সুনামগঞ্জ : পাথরকোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিক শূন্য নৌকা -সংবাদ
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীর বালু-পাথর দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। ফলে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক বালু-পাথর শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কাজ না থাকায় শ্রমিকরা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অচিরেই সমস্যার সমাধান না হলে মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হবেন।
তাহিরপুর সীমান্ত নদী যাদুকাটা বালুমহালে বালু-পাথর ও ভেসে আসা কয়লা উত্তোলনে আইনি জটিলতায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় শ্রমিকরাসহ ব্যবসা বাণিজ্যে ও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার বৃহৎ যাদুকাটা নদীতে সীমান্তের ওপার থেকে উজানের ঢলের সঙ্গে কয়লা, বালুপাথর এসে স্তুপ হয়। এসব উত্তোলন করে মাহারাম, বড়গোপ, লাউড়েরগড়, ঢালারপাড়, বিন্নাকুলি, ঘাগড়া, মানিগাঁও, সুন্দর পাহাড়ি, রাজাই চাঁনপুরসহ দুই পাড়ের এবং দুটি উপজেলার শতাধিক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু গত মাসাধিককাল ধরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় শ্রমিকরা নদীতে কাজ করতে না পেরে মানবেতর জীবন—যাপন করছেন।
ইতিপূর্বে ইজারাকৃত বৃহৎ যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ এর আওতাধীন বিশাল নদীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা যেত হাজার হাজার শ্রমিক কোদাল, বেলচা ও বারকি নৌকা, স্টিল বডি নৌকা দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন করতে। কিন্তু গত একমাস ধরে এখানে সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। এ কারণে এলাকায় অনেকেই চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।
মানিগাঁও গ্রামের বালু শ্রমিক মোতালিব মিয়া বলেন, এ নদীতে কাজ করেই হাজার হাজার শ্রমিকের সংসার চলে। গত একমাস ধরে নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা কাজ করতে না পেরে এখন খুব কষ্টে আছেন। প্রতিদিন তারা ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা রুজি করতেন, কিন্তু এখন তারা করতে পারছেন না, তাদের কষ্ট বেড়ে গেছে।
নদী তীর বর্তী ঘাগটিয়া গ্রামের আল আমিন বলেন, এ নদীতে কাজ করার ফলে ব্যবসায়ী শ্রমিক উভয়ের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। কিন্তু নদীটি বন্ধ হওয়ায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা এখন বেকায়দায় আছেন। নদীতে কাজ না থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রভাব পড়েছে।
গড়কাটি গ্রামের মুক্তার হোসেন জানান, নদীতে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও গত একমাস ধরে বালু উত্তোলন করতে না পারায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। দ্রত আইনী জটিলতা নিরসন করে নদীতে শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ দানে জোর দাবি জানান তিনি।
গত ৮ মে যাদুকাটা নদীর লাউড়ের গড় পাড়ে এলাকার সর্ব স্তরের মানুষের পক্ষ থেকে নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন ও ভেসে আসা কয়লা উত্তোলন করার দাবিতে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শ্রমিক সর্দার রমজান আলী, বাংলা কয়লা সমবায় সমিতির সভাপতি বিল্লাল হোসেন, লাউড়েরগড় বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মোতালিব, সাধারণ সম্পাদক রহিছ মিয়া,তাবারক হোসেন, কামরুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন সাবু,লাল মিয়া, হোসেন আলী,আব্দুল বারেক, শরিফ উদ্দিন, রহমত আলী প্রমুখ সহ শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন।
জানা যায়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মেয়াদে সুনামগঞ্জ জেলার বৃহৎ যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ ইজারা প্রদান করেন জেলা প্রশাসন। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা হন যাদুকাটা তাহিয়া স্টোন ক্রাসারের স্বত্বাধিকারী নাসির মিয়া ৩৩ কোটি টাকা এবং এবং যাদুকাটা মেসার্স জিনান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ রুবেল মিয়া ৫৫ কোটি টাকায়। পরে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিত্বে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বালুমহাল দুটির ইজারা কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট বিভাগ। একপর্যায়ে যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ এর ইজারা কার্যক্রমের ওপর উচ্চ আদালতে করা রিট পিটিশন আগামী দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে আগামী ২ মাসের মধ্যে মহাল দুটি থেকে সকল ধরনের বালু উত্তোলন বন্ধ রাখারও নির্দেশও দেন আদালত।
যাদুকাটা— ২ এর ইজারাদার জিনান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ মো. রুবেল বললেন, সর্বোচ্চ ইজারাপ্রাপ্ত হয়েও আমরা নদীতে যেতে পারছি না দুইএকজন স্বাথার্ন্বেষী মানুষের জন্য। এরা নদী কেন্দ্রীক খেটে খাওয়া শ্রমিকদের কথা চিন্তা না করেই মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। তারা প্রতি বছরেই এমন করে থাকেন, তাদের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটলেই এমনটা করে।
তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে করা রিট পিটিশন আগামী দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের মহামান্য আপিল বিভাগ, আসা করছি আমরা ন্যায় বিচার পাবো এবং হাজার হাজার শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় যাদুকাটা নদীতে বালু, পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনী জটিলতা নিরসন হলে শ্রমিকরা আবারও নদীতে কাজ করতে পারবেন।
জেলা প্রশাসক ড মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেই শ্রমিকরা কাজ করতে পারবেন।
সুনামগঞ্জ : পাথরকোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিক শূন্য নৌকা -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীর বালু-পাথর দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। ফলে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক বালু-পাথর শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কাজ না থাকায় শ্রমিকরা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অচিরেই সমস্যার সমাধান না হলে মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হবেন।
তাহিরপুর সীমান্ত নদী যাদুকাটা বালুমহালে বালু-পাথর ও ভেসে আসা কয়লা উত্তোলনে আইনি জটিলতায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় শ্রমিকরাসহ ব্যবসা বাণিজ্যে ও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার বৃহৎ যাদুকাটা নদীতে সীমান্তের ওপার থেকে উজানের ঢলের সঙ্গে কয়লা, বালুপাথর এসে স্তুপ হয়। এসব উত্তোলন করে মাহারাম, বড়গোপ, লাউড়েরগড়, ঢালারপাড়, বিন্নাকুলি, ঘাগড়া, মানিগাঁও, সুন্দর পাহাড়ি, রাজাই চাঁনপুরসহ দুই পাড়ের এবং দুটি উপজেলার শতাধিক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু গত মাসাধিককাল ধরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় শ্রমিকরা নদীতে কাজ করতে না পেরে মানবেতর জীবন—যাপন করছেন।
ইতিপূর্বে ইজারাকৃত বৃহৎ যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ এর আওতাধীন বিশাল নদীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা যেত হাজার হাজার শ্রমিক কোদাল, বেলচা ও বারকি নৌকা, স্টিল বডি নৌকা দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন করতে। কিন্তু গত একমাস ধরে এখানে সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। এ কারণে এলাকায় অনেকেই চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।
মানিগাঁও গ্রামের বালু শ্রমিক মোতালিব মিয়া বলেন, এ নদীতে কাজ করেই হাজার হাজার শ্রমিকের সংসার চলে। গত একমাস ধরে নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা কাজ করতে না পেরে এখন খুব কষ্টে আছেন। প্রতিদিন তারা ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা রুজি করতেন, কিন্তু এখন তারা করতে পারছেন না, তাদের কষ্ট বেড়ে গেছে।
নদী তীর বর্তী ঘাগটিয়া গ্রামের আল আমিন বলেন, এ নদীতে কাজ করার ফলে ব্যবসায়ী শ্রমিক উভয়ের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। কিন্তু নদীটি বন্ধ হওয়ায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা এখন বেকায়দায় আছেন। নদীতে কাজ না থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রভাব পড়েছে।
গড়কাটি গ্রামের মুক্তার হোসেন জানান, নদীতে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও গত একমাস ধরে বালু উত্তোলন করতে না পারায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। দ্রত আইনী জটিলতা নিরসন করে নদীতে শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ দানে জোর দাবি জানান তিনি।
গত ৮ মে যাদুকাটা নদীর লাউড়ের গড় পাড়ে এলাকার সর্ব স্তরের মানুষের পক্ষ থেকে নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন ও ভেসে আসা কয়লা উত্তোলন করার দাবিতে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শ্রমিক সর্দার রমজান আলী, বাংলা কয়লা সমবায় সমিতির সভাপতি বিল্লাল হোসেন, লাউড়েরগড় বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মোতালিব, সাধারণ সম্পাদক রহিছ মিয়া,তাবারক হোসেন, কামরুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন সাবু,লাল মিয়া, হোসেন আলী,আব্দুল বারেক, শরিফ উদ্দিন, রহমত আলী প্রমুখ সহ শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন।
জানা যায়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মেয়াদে সুনামগঞ্জ জেলার বৃহৎ যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ ইজারা প্রদান করেন জেলা প্রশাসন। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা হন যাদুকাটা তাহিয়া স্টোন ক্রাসারের স্বত্বাধিকারী নাসির মিয়া ৩৩ কোটি টাকা এবং এবং যাদুকাটা মেসার্স জিনান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ রুবেল মিয়া ৫৫ কোটি টাকায়। পরে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিত্বে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বালুমহাল দুটির ইজারা কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট বিভাগ। একপর্যায়ে যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ এর ইজারা কার্যক্রমের ওপর উচ্চ আদালতে করা রিট পিটিশন আগামী দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে আগামী ২ মাসের মধ্যে মহাল দুটি থেকে সকল ধরনের বালু উত্তোলন বন্ধ রাখারও নির্দেশও দেন আদালত।
যাদুকাটা— ২ এর ইজারাদার জিনান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ মো. রুবেল বললেন, সর্বোচ্চ ইজারাপ্রাপ্ত হয়েও আমরা নদীতে যেতে পারছি না দুইএকজন স্বাথার্ন্বেষী মানুষের জন্য। এরা নদী কেন্দ্রীক খেটে খাওয়া শ্রমিকদের কথা চিন্তা না করেই মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। তারা প্রতি বছরেই এমন করে থাকেন, তাদের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটলেই এমনটা করে।
তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে করা রিট পিটিশন আগামী দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের মহামান্য আপিল বিভাগ, আসা করছি আমরা ন্যায় বিচার পাবো এবং হাজার হাজার শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় যাদুকাটা নদীতে বালু, পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনী জটিলতা নিরসন হলে শ্রমিকরা আবারও নদীতে কাজ করতে পারবেন।
জেলা প্রশাসক ড মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেই শ্রমিকরা কাজ করতে পারবেন।