পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আঙুরের চাষ হয়। তা হলে আমাদের দেশেও সম্ভব। এমন বিশ্বাস থেকেই শিক্ষিত যুবক আলামিন হোসেন ১০ কাঠা জমিতে আঙুরের চাষের ঝটুকি নিয়েছিলেন।
আঙুর চাষে
অল্প জমিতে
বেশি লাভ
একটি বাগান থেকে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আঙুর পাওয়া যায়
উৎপাদন ব্যয় কম বিধায় আঙুর চাষে উৎসাহী হচ্ছেন আশপাশের চাষিরা।
আঙুর বিদেশি ফল হওয়ায় এ অঞ্চলে হবে না ভেবে সে সময়ে অনেকে হাসি রহস্য করে এ চাষে লোকসান দেখছিলেন। কিন্তু তাদের সে ধারণা ভুল প্রমানিত হয়েছে। কেননা আলামিনের ক্ষেতের মধ্যকার (বানে) সেডে এখন থোকায় থোকায় ঝুলে আছে অসংখ্য আঙুর যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। আর প্রচুর পরিমাণে ধরার কারণে মানুষ দেখে আশ্চর্য হচ্ছেন। আলামিনের এমন সফলতার হাতছানিতে এখন অনেকেই আঙুর চাষের প্রস্ততি নিচ্ছেন। আলামিন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোপপাড়া গ্রামে ইসলাম বিশ্বাসের ছেলে। গতকাল শুক্রবার সকালে আলামিনের আঙুরের ক্ষেতে গেলে দেখা যায়, ক্ষেতের চারপাশে জাল দিয়ে ঘেরা। আর ভিতরে সিমেন্টের খুঁটির ওপর বিশেষ সুতায় বোনা জাল বিছিয়ে বান তৈরি করা হয়েছে। যে বান বা মাচংয়ের ওপর দিয়ে বেয়ে চলে গেছে আঙুর গাছের লতাগুলো। সারাক্ষেতে মাচংয়ে লতিয়ে যাওয়া আঙুর গাছের ডগায় থোকায় থোকায় লাল, সাদা, কালোসহ কয়েকটি রঙের আঙুরের থোকা ঝুলছে। আর আলামিন ক্ষেতের ভিতরেই কাজ করছেন।
আলামিন হোসেন জানান, মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। বাবার ৩-৪ বিঘা জমি আছে। এখান থেকে যা আসে তা দিয়ে ঠিকমত সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে এইচএসসির পরে আর লেখাপড়া করতে পারেননি। ২ ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই ফারুক হোসেন একটি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে বাড়ি থাকেন না। ফলে তিনি ছোট হলেও এখন সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের চাষের জমি বেশি নেই। যে কারণে অল্প জমিতে বেশি লাভের কিছু চাষ করার কথা ভাবছিলেন। সেদিক দিয়ে তিনি আঙুরকেই বেছে নেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে মহেশপুর থেকে বাইক্লোর, একুলো, জয়সিডলেস, ভেলেজ, মারসেলকোচসহ ৬ জাতের প্রতি পিস ৪৩০ টাকা করে ৮২ পিচ আঙুরের চারা কিনে রোপন করেন। যে গাছগুলোতে বছর পার না হতেই আঙুর ধরেছে। তিনি বলেন, ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে একটি আঙুর ক্ষেত থেকে ১০ বছরের অধিক সময় আঙুর পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তার দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম বছরটাতে বেশিরভাগ খরচ হয়ে গেছে। এরপর যে কয় বছর গাছ সতেজ থাকবে খুব বেশি একটা খরচ হবে না।
কাষ্টভাঙা গ্রামের বাসিন্দা বকুল হোসেন, ছোটবেলা থেকে তাদের মাঠে ধান, আখ, গমসহ বিভিন্ন ফল ফলাদির গতানুগতিক ফসলের চাষ হতে দেখেছেন। কিন্ত আলামিন হঠাৎ করে আঙুরের চাষ শুরু করলে লোকজন হাসি রহস্য করেছিল। এখন আবার ক্ষেতের সুস্বাদু ও অসংখ্য ধরন্ত আঙুর দেখে তারাই এখন হতবাক হয়ে যাচ্ছেন। ওই গ্রামের তুষার হোসেন জানান, আলামিনের আঙুর চাষ দেখে প্রথমদিকে যারা এ অঞ্চলের ভালো হবে কিনা এবং লাভজনক কিনাসহ বিভিন্নভাবে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ক্ষেতের আঙুর দেখে তারাও এখন নিজেরা চাষ করার প্রস্ততি নিচ্ছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম রনি জানান, এক সময় আঙুরকে বিদেশি ফল বলা হতো। কিন্তু এখন আমাদের দেশে পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, এ উপজেলাতে চলতি বছর আলামিন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক বানিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন। খোঁজ নিয়েছেন ধরেছেও ভালো। যদি সুস্বাদু হয়, বাজারমূল্য ভালো থাকে এবং চারার মূল্য সহনশীল পর্যায়ে থাকে তাহলে দ্রুতই এ ফলের চাষ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করেন এই কৃষিবিদ।
শনিবার, ১০ মে ২০২৫
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আঙুরের চাষ হয়। তা হলে আমাদের দেশেও সম্ভব। এমন বিশ্বাস থেকেই শিক্ষিত যুবক আলামিন হোসেন ১০ কাঠা জমিতে আঙুরের চাষের ঝটুকি নিয়েছিলেন।
আঙুর চাষে
অল্প জমিতে
বেশি লাভ
একটি বাগান থেকে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আঙুর পাওয়া যায়
উৎপাদন ব্যয় কম বিধায় আঙুর চাষে উৎসাহী হচ্ছেন আশপাশের চাষিরা।
আঙুর বিদেশি ফল হওয়ায় এ অঞ্চলে হবে না ভেবে সে সময়ে অনেকে হাসি রহস্য করে এ চাষে লোকসান দেখছিলেন। কিন্তু তাদের সে ধারণা ভুল প্রমানিত হয়েছে। কেননা আলামিনের ক্ষেতের মধ্যকার (বানে) সেডে এখন থোকায় থোকায় ঝুলে আছে অসংখ্য আঙুর যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। আর প্রচুর পরিমাণে ধরার কারণে মানুষ দেখে আশ্চর্য হচ্ছেন। আলামিনের এমন সফলতার হাতছানিতে এখন অনেকেই আঙুর চাষের প্রস্ততি নিচ্ছেন। আলামিন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোপপাড়া গ্রামে ইসলাম বিশ্বাসের ছেলে। গতকাল শুক্রবার সকালে আলামিনের আঙুরের ক্ষেতে গেলে দেখা যায়, ক্ষেতের চারপাশে জাল দিয়ে ঘেরা। আর ভিতরে সিমেন্টের খুঁটির ওপর বিশেষ সুতায় বোনা জাল বিছিয়ে বান তৈরি করা হয়েছে। যে বান বা মাচংয়ের ওপর দিয়ে বেয়ে চলে গেছে আঙুর গাছের লতাগুলো। সারাক্ষেতে মাচংয়ে লতিয়ে যাওয়া আঙুর গাছের ডগায় থোকায় থোকায় লাল, সাদা, কালোসহ কয়েকটি রঙের আঙুরের থোকা ঝুলছে। আর আলামিন ক্ষেতের ভিতরেই কাজ করছেন।
আলামিন হোসেন জানান, মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। বাবার ৩-৪ বিঘা জমি আছে। এখান থেকে যা আসে তা দিয়ে ঠিকমত সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে এইচএসসির পরে আর লেখাপড়া করতে পারেননি। ২ ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই ফারুক হোসেন একটি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে বাড়ি থাকেন না। ফলে তিনি ছোট হলেও এখন সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের চাষের জমি বেশি নেই। যে কারণে অল্প জমিতে বেশি লাভের কিছু চাষ করার কথা ভাবছিলেন। সেদিক দিয়ে তিনি আঙুরকেই বেছে নেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে মহেশপুর থেকে বাইক্লোর, একুলো, জয়সিডলেস, ভেলেজ, মারসেলকোচসহ ৬ জাতের প্রতি পিস ৪৩০ টাকা করে ৮২ পিচ আঙুরের চারা কিনে রোপন করেন। যে গাছগুলোতে বছর পার না হতেই আঙুর ধরেছে। তিনি বলেন, ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে একটি আঙুর ক্ষেত থেকে ১০ বছরের অধিক সময় আঙুর পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তার দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম বছরটাতে বেশিরভাগ খরচ হয়ে গেছে। এরপর যে কয় বছর গাছ সতেজ থাকবে খুব বেশি একটা খরচ হবে না।
কাষ্টভাঙা গ্রামের বাসিন্দা বকুল হোসেন, ছোটবেলা থেকে তাদের মাঠে ধান, আখ, গমসহ বিভিন্ন ফল ফলাদির গতানুগতিক ফসলের চাষ হতে দেখেছেন। কিন্ত আলামিন হঠাৎ করে আঙুরের চাষ শুরু করলে লোকজন হাসি রহস্য করেছিল। এখন আবার ক্ষেতের সুস্বাদু ও অসংখ্য ধরন্ত আঙুর দেখে তারাই এখন হতবাক হয়ে যাচ্ছেন। ওই গ্রামের তুষার হোসেন জানান, আলামিনের আঙুর চাষ দেখে প্রথমদিকে যারা এ অঞ্চলের ভালো হবে কিনা এবং লাভজনক কিনাসহ বিভিন্নভাবে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ক্ষেতের আঙুর দেখে তারাও এখন নিজেরা চাষ করার প্রস্ততি নিচ্ছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম রনি জানান, এক সময় আঙুরকে বিদেশি ফল বলা হতো। কিন্তু এখন আমাদের দেশে পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, এ উপজেলাতে চলতি বছর আলামিন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক বানিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন। খোঁজ নিয়েছেন ধরেছেও ভালো। যদি সুস্বাদু হয়, বাজারমূল্য ভালো থাকে এবং চারার মূল্য সহনশীল পর্যায়ে থাকে তাহলে দ্রুতই এ ফলের চাষ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করেন এই কৃষিবিদ।