মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার সদর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় দিন দিন কৃষিজমির পরিমাণ কমছে। বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ৬২২ একর ভূমি কমেছে বলে জানা গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র পাচার করার কারণে জমির ক্ষতিসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন মাঝেমধ্যে অপারেশন চালিয়ে কিছু জরিমানা, ড্রাইভার হেল্পার আটক ও ট্রাক শব্দ করলেও ঐসব কার্যক্রমের পেছনে পর্দার আড়ালে থাকা গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন বলে এলাকায় গুঞ্জন শোনা যায়।
জুড়ী উপজেলার খেয়াঘাট ব্রিজ থেকে ভরাডহর কয়লারঘাট ব্রিজ পর্যন্ত এলাকায় ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদীভাঙন, রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হওয়াসহ কৃষিজমি ও বসতভিটা হুমকির মুখে পড়েছে। এই অবস্থার প্রতিবাদে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ১৭ এপ্রিল দুপুরে উপজেলার শিলুয়া খেয়াঘাট এলাকায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবন লোকজন অংশ নেন।
মানববন্ধন সভায় বক্তারা বলেন, অবিলম্বে এই এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ এবং সংশ্লিষ্ট মৌজা বাতিল না করলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন তারা। বক্তারা অভিযোগ করেন, বালু উত্তোলনের ফলে ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মুখে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে জনপদের উপর আঘাত হানছে, যা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি।
নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহামান বলেন, ‘ব্রিজ রক্ষার্থে যদি সরকার ২ কিলোমিটার এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারে, তাহলে বাকি ৫০০-৭০০ মিটার এলাকায়, যেখানে একটি পুরো গ্রাম নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা সেখানে কেন বন্ধ করা যাবে না? আমি এলাকাবাসীর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং আগামী ইজারা কার্যকর হওয়ার আগেই এই দুই ব্রীজের মধ্যবর্তী এলাকার মৌজা বাতিল করে স্থায়ীভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
জেলার বিভিন্ন স্থানে অধিকাংশ জমি দুই এবং তিন ফসলি। কৃষি অর্থনীতির বড় অংশজুড়েই জেলার প্রভাব রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে কৃষিজমিগুলো গিলে খাচ্ছে আবাসন, ইটভাটা, কলকারখানা, সড়ক, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনা। জেলাজুড়েই ফসলি জমি ভরাট করে বানানো হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান, ইটভাটাসহ অন্যান্য স্থাপনা। আবার কৃষিজমি নিধন করে চলছে পুকুর খননের মহাযজ্ঞ।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, গত কয়েক বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি খনন করে পুকুর, ফিসারি, আর ভরাট করে ভিটাবাড়ি, ইটভাটা, ফিসারি, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে গত ৫ বছরে মৌলভীবাজার জেলায় ৬২২ একর কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে। ২০১৯ সালে এ জেলায় কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২২ হাজার ৬৩১ একর। ২০২৪ সালে তা কমে হয় ৪ লাখ ২২ হাজার ৮ একর।
জানা গেছে, একশ্রেণীর প্রভাব প্রতি পত্তিশক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় মাটি ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পযর্ন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল ও সদর উপজেলাসহ হাকালুকি, হাইল, কেওলার হাওরসহ বিভিন্ন এলাকা জমি ভরাটের মহোৎসবের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান, ভূনবীর, নোয়াগাওসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা নামধারী লোকজনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় একশ্রেণীর হোমরাচোমরা অবাধে বিভিন্ন ছোট নদী বা ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা ও কৃষিজমি থেকে মাটি মাটি কেটে অন্যত্র পাচার করা হচ্ছে। বিগত বছরে সিন্দুরখান ও ভূনবীর ইউনিয়নে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ট্রাকে করে বালুপাচারের সময় ট্রাকের ধাক্কায় তিনজন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে।
শ্রীমঙ্গল থানার নোয়াগাঁও গ্রামে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেন্দ্র দত্তের কৃষিজমি থেকে এলাকার মো. ময়নুল ও শিপন জোরপূর্বক ভাবে মাটি কেটে নিয়ে ঐ কৃষিজমিগুলোতে গর্তের এত বড় বড় পুকুর তৈরি করে ফেলেছে। এমনকি ঐ জমি ভরাট করে দেওয়ার শর্তে স্টাম্পে অঙ্গীকার পর্যন্ত করে। কিন্তু প্রভাবশালী নেতাদের মদত থাকায় মইনুল ও শিফন আজও বড় বড় গর্ত মাটি দিয়ে ভরাট করেনি বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে রাসেন্দ্র দত্তের বড় ছেলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. দুদু মিয়াকে ফোনে জানালে ওই সময়ে মাটি কাটা বন্ধ থাকে।
জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট থেকে জানা গেছে গত ১০ এপ্রিল কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কেওয়ালীঘাট থেকে অবৈধ বালু পরিবহনের দায়ে শ্রীপুর কোনাগাঁও এর এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই উর্বর পলি মাটি সমৃদ্ধ। এসব জমিতে বছরে দুই-তিন মৌসুমে ধান রোপণ করা হয়। কিন্তু একশ্রেণীর প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর লোকদের ছত্রছায়ায় হোমরাচোমরা অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এসব জমির উপরের স্তরের মাটি কিনে নিচ্ছে। বড় বড় ট্রাকে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। নানা দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার সদর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় দিন দিন কৃষিজমির পরিমাণ কমছে। বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ৬২২ একর ভূমি কমেছে বলে জানা গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র পাচার করার কারণে জমির ক্ষতিসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন মাঝেমধ্যে অপারেশন চালিয়ে কিছু জরিমানা, ড্রাইভার হেল্পার আটক ও ট্রাক শব্দ করলেও ঐসব কার্যক্রমের পেছনে পর্দার আড়ালে থাকা গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন বলে এলাকায় গুঞ্জন শোনা যায়।
জুড়ী উপজেলার খেয়াঘাট ব্রিজ থেকে ভরাডহর কয়লারঘাট ব্রিজ পর্যন্ত এলাকায় ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদীভাঙন, রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হওয়াসহ কৃষিজমি ও বসতভিটা হুমকির মুখে পড়েছে। এই অবস্থার প্রতিবাদে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ১৭ এপ্রিল দুপুরে উপজেলার শিলুয়া খেয়াঘাট এলাকায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবন লোকজন অংশ নেন।
মানববন্ধন সভায় বক্তারা বলেন, অবিলম্বে এই এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ এবং সংশ্লিষ্ট মৌজা বাতিল না করলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন তারা। বক্তারা অভিযোগ করেন, বালু উত্তোলনের ফলে ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মুখে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে জনপদের উপর আঘাত হানছে, যা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি।
নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহামান বলেন, ‘ব্রিজ রক্ষার্থে যদি সরকার ২ কিলোমিটার এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারে, তাহলে বাকি ৫০০-৭০০ মিটার এলাকায়, যেখানে একটি পুরো গ্রাম নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা সেখানে কেন বন্ধ করা যাবে না? আমি এলাকাবাসীর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং আগামী ইজারা কার্যকর হওয়ার আগেই এই দুই ব্রীজের মধ্যবর্তী এলাকার মৌজা বাতিল করে স্থায়ীভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
জেলার বিভিন্ন স্থানে অধিকাংশ জমি দুই এবং তিন ফসলি। কৃষি অর্থনীতির বড় অংশজুড়েই জেলার প্রভাব রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে কৃষিজমিগুলো গিলে খাচ্ছে আবাসন, ইটভাটা, কলকারখানা, সড়ক, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনা। জেলাজুড়েই ফসলি জমি ভরাট করে বানানো হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান, ইটভাটাসহ অন্যান্য স্থাপনা। আবার কৃষিজমি নিধন করে চলছে পুকুর খননের মহাযজ্ঞ।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, গত কয়েক বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি খনন করে পুকুর, ফিসারি, আর ভরাট করে ভিটাবাড়ি, ইটভাটা, ফিসারি, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে গত ৫ বছরে মৌলভীবাজার জেলায় ৬২২ একর কৃষিজমির পরিমাণ কমেছে। ২০১৯ সালে এ জেলায় কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২২ হাজার ৬৩১ একর। ২০২৪ সালে তা কমে হয় ৪ লাখ ২২ হাজার ৮ একর।
জানা গেছে, একশ্রেণীর প্রভাব প্রতি পত্তিশক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় মাটি ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পযর্ন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল ও সদর উপজেলাসহ হাকালুকি, হাইল, কেওলার হাওরসহ বিভিন্ন এলাকা জমি ভরাটের মহোৎসবের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান, ভূনবীর, নোয়াগাওসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা নামধারী লোকজনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় একশ্রেণীর হোমরাচোমরা অবাধে বিভিন্ন ছোট নদী বা ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা ও কৃষিজমি থেকে মাটি মাটি কেটে অন্যত্র পাচার করা হচ্ছে। বিগত বছরে সিন্দুরখান ও ভূনবীর ইউনিয়নে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ট্রাকে করে বালুপাচারের সময় ট্রাকের ধাক্কায় তিনজন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে।
শ্রীমঙ্গল থানার নোয়াগাঁও গ্রামে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেন্দ্র দত্তের কৃষিজমি থেকে এলাকার মো. ময়নুল ও শিপন জোরপূর্বক ভাবে মাটি কেটে নিয়ে ঐ কৃষিজমিগুলোতে গর্তের এত বড় বড় পুকুর তৈরি করে ফেলেছে। এমনকি ঐ জমি ভরাট করে দেওয়ার শর্তে স্টাম্পে অঙ্গীকার পর্যন্ত করে। কিন্তু প্রভাবশালী নেতাদের মদত থাকায় মইনুল ও শিফন আজও বড় বড় গর্ত মাটি দিয়ে ভরাট করেনি বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে রাসেন্দ্র দত্তের বড় ছেলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. দুদু মিয়াকে ফোনে জানালে ওই সময়ে মাটি কাটা বন্ধ থাকে।
জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট থেকে জানা গেছে গত ১০ এপ্রিল কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কেওয়ালীঘাট থেকে অবৈধ বালু পরিবহনের দায়ে শ্রীপুর কোনাগাঁও এর এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই উর্বর পলি মাটি সমৃদ্ধ। এসব জমিতে বছরে দুই-তিন মৌসুমে ধান রোপণ করা হয়। কিন্তু একশ্রেণীর প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর লোকদের ছত্রছায়ায় হোমরাচোমরা অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এসব জমির উপরের স্তরের মাটি কিনে নিচ্ছে। বড় বড় ট্রাকে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। নানা দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।