alt

অর্থ-বাণিজ্য

মাংস আমদানি কোনো সমাধান নয়

শাফিউল ইমরান : বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩

অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে হিমায়িত মহিষের মাংস। দাম ২৫০-৩০০ টাকা। ফেইসবুকে এ রকম মাংস বিক্রির চটকদার বিজ্ঞাপন শোভা পাচ্ছে। তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসলো বেশ কয়েকটি ফেইসবুক পেজ। এ রকমই একটি পেজ ‘আমজাদ বাজার অনলাইন শপ’। হিমায়িত মাংসের একটি ভিডিও দিয়ে তারা লিখেছে, ‘সিদ্ধ করা ফ্রোজেন মহিষের মাংস ঢাকা সিটিতে হোম ডেলিভারি এবং সারা বাংলাদেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হয়।’ তাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে পরিচয় গোপন করে কথা বলে জানা যায়, আগে ভারত থেকে কাঁচা মহিষের মাংস আসতো, কিন্ত সেই সুযোগ না থাকায় মাংসে লবণ ও হলুদ মিশিয়ে সিদ্ধ করে ছোট ছাট টুকরো করে আনা হচ্ছে। এগুলো দেশে এনে কোল্ড স্টোরে রেখে বিভিন্ন হোটেলে বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিক্রি হচ্ছে এমন মহিষের সিদ্ধ মাংস। দাম কম থাকার কারণে হোটেল মালিকরা উৎসাহিত হচ্ছে এই মাংস কিনতে। অন্যদিকে, কাঁচা মাংস আমদানি করতে না পেরে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সিদ্ধ মাংস আমদানির এমন কৌশল নিয়েছে। তবে, এবার হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানির অনুমতির জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই)। ভারত থেকে আগামী তিন মাসে ৫০ লাখ টন মহিষের মাংস আমদানির অনুমতি চেয়েছে তারা। হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানির অনুমতি দিলে দেশে মাংসের দাম কমবে বলে দাবি তাদের।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত মাংসে বেশি পরিমাণে লবণ এবং কিছু রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়। এসব কারণে শরীরে নানা রোগব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হিমায়িত মাংস আমদানিতে বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। বরং গত প্রায় অর্ধযুগ ধরে দেশে প্রাণিসম্পদ খাতে যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে তাতে ‘নেতিবাচক প্রভাব পড়বে’। মাংস আমদানি করে দাম কমানোতে স্থায়ী সমাধান আসবে না বলে মনে করেন প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্টরা। গরুর মাংস আমদানি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক খামারিরা। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধস নামার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়বে। এজন্য যৌক্তিক দর নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন মনে করেন, আমদানি ছাড়াও দেশীয় গবাদিপশু দিয়েও ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস খাওয়ানো সম্ভব।

বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মাংসের পুষ্টিগুণ নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রক্রিয়াজাত মাংসে বেশি পরিমাণ লবণ এবং রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর কারণে এসব খেলে নানা রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’

একটি সূত্র জানিয়েছে, গরুর মাংস ‘উদ্বৃত্ত’ থাকার পরও দেশে হিমায়িত মহিষের মাংস টনে টনে বৈধ-অবৈধ পথে আসছিল। স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রান্তিক খামারিদের কথা চিন্তা করে সরকার গত বছর থেকে হিমায়িত মাংস আমদানিতে কঠোর হয়। এখন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া মহিষের মাংস আমদানি করা যাচ্ছে না। আর অধিদপ্তর গত দেড় বছর কাউকে অনুমতিও দেয়নি। তবে, সেদ্ধ মাংস আমদানি করা ছাড়াও একটি চক্র আমদানির অনুমতি নিতে নিয়মিত দৌড়ঝাঁপ করছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সহায়তা ও পরামর্শ নিয়ে মাংস আমদানির অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে তদবির চলছে। ইতোমধ্যে তারা মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতিকে দিয়ে মাংস আমদানির পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বিগত কয়েক বছর ধরে হিমায়িত এই মাংস আমদানিতে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক চট্টগ্রামে কর্মরত থাকা অবস্থায় কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ফাইটোস্যানিটেশন সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে আমদানিকারকদের মাংস আমদানির সুযোগ করে দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তার পদে (চট্টগ্রাম ডিএলও) আসা ডা. দেলোয়ার হোসেনও একই পথে হেঁটে ওএসডি হন বলে জানা যায়। যদিও ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বাংলাদেশ মিট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমআইটিএ) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্রোজেন মিটের প্রধান গ্রাহক প্রান্তিক শ্রেণীর ক্রেতারা। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট ফ্রোজেন মিটগুলোর ক্রেতা। গার্মেন্টে এক সময় সপ্তাহে দুই দিন আমদানি মাংস খাওয়ানো হতো। অথচ এখন আমদানি বন্ধ থাকার ফলে দাম যেমন বাড়ছে, আবার দেশের পুষ্টি নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে চাহিদার চেয়ে মাংস উৎপাদন প্রায় ১১ লাখ মেট্রিকটন বেশি রয়েছে। প্রতিজনের দৈনিক ১২০ গ্রাম গোশতের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে ১৩৭ দশমিক ৩৮ গ্রাম খাচ্ছে মানুষ। দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৩৭ লাখ ধরে এই হিসাব দিয়েছে সরকারি এই সংস্থাটি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, প্রতিজনের চাহিদা ১২০ গ্রাম ধরে দেশে এই মুহূর্তে গোশতের চাহিদা (গরুসহ অন্যান্য গবাদিপশু) ৭৬ লাখ আট হাজার মেট্রিকটন। উৎপাদন হচ্ছে ৮৭ লাখ ১০ হাজার টন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. এ বি এম খালেদুজ্জামান জানান, অনেক উন্নত দেশে দৈনিক জনপ্রতি ২০০ গ্রাম মাংস খায়। আমরা এখন ১২০ গ্রাম ধরছি। ২০৩০ সালে হয়তো ১৫০ গ্রাম ধরব। ২০৪১ সালে হয়তো আরও বাড়বে। ন্যূনতম ১২০ গ্রাম চাহিদা ধরে বার্ষিক উৎপাদন বেশি আছে। আমরা মাংস উৎপাদনে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। হিমায়িত মাংস আমদানি নিরুৎসাহিত করি আমরা।

খামারিরা বলছেন, প্রসেস ফিডের ইনগ্রেডিয়েন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানির নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে স্থানীয়ভাবে উন্নতজাতের ঘাস চাষ ও সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব।

গ্লোবাল প্রোডাক্ট প্রাইজ নামের একটি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘দাম বৃদ্ধির দিক থেকে ৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪তম। দেশের বাজারে গরুর গোশতের সঙ্কট নেই। তবে গত এক বছরে পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। এছাড়া সার্বিক উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বেশি মাংস উৎপাদনকারী উন্নত প্রজাতির গরু না থাকায় বাজারে গরুর মাংসের দাম কমছে না।’

তবে খামারিরা গত জুলাই থেকে বাজারের চেয়ে ৫০ টাকা কমে মাংস বিক্রি করছেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘খামারিদের সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যে বৈঠক হয়েছিল তারপর থেকে খামারিরা বাজারের চেয়ে ৫০ টাকা কমে মাংস বিক্রি করছে। বিডিএফএ-এর পক্ষ থেকে আমরা ঢাকার বড় মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তারাও ৭০০ টাকায় মাংস বিক্রি করতে চান। সেজন্য তারা সরকারকে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছন। আমি মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে গিয়েছি। কেউ গরুর মাংসের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে এখনও উদ্যোগ নেয়নি।’

বাংলাদেশে এর আগে কখনই কোনো ব্যবসায়ী দাম কমিয়ে মূল্য নির্ধারণের দাবি জানায়নি। তিনি বলেন, ‘চাহিদা কম থাকায় খামার পর্যায়ে গরুর দাম এখন অনেক কম।’

ছবি

ভোট শেষে ফল গণনার প্রস্তুতি, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনটি প্যানেল

ছবি

ভালো বাজেটের আহ্বান, বিনিয়োগ ও সুশাসনের ওপর জোর বিশেষজ্ঞদের

সূচকের বড় পতন, বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার

পোশাক খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মশালা

ছবি

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে কমিটি

গুরুত্বপূর্ণ খাতে বাজেট কাটছাঁট না করার সুপারিশ

ছবি

বিদেশি ঋণ পরিশোধ ১০ মাসেই সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

ছবি

দেশের বাজারে অনার ৪০০ সিরিজ উন্মোচিত

ছবি

কোরবানি ব্যবস্থাপনায় প্রোটিন মার্কেটের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

ছবি

বিজিএমইএ: নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে চলছে ভোট, এবার কমেছে ভোটার

ছবি

ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

২৫ হাজার ৫৫০ টাকায় ব্র্যান্ড নিউ ওয়ালটন ল্যাপটপ

নতুন করে ৫২ প্রতিষ্ঠানকে সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি

‘পোশাক খাতের বিকল্প হতে পারে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং’

স্থানীয় প্রকল্পের পাওনা ডলারে পরিশোধ করা যাবে

ছবি

১০ মাসে ৩৫০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ

ছবি

ঢাকায় ক্যানন বিজনেস সেন্টার উদ্বোধন

ছবি

এনবিআর চেয়ারম্যানকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা, আন্দোলনকারীদের অসহযোগ অব্যাহত

ছবি

সিনহা হত্যা: প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসি বহাল রাখার আর্জি রাষ্ট্রের, খালাস চান আসামিপক্ষ

প্রস্তাবিত টেলিকম নেটওয়ার্ক নীতিমালায়

বাংলাদেশের সঙ্গে কাঠামোগত সম্পৃক্ততার ওপর আর্জেন্টিনা রাষ্ট্রদূতের গুরুত্বারোপ

ব্যাংক আল-ফালাহ অধিগ্রহণ করবে ব্যাংক এশিয়া

বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে পুনরুদ্ধারের পথে: এমসিসিআই

ছবি

সারাদেশে জুয়েলারি দোকান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও গণমুখী বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

অনলাইন জুয়া বন্ধে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য নির্দেশনা জারি

ছবি

১ জুন বাজারে আসছে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট

বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আরও গভীর কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক চায়

ছবি

বাজেটে এলএনজির ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে, কমতে পারে গ্যাসের দাম

ছবি

২০০৮ সালের পর আবার সংসদের বাইরে বাজেট, ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

ঢাকায় শুরু হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ খাত সম্পর্কিত প্রদর্শনী

ছবি

১ জুন বাজারে আসছে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট

সারাদেশে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট চলছে

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ পাঁচ দেশে আনুষ্ঠানিক আম রপ্তানি শুরু

এমএফএসের মাধ্যমে ২০২২ সালে ৭৫,০০০ কোটি টাকা পাচার: টিআইবি

আরও ৬২ পয়েন্ট সূচক হারালো পুঁজিবাজার

tab

অর্থ-বাণিজ্য

মাংস আমদানি কোনো সমাধান নয়

শাফিউল ইমরান

বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩

অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে হিমায়িত মহিষের মাংস। দাম ২৫০-৩০০ টাকা। ফেইসবুকে এ রকম মাংস বিক্রির চটকদার বিজ্ঞাপন শোভা পাচ্ছে। তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসলো বেশ কয়েকটি ফেইসবুক পেজ। এ রকমই একটি পেজ ‘আমজাদ বাজার অনলাইন শপ’। হিমায়িত মাংসের একটি ভিডিও দিয়ে তারা লিখেছে, ‘সিদ্ধ করা ফ্রোজেন মহিষের মাংস ঢাকা সিটিতে হোম ডেলিভারি এবং সারা বাংলাদেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হয়।’ তাদের দেয়া মোবাইল নম্বরে পরিচয় গোপন করে কথা বলে জানা যায়, আগে ভারত থেকে কাঁচা মহিষের মাংস আসতো, কিন্ত সেই সুযোগ না থাকায় মাংসে লবণ ও হলুদ মিশিয়ে সিদ্ধ করে ছোট ছাট টুকরো করে আনা হচ্ছে। এগুলো দেশে এনে কোল্ড স্টোরে রেখে বিভিন্ন হোটেলে বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিক্রি হচ্ছে এমন মহিষের সিদ্ধ মাংস। দাম কম থাকার কারণে হোটেল মালিকরা উৎসাহিত হচ্ছে এই মাংস কিনতে। অন্যদিকে, কাঁচা মাংস আমদানি করতে না পেরে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সিদ্ধ মাংস আমদানির এমন কৌশল নিয়েছে। তবে, এবার হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানির অনুমতির জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই)। ভারত থেকে আগামী তিন মাসে ৫০ লাখ টন মহিষের মাংস আমদানির অনুমতি চেয়েছে তারা। হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানির অনুমতি দিলে দেশে মাংসের দাম কমবে বলে দাবি তাদের।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত মাংসে বেশি পরিমাণে লবণ এবং কিছু রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়। এসব কারণে শরীরে নানা রোগব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হিমায়িত মাংস আমদানিতে বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। বরং গত প্রায় অর্ধযুগ ধরে দেশে প্রাণিসম্পদ খাতে যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে তাতে ‘নেতিবাচক প্রভাব পড়বে’। মাংস আমদানি করে দাম কমানোতে স্থায়ী সমাধান আসবে না বলে মনে করেন প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্টরা। গরুর মাংস আমদানি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক খামারিরা। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধস নামার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়বে। এজন্য যৌক্তিক দর নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন মনে করেন, আমদানি ছাড়াও দেশীয় গবাদিপশু দিয়েও ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস খাওয়ানো সম্ভব।

বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মাংসের পুষ্টিগুণ নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রক্রিয়াজাত মাংসে বেশি পরিমাণ লবণ এবং রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর কারণে এসব খেলে নানা রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’

একটি সূত্র জানিয়েছে, গরুর মাংস ‘উদ্বৃত্ত’ থাকার পরও দেশে হিমায়িত মহিষের মাংস টনে টনে বৈধ-অবৈধ পথে আসছিল। স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রান্তিক খামারিদের কথা চিন্তা করে সরকার গত বছর থেকে হিমায়িত মাংস আমদানিতে কঠোর হয়। এখন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া মহিষের মাংস আমদানি করা যাচ্ছে না। আর অধিদপ্তর গত দেড় বছর কাউকে অনুমতিও দেয়নি। তবে, সেদ্ধ মাংস আমদানি করা ছাড়াও একটি চক্র আমদানির অনুমতি নিতে নিয়মিত দৌড়ঝাঁপ করছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সহায়তা ও পরামর্শ নিয়ে মাংস আমদানির অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে তদবির চলছে। ইতোমধ্যে তারা মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতিকে দিয়ে মাংস আমদানির পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বিগত কয়েক বছর ধরে হিমায়িত এই মাংস আমদানিতে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক চট্টগ্রামে কর্মরত থাকা অবস্থায় কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ফাইটোস্যানিটেশন সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে আমদানিকারকদের মাংস আমদানির সুযোগ করে দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তার পদে (চট্টগ্রাম ডিএলও) আসা ডা. দেলোয়ার হোসেনও একই পথে হেঁটে ওএসডি হন বলে জানা যায়। যদিও ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বাংলাদেশ মিট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমআইটিএ) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্রোজেন মিটের প্রধান গ্রাহক প্রান্তিক শ্রেণীর ক্রেতারা। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট ফ্রোজেন মিটগুলোর ক্রেতা। গার্মেন্টে এক সময় সপ্তাহে দুই দিন আমদানি মাংস খাওয়ানো হতো। অথচ এখন আমদানি বন্ধ থাকার ফলে দাম যেমন বাড়ছে, আবার দেশের পুষ্টি নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে চাহিদার চেয়ে মাংস উৎপাদন প্রায় ১১ লাখ মেট্রিকটন বেশি রয়েছে। প্রতিজনের দৈনিক ১২০ গ্রাম গোশতের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে ১৩৭ দশমিক ৩৮ গ্রাম খাচ্ছে মানুষ। দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৩৭ লাখ ধরে এই হিসাব দিয়েছে সরকারি এই সংস্থাটি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, প্রতিজনের চাহিদা ১২০ গ্রাম ধরে দেশে এই মুহূর্তে গোশতের চাহিদা (গরুসহ অন্যান্য গবাদিপশু) ৭৬ লাখ আট হাজার মেট্রিকটন। উৎপাদন হচ্ছে ৮৭ লাখ ১০ হাজার টন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. এ বি এম খালেদুজ্জামান জানান, অনেক উন্নত দেশে দৈনিক জনপ্রতি ২০০ গ্রাম মাংস খায়। আমরা এখন ১২০ গ্রাম ধরছি। ২০৩০ সালে হয়তো ১৫০ গ্রাম ধরব। ২০৪১ সালে হয়তো আরও বাড়বে। ন্যূনতম ১২০ গ্রাম চাহিদা ধরে বার্ষিক উৎপাদন বেশি আছে। আমরা মাংস উৎপাদনে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। হিমায়িত মাংস আমদানি নিরুৎসাহিত করি আমরা।

খামারিরা বলছেন, প্রসেস ফিডের ইনগ্রেডিয়েন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানির নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে স্থানীয়ভাবে উন্নতজাতের ঘাস চাষ ও সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব।

গ্লোবাল প্রোডাক্ট প্রাইজ নামের একটি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘দাম বৃদ্ধির দিক থেকে ৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪তম। দেশের বাজারে গরুর গোশতের সঙ্কট নেই। তবে গত এক বছরে পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। এছাড়া সার্বিক উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বেশি মাংস উৎপাদনকারী উন্নত প্রজাতির গরু না থাকায় বাজারে গরুর মাংসের দাম কমছে না।’

তবে খামারিরা গত জুলাই থেকে বাজারের চেয়ে ৫০ টাকা কমে মাংস বিক্রি করছেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘খামারিদের সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যে বৈঠক হয়েছিল তারপর থেকে খামারিরা বাজারের চেয়ে ৫০ টাকা কমে মাংস বিক্রি করছে। বিডিএফএ-এর পক্ষ থেকে আমরা ঢাকার বড় মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তারাও ৭০০ টাকায় মাংস বিক্রি করতে চান। সেজন্য তারা সরকারকে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছন। আমি মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে গিয়েছি। কেউ গরুর মাংসের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে এখনও উদ্যোগ নেয়নি।’

বাংলাদেশে এর আগে কখনই কোনো ব্যবসায়ী দাম কমিয়ে মূল্য নির্ধারণের দাবি জানায়নি। তিনি বলেন, ‘চাহিদা কম থাকায় খামার পর্যায়ে গরুর দাম এখন অনেক কম।’

back to top