তথ্যনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেশম গুটি উৎপাদন করা হয়েছে ১৩৪ দশমিক ৬২ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৯১ দশমিক ৯০, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৬৬ দশমিক ১৭, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৮৬ দশমিক ৩২, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১৪৫, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২১৫, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ২২৪ দশমিক ৬৪, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৪৯ দশমিক ১৬ মেট্রিক টন গুটি উৎপাদন করা হয়েছে। এছাড়াও চলতি অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে।
রেশম চাষিদের উৎপাদিত গুটি ক্রয় করে মিনিফিলেচার কেন্দ্রে করা হয় সুতার উৎপাদন। বোর্ড থেকে এই তথ্যও দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সুতা উৎপাদন করা হয়েছে ৭৯৩ কেজি। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৯৩১ কেজি, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১ এক হাজার ৫৯ কেজি, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১ হাজার ৪৩৮ কেজি, ২০২০-২১ অর্থ বছরে এক হাজার ৮৫ কেজি, ২০২১-২২ অর্থ বছরে এক হাজার ২৬৬ কেজি, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এক হাজার ২৫৪ কেজি, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৭৮৯ কেজি সুতা উৎপাদন করা হয়েছে। এছাড়াও চলতি অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬২০ কেজি সুতা উৎপাদন হয়েছে। এই সুতা থেকে তৈরি হয়েছে রেশনের কাপড়।
সরেজমিনে রাজশাহী রেশম কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করেছে। প্রথমে গুটি থেকে সুতা উৎপাদন করছেন। সেই সুতা থেকে তাঁতযন্ত্রে (লুম) গিয়ে বোনা হচ্ছে কাপড়। তারপর এই কাপড় বিভিন্ন রঙে নিয়ে আসা হচ্ছে। তারপর করা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের প্রিন্ট। আকার ঠিক করে শোরুমে যাচ্ছে বিক্রির জন্য। এই কারখানা থেকে প্রতি মাসে ২৫০ মিটার কাপড় উৎপাদন করা হচ্ছে।
এই শোরুমও কারখানার সঙ্গে লাগোয়া। রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকায় রেল স্টেশন সংলগ্ন বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই কারখানা। শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে পোশাক। গরদের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আট হাজার টাকায়। টাইয়ের কাপড় এক হাজার ৫২০ টাকা গজ। ২/২ গ্রে থান ৭৫০ টাকা গজ। প্রিন্টেড শাড়ি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়। নারীদের টুপিস ৩ হাজার ৮৯০ টাকায়। ওড়না বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯২৫ টাকায়। স্কার্ফ বা হিজাব প্রতিটির দাম ৯৬০ টাকা।
এছাড়াও গজ হিসেবে কাপড় বিক্রি করা হয়। যা থেকে শার্ট, পাঞ্জাবি, নারীদের ওয়ানপিসও তৈরি করা যায়। স্ট্রাইপ সুপার বলাকা বিক্রি করা হচ্ছে এক হাজার টাকা গজ, সুপার বলাকা ৯৫০ টাকা গজ, ডুপিয়ন সার্টিন (টাইডাই) প্রতি গজ ৯০০ টাকা, ডুপিয়ন সার্টিন ৮৫০ টাকা, ২/৪ গ্রে থান ৯৫০ টাকা, মটকা থান ৯৩৮ টাকা গজে বিক্রি করা হচ্ছে।
২০০৫ সালে এক কেজি সুতার দাম ছিল এক হাজার টাকা। বর্তমানে সেই সুতার দাম কেজিপ্রতি সাড়ে ৭ হাজার টাকা। বর্তমানে রেশম উন্নয়ন বোর্ড নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা কেজি দরে দেশি সুতা বিক্রি করছে বেসরকারি কারখানা মালিকদের কাছে।
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. লিয়াকত আলী। তিনি সংবাদকে বলেন, রেশম শিল্পের দুইটি অংশ। একটি গুটি থেকে সুতা উৎপাদন, আরেকটি হচ্ছে বস্ত্রখাত । বস্ত্রখাতের মাধ্যমে পোশাক তৈরি করা হয়।
বর্তমানে রেশম কারখানা আগের চেয়ে বিদ্ধি পেয়েছে বর্তমানে রাজশাহীতে কারখানার সংখ্যা ২৫টি । আশা করছি আগামী দিন গুলোতে আরো বিদ্ধি পাবে ।
রাজশাহী অঞ্চলে রেশম সিল্ক কারখানা গুলিতে অত্যন্ত উন্নত ডিজাইন এবং বিভিন্য দেশের উন্নত কারিগরি প্রযুক্তির সাথে সাথে কাজ করছে, এবং তাদের সফলতায় ক্রেতাদের কাছে আনছে । ব্যবসায়ীরা জানান, সপুরার পুরো সিল্কপল্লীর ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের কদর রয়েছে সারা বছরই। বাঙালির বিভিন্ন উৎসবে সেই কদর আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব শ্রেণির মানুষের উৎসবেই এক অন্যরকম আমেজ আনে রাজশাহীর সিল্কের পোশাক। রাজশাহী রেশম সিল্ক সৃজনশীল ডিজাইন এবং সুন্দর রঙের সিল্কের জন্য পরিচিত। এই সিল্ক প্রযুক্তির ব্যবহার পুরানো ও নতুন কাপড়ের ডিজাইনে একটি নতুন জীবন আনে। উৎসব-পার্বনে রাজশাহী সিল্কের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বি।
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাদের মুন্না সংবাদকে বলেন, এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন। বেসরকারী রেশম কারখানা গুলোকে সহযোগীতা প্রশিক্ষন নতুন প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করা। এজন্য রেশম উন্নয়ন বোর্ডকে এগিয়ে আসতে হবে।
রেশম খাতকে আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নত করলে রেশম শিল্প আরো উন্নত এবং কারখানার সংখ্যা বিদ্ধি পাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে । এই বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে।
‘বনের পাতা খেয়ে পোকা দেয় সোনার টাকা’
শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
প্রাচীনকাল থেকেই রাজশাহী রেশম সিল্কের জন্য বিখ্যাত। দেশে-বিদেশে রয়েছে রাজশাহীর রেশমশিল্পের সুনাম। রাজশাহী ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পের উন্নয়নের ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেমন বৃদ্ধি করা যায় তেমনি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এ শিল্পই হতে পারে বাংলাদেশেকে বিশ্বে পরিচিত করার মাধ্যম। সেই প্রাচীনকাল থেকে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে রাজশাহীর রেশম শিল্প। রাজশাহীর সিল্কের শাড়ি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।
প্রতিটি উৎসবে সিল্ক কাপড়ের যেন জুড়ি মেলে না। অন্যান্য কাপড় যত দামিই হোক না কেন, তার সঙ্গে একটা সিল্ক কাপড় থাকলে সেটিই আগে পছন্দের তালিকায় রাখেন বাঙালি বধূরা। ফলে ইদ এলে সিল্ক কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ। বিশেষ করে যারা সামর্থ্যবান পরিবার এবং সিল্ক কাপড়ের প্রতি যাদের আগ্রহ বরাবর থাকে, তাদের মধ্যে ইদের সময় এই কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ফলে এবার ইদকে ঘিরেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
তবে সিল্কের কাপড়েরর উৎপাদন হয় সরকারিভাবে তাহলে তো কথায় নেই। এর চাহিদা যেমন বাড়ছে ঠিক তেমনই বাড়ছে বিক্রিও। শুধু রাজশাহী নয়, এর চাহিদা এখন দেশজুড়ে।
রাজশাহী রেশম কারখানা থেকে সরাসরি করা হচ্ছে কাপড়ের উৎপাদন। বিক্রি করা হচ্ছে নিজস্ব শোরুমে। এখান থেকে অনেক ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কাপড়। ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকেও আসছেন এখানে কাপড় কিনতে।
‘বনের পাতা খেয়ে পোকা দেয় সোনার টাকা’সিল্কের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত প্রবাদ এটি। রাজশাহী অঞ্চলে সরকারি তত্ত্বাবধানে ১৯৫২ সালে রাজশাহী সিল্কের যাত্রা শুরু হয় যা বাংলাদেশে প্রথম। রাজশাহী রেশম কারখানা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা যা ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮ সালের পর এই রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পটি রেশম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। লোকসানের মুখে একপর্যায়ে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর এ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে ১৬ বছরের মাথায় ২০১৭ সালের শেষ দিকে পরীক্ষামূলক পুনরায় এটি চালু করা হয়। রাজশাহী রেশম কারখানার তৈরি শাড়ি এবং অন্যান্য পণ্য দেশ-বিদেশে জনপ্রিয়। আগে এই কারখানাটি চালুর পর এর ৪২টি লুম মেরামত করা হয়। বর্তমানে এর ১৯টি লুমে ৪১ জন শ্রমিক ও তাঁতি কাপড় উৎপাদন করছেন। চালু হয়েছে বন্ধ শোরুমও। এই শোরুমে বিক্রি হচ্ছে সরকারি কারখানার পোশাক।
রেশমের গুটি থেকে বের করা হচ্ছে সুতা। বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর এই গুটি চাষের মাধ্যমে উৎপাদন করছে। বোর্ডের তথ্যনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেশম গুটি উৎপাদন করা হয়েছে ১৩৪ দশমিক ৬২ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৯১ দশমিক ৯০, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৬৬ দশমিক ১৭, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৮৬ দশমিক ৩২, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১৪৫, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২১৫, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ২২৪ দশমিক ৬৪, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৪৯ দশমিক ১৬ মেট্রিক টন গুটি উৎপাদন করা হয়েছে। এছাড়াও চলতি অর্থ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে।
রেশম চাষিদের উৎপাদিত গুটি ক্রয় করে মিনিফিলেচার কেন্দ্রে করা হয় সুতার উৎপাদন। বোর্ড থেকে এই তথ্যও দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সুতা উৎপাদন করা হয়েছে ৭৯৩ কেজি। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৯৩১ কেজি, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১ এক হাজার ৫৯ কেজি, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১ হাজার ৪৩৮ কেজি, ২০২০-২১ অর্থ বছরে এক হাজার ৮৫ কেজি, ২০২১-২২ অর্থ বছরে এক হাজার ২৬৬ কেজি, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এক হাজার ২৫৪ কেজি, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৭৮৯ কেজি সুতা উৎপাদন করা হয়েছে। এছাড়াও চলতি অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬২০ কেজি সুতা উৎপাদন হয়েছে। এই সুতা থেকে তৈরি হয়েছে রেশনের কাপড়।
সরেজমিনে রাজশাহী রেশম কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করেছে। প্রথমে গুটি থেকে সুতা উৎপাদন করছেন। সেই সুতা থেকে তাঁতযন্ত্রে (লুম) গিয়ে বোনা হচ্ছে কাপড়। তারপর এই কাপড় বিভিন্ন রঙে নিয়ে আসা হচ্ছে। তারপর করা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের প্রিন্ট। আকার ঠিক করে শোরুমে যাচ্ছে বিক্রির জন্য। এই কারখানা থেকে প্রতি মাসে ২৫০ মিটার কাপড় উৎপাদন করা হচ্ছে।
এই শোরুমও কারখানার সঙ্গে লাগোয়া। রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকায় রেল স্টেশন সংলগ্ন বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই কারখানা। শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে পোশাক। গরদের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আট হাজার টাকায়। টাইয়ের কাপড় এক হাজার ৫২০ টাকা গজ। ২/২ গ্রে থান ৭৫০ টাকা গজ। প্রিন্টেড শাড়ি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়। নারীদের টুপিস ৩ হাজার ৮৯০ টাকায়। ওড়না বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯২৫ টাকায়। স্কার্ফ বা হিজাব প্রতিটির দাম ৯৬০ টাকা।
এছাড়াও গজ হিসেবে কাপড় বিক্রি করা হয়। যা থেকে শার্ট, পাঞ্জাবি, নারীদের ওয়ানপিসও তৈরি করা যায়। স্ট্রাইপ সুপার বলাকা বিক্রি করা হচ্ছে এক হাজার টাকা গজ, সুপার বলাকা ৯৫০ টাকা গজ, ডুপিয়ন সার্টিন (টাইডাই) প্রতি গজ ৯০০ টাকা, ডুপিয়ন সার্টিন ৮৫০ টাকা, ২/৪ গ্রে থান ৯৫০ টাকা, মটকা থান ৯৩৮ টাকা গজে বিক্রি করা হচ্ছে।
২০০৫ সালে এক কেজি সুতার দাম ছিল এক হাজার টাকা। বর্তমানে সেই সুতার দাম কেজিপ্রতি সাড়ে ৭ হাজার টাকা। বর্তমানে রেশম উন্নয়ন বোর্ড নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা কেজি দরে দেশি সুতা বিক্রি করছে বেসরকারি কারখানা মালিকদের কাছে।
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. লিয়াকত আলী। তিনি সংবাদকে বলেন, রেশম শিল্পের দুইটি অংশ। একটি গুটি থেকে সুতা উৎপাদন, আরেকটি হচ্ছে বস্ত্রখাত । বস্ত্রখাতের মাধ্যমে পোশাক তৈরি করা হয়।
বর্তমানে রেশম কারখানা আগের চেয়ে বিদ্ধি পেয়েছে বর্তমানে রাজশাহীতে কারখানার সংখ্যা ২৫টি । আশা করছি আগামী দিন গুলোতে আরো বিদ্ধি পাবে ।
রাজশাহী অঞ্চলে রেশম সিল্ক কারখানা গুলিতে অত্যন্ত উন্নত ডিজাইন এবং বিভিন্য দেশের উন্নত কারিগরি প্রযুক্তির সাথে সাথে কাজ করছে, এবং তাদের সফলতায় ক্রেতাদের কাছে আনছে । ব্যবসায়ীরা জানান, সপুরার পুরো সিল্কপল্লীর ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের কদর রয়েছে সারা বছরই। বাঙালির বিভিন্ন উৎসবে সেই কদর আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব শ্রেণির মানুষের উৎসবেই এক অন্যরকম আমেজ আনে রাজশাহীর সিল্কের পোশাক। রাজশাহী রেশম সিল্ক সৃজনশীল ডিজাইন এবং সুন্দর রঙের সিল্কের জন্য পরিচিত। এই সিল্ক প্রযুক্তির ব্যবহার পুরানো ও নতুন কাপড়ের ডিজাইনে একটি নতুন জীবন আনে। উৎসব-পার্বনে রাজশাহী সিল্কের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বি।
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাদের মুন্না সংবাদকে বলেন, এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন। বেসরকারী রেশম কারখানা গুলোকে সহযোগীতা প্রশিক্ষন নতুন প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করা। এজন্য রেশম উন্নয়ন বোর্ডকে এগিয়ে আসতে হবে।
রেশম খাতকে আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নত করলে রেশম শিল্প আরো উন্নত এবং কারখানার সংখ্যা বিদ্ধি পাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে । এই বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে।