উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় দেশে মোট রপ্তানিজাত চিংড়ির একটি বড় অংশ উৎপাদন হয়। মানসম্মত রেণুর অভাব ও ভাইরাসসহ নানা সংকটের মধ্যেও এখানে প্রতি বছরই উৎপাদন বাড়ছে। সরকারি হিসাবে গত তিন বছরে (২০২২-২৪) এ জেলায় ৭৭ হাজার ৫০১ টন রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা হিসাবে এর রপ্তানি মূল্য দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।
তবে প্রকৃত রপ্তানি মূল্য আরও বেশি বলে জানান চিংড়ি ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে ২০২৪ মৌসুমে ২৬ হাজার ৪৮৫ টন, ২০২৩ মৌসুমে ২৬ হাজার ২১৪ টন এবং ২০২২ মৌসুমে ২৪ হাজার ৮০২ টন রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। এ হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে ১ হাজার ৬৮৩ টন।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সত্তর-আশির দশকের দিকে সাতক্ষীরায় লবণ পানির চিংড়ি চাষ শুরু হয়। বাগদা, গলদা, হরিণা, চাকা ও চেম্বিসহ বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি চাষ হয় এখানে। উৎপাদিত চিংড়ির ৯০ শতাংশ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি এবং বাকি ১০ শতাংশ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিএম সেলিম জানান, কভিড-পরবর্তী এ জেলায় বাগদা চিংড়ির উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমন রপ্তানি আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে জেলার চিংড়ি চাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জেলায় রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ির উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদন আরও বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে চিংড়িচাষিদের উন্নত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
জেলার দেবহাটা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের হাজী আবুবকর সিদ্দিক ৪০-৪৫ বছর ধরে চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত। চলতি মৌসুমে তিনি ১৫০ বিঘার ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। গত মৌসুমে একই পরিমাণ জমিতে দুই টনের বেশি রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করেন। এ থেকে প্রায় ৯ লাখ টাকা লাভ হয় তার। তবে মানসম্মত রেণু পেলে উৎপাদন আরও বেশি হতো বলে জানান তিনি।
চিংড়ি চাষি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, কক্সবাজার থেকে যে চিংড়ি রেণু সাতক্ষীরায় সরবরাহ করা হয় তার ঘেরে অবমুক্ত করার পর ৭০ শতাংশই মারা যায়। তাছাড়া ওইসব চিংড়ি রেণুতে জীবাণু রয়েছে কিনা তা জানার উপায় নেই। সরকারিভাবে পিসিআর ল্যাব না থাকায় পরীক্ষাও করা যায় না। ফলে পোনা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো যেভাবে রেণু পোনা সরবরাহ করে সেভাবেই কিনতে হয়।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাগদা চিংড়ির চাহিদা অনেক। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও প্রতি কেজি ৯০০-১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে চিংড়ি উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানিতে সরকারের নজর বাড়ানো দরকার।
তিনি আরও বলেন, কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চিংড়ি শিল্পের বদনাম হচ্ছে। রপ্তানিজাত চিংড়ির ওজন বৃদ্ধি করার জন্য কেউ কেউ অপদ্রব্য পুশ করেন, এটা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় আগামীতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী চিংড়ি শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ ব্যবসায়ী।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিএম সেলিম বলেন, অপরিকল্পিত ঘের নির্মাণের কারণে চিংড়ি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
একটি চিংড়ি ঘেরে যে পরিমাণ পানি থাকার প্রয়োজন, তা রাখতে পারেন না চাষিরা। তাছাড়া এখানকার চিংড়ি ঘেরগুলো বছরের পর বছর জীবাণুযুক্ত কাদা বহন করে চলেছে। ওই নোংরা পরিবেশে চিংড়িটিকে থাকতে পারে না। ফলে এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা হলেই রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। এজন্য জেলার চিংড়িচাষিদের ঘেরে সবসময় কমপক্ষে সাড়ে চার-পাঁচ ফুট পানি রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে একবার হলেও ঘেরের তলার কাদা পরিষ্কার করতে বলা হয়।
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় দেশে মোট রপ্তানিজাত চিংড়ির একটি বড় অংশ উৎপাদন হয়। মানসম্মত রেণুর অভাব ও ভাইরাসসহ নানা সংকটের মধ্যেও এখানে প্রতি বছরই উৎপাদন বাড়ছে। সরকারি হিসাবে গত তিন বছরে (২০২২-২৪) এ জেলায় ৭৭ হাজার ৫০১ টন রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা হিসাবে এর রপ্তানি মূল্য দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।
তবে প্রকৃত রপ্তানি মূল্য আরও বেশি বলে জানান চিংড়ি ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে ২০২৪ মৌসুমে ২৬ হাজার ৪৮৫ টন, ২০২৩ মৌসুমে ২৬ হাজার ২১৪ টন এবং ২০২২ মৌসুমে ২৪ হাজার ৮০২ টন রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। এ হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে ১ হাজার ৬৮৩ টন।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সত্তর-আশির দশকের দিকে সাতক্ষীরায় লবণ পানির চিংড়ি চাষ শুরু হয়। বাগদা, গলদা, হরিণা, চাকা ও চেম্বিসহ বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি চাষ হয় এখানে। উৎপাদিত চিংড়ির ৯০ শতাংশ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি এবং বাকি ১০ শতাংশ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিএম সেলিম জানান, কভিড-পরবর্তী এ জেলায় বাগদা চিংড়ির উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমন রপ্তানি আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে জেলার চিংড়ি চাষিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জেলায় রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ির উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদন আরও বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে চিংড়িচাষিদের উন্নত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
জেলার দেবহাটা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের হাজী আবুবকর সিদ্দিক ৪০-৪৫ বছর ধরে চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত। চলতি মৌসুমে তিনি ১৫০ বিঘার ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। গত মৌসুমে একই পরিমাণ জমিতে দুই টনের বেশি রপ্তানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করেন। এ থেকে প্রায় ৯ লাখ টাকা লাভ হয় তার। তবে মানসম্মত রেণু পেলে উৎপাদন আরও বেশি হতো বলে জানান তিনি।
চিংড়ি চাষি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, কক্সবাজার থেকে যে চিংড়ি রেণু সাতক্ষীরায় সরবরাহ করা হয় তার ঘেরে অবমুক্ত করার পর ৭০ শতাংশই মারা যায়। তাছাড়া ওইসব চিংড়ি রেণুতে জীবাণু রয়েছে কিনা তা জানার উপায় নেই। সরকারিভাবে পিসিআর ল্যাব না থাকায় পরীক্ষাও করা যায় না। ফলে পোনা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো যেভাবে রেণু পোনা সরবরাহ করে সেভাবেই কিনতে হয়।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাগদা চিংড়ির চাহিদা অনেক। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও প্রতি কেজি ৯০০-১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে চিংড়ি উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানিতে সরকারের নজর বাড়ানো দরকার।
তিনি আরও বলেন, কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চিংড়ি শিল্পের বদনাম হচ্ছে। রপ্তানিজাত চিংড়ির ওজন বৃদ্ধি করার জন্য কেউ কেউ অপদ্রব্য পুশ করেন, এটা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় আগামীতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী চিংড়ি শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ ব্যবসায়ী।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিএম সেলিম বলেন, অপরিকল্পিত ঘের নির্মাণের কারণে চিংড়ি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
একটি চিংড়ি ঘেরে যে পরিমাণ পানি থাকার প্রয়োজন, তা রাখতে পারেন না চাষিরা। তাছাড়া এখানকার চিংড়ি ঘেরগুলো বছরের পর বছর জীবাণুযুক্ত কাদা বহন করে চলেছে। ওই নোংরা পরিবেশে চিংড়িটিকে থাকতে পারে না। ফলে এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা হলেই রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। এজন্য জেলার চিংড়িচাষিদের ঘেরে সবসময় কমপক্ষে সাড়ে চার-পাঁচ ফুট পানি রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে একবার হলেও ঘেরের তলার কাদা পরিষ্কার করতে বলা হয়।