রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : এভাবেই ফসলি জমির টপ সয়েল ও খাল থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে -সংবাদ
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ইটভাটায় মাটি যোগান দিতে ফসলি জমি টপ সয়েল ও খাল থেকে দফায় দফায় মাটি কেটে স্থানীয় ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভেকু দিয়ে মাটি খনন করার ফলে খালের গতিপথ বদলে গেছে। এমন চিত্র উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আঁধার মারটেক কালিপুর এলাকার। এ ছাড়া পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ থেকে ১০ কানি ফসলি জমিও কেটে গভীর খাদে পরিণত করা হয়েছে। খাল ও ফসলি জমি এক্সকেভেটরের সাহায্যে কেটে মাটিগুলো ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
নদী-নালা এবং খাল-বিল থেকে সরকারি অনুমতি ছাড়া মাটি কাটায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, চিহ্নিতরা এর কোনো তোয়াক্কা না করে এমন কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। স্থানীয়দের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন বিগত সরকারের সময়ে যেভাবে সরকারি খালের বালু ও মাটি হরিলুট হয়েছে একই কায়দায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাটি লুট হচ্ছে প্রতিদিন রাত ও দিনে প্রকাশ্যে, বিশেষ করে ফসলি জমি ও পাহাড় বাদ যাচ্ছে না নদীর তলদেশ পর্যন্ত। আগে আওয়ামী লীগের লোকজন খালের মাটি লুট করলেও এখন কারা করছেন? তা নিশ্চয়ই প্রশাসন জানে। তবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজান হোসাইন জানিয়েছেন, ফসলি জমির টপসয়েল ছাড়াও খালের মাটি লুটকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তিনি অবশ্যই যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সম্পত্তি সরেজমিনে দেখা যায়, খালের পাড়ে কৃষক রফিকের মালিকানাধীন এক কানি জমি, সরকারি মালিকানাধীন খাল এবং রাস্তাসহ আরও দুই কানি জমির মাটি কেটে নিয়ে যায়। এতে করে ঘাগড়া খালের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়। পাশের কেবিএম-২ ইটভাটার মালিক মহসিন, বখতিয়ার এবং এখতিয়ার গং এসব খালের জমিগুলো কেটে মাটিগুলো নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। এ ছাড়া পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম নিশ্চিন্তাপুর পশ্চিম বিলে বিবিসি-২ ইটভাটায় ফসলি জমি গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ২টি প্লটে ১০ কানি জায়গা গভীর করে কাটা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে, ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড গাবতল খেলার মাঠ এলাকায় প্রাচীর নির্মাণ করে দখল প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। ত্রিপল দিয়ে ঘিরে লোকচক্ষুর আড়ালে এসব কাজ করেছেন স্থানীয় আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি। ঘাগড়া খালের পাড়ে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী কৃষক মোহাম্মদ রফিক বলেন, ঘাগড়া খালের পাড়ে সড়কের পাড়সহ মালিকানাধীন তার এক কানি জায়গা ২০২১ সালে প্রথমবার ৩০ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে যায়। এ বছর আবারও ২৯ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে গেছে। ঘাগড়া খাল কেটে তার জমিনের দিকে দিক পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। ওই জমিতে তার বেগুন ক্ষেত, শসা ক্ষেত, কাঁকরল, চারপাশে কলা বাগান ছিল। সব কেটে কেবিএম-২ নামে ইটভাটায় নিয়ে যায়।
এ ছাড়া সিবিএম ইটভাটার সামনে ১ কানি জায়গা ৩০ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে যায়। এই জায়গার ব্যাপারে ২০২২ সালে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে চেয়ারম্যান ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায় দেয়। কিন্তু তারা তা অমান্য করে। এরপর ২০২৪ সালে আবারও সিবিএম এবং কেবিএম ইটভাটায় মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। এই ব্যাপারে থানায় বৈঠক হলেও সুবিচার পাননি তিনি। এর প্রতিবাদ করায় তাকে চাঁদাবাজি, ভাঙচুর ও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।
আমির হামজা নামে এক কৃষক জানান, তিনি এবার দেড় কানি জায়গায় আবাদ করেন। কিন্তু জোরপূর্বক তার ধান ঘরে তোলার আগেই অন্তত এক কানি জায়গার ধান কেটে নিয়ে যায়। এসব মাটি বিবিসি-২ এবং কেবিএম ইটভাটায় নিয়ে যায় বলে জানান তিনি। অপর একভুক্তভোগী মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, তার ৬২ শতক জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে বেপরোয়া মাটি কাটার কারণে তার ধানি জমিসহ ভেঙে পড়েছে খাদে। পাশের জমির মালিক থেকে জায়গার মাটি কিনে এমনভাবে কেটেছে যে তার অবিক্রিত ১০ শতক জমি ভেঙে পড়েছে। একইভাবে অন্য আরও একাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবার জমিগুলো এভাবে ভেঙে পড়লে তাদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। তাই কৌশলে তারা এই কাজ করেছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত বখতিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কারো জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়নি। জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি কিনে তা কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : এভাবেই ফসলি জমির টপ সয়েল ও খাল থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে -সংবাদ
শনিবার, ১০ মে ২০২৫
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ইটভাটায় মাটি যোগান দিতে ফসলি জমি টপ সয়েল ও খাল থেকে দফায় দফায় মাটি কেটে স্থানীয় ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভেকু দিয়ে মাটি খনন করার ফলে খালের গতিপথ বদলে গেছে। এমন চিত্র উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আঁধার মারটেক কালিপুর এলাকার। এ ছাড়া পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ থেকে ১০ কানি ফসলি জমিও কেটে গভীর খাদে পরিণত করা হয়েছে। খাল ও ফসলি জমি এক্সকেভেটরের সাহায্যে কেটে মাটিগুলো ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
নদী-নালা এবং খাল-বিল থেকে সরকারি অনুমতি ছাড়া মাটি কাটায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, চিহ্নিতরা এর কোনো তোয়াক্কা না করে এমন কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। স্থানীয়দের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন বিগত সরকারের সময়ে যেভাবে সরকারি খালের বালু ও মাটি হরিলুট হয়েছে একই কায়দায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাটি লুট হচ্ছে প্রতিদিন রাত ও দিনে প্রকাশ্যে, বিশেষ করে ফসলি জমি ও পাহাড় বাদ যাচ্ছে না নদীর তলদেশ পর্যন্ত। আগে আওয়ামী লীগের লোকজন খালের মাটি লুট করলেও এখন কারা করছেন? তা নিশ্চয়ই প্রশাসন জানে। তবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজান হোসাইন জানিয়েছেন, ফসলি জমির টপসয়েল ছাড়াও খালের মাটি লুটকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তিনি অবশ্যই যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সম্পত্তি সরেজমিনে দেখা যায়, খালের পাড়ে কৃষক রফিকের মালিকানাধীন এক কানি জমি, সরকারি মালিকানাধীন খাল এবং রাস্তাসহ আরও দুই কানি জমির মাটি কেটে নিয়ে যায়। এতে করে ঘাগড়া খালের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়। পাশের কেবিএম-২ ইটভাটার মালিক মহসিন, বখতিয়ার এবং এখতিয়ার গং এসব খালের জমিগুলো কেটে মাটিগুলো নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। এ ছাড়া পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম নিশ্চিন্তাপুর পশ্চিম বিলে বিবিসি-২ ইটভাটায় ফসলি জমি গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ২টি প্লটে ১০ কানি জায়গা গভীর করে কাটা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে, ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড গাবতল খেলার মাঠ এলাকায় প্রাচীর নির্মাণ করে দখল প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। ত্রিপল দিয়ে ঘিরে লোকচক্ষুর আড়ালে এসব কাজ করেছেন স্থানীয় আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি। ঘাগড়া খালের পাড়ে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী কৃষক মোহাম্মদ রফিক বলেন, ঘাগড়া খালের পাড়ে সড়কের পাড়সহ মালিকানাধীন তার এক কানি জায়গা ২০২১ সালে প্রথমবার ৩০ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে যায়। এ বছর আবারও ২৯ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে গেছে। ঘাগড়া খাল কেটে তার জমিনের দিকে দিক পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। ওই জমিতে তার বেগুন ক্ষেত, শসা ক্ষেত, কাঁকরল, চারপাশে কলা বাগান ছিল। সব কেটে কেবিএম-২ নামে ইটভাটায় নিয়ে যায়।
এ ছাড়া সিবিএম ইটভাটার সামনে ১ কানি জায়গা ৩০ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে যায়। এই জায়গার ব্যাপারে ২০২২ সালে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে চেয়ারম্যান ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায় দেয়। কিন্তু তারা তা অমান্য করে। এরপর ২০২৪ সালে আবারও সিবিএম এবং কেবিএম ইটভাটায় মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। এই ব্যাপারে থানায় বৈঠক হলেও সুবিচার পাননি তিনি। এর প্রতিবাদ করায় তাকে চাঁদাবাজি, ভাঙচুর ও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।
আমির হামজা নামে এক কৃষক জানান, তিনি এবার দেড় কানি জায়গায় আবাদ করেন। কিন্তু জোরপূর্বক তার ধান ঘরে তোলার আগেই অন্তত এক কানি জায়গার ধান কেটে নিয়ে যায়। এসব মাটি বিবিসি-২ এবং কেবিএম ইটভাটায় নিয়ে যায় বলে জানান তিনি। অপর একভুক্তভোগী মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, তার ৬২ শতক জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে বেপরোয়া মাটি কাটার কারণে তার ধানি জমিসহ ভেঙে পড়েছে খাদে। পাশের জমির মালিক থেকে জায়গার মাটি কিনে এমনভাবে কেটেছে যে তার অবিক্রিত ১০ শতক জমি ভেঙে পড়েছে। একইভাবে অন্য আরও একাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবার জমিগুলো এভাবে ভেঙে পড়লে তাদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। তাই কৌশলে তারা এই কাজ করেছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত বখতিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কারো জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়নি। জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি কিনে তা কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।