বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কের পাশের খাদে, সরকারি খাল, নদী নালা, পুকুর ও ডোবার হাজার হাজার একর নিচু জমি বছরের অধিকাংশ সময় কচুরিপানায় আচ্ছাদিত থাকে। এসব জলমগ্ন পতিত জমি কোনো কৃষিকাজে ব্যবহার হয় না, বরং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হয়ে উঠেছে হুমকি। পরিসংখ্যান দেখা যায়, দেশে বর্তমানে ৩,৫০০ কিমি জাতীয় সড়ক, ৪,৩০০ কিমি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩,৭০০ কিমি জেলা সড়ক রয়েছে। এছাড়াও নদী- নালা,খাল-বিল, পুকুর ডোবার জমিতে দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকা কচুরিপানা পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করছে, একইসঙ্গে মশা-মাছি, কীটপতঙ্গ প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কচুরিপানা যদি পরিকল্পিতভাবে অপসারণ করে ব্যবস্থাপনায় আনা যায়, তাহলে এই পতিত জমিগুলো কৃষিকাজ, মাছ চাষ, জৈব সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদনে ব্যবহৃত হতে পারে। এ ব্যাপারে দুমকি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইসমিতা আক্তার সোনিয়া বলেন, কচুরিপানা পচিয়ে জৈব সার তৈরি করা যায়, যা কৃষিতে ব্যবহার হয়। মালচিং হিসেবে জমিতে এর ব্যবহার পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদনের বেড তৈরিতে কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও, বায়োগ্যাস উৎপাদনেও এটি সহায়ক। সীমিত পরিমাণে গাঁজানো কচুরিপানা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে অতিরিক্ত খাওয়ালে হজমের সমস্যা হতে পারে। কচুরিপানা দ্রুত বংশবিস্তার করে জলাশয় দখল করে ফেলে। এতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী হুমকির মুখে পড়ে। নৌচলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এবং মশা-মাছির জন্ম হয়। কচুরিপানা যেমন একটি সমস্যা, তেমনি সঠিক ব্যবস্থাপনায় এটি হতে পারে মূল্যবান সম্পদ। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা ও পরিকল্পিত ব্যবহার।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি ও পাবলিক হেলথ বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. ফারজানা ইয়াসমিন রুমি বলেন, কচুরিপানাকে সমস্যা না দেখে যদি আমরা সম্পদের অংশ হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে তা স্থানীয় কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এটি দিয়ে জৈব সার, পশুখাদ্য ও বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। শীতকাল কচুরিপানা অপসারণের উপযুক্ত সময়।
এ সময় পানির স্তর নিচু থাকে এবং কচুরিপানা তুলনামূলকভাবে সহজে অপসারণযোগ্য হয়। এই সময় মাছের পোনা ছাড়লে উৎপাদনও ভালো হয়। পবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তার পাশের পতিত জলাভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা একদিকে পরিবেশ রক্ষা, অন্যদিকে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় সহায়ক হতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমরা এ বিষয়ে গবেষণা, মাঠ কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক কাজ করছি। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।সরকারি সহায়তা, জনসম্পৃক্ততা এবং প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে দেশের অনাবাদি পতিত জলাভূমিগুলো হতে পারে টেকসই কৃষির এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কের পাশের খাদে, সরকারি খাল, নদী নালা, পুকুর ও ডোবার হাজার হাজার একর নিচু জমি বছরের অধিকাংশ সময় কচুরিপানায় আচ্ছাদিত থাকে। এসব জলমগ্ন পতিত জমি কোনো কৃষিকাজে ব্যবহার হয় না, বরং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হয়ে উঠেছে হুমকি। পরিসংখ্যান দেখা যায়, দেশে বর্তমানে ৩,৫০০ কিমি জাতীয় সড়ক, ৪,৩০০ কিমি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩,৭০০ কিমি জেলা সড়ক রয়েছে। এছাড়াও নদী- নালা,খাল-বিল, পুকুর ডোবার জমিতে দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকা কচুরিপানা পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করছে, একইসঙ্গে মশা-মাছি, কীটপতঙ্গ প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কচুরিপানা যদি পরিকল্পিতভাবে অপসারণ করে ব্যবস্থাপনায় আনা যায়, তাহলে এই পতিত জমিগুলো কৃষিকাজ, মাছ চাষ, জৈব সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদনে ব্যবহৃত হতে পারে। এ ব্যাপারে দুমকি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইসমিতা আক্তার সোনিয়া বলেন, কচুরিপানা পচিয়ে জৈব সার তৈরি করা যায়, যা কৃষিতে ব্যবহার হয়। মালচিং হিসেবে জমিতে এর ব্যবহার পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদনের বেড তৈরিতে কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও, বায়োগ্যাস উৎপাদনেও এটি সহায়ক। সীমিত পরিমাণে গাঁজানো কচুরিপানা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে অতিরিক্ত খাওয়ালে হজমের সমস্যা হতে পারে। কচুরিপানা দ্রুত বংশবিস্তার করে জলাশয় দখল করে ফেলে। এতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী হুমকির মুখে পড়ে। নৌচলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এবং মশা-মাছির জন্ম হয়। কচুরিপানা যেমন একটি সমস্যা, তেমনি সঠিক ব্যবস্থাপনায় এটি হতে পারে মূল্যবান সম্পদ। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা ও পরিকল্পিত ব্যবহার।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি ও পাবলিক হেলথ বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. ফারজানা ইয়াসমিন রুমি বলেন, কচুরিপানাকে সমস্যা না দেখে যদি আমরা সম্পদের অংশ হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে তা স্থানীয় কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এটি দিয়ে জৈব সার, পশুখাদ্য ও বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। শীতকাল কচুরিপানা অপসারণের উপযুক্ত সময়।
এ সময় পানির স্তর নিচু থাকে এবং কচুরিপানা তুলনামূলকভাবে সহজে অপসারণযোগ্য হয়। এই সময় মাছের পোনা ছাড়লে উৎপাদনও ভালো হয়। পবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তার পাশের পতিত জলাভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা একদিকে পরিবেশ রক্ষা, অন্যদিকে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় সহায়ক হতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমরা এ বিষয়ে গবেষণা, মাঠ কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক কাজ করছি। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।সরকারি সহায়তা, জনসম্পৃক্ততা এবং প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে দেশের অনাবাদি পতিত জলাভূমিগুলো হতে পারে টেকসই কৃষির এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস।