গ্যাস অনুসন্ধান না করার ‘খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ’: বদরুল ইমাম
মেগাপ্রকল্পগুলো নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত চায় ক্যাব
গ্যাস বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ যে নীতিতে দেশের জ্বালানি খাত চলছে, তা সঠিক নয় বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
রোববার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।
এ খাতে দুর্নীতি বন্ধ ও মেগাপ্রকল্পগুলো নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে সংলাপে জানায় কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘জ্বালানিকে আমি অনেকটা মানবদেহে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব না।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের কিছু পদক্ষেপ জনমানুষের কল্যাণে হচ্ছে না বলে আমাদের ধারনা। সরকার কি কারণে বিইআরসিকে অকার্যকর করলেন, আমার বোধগম্য হয় না। আমরা আশাকরি সরকার এই পথ থেকে সরে আসবেন। জ্বালানি মিক্সের সঙ্গে পরিবেশের যোগাযোগ রয়েছে। পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।’
গ্যাস অনুসন্ধান না করার ‘খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ’
দশ বছর ধরে গ্যাস অনুসন্ধান না করে আমদানির পথে হেঁটে বাংলাদেশকে এখন জ্বালানি খাতে খেসারত দিতে হচ্ছে বলে সংলাপে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘সরকারকে বারবার বলা হয়েছে দেশের ভূ-গভীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস আছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কর্ণপাত না করে এলপিজি আমদানির পথে হেঁটেছে। এতে করে জ্বালানি খাতে এক দশক পিছিয়ে গেছে দেশ।’
বাংলাদেশকে গ্যাসের প্রাইম এরিয়া উল্লেখ করে বদরুল ইমাম বলেন, চাইলে বাংলাদেশ নাইজেরিয়া বা আমেরিকার মতো গ্যাস খাতে সমৃদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু ‘সদিচ্ছা ও দূরদর্শিতার অভাবে’ বাংলাদেশের অগ্রগতি এ খাতে ঝিমিয়ে পড়েছে।
ভারতের উদহারণ টেনে এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভারতের রাজস্থানে শেভরন কোম্পানি মোট ১৩টি কূপ খনন করে কোনো গ্যাস পায়নি। সবাই তখন বলেছিল, এখানে আর কূপ খনন করে লাভ নেই। অথচ জরিপের ওপর ভরসা রেখে ১৪ নম্বর কূপ খনন করে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিল, সেখানে সেই রাজস্থানেই ভারতের বৃহৎ গ্যাস ফিল্ডের একটি আবিষ্কৃত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দুই-একটি কূপ খনন করে গ্যাস নেই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না।’ তার দাবি, যথেষ্ট পরিমাণে কূপ খনন করা গেলে বাংলাদেশের অনশোর এবং অফশোর -- দুই ক্ষেত্রেই ব্যাপক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সরকারের আইনগত দুর্বলতার প্রসঙ্গ টেনে বদরুল ইমাম বলেন, ‘সবসময় আমদানির চিন্তা করলে হবে না। নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে শক্ত নীতির প্রয়োজন। দৃঢ়তা নিয়ে কাজ করলে দেশের মাটিতেই পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া সম্ভব।’
জ্বালানি খাত কাদায় পড়ে গেছে
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত কাদায় পড়ে গেছে, প্রথম জিনিসটা হবে বের হয়ে আসা। সাংঘাতিক রকমের সমস্যা হচ্ছে। ভুলগুলোর কারণে আজকের এই সংকট, সেগুলো চিহ্নিত করা জরুরি। কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধান বড় রকমের অবহেলা করা হয়েছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে। ১০০ কূপ খনন করতে চায়, কিন্তু বাজেটে বরাদ্দ কোথায়, সরকারের নিজম্ব অর্থায়নে কাজগুলো যেখানে করা দরকার তা করা হচ্ছে না। কে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নিজের গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ করে!’
উৎপাদন ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, ‘বিএনপির সময় অভিযোগ তুলতাম খাম্বা আছে বিদ্যুৎ নেই। এখন বিদ্যুতের কারখানা আছে, সঞ্চালন লাইন নেই, বিদ্যুৎ নেই সমন্বয়হীনতা রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই সামিট গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে গেছে, যাচ্ছে। এর ফলে ক্রমাগত দাম বাড়ানো হচ্ছে, সেখানে কোন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। সরকার ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সেই সন্দেহেকে আরও জোরালো করে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। আমি মনে করি যদি সদিচ্ছা থাকে, অবিলম্বে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করবেন।’
বিইআরসি রাখা নিয়ে প্রশ্ন
ক্যাবের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জ্যোতিময় বড়ুয়া বলেন, ‘যদি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হয়, তাহলে বিইআরসি রাখার দরকার কি! বিইআরসি আইনের ৩৪ ধারার সংশোধনী মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধানে বলা হয়েছে কোন আইন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হলে তা শুরু থেকেই বাতিলযোগ্য। তাই আইনটি অবিলম্বে বাতিল চেয়েছি আমরা। জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইনের মাধ্যমে জ্বালানি খাতকে পঙ্গু করতে ভূমিকা রাখছে।’ অবিলম্বে আইনটি বাতিল করা উচিৎ বলে জানান তিনি।
জ্বালানি নিরাপত্তার ঘাটেিত জীবন বিপন্ন হতে পারে
ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তার ঘাটতিতে জীবন বিপন্ন হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র! এই ঘাটতি সৃষ্টি করা সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যার দায় রাষ্ট্র এবং সরকারের ওপর বর্তায়।
শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার চরমভাবে আর্থিক ঘাটতির মুখোমুখি। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল দিতে পারছে না। কয়লার বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না ঋণের, কিন্তু ২০২৬ সাল থেকে দিতে হবে।’ জ্বালানির অধিকার মৌলিক মানবাধিকার উল্লেখ করে এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন,‘ জ্বালানির অধিকার মৌলিক মানবাধিকার কিনা এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার এই রকম যত ধরনের মৌলিক অধিকারের কথা বলা হোক না কেন, কোনোটির ঘাটতি জ্বালানির ঘাটতির মতো বেশি বিপদজনক নয়!’
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, উষ্ণমণ্ডলীয় দেশের অধিবাসী বলে ‘হিটিং এনার্জি’র আবশ্যকতা নিয়ে আমাদের অধিকাংশের ধারণা নেই। শীতার্ত অঞ্চলে এমনকী ঘরের ভেতরে তাপমাত্রা সহনসীমার নিচে নেমে গেলে মৃত্যু অনিবার্য। কাজেই, কাম্য জ্বালানি সরবরাহ রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হয়। নইলে দুর্ভাগ্যজনক অনিবার্য মৃত্যুর দায় নিতে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান বলেন, ‘জ্বালানি খাতের পলিসি নির্ধারক একটি প্রতিষ্ঠান সাস্টেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অথোরিটি (স্রেডা)। নবায়নযোগ্য জ্বালানির নানা বিষয়ে জ্বালানি নীতি নির্ধারণ এই প্রতিষ্ঠানের করা। অথচ এটিকে কেন্দ্রীভূত ও সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যারা সরকারের বিরাগভাজন, তাদের পোস্টিং দেয়া হয় স্রেডাতে। জ্বালানি খাতের এ অবস্থা থাকলে ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশের এখনও ঢের সময় লাগবে।’
জ্বালানি দাম বৃদ্ধি আইনের সমালোচনা করে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘দাম নির্ধারণ করতে তড়িঘড়ি করে আইন করা হলো ইচ্ছামতো।’ অন্যদের সিনিয়র সাংবাদিক মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেন, শাহনাজ বেগম ও ক্যাবের বিভিন্ন জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন।
গ্যাস অনুসন্ধান না করার ‘খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ’: বদরুল ইমাম
মেগাপ্রকল্পগুলো নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত চায় ক্যাব
রোববার, ৩০ জুন ২০২৪
গ্যাস বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ যে নীতিতে দেশের জ্বালানি খাত চলছে, তা সঠিক নয় বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
রোববার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।
এ খাতে দুর্নীতি বন্ধ ও মেগাপ্রকল্পগুলো নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে সংলাপে জানায় কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘জ্বালানিকে আমি অনেকটা মানবদেহে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব না।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের কিছু পদক্ষেপ জনমানুষের কল্যাণে হচ্ছে না বলে আমাদের ধারনা। সরকার কি কারণে বিইআরসিকে অকার্যকর করলেন, আমার বোধগম্য হয় না। আমরা আশাকরি সরকার এই পথ থেকে সরে আসবেন। জ্বালানি মিক্সের সঙ্গে পরিবেশের যোগাযোগ রয়েছে। পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।’
গ্যাস অনুসন্ধান না করার ‘খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ’
দশ বছর ধরে গ্যাস অনুসন্ধান না করে আমদানির পথে হেঁটে বাংলাদেশকে এখন জ্বালানি খাতে খেসারত দিতে হচ্ছে বলে সংলাপে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘সরকারকে বারবার বলা হয়েছে দেশের ভূ-গভীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস আছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কর্ণপাত না করে এলপিজি আমদানির পথে হেঁটেছে। এতে করে জ্বালানি খাতে এক দশক পিছিয়ে গেছে দেশ।’
বাংলাদেশকে গ্যাসের প্রাইম এরিয়া উল্লেখ করে বদরুল ইমাম বলেন, চাইলে বাংলাদেশ নাইজেরিয়া বা আমেরিকার মতো গ্যাস খাতে সমৃদ্ধ হতে পারতো। কিন্তু ‘সদিচ্ছা ও দূরদর্শিতার অভাবে’ বাংলাদেশের অগ্রগতি এ খাতে ঝিমিয়ে পড়েছে।
ভারতের উদহারণ টেনে এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভারতের রাজস্থানে শেভরন কোম্পানি মোট ১৩টি কূপ খনন করে কোনো গ্যাস পায়নি। সবাই তখন বলেছিল, এখানে আর কূপ খনন করে লাভ নেই। অথচ জরিপের ওপর ভরসা রেখে ১৪ নম্বর কূপ খনন করে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিল, সেখানে সেই রাজস্থানেই ভারতের বৃহৎ গ্যাস ফিল্ডের একটি আবিষ্কৃত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দুই-একটি কূপ খনন করে গ্যাস নেই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না।’ তার দাবি, যথেষ্ট পরিমাণে কূপ খনন করা গেলে বাংলাদেশের অনশোর এবং অফশোর -- দুই ক্ষেত্রেই ব্যাপক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সরকারের আইনগত দুর্বলতার প্রসঙ্গ টেনে বদরুল ইমাম বলেন, ‘সবসময় আমদানির চিন্তা করলে হবে না। নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে শক্ত নীতির প্রয়োজন। দৃঢ়তা নিয়ে কাজ করলে দেশের মাটিতেই পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া সম্ভব।’
জ্বালানি খাত কাদায় পড়ে গেছে
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত কাদায় পড়ে গেছে, প্রথম জিনিসটা হবে বের হয়ে আসা। সাংঘাতিক রকমের সমস্যা হচ্ছে। ভুলগুলোর কারণে আজকের এই সংকট, সেগুলো চিহ্নিত করা জরুরি। কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধান বড় রকমের অবহেলা করা হয়েছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে। ১০০ কূপ খনন করতে চায়, কিন্তু বাজেটে বরাদ্দ কোথায়, সরকারের নিজম্ব অর্থায়নে কাজগুলো যেখানে করা দরকার তা করা হচ্ছে না। কে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নিজের গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ করে!’
উৎপাদন ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, ‘বিএনপির সময় অভিযোগ তুলতাম খাম্বা আছে বিদ্যুৎ নেই। এখন বিদ্যুতের কারখানা আছে, সঞ্চালন লাইন নেই, বিদ্যুৎ নেই সমন্বয়হীনতা রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই সামিট গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে গেছে, যাচ্ছে। এর ফলে ক্রমাগত দাম বাড়ানো হচ্ছে, সেখানে কোন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। সরকার ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সেই সন্দেহেকে আরও জোরালো করে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। আমি মনে করি যদি সদিচ্ছা থাকে, অবিলম্বে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করবেন।’
বিইআরসি রাখা নিয়ে প্রশ্ন
ক্যাবের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জ্যোতিময় বড়ুয়া বলেন, ‘যদি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হয়, তাহলে বিইআরসি রাখার দরকার কি! বিইআরসি আইনের ৩৪ ধারার সংশোধনী মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধানে বলা হয়েছে কোন আইন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হলে তা শুরু থেকেই বাতিলযোগ্য। তাই আইনটি অবিলম্বে বাতিল চেয়েছি আমরা। জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইনের মাধ্যমে জ্বালানি খাতকে পঙ্গু করতে ভূমিকা রাখছে।’ অবিলম্বে আইনটি বাতিল করা উচিৎ বলে জানান তিনি।
জ্বালানি নিরাপত্তার ঘাটেিত জীবন বিপন্ন হতে পারে
ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তার ঘাটতিতে জীবন বিপন্ন হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র! এই ঘাটতি সৃষ্টি করা সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যার দায় রাষ্ট্র এবং সরকারের ওপর বর্তায়।
শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার চরমভাবে আর্থিক ঘাটতির মুখোমুখি। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল দিতে পারছে না। কয়লার বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না ঋণের, কিন্তু ২০২৬ সাল থেকে দিতে হবে।’ জ্বালানির অধিকার মৌলিক মানবাধিকার উল্লেখ করে এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন,‘ জ্বালানির অধিকার মৌলিক মানবাধিকার কিনা এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার এই রকম যত ধরনের মৌলিক অধিকারের কথা বলা হোক না কেন, কোনোটির ঘাটতি জ্বালানির ঘাটতির মতো বেশি বিপদজনক নয়!’
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, উষ্ণমণ্ডলীয় দেশের অধিবাসী বলে ‘হিটিং এনার্জি’র আবশ্যকতা নিয়ে আমাদের অধিকাংশের ধারণা নেই। শীতার্ত অঞ্চলে এমনকী ঘরের ভেতরে তাপমাত্রা সহনসীমার নিচে নেমে গেলে মৃত্যু অনিবার্য। কাজেই, কাম্য জ্বালানি সরবরাহ রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হয়। নইলে দুর্ভাগ্যজনক অনিবার্য মৃত্যুর দায় নিতে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান বলেন, ‘জ্বালানি খাতের পলিসি নির্ধারক একটি প্রতিষ্ঠান সাস্টেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অথোরিটি (স্রেডা)। নবায়নযোগ্য জ্বালানির নানা বিষয়ে জ্বালানি নীতি নির্ধারণ এই প্রতিষ্ঠানের করা। অথচ এটিকে কেন্দ্রীভূত ও সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যারা সরকারের বিরাগভাজন, তাদের পোস্টিং দেয়া হয় স্রেডাতে। জ্বালানি খাতের এ অবস্থা থাকলে ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশের এখনও ঢের সময় লাগবে।’
জ্বালানি দাম বৃদ্ধি আইনের সমালোচনা করে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘দাম নির্ধারণ করতে তড়িঘড়ি করে আইন করা হলো ইচ্ছামতো।’ অন্যদের সিনিয়র সাংবাদিক মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেন, শাহনাজ বেগম ও ক্যাবের বিভিন্ন জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন।