মহাদেবপুর (নওগাঁ) : নদী তীরের পয়েন্ট থেকে এখনও দেদার বিক্রি হচ্ছে বালু -সংবাদ
নওগাঁর মহাদেবপুরে আত্রাই নদীর বালুমহালের ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও বন্ধ হয়নি অবৈধ বালু উত্তোলন। নদী তীরের পয়েন্ট থেকেই এখনও দেদারছে বিক্রি হচ্ছে বালু। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন শুরু থেকেই বালু সিন্ডিকেটকে অবৈধভাবে সহযোগিতা করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধে প্রশাসন তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, ১ বৈশাখ নদী থেকে বালু উত্তোলনের মালামাল উঠিয়ে নেয়ার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি। কয়েকটি পয়েন্টে এখনও রয়েছে বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন। রাতের আঁধারে এখনও উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এছাড়া নদীর তীরে সংরক্ষণ করে রাখা বালু প্রকাশ্য দিবালোকে এখনও বিক্রি করা হচ্ছে। উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নের মহিষবাথান খেয়া ঘাটের কাছে একটি বালুর পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় একই অবস্থা। এখানে নদীতে তিনটি ড্রেজার মেশিন, বালু তোলার মোটা পাইপ সবই রয়েছে আগের মতই। বালুও বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রাক্টরযোগে পরিবহণ করা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। কর্মরত শ্রমিকরা জানালেন এটি পরিচালনা করেন মোয়াজ্জেম হোসাইন নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি সেখানে ছিলেন না। মহাদেবপুর পয়েন্টে গিয়েও একই অবস্থা চোখে পড়ে। এখানকার ৪টি অবৈধ বলগেড ড্রেজার মেশিন রাখা হয়েছে নদীতেই পশ্চিম পাড়ের লক্ষ্মণপুর মৌজায়। এখানে নদীতে জমা করে রাখা বালু বিক্রি করা হচ্ছে এখনও। এ পয়েন্টটি পরিচালনা করেন হাফিজুল ইসলাম।
জানতে চাইলে, নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা জানান, মজুদ করে রাখা বালু সরিয়ে নিয়ে ১০ বৈশাখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে এনিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গতবছর এই বালুমহাল ইজারা দেয়ার সময় লিখিতভাবে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়, তার মধ্যে ২২নং শর্তে উল্লেখ করা ছিল যে, “উত্তোলিত বালু বা মাটি কোনো অবস্থাতেই নদীর তীর বা নদীতে ফেলা যাবেনা”। কিন্তু ইজারাদারের লোকেরা এই শর্ত ভঙ্গ করে শুরু থেকেই প্রতিটি পয়েন্টে মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে শুকিয়ে যাওয়া নদীর প্রবাহের অংশে এবং বাঁধ পর্যন্ত নদীর তীরে জমা করে রাখে। এভাবে ২০টি পয়েন্টে কয়েক কোটি টাকার বালু মজুদ করে রাখা হয়। যেস্থানে বালু ফেলাই নিষিদ্ধ, সেই বালু সরিয়ে নেয়ার জন্য সময় দেয়া অবৈধ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, ইজারার ৪৮ নং শর্তে উল্লেখ আছে যে, বিগত বছরের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত উত্তোলিত বালু পরবর্তী বছরের ১০ বৈশাখের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। উক্ত তারিখের মধ্যে অপসারণ করা না হলে সরকারিভাবে বালু বাজেয়াপ্ত করা হবে। অভিজ্ঞরা জানান, নতুন ইজারার ভৌগলিক এলাকার মধ্যে ইজারাদার ছাড়া অন্য কেউ বালু বিক্রি করতে পারেননা। একারণে আগের ইজারার বালু অপসারণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু নদী এলাকায় ও তীরে যেখানে বালু রাখাই নিষেধ সেই স্থানের বালু অপসারণের জন্য এই সময়সীমা প্রযোজ্য হবেনা। স্থানীয়রা অবিলম্বে এই বালু বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান।
নদী এলাকায় ও নদীর তীরে বালু জমা করে রাখার সুবাদে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি দেখবেন বলে জানান, নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা।
উল্লেখ্য, মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর উজান অংশে ৭টি এবং ভাটি অংশে ২টি মৌজা গতবছর বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু বিধিঅনুযায়ী বালুমহালের ইজারায় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ, ইজারা মেয়াদের মধ্যে ডিজিটাল জরিপ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা, সম্ভাব্য বাজার মূল্য বিবেচনায় বালুমহাল ঘোষণার যৌক্তিকতা নিরূপণকরণ প্রভৃতি কোনই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। বরং এই বালুমহাল ইজারা দেয়ার জন্য মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এখানে নদীর উপরিভাগে কোন বালু মজুদ না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে ইজারা দেয়। ফলে ইজারা নেয়ার পর ইজাদারের লোকেরা উপরিভাগে বালু না পেয়ে শক্তিশালি অবৈধ খননযন্ত্র বসিয়ে নদীর তলদেশ থেকে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন শুরু করে। স্থানীয়রা বিষয়টি বার বার কর্তৃপক্ষকে জানালেও এর বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ইজারার ২৯নং শর্তে উল্লেখ করা হয় যে, “বালু উত্তোলনের নিমিত্ত প্রচলিত বলগেড ও ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করা যাবেনা এবং বালুমহাল সীমানায় মজুদ করা যাবেনা।” কিন্তু সারাবছর তারা এই মেশিন দিয়েই বালু উত্তোলন করেছে। ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে গত ২২ জানুয়ারি মহাদেবপুর দর্পণ পরিবারের উদ্যোগে মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সরকার এবার মহাদেবপুরে আত্রাই নদীর বালুমহালে ইজারা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
মহাদেবপুর (নওগাঁ) : নদী তীরের পয়েন্ট থেকে এখনও দেদার বিক্রি হচ্ছে বালু -সংবাদ
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
নওগাঁর মহাদেবপুরে আত্রাই নদীর বালুমহালের ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও বন্ধ হয়নি অবৈধ বালু উত্তোলন। নদী তীরের পয়েন্ট থেকেই এখনও দেদারছে বিক্রি হচ্ছে বালু। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন শুরু থেকেই বালু সিন্ডিকেটকে অবৈধভাবে সহযোগিতা করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধে প্রশাসন তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, ১ বৈশাখ নদী থেকে বালু উত্তোলনের মালামাল উঠিয়ে নেয়ার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি। কয়েকটি পয়েন্টে এখনও রয়েছে বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন। রাতের আঁধারে এখনও উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এছাড়া নদীর তীরে সংরক্ষণ করে রাখা বালু প্রকাশ্য দিবালোকে এখনও বিক্রি করা হচ্ছে। উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নের মহিষবাথান খেয়া ঘাটের কাছে একটি বালুর পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় একই অবস্থা। এখানে নদীতে তিনটি ড্রেজার মেশিন, বালু তোলার মোটা পাইপ সবই রয়েছে আগের মতই। বালুও বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রাক্টরযোগে পরিবহণ করা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। কর্মরত শ্রমিকরা জানালেন এটি পরিচালনা করেন মোয়াজ্জেম হোসাইন নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি সেখানে ছিলেন না। মহাদেবপুর পয়েন্টে গিয়েও একই অবস্থা চোখে পড়ে। এখানকার ৪টি অবৈধ বলগেড ড্রেজার মেশিন রাখা হয়েছে নদীতেই পশ্চিম পাড়ের লক্ষ্মণপুর মৌজায়। এখানে নদীতে জমা করে রাখা বালু বিক্রি করা হচ্ছে এখনও। এ পয়েন্টটি পরিচালনা করেন হাফিজুল ইসলাম।
জানতে চাইলে, নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা জানান, মজুদ করে রাখা বালু সরিয়ে নিয়ে ১০ বৈশাখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে এনিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গতবছর এই বালুমহাল ইজারা দেয়ার সময় লিখিতভাবে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়, তার মধ্যে ২২নং শর্তে উল্লেখ করা ছিল যে, “উত্তোলিত বালু বা মাটি কোনো অবস্থাতেই নদীর তীর বা নদীতে ফেলা যাবেনা”। কিন্তু ইজারাদারের লোকেরা এই শর্ত ভঙ্গ করে শুরু থেকেই প্রতিটি পয়েন্টে মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে শুকিয়ে যাওয়া নদীর প্রবাহের অংশে এবং বাঁধ পর্যন্ত নদীর তীরে জমা করে রাখে। এভাবে ২০টি পয়েন্টে কয়েক কোটি টাকার বালু মজুদ করে রাখা হয়। যেস্থানে বালু ফেলাই নিষিদ্ধ, সেই বালু সরিয়ে নেয়ার জন্য সময় দেয়া অবৈধ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, ইজারার ৪৮ নং শর্তে উল্লেখ আছে যে, বিগত বছরের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত উত্তোলিত বালু পরবর্তী বছরের ১০ বৈশাখের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। উক্ত তারিখের মধ্যে অপসারণ করা না হলে সরকারিভাবে বালু বাজেয়াপ্ত করা হবে। অভিজ্ঞরা জানান, নতুন ইজারার ভৌগলিক এলাকার মধ্যে ইজারাদার ছাড়া অন্য কেউ বালু বিক্রি করতে পারেননা। একারণে আগের ইজারার বালু অপসারণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু নদী এলাকায় ও তীরে যেখানে বালু রাখাই নিষেধ সেই স্থানের বালু অপসারণের জন্য এই সময়সীমা প্রযোজ্য হবেনা। স্থানীয়রা অবিলম্বে এই বালু বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান।
নদী এলাকায় ও নদীর তীরে বালু জমা করে রাখার সুবাদে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি দেখবেন বলে জানান, নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা।
উল্লেখ্য, মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর উজান অংশে ৭টি এবং ভাটি অংশে ২টি মৌজা গতবছর বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু বিধিঅনুযায়ী বালুমহালের ইজারায় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ, ইজারা মেয়াদের মধ্যে ডিজিটাল জরিপ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা, সম্ভাব্য বাজার মূল্য বিবেচনায় বালুমহাল ঘোষণার যৌক্তিকতা নিরূপণকরণ প্রভৃতি কোনই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। বরং এই বালুমহাল ইজারা দেয়ার জন্য মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এখানে নদীর উপরিভাগে কোন বালু মজুদ না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে ইজারা দেয়। ফলে ইজারা নেয়ার পর ইজাদারের লোকেরা উপরিভাগে বালু না পেয়ে শক্তিশালি অবৈধ খননযন্ত্র বসিয়ে নদীর তলদেশ থেকে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন শুরু করে। স্থানীয়রা বিষয়টি বার বার কর্তৃপক্ষকে জানালেও এর বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ইজারার ২৯নং শর্তে উল্লেখ করা হয় যে, “বালু উত্তোলনের নিমিত্ত প্রচলিত বলগেড ও ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করা যাবেনা এবং বালুমহাল সীমানায় মজুদ করা যাবেনা।” কিন্তু সারাবছর তারা এই মেশিন দিয়েই বালু উত্তোলন করেছে। ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে গত ২২ জানুয়ারি মহাদেবপুর দর্পণ পরিবারের উদ্যোগে মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সরকার এবার মহাদেবপুরে আত্রাই নদীর বালুমহালে ইজারা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।