কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকা
ঈদের পর প্রায় ক্রেতাশূন্য ঢাকার বাজার। তবু কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম। ঢাকার বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ৪০০ টাকা কেজি। এছাড়া বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামসহ মাছের দামও। কোরবানি ঈদের পর হলেও স্বস্তি নেই মাংসের বাজারেও।
ঢাকার বাজারে ছোট জাতের দেশীয় কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজিতে। তবে হাইব্রিড মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েই চলেছে। ফলে ঈদের পর বাজারে এসে মরিচ কিনতে গিয়ে থমকে যাচ্ছেন ক্রেতারা। সরবরাহ কম থাকায় বাজারে একই সঙ্গে বেড়েছে আলু, শসা, গাজরসহ অন্যান্য সব ধরনের সবজির দামও। শুক্রবার (২১ জুন) রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার, খিলগাঁও কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজার, মধ্যবাড্ডা, ডিআইটি, উত্তরবাড্ডাসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় হু হু করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে। এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রামপুরা কাঁচাবাজারে দেশি জাতের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। হাইব্রিড জাতের মরিচ মিলছে ৩৮০-৩৯০ টাকায়।
এ বাজারের কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে জানা যায়, ঈদের আগে ২৮০-২৯০ টাকা করে মরিচ বিক্রি করেছেন তারা। এখন কেনাই পড়ছে ৩৬০ টাকা আর পরিবহন খরচসহ সেটা প্রায় ৩৮০-৩৮৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে। কাজেই ৪০০ টাকার নিচে তারা বেচবেন কীভাবে?
তাদের ভাষ্যমতে, সিন্ডিকেট করলে আড়তদাররা করেন, তারা তো করেন না। তারা কারওয়ান বাজার থেকে কেনেন, অল্প লাভে বিক্রি করেন। কিন্তু ক্রেতারা এসে বাড়তি দাম নিয়ে ঝামেলা করে তাদের সঙ্গে। একই কথা জানান মধ্যবাড্ডা বাজারের বিক্রেতারাও।
খুচরা বিক্রেতারা কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি দরে কাঁচা মরিচ কেনেন। সেখানকার আড়তদারদের মতে, ঈদের মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে মরিচ ঢাকায় না আসায় দামটা একটু বেশি বেড়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে কিছুটা কমে যাবে। ঈদের ছুটির মধ্যে ঢাকায় মাল (মরিচের) নিয়ে গাড়ি ঢোকেনি সেজন্যই চাহিদা অনুযায়ী মরিচ বাজারে নেই। সেই সুযোগে দাম একটু বাড়বেই। চাহিদার চেয়ে কম মাল থাকলে তার দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক, এখানে কারও দোষ নেই। কিছু সময় গেলে দাম কমে আসবে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, একে ঈদের সময় থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তায় যানজট, ট্রাকে করে পরিবহন করার ভাড়া অনেক বেশি, সে কারণে ঢাকায় কাঁচা মরিচ তুলনামূলক কম আসছে। এ ছাড়া মৌসুমের শেষ, ক্ষেতে একেবারে শেষ সময় চলছে মরিচের। অনেক ক্ষেতের মরিচ শেষ হয়ে গেছে, নতুন করে লাগানো গাছে এখনও মরিচ আসতে শুরু করেনি। এসব কারণে পাইকারি বাজারেই কাঁচা মরিচের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি যে সময় নতুন করে মরিচ লাগানোর সময় ছিল, সে সময়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে কৃষক সঠিক সময়ে কাঁচা মরিচ লাগাতে পারেনি। সে সময় যদি কাঁচা মরিচের গাছ লাগানো যেত তাহলে হয়তো ক্ষেতের নতুন মরিচ এতদিন বাজারে চলে আসতো। এখন বাজারে নতুন মরিচ আসতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। যতদিন পর্যন্ত নতুন মরিচ না আসছে, ততদিন পর্যন্ত সরবরাহ কম থাকায় কাঁচা মরিচের দাম এমন বাড়তিই থাকবে। এদিকে, ঈদের আগে থেকে বাজারে শসা, গাজরের দাম বাড়ছিল। ঈদের পরও সেগুলোর দাম আরও বেড়েছে। ঢাকার বাজারে প্রকারভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি, গাজরের দামও একই। ঈদে সালাদের চাহিদার কারণে শসা-গাজরের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লেবুও। বাজারে লেবুর হালি প্রকারভেদে ৫০-৬০ টাকা। আগামী সপ্তাহ থেকে শসা, গাজর ও লেবুর দাম কমে আসতে পারে বলে ধারণা বিক্রেতাদের।
বাজারে সবজির সরবরাহ কম। অথচ ঈদে টানা মাংস খেয়ে হাঁফিয়ে ওঠা মানুষ এ সপ্তাহে সবজি কিনছেন বেশি, ফলে সবজির বাজারও চড়া। প্রায় সব সবজির দামই ৫-১০ টাকা বেড়েছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮৫-১০০ টাকা কেজি পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ১০ টাকা বেশি। ঝিঙার কেজি ৭০ টাকা, করলা ৮৫-৯০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫৫-৬০ টাকা, পটলের কেজি ৬০-৬৫ টাকা, কচুরমুখি ১০০-১১০ টাকা, কচুরলতি ৬৫-৭০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির মধ্যে কাঁকরোল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৬০ টাকা এবং ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, আলুর দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকা কেজি দরে। ভালো মানের আলুর দাম কেউ কেউ ৭৫ টাকা কেজিও হাঁকছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আলুর দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।
তবে আদা ও রসুনের দাম ঈদের আগে হু হু করে বেড়েছিল। বর্তমানে তা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ঈদের আগে আদার দাম কেজিপ্রতি ৩৩০-৩৫০ টাকা উঠলেও তা কমে এখন ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দামও কেজিতে কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে রসুন বিক্রি হচ্ছিল ২৫০ টাকায়, যা বর্তমানে ২২০-২৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ৮৫-৯০ টাকা।
ঈদের আগে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও তা বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের আগে ও পরে ব্রয়লার মুরগির ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কিনতে হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি দরে। বাজারে দেশি মুরগি খুবই কম, দামও চড়া। দেশি মুরগির কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর বাজারে পর্যাপ্ত মুরগি নেই তাই দাম বেড়েছে। এছাড়া গরুর মাংসের বাজারেও একই অবস্থা।
মধ্যবাড্ডা বাজারের মুরগি বিক্রেতা আজাদ বলেন, ‘আজই প্রথম দোকান চালু করেছি। যে দরে এনেছি, সেই দরের সঙ্গে সীমিত লাভ করে বিক্রি করছি। বাজার বোঝার চেষ্টা করছি। দাম এখন তুলনামূলক কম। আগামী সপ্তাহ থেকে মুরগির চাহিদা বাড়বে, দামও বাড়বে।’
কোরবানির ঈদের পর গরুর মাংসের চাহিদা কম তবু দামে কোনো হেরফের নেই। ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। দর-দাম করলে বড়জোর ৫-১০ টাকা কম রাখছেন। মধ্যবাড্ডার মাংস বিক্রেতারা জানান, বিক্রি খুব কম কাজেই দামও যদি কমানো হয় তাহলে লোকসানে পড়ে যাবেন। তারা বলেন, আগে প্রতিদিন ৪-৫টা গরু জবাই হত, ঈদের পর তেমন ক্রেতা নেই তাই জবাইও তেমন হচ্ছে না। তবে ক্রেতাদের চাহিদা যদি বাড়ে তাহলে তারা আরও বেশি গরু জবাই দেবেন।
এছাড়া, বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
মহিদুল হক নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে বাসায় মেহমানরা আসেন, তাদের জন্য কিছু মুরগির মাংসের ব্যবস্থাও করতে হয়। অথচ বাজারে এসে দেখি মুরগির দাম বেশ বাড়তি। সাধারণত এই সময়টায় গরু-মুরগি সবকিছুর দামই কম থাকে। কিন্তু এবার কমেনি বরং বেড়েছে।’
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানি ঈদের পর সাধারণত বাজারে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কম থাকে, দামও থাকে পড়তির দিকে। কিন্তু এবার বাজারে সে চিত্র দেখা যায়নি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
ঈদে ডিমের চাহিদা তেমন না থাকলেও দাম কমেনি। বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৪০-১৪৪ টাকা। আর সাদা ডিমের ডজন ১৩৪-১৩৬ টাকা। ঈদে মানুষ ডিম কম খেলেও চলতি সপ্তাহ থেকে আবারও চাহিদা বাড়তে পারে বলে ধারণা বিক্রেতাদের। ফলে দামও কিছুটা বাড়তে পারে তারা জানান।
মুরগি ও মাংসের বাজারে কেনাবেচা কম হলেও মাছের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় অনেক। ঈদের পর মাছের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও কিছুটা বেশি। বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। এর চেয়ে বড় রুই কিনতে হলে ৩৫০-৩৮০ টাকা গুনতে হবে ক্রেতাকে। ইলিশের দাম বাড়তিই রয়েছে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা হাঁকছেন বিক্রেতারা। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা দরে।
এছাড়া মধ্যবাড্ডা, রামপুরা এবং ডিআইটি ফিশ মার্কেটে কাতল মাছের কেজি ৩২০-৩৩০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ১০০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, খুচরা বাজারে চালের দাম চলতি সপ্তাহেও স্থিতিশীল রয়েছে। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০-৮৫ টাকা, মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৭৫-৭৮ টাকা, আটাশ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা দরে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মোটা চাল প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, আগামী সপ্তাহে মোটা চালের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকা
শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪
ঈদের পর প্রায় ক্রেতাশূন্য ঢাকার বাজার। তবু কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম। ঢাকার বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ৪০০ টাকা কেজি। এছাড়া বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামসহ মাছের দামও। কোরবানি ঈদের পর হলেও স্বস্তি নেই মাংসের বাজারেও।
ঢাকার বাজারে ছোট জাতের দেশীয় কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজিতে। তবে হাইব্রিড মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েই চলেছে। ফলে ঈদের পর বাজারে এসে মরিচ কিনতে গিয়ে থমকে যাচ্ছেন ক্রেতারা। সরবরাহ কম থাকায় বাজারে একই সঙ্গে বেড়েছে আলু, শসা, গাজরসহ অন্যান্য সব ধরনের সবজির দামও। শুক্রবার (২১ জুন) রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার, খিলগাঁও কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজার, মধ্যবাড্ডা, ডিআইটি, উত্তরবাড্ডাসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় হু হু করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে। এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রামপুরা কাঁচাবাজারে দেশি জাতের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। হাইব্রিড জাতের মরিচ মিলছে ৩৮০-৩৯০ টাকায়।
এ বাজারের কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে জানা যায়, ঈদের আগে ২৮০-২৯০ টাকা করে মরিচ বিক্রি করেছেন তারা। এখন কেনাই পড়ছে ৩৬০ টাকা আর পরিবহন খরচসহ সেটা প্রায় ৩৮০-৩৮৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে। কাজেই ৪০০ টাকার নিচে তারা বেচবেন কীভাবে?
তাদের ভাষ্যমতে, সিন্ডিকেট করলে আড়তদাররা করেন, তারা তো করেন না। তারা কারওয়ান বাজার থেকে কেনেন, অল্প লাভে বিক্রি করেন। কিন্তু ক্রেতারা এসে বাড়তি দাম নিয়ে ঝামেলা করে তাদের সঙ্গে। একই কথা জানান মধ্যবাড্ডা বাজারের বিক্রেতারাও।
খুচরা বিক্রেতারা কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি দরে কাঁচা মরিচ কেনেন। সেখানকার আড়তদারদের মতে, ঈদের মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে মরিচ ঢাকায় না আসায় দামটা একটু বেশি বেড়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে কিছুটা কমে যাবে। ঈদের ছুটির মধ্যে ঢাকায় মাল (মরিচের) নিয়ে গাড়ি ঢোকেনি সেজন্যই চাহিদা অনুযায়ী মরিচ বাজারে নেই। সেই সুযোগে দাম একটু বাড়বেই। চাহিদার চেয়ে কম মাল থাকলে তার দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক, এখানে কারও দোষ নেই। কিছু সময় গেলে দাম কমে আসবে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, একে ঈদের সময় থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তায় যানজট, ট্রাকে করে পরিবহন করার ভাড়া অনেক বেশি, সে কারণে ঢাকায় কাঁচা মরিচ তুলনামূলক কম আসছে। এ ছাড়া মৌসুমের শেষ, ক্ষেতে একেবারে শেষ সময় চলছে মরিচের। অনেক ক্ষেতের মরিচ শেষ হয়ে গেছে, নতুন করে লাগানো গাছে এখনও মরিচ আসতে শুরু করেনি। এসব কারণে পাইকারি বাজারেই কাঁচা মরিচের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি যে সময় নতুন করে মরিচ লাগানোর সময় ছিল, সে সময়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে কৃষক সঠিক সময়ে কাঁচা মরিচ লাগাতে পারেনি। সে সময় যদি কাঁচা মরিচের গাছ লাগানো যেত তাহলে হয়তো ক্ষেতের নতুন মরিচ এতদিন বাজারে চলে আসতো। এখন বাজারে নতুন মরিচ আসতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। যতদিন পর্যন্ত নতুন মরিচ না আসছে, ততদিন পর্যন্ত সরবরাহ কম থাকায় কাঁচা মরিচের দাম এমন বাড়তিই থাকবে। এদিকে, ঈদের আগে থেকে বাজারে শসা, গাজরের দাম বাড়ছিল। ঈদের পরও সেগুলোর দাম আরও বেড়েছে। ঢাকার বাজারে প্রকারভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি, গাজরের দামও একই। ঈদে সালাদের চাহিদার কারণে শসা-গাজরের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লেবুও। বাজারে লেবুর হালি প্রকারভেদে ৫০-৬০ টাকা। আগামী সপ্তাহ থেকে শসা, গাজর ও লেবুর দাম কমে আসতে পারে বলে ধারণা বিক্রেতাদের।
বাজারে সবজির সরবরাহ কম। অথচ ঈদে টানা মাংস খেয়ে হাঁফিয়ে ওঠা মানুষ এ সপ্তাহে সবজি কিনছেন বেশি, ফলে সবজির বাজারও চড়া। প্রায় সব সবজির দামই ৫-১০ টাকা বেড়েছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮৫-১০০ টাকা কেজি পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ১০ টাকা বেশি। ঝিঙার কেজি ৭০ টাকা, করলা ৮৫-৯০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫৫-৬০ টাকা, পটলের কেজি ৬০-৬৫ টাকা, কচুরমুখি ১০০-১১০ টাকা, কচুরলতি ৬৫-৭০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজির মধ্যে কাঁকরোল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৬০ টাকা এবং ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, আলুর দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকা কেজি দরে। ভালো মানের আলুর দাম কেউ কেউ ৭৫ টাকা কেজিও হাঁকছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আলুর দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।
তবে আদা ও রসুনের দাম ঈদের আগে হু হু করে বেড়েছিল। বর্তমানে তা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ঈদের আগে আদার দাম কেজিপ্রতি ৩৩০-৩৫০ টাকা উঠলেও তা কমে এখন ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দামও কেজিতে কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে রসুন বিক্রি হচ্ছিল ২৫০ টাকায়, যা বর্তমানে ২২০-২৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ৮৫-৯০ টাকা।
ঈদের আগে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও তা বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের আগে ও পরে ব্রয়লার মুরগির ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কিনতে হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি দরে। বাজারে দেশি মুরগি খুবই কম, দামও চড়া। দেশি মুরগির কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর বাজারে পর্যাপ্ত মুরগি নেই তাই দাম বেড়েছে। এছাড়া গরুর মাংসের বাজারেও একই অবস্থা।
মধ্যবাড্ডা বাজারের মুরগি বিক্রেতা আজাদ বলেন, ‘আজই প্রথম দোকান চালু করেছি। যে দরে এনেছি, সেই দরের সঙ্গে সীমিত লাভ করে বিক্রি করছি। বাজার বোঝার চেষ্টা করছি। দাম এখন তুলনামূলক কম। আগামী সপ্তাহ থেকে মুরগির চাহিদা বাড়বে, দামও বাড়বে।’
কোরবানির ঈদের পর গরুর মাংসের চাহিদা কম তবু দামে কোনো হেরফের নেই। ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। দর-দাম করলে বড়জোর ৫-১০ টাকা কম রাখছেন। মধ্যবাড্ডার মাংস বিক্রেতারা জানান, বিক্রি খুব কম কাজেই দামও যদি কমানো হয় তাহলে লোকসানে পড়ে যাবেন। তারা বলেন, আগে প্রতিদিন ৪-৫টা গরু জবাই হত, ঈদের পর তেমন ক্রেতা নেই তাই জবাইও তেমন হচ্ছে না। তবে ক্রেতাদের চাহিদা যদি বাড়ে তাহলে তারা আরও বেশি গরু জবাই দেবেন।
এছাড়া, বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
মহিদুল হক নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে বাসায় মেহমানরা আসেন, তাদের জন্য কিছু মুরগির মাংসের ব্যবস্থাও করতে হয়। অথচ বাজারে এসে দেখি মুরগির দাম বেশ বাড়তি। সাধারণত এই সময়টায় গরু-মুরগি সবকিছুর দামই কম থাকে। কিন্তু এবার কমেনি বরং বেড়েছে।’
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানি ঈদের পর সাধারণত বাজারে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কম থাকে, দামও থাকে পড়তির দিকে। কিন্তু এবার বাজারে সে চিত্র দেখা যায়নি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
ঈদে ডিমের চাহিদা তেমন না থাকলেও দাম কমেনি। বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৪০-১৪৪ টাকা। আর সাদা ডিমের ডজন ১৩৪-১৩৬ টাকা। ঈদে মানুষ ডিম কম খেলেও চলতি সপ্তাহ থেকে আবারও চাহিদা বাড়তে পারে বলে ধারণা বিক্রেতাদের। ফলে দামও কিছুটা বাড়তে পারে তারা জানান।
মুরগি ও মাংসের বাজারে কেনাবেচা কম হলেও মাছের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় অনেক। ঈদের পর মাছের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও কিছুটা বেশি। বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। এর চেয়ে বড় রুই কিনতে হলে ৩৫০-৩৮০ টাকা গুনতে হবে ক্রেতাকে। ইলিশের দাম বাড়তিই রয়েছে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা হাঁকছেন বিক্রেতারা। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা দরে।
এছাড়া মধ্যবাড্ডা, রামপুরা এবং ডিআইটি ফিশ মার্কেটে কাতল মাছের কেজি ৩২০-৩৩০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ১০০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, খুচরা বাজারে চালের দাম চলতি সপ্তাহেও স্থিতিশীল রয়েছে। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০-৮৫ টাকা, মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৭৫-৭৮ টাকা, আটাশ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা দরে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মোটা চাল প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, আগামী সপ্তাহে মোটা চালের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।