ফেইসবুকে দেওয়া একটি পুরনো মন্তব্য নতুন করে আলোচনায় আসায় এবং সেটিকে ঘিরে ‘হুমকি ও অপমানের’ শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ (২৪)। এমন অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

শাকিল মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের দক্ষিণ জামসা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

কী হয়েছিল?

পুলিশ ও পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, সাত-আট মাস আগে শাকিল ফেসবুকে একজনের একটি পোস্টে মন্তব্য করেছিলেন। সেখানে ‘মাহমুদুল’ লেখার সময় ভুল করে ‘মুহাম্মদ’ টাইপ করেন বলে দাবি করেন তিনি। ওই মন্তব্য ঘিরে তখনই বিতর্ক শুরু হয়।

পরবর্তীতে তিনি মন্তব্যটি মুছে দিয়ে ক্ষমা চেয়ে একটি পোস্ট দেন। তবে ৯ জুন, সোমবার পুরনো সেই স্ক্রিনশট আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ উঠে, মন্তব্যটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তিমূলক।

পরিবারের অভিযোগ, এরপর শতাধিক লোক তাদের বাড়িতে গিয়ে শাকিল ও তার পরিবারকে হুমকি দেয়।

আত্মহত্যার আগে ফেইসবুকে পোস্ট

সোমবার রাতেই ‘শাকিল চিত্রকর’ নামে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক পোস্ট দেন শাকিল।

একটিতে তিনি লেখেন:

> “আমি নাস্তিক নই। গ্রামের সবাই এখন আমাকে নাস্তিক বলছে। আমি আর আমার আল্লাহ জানে, আমি নবী মুহাম্মদ (সা.)–কে কোনো কটূক্তি করিনি। আজ আমি আমার আপন মানুষের কাছেই অসম্মানিত। আমি বেঁচে থেকে বাবামায়ের সম্মানহানি করতে পারব না।”

আরেক পোস্টে তিনি লেখেন:

> “আত্মহত্যা মহাপাপ, এটা আমি জানি। কিন্তু আজ আমি আর পারছি না। ভুল হয়েছে, আমি তওবা করেছি। কিন্তু এখন আমার কোনো পথ নেই।”

এর আগে আরও কয়েকটি পোস্টে তিনি বলেন, বিষয়টি ছিল টাইপিং ভুল এবং তা ইচ্ছাকৃত নয়।

পুলিশ কী বলছে?

সিংগাইর থানার ওসি তৌফিক আজম জানান,

> “সে আত্মহত্যার আগে ফেইসবুকে একটি নোট পোস্ট করে নিজের ভুল স্বীকার করে। পরে রাতে আত্মহত্যা করে। আমরা তার মরদেহ উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।”

হেনস্তার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন,

> “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গ্রামে কী ঘটেছিল?

স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন,

> “পুরনো একটি মন্তব্য সামনে আসায় এলাকার গণ্যমান্যরা শাকিলের বাড়িতে গিয়েছিল। শুনেছি, বিষয়টি তখনই সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু পরে সে লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে।”

তবে শাকিলের খালাতো বোন মুক্তা বলেন,

> “সোমবার রাতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লোক এসে আমাদের বাড়িতে ভিড় করে এবং হুমকি দেয়। আমরা ভয়ে ছিলাম। পরে রাতে শাকিল আত্মহত্যা করে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন,

> “ঘটনার কথা শুনেছি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, শাকিল বছর দুয়েক আগে পাস করে বের হয়ে গেছে। তারপরও বিষয়টি সহকর্মীদের খতিয়ে দেখতে বলেছি।”

---