হুমকিতে জনস্বাস্থ্য, রাজস্ব ক্ষতি
চাঁদপুরে অবাধে চলছে বিএসটিআই’র সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স ব্যতিত পণ্য উৎপাদন। এতে পণ্যের গুণগণমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রাহকরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের তেমন কোন তদারকি নেই।
বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি চাঁদপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা বলেন, লাইসেন্সের মেয়াদ-উত্তীর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ব্যবসায়ী চালিয়ে যাচ্ছেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য উৎপাদন, মোড়কজাতকরণ ও বিপণনের কাজ। কেউ আবার মোড়কজাত ছাড়াই বাজারে পণ্য বিকিকিনি করছেন। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকও ঠকানো হচ্ছে।
শনিবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিনে কথা হয় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারের হলুদপট্টির চন্দন অয়েল এ্যান্ড আটা মিলের জোড়া কবুতর ব্র্যান্ডের বি গ্রেডের সরিষার তেল উৎপাদন মোড়কজাত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মদন সাহা জানান, প্রায় ৪০ বছরের পুরনো তাদের এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির বিএসটিআই সিএম লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে ২০১৭ সালে। জরিমানা দেয়ার আতঙ্কে আছি। বিএসটিআই কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের আগের অফিসার বদলি হয়ে যাওয়ায় লাইসেন্স নবায়ন করতে পারিনি। দ্রুতই এ কাজটি সেরে নেব’।
এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, চাঁদপুর সদরের নিউ চাঁদ ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির দুটি লাইসেন্স, এমকেএস ব্রিকস, চাঁদপুর পুরান বাজারের সাইফুল ফুড প্রোডাক্টসের তিনটি লাইসেন্স, এমডি মুসলিম অ্যান্ড বেকারির তিনটি লাইসেন্স, জনতা ব্রিকস, অনন্যা ব্রেড অ্যান্ড কনফেকশনারির তিনটি লাইসেন্স ও মহানাম করপোরেশনের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের জুন মাসে। হাজীগঞ্জ উপজেলায় মাদ্দাখাঁ বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারির তিনটি লাইসেন্স, এম বিএফ ব্রিকস, মনি ফুড প্রোডাক্টসের তিনটি লাইসেন্স, ইমাম ব্রিকস, মিম বেকারির তিনটি লাইসেন্স, রোকসানা ফুড প্রোডাক্টস, রাসেল প্রোডাক্টস, ন্যাচারাল কেয়ার বিডি, মিম বেকারির তিনটি লাইসেন্স, মাম ফুড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি, মামনি সুইটস অ্যান্ড কনফেকশনারির তিনটি লাইসেন্স, মতলব উত্তর উপজেলার হালিমা ব্রিকস, কচুয়া উপজেলার পলাশপুরের কেএফএল হেয়ার অয়েল কোম্পানি, ফরিদগঞ্জের একতা ব্রিকসসহ সংশ্লিষ্ট বহু প্রতিষ্ঠানের কারোরি লাইসেন্স রিনিউ করার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি নিয়ম মতে বাধ্যতামূলকভাবে পণ্য অথবা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত পণ্য উভয় ক্ষেত্রে একজন উৎপাদনকারী, মোড়কজাতকারী ও আমদানিকারককে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে তাদের পণ্যের অনুকূলে বিএসটিআই সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স গ্রহণ করতে আবেদন করতে হয়।
জানা যায়, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকই নিয়মকানুন জানা না থাকায় এটি করতে ভোগান্তির অজুহাত তুলে বিএসটিআই-সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই লাইসেন্স পাওয়ার যাবতীয় কাজ করে নেন। এতে করে পরে মোটাদাগে অর্থ লেনদেন হওয়ায় পরবর্তীতে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও এটি আর নবায়ন করতে ব্যবসায়ী-কর্মকর্তা কেউই তৎপরতা দেখান না। যাতে করে সরকার চরমভাবে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, চাঁদপুরের প্রায় ৩৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিএসটিআই’র সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্সের মেয়াদ প্রায় ১০ মাস পর্বেই উত্তীর্ণ হয়েছে। তবুও লাইসেন্স নবায়ন করতে মালিকপক্ষ কিংবা বিএসটিআই কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও তদারকি করছেন না ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে লাইসেন্সবিহীন ও লাইসেন্স নবায়ন না করেই কয়েকজন বেকারি মালিক রমজানের ঈদকে সামনে রেখে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাইসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে ব্যস্ত রয়েছেন। এতে করে ভেজাল ও মানহীন পণ্য বাজারে ছেড়ে মানুষকে নানাভাবে প্রতারিত করা হচ্ছে।
বিএসটিআই কুমিল্লা অফিসের পরিদর্শক (সিএম) শাহেদুল ইসলাম জানান, কিছুদিন পূর্বেও চাঁদপুরে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত এবং বিএসটিআই চাঁদপুর-কুমিল্লা অফিসের সমন্বয়ে এরই মধ্যে চাঁদপুরে মিম বেকারি ও লাচ্ছা সেমাই ফ্যাক্টরিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। গুণগত মানসনদ না থাকায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। উৎপাদিত বিস্কুট ও সেমাই ধ্বংস করা হয়েছে। আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখতে অভিযানে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিএসটিআই কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (রসায়ন) খোদেজা খাতুন লাইসেন্স নবায়নের প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তা দ্রুতই যাচাই করে আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে’। এ ব্যপারে চাঁদপুর জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনতাসির মাহমুদ বলেন, আমরা খুব দ্রুতই নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ মোতাবেক বাজার মনিটরিং শুরু করব এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যবস্থা নেব।
হুমকিতে জনস্বাস্থ্য, রাজস্ব ক্ষতি
শনিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২১
চাঁদপুরে অবাধে চলছে বিএসটিআই’র সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স ব্যতিত পণ্য উৎপাদন। এতে পণ্যের গুণগণমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রাহকরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের তেমন কোন তদারকি নেই।
বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি চাঁদপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা বলেন, লাইসেন্সের মেয়াদ-উত্তীর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ব্যবসায়ী চালিয়ে যাচ্ছেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য উৎপাদন, মোড়কজাতকরণ ও বিপণনের কাজ। কেউ আবার মোড়কজাত ছাড়াই বাজারে পণ্য বিকিকিনি করছেন। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকও ঠকানো হচ্ছে।
শনিবার (৩ এপ্রিল) সরেজমিনে কথা হয় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারের হলুদপট্টির চন্দন অয়েল এ্যান্ড আটা মিলের জোড়া কবুতর ব্র্যান্ডের বি গ্রেডের সরিষার তেল উৎপাদন মোড়কজাত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মদন সাহা জানান, প্রায় ৪০ বছরের পুরনো তাদের এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির বিএসটিআই সিএম লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে ২০১৭ সালে। জরিমানা দেয়ার আতঙ্কে আছি। বিএসটিআই কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের আগের অফিসার বদলি হয়ে যাওয়ায় লাইসেন্স নবায়ন করতে পারিনি। দ্রুতই এ কাজটি সেরে নেব’।
এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, চাঁদপুর সদরের নিউ চাঁদ ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির দুটি লাইসেন্স, এমকেএস ব্রিকস, চাঁদপুর পুরান বাজারের সাইফুল ফুড প্রোডাক্টসের তিনটি লাইসেন্স, এমডি মুসলিম অ্যান্ড বেকারির তিনটি লাইসেন্স, জনতা ব্রিকস, অনন্যা ব্রেড অ্যান্ড কনফেকশনারির তিনটি লাইসেন্স ও মহানাম করপোরেশনের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের জুন মাসে। হাজীগঞ্জ উপজেলায় মাদ্দাখাঁ বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারির তিনটি লাইসেন্স, এম বিএফ ব্রিকস, মনি ফুড প্রোডাক্টসের তিনটি লাইসেন্স, ইমাম ব্রিকস, মিম বেকারির তিনটি লাইসেন্স, রোকসানা ফুড প্রোডাক্টস, রাসেল প্রোডাক্টস, ন্যাচারাল কেয়ার বিডি, মিম বেকারির তিনটি লাইসেন্স, মাম ফুড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি, মামনি সুইটস অ্যান্ড কনফেকশনারির তিনটি লাইসেন্স, মতলব উত্তর উপজেলার হালিমা ব্রিকস, কচুয়া উপজেলার পলাশপুরের কেএফএল হেয়ার অয়েল কোম্পানি, ফরিদগঞ্জের একতা ব্রিকসসহ সংশ্লিষ্ট বহু প্রতিষ্ঠানের কারোরি লাইসেন্স রিনিউ করার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি নিয়ম মতে বাধ্যতামূলকভাবে পণ্য অথবা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত পণ্য উভয় ক্ষেত্রে একজন উৎপাদনকারী, মোড়কজাতকারী ও আমদানিকারককে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে তাদের পণ্যের অনুকূলে বিএসটিআই সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স গ্রহণ করতে আবেদন করতে হয়।
জানা যায়, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকই নিয়মকানুন জানা না থাকায় এটি করতে ভোগান্তির অজুহাত তুলে বিএসটিআই-সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই লাইসেন্স পাওয়ার যাবতীয় কাজ করে নেন। এতে করে পরে মোটাদাগে অর্থ লেনদেন হওয়ায় পরবর্তীতে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও এটি আর নবায়ন করতে ব্যবসায়ী-কর্মকর্তা কেউই তৎপরতা দেখান না। যাতে করে সরকার চরমভাবে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, চাঁদপুরের প্রায় ৩৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিএসটিআই’র সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্সের মেয়াদ প্রায় ১০ মাস পর্বেই উত্তীর্ণ হয়েছে। তবুও লাইসেন্স নবায়ন করতে মালিকপক্ষ কিংবা বিএসটিআই কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও তদারকি করছেন না ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে লাইসেন্সবিহীন ও লাইসেন্স নবায়ন না করেই কয়েকজন বেকারি মালিক রমজানের ঈদকে সামনে রেখে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাইসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে ব্যস্ত রয়েছেন। এতে করে ভেজাল ও মানহীন পণ্য বাজারে ছেড়ে মানুষকে নানাভাবে প্রতারিত করা হচ্ছে।
বিএসটিআই কুমিল্লা অফিসের পরিদর্শক (সিএম) শাহেদুল ইসলাম জানান, কিছুদিন পূর্বেও চাঁদপুরে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত এবং বিএসটিআই চাঁদপুর-কুমিল্লা অফিসের সমন্বয়ে এরই মধ্যে চাঁদপুরে মিম বেকারি ও লাচ্ছা সেমাই ফ্যাক্টরিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। গুণগত মানসনদ না থাকায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। উৎপাদিত বিস্কুট ও সেমাই ধ্বংস করা হয়েছে। আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখতে অভিযানে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিএসটিআই কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (রসায়ন) খোদেজা খাতুন লাইসেন্স নবায়নের প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তা দ্রুতই যাচাই করে আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে’। এ ব্যপারে চাঁদপুর জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনতাসির মাহমুদ বলেন, আমরা খুব দ্রুতই নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ মোতাবেক বাজার মনিটরিং শুরু করব এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যবস্থা নেব।